এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • [বাংলা] ছবির ব্যবসা

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ জানুয়ারি ২০২৩ | ৪৩৫ বার পঠিত
  • | | | | | | | |
    আগে একটা ছবি দেখে কারুর ভালো লাগলে সেটা আরেকবার দেখার একমাত্র উপায় ছিল আবার হলে গিয়ে দেখা। এভাবেই কিছু ছবি এক বছর ধরে একেকটা হলে চলত । ব্যাপারটা কিছুটা বদলাল ভিএইচএস আসার পর। কোনো ছবি দেখে ভালো লাগলে কিছুদিন বাদে দর্শক তার ভিএইচএস ক্যাসেট কিনে বাড়িতে রেখে দিতেন এবং যতবার ইচ্ছে দেখতেন। আরো কিছুদিন বাদে এল সিডি , ডিভিডি। 

    সস্তায় এত পুরোনো ছবির সিডি , ডিভিডি বাজার ছেয়ে ফেলতে কিছু সংস্থা ডিভিডি ভাড়া দেবার ব্যবসা শুরু করেছিল। অর্থাৎ একটা লাইব্রেরীর মতন ক্যাটালগ থাকবে , কেনার বদলে আপনি সেখান থেকে বেছে একটা ছবি আনিয়ে দেখে নেবেন। বদলে কয়েক দিনের ভাড়া দিয়ে দেবেন। নেটফ্লিক্স এরকমই একটা ডিভিডি ভাড়া দেবার সংস্থা ছিল , অনলাইন অর্ডার করে দিলে যারা নিজেরাই আপনার বাড়িতে পার্সেল করে ডিভিডি পৌঁছে দিত। একসময় নেটফ্লিক্স ডিভিডি থেকে সরে ধীরে ধীরে ছবি ডিজিটাল স্ট্রিমিং করা শুরু করে এবং সস্তায় বহু ছবির পাশাপাশি প্রচুর কেবল টিভি শোরও  ডিজিটাল স্বত্ত্ব কিনে নেয়। কিছুদিন যাবার পর নেটফ্লিক্স বুঝতে পারে শুধুই পুরোনো ছবি বা টিভি শোর ডিজিটাল স্ট্রিম করে ব্যবসা বাড়ানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন নিজস্ব টিভি শো এবং ছবির প্রযোজনা এবং দেখানোর ব্যবস্থা করা। যেহেতু এই নতুন নিজস্ব টিভি শোগুলো শুধুমাত্র নেটফ্লিক্সের দর্শকরাই দেখতে পাবে তাই নতুন বহু দর্শক সেই টানে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা শুরু করবেন। 

    অর্থাৎ ওটিটির ব্যবসার মূল বিষয় দুটো -
    [১] যেকোনো ওটিটিকে একটা ডিজিটাল ক্যাটালগ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং সেখানে নিয়মিত নতুন নতুন কন্টেন্ট যোগ করে যেতে হবে যাতে সেগুলো দেখার টানে নতুন নতুন দর্শকরা প্ল্যাটফর্মটা ব্যবহার করা শুরু করেন 
    [২] যে দর্শক আজকে থেকে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা শুরু করলেন ,  নিশ্চিত করতে হবে যেন তিনি প্রতি বছর সাবস্ক্রিপশন রিনিউ করে যেতে থাকেন

    এই দ্বিতীয় পয়েন্টটা ওটিটির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ। আপনি নেটফ্লিক্স ব্যবহার করা শুরু করে এক বছর বাদে আর রিনিউ করলেন না , বদলে প্রাইম ব্যবহার করা শুরু করলেন , সেক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সের ক্ষতি। ওদিকে প্রাইমেরও নিজস্ব ভালো ভালো ওয়েব সিরিজ বা ছবি আছে যা আপনি নেটফ্লিক্সে দেখতে পাবেন না। আদর্শ হচ্ছে যদি আপনি দুটোই ব্যবহার করেন , সেক্ষেত্রে সবারই লাভ। 

    এবার একটু বাংলা ওয়েব সিরিজ বা ছবির ক্ষেত্রে ওটিটির দিকে তাকানো যাক। ধরা যাক আপনার পুরোনো কলেজের বন্ধুদের হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপে হঠাৎ একদিন আপনি দেখলেন সবাই 'ক' বলে একটা ওয়েব সিরিজ নিয়ে আলোচনা করছে আর সেটা আছে একটা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। আপনি সেখানে গিয়ে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলেন তিন রকম সাবস্ক্রিপশন আছে - তিন মাসের , ছ মাসের এবং এক বছরের। আপনি শুধুই 'ক' দেখতে এসেছেন বলে তিন মাসের প্ল্যানটাই নিলেন। মনে ভাবলেন যে আগে তো এটা দেখে নেওয়া যাক , তার পর আর কি কি আছে দেখা যাবে। তাই হল। 'ক' দেখে আপনার ভালো লাগল খুব , সেটা শেষ করে প্ল্যাটফর্মে দেখলেন আরো ভালো ভালো পুরোনো ছবি আছে। সেসব এক এক করে দেখতে দেখতে তিনমাস চলে গেল। 

    ইতিমধ্যে প্রথম পয়েন্টটা মাথায় রেখে ওটিটিটি আরো কিছু নতুন ওয়েব সিরিজ নিয়মিত যোগ করে চলেছে। যেমন আ , এ , ঐ এরকম কিছু কিছু। এগুলোর টার্গেট অডিয়েন্স এক নয়। যারা 'ক' দেখতে এসেছিল তাদের ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু  তিনমাস চলে গেছে বলে আপনি এবার ছমাসের জন্য রিনিউ করলেন এটা ভেবে যে  হয়ত 'ক'র মত একটা ভালো ওয়েব সিরিজ আবার চলে আসবে। 

    হলোও তাই , তিন যোগ ছয় অর্থাৎ নমাস পুরো হবার একটু আগে আপনি সবে দোনামোনা করছেন আবার রিনিউ করবেন কিনা , আবার আপনার পুরোনো কলেজের বন্ধুদের হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপে দেখলেন নতুন একটা সিরিজ এসেছে -'জ'। আপনি সিরিজটা দেখলেন এবং ভালো লাগল। সমস্যাটা হচ্ছে এটার গল্প একটা পর্বে শেষ হল না , অর্থাৎ 'জ'র দ্বিতীয় পর্ব আসবে। 

    আপনি একটা ফাঁপরে পড়লেন , 'জ'র দ্বিতীয় পর্ব  দেখতে গেলে আবার সাবস্ক্রিপশন রিনিউ করতে হবে। কিন্তু এবার কদিনের জন্য করবেন? বার বার রিনিউয়ালের ঝামেলা মেটানোর জন্য আপনি এবার সোজা এক বছরের জন্য টাকা দিয়ে দিলেন । অর্থাৎ ওটিটি টি দ্বিতীয় পয়েন্টটাতেও সফল হল। শুধু কিছুদিন পর দেখলেন বাকি যে সিরিজগুলো আপনার পছন্দই নয় সেগুলোর পর পর নতুন সিজন আসছে কিন্তু 'জ'র দ্বিতীয় পর্বের আসার কোনো পাত্তাই নেই । এক বছরের টাকা তো আপনি দিয়ে দিয়েছেন অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। এবং মাঝে মাঝে ফাঁক পেলে সময় কাটাতে টেনে টেনে ওই অন্য সিরিজগুলোই দেখে চলা। 

    স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মদের মূল জোরের জায়গাটা হল , স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এমন যেকোনো মানুষ তাদের একজন সম্ভাব্য ক্রেতা এবং সেই সংখ্যাটা প্রতি শুক্রবার হলে গিয়ে টাকা দিয়ে নতুন নতুন ছবি দেখতে চান সেরকম মানুষের সংখ্যার থেকে অবশ্যই বেশি। 
     
    এতক্ষণ বলা হচ্ছিল অরিজিন্যাল কনটেন্ট এবং পুরোনো ছবিদের কথা। অতিমারীর শুরুর দিকে লকডাউন পর্বে এই ব্যবসাতে বদল এসেছিল। সমস্ত এক্স দের শুটিং বন্ধ থাকায় এবং জেড দের হল বন্ধ থাকায় ওয়াইরা প্রথম একটা বড় সমস্যার মুখোমুখি হলেন। তাদের কাছে বহু ছবি তৈরি হয়ে পড়ে ছিল কিন্তু মুক্তি দেবার কোনো উপায় ছিল না। সেসময় ওটিটি গুলো এগিয়ে আসে এবং ছবিগুলো হলে মুক্তি পাবার আগেই ওটিটি তে মুক্তি পেতে শুরু করে। এসময় ওটিটি গুলো প্রচুর নতুন দর্শককে আকর্ষণ করেছিল যারা আগে এই সমস্ত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। হলের বদলে ছবি সরাসরি ওটিটিতে বিক্রি করে ওয়াইরা ভালো লাভও করছিলেন। সমস্যাটা শুরু হল যখন দেখা গেল এই সুযোগে বেশি টাকা দিয়ে এমন ছবি ওটিটিরা কিনে ফেলেছে যে সেগুলো দেখতে দর্শক একেবারেই আগ্রহী না। স্যাটেলাইট টিভির সঙ্গে ওটিটির প্রধান পার্থক্য - স্যাটেলাইট টিভির বিজ্ঞাপনেই ছবির স্বত্ব কেনার টাকা উঠে আসে কিন্তু ওটিটি তে কোনো বিজ্ঞাপন থাকেনা। ওটিটি সরাসরি দর্শকদের সাবস্ক্রিপশন প্ল্যানের ওপর নির্ভরশীল। তাই এখন আর যেকোনো ছবির ডিজিটাল স্বত্ত্ব কেনার আগে ওটিটিরা দেখে নিতে চাইছে আগে বক্স অফিসে ছবিটা কেমন ব্যবসা করে এবং তারপর সেই অনুযায়ী তারা দাম দিচ্ছে। আশার কথা এই যে এখন আবার বহু দর্শক হলে ফিরছেন এবং হল/প্লেক্সের সঙ্গে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই ছবির ব্যবসার নতুন মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে । 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন