এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্ট্রাইক দা পয়েন্ট - ২ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ আগস্ট ২০২২ | ৫৬৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ফর্টিফাইভ বাই ওয়ান সূর্য সেন স্ট্রীট। এ টু জেড ডিজিটাল। বেলা এগারোটা। মাঝারি সাইজের দোকানঘর,  পাঁচ ছ জন লোক কাজ করছে। অনেকগুলো কম্পিউটার এবং নানারকম  যন্ত্রপাতি দেখা যাচ্ছে। একজন দাড়িওয়ালা লোক দোকানে এসে দাঁড়াল। বাইরে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে।  নানাধরণের কাজ নিয়ে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে বেশ চালু দোকান। 
    একটা দাড়িওয়ালা স্বাস্থ্যবান লোক দোকানের ভিতর পা রাখল। সামনের মনিটরের স্ক্রিনে চোখ রেখে একমনে মাউস নাড়াচাড়া করছিল একটা তেইশ চব্বিশ বছরের ছেলে। তাকে লোকটি জিজ্ঞাসা করল, 'বৈকুন্ঠবাবু আছেন নাকি?'
    ছেলেটি মনিটরের স্ক্রীন থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, 'উনি তিনটের পর আসেন .... কেন কি কাজ আছে বলুন না?'
    ----- 'কাজ মানে ... ওনার সঙ্গেই একটু দরকার ছিল ... ফোন নাম্বারটা পাওয়া যাবে?'
    ভিতর দিকে বসা একজন বয়স্ক ভদ্রলোককে দেখিয়ে বলল, 'ওনার সঙ্গে কথা বলুন ...'
    সে ভদ্রলোকও একটা ডেস্কটপের সামনে বসে কি সব কাজ করছেন।  সেখানে গিয়ে দাড়িওয়ালা বলল, 'বৈকুন্ঠবাবুর ফোন নম্বরটা পাওয়া যাবে?'
    ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে বললেন, 'ফোন নম্বর দিতে পারব না ..... কিছু কাজ থাকলে আমাকে বলতে পারেন। আর যদি দেখা করতে হয় বিকেলের দিকে আসবেন। নটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে ...'ভদ্রলোক আবার কাজে মন দিলেন।
    কলতান বাড়ি ফিরে দাড়ি টাড়ি সব মুখ থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে ভাবল, 'ধুসস্ ... এটার কোন দরকার ছিল না ...'
    বিকেল পাঁচটায় আবার গেল কলতান সূর্য সেন স্ট্রীটে দাড়ি টাড়ি লাগিয়েই। ভাবল, যদি তাকে চিনে ফেলে। 
    দোকানের সামনের দিকে সেই অল্পবয়েসী যুবক কম্পিউটারের মনিটরে চোখ ফেলে মাউস ঘুরিয়ে চলেছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে কলতান বলল, 'বৈকুন্ঠবাবু এসেছেন নাকি?'
    ছেলেটা দোকানের বাইরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, 'হ্যা,  ওই যে ... বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ...'
    কলতান দেখল দোকানের একপাশে একজন রোগামতো পঞ্চাশ বাহান্ন বছরের সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। মাঝারি উচ্চতা, ফর্সা গায়ের রঙ।
    কলতান তার পাশে গিয়ে বলল, 'দাদা একটু কাজ ছিল ....'
    বৈকুন্ঠবাবু কলতানের দিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসিমুখে বললেন, 'হ্যা  বলুন ...'
    ----- 'মিস্টার দেবব্রত চৌধুরী আমাকে এখানে পাঠালেন ....'
    ---- 'দেবব্রত চৌধুরী মানে ... ওরিয়েন্টাল ট্রেডস-এর ওই ....'
    ---- 'হ্যা হ্যা ... উনিই ...'
    ---- 'আচ্ছা আচ্ছা ... বুঝতে পেরেছি ... বলুন বলুন ....'
    ভদ্রলোক তার হাতের মোবাইলটা মুখের কাছে তুলে কি একটা দেখতে লাগলেন। কলতানের বুঝতে কোন অসুবিধে হল না যে তার একটা ছবি তুলে রাখা হল।
    বৈকুন্ঠবাবু হাত নীচে নামিয়ে কলতান কে বললেন, 'হ্যা বলুন বলুন ....'
    ----- 'বলছি যে ... একটা সিগনেচার বসাতে হবে একটা ডকুমেন্টে .... একদম যেন অরিজিনাল লাগে ....'
    বৈকুন্ঠবাবু এদিক ওদিক দেখে নিয়ে বললেন,
    'একটু এপাশে সরে আসুন .... হ্যা,  হয়ে যাবে ... একদম অরিজিনাল  লাগবে,  বুঝতেই পারবে না কেউ ...  আপনি চৌধুরী বাবুর  রেফারেন্সে এসেছেন ... খরচটা একটু বেশি পড়বে এই আর কি ... বুঝতেই তো পারছেন ...'
    ----- 'আচ্ছা সে ঠিক আছে .... কাজটা যেন পাকা হয় একদম ...'
    ----- 'ও ব্যাপারে কোন চিন্তা করবেন না ... ম্যাটারটা এনেছেন? সিগনেচারটা মোবাইলে ছবি তুলে আনলেও হবে ... ওটা থেকেই স্ক্যান করে নেব। একদম ডিজিটাল স্ক্যানিঙ।  মাদার কপিটা এনেছেন তো? .... মানে যেখানে ক্যারেকটারটা ফেলতে হবে ....' 
    ----- 'না ... ওগুলো এখন আনতে পারিনি। কাল নিয়ে আসব ... কাজটা নিয়ে একটু টেনশান আছে .... আমি তিন হাজার টাকা অ্যডভান্স করে দিয়ে যাচ্ছি .... এই নিন ...'
    বৈকুন্ঠ বসাক এই অপ্রত্যাশিত অর্থ আমদানিতে
    বিগলিত হয়ে বললেন, 'এটা আজকেই দরকার ছিল না ....'বলে হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে নিলেন। 
    কলতান বলল, 'পেমেন্টের জন্য কোন চিন্তা করবেন না ... আরও পাবেন। কাজটা ঠিকমতো হওয়াই হল আসল। আচ্ছা ... দেবব্রতবাবুদের কাজটা একটু দেখতে পারি কি? তা'লে একটু আন্দাজ পেতাম যে কাজটা এখান থেকে করাব কি করাব না ....'
    তাই ঝুঁকির কথা মাথায় থাকলেও শাঁসালো মক্কেল হাতছাড়া হয়ে যাবার আশঙ্কায় বৈকুন্ঠবাবু অনেক দোনামোনা করে শেষ পর্যন্ত বললেন, 'না মানে .... এটা নীতিবিরুদ্ধ কাজ ... আমরা কাস্টমারের প্রাইভেসি ভায়োলেট করতে পারি না ... তারা আমাকে বিশ্বাস করে কাজটা দিয়েছিলেন ... এটা বেইমানি হয়ে যাবে ... বুঝলেন না ...'
    কলতান নির্বিকারভাবে বলল, 'হ্যা ... সে তো নিশ্চয়ই .... আপনার কথা অস্বীকার করা যায় না ... ঠিক আছে ... আমি অন্য কোথাও দেখি তা'লে। কাজের কোয়ালিটি না দেখে অর্ডারটা দিতে পারব না। দিন টাকাটা দিন ....'
    কলতান অ্যডভান্সটা ফেরত চাইল।
    ---- 'আরে দাদা... শুনুন শুনুন ... রাগ করলে হবে? আমি কি দেখাব না বলেছি ... হাজার হোক আপনি তো চৌধুরী বাবুরই লোক ... একটু দাঁড়ান ...' 
    বৈকুন্ঠবাবু ভিতরে চলে গেলেন। মিনিট সাতেক পরে একটা কাগজ নিয়ে বাইরে এলেন। বোধহয় কম্পিউটারে ডকুমেন্ট ফাইল থেকে প্রিন্ট আউট বার করা হল।
    ----- 'এই যে ... আসুন ... একটু সরে আসুন এদিকে। দেখুন ... দেখে নিন ... মিছিমিছি রাগ করছেন ...'
    কলতান দেখল ওরিয়ন্টাল ট্রেডসের দশ লাখ টাকার পি.এ। তলায় একমাত্র সাক্ষরকারি ফিনান্স ম্যানেজার অম্বরীশ চ্যাটার্জী। প্রাপক সুর ইন্ডাস্ট্রিজ।
    ----- 'দেখুন দেখুন ... প্রিসিশানটা একবার দেখুন .... ধরতে পারছেন কিছু? পি.এ টা চৌধুরী বাবুদের সাপ্লাই দেওয়া, আর অম্বরীশ চ্যাটার্জীর সইটা মোবাইল ফোন থেকে  নেওয়া ... ধরতে পারছেন কিছু ... আমাদের কাজের কোয়ালিটি আলাদা। আসল নকল ধরতে পারবেন না কিছু। পয়সা এমনি নিই না দাদা ...'
    ----- 'ঠিক আছে এটা আমার কাছে থাক ... কাজে লাগবে ...', দাড়ি লাগানো কলতান বলল।
    বৈকুন্ঠবাবু আঁতকে উঠে বলল, 'না না ওটা পারব না দাদা .... মাফ করবেন। ধর্মে সইবে না। বেইমানি করতে পারব না। আপনি কাস্টমার হিসেবে কাজের কোয়ালিটিটা দেখতে চেয়েছিলেন, দেখিয়ে দিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারব না  ....'
    ঠিক এই সময়ে রাস্তার ওধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লম্বামতো লোক ওদের সামনে এসে দাঁড়াল।
    রাস্তার ওপারে থেকে ....'তা যখন পারবেন না ... তা'লে চলুন আমার সঙ্গে। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ওখানে।'
    বৈকুন্ঠবাবু চমকে উঠে লোকটির দিকে তাকালেন।
    ------ 'কোথায় ... কোথায় যাব? কে আপনি?'
    লম্বামতো লোকটি বলল, 'থানায়। আমি বৌবাজার থানার ওসি বিদ্যুৎ তরফদার।'
    কলতান বিদ্যুতের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে একগাল হেসে বলল, 'থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ ব্রাদার ... ঠিক সময়ে এসে পড়ার জন্য ...'
    ----- খবরটা ঠিক সময়ে দিয়েছিলে বলেই তো ঠিক সময় আসতে পারলাম ... এটাই তো আমাদের কাজ কলতানদা ... দাড়িটা খুলে ফেলতে পার এবার ...'
    ----- 'এখানে না ... থানায় গিয়ে খুলব।'
    কিন্তু বৈকুন্ঠবাবু অত সহজ পাত্র নয়। প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও দ্রুত সামলে নিলেন নিজেকে। আগেও দু একবার এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তিনি রুখে দাঁড়ালেন ---- 'থানায় যাব মানে? চার্জটা কি আমার এগেনস্টে? অ্যরেস্ট ওয়ারেন্ট আছে আপনার কাছে? দাঁড়ান আমার উকিলকে ফোন করছি ...'
    বৈকুন্ঠ বসাক উত্তেজনায় কাঁপতে থাকেন।
    বিদ্যুৎ তরফদার বলে, 'আরে ... অ্যরেস্ট ওয়ারেন্ট কি হবে? আপনাকে কি অ্যরেস্ট করছি নাকি! আপনাকে থানায় যেতে বলছি শুধু কিছু কথা জিজ্ঞাসা করব বলে। ব্যাস ... তারপরেই আপনি চলে আসবেন। আপনার এগেনস্টে কি চার্জ সেটা আপনি এখনও বুঝতে পারেননি? আপনি এতক্ষণ ধরে যা যা বলেছেন সব রেকর্ডেড হয়ে গেছে। চলুন চলুন .... এত ফালতু বকাবেন না .... নইলে এমন কেস দেব .... বেরোতে পারবেন না একদম ....'
    এবার বৈকুন্ঠবাবু বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। বিস্মিত চোখে কলতানের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
    কলতান বলল, 'বৈকুন্ঠবাবু ...  আমি কিন্তু এসবের মধ্যে নেই। আমি নিপাট ভালমানুষ ... আমি কোন পুলিশ টুলিশ নই ... বুঝলেন না ....'
    বৈকুন্ঠবাবু কলতানের দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বিদ্যুৎ তরফদারের
    ফিরে বললেন, 'চলুন দেখি ... কোথায় যেতে হবে ... আচ্ছা দাঁড়ান দোকানে একবার বলে আসি ....'
    'স্ট্রাইক দা পয়েন্ট ব্লাইন্ডলি অ্যন্ড ফলো দা ওয়ে .....'
    বিদ্যুৎ আর কলতান বৈকুন্ঠ বসাককে নিয়ে  থানায় এসে ঢুকল। থানার ওসি বিদ্যুৎ তরফদার নিজের চেয়ারে বসে উল্টো দিকের চেয়ারটা দেখিয়ে বৈকুন্ঠকে বলল, 'বসুন'।
    কলতান টেবিলের পাশের দিকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। রেকর্ডিঙ ডিভাইস চালু করা হল। বৈকুন্ঠবাবু কিছু বুঝতে পারলেন না।
    ----- 'হ্যা... বৈকুন্ঠবাবু এবার বলুন ...', বিদ্যুৎ বলল।
    ----- 'কি বলব?'
    ----- 'আগে বলুন এসব কাজ কতদিন ধরে করছেন?'
    ----- 'কি করেছি আমি? আমি কাস্টমারের অর্ডার অনুযায়ী স্ক্যানড আইটেম ইমপ্রেস করেছি অন্য জায়গায়। আমার এতে কি ফায়দা আছে? আমি শুধু ক্লায়েন্টের কাজটা করে দিয়েছি। এটাই তো আমার বিজনেস। আমি কি করতে পারি?'
    ----- 'ও... এটাই আপনার বিজনেস? আপনি কি বাচ্চা ছেলে? আপনি বুঝতে পারতেন না যে
    একজনের সিগনেচার অবৈধভাবে আর এক জায়গায় লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাকে ফাঁসানোর জন্য ....'
    ----- 'না না ... আমি এসব জানব কি করে? আমার তো এসব জানার কথা নয় ... আমি অর্ডার নিয়ে কাজটা করে দিই শুধু ... আমার দোকানের কর্মচারিদের জিজ্ঞেস করে দেখুন ...'
    ----- ও ... তাহলে এ ধরণের কাজগুলোর জন্য বেশি টাকা নিতেন কেন?'
    ----- 'কে বলল বেশি টাকা নিতাম? এ ধরণের টেকনিক্যাল কাজে একটু বেশি খরচ হয়ই ....'
    এবার কলতান বলল, 'একটু আগে আমাকে কি বলেছেন সব রেকর্ড করা আছে কিন্তু ... শোনাব কি ?  আচ্ছা একটুখানি শোনাচ্ছি ....'
    কলতান তার মোবাইলের ভয়েস রেকর্ড চালু করল। বাজতে লাগল, 'একটু এপাশে সরে আসুন ... হ্যা হয়ে যাবে ... একদম অরিজিনাল লাগবে ... বুঝতেই পারবে না কেউ ...আপনি চৌধুরীবাবুর রেফারেন্সে এসেছেন ... খরচটা একটু বেশি পড়বে এই আর কি ... বুঝতেই তো পারছেন ....... প্রিসিশানটা একবার দেখুন ... ধরতে পারছেন কিছু  ... পি.এ. টা চৌধুরী বাবুদের সাপ্লাই দেওয়া .... সিগনেচার টা মোবাইল থেকে নেওয়া .... আসল নকল কিছু বুঝতে পারবেন না .....'
    বৈকুন্ঠবাবু এতেও তেমন মচকালেন না।
    ----- 'এতে কি বোঝা গেল? বললাম তো এসব কাজে প্রসেসিং কস্ট একটু বেশি পড়ে ....'
    কলতান হেসে বলল, 'তাই নাকি? কে বলল কস্ট বেশি পড়ে? মেশিন কেনার খরচ তো এককালিন। প্রসেসিং কস্ট পড়ে দশ টাকা। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। তবে কাজটা ফিনিশ করার টেকনিক সবার জানা নেই ..... তার জন্য এত টাকা ! তাছাড়া আপনি অত লুকোছাপা করছিলেন কেন?'
    ----- 'ওমা ... লুকোছাপা কি করলাম? ওখানে গোলমাল আওয়াজ একটু বেশি ...তাই একপাশে গিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম ....'
    ---- 'আপনি সব কাস্টমারের সঙ্গেই কি একপাশে সরে গিয়ে কথা বলেন? আর পি.এ.টা চৌধুরীবাবুদের ..... সিগনেচার টা মোবাইল থেকে নেওয়া .... আসল নকল কিছু বুঝতে পারবেন না .... এগুলো কি অন্য কারো কথা?'কলতান জিজ্ঞেস করে ।
    ----- 'এটা কি কোন কথা হল?'
    ----- 'যাক এবার আসল কথায় আসি .... টাকাপয়সার অবৈধ লেনদেনের কথা বাদ দিচ্ছি। কিন্তু অম্বরীশ চ্যাটার্জী নামে এক ভদ্রলোককে  যে ফাঁসানো হচ্ছে সেটা আপনি বুঝতে পেরেছিলেন, না পারেননি?'
    ------ 'না না ... আমি ওসব কি করে বুঝব?'
    ----- 'আচ্ছা বৈকুন্ঠবাবু ... একজনের সই নকল করা যে ক্রিমিনাল অফেন্স সেটা আপনি জানেন তো? ওসব স্ক্যানিঙ ট্যানিঙ-এর কথা নয় বাদ দিন ...'
    ----- 'হ্যা... সে তো বটেই... মানে ...'
    ----- 'আপনি তো সেটাই করেছেন এবং করে চলেছেন। এভিডেন্স আমরা জোগাড় করে ফেলব। ওরিয়েন্টাল ট্রেডসের অম্বরীশবাবুর ফেক সিগনেচারওয়ালা পেপারটা তো ... এই যে ... আমার কাছেই আছে  ...'
    বৈকুন্ঠবাবু চুপ করে বসে রইলেন। বোধহয় মনে মনে জুতসই কিছু যুক্তি সাজাতে লাগলেন।
    বিদ্যুৎ তরফদার খুব ভদ্র ভঙ্গীতে বলল,
    'কাইন্ডলি আপনার মোবাইলটা দেবেন ....'
    ----- 'মোবাইল? কেন ...কেন?'
    বিদ্যুৎ সোজা সাপটা বলল, 'কল লিস্ট চেক করতে হবে ...'
    ----- 'কেন কেন ... আমার কল লিস্ট চেক করতে হবে কেন? আমি কি ক্রিমিনাল নাকি?'
    কলতান বলল, 'কোন অপরাধে সহযোগিতা করাও অপরাধ এটা জানেন তো। যাকে বলে অ্যকমপ্লিস।  এই যে ... আমার কাছে জলজ্যান্ত এভিডেন্স রয়েছে  ...'
    বলে কলতান হাতের কাগজটা আবার দেখায় বৈকুন্ঠবাবুকে। 
    বৈকুন্ঠবাবু চুপ করে রইলেন। খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পেলেন বাইরের বারান্দায়  একজন কনস্টেবল একটা রোগামতো লোককে জামার কলার ধরে ঠেলতে ঠেলতে ডানদিকে নিয়ে গেল। ওদিকে বোধহয় লক আপ আছে।
    বিদ্যুৎ বলল, 'কই দিন ... মোবাইলটা দিন। সময় নষ্ট করবেন না ... অনেক কাজ আছে হাতে। দেখলেন তো একজন লক আপে ঢুকল.... এক্ষুণি যেতে হবে ডায়েরি রেজিস্টার করতে  ....'
    এই সময়ে ওই কনস্টেবল দরজার মুখে দাঁড়িয়ে বলল, 'স্যার ....'
    বিদ্যুৎ বলল, 'হ্যা  ঠিক আছে ... আমি যাচ্ছি
    একটু পরে ....'
    বৈকুন্ঠবাবু বললেন, 'কল লিস্ট টিস্ট দেখে কি করবেন স্যার ?  কি জানতে চান বলুন ... যদি আমার জানা থাকে আপনাদের সাহায্য করব ...'
    কলতান এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। বলল, 'দেবব্রত চৌধুরী ছাড়া ওরিয়েন্টাল ট্রেডস-এর আর কে কে এই কাজে জড়িত আছে?'
    ----- 'আমার কোন রিস্ক নেই তো স্যার? সুর ইন্ডাস্ট্রিজের লজিস্টিক ম্যানেজার পরমব্রত সেন আছে এদের সঙ্গে .... খুব খতরনাক লোক ...'
    ----- 'এদের সঙ্গে মানে, কাদের সঙ্গে?'
    ---- 'ওই ওরিয়েন্টালের দেবব্রত চৌধুরী, গৌতম চ্যাটার্জী, শ্যামাশিস দত্ত .... আর একজন ক্লাস ফোর স্টাফ,  অচিন্ত্য না কি যেন নাম ....'
    ----- 'অচিন্ত্য দলুই ?'কলতান বলল।
    ----- 'হ্যা হ্যা... অচিন্ত্য দলুই ... এরা ক'জনে মিলে গত দেড় দু বছরে অন্তত দুকোটি টাকা কামিয়েছে।'
    ----- 'হ্যা বুঝতে পেরেছি। দেখুন ঠিক বলছি কিনা ... ওরিয়েন্টালের এই গ্যাঙ অফ ফোর
    কাউকে না কাউকে ফাঁসিয়ে পেমেন্ট রিলিজ করাত। আর ওদিকে সুর-এর পরমব্রতর কাজ ছিল কোন আইটেম ডেলিভারি ছাড়াই পার্টির আনঅথরাজড পেমেন্ট নিয়ে যাওয়া কোন  অজানা অ্যকাউন্টে। পরে টাকাটা নিজেদের  মধ্যে ভাগাভাগি হয়। এবারে পেমেন্ট অর্ডার পাসের আর কোন রাস্তা না পেয়ে অম্বরীশ  চ্যাটার্জীকে ফাঁসাতে হল।
    ----- 'দুটো কোম্পানির চেয়ারম্যান বা ম্যানেজিং
    ডিরেক্টরের কাছে এসব  ট্র্যানজ্যাকশানের কোন খবর থাকে না? এটা কি সম্ভব?'
    ------ 'খুব সম্ভব। দুটো কোম্পানির শুধু লেটারহেড ইউজ করা হতো .... ব্যাস ... কোম্পানির সঙ্গে আর কোন সম্পর্ক নেই। আর, দশ পনের লাখ ডেবিট ক্রেডিটের খবর তো আর চেয়ারম্যান রাখে না। তার জন্য সিইও ফিনান্স আছে। আর সেই শর্ষেতেই তো ভূত। হ্যা... ধরা অবশ্য খুব তাড়াতাড়িই পড়ত। সামনের এক্সটার্নাল অডিটের সময়। সে  পরিস্থিতির জন্য হয়ত এরা কোন পাকা  রাস্তা ভেবে  রেখেছিল। সেটা আমার জানা নেই।' 
    ----- 'আপনি এত কথা জানলেন কি করে?'কলতান জিজ্ঞাসা করল।
    ------ 'আমার সত্যি এত কথা জানার কথা নয়। দেবব্রতবাবু একদিন আমাকে একটা দামী বারে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি প্রচুর মদ্যপান করার পর মনের আবেগ সামলাতে না পেরে হড়হড় করে সব বলে দিলেন। যাক,  আমাকে এখন কি করতে হবে বলুন .... আমাকে দোকানে ফিরতে হবে ...'
    ------ 'কিছু করতে হবে না। কাল বেলা দুটোর সময় আমাদের সঙ্গে একটা জায়গায় যেতে হবে।'
    ----- 'কোথায় জানতে পারি কি?'
    ----- 'সুর ইন্ডাস্ট্রিজের রেললাইনের দিকের গেটের পাশে। সেখানে আপনার বন্ধুরাও আসবে ...'

    ( ক্রমশঃ )

    ***********************************************************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mousumi Banerjee | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১৩511768
  • সর্ষে হবে, শর্ষে নয়। 
    ভালো এগোচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন