এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আমি, আমার মন 

    ঋ ফ ন লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ মে ২০২৩ | ৩৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • প্রিয় মন,
     
    তুমি কি ভাবছো, হঠাৎ কেন এসব? তুমি ভাবছো, কেন মিছিমিছি আমাদের পত্রপাঠ, খোলা আকাশের সামনে রাখা হচ্ছে অসময়! আবার তুমি এও ভাবতে পারো, নিশ্চিত অভিসন্ধি এঁটেছি কোনও..

    মন আমার কোনো অভিসন্ধি নেই। ঢাক ঢাক গুড়গুড় নেই। চমকে দেওয়াও নেই। আসলে একটু আগেই তোমার উপর হাত দিলাম। মানে সত্যি সত্যিই তোমারই উপর, বুকের বাম দিক না ডান দিক, ওই কোন দিকে কি যেন বলে, সেই দিকে। একটু আগেই ছুঁলাম তোমায়। তুমি কি ভাবছো, এসব সব সত্যি? হ্যাঁ।

    স্মৃতির বিস্মৃতির কি অসম্ভব লড়াই। আমার ভুলে যাওয়ার খঞ্জর পৃথিবীতে দিনভর ঝক্কি চলে। তবুও এই সবকে জব্দ করব বলেই তো কোষ থেকে কোষ ভেদ করে, ওই বুকের ডান দিক না বাম দিক বলো, ওইদিক ঘেঁষেই একটা লাল টুকটুকে বেদী বানিয়েছি আমি। আর সেই সিংহাসনে তুমি, তুমিই।

    আজ এই সব বলতে গিয়ে তাই বারবার আবার ইচ্ছা করছে, পুরনো দিনের রোদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে। তবে ওটা পুরনো কাসুন্দি। আমার চির ন্যাতপ্যাতে ছেলেবেলা। সেই, সেই পুরোনো ছেলেবেলা। সেই পুরোনো মাঠ আর পথের ফাঁকেই যেন পয়ষট্টি ডিগ্রি কোন থেকে রোদ এসে পড়ে। আমার টাইমমেশিন। এই টাইমলাইনের দুনিয়ায় যেমন ট্রাম লাইন আর নেই। তেমনই সেই যন্ত্রটিও হওয়া হয়েছে। রয়ে গেছে শুধু আমার ফাঁকা, একা স্কুল মাঠ। কিন্তু এখন এই বিকল্প জলযান আছে, সেটা বুঝি জানো তুমি? ঐ যে, যার বেদী বানানো হলো, তার আশপাশই তো আমার অলৌকিক জলযান। আবার বলো, এসব কিছুই জানোনা তুমি?

    জানি তুমি সব জানো।  তবুও আমি ছেলে মানুষের মতো ভ্রান্তি ছড়াচ্ছি, উল্টো পাল্টা এলোপাথাড়ি কথা লিখে মানুষ ডাকছি। আর শুধু ডাকছি না, গুপ্ত ইশতেহারের ইটের পাজা থেকে দু এক টুকরো ইট মেলে ধরছি সামনে..
     
    দৃশ্য ১
    প্রকৃতির নিয়মে একটা মৌলিক গল্প লেখা চলছে। একটা টাটকা বড়ো গল্প। গল্পের নায়ক আর নায়িকার দেখা হলো। তারা সামনা সামনি একে অপরকে দেখেনি কখনও, সেটা কোনও এক সরস্বতী পুজোর প্রক্কাল। টানটান উত্তেজনা। অফিসের ল্যাপটপে লগ ইন করার মতই সক্কাল সক্কাল কল টাইম পড়েছে নায়কের। দেখা হবে শহরতলীর এক শপিং মলে। বাইরে ঠাণ্ডা অল্প, ভেতরে গরম চারদিক। শাহরুখ খানের গল্পের গরু গাছে তোলা চকমকে সিনেমা চলছে শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সে। আর সামনে ফুড কোর্ট, একটা বন্ধ ঝাপে লাঠি লাগানো ফুড কোর্ট। তখন নায়কের সামনে পিছনে শুধু শাহরুখ খান। সবাই খুব উত্তেজিত, কিন্তু নায়ক তখন ঘেমে স্নান। আলো আঁধারির একটা ফুড কোর্টের সারিসারি চেয়ারের একটা ছোট্ট কোন দেখে সে বসে আছে। নায়িকা আসছে সংবাদ পাওয়া মাত্রই নায়ক উঠে দাঁড়িয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না। বাই কল নায়িকা তার অবস্থান জানতে নায়ক দেখতে পাচ্ছে নায়িকাকে, নায়িকা আসছে। দূর থেকে একটি মেয়ে সামান্য হেসে অল্প সামলে কোনো মতে পৃথিবীর সমস্ত ঘন্টাকে টোকা দিয়ে বাজিয়ে নায়কের সামনে এসে পৌঁছাচ্ছে। আর তারপরই নায়কের মনে আর মাল্টিপ্লেক্সে এক সাথে সিনেমা শুরুর ওয়ার্নিং বেল পড়ল।  ততক্ষনে বসন্ত জাগ্রত শপিংমলের দ্বারে আর এই ফুড কোর্টের ভিতর ওদের দুজনের বসন্ত ক্লাইম্যাক্স শুরু হলো.. শট ফ্রিজ। সব থামল। কাট!
     
    দৃশ্য ২
    এও এক সিরিয়াস প্লট। নায়কের তখন উথালপাথাল ভাবনা বুকে, চারিদিকের দুঃখ সুখে, কি যেন এক গানের লাইন গুনগুনিয়ে বেড়ায় সারাদিন। গানের কথা মনে থাকেনা কিন্তু সুর মনে থাকে। তাই সই, পুজোর মরশুম, সুরই থাক। বহু ভেবে চিন্তে, কোনো এক ভরা পুজোর বাজারে সুমন একক। কবীর সুমন। নায়কের নাছোড় ভগবান। সেই অনুষ্ঠান শুরু হবে, কলামন্দির সিট হচ্ছে বিসি রো এর বত্রিশ। অনুষ্ঠানে নায়ক গান শুনতে শুনতেই ছোটো ছোটো অডিও ক্লিপ পাঠাবে, দার্জিলিং-এর চানক্য হোটেলে, জানলার ধারে বসে থাকা তার  চির পরিচয়ের তরুণীকে। গল্পের নায়িকা আবার সেই মেয়েটি। একটার পর একটা গান বিসি রো থেকে হোয়াটস অ্যাপ মারফত দার্জিলিং যাবে। আর সামনে কলামন্দিরের আলোয়, আলোক দ্যুতির মতো সুমন তোমাকে চাই গাইবেন দুবার। সমগ্র প্রেক্ষাগৃহ তখন গলা খুলে গাইবে, সবাই তখন অশ্রু ঝলোমলো। নায়ক কি করবেন ভেবে না পেয়ে তার কোনো এক রাতের আস্তানায় ফিরবে, একটা স্বল্প বয়ান লেখা চলবে গোটা রাতের অজস্র সময় জুড়ে। সকাল বেলা একটা মেল পাবে তরুণী। সে তখন হয়তো বাতাসিয়া লুপ দেখে পরের সাইট সিইং এর জন্যে একটা পাহাড়ি রাস্তা ধরে অন্য রাস্তায় যাচ্ছে। সে মেলটা পড়বে; পড়বে একটা গান জীবনের নির্যাস, যার শপথ তারা আগেই কখনও নিয়েছে। এটা কেবল সম্বোধনের সুতো পাল্টানোর অনুষ্ঠান মাত্র সেখানে। আর অমনি মেল এর ইনবক্স আর পাহাড়কে স্বাক্ষী করে, স্পটিফাই থেকে দুজনেই হয়তো একই সঙ্গে চালিয়ে উঠবে একই গান। গতকালের রেশ; তোমাকে চাই। স্ক্রিন এখানেই ফ্রিজ হবে, তবে কাট হবেনা! ডিরেক্টর হুকুম দিয়েছে ক্যামেরা চলার..
     
                 এই দুটো দৃশ্যেই নায়ক এবং নায়িকা শব্দ চয়নের জন্যে এই খেলা বিব্রত হোক একবারও চাইনা। ওতো শুধু অলঙ্কারের খেলা মাত্র। তুমি শুনতে পাচ্ছো মন? জানতো এরপর কি ঘটবে? আমি তো নাদান বাহক তোমার, জানলে জানিও হ্যাঁ। 
     
    মন, আজ সত্যিই কি এমন কোনো দিন, যেখানে মেঘ আর রোদ্দুর একসাথে খেলা করবে? আজ মনে হয় এমনই দিন, আমি বলছি। বিশ্বাস না করলেও মেনে নাও। কারণ আমি বলছি তাই..
     
    আজকে রোদ, মেঘের চাদর, গান, আর ওই যে দুটো দৃশ্যের কথা  লিখলাম আজ সব্বার দিন। আমার ইটের পাজায়, যে ভুল করে চলে আসা চুনিপান্নার চকমকে জীবন, আজ তারও দিন। আমার এক পৃথিবী না পারার মধ্যে , যে কয় ফোঁটা পাওয়া তাদের দিন আজ। আমার ন্যাতপ্যাতে ছোটবেলার দিন আজ। আমার পাড়া, আমার গলি, আমার আলো না ঢোকা ঘর, আমার মন কেমন, আমার পথের পর পথ এলোপাথরী হাঁটা.. এই সব, সব কিছুর দিন আজ। আমার  হওয়ায় পাওয়া নামের দিন আজ। তাইতো আজ তোমার দিন!

    ভালো থেকো, আমার সব কিছুর ডান দিক বাম দিক..
    ভালো থেকো আমার লাল টুকটুকে বেদী..

    ভালো থেকো, শুভ জন্মদিন।

    ইতি-
    তোমার বাহক।
    ০৩/০৫/২০২৩
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ মে ২০২৩ | ৩৭৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ছায়া - Rifon Sircar
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন