মনুষ্য সভ্যতায় এবং অস্তিত্ত্বের এক অবিচ্ছেদ্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল স্বাধীনতা। কেবলমাত্র বেঁচে থেকে স্বাধীনতা অনুভব করা যায় না! আপনাকে ‘স্বাধীনতা’ চাইতে হবে এবং আপনাকে ‘স্বাধীনতা’ বেছে নিতে হবে – তা না হলে আপনি কোনদিনই সেটা অনুভব করতে পারবে না। এ সেই অনেকটা ‘সুখ’ নামক কনসেপ্টটার মত। আপনি অত্যন্ত সুন্দর, প্রাকৃতিক সৌন্দ্রর্য্যে ভরপুর কোন জায়গায় বেড়াতে গিয়েও নিজেকে ‘অসুখী’ করে রাখতে পারেন বিলকুল – সব বেড়ানোর দিনগুলি করে তুলতে পারেন বেদনাদায়ক! আপনা আপনি ‘স্বাধীনতা’ অনুভব করা যায় না এবং তার মূল কারণ হল মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ‘নিয়ন্ত্রণ’ নামক একটি জিনিসের দ্বারা পরিচালিত হয়। নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতা দুই সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্তে অবস্থান করে ‘স্বাধীনতা সূচকে’। আমরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে ‘স্বাধীন’ নয় কারণ কেউ বা কারা আমাদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতে চায়। সে রাষ্ট্র হতে পারে বা অন্য কেউ। ... ...
দুরিয়ান কাঁঠাল প্রজাতির ফল, আর দেখতেও অনেকটা কাঁঠালের মতই। দুরিয়ান খাবার জন্য মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ডের কিছুটা, কিছু ইন্দোনেশিয়া – এরা সব পাগল। সেই উন্মাদনার কাছাকাছি বাঙালীর কোন কিছু খাবার বিষয়ক উন্মাদনা আসতেই পারে না, বাজারে হিমসাগর উঠলে আমরা এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারি না। কথিত আছে যে প্রাক মোবাইল যুগে বাজারে দুরিয়ান ওঠার খবর রেগুলেট করা হত সরকারী অফিস বা হাসপাতালে, বা ব্যাঙ্কে বা স্কুল-কলেজে। ডাক্তার নাকি অপারেশন থামিয়ে দুরিয়ান কিনতে ছুটছে যেই শুনেছে বাজারে দুরিয়ান উঠেছে – স্কুল-কলেজে টিচার হাওয়া! এখন হোয়াটঅ্যাপ এসে যাওয়ায় আর রেগুলেট করা যাচ্ছে না খবর চাওড় হওয়া। তাই সরকার নাকি ভাবছে কেবলমাত্র ওয়ার্কিং-আওয়ারসের বাইরের দুরিয়ান বিক্রী করতে দেওয়া হবে ওপেন মার্কেটে! ... ...
এমন নয় যে রামসে-ই পৃথিবীর সব থেকে ভালো শেফ, সেই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। কিন্তু গর্ডন সবচেয়ে বিখ্যাত, সেই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মিচলিন স্টারের দিক থেকে দেখতে গেলে গর্ডন তৃতীয় স্থানে, ১৬টা স্টার নিয়ে। সেই যখন প্রথম প্রথম দেখতাম গর্ডন-কে, তখন তার প্রতিপক্ষ মিডিয়া খাড়া করেছিল জিমি অলিভার-কে। আর আজ অলিভার প্রায় দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে। এই তো সেই দিন সিঙ্গাপুরে জিমি অলিভারের ইতালিয়ান রেষ্টুরান্টে দেখে এলাম লাঞ্চ আওয়ারে কি বিশাল ছাড় দিচ্ছে – দুজন খেলে একজন ফ্রী বা এই জাতীয় কিছু। একজন বিখ্যাত শেফের রেষ্টুরান্টে যেটা ভাবাই যায় না! ... ...
আমাদের একটা আস্ত সমুদ্র ছিল – ছিল সমুদ্র সৈকত। ঘরে থেকে বেরোলেই ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেতাম ঝাউগাছের তলায় আর কখনও কখনও প্রবল তাপদগ্ধ অলস দুপুর কাটাতে কাটাতে বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতাম বিকেলের ভেজা বালির। আমরা তখনও কেবল দুজন মাত্র। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ঢেউ পেরিয়ে পেরিয়ে – কখনও দেখা হয়ে যায় পাশের বাড়ির কুকুর নিয়ে ঘুরতে বেরোনো মালকিনের সাথে, কখনও দেখা হয় কাঁকড়া খুঁজতে আসা সেই স্থানীয় লোকেদের সাথে। কখনও দেখি এক পুরো পরিবার চিঙড়ি মাছ ধরছে জাল দিয়ে ছেঁকে – বাচ্চাদের উৎসাহ অবশ্যই মাছ ধরার থেকে জলে হুটোপুটিতেই বেশী। এক সময় গোধূলি নেমে আসে – এত রঙ আমরা আর কোথাও দেখি নি। জলের সাথে ভেসে আসা কাঠের গুঁড়ির উপর বসে সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখি। ঢেউ দেখি – শব্দের সাথে মিশে যায় দিগন্তে আকাশের শত রঙ। ধর আজকে মেঘ করেছে – এমন মেঘের ফাঁক দিয়েও আলো চুঁইয়ে পড়বে জানি অনভ্যাসের আলতা পায়ে। লাল মুছে নিয়ে যাবে ক্রমাগত আর ফিরে না আসা ঢেউ। আমি তখন দূরে ছোটার ক্লান্তি নিয়ে তাকিয়ে আছি একে একে জ্বলে ওঠা জলের ওধারে জাহাজের আলোর দিকে। আলো স্পষ্ট হয়ে আসে, ঢেউ এগিয়ে এসেছে অনেক – আমরা হাতের আঙুল নিয়ে খেলতে খেলতে ফিরে আসি কাঠের বাড়িতে। ... ...
এই লেখায় থাকবে বেশীর ভাগ অপ্রয়োজনীয় এবং কিঞ্চিত প্রয়োজনীয় চিঠি সকল নিয়ে হ্যাজ। কৈশোর বেলায় আমাদের মত কিছু পাবলিকের কাছে পাচু রায় ছিল এক লেজেন্ডের নাম। বিদেশের সাহেব সুবাদের ব্যাপার বলতে পারব না, কিন্তু বাংলা ভাষায় কাগজে ‘সম্পাদক সমীপেষু’ শীর্ষক চিঠি লিখে পাচু বাবুর থেকে বেশী নাম কেউ করেছিলেন বলে আমার জানা নেই। আনন্দবাজার খুললেই চারের পাতায় তেনার চিঠি একদিন অন্তর। আর হেন কোন বিষয় নেই যে তিনি চিঠি লেখেন নি – দ্বিতীয় হুগলি সেতু গঙ্গার দুই দিকের দুই পাড় থেকে বানিয়ে নদীর মাঝ বরাবর মেলাবার ক্ষমতা ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের নেই থেকে শুরু করে জার্সি গরুর দুধের উপকারিতা বেশী, ইডেনের থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে উৎপল চ্যাটার্জীর লাঞ্চের পর ঝিমানো, সুন্দরবনের আসল মধু যৌবন ফিরিয়ে আনে, পানিফলের উপকারিতা আপেলের থেকে বেশী, জ্যোতিবাবু বিগত কুড়ি বছর ধরে নাকি ক্যালকুলেটেড রিক্স নিচ্ছেন – ইত্যাদি ইত্যাদি। গ্যাট চুক্তি এবং কলকাতা বইমেলার ব্যাপারটা আর ঢোকালাম না – এই দুই জিনিস নিয়ে নিলে, গান্ধীর চিঠির রচনাবলীর ভ্যলউমের থেকেও বেশী হবে পাচু রচনাবলী। ... ...
১৯৮৬ সালের নম্ভেম্বর মাস – ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব লীগের নীচের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে টালমাটাল অবস্থায় আছে। চট করে কিছু চেঞ্জ না আনলে আরো নিচের লিগে অবনমন হয়ে যেতে পারে। কি করবে তা হলে ম্যাঞ্চেষ্টার ইউনাইটেড? বাকি সব ফুটবল ক্লাব যা করে তারাও তাই করল্ম পাল্টাও কোচ। নিয়ে আসা হল আবেরডীন ফুটবল ক্লাব থেকে আলেক্স ফার্গুসেনকে যে সেখানে ছয় বছরে দশটা ট্রফী জিতেছে, তার মধ্যে একটা ইউরোপীয়ান কাপও আছে রিয়েল মাদ্রীদ কে হারিয়ে। বাকিটা ইতিহাস। ... ...
হিটলারের সময়ে ইহুদী-দের গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মারতে যে গ্যাস ব্যবহার করা হত সেই ‘জাইকলন বি’ (Zyklon B) নামক বিষাক্ত গ্যাস উদ্ভাবনের পিছনেও হেবারের হাত ছিল। তো দেখা যাচ্ছে একধারে মানুষ-কে নতুন জীবনদান কৃষিকাজ ইত্যাদিতে কৃত্রিম সার ব্যবহারের দিগন্ত খুলে দিয়ে – আর অন্যদিকে বিষাক্ত গ্যাস আবিষ্কার করে মানুষ মারতে সাহায্য করা – হেবারের জীবন এই ভাবেই প্যারাডক্সে ভরে উঠেছিল। তিনি প্রায় ডঃ জেকিল এবং মিঃ হাইড হয়ে উঠেছিলেন একই সাথে। ... ...
ইন্টারনেশ্যানাল এনার্জি এজেন্সি প্রতিবছর এক গাব্দা রিপোর্ট বের করে ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক’ নামে। সেইমত কিছুদিন আগে বেরিয়েছে ২০১৯ সালের রিপোর্ট – ৮১০ পাতার সুবিশাল রিপোর্ট। এতে তেল ছাড়াও আছে গ্যাস, কয়লা, বিদ্যুত সহ বাকি আরো কিছু রিন্যুউএবেল জ্বালানীশক্তি নিয়ে আলোচনা। তবে আমাদের এই লেখা তেল সংক্রান্ত বলে, ওই রিপোর্টে তেলের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কি দাবী দাওয়া আছে তাই দেখব এখন। ... ...
এক এক সময় প্রবীর ঘোষ-কে আমার ওই রিচার্ড ডকিন্স টাইপের মনে হয়। বড় বেশী র্যাডিকাল কথাবার্তা বলে ফেলে কখনও কখনও – ফলে হয় কি, প্রচলিত অর্থে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলতে বা লিখতে গিয়ে এরা নিজেরাই অপ্রচলিত অর্থের মৌলবাদী হয়ে ওঠেন। সেই জন্যই বলাই বাহুল্য সব কথার সাথে একমত হওয়া যায় না। কিন্তু আজকাল যা শুরু হয়েছে – মনে হচ্ছে এর থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য সেই প্রবীর ঘোষের দাওয়াই-টাই ঠিক। সেই যে কি বলে না ইংরাজীতে – “ডেসপারেট টাইমস্ নীডস ডেসপারেট মেজারস্”, আমাদের দেশের সেই অবস্থা এসে গেছে মনে হয়। ... ...
২০১২ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড জানিয়ে দিয়েছে যে ফিল্ম এবং টেলিভিশনে সর্বাধিক চিত্রিত সাহিত্যিক মানব চরিত্র হিসাবে বিশ্বরেকর্ড হোমসেরই। হোমস পর্দায় এসেছেন সাকুল্যে ২৫৪ বার (২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী)। ড্রাকুলা ২৭২ বার চিত্রিত হয়ে অবশ্য হোমস-কে বীট দিয়েছেন, কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে ‘মানব’ চরিত্র নিয়ে – ভূত প্রেত, জীন-পরি নিয়ে নয়। ১৮৮৭ সাল থেকে ৭৫ জনেরও বেশী অভিনেতা শার্লকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গিনেস আরো আগ বাড়িয়ে জানিয়ে দিয়েছে হোমস নিজেই এক ‘সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান’ – অবশ্য কথাটা খুব একটা বাড়িবাড়ি নয়। ... ...