এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্বগগ

    aftab hossain লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জুলাই ২০২১ | ১১৫৬ বার পঠিত
  • হরদিগছ স্টেশন থেকে নেমে কিলোমিটার চার পূব দিক পর যে চা বাগানগুলো, তার ঠিক শেষ বাগানটার নীচে মরালি বুড়ি রোজ বসে। ভিক্ষাতে। সারাদিনে রাস্তায় গোটা কুড়ি লোক চলে তাও আশায় বসে। কোন কোন দিন নিরাশ হয়, কোনদিন কিছু জুটে। চা কামিনরা কাজ সেরে ফেরার সময় বাঁচা কুচি দিয়ে যায়। তাই দিয়েই চলে কোনরকমে।
    আমি আবার বাউন্ডুলে। বউ সংসারের সব হওয়ার পর থেকেই বাউন্ডুলেপনা আরও বেড়েছে। পরিচয় হবার কথা নয়, কিন্ত হল। নিত্যদিন ও পথে মাছ মারার শখে যাবার পথে ক্ষণিক মগজে ধোঁয়া, সঙ্গী মরালি বুড়ি। আমায় বলে তোর সাদা বিড়ির টেস্ট হেবি। ফোকলা হাসি দেখলে দূর বিদেশে মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ে। জন্মধ্যাত্রীকে সিগারেট খাওয়াচ্ছি এটা ভেবেই রোজ মর্ডান মাদার্স ডে হয় আমার। বাদ দিন ওসব…




    ১৪তে পরের ঘরে, ১৫তে পেটভার, ১৬এর শুরুতে একটা আধখোঁড়া বাচ্চা, আর ১৭ থেকে রোজ মরদটার মার..
    অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত… মরালি বুড়ি শোনাচ্ছিল..
    আমি ধোঁয়াতে সুখটান.. অবসরে ছোট্ট প্রশ্ন - এখন মরদ থাকে না সঙ্গে?
    কি করে থাকবে শুনি.. আধখোঁড়া মরলো ৩ মাসে.. তারপর বলবুনি.. শরম লাগে। জোরাজুুরিতে বললো, খোঁড়া মরার পর থেকে আমিও খুব শুখা। মরদ ভেতরে গেলে খোঁড়ার লিকলিকে পা টা মনে করে বড্ড কান্না লাগতো মনে.. কামিন মরদের তাগতে হাঁফতাম.. সুখ পেত না মনে হয়।
    কদিন পর থেকে আমিও শুখা। মাসের রক্ত বন্ধ। সব্বাই বললো কুলটা। একবছর পরও যখন রক্ত নাই মাসে, মরদটা এখানে ফেলে গেল সাথে বদনাম, বাঁঁজা। তারপর কত কাল। কেউ নাই। মরদ খোঁজ নেয় না। খোঁড়া রাতে রোজ স্বপ্নে আসে। খাবার লগে কাঁদে। টিপে টিপেও বুকে দুধ নাই রে.. খোঁড়ার কান্নায় বুক ফেটে চিৎকার করে উঠে যাই মাঝরাতে। খুব চিৎকার করি কাান্নায়। লোকে বলে ডাইনি ডাকছে মাঠে।

    শুনছিলাম।

    বললো তোর ভয় লাগে না? সব্বাই ডাইনি বলে আমায়।
    হাসলাম অল্প। বললাম রাখো কিছু টাকা। লকডাউন চলছে। বেরোলে পুলিশ হল্লা করে। কদিন পর আসবো আবার।

    চোখ নিচে টেনে আমতা আমতা। বললাম কিছু বলবে নাকি? বললো - তোর ফোন আছে? উতে ছবি উঠে? মরদটা কে দেখার বড্ড লোভ হয়। বিয়ার দিন আমাকে বরফগলা জল দিয়েছিলো। বলিস মরার আগে একবার যদি লাল টিপ দেয় মাথায়, তাইলে স্বগগে যাব। বলেই ফিকফিক হাসি। বললাম নামধাম দাও। সময় হলে ছবি নিয়ে আসবো। বলে দেখবো।

    লকডাউনে অনেক দিন যায়নি ওধারে। তার বদলে ত্রাণ দিচ্ছিলাম। সাত আট জায়গায় ঘুরে ঘুরে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আট প্যাকেট ত্রাণে বারো বার সেলফি দেখলাম, আবার হিরো হন্ডা নিয়ে ত্রাণ নিতে আসাও দেখলাম। ওসব থাক.. কদিন থেকে বড্ড মন চঞ্চল। লোকে বলে ইনটিউশন বলে নাকি কিছু হয়। বিজ্ঞান মঞ্চের ডাকে সকালে ফোন এলো। শুনলাম এক ডাইনিকে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলেছে। জায়গাটার নাম আর লোকেশন শুনেই কু ডাকলো মনে। বিজ্ঞানের যুগেও ইনটিউশন মেলে। গিয়ে দেখি বাগানের মাঝে মরালি বুড়ি। প্রায় মরা। দু পায়ের মাঝে গ্যালন কয়েক রক্ত। কয়েকটা শ্বাস বাকি তখনো। ভিড়ের মাঝে চিনতে পারলো মনে হয়। চোখের চাউনি দেখে গিয়ে বসলাম পাশে। যন্ত্রনায় বাঁকা হাসলো।
    বললাম কি করে হল? বললো -
    উরা ছিড়লো আমাকে। বললাম আমি ডাইনি। তাও ছাড়লুনি। খুুুউবব কষ্ট হল। তারপর খুব রক্ত। খুব। ফিনকি দিয়ে। ৪০ বছরের জমা রক্ত। একসাথে বেরোলো।
    রক্ত দেখে উরা ভয় পেল। মারলো। বললাম মারিস না। আমি মরাই। কাউকে বলবুনি। শুধু মনভরে রক্ত দেখতে দে। কত যুগ রক্ত দেখি নি। উরা আরো ভয় পেল। বললো শালি ডাইনি। তুই মর।

    কষ্টে ঘাড় বেঁকিয়ে বললো দেখ কত রক্ত আমার। বলিস মরদটাকে আমি বাঁজা নই। বলিস।

    মাথাটা একদিকে ঝুঁকলো। বুঝলাম শেষ।

    সাথের ডাক্তার বাবু বললেন ভ্যাজাইনাল টিউমার জাতীয় কিছু ছিল। ব্রুটলি রেপড। তাই ব্লাস্ট করেছে। বেশি ব্লিডিংএ মরলো।

    শুনলাম লোকজন তাড়াতাড়ি লাশ উঠানোর কথা বলছে।

    এক মেয়ের মুখে শুনলাম ডাইনির রক্ত তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে। এ সময় নাকি বাঁজার বদ রক্ত মাটিতে ফেলে রাখতে নেই। পৃথিবী রাগ করে।

    আমার কি। আমি জাত বাউন্ডুলে। চললাম মরালি বুড়ির মরদ খুঁজতে। দেখি ডাইনির কপালে সিঁদুর জুটে নাকি।

    তাহলে স্বগগে যাবে।

    (স্থান, কাল, পাত্র সব কাল্পনিক)

    *************** সমাপ্ত *********
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন