কিভ নগরীর উত্তর পশ্চিমে একটি শহরতলির নাম ইরপিন । সেখান থেকে আর পাঁচ কিলোমিটার গেলেই বুচা । আমরা জানি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে এই অঞ্চলে রাশিয়ান সৈন্যরা নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপরে অকথ্য অত্যাচার, বলাৎকার এবং লুণ্ঠন চালিয়েছে । বুচার রাজপথ ভরে গেছে শবে। মহামান্য লাভরভ বলেছেন ইউক্রেনের মানুষ নিজেদের লোককে মেরে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে । আমাদের সৈন্য ভদ্র শিক্ষিত মার্জিত। রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে এ আরেকটি পশ্চিমি চক্রান্ত।রাশিয়ানরা এই রণক্ষেত্র ত্যাগ করে আজ অনেকটা পুব দিকে চলে গেছে। রেখে গেছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী কালে ইউরোপের মাঝে অনুষ্ঠিত ক্রুরতম ধ্বংস ও হত্যালীলার ইতিহাস। ... ...
এবার রাশিয়ান আক্রমণ প্রকট হলো দূর হতে নিক্ষিপ্ত রকেটের রূপে । তার কতগুলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানে আঘাত হেনেছে তা সঠিক জানা যায় নি । তবে নিরাপদ আস্তানায় বসে ছোঁড়া রাশিয়ান অনেক রকেট বাহী বোমা দেখা দিয়েছে অসামরিক মানুষের ঘরবাড়ির জানলায়, দরোজায়, হাসপাতালে, গোশালায় । প্রতিদিন, প্রতি রাতে সশব্দে সেই সব রকেট নাগরিকের প্রাণ ও শিশুর নিদ্রা হরণ করেছে। যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কবিহীন কোনো প্রকারের সামরিক গুরুত্ব হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সাধারণ নাগরিকের জীবন এবং জানলা চুরমার দ্বারা সামগ্রিক গণভীতি উৎপাদনে সক্ষম মহামতি পুতিন দেশছাড়া করেছেন বহু মানুষকে। অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে কিনা সেটা তিনিই জানেন। অধিকন্তু ন দোষায় বিধে রাশিয়ান করদাতার অর্থে কেনা অজস্র লক্ষ্যভ্রষ্ট রকেট আছড়ে পড়েছে যেখানে সেখানে, গোয়ালে, স্কুলের মাঠে , হাইওয়েতে, বনে বাদাড়ে । ... ...
স্বাধীনতা উৎসবে দেখলাম অনেক তরুণ উজ্জ্বল মুখ । তারা বাড়ির কাছে না হলেও স্থানীয় স্কুলে জায়গা পেয়েছে। গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হলে পুরো দমে লেখা পড়া শুরু হবে, ইংরেজি শেখানোর স্পেশাল ব্যবস্থা সহ। ইতিমধ্যে কোন কোন স্কুল বা পৌর সভা তাদের নানান ক্যাম্পে নিয়ে গেছে – সমুদ্রের ধারে অথবা বনের ভেতরে সেখানে তারা এ দেশের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে মেলা মেশা করার সুযোগ পায় বাধ্য হয় ইংরেজিতে বাক্যালাপ করতে । তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। মায়েরা সংসারের । এই কলরব মুখরিত হলঘরে , ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে অনুপস্থিত পুরুষেরা । স্বামী বাবা ভাই কাকা ইউক্রেনের কোথাও অস্ত্র হাতে বনে বাদাড়ে শত্রুর মুখোমুখি হয়েছেন , কেউ ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া গাড়ি চালাচ্ছেন। নিয়মিত খবর জোটে না। ... ...
প্রশ্ন তুলেছেন মহামতি পুতিন। তাঁর এক সাম্প্রতিক ভাষণে তিনি বলেছেন: জার মহান পিটার যখন উত্তরের যুদ্ধে জয়ী হলেন, তিনি এমন কিছুর অধিকার নেন নি যা অন্যায্য ছিল । সেন্ট পিটারসবুরগ প্রতিষ্ঠার পরে বহু ইউরোপীয় শক্তি মনে করেছিল পিটার সুইডেনের অংশ দখল করেছেন । সেটি অসত্য । এই অঞ্চলে বহু বছর যাবত স্লাভিক মানুষ বসবাস করেছেন। এখন যদি প্রশ্ন ওঠে কেন মহান পিটার নারভা অভিযান করেন ? এর উত্তর সহজ। তিনি তারই দখল নিয়েছেন যা স্লাভিক যা একান্তই রাশিয়ার নিজভূমি ... ...
কয়লা নয় তেল নয় গ্যাস নয় এমনকি আণবিক রিঅ্যাক্টর নয়। ফেলডহাইমের বাতি জ্বলে এমন শক্তি দিয়ে যা জীবাশ্ম জ্বালানির মতন এক দিন ফুরিয়ে যাবে না । এই পৃথিবীর ভু রাজনীতি যে বা যারা সঞ্চালন করুন না কেন, ফেলডহাইমের শক্তির উৎস বইবে অনন্ত কাল কারণ তার মৃত্যু নেই । পুড়িয়ে ভস্মীভূত অথবা শস্ত্র দিয়ে ছেদ করা যায় না তাকে। সেই উৎস চিরন্তন, এই পৃথিবীর মতন। ... ...
রাশিয়ানরা সম্প্রতি উত্তরের নরডস্ট্রিম পাইপ লাইনের কল বন্ধ রেখেছিলেন কি সব যন্ত্রপাতি সারাবেন বলে । দিন দশেক বাদে কল খুলেছেন কিন্তু গ্যাস আসছে খুব কম । মহামতি পুতিন জানেন ইউরোপের বাতি, ইউরোপের ঘরের গরম জল তাঁর নিয়ন্ত্রণে। খেলা এই তো সবে শুরু। এখন এই গ্রীষ্মকালে সূর্যদেব উষ্ণতা বিতরণ করে যাচ্ছেন । তবে মাঘ মাস খুব দূরে নেই। মিত্র দেশ জার্মানির অবস্থা সবচেয়ে জটিল – রাশিয়ান গ্যাসের অভাবে তাদের কল কারখানা অবধি বন্ধ হতে পারে । এস্টোনিয়া থেকে রোমানিয়া অবধি যখন পারা শূন্যের অনেক নিচে নেমে যাবে তখন মহামতি পুতিন তাদেরও সিধে করে দেবেন । ইউক্রেন নিয়ে আর বাঁদরামি করো না । ... ...
বুচা শহরের ভিক্টোরিয়া বললেন ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু দিনের জন্যে হলেও ট্রেনে করে পোল্যান্ড যাবেন । ইংরেজ আশ্রয়দাতা বহন করবেন টিকিটের ব্যয় । তাঁর স্বামী ইয়ারোস্লাভ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে পশ্চিম সীমান্তের লভিভে এসে স্ত্রী পুত্র কন্যার সঙ্গে দেখা করে যাবেন । সেই সংক্ষিপ্ত মিলন ও বিরহের দৃশ্যটি মনে করতে চাই না । শুধুমাত্র চোখের দেখা দেখে পিতা ,স্বামী ফিরে যাবেন রণাঙ্গনে। ইয়ারোস্লাভ বিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াতেন । কখনো বন্দুক হাতে ধরেন নি । অতি অল্প বয়েসে দেখা চন্দ্রধর শর্মা গুলেরির হিন্দি গল্পের ওপর আধারিত মণি ভট্টাচার্যের উসনে কহা থা ছবিটির কথা মাথার মধ্যে ঘুরে চলেছে সারাদিন । মনে পড়ে রেলওয়ে স্টেশনের সেই দৃশ্য- স্ত্রী পুত্র কন্যাকে প্লাটফরমে একবার দেখেই ফ্রন্টের ট্রেনে উঠছেন সৈন্যেরা। পটভূমিকায় বাজে মান্না দের কণ্ঠে সেই অমর গান – জানেওয়ালে সিপাহি সে পুছো , ওহ কহাঁ যা রহা হ্যায় । ... ...
ইউক্রেন যুদ্ধের পরে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলি অবরোধ করে মহামতি পুতিন কেবল ইউরোপ নয়, গোটা আফ্রিকায় ফসল পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ওডেসা বন্ধ হলেও ট্রেন বা ট্রাক যোগে ইউক্রেন তার খানিকটা শস্য ইউরোপে পাঠাতে পারে। আমার শ্বশুরবাড়ির দেশ সেই পথেই গম কিনছে। কিন্তু মিশর নাইজেরিয়া লিবিয়া আলজেরিয়া কেনিয়া সহ আফ্রিকার আরও অনেক দেশ গভীর খাদ্য সঙ্কটে নিমজ্জিত হতে চলেছিল। গতকাল ইস্তানবুলে তুর্কী রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান এবং রাষ্ট্রসংঘের প্রধান গুতিয়েরেথের উপস্থিতিতে দুই যুযুধান পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হল : কৃষ্ণ সাগরের বন্দর থেকে রাশিয়া তার অবরোধ তুলে নেবে আফ্রিকার খাদ্য সঙ্কট এড়ানো গেলো , আপাতত। ... ...
ইউরোপের বাগী দেশগুলোকে টাইট দেবার বাসনায় পুতিন খুড়ো গ্যাসের কল খোলা বন্ধ করার খেলাটা খেলে যাচ্ছেন মাস চারেক ধরে। এবার পুরো দশ দিনের জন্য নরডস্ট্রিম পাইপলাইনে কুলুপ লাগালেন - মেরামতির কাজ চলবে বলে । ইতিমধ্যে বুলগারিয়া পোল্যান্ড সহ তিন বালটিক দেশ বলেছে চাই নে তোমার গ্যাস। জ্যাঠার দোকানে যাবো। কিন্তু কিছু দেশ হামলে পড়ে আছে। তাদের গাড়ি সারানো থেকে বানানো জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব কাজে খুড়োর গ্যাস লাগে , নইলে দ্যাশ প্রায় অচল । ইউক্রেনে খুড়ো বিশেষ সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে গ্যাস কিনব না ? এই সব অর্থনীতির আকার এতো বড়ো যে তারা হাঁচলে বাকি ইউরোপের সর্দি লাগার আশঙ্কা । অন্যদিকে গণতন্ত্র , ইউরোপিয়ান ভ্রাতৃত্ব বোধ ইত্যাদি যুক্তির ঠেলায় কতটা কম রাশিয়ান গ্যাসে জীবন যাত্রা নির্বাহ করা যায় তার কসরত শুরু হয়েছে জার্মানিতে। ভু রাজনীতিক ভাবনা বিজ্ঞ জন ভাববেন – আপাতত আম জনতা কি করতে পারে? ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে চার্চিল ও রুজেভেলটের আশিস মাথায় নিয়ে মহামতি স্টালিন যখন নিজের ইচ্ছেমত ইউরোপিয়ান মানচিত্রে রক্ত বর্ণ সংযোগ করছিলেন তাঁর চোখ পড়ল এই ছোটো দেশটির ওপরে । ওয়াইন ছাড়া তার আর কোন ধন সম্পদ নেই । দুর্জনে বলে তিনি রোমানিয়াকে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের অন্তর্গত করতে চেয়েছিলেন । শেষ অবধি মস্কো থেকে কল কাঠি নেড়ে রোমানিয়াকে কুক্ষিগত করেই খুশি রইলেন । বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় এই প্রবাদ বাক্যটির সত্যতা প্রমাণ করার জন্যেই হয়তো আরেক জুতো সেলাইয়ের মিস্ত্রি রোমানিয়াতে আবির্ভূত হলেন সে দেশকে সঠিক পথে চালনা করতে । জর্জিয়ান চর্ম শিল্পীর পুত্রের আত্মা চাউচেসকুকে দেখে নিশ্চয় সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। ... ...