এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • ছত্তিসগড়ের শবরীঃ (ছোটগল্প)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ১১ জানুয়ারি ২০২১ | ১৭৬৩ বার পঠিত
  • ‘শবরীদত্তফলাশন রাম, কবন্ধবাহুছেদন রাম’ -- রামচন্দ্রের অষ্টোত্তরশতনাম

    মহানদীর পশ্চিম পাড়ে এই আধা শহর আধা গ্রাম জনপদের বাসস্ট্যান্ডে সহোদ্রা বাঈ বা সুভদ্রাকে সবাই চিনত। শণের মত উস্কোখুস্কো চুল, কোমর ঝুঁকে গিয়ে রাজমিস্ত্রির বাটামের মত নব্বই ডিগ্রি। সেই অবস্থাতেই ঘাড় ঘুরিয়ে সে তোমাকে দেখে--ওর ঘোলাটে চোখে এক কুছ-পরোয়া-নেহি ভাব। পায়ের হাওয়াই চপ্পলের স্ট্র্যাপ সেফটিপিন দিয়ে আঁটা, পরনের রঙজ্বলা শাড়িতে একাধিক তাপ্পি। কিন্তু গলায় ঝোলে চকচকে একটি হুইসিল, ঠিক ফুটবল মাঠের রেফারির মত।

    তখনকার দিনে যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল সরকারি বাস । তা’হলেও কিছু কিছু প্রাইভেট বাস এবং মিনিবাসকে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়েছিল।এদের মধ্যে যাত্রী নিয়ে রেশারেশি কখনও কখনও গালিগালাজের সীমানা ছাড়িয়ে হাতাহাতিতে গড়িয়ে যেত। কিন্তু শিওরিনারায়ণের বাসস্ট্যান্ডে এটা অন্য মাত্রা পেয়েছিল সহোদ্রা বাঈয়ের সুবাদে।

    সকাল ন’টা বাজলেই ও হাজির হয়ে চোখ কুঁচকে যাত্রীদের আসা যাওয়া জরিপ করে নেয়। কোমর পড়ে গেছে, চোখ সামনে মাটির দিকে। কিন্তু অনায়াসে উঠে পড়ে একটি স্টেটবাসে। বেজে ওঠে ওর হুইসিল পিলে চমকানো আওয়াজে, তারপর নিজেই চেঁচায়—রোককে! রোককে!

    আমি ওকে প্রথম দেখি দশবছর আগে, এখানে অডিট করতে এসে।

    বাস থেমেছে, এটাই শেষ গন্তব্যস্থল, আর আগে যাবে না। কারণ বর্ষা নেমেছে ঘনঘোর। মহানদীর রফটা (শুকনো দিনে কমজলে নদী পার হওয়ার অস্থায়ী বাঁধ) ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

    এক এক করে সবাই নামছে বাস থেকে।

    তখনও মহানদীর উপর গিধোরী -পুল তৈরি হয়ে বিলাসপুর -রায়পুর জেলা যুক্ত হয়ে যায়নি। এপারে বিলাসপুরের পামগড় তহসীল, তো ওপারে রায়পুরের কসডোল। লোকে নৌকোয় করে মহানদী পেরোত। হাটবাজার করত, বেয়াইবাড়ি যেত। অনেক ঈশ্বরপাটনী খেয়া পারাপার করত।

    ব্রিফকেস হাতে উশকোখুশকোচুলো ছেলেটি নেমে ইতিউতি তাকায়। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। বেলা সাড়ে দশটা হবে। তিনঘন্টা ক্লান্তিকর বাসজার্নি, তায় পুরো বন্ধ না হওয়া জানলা দিয়ে আসা বৃষ্টির ছাঁট, সব মিলে ওর ‘চায়াস’বা দুধে ফোটানো আদার গন্ধওলা চায়ের জন্যে তেষ্টা বেশ চাগিয়ে উঠেছে। এটা একটা হতচ্ছাড়া বাসস্ট্যান্ড, তবু মরা হাতি লাখটাকা। গোটা দুই চায়ের এবং একটা ভাজিয়ার দোকান দেখা যাচ্ছে। একটা দোকানে বোধহয় পাঁউরুটি ও ঘুগনি বিক্রি হচ্ছে।

    ও মনে মনে সবক’টাকে জরিপ করে যেটায় জোলো হাওয়ার দাপট কম এমন একটা দোকানে ঢুকে আধময়লা ‘পেলাস্টিকে’র চেয়ারে বসে সামনের বেঞ্চিতে ব্রিফকেস রেখে চায়ের অর্ডার দেয় । ফুল চা,এবং ফ্রেশ বানিয়ে দিক, আগে থেকে তৈরি চালু চা ফের গরম করে দিলে চলবে না। দোকানি ওকে একবার তাকিয়ে দেখে নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে বলে – দো’ রুপয়া গিলাস। অর্থাৎ, চালুর থেকে একটাকা বেশি।

    ছেলেটি হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেয় –চলেগা। দোকানি ওকে আরেকবার ভাল করে দেখে । বছর তিরিশের ছেলেটির মসৃণ গাল, ফুলহাতা সাদা টেরিকটের জামায় বোতাম লাগানো, পায়ে চকচকে চামড়ার জুতোয় কাদার ছিঁটে। কিন্তু চেহারায় একটু অহংকারের ছোঁয়া, একটু বিরক্তি। হুঁ, কোন সরকারি সাহাব হবে।

    উনুনে নতুন করে কয়লা দেয়ায় নীল-সাদা ধোঁয়া উঠছে, তার আলকাতরা ঘেঁষা কটু গন্ধ নাকে আসায় ছেলেটি মুখ বাঁকায়, তারপর পকেট থেকে প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরায়, একমুখ ধোঁয়া ছাড়ে। এবার চা দিতে আসা তেলচিটে হাফপ্যান্ট পরা বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করে।

    -- কেইসে বাবু, এমা গ্রামীণ বেংক কতি হাবে গা?

    খোকা, এখানে গ্রামীণ ব্যাংকটা কোন দিকে?

    বেংক? বাচ্চাটার মুখে বিভ্রান্তি? হাঁ হাঁ, গ্রামীণ বেংক। নওয়া খুলে হ্যায়। নতুন খুলেছে যেটা?

    -- নহী জানন ওলা। বাচ্চাটা চা রেখে চলে যায়।

    ছেলেটির মুখে বিরক্তি মিলিয়ে এবার সন্দেহ ও আশংকার মিশেল। ঠিক জায়গায় নেবেছে তো? এবার ও দোকানদারের দিকে তাকায়। দোকানদার এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাবে তক্ষুণি বিকট ফুরর্-ফুরর হুইসেলের শব্দ সবার কানে তালা ধরিয়ে দিল। ছেলেটা চমকে ওঠায় খানিকটে চা ছলকে ওর জামায় পড়েছে। কিন্তু ওর চোখ অবাক হয়ে খুঁজছে এই শব্দের উৎস।

    নাঃ ; ভুল হবার কোন সুযোগ নেই। ও যে ঘরঘরে স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাস থেকে একটু আগে নেমেছে, তার ড্রাইভার ইঞ্জিন চালু করেছে আর ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে এক বুড়ি খেলার মাঠের রেফারির মত হুইসিল বাজাচ্ছে। গাড়ি ধীরে ধীরে তিনচার ফুট এগোতেই বুড়ি চেঁচিয়ে ওঠে –রোককে ! রোককে! বাস থেমে যায়। বুড়ি নেমে দরজার পাশে একটু সরে দাঁড়ায়। কিন্তু ওর হুইসিলের শব্দে বেশ কিছু যাত্রী যারা একটু দূরে দাঁড়ানো প্রাইভেট বাসে উঠে বসেছিল বা উঠবে বলে তৈরি হচ্ছিল তারা বৌ এবং আন্ডাবাচ্চা নিয়ে হুড়মুড়িয়ে সরকারি বাসের সামনে এসে পড়ে। বুড়ি কর্তৃত্বের সুরে বাসের হেল্পারকে বলে প্যাসেঞ্জারদের বাক্সপ্যাঁটরা লটবহর সব বাসের ছাদে চালান করতে। হেল্পার পেছনের সিঁড়ি বেয়ে ছাদে চড়ে দূরের যাত্রীদের মালপত্র সামনের দিকে সাজায়, কাছের যাত্রীদের পেছনের দিকে সিঁড়ির কাছে। ঝুড়িটুড়ি যা ঝাঁকুনিতে পড়ে যেতে পারে সেগুলোকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়।

    এবার তাহলে সরকারি বাস ছাড়বে? কিন্তু ড্রাইভার ইঞ্জিন বন্ধ করে নেমে এসে চালাঘরগুলোর পেছনে যায়; সম্ভবতঃ তলপেট হাল্কা করতে। কোন কোন যাত্রী খেলাটা বুঝতে পারে। এই বাস এখখুনি নয়, একটু পরে ছাড়বে। হয়ত প্রাইভেট বাসের সঙ্গেই ।

    ড্রাইভার এবং বাসের খালাসী সরে এসে চায়ের গেলাসে চুমুক দিচ্ছে। কিছু যাত্রী কন্ডাক্টর ও বুড়িকে ঘিরে ধরে, ওদের ঠকানো হয়েছে। বুড়ি অবিচল। ও আড়চোখে দেখে নেয় যে ড্রাইভার ও খালাসীর চা’পর্ব শেষ হয়েছে।ও নিজে এই ফাঁকে বাসের ক্লিনারদের কারও এগিয়ে দেয়া এক গেলাস গরম চা ফুরুর ফুরুর শব্দ করে চুমুক দিয়ে শেষ করেছে। ময়লা আঁচলে মুখ মুছে ও এগিয়ে যায় পাব্লিকের নালিশ ও গালমন্দ শুনতে।

    এবার ও বাসস্ট্যান্ডের প্রাইভেট ও পাবলিক বাসের মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটায়, মানে নো-ম্যান্স-ল্যান্ডে, দাঁড়িয়ে নেতাদের ভাষণ দেবার ভঙ্গিতে স্বরগ্রাম একপর্দা চড়িয়ে ঘোষণা করে যে প্রাইভেট নয়, সরকারি বাসে ভ্রমণ করা এখানকার প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সরকারের লাভ মানে জনতার লাভ।

    প্রাইভেট বাসের ড্রাইভার কন্ডাক্টর বুড়িকে গাল দেয়, শাপমন্যি করে। বুড়ি শুনতেই পায়নি ভান করে যাত্রীদের একটি শের শুনিয়ে দেয়ঃ

    “নজরোঁ সে বার করোঁ, তলোয়ার মেঁ ক্যা রকখা হ্যায়।
    সফর বাস মেঁ কিয়া করোঁ, মোটরকার মেঁ ক্যা রকখা হ্যায়”।।

    চোখের ভাষায় শান দিয়ে নাও, তলোয়ার? সে যাক চুলোয়,
    বাসে করে যাও বেড়াতে, মোটর কেন চুলবুলোয়?

    উত্তর-পূর্ব ভারতে যেমন গঙ্গা, ছত্তিশগড়ে তেমনই মহানদী, সিহাবা পাহাড়ে শৃঙ্গীমুনির আশ্রমের পাশ থেকে বেরিয়ে কয়েকটি জেলা পেরিয়ে উড়িষ্যা হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। তার গণ্ডা গন্ডা শাখানদী ও উপনদী, তাদের ঘিরে কত গল্প, কত দন্তকথা বা লোকের মুখে মুখে তৈরি আখ্যান।

    যেমন, এই যে আপনি এপারে যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার নাম কী ?

    -- শিওরীনরায়ণ।

    - ধ্যেৎ, এ তো ইতরজনের মুখে বিকৃত হওয়া অপভ্রংশ। যান, গিয়ে মিউনিসিপ্যালিটির বোর্ড দেখুন; আমাদের জায়গাটার নাম হল ‘শবরীনারায়ণ’। এখানেই নদীর তীরে ছিল তপস্বিনী শবরীর আশ্রম, যেখানে সারাজীবন উনি প্রভু রামের আগমনের প্রতীক্ষায় প্রায় গোটা জীবন কাটিয়ে দিলেন।

    - তপস্বিনী শবরী?

    আমার গোল গোল চোখ দেখে নদীপাড়ের মঠের মোহান্তের ধৈর্য্যচ্যুতি হয় ।

    -- রামায়ণ মন দিয়ে পড়েন নি? অরণ্যকান্ড? শবরীর প্রভুকে এঁটো বইর (কুল) খাওয়ানোর কাহিনী? আপনারা আজকালকার ছেলেপুলে – কী আর বলব?

    আমি হাসি। মহারাজকে আশ্বস্ত করি--মাতঙ্গ মুনির শিষ্যা বৃদ্ধা শবরীর গল্প খানিক মনে আছে বইকি! কিন্তু এঁটো খাওয়ানো?

    হ্যাঁ, সেটা ত্রেতাযুগ; এই কলিযুগে আপনারা এসব বুঝবেন না। তপস্বিনী শবরীর অপেক্ষা করতে করতে চুল সাদা হল, মুখে বলিরেখার আঁকিবুকি, কিন্তু তিনি বিশ্বাসে অবিচল। রোজ চলে যেতেন এই নদীর পাড়ে। কুল পাড়তেন প্রভু শ্রীরামের জন্যে। যদি নদীর পাড়ে আমাদের মন্দিরের দিকে দিনের বেলায় যান তাহলে দেখবেন এখনও কত কুল গাছ, সারি সারি। মাইলের পর মাইল । কিন্তু হত কি, উনি প্রত্যেকটি কুল আগে দাঁতে কেটে দেখতেন -টক না মিষ্টি? টকগুলো ফেলে দিতেন, শুধু মিঠে কুল নিজের আঁচলে বাঁধতেন; প্রভূজীকে তো আর যা তা নিবেদন করা যায় না!

    শেষে একদিন তাঁর প্রতীক্ষার অবসান হল। রামচন্দ্র এলেন। শবরী তপস্বিনীর তপ সার্থক হল। প্রভু ওর এঁটো ফল খেলেন। শবরনারীর জন্ম সার্থক হল।

    -- কিন্তু রামচন্দ্র তো ইক্ষাকু বংশের নৃপতি। ত্রেতাযুগে উনি এক শবরীজাতির নারীর এঁটো খেলেন? আমি ফুট কাটি।

    মঠাধীশের চোখ ঝলসে ওঠে।

    -উনি মর্য্যাদাপুরুষোত্তম। উনি যা করেন তা সবার মঙ্গলের জন্যেই। আপনি-আমি ওঁর আচরণের বিচার করার কে? তা’ও এই কলিযুগের মাপকাঠিতে।

    ‘মঙ্গলভবন অমঙ্গলহা্রী’।

    একঘন্টা পরে সন্ধ্যারতি শুরু হবে; আপনি আসুন, প্রসাদ গ্রহণ করুন। তারপরে কাল আমার সেক্রেটারি ও ট্রেজারার যাবে আপনাদের ব্যাংকে, ১০০১ টাকা নগদ সিক্কা দিয়ে মঠের ট্রাস্টের নামে একাউন্ট খুলে আসবে। আমাদের মূল আকাউন্ট স্টেট ব্যাংকে।

    কিন্তু হতাশ হবেন না। আপনাদের একাউন্টে রোজ সন্ধ্যারতির সময় যে চড়াওন (প্রণামী) পড়ে সেটা জমা হবে। মাসের শেষে দেখবেন -উয়ো রাশি বহোত ছোটা নহী’। তাই বলছিলাম, আপনি নিজে একবার আরতির সময় আসুন।এখানকার নদীর ঢেউয়ে বাতাসে অনেক গল্প অনেক দন্তকথা ছড়িয়ে আছে। অডিটের থেকে ফুরসত করে আসুন, পারলে কাল মঠেই দুপুরের প্রসাদ গ্রহণ করুন। সেই ফাঁকে অনেক গল্প শুনতে পাবেন, অনেক ইতিহাস।

    স্বামীজির চেহারায় এক অনাবিল প্রসন্ন হাসি। অনেকদিন পরে দেহাতি লোকজনের ভিড় এড়িয়ে অন্যধরণের গল্প করার সুযোগ পেয়েছেন।

    -- আচ্ছা মহারাজ, আজ দুপুরে বাসস্ট্যান্ডে এক মহিলাকে দেখলাম, কোন জাতের তাতো জানিনা।কিন্তু একেবারে আপনার শবরী তপস্বিনীর মত বর্ণনা।

    মহারাজের ভুরু কুঁচকে ওঠে।

    -- কার কথা বলছেন?

    -- বাসস্ট্যান্ডে শণের মত চুল, কোমর ঝুঁকে গেছে সেলামের ভঙ্গিতে, ঘোলাটে চোখ। এরও নিশ্চয় কোন গল্প আছে?সুভদ্রা বাঈ না কী যেন নাম, সবাই বলছিল!

    মঠাধীশের মুখে বজ্রগর্ভ মেঘ ঘনায়। তীব্রদৃষ্টিতে আমাকে দগ্ধ করে কেটে কেটে বলেন—আমি এই শিবরীনারায়ণ মঠের মঠাধীশ। চারপাশে দশবিশ ক্রোশ জুড়ে যত গ্রাম, সবার আমি গুরুমহারাজ। আমারও মর্য্যাদা আছে।এসব ফালতু গল্প আমার সঙ্গে করবেন না। আশা করি, আমার কথা বুঝতে পেরেছেন। এখন চলি আরতির সময় হয়ে এল।

    আমার মনটা দমে যায়। বিকেলের দিকে একপ্রস্থ ডকুমেন্ট চেক করে ম্যানেজারকে বলেছিলাম—এতবড় মঠ, আমাদের ব্র্যাঞ্চে একটাও আকাউন্ট খোলাতে পার নি?

    --স্যার, ওরা আমাদের পাত্তা দেয় না। ওদের ব্যাংক হল স্টেট ব্যাংক।

    -- ধ্যাৎ, একাউন্ট খোলা আর মেয়ে পটানো একইরকম স্কিল। আগে আঙুল ধর , তারপরে হাত ধরবে। দেখ, আজ আমি বিকেলে মঠাধীশের সঙ্গে আলাপ করে ওনার ইগোতে সুড়সুড়ি দিয়ে একটা ছোটখাট একাউন্ট ঠিক নিয়ে আসছি। বাকিটা তোমাদের সার্ভিস দেওয়ার উপর।

    ঠিকঠাক এগুচ্ছিলাম, আচমকা তাল কাটল। কেন যে এত বকবক করতে গেলাম?

    পরের দিন ফার্স্ট হাফে মঠের থেকে কেউ ব্যাংকে আকাউন্ট খুলতে এল না। চাপরাশি বুধরামের হাতে ফর্ম ও ভাউচার পাঠিয়ে দিলাম, যদি সিগনেচার করিয়ে আনতে পারে। বুধরাম আধঘন্টায় ফিরে এল, খালি হাতে।

    মোহন্তজী দেখা করেননি। সেক্রেটারি ব্ল্যাংক ফর্ম ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। সময় হলে দেখা যাবে বলে। সেই সময় কবে হবে?

    আমরা আর এ’নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করলাম না। রাত্তিরে খাবার সময় ম্যানেজার বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল কেন? একবার যেন হাসি চাপছে মনে হল!

    এখানে ভদ্রগোছের হোটেল নেই। একটা ধর্মশালা আছে, বড় বড় মশা আর ধেড়ে ইঁদুরে ভর্তি। অগত্যা ব্যাংকিং হলেই খাট লাগিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা। চাপরাশি বুধরাম রাত্তিরে আমার খাটিয়ায় বিছানা করে দুটো দুটো লাঠি ক্রশ করে লাগিয়ে মশারি টাঙিয়ে দিল। তারপর নতুন একটা সিগারেটের প্যাকেট, ঢাকা দেওয়া জলের গ্লাস এবং মাথার কাছে একটা টর্চ রেখে বলল—আমি বারান্দায় শুচ্ছি, কোন অসুবিধে হলে বা রাত্তিরে উঠলে আমায় ডাকবেন।

    ঠিক কথা। এখানে বাথরুম-পায়খানা আঙিনার আরেক মাথায়, নোংরা জিনিস শোয়ার ঘরের চেয়ে দূরে থাকাই ভাল—এই এখানকার রীতি রেয়াজ।

    কিন্তু আমি সহজে হার মানি না। মাথায় একটা ঘুরঘুরে পোকা ছটফট করছে।কোথায় ভুল হল? কেন মঠাধীশ রেগে গেলেন?

    সিগ্রেট ধরিয়ে বুধরামকে ডাকি- পনের মিনিটের জন্যে ওই টুলে বোস। কিছু কথা আছে; তারপর শুতে যাস।

    আজ আমার স্ন্যাপ-অডিট পুরো হয়ে গেছে।কাল কিছু ফর্ম সাইন করে সকাল এগারোটার বাস ধরব।

    বুধরাম একটু দূরে টুল টেনে নিয়ে বসে পড়েছে; এবার আমার পালা। কীভাবে শুরু করি?

    আমি প্রথমে বুধরামের পুরোনাম, ব্যাংকে কবে ডেইলি ওয়েজে চাপরাশির চাকরিতে যোগ দিয়েছে এবং বাড়িতে কে কে আছে সব জেনে নিই। ওর পুরোনাম বুধরাম আদিত্য, জাতে সতনামী বা গুরু ঘাসীদাসের ধর্মসম্প্রদায়ের।অর্থাৎ ছত্তিসগড়ের সবচেয়ে বড় দলিত কমিউনিটির লোক।

    আমি দু’লাইনে শবরী তপস্বিনীর পুরাণকথা বলি। দেখলাম বুধরাম ওসব পুরাণকথা এবং এই শিওরিনারায়ণ জনপদের মাহাত্ম্য, প্রভূ রামচন্দ্রের এঁটো কুল খাওয়া সবই জানে।

    তারপর জানতে চাই ন্যুব্জদেহ সুভদ্রা বাঈয়ের প্রসঙ্গ তোলায় মোহন্তজী রেগে গেলেন কেন?

    -- সাহেব, সুভদ্রা বাঈ ঠাকুরাইন, শবরী নো হে।

    ওই ঘোলাটে চোখের মলিন কাপড়ের সুভদ্রা হল ঠাকুর পরিবারের মেয়ে? মানে, জাতে ক্ষত্রিয়, শবর সমাজের নয়? ঝেড়ে কাশো দিকি!

    বুধরাম মাথা নীচু করে নখ খোঁটে, কিছু ভাবে।

    আমি দ্বিতীয় সিগ্রেট ধরিয়ে রিঙ ছাড়ি, অপেক্ষা করি। বুধরাম সময় নিক গে’, আমার কোন তাড়া নেই।

    হঠাৎ মাথা তুলে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় বুধরাম, একটা সিদ্ধান্তে এসেছে।

    -- সাহেব, আপনাকে বিশ্বাস করে সবটা বলতে পারি যদি আপনি ম্যানেজার সাহেব মিশ্র মহারাজকে কিছু না বলেন। আমি ডেইলি ওয়েজে কাজ করি। আপনার সঙ্গে এসব গল্প করেছি জানলে আমার চাকরি যাবে। ঘর মেঁ মোর বাঈ অউ দু’ঠন নান নান বাবুনোনী হাবে।

    ঘরে আমার বৌ আর দুটো খোকাখুকু আছে যে!

    আমি মাথা হেলাই, ও বলতে শুরু করে এক আজব কাহিনী।

    “এখান থেকে কুড়ি কিলোমিটার উজিয়ে গেলে মনোরা গ্রাম। ওই গ্রামের ঠাকুর পরিবার হল আশপাশের বিশটা গাঁয়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় মালগুজার(জমিদার)। সেই পরিবারের বড় ঠাকুর শত্রুঘ্ন সিং হল ওই জনপদের সরপঞ্চ। আর আপনার ওই সুভদ্রা বাঈ হল শত্রুঘনের আপন বোন।

    “এদিকে হয়েছে কি, ওই এলাকায় আমরা মানে সতনামীরা প্রায় ষাট ঘর। আমাদের মধ্যে একটি ছেলে রামলাল সুর্যবংশী পড়াশুনোয় খুব তেজ, গাঁয়ের স্কুলে অব্বল (সেরা) হয়ে রায়পুরে বড় কলেজে পড়তে গেল। পরিবারের সবাই ভাবল ভাল পাশ দিয়ে সরকারি অফিসে ও বড়ে অফসর নয়তো বড়েবাবু হবে, খুব নামডাক হবে।কিন্তু ও ইমতিহান (পরীক্ষা) না দিয়ে ফিরে এল কমনিস হয়ে।

    “ও প্রথমে এখানে কিসান সভা বানিয়ে মন্দিরে ও ঠাকুরসাহেবের খেতে বেগারি বন্ধ করাল, মারপিট আইন আদালত সব হল। ঠাকুর সাহেবের লঠেইত লোগ(লেঠেল)নেতাদের পেটাল। পুলিশ এসে দাঙ্গাহাঙ্গামার জন্যে যারা মার খেল তাদেরই ধরে নিয়ে গেল। কিন্তু রামলাল ভী নিকলা এক বাপ কা বেটা, সের পর সওয়া সের। শহর থেকে ওর পার্টির লোক এল, উকিল এল। সবাই জামিনে ছাড়া পেয়ে নাচল , গাইল। রামলাল ঝান্ডা নিয়ে জুলুশ বের করল।একদম বজরংবলীকে ল্যাঙ্গোটওয়ালে লালঝান্ডা, ব্যান্ড-বাজা -নগাড়া সমেত। ঠাকুর সায়েবের দু’মঞ্জিলা মকানের সামনে জোর জোর সে বাজা বাজালো। ফাগ গুলাল উড়েইল দিলো।

    “ঠাকুর সাহাব কা অন্দর হী অন্দর কুছ জ্বল গয়া থা। ফির হমলা হুয়া। পর রামলাল তৈয়ার থা। আদালত কা অর্ডার লেকর থানে মেঁ পহলে ডায়রি কিয়া থা। অব উনকে সাথীলোগ ডটকে মুকাবলা কিয়া ঠাকুরকে লঠেইতোঁ কা।

    হম উস সময় স্কুল মেঁ পড়তে থে; হম ভী জুলুস মেঁ গয়ে থে। অউ লড়াই শুরু হতে হী সরপট ভাগে থে”।

    আমি হেসে ফেলি। পালিয়ে গেছলি!

    বুধরাম খেয়াল করেনা। ও এক অন্য দুনিয়ায় পৌঁছে গেছে। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে নিরুত্তাপ গলায় ও দূরদর্শনের সংবাদ পাঠকের মত লাগাতার বলতে থাকে।

    “তারপর এই এলাকায় লড়াই ঝগড়া দাঙ্গাহাঙ্গামা রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। আজ ইস গুট কা ইয়ে মার খায়া, তো কাল দুসরে গুট কা ফলানা কা পিটাই হুয়ী। সব ব্যাপারে ঠাকুরসাহেবের দল পূব, তো রামলালের দল পশ্চিম। এভাবে কী হবে আমরা ভাল বুঝতে পারি নি। এমন সময় একটা ঘটনা ঘটল যা খড়ের গাদায় মাচিসের কাজ করল ।

    “সুভদ্রা ঠাকুরাইন দশবী পাস কী থী। ষোলা বরস কী হো গইস। বড়ে ঠাকুর ভাবল আউরত জাত, অউ পড়কে কা করেগী। তো ওকে ঘরে বসিয়ে শাদি কে লিয়ে রিস্তা দেখনে লগে।

    একদিন অচানক সুভদ্রা ঠাকুরাইন রামলাল সূর্যবংশীর সঙ্গে পালিয়ে গেল। ঠাকুরকে আখোঁ সে খুন বরস্ নে লগী। থানাপুলিশ হুয়ী, কোর্ট-কাচেরি হুয়ী, রামলাল কো পুলিশ আখির ধর দবোচা। থানে মেঁ কসকে পিটাই হুয়ী। পর পতা নহী ঠাকুরাইন উসমেঁ কা দিখিস, বড়ে আদালত মেঁ জজসাহাবকে সামনে কহ দিস—মোর পতি রামলাল হাবে। আপন স্বেচ্ছা সে রায়পুরকে আর্যসমাজ মন্দির মা শাদি করেহন, স্বেচ্ছাসে। বড়ে ভাইয়া ঝুট বোলথে।

    ঠাকুরাইন ওর মধ্যে কী দেখেছিল কে জানে? ভরা আদালতে জজসাহাবকে বলল—আমার স্বামী রামলাল। আমরা নিজের ইচ্ছেয় রায়পুরের আর্যসমাজের মন্দিরে বিয়ে করেছি।আমার বড়দা মিথ্যে কথা বলছেন।

    “ফির বাজে গাজে কে সাথ সুভদ্রা রামলালকে ঘর মেঁ পত্নী বনকর আইস। ঠাকুর অন্দর হী অন্দর টুট গইস।

    কিন্তু বাবা ঘাসীদাসকে অউ কুছ ইচ্ছা রহিস। এল পঞ্চায়েত ইলেকশান। আর রামলাল সরপঞ্চ পদের জন্যে শত্রুঘন সিং ঠাকুরের বিরুদ্ধে দাঁড় করালো নিজের বৌকে, মানে তাঁর আপন বোনকে। ইলাকা মা টেনশন হী টেনশন। পুলিশ হী পুলিশ। কলেক্টর আইস, তহশীলদার আইস, একোদিন কলেক্টর ঘলাউ আইস।দাঙ্গা ফাসাদ নহীঁ হোনা।

    চুনাও হল। ঠাকুর হেরে গেল। ওর বোন সুভদ্রা ঠাকুরাইন সরপঞ্চ হল। কিন্তু পঞ্চায়েতে কার দবকা চলবে? সরপঞ্চ-পতির, মানে রামলাল সূর্যবংশীর।

    আমরা খুশি, আমাদের সমাজ খুশি।

    কিন্তু সেদিন থেকে যমরাজের নজর পড়ল রামলালের উপর; চিত্রগুপ্তের খাতায় ওর আয়ুর ঘরে ঢ্যাঁড়া কাটা হয়ে গেল।

    সবাই বলল—এলাকা থেকে কিছুদিন সরে থাকতে । তো রামলাল, হামন কে কামরেড রামলাল, শিউরিনারায়ণে এসে সরকারি বাসের বুকি হয়ে গেল, আংরেজি জানে। এখানে বাস কামগার (কর্মচারি) ইউনিয়ন বানালো। হফতে মা কোনো একোদিন গাঁও যেত, অকেলা নহি। পর গাঁও মা রাত নহী বিতাতে থে।সুভদ্রা ঠাকুরাইন কভি কভি রাত মা আতী থী, ইঁহা উসকী কিরায়ে কী মকান মেঁ।

    “ফির শিউরিনারায়ণ কী মেলা আইস।

    আপনি তো জানেন, ওই শীতকালের সংক্রান্তির মেলায় উঁচে জাতকে ছোকরে লোগ আওয়ারাগর্দি করতে হ্যায়। সেবার তেমনই দুজন ছোকরা আমাদের জাতের দুটি মেয়েকে নদীর ওপারে ধর্মশালায় টেনে নিয়ে গেছল ফুর্তি করতে। রামলাল ও তার ইউনিয়নের সঙ্গীরা তক্কে তক্কে ছিল। সবাইকে হাতে নাতে ধরে রাম ধোলাই দেয় । পরেরদিন আমাদের সমাজের লোকজন রাস্তায় নামে, হাইওয়েতে বাঁশবল্লী আর বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে চক্কাজাম করে। পুলিশ আসে, আমরা জাম তুলি না। বলি - উঁচু জাতের মুখিয়াদের লিখে দিতে হবে ওদের কেউ আমাদের মেয়েদের গায়ে হাত দেবেনা। কথা হল, রাত্তিরে বৈঠক হবে মঠের আঙ্গনের বাইরের গাছতলাতে।

    বৈঠক শুরু হতেই জায়গাটা পুলিশ ঘিরে ফেলল। সব নেতাদের হাতকড়ি লাগিয়ে কালো ডগগায় চড়িয়ে বিলাসপুর নিয়ে যাবার সময় আমাদের গাঁয়ের বাইরে রামলালকে নামিয়ে দিয়ে বলল—তুমি সরপঞ্চ পতি। তোমাকে গ্রেফতার করছি না । ভালভাবে থেকো ।

    “শুনশান রাস্তা; সন্নাটা। রামলাল আর বাড়ি পৌঁছতে পারেনি। ঘাতকেরা ওত পেতে ছিল। ওকে রাতভর একটু একটু করে পুচিয়ে পুচিয়ে কেটে বডি গাঁয়ের বাইরে সার তৈরির পচাপাতা পচাগোবরের গাদায় পুঁতে দেয়া হয়েছিল।

    একমাস পরে গন্ধ পেয়ে বডি উদ্ধার হল। ঠাকুরবাড়ির সবকটা জোয়ান জেলে গেল। কেস চলল। তিনবছরের মাথায় হাইকোর্টে খালাস পেয়ে ঘরে ফিরল।

    আমরা শহীদ রামলাল মঞ্চ বানালাম। ক’বছর পরে ধীরে ধীরে ভুলে গেলাম। ভোলেনি সুভদ্রা ঠাকুরাইন। ওর মাথাটা গেছে। বিশ্বাস করে রামলাল একদিন ইউনিয়নের কাজ সেরে বাসে করে ফিরবে। তাই এখানেই মাথা গুঁজে কোনরকমে থাকে।

    রাত বহোত হো গয়া সাহাব; অব সো জাইয়ে। কিন্তু দোহাই আপনার , যা বলেছি সব ভুলে যান। মিশ্র ম্যানেজার সাহাব যেন জানতে না পারেন।

    পরের দিন। বেলা এগারটা। বৃষ্টি পড়ছে না। মেঘলা আকাশ, বড্ড গুমোট। আমি বুধরামকে নিরস্ত করে একাই ব্রীফকেস হাতে বাসে চড়ে বসি। সরকারি বাস।

    ড্রাইভার স্টার্ট দেয়। কিন্তু রেফারির হুইসল বেজে ওঠে। একটা ফ্যাঁসফেসে ভাঙা গলা চেঁচিয়ে ওঠে—রোককে! রোককে!

    ওর ঘোলাটে চোখ কাউকে দেখছে না। বাস থেমে যায় ।

    আমি সিগ্রেট ধরিয়ে গুনগুন করিঃ

    “শবরীদত্তফলাশন রাম, কবন্ধবাহুছেদন রাম,
    তদগতিবিঘ্নধ্বংসক রাম, সুতনয়-কুশলবনন্দিত রাম,
    ধর্মস্থাপনতৎপর রাম, দুষ্টদশাননমুক্তিদ রাম,
    সর্বচরাচরপালক রাম, সর্বভবাময়োদ্ধারক রাম”।।

    --------------------------------
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Jharna Biswas | ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৫৩733494
  • দারুন।.. আপনার আরো কটা লেখা পড়েছি খুব ভালো লেখা।.. 

  • রৌহিন | ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:৪১733496
  • আহা! দুর্দান্ত, রঞ্জনদা। খুব অল্প কদিন রায়পুরে ছিলাম - কিন্তু বিলাসপুরের দিকে যাইনি। এই গল্পটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম

  • Amit Sengupta | ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:০৮733497
  • বরাবরের মতো, রঞ্জন রায় ও ছত্তিসগড়ের কম্বো জাস্ট দুর্দান্ত। 

  • Ranjan Roy | ১২ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৫০733499
  • এই লেখাটি পড়ার জন্য ও আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য বন্ধুদের ধন্যবাদ। 

  • স্বাতী রায় | ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:২১733506
  • অনবদ্য। হিন্দিতে সড়গড় নই বলে একটু ঠোক্কর খেয়েছি। কিন্তু এই গল্পের জন্য ঠোক্কর খেতে রাজী। 

  • Ranjan Roy | ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:২৮733507
  • স্বাতী,


    আমার তাড়াহুড়ো না করে একটু খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল। পরের বার যাই লিখি হিন্দি বাক্যের নীচে তখুনি বাঙলা জুড়ে দেব। আসলে একটু আলসে, রিভাইস করোতে ইচ্ছে করেনা। পরীক্ষা হলেও তাই। কিন্তু করলে ভালই হয়্য।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন