এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ফেরারি ফৌজঃ (অন্তিম পর্ব)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১১ জানুয়ারি ২০২১ | ২৯৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • (২)

    ‘সাজিয়াছ যোগী, বল কার লাগি’

    বিজনদা আবার একটা সিগ্রেট ধরাল। তারপর ছাদের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল—দীপক আগে জনযুদ্ধ জয়েন করেছিল। পরে অন্ধ্রে গিয়ে মাওবাদীদের পলিটব্যুরো মেম্বার হয়েছে। তবে কয়েকবছর আগে তোদের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে গোপনে হার্টের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে। আরে, ডঃ বিনায়ক সেন তো জেলে ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে চিঠিচাপাটি দিয়ে আসতেন—এমনই পুলিশের কেস। যাহোক, ছত্তিশগড়ে ওড়িশায় ওর বিরুদ্ধে কোন চার্জ প্রমাণিত হয় নি। এখন বিহারের জেলে জনসুরক্ষা আইনে আটকে রয়েছে। এবার তোর দান!

    আমাদের পুরনো কমরেডসদের মধ্যে ওই একা আবার ফিরে গিয়েছে। একবার ওদের লিবারেশন পত্রিকার একটা সংখ্যা আমার হাতে এসেছিল। তাতে একটা বিতর্কমূলক প্রবন্ধের লেখক ‘প্রসাদ’ আসলে আমাদের দীপক।

    যাক গে, আমরা এখন আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর জেনে কী হবে!

    --নে, শুরু কর!

    শংকর চোখ সরু করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

    আমার চিকিৎসা চলার সময়েই যোগাযোগ হয় এম-এল দলের ছত্তিশগড় রাজ্য ইউনিটের মেম্বার ভিলাইয়ের যোগী রায়ের সঙ্গে । উনি আর শংকর গুহ নিয়োগী ভিলাইয়ের সিপিএম দল দিয়ে শুরু করে পরে নকশালবাড়ির সমর্থনে সিপিএম থেকে বেরিয়ে আসেন। তারপর ১৯৬৯ সালের বাইশে এপ্রিল অর্থাৎ লেনিনের জন্মদিনে বা এম-এল পার্টি প্রতিষ্ঠার দিনে স্টিল প্ল্যান্টের খাসা চাকরি ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে গেলেন। উনি সরগুজা জেলার চিরিমিরি কয়লাখনি এলাকায় ও আশপাশের পাহাড় ও জঙ্গল অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে দু’বছরের পরিশ্রমে পার্টি ইউনিট ও সমর্থকদের একটা বৃত্ত গড়ে তুলেছিলেন।

    সেরে ওঠার পরের মাসেই আমরা ভিলাই থেকে পালিয়ে কুরেশিয়া ও পোনরি হিল মাইন্স এলাকায় চলে আসি। আমরা মানে আমি ও অলকেশ । আমাদের অরিজিনাল কোলকাতা গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। ও ছিল বিজনদা’র রিক্রুট, কিন্তু অন্য সেলের ছেলে। তাই আমি ওকে চিনতাম না ।

    সত্তরের দশকে তখন গাজন ফুরিয়ে ভাঙনের দিন, মানে যখন আমডাঙা-বরানগর-কাশীপুর সব ঘটে গেছে। তখন শেল্টার পাওয়াই মুশকিল। আগের উৎসাহী সমর্থকেরা হয় চলে যেতে বলে , নয় মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। হাতে গোণা কেউ কেউ গোপনে পুলিশে খবর পাঠায়।

    সে’সময় ছত্তিশগড় আলাদা রাজ্য হয় নি; মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণ-পূবের অঞ্চল হিসেবে ওর পরিচয় । অবস্থান ভারতবর্ষের প্রায় মাঝখানে। তাই এখানে প্রচুর ছেলে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ এসেছিল অন্ধ্র থেকে , কেউ বিহার; সবচেয়ে বড় অংশ বাঙলা থেকে । এইভাবেই অলকেশ আসে। আমার সঙ্গে পরিচয় হোল সেই কুরেশিয়া মাইন্স এলাকায়। আমরা থাকতাম একটা টিলার মাথায় কুলিধাওড়ায়। ওটাই যোগীদার ঠেক। কাঠের টুকরো পেরেক দিয়ে ঠুকে দরজা, একটা শেকল। মাটির দেয়ালে খাপরার ছাত। মাথা নিচু করে ঢুকতে হত । একটা মোটা বেডশীটের মধ্যে সেলাই করে খড় আর ধানের তুষ ভরে গদি বানিয়ে শোয়া। ঘরের মধ্যেই মাটির ঝিক তোলা নিচু উনুনে ভাত ডাল রান্না করে নুন দিয়ে খাওয়া। মেজের মধ্যেই একটু নালি মত কেটে বাসন ধোয়ার জল আর ভাতের মাড় বের করে দেওয়া। কয়লা ফ্রি, জ্বালাতে হয় কেরোসিনের টেমি। সেই আলোতেই পড়াশুনো। রাত্তিরে কানে আসে গায়ে গায়ে লাগা অন্য ঘরগুলোর বাসিন্দের গল্প-স্বল্প, ঝগড়া, মা-বোন তুলে গালাগাল ও সঙ্গমকালীন শীৎকার।

    প্রথম প্রথম মুখ বাঁকালে কি ভুরূ কোঁচকালে যোগীদা বলতেন—মানুষকে তাচ্ছিল্য কর না । ওদের অবস্থা এবং তার কারণ বোঝার চেষ্টা কর। তবে তো দিনবদলের স্বপ্ন ঝাপসা থেকে স্পষ্ট হবে।

    রাত্তিরে খালি ভাবতাম কখন সকাল হবে। রোজ নিত্যকর্ম সারতে টিলা থেকে একটা টিনের কৌটো হাতে আমরা নিচে নেমে যেতাম। ওখানে একটা ঝরণার পাশে নিজেদের শুদ্ধ করে স্নান সেরে কাপড় কেচে উপরে উঠে আসতাম। যোগীদা আমাদের শর্টকাটে রান্না করা শেখাতেন। আমার বিদ্যে ভাত – ডালের বেশি এগোল না । অলকেশ কাঁচের গেলাস দিয়ে বেলে চমৎকার গোল রুটি বানাতে শিখল। তবে রান্না এবং খাওয়ার জল দু’জন স্থানীয় কমরেড নিচের ঝর্ণার ঠেকে লাঠির মাথায় দুটো বালতি ঝুলিয়ে উপরে পৌঁছে দিতেন। আমার লজ্জা করত। কিন্তু একবার চেষ্টা করে দেখলাম, ও আমার কম্ম নয়। এভাবেই তিনমাস কেটে গেল। আমরা যোগীদার সঙ্গে এখানে কাকে দিয়ে ‘অ্যাকশন’ শুরু করা যায় তার প্ল্যান বানাতাম। সামনে বিশাল নীল পাহাড়ের লাইন অমরকণ্টকের দিকে চলে গেছে; তার টেরেইন ম্যাপিং করার কথা ভাবতাম। কেমন মনে হত , হয়ত এখান থেকেই মাওয়ের চিংকাং পাহাড়ের মত ঘাঁটি এলাকা গড়ে উঠবে। এখান থেকেই আমাদের আপাততঃ থমকে যাওয়া পার্টি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

    বেশ চলছিল। তখন আগস্ট মাস। পাহাড়ে বৃষ্টি নেমেছে সাতদিন ধরে। ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। যোগীদা দু’জন স্থানীয় ছেলেকে নিয়ে ভিলাই চলে গেছে দশদিন হল । উদ্দেশ্য, ওখানে ওর ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক কেটে জমা টাকার বেশির ভাগ তুলে নেবে। সরগুজা-রাঁচি বর্ডারে কিছু যোগাযোগ হয়েছে। ওই টাকায় একটা মিলিশিয়া প্ল্যাটুনের জন্যে দরকারী ফায়ার আর্মস কেনা যাবে।

    আমি বারণ করেছিলাম। ভিলাইয়ে যোগীদা এত পপুলার ছিল, কেউ না কেউ ঠিক চিনে ফেলবে। যোগীদার কনফিডেন্স তুঙ্গে । ও অনেকদিন ধরে পোশাক -আশাক হাঁটাচলা সব বদলে ফেলেছে। হারিয়ে গেছে বীরভূমের জমিদার পরিবার থেকে ভিলাইয়ে আসা ছিপছিপে হ্যান্ডসাম ক্লিন শেভড শৌখিন যুবক। এখন ধুতি-কুর্তা- হাওয়াই চটি পরে হাতে ছাতা নিয়ে হাঁটতে থাকা লোকটি মনে হয় দূর্গ -অহিরবারার কোন গ্রামের থেকে কাজের খোঁজে এসেছে।

    এই বৃষ্টির মধ্যে কোথাও বেরোনো যায় না। স্থানীয় দুই কমরেড জল তুলে দিয়ে কিছুক্ষণ বসে আমাদের হাতের চা খেয়ে তারিফ করে যায়। একদিন ওদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি বলল স্থানীয় কুলিধাওড়ায় তোমাদের খুব সুখ্যাতি। তোমরা নাকি ‘ল্যাঙট কে পাক্কে’! ব্রহ্মচারী।

    মানে?

    মানে তোমাদের নৈতিক চরিত্র খুব ভাল। আসলে এদিকের মেয়েরা অনেকটা স্বাধীন। মন লাগলে শরীর নিয়ে বেশি ছুঁচিবাই নেই। আর ঘরগুলোর কাঠের বাতার দেওয়াল বা পার্টিশনের অনেক ফাঁক-ফোঁকর। ওরা দেখেছে যে মরদরা কাজে বেরিয়ে গেলে বা ঝরণার কাছে স্নানরতা মেয়েদের মুখোমুখি হলে তোমাদের চোখ বা শরীরের ভাষায় কোন পরিবর্তন হয় না ।

    প্রায় সতেরদিন হোল। আজ বৃষ্টি ধরেছে। এবার নিচে যাব। চাল, তেল, নুন, আলু ও চা-পাতা কিনতে হবে। এমন সময় ওরা এল। খারাপ খবর। যোগী রায় ও তার দুই সঙ্গী ভিলাইয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসার মুখে ধরা পড়েছেন। কোমরে দড়ি এবং হাতে হাতকড়ি বাঁধা অবস্থায় ওদের নিয়ে ভিলাইয়ের পুলিশের দল একঘন্টা আগে চিরিমিরি স্টেশনে নেমেছে। এখন ওরা সব থানায় বসে আছে। জেরা চলছে।

    র‍্যাশন কেনা মাথায় উঠল। এই সূত্র ধরে পুলিশের এখানে কুলিধাওড়ায় আসা শুধু দু-এক ঘন্টার ব্যাপার। আমরা তৈরি হয়ে নিই। অনেকগুলো পার্টির পত্রিকা ও লিফলেট দুটো ব্যাগ ভরে সেলোফেন পেপারে ঢেকে পাহাড়ের গায়ে একটা গুহামত দেখে পাথর চাপা দিয়ে রেখে দিই। স্থানীয় দু’জনকে বলি এখানে সব ঠান্ডা হয়ে গেলে এগুলো নিয়ে যেতে। ভাল করে দেখে নেই যাতে পুলিশের হাতে কোন কিছু না পড়ে। তারপর যোগীদার পরিষ্কার জামাকাপড় পরে দুজনে সারাদিন পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে কাটাই। রাত্তিরে স্টেশনের উপরের টিলায় এক চায়ের দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে খোলা আকাশের নিচে তেরপল মুড়ি দিয়ে ঘুমোই।

    পরের দুটো দিন। পকেটে পনের টাকা। দুজনকে পৌঁছতে হবে হাওড়া স্টেশন। আমি যাব নাকতলায় আমাদের পারিবারিক আস্তানায়। অলকেশ যাবে বাগনানে ওর দিদির বাড়িতে।

    কোলকাতায় তখন রাষ্ট্রপতির শাসন। সীমান্তের দিকে সমানে মিলিটারি কনভয় যাচ্ছে। পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ আসন্ন। সবাই ‘স্বাধীন বাংলাদেশ বেতারকেন্দ্র’ শুনে উলুত পুলুত। গান বাজছে—“শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠে স্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি’। পিকিং রেডিও যেন ওদের মানসপুত্র নকশালদের ভুলে গেছে। উলটে বলছে ওরা নাকি পাকিস্তানের ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট, অর্থাৎ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সরকারকে সমর্থন করছে।

    আমাদের ছেলেরা মরছে; মরছে আর মারছে। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছেঃ ‘রক্তঝরা পথই তো বিপ্লবের পথ-চারু মজুমদার।‘

    কয়েকমাস পরে আমরা দু’জন যে যার মত করে ভিলাই-দুর্গে ফিরে এলাম।

    কিন্তু অল্পদিন পরেই বুঝলাম ছত্তিশগড়ের কমরেডরা দুটো ছোট দলে বিভক্ত। অফিসিয়ালি এম-এল পার্টির যারা তাদের নেতা যোগী রায়। আর গুহনিয়োগীর অনুগামীরা একটা আলাদা দল গড়ে ক্লাস স্ট্রাগলের বদলে জাত-পাতের জটিল সমীকরণের জট খুলতে আগ্রহী। উনি এক ছত্তিশগড়ি মহিলা আশা সাহুকে বিয়ে করে বাঙালী পরিচয় ভুলতে চাইছেন। তখন থেকেই উনি আলাদা ছত্তিশগড় রাজ্যের স্বপ্ন দেখছেন ও প্রচার করছেন।

    অলকেশ ওনার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দূর্গ কলেজে ভর্তি হয়ে শহরে সংগঠন গড়তে লেগে গেল। আর যোগী রায় আমার হিরো। গোটা শহর জানে উনি শত অত্যাচারেও একজনের নাম বলেন নি । কিন্তু ওঁর দলের সব কমরেড পিডি অ্যাক্টে জেলে বন্দী। অলকেশের সঙ্গে আমার কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল। আমি তাই রায়পুরের কলেজে ভর্তি হলাম, যাতে ওর সাথে দেখা না হয়। অপেক্ষায় রইলাম হয়ত কোনদিন আবার ঘুর্ণি হাওয়ায় উড়ে আসবে শালপাতার ডাক।

    সেই অপেক্ষায় কেটে গেল কয়েকবছর। জানতে পারলাম যোগীদা ছাড়া পেয়ে বীরভুমে নিজের পৈতৃক গ্রামে ফিরে গেছে।

    বাবা চলে গেলেন। মা’র দায়িত্ব আমার উপর। বিলাসপুর শহরে পেলাম আর্বান কো-অপারেটিভ ব্যাংকে ক্লার্কের চাকরি। সেখানেই পরিচয় নন্দিতার সঙ্গে । ওর বাবা রেলের কর্মচারি। ও রেলের স্কুলে টিচার। ছোট্ট সংসার, দুই মেয়ে হোল।

    মন্দ চলছিল না । কিন্তু আমার কপাল খারাপ। ঘরে মন বসে না । আমার স্বপ্নে খালি ঝোড়ো হাওয়ায় শালপাতারা উড়ে উড়ে আসে। নন্দিতা এই স্বপ্ন বোঝে না । বিরক্ত হয়, ভয় পায় । আমিও কি ভেতরে ভেতরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। শেষে একদিন বিধিসম্মত ভাবে আলাদা হয়ে গেলাম। এখন রিটায়ারের পর ঝাড়া হাত-পা। ভেবে ভেবে বেরিয়ে পড়লাম ফেরারি ফৌজের সন্ধানে।

    অলকেশের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয় নি । তোমাদের কাছে ওর ডায়েরি পড়ে যা জানার জেনেছি।

    (৩) বিজনের কথাঃ

    সেদিন কথা আর এগোয় নি। আমরা তিনজন ফিরে গেছলাম পঞ্চাশ বছর আগের দিনগুলোতে। কেমন যেন পুরনো সাদা কালো সিনেমার মত। সত্যিই আমরা এতগুলো আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে এসেছি? এভাবেই একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম? বুড়ো হলাম?

    কিন্তু কেন আজকের ছেলেমেয়েদের বুঝতে পারি না ? কথা বলি আমার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে । ওদের ভাষা, ওদের স্বপ্ন সব যেন অন্য কোন পৃথিবীর।

    ভেবেছিলাম ওই শেষ। রমেন আর আমার ঘরে আসবে না । সত্যি কথা বলতে কি সেদিন ফেরারি ফৌজের হালখাতা লেখা ও অডিট হয়ে গেছে; বোধহয় তিলতর্পণও।

    রমেন-- আমার রিক্রুট --একটা ভুলে যাওয়া স্মৃতি হয়ে থাকুক।

    তিনমাস কেটে গেছে। আমিও যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। আর ওসব কথা শুনতে চাই নে। পুরনো স্বপ্নের থেকে নিষ্কৃতি চাই । কোথাও কিছু একটা বড় ভুল ছিল। সেসব নিয়ে চুলচেরা বিচার যারা করতে চায় করুক গে। আমার সাধ্যে কুলোবে না ।

    কিন্তু চাইলেই কি রেহাই পাওয়া যায়?

    গতকাল দুপুরে রমেন আবার এল, সঙ্গে শঙ্কর। আমি খুশি হই নি । এবার কী চাস তুই?

    ও হাসতে থাকে। বলে ফেরারি ফৌজ। তারপর বলে – আরে আগে চা খাওয়াও, তারপর বলছি । আমি অপ্রস্তুত হয়ে রান্নাঘরে যাই। শুনতে পাই শংকরকে কবিতা শোনাচ্ছে।

    “এখনও ফেরারি কেন, ফের সব পলাতক সেনা।

    সাত সাগরের পারে ফৌজদার হেঁকে যায় শোনো”

    শংকর খেঁকিয়ে ওঠে।

    --থাম তো! ওসব কত্থায় চিঁড়ে ভিজবে না । কোথাও সাত সাগরের পারে কোন ফৌজদার হাঁক পাড়ছে না । কোন পরাণমাঝির ডাক শুনতে পাই নি । তোর মতলবটা কী ? এই তিনজনের ফেরারি ফৌজ বানাবি?

    --আরে না না ! আমি কিছু বানাব না। এই বয়সে আমরা নিজের মত করে কিছু করব। তবেই আবার বেঁচে উঠব।

    --ফালতু ঢপ দিস না । আমরা কি মরে গেছি নাকি?

    রমেন দাঁত বের করে ।অমিতাভ বচ্চনের ফিল্মি ডায়লগ ঝাড়েঃ ‘ এ জীনা ভি কোই জীনা হ্যায় রে লাল্লু’?

    খানিকক্ষণ সবাই চুপ করে চায়ে চুমুক দিতে থাকে। আমার কেমন খারাপ লাগে। বলি, ঠিক আছে ,তুই কী করবি? মানে কী ভাবছিস? একটু খুলে বল।

    --আমি শুরু করে দিয়েছি । ওই যে কোলকাতার থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে সতেরোটা গ্রাম নিয়ে একটা আন্দোলন শুরু হয়েছে না ? ভাবছি ওদের সঙ্গে ---

    -- ধ্যের বাল! এইজন্যে আজ আমাদের সঙ্গে বসতে চাস? আরে ওটা মহা ফালতু আন্দোলন। ওর কোন ভবিষ্যৎ নেই। ওটা একটা ভুলভাল আন্দোলন ।

    --কেন?

    --ওই চাষির জমির উপর দিয়ে হাই-ট্রান্সমিশন তার টানা হবে, ট্রান্সফর্মার বসবে, পাওয়ার গ্রিড হবে যার লাভ লোকাল গ্রামের লোকজন পাবে না। ওই গ্রামগুলো অন্ধকারেই থাকবে আর সরকার বাড়তি বিদ্যুৎ বেচে মুনাফা করবে—এই তো? এর বিরুদ্ধেই ওদের আন্দোলন!

    --তা মোটামুটি তাই বটে! কিন্তু জমির মালিকানা আর ন্যায্য ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটাও আছে।

    -- ওটা ফালতু আন্দোলন।

    --এটা কী করে বলতে পারিস? তুই কি সবজান্তা?

    শংকর একটুও দমে না । বল এবার ওর কমফোর্ট জোনে পিচ করেছে, মানে হাফ ভলি। ব্যাটা লম্বু ফ্রন্ট ফুটে ড্রাইভ করে যায়, একের পর এক। ও যে পেশায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়র, সেটা আমি ভুলে গেছলাম।

    ও একটা কাগজ-পেন তুলে নিয়ে ছবি এঁকে আমাদের ব্যাপারটা বোঝাতে থাকে। আমরা চুপচাপ শুনে যাই।

    সব দেশে চাষের জমির উপরেই ট্রান্সফর্মারের খুঁটি পোঁতা হয়, হাই টেনশনের তার টানা হয়। নইলে গোটা দেশে হাতে হ্যারিকেন হত । আর পাওয়ার গ্রিড তৈরিই হয় অনেক বড় এলাকায় সাপ্লাইয়ের জন্যে। যেমন রাইফেল দিয়ে দূরের জিনিস শিকার হয়, পিস্তল দিয়ে কাছের। ওই গ্রামগুলোর বিদ্যুৎ আসবে অন্য পাওয়ার গ্রিড থেকে । আর সেফটি মেজার হিসেবে ন’ফুট উঁচু দিয়ে তার টানার গাইডলাইন রয়েছে। কিন্তু সেফ সাইডে খেলতে গিয়ে এগার ফুট উঁচু দিয়ে টানা হয়। ওই ক্যান্সার হওয়ার চান্স, তিনমাথা হওয়া বাছুর বা বিকৃত বাচ্চা পয়দা হওয়া অথবা ফসল জ্বলে যাওয়ার কথাগুলো সেরেফ লোক খেপানোর গল্প, যেমন সিপাহী বিদ্রোহের সময় এনফিল্ড রাইফেলের টোটায় গরু ও শুয়োরের চর্বির গুজব ছড়িয়ে হিন্দুমুসলমান সবাইকে ইংরেজের বিরুদ্ধে খেপানো সহজ হয়েছিল।

    বুঝলাম, কিন্তু টোটায় চর্বি থাকার গুজবটা মিথ্যে হলেই সিপাহী বিদ্রোহ তো মিথ্যে হয়ে যায় না । তেমনই বিজলী এমিশনের এফেক্টটা পুরো সত্যি যদি নাও হয়, জোর করে টিপছাপ লাগিয়ে মাফিয়ার জমি দখল, অপর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এগুলো তো মিথ্যে নয়। তাই আন্দোলনও ফালতু নয়।

    ঠিক বলেছিস। তা সত্যি দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন হোক না ! এইসব গুজব বাদ দে না ।

    সত্যি দাবিগুলো ও আছে। আর ওই কথিত গুজবগুলো দিয়ে হয়ত গ্রামের মানুষজনকে মবিলাইজ করা সহজ হয়েছে।

    ইউ টু ব্রুটাস! তুইও তাই বলবি? সহজ রাস্তা? শর্ট কাট? সেই পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের জোতদারের গলাকেটে বিপ্লবের শর্টকাটের মত?

    আমি আর চুপ করে থাকতে পারি নি ।

    শোন রমেন, দেড়শ বছর আগে যা করা হয়েছিল আজ একুশ শতকেও তাই? বিজ্ঞান বিরোধী কথা বললে অন্ধবিশ্বাসকে মজবুত করা হয় না ?

    রমেন একটু ভাবে। তারপর হেসে ফেলে।

    --ঠিক আছে বিজনদা। তোমাদের কথা মেনে নিলাম। আমি ওদের বুঝিয়ে বলব।

    মানে? তুই কি এখন ওদের একজন হয়ে গেছিস? কতদিন আগে?

    -হ্যাঁ, গত দু’মাস থেকে ওদের সঙ্গে ওই এলাকাতেই আছি।

    সেকি, নতুন গুরু ধরেছিস নাকি?

    রমেন হাসে। আবার চায়ের ফরমাস করে । তারপর আমার প্যাকেট থেকে একটা সিগ্রেট ধরিয়ে জানায় যে আসল ফ্যাক্টর হল দীপক , আমাদের পুরনো সাথী দীপক, বেহালার কমরেড। যার বাড়িতে রমেন প্রথম শেল্টার পেয়েছিল।

    আরও জানলাম যে মাওবাদীদের পলিট ব্যুরো মেম্বার সাতাত্তর বছরের দীপক এখন ক্যান্সারে ভুগছে। অ্যাডভান্সড স্টেজ, তাই বিহার সরকার ওকে ছেড়ে দিয়েছে ছ’মাস হল। ছাড়া পেয়ে ও বেহালায় নিজের বাড়িতে এসেছে। দু’মাস আগে রমেন গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করেছিল। ও রমেনকে বলল যে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ আজকের পরিস্থিতিতে ভুল; গণ-আন্দোলন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কথাটা রমেনের মনে ধরল। তাই ও একটা সমান্তরাল দলের সঙ্গে ওই পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে জুটে গেল।

    আমরা অবাক। রমেনের বয়েসও তো সত্তর ছুঁই ছুঁই। শংকর জানতে চায় যে ও ওই গ্রামগুলোতে গিয়ে কী ছিঁড়ছে?

    আন্দোলন তুঙ্গে ওঠায় পুলিশের দমনপীড়ন বেড়েছে। বাচ্চাগুলো স্কুলে কোচিং ক্লাসে যেতে পারছে না। রমেন সকাল সন্ধ্যে ওদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে। বিশেষ করে যারা এবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, তাদের। ও নিজেকে সেতুবন্ধে কাঠবেড়ালি ভাবছে।

    তাই রমেন এসেছে আমাদের গুডবাই করতে।

    কেমন যেন পঞ্চাশ বছর আগের মত, দেজা ভূ?

    নাঃ , কোন কিছুই ঠিক আগের মত হয় না, হতে পারে না । তখন কেউ ঘরদোর-আত্মীয়স্বজন-পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে বরাবরের মত গ্রামে যাচ্ছে কৃষিবিপ্লব করবে বলে শুনলে কেমন একটা রোমাঞ্চ মত হত । নাকতলায় আমাদের বন্ধুর মা কয়েকজনকে পেটপুরে মাংসভাত আর পায়েস খাইয়েছিলেন। একটা উৎসব উৎসব ভাব ছিল। কিন্তু এখন সে’রকম কিছুই মনে হচ্ছে না । বড্ড ক্লান্ত লাগছে, মুখের ভেতর একটা বিস্বাদ বোদা ভাব।

    রমেন উঠে দাঁড়ায়, মুচকি মুচকি হাসছে।

    --আমার কথা তো বললাম। তোমরা কে কী ভাবছ?

    আমরা এ ওর মুখের দিকে তাকাই। তারপর চুপ মেরে যাই। রমেন এতক্ষণ ধরে না-বলা প্রশ্নটি উচ্চারণ করেঃ যাবে আমার সঙ্গে ? শঙ্কর? বিজনদা তুমি?

    শংকর মাথা নাড়ে।

    --বাইপাস হয়ে গেছে। আমি এখন তোদের বোঝা হয়ে দাঁড়াব। তা ছাড়া বৌ আর মেয়ের দায়িত্ব রয়েছে। সেটা হঠাৎ ঝেড়ে ফেলে দিতে পারি না । তুই না হয় ঝাড়া হাত পা।

    ও চুপ করে যায়।

    রমেন হেসে ফেলে।

    --এই বয়েসে পৌঁছে তোর কথাগুলো কেমন মেশোমশায়ের মত শোনাচ্ছে না ?

    শঙ্কর ঝাঁঝিয়ে ওঠে।

    --ফালতু বাতেলা মারিস না । পঞ্চাশ বছর পরে যদি কেউ সত্তরের দশকের বুলি আওড়ায় তাহলে—

    --হ্যাঁ, হ্যাঁ; বলে ফ্যাল-- তাহলে কী ?

    শংকর হতাশ ভাবে হাত উলটে দেয়।

    --আসলে কী জানিস? আমার আর বিপ্লব-টিপ্লবে বিশ্বাস নেই। আমাদের দেশ যদি নর্থ ইউরোপের মত সোশ্যালিস্ট ওয়েলফেয়ার স্টেট হয়ে যেতে পারে তাই যথেষ্ট।

    দ্যাখ না , কম্যুনিস্ট চিন আর ভিয়েতনাম নিজেদের মধ্যে আকচা আকচি নিয়ে আছে। ভিয়েতনাম কাম্বোডিয়া আক্রমণ করে নিজেদের পছন্দের সরকার বসালো। চিনের আলিবাবা আর পে-টেম মোদীজির ভারতে চুটিয়ে বিজনেস করছে।

    আবার দ্যাখ, মার্ক্স আর লেনিন ভাবতেন ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসবে। ওটা ক্রমশঃ ক্ষয় হতে হতে শূন্যে মিলিয়ে যাবে। আর ব্যক্তিমানুষ মুক্ত হবে, ক্রিয়েটিভ হবে। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্যে উদয়াস্ত খাটবে না। বাস্তবে কী হয়েছে দ্যাখ, রাষ্ট্রের নাট-বল্টু আরও টাইট হয়েছে। মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঘরে ঘরে টিভি, মোটরবাইক আর হাতে হাতে মোবাইল নামের ঝুমঝুমি। কিন্তু খাটতে হচ্ছে আট ঘন্টার জায়গায় বারো ঘন্টা, ঘরে ফিরেও রেহাই নেই। ধুর বাল!

    --আরে তোরা সব আমাকে ভুল বুঝেছিস। আমি কোন সত্তরের দশকের খোয়াব পুষে গেরিলা যুদ্ধ করতে যাচ্ছি নে। ওই যে রাষ্ট্রের ফাঁস গলায় এঁটে বসছে, সেটাকে ঢিলে করতে গণ-আন্দোলন হচ্ছে। তাতে সামান্য কাঠবেড়ালি হতে যাচ্ছি। তোরা যাবি তো বল!

    শংকর মাথা নাড়ে। ওদের দুজনের চোখ এখন আমার দিকে।

    আমার মাথা ঝিমঝিম করে ।

    বিছানায় ধপ করে বসে পড়ি। তারপর দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলি—তুই এবার যা, রমেন। আর আসিস না ।আমি পাপ করেছি। আমি আর কোন ভাল কাজে হাত লাগানোর যোগ্য নই।

    ওরা এমনভাবে তাকায় যেন মাথায় কেউ ডান্ডা মেরেছে। শংকর চেঁচায়—গুরু, মাথাটাথা সব গেছে? যাও, বাথরুম গিয়ে মাথায় দু’মগ জল ঢেলে এস। তারপর ঝেড়ে কাশো। হয়েছেটা কী? মদ খেয়েছ? নাকি রেসের মাঠে হেরে গেছ?

    আমি মাথা নাড়ি। ওসব কিছু না । খুব লজ্জার ব্যাপার। আমি নষ্ট হয়ে গেছি, এর বেশি কিছু বলতে পারব না ।

    রমেন আমাকে কেমন একটা অদ্ভূত দৃষ্টিতে দেখছে। আমি চোখ সরাই।

    শংকর উঠে এসে কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। তারপর বলে—দেখ গুরু, মনের অগোচর কোন পাপ নেই। আর স্নানঘরে আমরা সবাই ন্যাংটো! বলে ফেল, বলে ফেল। নিজের মুখে বলে টেনশন-ফ্রি হও। বুঝতে পারছ না ? আরে তোমার অবচেতন মন ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুলে বলতে চাইছে। নইলে পাপ কথাটা মুখ দিয়ে কেন বেরিয়ে এল? নাও, জলটা খেয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে ‘কনফেশন’ শুরু কর। আমিই তোমার পাদ্রীবাবা।

    ৪)

    “ এ আমার এ তোমার পাপ”!

    তোমরা তো জান যে আমার নেশা বলতে সিগ্রেট আর চা। অন্য কোন কিছু ছুঁয়ে দেখতেও ইচ্ছে হয় নি । তবে গত দশবছর ধরে একটা ব্যাপার হয়েছে , চুল কাটতে গেলে সেলুনে গিয়ে ভাল করে মালিশ করাই। একটু অবাঙ্গালী নাপিত দেখলে খুশি হই। ওদের হেড ম্যাসাজ, হাত ও পিঠ ম্যাসাজ আমার গায়ের ব্যথা দূর করে দেয়। এরা আজকাল একটা ইলেক্ট্রিক ম্যাসাজার দিয়ে মাথা, গাল চমৎকার ম্যাসাজ করে । আবার কানের ভেতর দু’ফোঁটা জল ঢেলে তার উপর ওই যন্ত্রটা চালিয়ে দারুণ আরাম দেয়। শুনেছি পার্লারে নাকি ভাল ম্যাসাজ করে । মল-টলে অনেক্ শপ আছে। কিন্তু ওগুলোতে খুব খরচ হয়, আমার সিলেবাসের বাইরে।

    হল কি, গতমাসে বেহালার পর্ণশ্রী ছাড়িয়ে একটা নতুন এলাকায় একজন স্টুডেন্টের বাড়ি গেছলাম। ওর ভাইরাল হয়েছিল। ওদের বাড়িতে খাইয়ে দিল; মাসের মাইনেটাও হাতে হাতে দিয়ে দিল। ফেরার সময় বাসরাস্তায় পৌঁছানোর জন্যে হাঁটছি প্রায় পনের মিনিট। বেলা তিনটে হবে। রোদের তাপ কমে নি । ক্লান্ত লাগছে। চোখে পড়ল একটা ছোটখাটো সেলুন মত, এসি আছে।

    আমি ঢুকে একটা চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। পা ধরে গেছে। ঘাম শুকিয়ে যাচ্ছে। ভিড় নেই। চুল কাটতে কাটতে চোখে পড়ল ওই ঘুপচি মত লম্বাটে ঘরটায় দেয়ালের দিকের বেঞ্চিতে দুটো মেয়ে বসে আছে। সামনের আয়নায় চোখে পড়ছে ওদের একটু অবাঙালি ভাব। এখানে মেন্স- ওনলি সেলুনে ওরা কী করছে? অনেক সময় ছোট বাচ্চার চুল ছাঁটাতে সঙ্গে বাড়ির মহিলারা আসে। কিন্তু সেরকম কিছু দেখছি না । তারপর দেখলাম ওরা থালিতে করে ভাত ডাল আর তরকারি খাচ্ছে। তাহলে এটা বোধহয় ওদের বাড়ি। ভেতরের ঘুপচি ঘরে গরম, হাওয়া ঢোকে না , তাই খালি দেখে এখানে এসি কামরায় বসে খাওয়াটা সারছে।

    আয়নায় তাকিয়ে বুঝলাম মেয়েগুলো আমাকে খেয়াল করেছে। ওদের জন্যে চা এল। ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি একটু নেব কি না ? লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়লাম।

    চুলকাটা হলে ম্যাসাজ করে দিতে বললাম। লোকটা বলল, খালি মাথা কেন? ফুট ম্যাসাজ, ফুল- বডি ম্যাসাজ করিয়ে নিন। ফ্রেশ হয়ে যাবেন। আপনাকে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে তো, তাই বলছি ।

    কত করে ? খালি হাত বা পা করালে দু’শো করে। পিঠ বুক চারশো। মাথা তিনশো। ফুল বডি একহাজার।

    এত? এ’রকম কোথাও শুনি নি । এত বেশি কেন?

    লোকটা কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল—মেয়েরা করে দেবে বলে! ওই কোনায় একটা পর্দা টানা আছে না? তার পেছনে চলে যান। তবে এদের আলাদা করে বখশিস দিতে হবে। সে তিনশো চারশো পাঁচশো—আপনি খুশি হয়ে যা দেবেন।

    আমার মাথায় বাজ পড়ল। খালি হাবার মত তাকিয়ে আছি। আস্তে আস্তে বললাম—অনেক টাকা। আমার কাছে নেই। আজ চুলকাটার পয়সা দিয়ে দিচ্ছি।

    লোকটা নাছোড়বান্দা।

    --শুনুন, তাহলে খালি পায়ের ম্যাসাজ করিয়ে যান। মেয়েটাকে একশ দিলেই হবে। আপনি নতুন, আপনার চুলকাটার পয়সা ছেড়ে দিচ্ছি।

    আমি মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর ওয়ালেট বের করতে গিয়ে টের পেলাম যে পকেটে অনেক টাকা আছে, ছাত্রের বাড়ি থেকে পাওয়া এ’ মাসের মাইনে!

    আমি লোকটার দিকে তাকালাম। ও হাসল। তারপর ওর ইশারায় একটি মেয়ে আমাকে বলল -- আসুন।

    ও কালো পর্দাটা সরিয়ে দিল। আমি দেখলাম ছোট্ট একটু জায়গার মধ্যে একটা রিভলভিং চেয়ার, একটা বড় দেয়াল আয়না ও একটা বেসিন মত। মেয়েটি আবার বলল -আসুন।

    আমি যন্ত্রের মত ওখানে গিয়ে চেয়ারে বসলাম। ও পাখা চালিয়ে দিয়ে পর্দাটা টেনে দিল। আমি অনেক ইতস্ততঃ করে বললাম—শুধু ফুট ম্যাসাজ। ও হাতটাত ধুয়ে কি একটা লোশন হাতে লাগিয়ে নিল। তারপর একটা তেল এনে আমার পায়ে মালিশ করতে করতে বলল—ব্যথা লাগলে বলবেন। চমৎকার মালিশ। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল, আবার ভালও লাগছিল। মালিশের তেল লেগে নষ্ট হবে বলে প্যান্ট খুলে শুধু আন্ডারওয়ার পরে বসতে বলল। নিজেও শার্ট খুলে কাজ করছে। মাঝে মাঝে ওর হাত এবং আঙুল ক্যাজুয়ালি আমার থাই ছুঁয়ে যাচ্ছে। আমার ভয় করছিল। একটা সময়ের পর ও থেমে গেল। বলল ফুল বডি করে দেবে কি না?

    আমি দরকার নেই বলে ওয়ালেট বের করতে যাচ্ছি ও হাত বাড়িয়ে লাইট বন্ধ করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু খেয়ে কানে বলতে লাগল—এনজয় করুন, টাকাপয়সা দিয়ে কী হবে? এনজয় করুন। আমি আর বলতে পারব না।

    ওরা দুজন একদৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। আমি ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না । আমার গলার কাছে কিছু একটা পাকিয়ে উঠছে।

    এবার রমেন আমাকে একগ্লাস জল খেতে দিল। আমি ধরা গলায় বললাম—জানি, তোরা এবার আমাকে ঘেন্না করবি। আর কখনও আমার বাড়ির ছায়া মাড়াবি না ।

    রমেন একটা টুল টেনে এনে আমার সামনে বসল। বলল—ঘেন্না করব কেন?

    --আমি নোংরা কাজ করেছি, কত নিচে নেমে গেছি।

    --আচ্ছা, তুমি মদ ছোঁও না , কিন্তু আমি মাঝে মধ্যে খাই। এমনকি ছত্তিশগড়ের গাঁয়ে থাকার সময় ওদের ঘরে তৈরি মহুয়ার মদও খেয়েছি। তো তুমি কি আমাকে ঘেন্না করবে?

    -- কিন্তু আমি যে –

    রমেন হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দেয় ।

    বলে বেশি আত্মকরুণা ভাল নয়, আসলে এগুলো সামন্তবাদী সমাজের ধ্যানধারণা। আজকের হিসেবে এই মেয়েরা শ্রমিক বা যৌনকর্মী। আমরা চাইব ওদের জন্যে উন্নত জীবন। ততদিন ও যদি নিজের শ্রম বেচে পরিবারের খাওয়াপরার ব্যবস্থা করে তো ওকে ঘেন্না করব কেন? কর্পোরেশনের যে মেয়েরা সকাল বেলায় ঝাড়ূ হাতে রাস্তায় নামে, নর্দমা সাফ করে তাদের কি ঘেন্না কর?

    --তা কেন করব? ওই মেয়েটিকেও ঠিক ঘেন্না করি নি । কিন্তু--

    -- আবার কিন্তু কিসের? তুমি ওকে ঘেন্না কর নি । জোরজবরদস্তি কর নি । ঠকাও নি । একটি পরিষেবা নেওয়ার জন্যে বাজার দরে দাম দিয়েছ। ম্যাটার এন্ডস দেয়ার। তুমি পচে যাওনি যে আলু-বেগুনের মত রাস্তায় ফেলে দিতে হবে।

    -- আসলে কী জানিস? খুব লজ্জা করছিল। আমি একজন মাস্টারমশাই। এটা আমি কী করলাম!

    --তাহলে নিজেকে পাপী পাপী বলে বুক চাপড়াচ্ছ কেন?

    --দ্যাখ, পাপ তো মনে। যেই মনে হল ব্যাপারটা আমার কেমন অন্যরকম ভাল লেগেছে তখন খুব ঘেন্না হল । মেয়েটার জন্যে নয়, নিজের উপর।

    --ভুল বলছ । আজ গ্লানিতে ভুগলে কাল মেয়েটাকে ঘেন্না করতে শুরু করবে। তোমার কথিত অধঃপতনের জন্যে ওকেই দায়ী করবে। মহাভারতের পরাশর মুনি তোমার চেয়ে বেটার ছিল। সত্যবতীকে ঘেন্না করে নি, শাপ-শাপান্ত করে নি । উলটে খুশি হয়ে মৎসগন্ধাকে বর দিয়ে পদ্মগন্ধা করে দিল।

    যাক গে, ওসব ছাড়। ভেবে দেখ কী করবে, কোন তাড়াহুড়ো নেই। আমি আবার আসব।

    --শোন, এলি আর হুড়ুম দুড়ুম করে চলে যাচ্ছিস; কোন মানে হয়? ভাতে ভাত বসিয়ে দিচ্ছি, খেয়ে যা।

    রমেন মাথা নাড়ে। বলে খেতে ইচ্ছে করছে না ।

    --কেন?

    --পুরোটা তোমাদের এখনও বলি নি । দীপকদা কাল রাতে মারা গেছে। খবর পেয়ে আমি গেছলাম। শ্মশান থেকেই সোজা আসছি। এবার চলি। ভাল থেকো।

    উপসংহার

    বনমালীপুরের আলবাঁধা পথ দিয়ে একটা মৌন মিছিল এগিয়ে চলেছে। অন্ততঃ দশজন জোয়ান ছেলে তাদের প্রিয় মাস্টারমশাইকে চালিতে শুইয়ে শেষ যাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। কাঁধ দিতে লাগে ছয় জন। আর বাকি চারজন রিজার্ভ, একটু পরে পরে কাঁধ বদল হচ্ছে, ওরা অদলাবদলি করে নিচ্ছে। আমরাও আছি। আমরা মানে বিমলে, শংকর আর বিজন। আমরা পাশে পাশে হাঁটছি। মাঝে মাঝে ছুঁয়ে দিচ্ছি সাদা কাপড়ে ঢাকা রমেনকে। এবড়ো খেবড়ো পথে ঝাঁকুনিতে ফুলের মালা সরে গেলে হাত লাগিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি।

    ঠিক করেছিলাম কাঁধ দেব। ছেলেগুলো মানা করল; অনেকটা পথ উজিয়ে যেতে হবে। তারচেয়ে এই ভাল। রমেন মারা গেছে পরশু। পুলিশ বডি আটকে রাখে। কাটাছেঁড়া করে । আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। কাউকে বডি না দিয়ে ওরাই জ্বালিয়ে দেবে এই মতলব।

    কিন্তু গাঁয়ের লোকজন উত্তেজিত। ওরা গাছ ফেলে রাস্তা কেটে ব্যারিকেড করেছে।

    বিমলের পুলিশের ওপরতলায় চেনাজানা আছে, বিজনেসম্যান বটে! ও খবর পেয়ে হাজির হয়ে দু’পক্ষের মাঝে মধ্যস্থতা করে বডি ওর ছাত্র ও গার্জেনদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে । কিন্তু মিছিল হবে নীরব, শান্তিপূর্ণ।

    আজ সকালে ওর গাড়ি আমাকে এবং শঙ্করকে ঘর থেকে তুলে এখানে নিয়ে এসেছে। গাঁয়ের বাইরে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমরা হেঁটে চলেছি।

    বিমলের কাছে জানতে পারি রমেন যখন একটা গাঁয়ে মুজিবর শেখের বাড়িতে বসে উচ্চ মাধ্যমিকের কিছু ছাত্রকে পড়াচ্ছিল তখন সাদা পোষাকের পুলিশ ও আন্দোলনবিরোধী গ্রুপের অ্যাকশন স্কোয়াডের কিছু ছেলে ওখানে ঢুকে মুজিবরের বড় ছেলে আবদুলকে তুলে নেবার চেষ্টা করে । বাড়ির কর্তা মুজিবর তখন বাড়িতে নেই। রমেন ওদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। ওরা বলে আবদুলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে—হাতিয়ার নিয়ে দাঙ্গা করা, পুলিশভ্যানে আগুন দেয়া ইত্যাদি। রমেন ওয়ারেন্ট দেখাতে বলে। তখন ওরা জোর করে বাড়িটাতে ঢোকার চেষ্টা করে । ছাত্রছাত্রীরা রাস্তা আটকে শুয়ে পড়ে।আশপাশের বাড়ী থেকে মহিলারা কাঁসার থালা পেটাতে ও শাঁখ বাজাতে শুরু করে। এই ফাঁকে আবদুল সটকে পরে। এবার চারপাশের পাড়া থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকে। বেগতিক দেখে সাদা পোষাকের পুলিশ ও গুণ্ডার দল পালিয়ে যায়। কিন্তু তার আগে রমেনের পেটে ও পিঠে ঢুকে যায় দুটো রামপুরির ফলা।

    আমাদের যেতে হবে আরও দু’কোশ পথ। এর মধ্যে যত গাঁয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছি সেখান থেকে ভিড় এসে মিছিলে পা মেলাচ্ছে। কেউ কেউ চালির উপরে ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছে। কাল রাত্তিরে বৃষ্টি হয়ে রাস্তায় একটু কাদা। এখন মেঘলা আকাশের ফাঁক দিয়ে কড়া রোদ্দূর । আমাদের পিঠে কপালে চিট চিট করছে ঘাম। কিন্তু আমরা তোয়াক্কা করছি না । এখনও অনেক পথ বাকি।

    আমার চোখে জল নেই। আমি জানি যে রমেনের আর কিছু চাওয়ার ছিল না ।

    ==================================================
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১১ জানুয়ারি ২০২১ | ২৯৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kausik Banerjee | ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:৪৮101656
  • অভিনন্দন। ঐ বিশেষ সময় টিকে ধরার এক সাহসী প্রয়াস।

  • Ranjan Roy | ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ১১:২৬101668
  • অনেক ধন্যবাদ,  কৌশিক বাবু।

  • aranya | 162.115.44.102 | ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:৪৬101700
  • সব কটা পর্ব পড়লাম। ভাল লেখা 

  • aranya | 162.115.44.102 | ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৫৬101712
  • রঞ্জন-্দা, এই যে বিজনের একট ঘটনায় পাপবোধ, এ প্রসঙ্গে মনে হল - অতীতে মানুষ খুনের রাস্তায় (নকশাল আন্দোলন, সশস্ত্র বিপ্লব - যাতে মানুষ খুন অবধারিত) যাওয়ার জন্য কোন পাপবোধ নেই? 


    আপনার লেখায় এটা তেমন  ভাবে আসে  নি - এক্স  নকশাল -রা কি পরবর্তী কালে পাপবোধে ভুগতেন ?

  • Ranjan Roy | ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:২৩101739
  • সরি অরণ্য,


    কমেন্টটি এখন চোখে পড়ল। তাই উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল।


    নকশাল আন্দোলনের হিংস্র 'বিপ্লব' প্রচেষ্টার সঙ্গে অতীতে যুক্ত থাকার সুবাদে আজ কোন 'পাপবোধ' আছে কিনা?


     আমার উত্তরঃ ১) কারও কারও আছে। ২) কারও কারও নেই।


    ১আমি প্রথম দলে। আজ মনে করি-- হিংসার পথে কোন সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। ওটা একটা ইল্যুশন। হিংসার একটা ভিশিয়াস সাইকল আছে। আঘাত-প্রত্যাঘাত-বদলার অন্ধ যুক্তি পরম্পরা আছে।  আগুনে আগুন নেভেনা। এটা আমার ব্যক্তিগত প্রত্যয়। নভেলে সেটা অন্যভাবে বলার চেষ্টা করেছি। ক্যান্সার রোগী কমরেডের কালো বেড়ালের সঙ্গে (আসলে ওর পাপবোধ বা বিবেক) কথোপকথনে, বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান প্রিয়ব্রতর মৃত্যুতে ওর মায়ের সঙ্গে কারও দেখা  না করা( সত্যি ঘটনা), বিজনের ঘটনাচক্রে  এমন বিষয়ে জড়িয়ে পড়া যা তার পাপবোধকে জাগিয়ে তোলে।  এছাড়া দুই বিরোধী দলের দুই শিক্ষকের রেনেগেডদের মেরে ফেলার পরওয়ানা জারি করা। দীপকের ( মাওবাদী নেতা নারায়ণ দাস সান্যাল) ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যুর দু'মাস আগে স্টুডেন্ট হলে জনসভায় স্বীকার করা -- ভায়োলেন্সের পথ ভুল। গ্ণ আন্দোলন সঠিক পথ।(সত্যি ঘটনা)।


    শেষে মুখ্য চরিত্র রমেনের আন্দোলনে ফুট সোলজার না হয়ে বাচ্চাদের পড়ানোর দায়িত্ব বেছে নেয়া--  সবই পাপবোধের প্রকাশ। নো ভায়োলেন্স বলা। 


    ২ অনেকে এখনও হিংসাকে বিপ্লবী হিংসা বলে বৈধতা দিয়ে ন্যায়যুদ্ধ/অন্যায় যুদ্ধের মধ্যে ফারাক করতে বলে নিজের বিবেক বা পাপবোধকে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন।


        ছোটবেলায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির দিনে কেরলায় নম্বুদ্রিপাদ সরকার ফেলে দেওয়ায় ওখানে প্রায় সিভিল ওয়ারের মত হয়েছিল। একজন কমরেড পেশায় নাপিত ,ওখান থেকে কোলকাতায় পার্কসার্কাসে এসে শেল্টার নেন। আমার এক কাকা তাঁকে পাড়ার সেলুনে কাজে লাগিয়ে দেন। একটু বড় হয়ে সেই কথা তোলায় উনি আমাকে বলেন আসলে ও কেরালায় ১১টা মার্ডার করে এসেছিল। পুলিশ খুঁজছিল। 


    আমি অবাক। উনি ভাত খান কি করে ? রাতে ঘুম আসে?


    -- বুঝলি, ওটা ইডিওলজির মার, তাই মনে লাগে না।


    এই যুক্তি আমার রাইট উইং বন্ধুদেরও। ওরা বলে হিন্দু বিপন্ন, অস্তিত্ব বিপন্ন। 'অপর'কে এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন না করা হলে আমাদের বিপদ। তাই কেউও কেউও খোলাখুলি দেশ থেকে উইপোকার মত বিদেশিদের ধ্বংস করার কথা বলেন। আসলে সবার চোখেই আমি ঠিক অন্যে ভুল। 


    আমার কথা ভুল বা ঠিক যাই হোক, অন্যের প্রাণ নেবার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে? তাই প্রাণদন্ডেরও বিরোধী। স্তালিনিস্ট মডেল অফ স্টেট ক্র্যাফটের বিরোধী। 'হিংসা সমাজ পরিবর্তনের ধাত্রী' এটায় বিশ্বাস করি না। সে যত বড় ঋষিমুনিই বলে থাকুন।

  • aranya | 2601:84:4600:5410:e00c:3a87:9c6e:79e9 | ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১০:১৭101823
  • বুঝলাম, ধন্যবাদ রঞ্জন-দা

  • a | 203.220.200.98 | ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৫৭101833
  • শেষটা ভাল লাগল না রন্জন বাবু। ফিকশনে অন্তত রমেনকে জিতিয়ে দিন, ওর পড়ানো স্টুএন্টদের ভিতর থেকে উঠে আসুক আরো নবীন আর প্রত্যয়ী যুবক যুবতীরা। 


    ফেরারী ফৌজের সারা জীবনের উপলব্ধিকে আত্মস্থ করে তারাই রমেনদের বিজনদের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে উঠুক। 

  • Ranjan Roy | ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:২৪101834
  • আবদুলরা আছে তো। ওর ছাত্রছাত্রীরা। এক্সপ্লিসিট করিনি আর কি।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন