এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • ২০২১ পশ্চিমবাংলার নির্বাচনী ফল বিশ্লেষন এবং - কল্লোল

    Kallol Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৩ জুন ২০২১ | ৩৫৭৩ বার পঠিত
  • গত পঞ্চায়েৎ নির্বাচনে স্বৈরাচারী কাজকর্মের চূড়ায় পৌঁছে গেছিলো শাসকদল হিসাবে তৃণমূল। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েৎ-এর কদর্য ভাবনায় বিরোধীদের মনোনয়ন না দিতে দেওয়া থেকে বিরোধী সন্দেহে মানুষকে ভোট দিতে না দেওয়া, ছাপ্পাভোট, বুথ দখল এইসব কাজের ফলে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমে উঠেছিলো। সেই সাথে আমফান ত্রান ও তার আগেকার নানান দুর্নীতি তো ছিলোই। কাজেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ছিলোই তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু পাশাপাশি অন্য অনেক কাজের ফলে গ্রামীণ মানুষের কাছে তৃণমূলের গ্রহনযোগ্যতাও ছিলো সন্দেহাতীত। সেগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করবো।

    সংযুক্ত মোর্চা থেকে বলা হচ্ছিলো, মানুষের কাছে তৃণমূলের পক্ষে বলতে যাওয়া মানে ছিল কার্যত বিক্ষুব্ধ মানুষের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালা। বলা হচ্ছিলো, এনআরসি হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, অথচ সেই সম্পর্কে একটা শব্দও তৃণমূল কংগ্রেস তাদের ইস্তেহারে খরচ করেনি।

    না, তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারে এনআরসি/সিএএ/এনপিআর নিয়ে একটা শব্দও নেই। থাকা উচিৎ ছিলো। লক্ষণীয়, ইস্তেহারে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের কোন বিষয় উল্লিখিত নেই, রাজ্যপালের সাথে নিত্য ঝামেলা নিয়েও কোন কথা নেই। শুধুই সরকার কি কি কাজ করেছে তার খতিয়ান ও সেই সব বিষয়ে কি কি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার তালিকা আছে। অন্য কিছুই নেই। https://aitcofficial.org/wp-content/uploads/2021/03/tmc-manifesto-beng.pdf

    তৃণমূলের এনআরসি বিরোধীতার ইতিহাস বেশ লম্বা, কিন্তু তাতে স্ববিরোধীতাও আছে। বাজপেয়ী সরকারে থাকাকালীন তার নাগরিকত্ব বিষয়ে বিজেপির সাথে সহমত ছিলো।

    ৩রা আগস্ট ২০১৮ শিলচরে এনআরসি বিরোধী সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠায় পশ্চিমবাংলার তৃণমূল। কিন্তু তাদের বিমানবন্দরেই বলপ্রয়োগ করে আটকে দেওয়া হয়। সম্মেলনে যোগ দিতে দেওয়া হয় নি। https://indianexpress.com/article/india/assam-nrc-tmc-delegation-mamata-banerjee-rajnath-singh-bjp-5288390/

    ৭ই থেকে ১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ তৃণমূল এনআরসি আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/trinamool-congress-to-hold-mass-protests-against-nrc-in-west-bengal/articleshow/70947235.cms

    ২৮শে ডিসেম্বর ২০১৯ তৃণমূল সারা পশ্চিমবাংলা জুড়ে এনআরসির প্রতিবাদে ধার্ণায় বসে। https://economictimes.indiatimes.com/news/politics-and-nation/tmc-stages-sit-ins-against-nrc-caa-across-west-bengal/articleshow/73007274.cms?from=mdr

    ২১শে জুলাই ২০২০ শহীদ দিবসের জমায়েৎএ মমতা তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় এনআরসি সিএএর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। https://www.thehindu.com/news/national/other-states/centre-plotting-to-pull-down-opposition-governments-using-state-agencies-mamata-banerjee/article32149417.ece

    এছাড়াও তৃণমূলের অফিসিয়াল সাইটে এনআরসি নিয়ে বিরোধী অবস্থান খুব স্পষ্ট। http://aitcofficial.org/tag/nrc/

    ফলে নির্বাচনী ইস্তেহারে আলাদা করে এই নিয়ে কিছু না বললেও এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের বিরোধী অবস্থান পশ্চিমবাংলার মানুষের কাছে পরিষ্কার ছিলো।

    উল্টোদিকে বামেদের বিশেষ করে সিপিএমের অবস্থান খুবই ধোঁয়াটে। তারা পশ্চিমবাংলায় এনআরসি বিরোধী কিন্তু আসমে সেই এনআরসির স্বপক্ষে দলের ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছেন। তার স্বপক্ষে যুক্তি যাই থাক সেটা পশ্চিমবাংলার মানুষের কাছে দ্বিচারিতা ঠেকেছে। https://twitter.com/ashis4719/status/1214538137323458560

    https://www.telegraphindia.com/north-east/pleased-with-nrc-outcome-assam-cpm/cid/1702388

    তৃণমূল সম্ভবতঃ ২০২১এর নির্বাচনী ইস্তেহারে তাদের সাফল্যের খতিয়ানকেই গুরুত্ব দিয়েছে। সেখানে অন্য কোন রাজনৈতিক বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পায় নি। এটা তাদের নির্বাচনী কৌশল বলে মনে করা যেতে পারে।

    অন্যদিকে সিপিএম গোটা ১০ বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালনে তেমন সক্রিয় ছিলো না। হোক-কলরবে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ে নি, মেডিকাল কলেজের হোস্টেল সংক্রান্ত লড়াইয়ে একেবারে শেষের দিকে যখন ছাত্রদের জয় সময়ের অপেক্ষামাত্র তখন দুচারজন সিপিএম নেতা এসে প্রতীকি সমর্থন জানাতে গিয়ে উল্টো ফল হয়। শেষ পঞ্চায়েৎ নির্বাচনে তৃণমূলের চূড়ান্ত স্বৈরাচারী ভূমিকা নিয়ে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া মানুষের চোখে পড়ার মতো কোন আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেন নি। প্রাথমিক শিক্ষক ও কারীগরী ছাত্রদের উপর অবিচার, তাদের আন্দোলনে সিপিএমের ভূমিকা ছিলো নীরব দর্শকের মতো। বরং সীমাবদ্ধ শক্তি নিয়ে অন্য বামেদের এইসব আন্দোলনে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিলো।

    একেবারে নির্বাচনের ঠিক আগ দিয়ে কাজের দাবীতে যে বিশাল মিছিল সিপিএম সংগঠিত করে, যাতে মইদুল মিদ্যা শহীদ হন, সেটা অনেক আগে থেকে ধারাবাহিকভাবে চালালে হয়তো কিছু ফল হতো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই আন্দোলনের কোন ধারাবাহকতা থাকলো না। এমনকি মইদুল মিদ্যার শাহাদাৎ নিয়েও বড় কোন আন্দোলন গড়ে উঠলো না, যেমন ওঠে নি সুদীপ্তকে নিয়েও। তাই বিগ্রেডের বিশাল জমায়েৎ সিপিএম কর্মীদের মনে উৎসাহ আনলেও জমমানসে ততো প্রভাব ফেলেনি। তবে উল্লেখ্য এইবারের ব্রিগেড নিয়ে সিপিএম অন্ততঃ প্রচারে তার চেনা ছকের বাইরে বের হতে চেয়েছে। “টুম্পা” বা “ফ্ল্যাশ মব” বিতির্কিত হলেও অন্যরকম পদক্ষেপ।

    অন্য পক্ষে বিজেপি এই দশ বছরে তার সমস্থ শক্তি সংহত করে যে কোন ঘটনাতেই রাস্তায় নেমেছে। মার খেয়েছে, মার দিয়েছে এবং প্রায় শতকরা ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবাদের ভাষা ধরন ও বিষয়কে প্রভাবিত করেছে। বিজেপি ঘটনার প্রতিক্রিয়া যেমন দেখিয়েছে, তেমনই ঘটনা ঘটিয়ে তৃণমূলকে বাধ্য করেছে তাদের খেলায় খেলতে। এখানেই সিপিএমের ছেড়ে রাখা বিরোধী পরিসরটি বিজেপি প্রশ্নাতীতভাবে দখল করে নিয়েছে।

    ফলে নির্বাচন পরবর্তি যে রাজনৈতিক দ্বিমুখিতা তৈরী হলো তার জন্য কৃতিত্ব যেমন বিজেপির ঠিক ততোটাই সিপিএমের।

    ২০২১১র নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট নিয়ে বামপন্থীদের মধ্যে একটা জট ছিলো। সিপিএম খুব স্পষ্টতঃ তৃণমুল ও বিজেপিকে সমান বিপদ বলে চিহ্নিত করেছিলো। এবং ঘোষনা ছিলো তৃণমূলকে হারানো মানেই বিজেপিকে হারানো। অর্থাৎ আক্রমনের বর্শামুখটি তৃণমূলের দিকে, কারণ তৃণমুল এ রাজ্যে শাসকদল। বিহারে যে কারণে নীতিশের বিরুদ্ধে লালুর সাথে জোট করা গেছে, কারণ লালু ক্ষমতায় নেই।

    একটু অতীত ঘুরে এসে দেখা যাক বিজেপির ২০১৯এর উত্থানের গল্প ও বিজেপির বিরুদ্ধে সিপিএম আর কংগ্রেসের ঢিলেঢালা মনোভাবের পিছনের কারনটি। সিপিএম ও তার জোট সঙ্গী কগ্রেসের ক্ষরণ শুরু হয়েছে ২০১৭ থেকেই। ২০১৬র নির্বাচনে সিপিএম ও কংগ্রেস বুঝে যায় তাদের পক্ষে জোট করেও ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। সেই নির্বাচনে তৃণমূল পায় ৪৪.৯১% ভোট, সিপিএম ২৫% কংগ্রেস ১২.৫২% আর বিজেপি ১০.১৬%। তৃণমূলকে হারানো যাবে না এই মনোভাব থেকে বাম ও কংগ্রেস বাংলার পুরানো প্রবাদ “যা শত্রু পরে পরে” মেনে বিজেপিকেই তৃণমূলের সম্ভাব্য বিনাশাকারী হিসাবে ভাবতে শুরু করে। ২০১৯এর নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট কমে ১.২২% সিপিএমের ভোট কমে ১৮%, কংগ্রেসের ভোট কমে ৬.৮৫%। অন্যদিকে বিজেপির ভোট বাড়ে ৩০%। অর্থাৎ তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেসের কমে যাওয়া ভোট যায় বিজেপির ঝুলিতে এছাড়া তারা আরও ৩.৯৩% ভোট বেশী পায়, যেটি সম্ভবতঃ ২০১৯এর নতুন ভোটারদের একটা বড় অংশ। একটা অন্য হিসাব কষা যায় অঙ্কের যুক্তিতে। সিপিএম ও কংগ্রেসের কমে যাওয়া ভোট গেছে তৃণমূলে আর সমসংখ্যক তৃণমূল ভোট গেছে বিজেপিতে। অঙ্কের হিসাবে এমত সম্ভাবনা থাকলেও এটি বড় বেশী কষ্টকল্পনা বলেই মনে হয়।

    ফিরে আসি ২০২১এ

    অপর দিকে অন্য বামেদের যুক্তি ছিলো বিজেপি প্রধান শত্রু, তাকে হারাতে যাকে উপযুক্ত মনে হবে তাকেই ভোট দেওয়া যায়। এটা ঠিক বলে কয়ে জোট নয়। তবে অনেকটাই না বলে কয়ে তৃণমূলকেই ভোট দিতে বলা। লক্ষনীয় এদের মধ্যে সিপিআইএমএল রেডস্টার আর সিপিআইএমএল লিবারেশন নিজেরাও আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছিলেন। তাঁদের “নো ভোট টু বিজেপি” প্রচার এক অর্থে তাঁদের নিজেদের প্রার্থীকেও ভোট দিতে নিরুৎসাহ করেছে। এটা ভারতের নির্বাচন-ইতিহাসে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক ঘটনা। সম্ভবতঃ তাঁরা নিজেরাও জেতার জন্য লড়েননি। নির্বাচনকে প্রচারের হাতিয়ার হিসাবেই দেখেছেন।

    অন্য বামেরা দিমিত্রভের ১৯৩৫ সালে কমিন্টার্ণে গৃহিত যুক্তফ্রন্টের থিসিসকে এই ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। সিপিএম মনে করেছে এই যুক্তি দিমিত্রভের থিসিসের অপব্যাখ্যা।

    ২ আগস্ট ১৯৩৫এ কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ৭ম কংগ্রেসে জর্জ দিমিত্রভের পেশ করা প্রতিবেদনে যেখানে সমাজ-গণতন্ত্রীরা ক্ষমতায় আছে সেখানে ফ্যাসিবিরোধী যুক্তফ্রন্ট নিয়ে বলছেন - বুর্জোয়াদের সাথে আপোষ করে চলা সমাজ-গণতন্ত্রীদের সরকার সম্পর্কে আমাদের বিরোধীতা সর্বজনবিদীত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে কোন কোন সমস্যায় এদের সাথে কোন রকম কোন যুক্তফ্রন্ট একেবারেই অসম্ভব। (অনুবাদ লেখকের)

    https://www.marxists.org/reference/archive/dimitrov/works/1935/08_02.htm#s2

    এখানে উল্লেখ করাটা খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, জার্মান কমিউনিস্ট নেতা, সারা পৃথিবীর কমিউনিস্টদের শ্রদ্ধাভাজন রোজা লাক্সেম্বার্গ, ক্ষমতায় থাকা জার্মান সমাজ-গণতন্ত্রীদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হবার পরেও দিমিত্রভ এই মত পোষণ করছেন।

    তৃণমূল সমাজ-গণতন্ত্রী কি না তাই নিয়ে তর্ক হতেই পারে। তবে তৃণমূল যে বুর্জোয়াদের সাথে আপোষ করে চলে ও ছুটকো পুঁজিপতিদের আর লুম্পেনদের শ্রেণী প্রতিনিধি সেটা এদের সারদা যোগ, নির্মান সিন্ডিকেট, বালি খাদান, পাথর খাদান, ইঁটভাঁটা নিয়ে মাফিয়াগিরি, কাটমানি খাওয়া ইত্যাদি থেকে পরিষ্কার। এরা কোনভাবেই বৃহৎ লগ্নিপুঁজির প্রতিনিধিত্ব করে না। সত্যি কথা বলতে বৃহৎ লগ্নিপুঁজি এদের পাত্তাই দেয় না।

    পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম পুঁজি আনার চেষ্টা করেছিলেন, ভেস্তে গেছে তৃণমূলের কারনেই। বহুকাল এই রাজ্যে বৃহৎ পুঁজিই নেই তো তাদের তল্পিবাহক আসবে কোথা থেকে ! তাছাড়া সিঙ্গুরকান্ডের পর বৃহৎপুঁজির গুডবুকে আর যারাই থাকুক তৃণমূল নেই, সেটাও বহুবার শিল্প আনার, লগ্নী টানার, ব্যর্থ তৃণমূলী “সার্কাস” গুলিই প্রমাণ করে।

    দিমিত্রভের মতে ফ্যাসীবাদের শ্রেণীচরিত্র - এরা অভুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করে নেওয়া পেটিবুর্জোয়া নয়। ফ্যাসিবাদ শ্রেণীর ঊর্ধে অবস্থিত কোন ক্ষমতা নয়, এমনকি লগ্নি পুঁজির বিরোধী পেটি বুর্জোয়া বা লুম্পেন প্রলেতারিয়েৎদের সরকারও নয়। ফ্যাসিবাদ লগ্নি পুঁজির ক্ষমতায় বলীয়ান। এটি শ্রমিক শ্রেণী, বিপ্লবী কৃষক ও বুদ্ধিজীবীদের উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। এটি উগ্র দেশপ্রেম আর অন্য জাতির প্রতি হিংস্রতম ঘৃণার উদ্রেক করে চলে। এটি লগ্নিপুঁজির হিংস্রতম রূপ। (অনুবাদ লেখকের)

    এর সাথে আজকের বিজেপির চরিত্র বিন্দুতে বিন্দুতে মিলে যায়। বরং তৃণমূলকে একই রকম বিপদ ভাবাটা বেশ কষ্টকল্পনা।

    তৃণমূলের সাথে বামপন্থীদের জোট বা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সঙ্গী হিসাবে ভাবার মধ্যে বাম ও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মুছে যায় না, স্থগিত থাকে মাত্র। মার্কসীয় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দর্শনে একাধিক দ্বন্দ্বের কথা বারবার বলা আছে। কিন্তু এও বারবার বলা হয়েছে যে, একই সাথে একাধিক দ্বন্দ্ব “প্রধান” হয়ে উঠতে পারে না। প্রধান দ্বন্দ্ব একটিই হয় অন্যগুলি অপ্রধান দ্বন্দ্ব। এই প্রধান ও অপ্রধান দ্বন্দ্বগুলি চিরস্থায়ী নয়। বস্তুগত কারনে এগুলির স্থান পরিবর্তন হয়। প্রধান দ্বন্দ্ব কখনো অপ্রধান দ্বন্দ্ব পরিণত হয়, তেমনই অপ্রধান দ্বন্দ্ব ক্ষেত্র বিশেষে প্রধান হয়ে ওঠে। মাও তার “দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে” লেখাটিতে বলছেন – যে কোন প্রক্রিয়াতেই বহুসংখ্যক দ্বন্দ্ব থাকে, তার যে কোন একটিই প্রধান দ্বন্দ্ব, যা (ঐ দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায়) নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে, অন্য দ্বন্দ্বগুলি অপ্রধান বা নীচের সারিতে থাকে। তাই যেকোন জটিল প্রক্রিয়ায় যেখানে দুটির বেশী দ্বন্দ্ব উপস্থিত, আমাদের সমস্ত বোধ দিয়ে প্রধান দ্বন্দ্বটিকে চিহ্নিত করতে হবে। প্রধান দ্বন্দ্বটি চিহ্নিত করা গেলেই সমস্ত সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। মার্ক্স এই পদ্ধতিটি শিখিয়েছেন ধণতান্ত্রিক সমাজের অধ্যয়ন করতে গিয়ে। যেমনভাবে লেনিন ও স্তালিন এটি শিখিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদ ও ধণতন্ত্রের সাধারণ সংকট এবং সোভিয়েৎ অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। অনেকেই এটা বুঝতে না পেরে কুয়াশায় পথভ্রষ্ট হন এবং দ্বন্দ্বের নিরাকরণে অসমর্থ হন (অনুবাদ লেখকের)।

    মাও ঐ একই লেখা আবারও বলছেন - একটি প্রক্রিয়ায় সমস্ত দ্বন্দ্বগুলিকেই সমান ভাবা ঠিক নয়। কখনও তাদের প্রায় সমান দেখায়। কিন্তু আসলে তা নয়। সমস্ত প্রক্রিয়াতেই দ্বন্দ্বগুলি অসমান, এটাই একাধিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে সত্য। কিন্তু এই প্রধান ও অপ্রধান দ্বন্দ্ব কখনই চিরন্তন নয়। ক্ষেত্র বিশেষে এরা স্থান বদল করতেই পারে। আবার সব দ্বন্দ্বই বৈরীতামূলক নয়। দ্বন্দ্ব মানেই বৈরীতা এমনটা কখনোই নয়। অবৈরীতামূলক দ্বন্দ্বও থাকে। সেও ক্ষেত্র বিশেষে পাল্টায়। (অনুবাদ লেখকের)।

    https://www.marxists.org/reference/archive/mao/selected-works/volume-1/mswv1_17.htm

    তাই ২০২১এর নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলকে সাথে নেওয়াটা দিমিত্রভের থিসিসের অপ্রাসঙ্গিক অপব্যাখ্যা নয়।

    কাজেই বিজেপিকে আটকাতে তৃণমূলের সাথ দেওয়া, আর বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে তৃণমূলকে নেতা মেনে নেওয়া এক কথা নয়। তাই তৃণমূল পশ্চিমবাংলায় ক্ষমতায় এলেও এখানে ফ্যাসীবাদ বিরোধী লড়াই চলতে থাকবে। এবং ক্ষমতায় থাকার সুবাদে সবসময় যে তা তৃণমূলকে “খুশী” করবে এমনটাও নয়।

    ২০২১এর নির্বাচনে তৃণমূলের জয়কে পরিচিতির রাজনীতির সফল প্রয়োগ বলেও বলা হচ্ছে। এ নিয়ে কিঞ্চিত ছানবিন করা যাক। পরিচিতির রাজনীতি পশ্চিমবাংলায় ততো গেড়ে বসা ধারা নয়। ১৯৪৭ পরবর্তী যোগেন মন্ডলের হাত ধরে পথ চলার ব্যর্থ চেষ্টার অনেককাল পর ৯০এর দশকে সন্তোষ রাণা মুসলিম লীগের সাথে জোট বেঁধে আর একটি ব্যর্থ চেষ্টা করেন। এর কিছুটা সফল প্রয়োগ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন, যা এখনো ধিকিধিকি করে জ্বলছে, নানা ভাগে, নানা কায়েমী স্বার্থে বিভক্ত হয়েও। কামতাপুরী ও গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলন তেমন দানা বাঁধে নি আবার নিঃশেষ হয়েও যায় নি। যদিও পশ্চিমবাংলায় নিম্নবর্ণের হিন্দু, নিম্নবর্গের মুসলমান (আতরাফ) সংখ্যাগুরু। যদিও বাঁকুড়া পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমের পশ্চিমাংশে সাঁওতাল, হো, মুন্ডারী জনজাতিদের প্রাধান্য, তবুও সম্ভবতঃ ৪০এর দশক থেকে ৭০এর দশক পর্যন্ত যে বাম কৃষক আন্দোলনের চলমান ধারা এই রাজ্যে আগ্নেয় লাভাস্রোতের মতো বহমান ছিলো, তাতে পরিচিতির রাজনীতি পিছনের সারিতেই রয়ে গেছে। মূল পশ্চিমবাংলায় এই রাজনীতিটিকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হয় মাতুয়াদের দিয়ে। মুসলমান তোষণের সুফল সব আমলেই অভিজাত মুসিলমানেরা ভোগ করেছে। নিম্নবর্গের মুসলমানেদের তাতে কোন লাভই হয় নি তা সাচার কমিটির রিপোর্টেই প্রমাণ হয়ে গেছে। আব্বাস সিদ্দিকীর উত্থান এই কিসিমের রাজনীতির একটা সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে। যদিও আব্বাস নিজেই একজন আভিজাত মুসলমান (আসরাফ)। তার রোজগারের ক্ষেত্রটি আতরাফ ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে এও সত্যি। তার সিপিএম যোগ তাকে এবিষয়ে কতোটা স্বাধীনতা দেবে, তা ভবিষ্যত বলবে।

    কিন্তু এই পরিচিতির রাজনীতির ফয়দা তুলেছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গের কামতাপুরী, গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে, গোর্খাল্যান্ডে আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতে, পূর্ব নদীয়ার বিস্তীর্ণ মাতুয়াভূমিতে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানের আদিবাসী এলাকায় বিজেপির জয়ধ্বজা উড়েছে। আত্মপরিচয়ের রাজনীতির ফয়দা তুলেছে বিজেপি, তৃনমূল সেখানে ব্যর্থ।

    তাহলে তৃণমূলের এই বিপুল জয়ের কারণ কি? তৃণমূল সরকার এই ১০ বছরে কম করে প্রায় ২০টি জনকল্যানমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। তার সিংহভাগই গ্রামীণ মানুষের জন্য। এই প্রকল্পগুল হলো –

    কন্যাশ্রী – ২০১৩ থেকে চলছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক অনুদান, যাতে পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিয়ে দেওয়াও রোখা গেছে। ৩৩ লক্ষ মেয়ে ও ১৬৬০ প্রতিষ্ঠান এর উপভোক্তা। সূত্র - https://www.wbkanyashree.gov.in/readwrite/publications/000111.pdf

    সবুজ সাথী – ২০১৫ থেকে চলছে। ৯, ১০, ১১ ও ১২ ক্লাশের ছেলে মেয়েদের সাইকেল দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ইস্কুলে যাতায়াত করতে পারে অনায়সে। দূরত্বের কারনে অনেকেরই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতো, না হেঁটে যেতে কষ্ট হতো বলে নয়। হেঁটে যেতে আসতে এতো সময় লাগতো যে পড়াশোনা ও বাড়ির কাজের জন্য সময় পেত না। ৪০ লক্ষ ছাত্র এর উপভোক্তা।

    সূত্র - https://wbsaboojsathi.gov.in/readwrite/downloads/Special_write_up_Sabooj_Sathi.pdf

    খাদ্য সাথী – ২০১৬ থেকে চলছে। প্রতিমাসে ২ টাকা কেজি দরে চাল বা গম দেওয়া হচ্ছে প্রতি পরিবাব্রের প্রতিটি মানুষকে। ৮.৬৬ কোটি মানুষ (মোট জনসংখ্যার ৯০.৬%) এর উপভোক্তা।

    সূত্র - https://wbxpress.com/khadya-sathi-food-security-scheme/

    সবুজশ্রী – ২০১৬ থেকে চালু। প্রত্যকটি নতুন কন্যাসন্তানের মাকে একটি গাছের চারা দেওয়া হয়। কন্যার জন্মের সাথে গাছটি রোপন করা হয় ও কন্যাটির বড় হওয়ার সাথে সাথে গাছটি বেড়ে ওঠে। কন্যাসন্তানের প্রতি যত্ন নেওয়ার সাথে সাথে পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প। ১৫ লক্ষ চারা বিতরণ করা হয়েছে।

    সূত্র - http://www.westbengalforest.gov.in/sabujsri.php - Sabujshree Achivements থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করতে হবে।

    শিক্ষাশ্রী – ২০১৪ থেকে চলছে। তফঃশিলী জাতিভুক্ত ৫ থেকে ৮ ক্লাশের ছেলে মেয়েদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সরাসরি বৃত্তি দেওয়া হয়। ৩৮ লক্ষ ছাত্র এর উপভোক্তা।

    সূত্র - http://aitcofficial.org/aitc/20-schemes-that-transformed-bengal-in-the-last-seven-years/ এটি তৃণমূলের নিজস্ব সাইট।

    গতিধারা – ২০১৪ থেকে চলছে। বাণিজ্যিক বুবহারের জন্য গারি ও ছোট ট্রাক কেনার ঋণ দেওয়া হত ১০ লক্ষটাকা পর্যন্ত। এতে ৩০% বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভতুকি দেওয়া হয়। যে সব পরিবারের অ্যাঁয় বছরে ২৫হাজার টাকার কম, তারাই এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। ১৩৩৯৩জন উপকৃত। ১২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

    সূত্র - http://aitcofficial.org/aitc/20-schemes-that-transformed-bengal-in-the-last-seven-years/ এটি তৃণমূলের নিজস্ব সাইট।

    গীতাঞ্জলী – ২০১১ থেকে চলছে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের বসতবাড়ি বানানোর জন্য ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে পার্বত্য অঞ্চল, জঙ্গলমহল ও সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য ৭৫হাজার টাকা দেওয়া হয়। ২,৯৮,৭৪৫টি পরিবার এই সুবিধা পেয়েছে।

    সূত্র - https://wbhousing.gov.in/files/GITANJALI%20HOUSING%20SCHEME.pdf

    লোকপ্রসার – ২০১৪ থেকে চলছে। ১৮ থেকে ৬০ চছর বয়সের লোকশিল্পীদের মাসে একহাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা করে একহাজার টাকা পারিশ্রমিক। এই কাজগুলির মাধ্যমে শিল্পীরা নানা ধরনের সামাজিক বার্তা দিয়ে থাকেন। ৬০ বছরের উপরে বয়স হলে মাসে একহাজার টাকা পেনশন পেয়ে থাকেন।

    ১,৯৪,৩০০ শিল্পী এর উপভোক্তা।

    সূত্র - https://wb.gov.in/government-schemes-details-lokprasar.aspx

    ন্যয্য মূল্যের ওষুধের দোকান – ২০১২ থেকে চলছে। ২৪ঘন্টা খোলা থাকে। সব সরকারী হাসপালা ও মেডিকাল কলেজগুলোতে আছে। এখানে এমআরপিতে ওষুধ পাওয়া যায় ।

    সূত্র - http://www.wbhealth.gov.in/uploaded_files/PPP/ppp_s2.pdf

    শিশুসাথী – ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সের সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসার বন্দোবস্তো করা হয়। হার্টের সমস্যা, গন্নকাটা, বিকলাঙ্গ পায়ের সমস্যার জন্য এই প্রকল্প। আপাততঃ আর এন টেগোর, বি এম বিড়লা ও দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে এর বন্দোবস্তো আছে। ১২০০০ শিশুর চিকিৎসা হয়েছে।

    http://aitcofficial.org/aitc/20-schemes-that-transformed-bengal-in-the-last-seven-years/ এটি তৃণমূলের নিজস্ব সাইট।

    স্বাস্থ্যসাথী – ২০১৬ থেকে চলছে। সমস্ত পরিবারের জন্য (যারা সরকার বা নিজেদের কাজের জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নেই) ক্যাশলেস গ্রুপ ইন্সিওরেন্স। পরিবারের জ্যেষ্ঠ মহিলা সদস্যের নামে কার্ড। ২ কোটি পরিবার উপভোক্তা। ২২৬০র বেশী হাসপাতালে এই সুবিধা পাওয়া যায়। ১৯ লক্ষ মানুষ এই সেবা গ্রহন করেছেন।

    http://aitcofficial.org/aitc/20-schemes-that-transformed-bengal-in-the-last-seven-years/ এটি তৃণমূলের নিজস্ব সাইট।

    এই ভাবে তালিকা দেওয়াই যায় তাতে লেখাটির কলেবর বাড়বে। কিন্তু এগুলো উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো তৃণমূল সরকার সাধারণ গরিব মানুষের কল্যানে যে কাজগুলো করেছে তা তুলে ধরা।

    এমন নয় যে এই প্রকল্পগুলো সবই খুব মসৃণভাবে চলে। এতে দুর্নীতি, স্বজনপোষন, দলবাজী সবই হয়। তবু সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছেন হয়ে চলেছেন, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। উপকারীকে মানুষ তাই দুহাত তুলে ভোট দিয়েছেন।

    সিপিএম ও অনেক “ভদ্রলোক” এই প্রকল্পগুলিকে “ডোল” বলে পরিহাস করে থাকেন। “আমরা ভিক্ষা চাই না কাজ চাই” এরকম স্লোগানে এই প্রকল্পগুলিকে বিদ্রুপ করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা। যারা চাকরী করেন সরকারী বেসরকারী যেরকম চাকরীই হোক না কেন ডিএ শব্দটির সাথে তাদের পরিচয় আছেই। একমাত্র কিছু বেসরকারী বহুজাতিক কর্পোরেটে ম্যানেজমেন্ট ক্যাডারেরা এর আওতায় পরেন না। ডিএ মানে ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স। এটি বেসিক প্রাইস ইনডেক্সের উপর হিসাব করা হয়। কর্মচারীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার হাত থেকে কিছুটা রেহাই দিতে এটি মাস মাইনের সাথে দেওয়া হয়ে থাকে । বকেয়া ডিএ আদায়, ডিএ বাড়ানোর আন্দোলন সিপিএম ও ভদ্রলোকেদের ট্রেড-ইউনিয়ান কাজকর্মের একটি মস্তো বড় কাজ। হাত পেতে ডিএ নিতে বা তার জন্য আন্দোলন করতে এরা লজ্জা পান না। অথচ ডিএ আদতে একটি খয়রাত। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তা। মালিক “ভালোবেসে” যে ভাতা দেন তাইই ডিএ। আসলে সিপিএম ও এই ভদ্রলোকেরা ভুলে গেছেন যে মানুষকে ভালো রাখাটাই সরকারের কাজ। একটা জনকল্যানমূলক রাষ্ট্রে এটাই সবচেয়ে বড় কাজ। বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী প্রচারের ধাক্কায় সিপিএম ও ভদ্রলোকেরা সেটা বেমালুম ভুলে গেছেন। তৃণমূল সেই ধারণাটিকে ফিরিয়ে এনেছে, তাই তারা এমন বিপুল জয় পেলো। অন্য অনেক কারণের মধ্যে এটি মুখ্য। এর সাথে যোগ হবে মেয়েদের ক্ষমতায়ন। এই যে স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডটি পরিবারের জ্যেষ্ঠ মহিলার নামে, এর অভিঘাত কতটা দূর যেতে পারে তার ধারনা পাওয়া গেছে এই নির্বাচনে। মেয়েরা ঢেলে ভোট দিয়েছে তৃণমূলকে। তারা মোট ভোটারদের ৪৯%। সূত্র - https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/ec-women-voters-49-of-bengals-7-2-crore-electorate/articleshow/80293755.cms

    এই বাম শূন্য প্রেক্ষিতে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানো জরুরী। কিন্তু সেটা নির্ভর করে তারা কিভাবে এই পরাজয়কে মূল্যায়ন করছেন তার উপর।

    ১২ই মে ২০২১, গণশক্তি। শমীক লাহিড়ী লিখছেন “রাস্তায় থাকা ছাড়া রাস্তা কি ?” এই লেখায় সিপিএমের এই পরাজয়ের দায় – ১) সংবাদ মাধ্যম, ২) প্রতিযোগীতামূলক সাম্প্রদায়িকতা। তা স্বত্ত্বেও সিপিএমের পাওয়া ভোট বেড়েছে, অর্থাৎ সমর্থন বেড়েছে। এটাই বিশ্লেষন।

    ২৮শে মে ২০২১, গণশক্তি। অশোক ভট্টাচার্য লিখেছেন “সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী একটি সমীক্ষা”। এই লেখায় উনি সিএসডিএস ও লোকনীতিকৃত সমীকশার কথা তুলে ধরেছেন। তাতে লিখছেন, “বামপন্থীদের ধারাবাহিক বিজেপি দলের সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, কুসংস্কারমূলক নীতির বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক, মতাদর্শগত ও যুক্তিবাদী প্রচারের ফলে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দলের আগ্রাসী নীতি প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। যা হয়েছে বাম ও কংগ্রেস দলের শক্তির বিনিময়ে।” এটি লোকনীতির সমীক্ষা। নিবন্ধকার সম্ভবতঃ একমত।

    “প্রথমতঃ কন্যাশ্রী ও গরিব মহিলাদের জন্য অনেকগুলি গরিবমুখী সরকারী প্রকল্প যদি অব্যাহত না থাকে তবে গরিব মহিলারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমন ধারনা অনেক গরিব মহিলা ভোটদাতার পোষন করে।“ ……………… “শুধু তাই নয়, এই বহিরাগতদের (পড়ুন বিজেপির – লেখকের নিজস্ব সংযোজন) বিরুদ্ধে একজন মহিলার লড়াইকেও তারা সমর্থন জানিয়েছে। ফলে গরিব মহিলা ভোটদাতাদের ভোটের ১৩ শতাংশ অতিরিক্ত সমর্থন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই অভিমত এই নিবন্ধকের নয়, সমীক্ষা লোকনীতির।” নিবন্ধকার এতে একমত নন সেটা পরিস্কার।

    ১৫ জুন ২০২১, গণশক্তি। অলকেশ দাস লিখছেন “অন্ত যারে মনে হয়, সে তো অন্ত নয়”। লেখাটিতে পরিচিতির রাজনীতিকে নস্যাৎ করে শ্রেনী রাজনীতিকে তুলে ধরা হয়েছে। অস্বীকার করা হয়েছে পরিচিতির রাজনীতির গুরুত্বকে। মহিলাদের ক্ষমতায়ণে তৃণমূল সরকার ব্যর্থ – এটা তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে – মহিলা ভোটাদের সংখ্যা কমেছে ২০২১এ, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত মেয়েদের অনুপাত ৩৩% থেকে বেড়ে ৩৯% হয়েছে । যদিও কোন সূত্রের উল্লেখ নেই।

    ১৭ জুন ২০২১, গণশক্তি। অশোক ভট্টাচার্য লিখছেন “ ‘সুশাসনের’ ফল নয় এই ফলাফল”। উনি লিখছেন, “আটটা পর্যায়ের নির্বাচনী ফলাফল যদি বিশ্লেষন করা যায় তবে দেখা যাবে প্রথম পাঁচটি পর্যায়ের নির্বাচনী ফলাফল এবং শেষের তিনটি পর্যায়ের ফলাফলের মধ্যে কিছু গুণগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। শেষের তিনটি পর্যায়ে উপরে উল্লিখিত বিষয় বা ঘটনাগুলি (বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, মুসলিমদের মধ্যে বিজেপি সম্পর্কে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া – বিশেষতঃ শীতলকুচির ঘটনার পর, অতিমারী নিয়ন্ত্রনে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা, প্রধানন্ত্রীর বাংলার করোনা মোকাবিলাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাংলা দখলকেই মূল লক্ষ করা – লেখকের সংযোজন প্রবন্ধটি থেকে উদ্ধৃত) তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে ভোটদানে বেশী প্রভাব বিস্তার করেছে।”

    তৃণমূল ভোট পাওয়া “সবটাই রাজ্য সরকারের জনকল্যানমূলক কাজের কিংবা ‘সুশাসনের’ প্রতিফলন নয়।” নিবন্ধকারের সিদ্ধান্ত, “প্রকৃতপক্ষে বিজেপি’র জনবিরোধী নীতিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে বামপন্থীরা, যদিও এই লড়াইয়ের ফসল পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।“

    ২১ জুন ২০২১, গণশক্তি, প্রথম পাতা। “গণসংগ্রামেই হবে এক নতুন সূচনা” শীর্ষক প্রতিবেদনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি তৃণমূলের জয়ের কারণ বিশ্লেষনে বলেন, “রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জন অসন্তোষ থাকলেও ক্রমে বিজেপি বিরোধী মনোভাবের ফলে তারা লাভবান হয়েছে।” ………… “বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পকে তৃণমূল জনগনের সমর্থন লাভের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণ এই ফলাফলের প্রধান কারণ না হলেও একটি কারণ। বিজেপি’র আগ্রাসী প্রচারের বিরুদ্ধে বাংলার জাতিসত্তাকে তৃণমূল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েই পরিচিরসত্তার রাজনীতি করেছে, তার যথাযথ মোকাবিলা করা যায়নি।”………… “পরিচিতির প্রশ্নকে নিয়ে আমাদের সক্রিয় হতে হবে কিন্তু তা যেন শ্রেণী আন্দোলনের অধীনে হয়, পরিচিতসত্তা শ্রেণি আন্দোলনকে ছাপিয়ে না যায়।”

    ইয়েচুরির বক্তব্য থেকে মনে হয়, তৃণমূলের জনকল্যানমুখী প্রকল্পগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মানা, জাতিসত্তার প্রশ্নটিকেও গুরুত্ব দেওয়া সিপিএমের বিশ্লেষনে নতুন সংযোজন। সিপিএম এই রাস্তায় কতটা আন্তরিক তা বলার সময় আসে নি।

    তবে অন্য বামেরা যে এই নিয়ে ভাবছেন অনেকদিন ধরেই। বিহারে ছাপ ফেলার মতো রাজনীতি করার সুবাদে সিপিআইএমএল লিবারেশন অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে চর্চা করছেন ও বিহারে প্রয়োগ করেছেন। এরাজ্যে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন বেশ কিছু অন্য বাম। ফলে জাতিস্বত্ত্বার বিষয়টি নিয়ে তারা অনেকদিন ধরেই চিন্তা ভাবনা করছেন। তবে তার বাস্তব প্রতিফলন তাদের ক্ষুদ্র শক্তির কারনের তেমন চোখে পড়ার মতো নয়।

    এই লেখায় বিজেপি কেন এতো ভোট পেলো তাই নিয়ে বিশদ করে কিছু বলা নেই। বিরোধী দল হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে সিপিএমের সামগ্রিক ব্যর্থ। ফলে সেই জায়গা বিজেপি ভরাট করেছে। অবশ্যই বিজেপির নিজের কৃতিত্ব কিছু কম নয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৩ জুন ২০২১ | ৩৫৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অনামী | 2409:4060:392:ca13:cd97:70f6:670d:aff2 | ২৫ জুন ২০২১ ১৪:১০495279
  • "অন্যদিকে সিপিএম গোটা ১০ বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালনে তেমন সক্রিয় ছিলো না। "


    এটা অংশত সত্যি। বামেরা যা কর্মসূচি নিয়েছে তা অত্যন্ত সচেতনভাবে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এড়িয়ে গিয়েছে। পার্টির ফেসবুক পেজ ফলো না করলে সেই সব খবর পাওয়া প্রায় অসম্ভব।   মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কৃষক আন্দোলনকে পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট করতে আমরা দেখেছি। ব্যাংক বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ নিয়ে কোন চ্যানেল খবর করে নি।  নিজস্ব চব্বিশ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল না থাকলে বামদের উঠে আসা অসম্ভব।

  • সোরা | 203.110.242.23 | ২৫ জুন ২০২১ ১৫:২৬495280
  • প্রতিবাদগুলোর ইন্টেনসিটি যথাযথ হলে ঠিক মিডিয়ায় আসত। সমস্যা হল বুদ্ধবালের সময় থেকেই জঙ্গি আন্দোলনকে সিপিএম পরিত্যাজ্য বিশ্বাস করেছে।

  • Sandip Datta | ২৫ জুন ২০২১ ১৭:৩৬495284
  • *Statistics বলছে এবার বঙ্গ নির্বাচনে মুসলিম ভোটার ছিলো 33% , যার 32.3% ই তৃনকে ভোট দিয়েছে । মুসলিমদের প্রদত্ত ভোট ছিলো 94.9 % ..*


    *অর্থাৎ সোজা অংকে তৃনমূলের পাওয়া মোট   মোট ভোটের ( 48%) এর মধ্যে 30.7% মানে প্রায় 31% ভোটটাই দিয়েছে মুসলিমরা , যা ভারতের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত হয়নি। আর বাকী মাত্র 17%(48 -31) ভোট এসছে অন্যদের থেকে । এর থেকে প্রমানিত মুসলিম ছাড়া বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মাত্র 17% ভোট পেয়েছে শাসক দল ।*


    *এর থেকে প্রমানিত একমাত্র মুসলিম ছাড়া , বাংলার অধিকাংশ মানুষ কিন্তু সত্যিই  এই সরকারটাকে একেবারেই চায়নি ।*


     *বিজেপি যে প্রায় 39% ভোট পেয়েছে তাতে হাতে গোনা কয়েকটি মুসলিম ভোট , বাকি ভোটের --সেই বিশাল সংখ্যাটা কিন্তু 2 কোটি 30 লাখ --তারা কিন্তু মনেপ্রানে এই সরকারটাকে চায়নি আলবাৎ।* 


      *বাংলায় তৃনমূলও জেতেনি , বিজেপিও হারেনি --জিতেছে Communal Force Muslim jihadis led by the Bengali Women pretending herself as so called Hindu!*

  • Ranjan Roy | ২৫ জুন ২০২১ ২৩:৩৯495296
  • অংক কী সহজ!


    যেন সব কন্সটিট্যুয়েন্সিতে  ভোটারের ৩৩% মুসলিম। যেন ডেমোগ্রাফিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন ইউনিফর্ম। স্টাটিসটিক্সের স্যামপ্লিং এর গয়ায় পিন্ডদান!   সারাক্ষণ খালি  হিন্দু মুসলিম হলে এইরকম বিশ্লেষণ আসবে। ২০১৯শে বিজেপি যে সীট পেয়েছিল তার হিসেবে ১২১টা বিধানসভা জেতার কথা- সেটার কী ব্যখ্যা? কোলকাতায় দশটা সীটের সবকটায় ৩৩% মুসলিম? এমন সব স্ট্যাটসের সূত্র কী?

  • অনামী | 2409:4060:e88:4a82:c223:318a:3435:d856 | ২৬ জুন ২০২১ ০০:০৭495298
  • কি ফালতু কথা। 30 পার্সেন্ট communal voting হলে তাহলে অ্যাসাউদ্দিন ওয়াইসি ভোটে জিতত। একটা কংগ্রেস ঘরানার দলকে কোনোদিন জিতাত না। ভক্তরা কি এখন প্রোফাইল পিক এ চে র ছবি দিচ্ছে! কী দিন এলো

  • | ২৬ জুন ২০২১ ০০:৪১495300
  • ভুলে যাবেন না অর্নব কাউস্বামীর ছেলের নাম চে


    :-))

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন