এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • থাপ্পড়

    Rumjhum Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৩ মে ২০২২ | ৬৫১ বার পঠিত
  • পরাজয়...

    অনিন্দ্য ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অস্থির হাতে সিগারেটটা ধরিয়ে টান দিল। যেন কিছুটা সান্ত্বনা টেনে নিল তামাকের মধ্যে থেকে।এখন মধ্য রাত, ঘুম আসছে না। সামনে ধূ ধূ খোলা মাঠ রাতের ধূসর আলোয় জড়িয়ে পড়ে আছে যেন একরাশ মন খারাপ।এই মূহূর্তে অনুতাপে পুড়ে যাচ্ছে ওর মন। লকডাউনে ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে যেন নিজের কাছে নিজেই একটা অচেনা মানুষহয়ে উঠছে। ঘুমন্ত রোহনের কচি গালে লাল লাল আঙুলের ছাপগুলো অনিন্দ্যর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে তোলে। অনিন্দ্য বোঝেকম নম্বর পেয়ে রোহন হারে নি, থাপ্পড়টা মেরে হেরেছে তার বাপ।

    থাপ্পড় ২

    প্রত্যয় ...

    ঋজু শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে দু'চোখ বন্ধ করে বহমান জলের ধারার সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দেয়। একটা থাপ্পড় যে তার ছা-পোষাজীবনে এত প্রত্যয় এনে দিতে পারে তা  কল্পনারও অতীত ছিল এতকাল। ছোটবেলা থেকেই সে বড় লাজুক আর ভীতু প্রকৃতির।কখনও কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে উঠতে পারে নি সে ভাবে। স্কুলে, কলেজে, ব্যক্তিগত জীবনে  চোখের সামনে ঘটে যাওয়াঅন্যায়গুলোকে কেমন এড়িয়ে গেছে সযত্নে। না দেখার ভাণ করে সরে গেছে মোক্ষম মূহূর্তে। কিন্তু আজ কি যে হয়ে গেল! সহকর্মী সুতপার সঙ্কোচ ও অপমানে জড়ো হয়ে থাকা চেহারাটা দেখে কেন জানি না নিজের মরা বোন তুতুলের কথা মনে পড়ে গেল।তুতুলের ছোট্ট শরীরটা পুড়ে গিয়ে যেন ঠিক অমন গুটিয়ে গেছিল, লজ্জায় অপমানে। ঋজু সেদিন পারে নি। কিন্তু আজ সপাটেথাপ্পড়টা মেরেছিল বসের গালে। 

    ঋজু জানে কাল তার চাকরিটা থাকবে না তবু খুব ভাল লাগছে খুউউব.....

    থাপ্পড় ৩

    শিক্ষা....

    কৃতি ছাত্ররা আজ এসেছে স্কুলের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে। এই মিলনমেলায় যোগ দিতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছেসমিতের। কত বছর পরে দেশে আসা। তার ওপর স্কুলে এসে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া। এ যে কত বড় আনন্দের দিনতা মুখে বলে বোঝানো যায় না। কত পুরোণো কথা মনে ভিড় করে আসছে। স্কুল প্রাঙ্গণেই হতো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, স্পোর্টস ডে। সমিতের মনে আছে ওদের ক্লাসে হীরক স্পোর্টসে সব থেকে ভাল ছিল। প্রতি বছর স্পোর্টসের দিন গলায় এক গাদামেডেল ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরত হীরক। হিংসা হতো,  প্রবল হিংসা হতো সমিতের কারণ ওকে চিরকাল রানার্স আপের মেডেল নিয়েইসান্ত্বনা পেতে হয়েছে। সমিত যেন মনে মনে চল্লিশ বছর পিছনে চলে গেছে। 200 মিটার দৌড়ের জন্য লাইন করে দাঁড়িয়ে ওরা।ওই তো স্যাফ্রন হাউসের মৃন্ময়, পাশে হোয়াইট হাউসের হীরক, তার পাশেই গ্রীন হাউসের সমিত। আরও সব কারা ....এখন স্মৃতিঝাপসা হয়ে ওঠে। ছেলেদের প্রবল চিৎকারে কান পাতা দায়। সমিতের ওপর নির্ভর করছে এবছর গ্রীন হাউস জিতবে কিনা। প্রবলচাপের মুখে দাঁড়িয়ে সমিত মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, everything is fair in love and war...
    চূড়ান্ত মূহূর্তে পিছিয়ে পড়তে পড়তেও পা টা পাশের ট্র‍্যাকের দিকে সামান্য এগিয়ে দেয় সমিত। গড়িয়ে যাচ্ছে একটা পাহাড়প্রমাণপ্রতিভা। পিঠে একটা বৃদ্ধ হাত রাখার স্পর্শ টের পায় সমিত। সম্বিত ফিরে পায়। হেড স্যার! সেই শক্তপোক্ত চেহারা আর নেই।বয়স এসে থাবা বসিয়েছে দাপটের শরীরে, চুলে পাক। সেদিনের ঘটনার পর সমিতকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন স্যার।সমিতের গালে সপাটে একটা চড় কষিয়েছিলেন আর বলেছিলেন অন্যকে টেনে নামিও না আজ থেকে নিজে বড়ো হওয়ার চেষ্টাকরো। সেই শিক্ষা আজ তাকে অনেক অনেক বড়ো মানুষ করে তুলেছে। সমিত নীচু হয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে, উঠে দাঁড়ায়। সবারসামনে একটা গাল বাড়িয়ে দেয় স্যারের দিকে। স্যার মৃদু একটা থাপ্পড় মারেন প্রতিষ্ঠিত পরিণত সমিতের গালে। স্নেহের স্পর্শেচক চক করে ওঠে ওর চোখ।

    থাপ্পড় ৪
    সিদ্ধান্ত

    বাড়ির সবাই রিনিকে বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখতে বলছে। বার বার একই কথা শুনতে শুনতে রিনির কান ঝালাপালা হয়ে গেল।বিশেষ করে রিনির বাবা আর মা। যখনই সুযোগ পাচ্ছে ওই একই কথা, " এত সামান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাকি এই সিদ্ধান্তনেওয়া তিলকে তাল করার সামিল।" রিনি গভীর শ্বাস ফেলে। সে জানে এই মানুষগুলো তার ভাল চায় কিন্তু এটাও ঠিক তাদেরকাছে যেটা ভাল বলে মনে হয় সেটাতে রিনির ভাল নাও হতে পারে। যা ঘটেছে সামান্য মনে হলেও আসলে তার ব্যপ্তি রাতেরঅন্ধকারের মতো। আলো না জ্বালালে যেমন সে আঁধার ঘোচে না তেমনই প্রতিবাদ না করলে এ ঘটনার ব্যপ্তি একদিন  তাদেরগ্রাস করবে। তার স্বামী শুভজিৎ সেদিন যে থাপ্পড়টা মেরেছিল সেটা আসলে সেই অন্ধকারের প্রতীকমাত্র। রিনির ডিভোর্সেরসিদ্ধান্ত তাই দিগন্তে আলোর রেখা। মাথা তুলে মানুষ হয়ে বাঁচার লড়াইয়ের শুরুয়াৎ।

    থাপ্পড় ৫
    হাত ধরে তুমি.....

    আড়ি! আড়ি! আড়ি!
    • আর কোনও দিন তনুর সাথে কথা বলব না। 
    • কেন কি হয়েছে সোনা?
    • জানো আজ আমায় কেমন জোরে থাপ্পড় মেরেছে?
    • সেকি! ওমা দেখি। তাই তো গালে এখনও লাল লাল কিসের আঁচড়, দেখি দেখি।
    • তনু একটা পচা, তনু একটা বাঁদর।
    • তুমি বুঝি তনুকে বাঁদর বলেছ?
    • বলবই তো। ও যে আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে নতুন পেন দিয়ে কি সব হিজিবিজি....আমি বললুম তনু একবার দিবি? দিলই নাতো। একবার দে না তবুও দিল না।
    • তাই কি তুমি 
    • হ্যাঁ হ্যাঁ ও একটা ছুঁচো, একটা হুনুমান, একটা ইডিয়ট!
    • ছি: বন্ধুকে কি এসব কেউ বলে? আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো দেখি রাগ করতে হবে না। 


    দু' চোখে ঘনিয়ে আসে ঘুমের ঘোর। কচি মুখখানা অপাপবিদ্ধ। বুবু স্বপ্ন দেখে .....
    তনু আর ও দুজনে হাত ধরে চলেছে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, সাত সমুদ্র নদী পেরিয়ে সে এক রূপকথারই দেশে।চারদিক আলোয়আলো।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২৩ মে ২০২২ | ৬৫১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • tutul shree | ২৫ মে ২০২২ ১৫:২৫508055
  • বাহ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন