এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভোট

    aftab hossain লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ মার্চ ২০২১ | ১২০৯ বার পঠিত
  • "চাপা স্বরে বললো সালা মাস্টার তুই ও খুব ধ্যামনা"

    ওপারে তেঁতুলিয়া, বাংলাদেশ।
    এপারে ফকিরপাড়া, ভারতবর্ষ।
    মাঝখানে মহানন্দা, বুক চিরে কাঁটাতার।

    কাঁটাতারের বাইশ নম্বর গেটটা থেকে অনেকটা এগিয়ে গেলে যেখানে বর্ডার পাহারাদারদের টেন্টগুলো শেষ তার একটু পরেই লোকটা একাই সারাদিন বসে থাকে। আশির কোটায় । একগাদা সাদা দাঁড়ি, ঘোলাটে চোখ, মুখে একগাদা লালা ঝরিয়ে রোজ একমনে বকবক। ভাষা, কথা, ভাবনা কিচ্ছু বুঝি না।

    জিজ্ঞাসা করলে বলে বলবুনি… তোরা সব সালা ধ্যামনা।

    কেউ বলে পীর, কেউ বলে ফকির, রোজ নাকি কবরে বসে কাঁদে। কেউ বলে সালা পাক্কা বদমাশ গরুচোর ।

    ফ্যালফেলিয়ে হাসে… হাউম্যায়িয়ে কাঁদে.. ভ্যাবলা চোখে তাকায় …

    আমার আবার মিত ভালো ..

    আমি বলি সাঁই..

    আমারে ডাকে হুসেন মাস্টার ।

    - মোট সতের বারের মত শরীরটা ছিঁড়ে ছিল ওরা। একরাতে। আট বার পর্যন্ত্য মস্তিকে শরীর বলে একটা অনুভূতি ছিল, পরের বার থেকে জহান্নাম খুব কাছে। হাতের বন্ধুকটা প্রথমবারের মত তোলার আগে মায়ের মুখটা দেখেছিল। চোখে চোখ রেখে মা বলেছিল - 'যা তুই.. উদিকের দ্যাশে দূর্গারে লুকে পূজা করে। তুই দূর্গা হ মা। মুক্তির দূর্গা'।

    বুকে মাথা রেখে কথা দিয়েছিল - 'মোরা গড়বো সোনার দ্যাশ। এত্তখান গর্ব করে সব্বাই বলবে আমাগো দ্যাশের মাটির কথা। আমাগো কথা।'

    ওই একগাদা আশায় ভরা বুকের ওপর বেওনেটের খোঁচা মেরে মোট চল্লিশটা ফুটো করেছিল ওরা। স্বপ্ন হয়ে জমে থাকা বোঁটা গুলোকে দাঁতে করে ছিঁড়েছিল যাতে বিষ দুধ ভবিষ্যতে না গড়ায় …

    সাদা দাঁড়ি শোনাচ্ছিল । আমি নির্বাক শ্রোতা ।

    বিড়ি খাস ?

    বললাম না। সিগারেট চলবে? মাঝে মধ্যে খাই।

    ফ্যালফেলিয়ে আবার উদাস…

    দিলাম একখান …

    তারপর…

    মহানন্দা যৌবন তড়পাতো তখন খুব। উ পারে খুব পিরিত, এপারে সতীন। বাইশ সবে তখন। মাঝরাতের বর্ষা। সব্বাই বললো যাস নে। ওপারে গোলা গুলি। সালারা খুব পাজি। কিন্তু লোভ বেশি, তায় বর্ষার মাছ। খ্যাপা জাল। বারণ না মেনে শরীর ডোবালাম নদীর যুবতী শরীরে, পায়ে ঠেকলো মেয়ে শরীরটা। উত্তাল মহানন্দায় ঠান্ডা মেয়ে শরীর। বাইশের জীবনে প্রথমবার নারী শরীর দেখা। কি কপাল মাস্টার। কঙ্কালসার, ছিঁড়ে যাওয়া বুক, ফেঁড়ে যাওয়া যোনি। এভাবেও পুরুষ হওয়া যায় কিনা জানা ছিল না। কিন্তু ছাড়তে পারলাম কই মাস্টার, মুজে যাওয়া মুখটা বড্ড টানলো। আধটা কেটে যাওয়া ঠান্ডা স্তন সরিয়ে প্রথমবার মেয়ে বুকে হাত রেখে কান দিয়ে যখন শুনলাম শরীরটা চলছে, আর ছাড়তে পারি নি। নিয়ে এলাম ।

    ভোট দাওনা? আলতো করে প্রশ্ন ছিল ।

    হাসলো মনে হয় ।

    বললাম, কিছু করতে ইছছে হয় না? বাচঁতে ইচ্ছে হয় না? নতুন করে?

    বললো আর একখান সাদা বিড়ি দে..

    দিলাম। তারপর…

    দেশ ছাড়লো উটা, এ দেশে পর হলাম আমি।

    স্বপ্ন দেখলো উটা, এ খানে ভিটা হারালাম আমি।

    সূর্য দেখতে গেল উটা, এ খানে আঁধার নামলো খানিক।

    তাও আঁকড়ালাম..

    সব জুড়লাম একসাথে। নদী জানে সব।

    ছাব্বিশে ওপারের সূর্য দেখেছিলাম একসাথে। আলোয় সব পরিষ্কার হল আস্তে আস্তে। মুখ, মাথা, ঠোঁট, বুক, যোনি সব জুড়লো একসাথে মনে হয়। মন জুড়লো মাস্টার, শরীরটাও।

    তারপর…

    তারপর একযুগ…

    নদী পর হল, দেশ ও। কাঁটাতার বুক চিরলো আবার।

    তারপর…

    বলতে যাচ্ছিল। বাইশ তেইশের একটা মেয়ে গলা শুনলাম জোরে ..

    - 'বুড়া মরলি নাকি। মামেগা কবে মরবি। আই খাবি আই'।

    ধরপরিয়ে উঠলো বুড়ো। চুপিসারে বললো চল তাড়াতাড়ি ..

    নদীর পাশে বাঁশবাগান এর তীরে কবর দেখালো।

    বললো দেখ …

    দেখলাম পাঞ্জাবির পকেট থেকে বহু পুরানো খবর কাগজে মোড়া সিঁদুর দিল কবরে।

    চমকালাম…

    বললো জাত কায়স্ত। আগে রোজ মাগরিবের আজানের পর উটা নামাজ পড়তো আমার হাতের সিঁদুর মাথায় নিয়ে ।

    চোখে জল এলো মনে হয় ..

    কিছু বলার আগেই বললো যেটা গাল দিল উটা উরি মেয়ে। আমায় নেয় না। বলে মুসলমাম বাপ আর পাকিস্তানি মা শুনলে সমাজ লিবে না।

    ছেঁড়া বোঁটায় বিষ দুধ পায়নি তাই হয়ত মুখ খারাপ। পরে আসিস ওর গল্প শুনাব।

    বললাম সাঁই.. কলম ছিল হাতে। মানুষের মন আঁকতাম মাঝে মাঝে। এখন ভোটে ব্যস্ত ।

    অধিকার নিয়ে লড়াই এর সেপাই এখন ।

    কলমে মরচে জমেছে পুরু ।

    খুঁড়িয়ে হাঁটতে গিয়ে চোখ ছোট করে বললো 'ভোট দিইনি সে অনেক কাল। ভোট মিটলে আসিস একবার।

    শোনাবো আরো। ভোটে যাবি কবে?

    কি নিয়ে হচ্ছে ইবার?

    মুচকি হেসে বললাম হিন্দু মুসলমান।

    হাসলো মনে হয়।

    চাপা স্বরে বললো সালা মাস্টার তুই ও খুব ধ্যামনা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন