এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বই পছন্দসই

  • ধনপতির চর- এক প্রবল নারীবাদী উপন্যাস

    প্রতিভা সরকার
    পড়াবই | বই পছন্দসই | ১১ জুলাই ২০২১ | ৩১৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • চরের মানুষের জীবন সংগ্রামের এই গল্প জাদু-বাস্তবের ঘরানা অনুসারী না বাস্তবতা-নির্ভর তা তর্কযোগ্য। কিন্তু এই উপাখ্যানে অবিসংবাদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীসত্তার প্রাধান্য, জল জঙ্গম ও মানবমনের রক্ষাকর্ত্রী নারীশক্তির উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠা। পড়লেন প্রতিভা সরকার।



    চর, নদী, দ্বীপের কুহক-লাগা লেখার পরম্পরা বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন এবং দীর্ঘ। এপার ওপার দুই বাংলাতেই। সেই ধারায় সেদিন পড়েছি জয়ন্ত জোয়ারদারের ভুতনি দিয়ারা। চরের মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। কিন্তু ধনপতির চর পাঠ এক অভিজ্ঞতা, যা নতুন করে ভাবায় অনেক কিছু নিয়ে। রাষ্ট্রের আধিপত্যকামিতা, মুনাফার লোভ, নারীকে পণ্য হিসেবে দেখবার প্রবণতা, শাসকের ছলচাতুরী যেমন আছে, তেমনি রয়েছে সারল্য, প্রেম, প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের বহু স্তরীয় বিন্যাস। আর সবকিছুর ওপরেই রয়েছে এক আশ্চর্য মিথের আবরণ, যা যতটা দেখায়, ততটাই আড়াল করে, পাঠককে বলে, বুঝে নাও। তোমার ওপর কেউ কিছু চাপিয়ে দিতে চাইছে না, বাপু।

    বঙ্গোপসাগরের মোহানায় কাছিমের পিঠের মতো পলি-পড়া এক চর। ধনপতির চর। কতো না কাহিনি আর আখ্যানের মালা এই দ্বীপটিকে ঘিরে। লিসবোঁয়া ( লিসবন? ) শহর থেকে ভাসতে ভাসতে আসা হার্মাদ পেদ্রু নাকি এর মালিক, এখন তা বর্তেছে তারই বংশধর ধনপতি পেদ্রুর ওপর। আশ্বিন মাসে মূল ভূখণ্ড থেকে জেলেরা মাছ ধরতে আসে এখানে, পরবর্তী ছ' মাস এই তাদের ঘরবাড়ি, সংসার। ঘরণী সেজে দলে দলে আসতে থাকে যতো নিঘিন্নে জেলেনি, শহরের ফুটপাথে ভিক্ষে বা শরীর বিক্রি করে যাদের বাকি সময়টা কাটে। যে যার মনের মানুষকে বেছে নিয়ে হোগলার ছাউনি তুলে ফেলে। ধনপতির কর্তৃত্ব মেনে নেয়৷

    এরা সবাই বিশ্বাস করে এই চর জেগে আছে এক অতিকায় কাছিমের পিঠের ওপর। যেদিন সে জেগে উঠে সমুদ্রের গভীরে নেমে যাবে, সেদিন থেকে এই চর অদৃশ্য হয়ে যাবে। নানা ভাবে পুজোআচ্চা করে তাই তারা তুষ্ট রাখতে চায় সেই বিরাট জলজন্তুকে যাতে তার গাঢ় ঘুম ভেঙে অনর্থ না হয়।

    কিন্তু অনর্থ বাতাসে ভাসে। পেটে দুটি দানাপানি পড়তেই রূপ খোলতাই হয় জেলে-মেয়েদের আর সেই আগুনে পুড়ে মরবার জন্য ব্যগ্র হয়ে ওঠে সবধরনের পুরুষ, ব্যাপারি এবং পুলিশ প্রশাসন। প্রেমের অভিনয়ের আড়ালে প্রত্যেকবারই শুরু হয়ে যায় মেয়ে-পাচারের আদিম ব্যবসা। এবার হঠাৎ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়, কারণ 'গরমেনে'র প্রতিনিধিদের হেনস্থা করে রুখে দাঁড়ানো মেয়ের দল। তাদের মুখপাত্র তিন মেয়ে - কুন্তি, বাতাসি, যমুনা।

    কুন্তি, বাতাসি, যমুনাকে দেখে হঠাৎ ম্যাকবেথের তিন ডাইনির কথা মনে পড়ে যেতে পারে। না-ও পারে, কারণ এরা প্রকৃতির আপন কন্যা, পলিমাটির নম্রতা এদের শরীরে, চোখে গহীন গাঙের ছায়া আর দ্বীপের ওপর ঘনিয়ে আসা কালো মেঘের মতো এদের খোলা চুল, মুখ যতোই ক্ষুরধার হোক না কেন! একের পর এক পুরুষ পতঙ্গের মতো ঝাঁপ দিয়েছে তাদের শরীরী আগুনে। যমুনার বয়স হয়েছে, তবু দেহে রূপের অবশেষ লেগে আছে, যেন সাদা কাপড়ে হলুদের দাগ। তার প্রাথমিক বিচ্যুতি সত্ত্বেও এই তিনজনের শলাপরামর্শে উঠে এসেছে কতো না অবাক করে দেওয়া সিদ্ধান্ত ! প্রাজ্ঞ বুদ্ধির ঝলক, 'গরমেন্ট'- কে বোকা বানাবার অনাবিল আনন্দ! ধনপতির মুখোশের ভেতরের মুখও কি যমুনা দেখেছিল সকলের আগে ? সেইই কি প্রথম বলে ওঠেনি, 'ধনপতি এদ্দিন বলেনি ইসব, এহন ওর আসল রূপ চিনা গেল,ঘুমটা খুলল তাহলি ধনপতি।'

    তিন ডাইনির মতো এই তিন নারীও রহস্যের কুয়াশাবৃত, তারা ব্যাখ্যার অতীত। তারা ভবিষ্যত দেখতে পায়, আশেপাশের লোককে দেখাতে চায়। উপরন্তু তাকে পালটে দেবার কর্তৃত্বও এরা নিজের হাতে চায়। নিজেদের জীবন নিজেদের হাতে নিতে চাওয়া এই তিনজন কিন্তু সমাজের একেবারে নিচুতলার বাসিন্দা, প্রথাগত শিক্ষা, ন্যায়নীতির কঠিন নিগড়, পেটের ভাতের সুবন্দোবস্ত কিছুই তাদের নেই। তারা ছ' মাস জেলেদের বৌ সেজে হোগলার ছাউনিতে থাকে। নকল স্বামীর মঙ্গলেচ্ছায় সিঁথি রাঙায়, অন্য কাউকে শরীর দেওয়া থেকে পারলে বিরত থাকে। বাকি ছ' মাস তারা স্বেচ্ছাচারী, কিন্তু অত্যাচারিত ও শোষিত। যে কারো ভোগ্যা। জীবনের এই বিরোধাভাস থেকে মুক্তি চায় তারা, চায় দ্বীপ পুরুষশূন্য হয়ে গেলে যাক, কিন্তু সন্তান নিয়ে তারা যেন এইখানে স্বাধীন যাপনে থাকতে পারে। মধ্যবিত্ত সচ্ছল নারীর বা নিম্নবিত্ত হলেও গৃহলক্ষ্মীর ভূমিকা তাদের জন্য নির্দিষ্ট নয়, তারা জানে। তবু লড়াই থামায় না, যেন তারা গ্রীকপুরাণে কথিত এমাজনের নারী যোদ্ধা। বিপুল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইতে প্রমাণ হয়ে যায় শারীরিক মানসিক শক্তিতে তারা কারো থেকে কম নয় এবং সে সম্বন্ধে নিজেরাও তারা খুব সচেতন।

    প্রথমজন তো বার বার নিজেকে জাদুকরী বলেছে, কাজও তার সেইরকম। উপন্যাসের শেষে সে দ্বীপের ঈশ্বরী, ধনেশ্বরী কুন্তি, বঙ্গোপসাগরে কোথায় নতুন ভাবে ভেসে উঠবে বুড়ো ধনপতির কাছ থেকে উপহার পাওয়া এই চর, জানলে সেইই জানে। সমুদ্রের উপঢৌকন আর কালের উদবর্তনে কাছিমের পিঠের মতো উঠে আসা এবং অসংখ্য 'বিত্তান্তে'র জন্মদাতা এই বালির দ্বীপ ভাসাবে না রাখবে সংসারেচ্ছু, সন্তানেচ্ছু নারীদের, তা যেন তার চাওয়ার ওপরেই নির্ভর করে আছে। লোভী মালাকার তাকে বলেছিল, তুমি ঘুম পাড়ানি মেয়েমানুষ। উত্তরে কুন্তি বলে,'... উনি ধনপতি ছদ্দার,পেদরু হার্মাদ আসলে উনিই, আমি উনির বিবি, কামরূপ কামিখ্যের মন্তর তন্তর জানি, সর্বলোকে তা জেনি গেছে ফিরিঙ্গিতলায়, তারাই ডর খায় আমাকে।'
    স্বাতন্ত্র্যকামী আত্মগর্বী নারীস্বর বার বার ফিরে আসে, কুন্তি সরকারি পাট্টা চায়, বারো মাস চরে বাস করবার অধিকার চায়, কারণ 'মেয়েমানুষ বার মাসের সংসার চায়, আমি এখন চরের মালিক, মেয়েমানুষ ছাড়া মেয়েমানুষের কষ্ট কেডা বোঝপে...।' এই চাওয়া তার ব্যক্তিগত নয়, সকল জেলেনির হয়ে এই তার দাবি। কর্তৃত্ব হারাবার ভয়ে ধনপতি পেদ্রু এতে প্রবল আপত্তি জানালে এইবার গর্জে ওঠে কুন্তি, 'আমি এ চরের মালকিন, এই চর গাং সমুদ্দুর আশমান তারা, গাঙের মাছ, গাঙের পাখি সব আমার, তুমারে আমি দয়া করে রেখেছি শুধু।'
    অনেক হয়েছে পদদলন, এখন বাতাসে বিদ্রোহের বারুদ-গন্ধ।

    কিন্তু ধনপতির চর উপন্যাসটি ইচ্ছাপূরণের আখ্যান নয়। বাস্তবে লগ্ন থাকার ফলেই চরটির ট্যুরিস্ট স্পটে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া ভবিতব্য হয়ে ওঠে। বনসৃজন হবে, রিসর্ট হবে, যে তিন রমণী তাদের অনুসারীদের নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিল, সংসার করতে চেয়েছিল, এইবার তারা পরিচারিকা হবে বা বাবুদের মনোরঞ্জন করবে অন্যভাবে।

    ধনপতির চর জাদু-বাস্তবের ঘরানা অনুসারী না বাস্তবতা-নির্ভর একটি উপন্যাস তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে, কিন্তু যে কথা মেনে নিতেই হয় তা হলো এতে অবিসংবাদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীসত্তার প্রাধান্য, জল জঙ্গম ও মানবমনের রক্ষাকর্ত্রী নারীশক্তির উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠা। তার সংগ্রাম ও অনিবার্য পরাজয়ও। এটিকে আমরা একটি সার্থক নারীবাদী উপন্যাস বলতে পারি। লেখকের অন্য উপন্যাসে এই বৈশিষ্ট এতো অমোঘ নয় বলেই আমার মনে হয়।

    বিষয়ের মহাকাব্যিক বিস্তারের সঙ্গে সঠিক সঙ্গত করে গেছে উপন্যাসটির বিশেষ ভাষারীতি, প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতে চুম্বকীয় পয়ারে লেখা মূলকথার অবতারণা। আদ্যন্ত একটি মৌলিক শৈলী! স্থানিক বর্ণনায় যেভাবে পারিপার্শ্ব আর প্রকৃতি হয়ে উঠেছে মানবমনের নানা অভিব্যক্তির প্রতিরূপ, তাতে থমাস হার্ডির কথা মনে না পড়ে উপায় নেই। 'একসঙ্গে নগ্ন রমণীরা জাগাতে থাকে সাগরের নীচে ঘুমনো ধনপতি কাছিমকে… গভীর রাতে বোধহয় জাগে ধনপতি। তারা টের পায় চর ভেসেছে বড় জাহাজের মতো...সাগরে ঢেউ উঠছে। চর দুলছে। সাগর উথাল পাথাল হচ্ছে। পেদরুর জাহাজ ভোঁ দিচ্ছে।'

    উপন্যাসের শেষ পংক্তিগুলোও এই অমোঘতায় চোবানো, বহুদিন অব্দি নাছোড় বাসা বাঁধে মনের মধ্যে।
    'ধনপতির চরের অলীক বৃত্তান্ত এই পর্যন্ত। এর পরে বৃত্তান্ত যদি রচনা করে ধনেশ্বরী কুন্তি, তা আবার লোকমুখে ঘুরবে। হাওয়ায় হাওয়ায় উড়বে। জলস্তম্ভ হয়ে আছড়ে পড়বে। ভাসিয়ে দেবে ভূখণ্ড থেকে ভূখণ্ড।'

    বহুদিন পর একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস পড়বার অভিজ্ঞতায় ধন্য হলাম !



    ধনপতির চর
    অমর মিত্র
    দে'জ পাবলিশিং
    মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ টাকা




    গ্রাফিক্স: মনোনীতা কাঁড়ার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ১১ জুলাই ২০২১ | ৩১৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ইন্দ্রাণী | ১২ জুলাই ২০২১ ১৫:২৬495735
  • মা কমলার সোনার গাগরির থেকে বেরিয়ে এসেছিল আশমান, সাগর, গাং, পানি আর ধনপতির চর। আবার এও সত্য যে চিরদিন থাকবে না ধনপতির চর। চর না কাছিম। কে জানে। থাকবে না। নিরুদ্দেশে যাবে। যেন নিরুদ্দেশ যাত্রারই কাহিনী। অমর মিত্রের অন্য কয়েকটি উপন্যাসেও এই নিরুদ্দিষ্ট হওয়া বিচিত্র রূপে এসেছে। সে অন্য প্রসঙ্গ।
    ধনপতির চর উপন্যাসের ভাষা , বুনোট, গল্পের মধ্যে গল্প কোথাও প্রাচীন উপকথা- মা কমলা মাতা মারি দয়াময় প্রভু আল্লাহ ঘোড়াদল লিসবন সব একাকার , পাশাপাশি বাস্তব যেখানে রাষ্ট্রের সন্ত্রাসকে চেনা যায় পরিষ্কার - আখ্যানের এই বিস্তারকে বিপুল বাঁধা যায় না।

    পাঠ তো আলাদা হবেই। তাই নিয়ে তো তর্ক হয় না।
    তবে আখ্যানের বিস্তার, গভীরতাকে নারীবাদী উপন্যাসের তকমা দিলে একটা অস্বস্তি হয়। মনে হয় সমুদ্রর ছবি তুলে ফ্রেমে আটকে দেওয়ালে লাগানো হল- সমুদ্র দেখতে গেলে বাঁধানো ছবির কাচ নাকে ঠেকে যাবে। তার বিস্তার , ভেসে যাওয়া কিছুই দেখা হবে না।
    এইটুকুই জানালাম। অর্বাচীনের বাচালতায় প্রতিভা কিছু মনে করবেন না- আশা রাখি।

  • ইন্দ্রাণী | ১২ জুলাই ২০২১ ১৫:৩৫495737
  • ** আখ্যানের এই বিপুল বিস্তারকে বাঁধা যায় না অথবা আখ্যানের এই বিস্তার বিপুল- তাকে বাঁধা যায় না
    এই রকম কিছু লিখতে চেয়েছিলাম- কী সব হয়ে গেল

  • শিবাংশু | ১৪ জুলাই ২০২১ ০০:২১495768
  • বিষয়টি সাগর বা আকাশের মতো'ই বিপুল। ফ্রেমে বেঁধে তাকে ছোঁয়া যায় না। বাস্তববুদ্ধির বাঁধা ফ্রেম।  প্রকৃতির কাজই বেড়া ভেঙে ফেলা। সে কখনও আসে নারী হয়ে, কখনও মাটি, কখনও বানভাসি প্লাবন। অমর মিত্র আগেও বার বার  অচেনা, বিচিত্র শিহরণের স্পর্শ এনে দিয়েছেন আমাদের। নিজস্ব ঘরানায়। এবারও,


    চমৎকার পঠন-নিষ্ঠা আলোচকের। তাঁর উৎকর্ষময় ব্যাখ্যান মূল লেখাটির  দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে। 

  • ইন্দ্রাণী | ১৪ জুলাই ২০২১ ০৬:৩৭495771
  • ধনপতির চর উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশ চোদ্দ বছর আগে। আমি পড়েছি তার সামান্য পরে- সেও এক যুগ হয়ে গেল।

    উপন্যাসের একদম গোড়া থেকেই অনিত্যতার আভাস ছিল। ধনপতির চর প্রতিদিন সরে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। চর নয়, কাছিমের পিঠ -লোকে বলে। সেই কাছিম ঘুমন্ত- অর্থাৎ জেগে উঠতে পারে , আর জেগে উঠলেই সে উধাও হবে এ তো জানাই। উপন্যাসের প্রথম কয়েক লাইনের মধ্যেই বলে দেওয়া আছে- এইটিই সত্য, চিরদিন থাকবে না ধনপতির চর।
    তো প্রথমেই অনিত্যতা বলে দেওয়া হল- শিশুকালে পড়া রাজকাহিনীতে সেই যেমন, গায়েবীর কালো চুলে চাঁদের জ্যোৎস্না নিভে যায়- সুভাগা ভাবেন গায়েবীকে এই পৃথিবীতে বেশিদিন ধরে রাখা যাবে না- এই খানে যেমন লেখার মেজাজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল -
    এই উপন্যাসেও প্রথমেই বলে দেওয়া হয়েছিল- এ'চর থাকবে না- সুর বাঁধা হয়ে গেল এখানেই। পাঠক এরপর গোটা উপন্যাস তার বিষাদ নিয়ে, তার কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করবে ভবিতব্যের- ভেসে যাওয়ার। অনিত্য এই চরকে ঘিরেই গোটা আখ্যান- সেই অনিত্য চরেই ছ মাসের সংসার, অনিত্যের চর দখলের খেলা। পাঠক গোড়া থেকেই জানে এ চরের ভবিতব্য- অনিত্যতার ব্যঞ্জনাগুলি সে আগাগোড়া লক্ষ্য করে এবং নিজেকে প্রস্তুত করে। অনিত্যতার আভাস বহুরূপে আসে- চর না কাছিম, ধনপতির পরিচয়- কিছুই স্থায়ী নয়, নির্দিষ্ট নয়, সংজ্ঞায়িত নয়- কুয়াশার ঢাকা পরানো সব--
    লোকমুখে প্রচলিত ছড়া ব্যবহৃত হয়েছে অনেক। পরে কোথাও পড়েছিলাম- এই সব লোককবিতার কিছু সংগৃহীত, কিছু লেখক নিজেই রচনা করেছেন। লোককথাগুলি, মুখে মুখে মুখে ফেরা গল্পগুলি ঘুরে ঘুরে এসেছে আখ্যানে- কী আশ্বাসে, কী মিলনে- এক রঙের কত বিচিত্র শেড-

    একটা আখ্যান খুঁড়ে খুঁড়ে কত কী বেরোতে থাকে - পুনর্পাঠ প্রয়োজন হয়। বিশদ লিখতে গেলে শেষ হবে না। আমার উদ্দেশ্যও তা নয়। প্রয়োজনও নেই, প্রতিভা প্রায় সবই লিখেছেন।
    গত পরশুর পোস্টে নারীবাদী উপন্যাসের তকমায় অস্বস্তি নিয়ে যেটুকু লিখেছিলাম বিস্তর টাইপো সমেত, তার পিঠোপিঠি যে কথাগুলি মনে এলো- খানিকটা তাৎক্ষণিক মনে আসা- সেটুকুই লিখলাম।

  • বিপ্লব রহমান | ১৪ জুলাই ২০২১ ০৭:৩২495773
  • চমৎকার পাঠ বিবরণ। এপারে মহামারীর ভরা মৌসুম, নইলে হয়তো "উজান" এ বুকিং দিতাম। 


    দিদি, আরও লেখ 

  • অমর মিত্র | 103.242.188.218 | ১৫ জুলাই ২০২১ ০৪:৪৭495796
  • বিপ্লব রহমানঃ যদি ঢাকায় থাকেন বাতিঘর বা রকমারিতে পাবেন।  আর ভারতে থাকলে দেজ এ হোয়াটস আপ করলে বই পৌঁছে যাবে। 

  • অমর মিত্র | 103.242.188.218 | ১৫ জুলাই ২০২১ ০৬:৩৩495797
  • ইন্দ্রাণী ঃঃ  ধনপতির চর উপন্যাসের শ্লোকগুলির, ছড়াগুলির শতকরা ৯৮ ভাগ আমার রচনা। দুটি সংগৃহীত  

  • ইন্দ্রাণী | ১৫ জুলাই ২০২১ ০৮:১৬495798
  • শ্রদ্ধেয় লেখক,
    সংগৃহীত ও আপনার রচনার কোনো ফারাক নেই; এতখানি বিশদ আমার জানা ছিল না-পাঠকের বিস্ময় বাড়ল।
    অনেক ধন্যবাদ।

  • বিপ্লব রহমান | ১৫ জুলাই ২০২১ ১৩:০৩495802
  • অমর বাবু, 


    রকমারি ও বাতিঘরের কুরিয়ার সার্ভিসও এখন বন্ধ, দোকান পাট তো বটেই। মহামারী এখন ভয়াল রূপ নিয়েছে। 


    তবু আপনার তথ্যের জন্য ধন্যবাদ।


    এদিকে, প্রতিভা দি বইটি আমাক দেবেন বলে নাম লিখে রেখেছেন, মেসেজ পেলাম, ঠিক করেছি বাস রেল চালু হলে কলকাতা এসেই ওই বই নেব। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন