এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • [বাংলা] ছবির ব্যবসা

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ৫২৪ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • | | | | | | | |
    সাধারণত ছবির পেছনে এক্স যে টাকা খরচ করেন , জনসমক্ষে সেই বাজেট কিছুটা কমিয়ে বলা হয়। একদিন সকালে উঠে আপনি সকালের খবরের কাগজে দেখলেন - পুজোর সময় আপনার দেখা সেই বাজে ছবিটার সত্তর লাখের বাজেট ছিল , বক্স অফিসে করেছে চল্লিশ লাখ। মানে ছবি ফ্লপ। আপনি মনে মনে বললেন বেশ হয়েছে , বা জিভ দিয়ে সহানুভূতিমূলক চুক চুক আওয়াজ করলেন বেচারাদের ক্ষতির জন্য। 
     
    কিন্তু আসলে সবাই টাকা ফেরত পেয়ে গেছে , অল্প হলেও লাভ হয়েছে। যদিও এই মডেলে চার পাঁচটা ছবি এরকম ফ্লপ করলে তারপর আর প্রযোজনা সংস্থা ছবি বানাতে পারবে না, কারণ ফাইনান্সার পাওয়া সমস্যা হবে। নায়ক নায়িকাদের টিআরপি কমতে থাকলে স্যাটেলাইট স্বত্ত্বর দাম কমে যাবে। ছবির গানের জন্যও বেশি টাকা পাওয়া যাবেনা। ওয়াইরা আপফ্রন্ট টাকা কম দেবে , কারণ আর বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
     
    এই যে ছবিটা ফ্লপ হল , এক্ষেত্রে সরাসরি ক্ষতিটা মূলত হল জেডদের [হল/প্লেক্স মালিক]। টিকিট প্রতি তারা পঞ্চাশ টাকা সরিয়ে রাখেন। তার মধ্যে তিরিশ টাকা বিদ্যুতের বিল, হল পরিষ্কার রাখা, প্রজেক্টরের রক্ষণাবেক্ষণে চলে যায়। লাভ মোটে কুড়ি টাকা। হল ফাঁকা গেলে তাদেরই ক্ষতি। সেজন্য এখন কম দর্শক থাকলে তারা বহু শো শুরুর দশ পনেরো মিনিট আগে বাতিল করে দেন। অথবা বলেন পুরো হলে শুধু দশ বারোজন বসে ছবি দেখতে চাইলে একটা পপকর্ন বা ঠান্ডা পানীয় কেনা বাধ্যতামূলক।
     
    ওয়াই হবার সবথেকে বড় সুবিধা , জেড দের ওপর নানা শর্ত চাপানো যায়। যেমন কোনো একটা বিশেষ ইংরেজি বা হিন্দি ছবি যদি মুক্তি পায়, সেই সপ্তাহে তার সঙ্গে অন্য যেকোনো ছবিকে শো দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে ভার্টিকালী ইন্টিগ্রেটেডদের সবথেকে বড় সুবিধে , এরা ওয়াই দের মুখাপেক্ষী নন এবং অনেক সময় জেড দেরও মুখাপেক্ষী নন। কারণ নিজেরাই নিজেদের বানানো ছবি পরিবেশনা করেন , নিজেদের হলও চালান। তারপর ছবি ভালো না চললে কিছুদিন বাদে নিজেদেরই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ছবিটা নিয়ে আসেন। 
     
    এক্সরা বছরে একটা দুটোর বেশি ছবি করেন না। মানে একটা ছবি প্রথমে বানান , তারপর সেটা মুক্তির জন্য ওয়াই এবং জেডদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর তাদের ছবি মুক্তি পায় , কিছু দিন হলে চলে। তারপর তারা আরেকটা ছবির কাজে হাত দেন। এর বদলে ভার্টিকালি  ইন্টিগ্রেটেড সংস্থারা একটা বেশ বড় পাইপ লাইন বজায় রাখেন । তিনটে পর্যায়েই তাদের কোনো না কোনো ছবি সবসময় থাকে । একই সঙ্গে তাদের দুটো ছবি তৈরি হয় , তৃতীয় ছবিটা হলে চলে এবং চতুর্থ একটা ছবি মুক্তির অপেক্ষায় থাকে। অবশ্যই ভার্টিকালি  ইন্টিগ্রেটেডদের ঝুঁকি অনেক বেশি। বেশি বাজেটের ছবি না চললে এদের পুরোটাই ক্ষতি। 
     
    নেটফ্লিক্স , প্রাইমের মত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মদের কথা এতক্ষণ বলা হয়নি। ডিজিটাল স্পেসে এরা একইসঙ্গে ওয়াই এবং জেডের ভূমিকা পালন করেন। হাতে গোনা কিছু সময় নিজেরা এক্সও হয়ে যান , অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এরা ভার্টিকালি ইন্টিগ্রেটেড। আবার বাংলায় এসভিএফের মত ভার্টিকালি  ইন্টিগ্রেটেডরা অনেক সময় অন্য ভাষার ছবির জন্য ওয়াই এবং জেডের ভূমিকা পালন করেন। উইন্ডোজের মত কোনো কোনো সংস্থা আবার এক্স এবং ওয়াইয়ের ভূমিকা একসঙ্গে পালন করেন। সবমিলিয়ে জটিল ব্যাপার। 
     
    এতক্ষণ বাংলা ছবি নিয়ে কথা বললেও আসলে ছবির ব্যবসা পৃথিবীর যেকোনো জায়গাতেই এবং ভাষাতেই এক। এতদিন হয়ত খেয়াল করেননি , এখন থেকে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যেকোন ছবির শুরুতে কয়েকটা সংস্থার লোগো দেখানো হয়। প্রথম লোগোটা অবশ্যই থাকে সেই ছবির ওয়াইয়ের , যেমন ওয়ার্নার ব্রাদার্স, ইউনিভার্সাল , ডিজনি , প্যারামাউন্ট । তার পরে এক্সদের লোগো দেখানো হয় এবং সবশেষে মূল ছবি শুরু হয়। 
     
    যেকোনও পণ্য আসলে তৈরী হয় বিশেষ টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য , বাংলা ছবি কোনও ব্যতিক্রম নয়। হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখার মূল দর্শকরা তিরিশের ওপরে, যারা বছরে গরমকালে বাচ্চাদের স্কুল ছুটির সময় , পুজোর সময়  এবং শীতকালে বড়দিনে সপরিবারে ছবি দেখতে যান। তিরিশের নিচের শহরের দর্শকরা বাংলা ছবি দেখতে 'নিবেদিত' ঠিক নন, এরা তখনই বাংলা ছবি দেখতে দলে দলে ছোটেন যদি সেই ছবি দেখাটা সামাজিক মাধ্যমে একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়ায়। যেমন হাওয়া ছবিটা যখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র  উৎসবে দেখানো হল , নন্দনে বিশাল লম্বা লাইন। সেটা দেখে রিলায়েন্সের মত ওয়াই ছবিটা কলকাতায় পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। এখন ছবিটা কলকাতায় অনেক হলে চলছে কিন্তু কোনো ভিড় নেই। একটা খুব বড় জিনিস ওয়াই এক্ষেত্রে ভুলে গেছিল , নন্দনে হাওয়া দেখানো হয়েছিল বিনামূল্যে এবং সেসময় হাওয়া নিয়ে একটা হুজুগ ছিল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৫৪514791
  • এই সিরিজটা৷ বেশ ইন্টারেস্টিং। 
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৫০514792
  • @ yes​​​ এটা সিরিজ ভেবে লেখা শুরু করিনি। লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছিল বলে আপাতত তিনটে ভাগে ভাগ করে দিলাম। পরের লেখা গুলো কয়েকদিন বাদে দেব । 
  • Kuntala | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০২514807
  • বেশ  লাগছে . অনেক নতুন  ব্যাপার  জানছি. 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন