এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • মুখোমুখি : আমি ও আমি নয়

    তির্যক
    আলোচনা | বিবিধ | ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৪৮১ বার পঠিত
  • "শুনছো, এবারের মিস ইউনিভার্স হয়েছেন এক রাশিয়ান সুন্দরী-----"

    ওর কথায় একটু অবাক হয়ে তাকালাম, কিছু বল্লাম না।

    --এইতো বিউটি কন্টেস্টের নাম শুনলেই তোমাদের, মানে নারীবাদিদের মুখ হাঁড়ি হয়ে যায়, কিন্তু দেখো, এখন আর এটা শুধু নারীদের ব্যাপার হয়ে থেমে নেই, পুরুষরাও দিব্যি আসছেন, র‌্যাম্প হাঁটছেন, তাই না? বুঝতে পারলাম ও একটা ঝগড়া চায়, অনেকদিন হল আমরা প্রায় সব বিষয় একমত হয়ে যাচ্ছি, ওর সহ্য হচ্ছে না । কিন্তু তাই বলে বিউটি কন্টেস্ট! গলায় তাই

    একটু বিরক্তি এসে গেল,
    --তা আসছেন, কিন্তু মোটের ওপর ব্যাপারটা তো একই আছে, মানে যা যা কারণে এই প্রতিযোগিতা নিয়ে আপত্তি সেগুলো তো আর নারী-পুরুষ বিচার করে হয় না, আপত্তিটা আদর্শগত।
    এবারে ওর বাঁকা হাসির পালা ।
    --আদর্শগত? বাব্বা: তোমার আদর্শলিপিতে বিউটি কন্টেস্টের চ্যাপ্টার ও আছে নাকি!

    এই খোঁচা কেউ গায়ে মাখে না, এমনকি আমিও না । তারচেয়ে নিজের কথাটা সোজাসুজি বলে ফেলাই ভাল।

    --সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ইয়ার্কি মেরো না। শারীরিক সৌন্দর্য্য কোনো প্রতিযোগিতার বিষয় হতে পারে না, কারণ এটা মানুষের কোনো অর্জিত গুণ নয় । যা শুধু জন্মসূত্রে পাওয়া, যাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপুল আর্থিক সঙ্গতি দরকার, (সেটাও জন্মসূত্রেই পাওয়া দরকার, না হলে তো এই ইচ্ছাই তৈরী হয় না), সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়? এখানে তো প্রতিযোগিরা এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েই নেই। আর সেই কারণেই এটা অনৈতিক।

    স্বভাবসিদ্ধ বাঁকা হাসি ও মৃদুস্বরে বলল, "ভেবে বলো দেখি কোন প্রতিযোগিতাটা জন্মগত সম্পদের ধার ধারে না! দাঁড়াও দাঁড়াও আমিয়া বলি। মনে করো পড়াশোনা: একেবারে আজন্ম তোমাকে বাধ্যতামূলকভাবে যে প্রতিযোগিতার ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। তুমি দুজন টিউটরের কাছে পড়ে, দিনরাত এক করে খেটেও অঙ্কে ষাট তুলতে হিমসিম খাচ্ছ আর পঞ্চা নিজে পড়ে বাবার দোকান সামলে, ডাংগুলি খেলে হাসতে হাসতে মাধ্যমিকে নব্বই পেয়েছে, সে তো পঞ্চা অঙ্কে তোমার চেয়ে একটু বেশী ভালো বলে, না কি! তো পঞ্চা বেশী পেল বলে তোমার একটু রাগ-ঝাল হয়েছে ঠিক, কিন্তু পরীক্ষাটাকে "অনৈতিক" বলতে তো শুনি নি -------------"

    ---- কিন্তু দ্যাখো তোমার পড়াশোনা শেখাটা ততখানি তোমার টাকাপয়সার ওপর নির্ভর করে না। পয়সার জোর না থাকলেও তোমার মেধা অনুযায়ী তুমি যেমন ন্যুনতম পড়াশোনাটাও করতে পারো আবার তোমার যদি প্রতিভা থাকে তাহলে মেঘনাদ সাহা কি শ্রীনিবাস রামানুজনও হতে পারো, কিন্তু একটা বিউটি কনটেস্টের প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছাতে গেলেই তোমার এই হাইট, এই কোমর, এই ছাতি.................... এইসব মাপ তো লাগবেই, তাছাড়া প্রচুর টাকাপয়সার জোরও লাগবে, সেটা অনৈতিক নয়?

    ও এবার হেসে ফেলল ।

    -- না: তোমাদের নিয়ে আর পারা যায় না! তোমরা এই যে কোনো কথায় হয় রামমোহন-বিদ্যাসাগর না হলে মেঘনাদ-রামানুজন-রবীন্দ্রনাথকে এনে দাঁড় করিয়ে দাও। আরে বাবা, সাধারণ লোকের কথা ভাবো । এই যে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী এক একটা পরীক্ষায় বসছে, বলতে চাও তারা সবাই এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে? সবাইকে টপকে যারা একেকটা বিষয়ের প্রথম সারিতে এসে দাঁড়াচ্ছে, বলতে চাও তারা জন্মগত মেধায় এগিয়ে থাকে না বা বড়লোকের ছেলেমেয়ে হওয়ার সুবাদে এমনকি কলকাতা-দিল্লি-মুম্বইতে বাস করার সুবাদে কিছু বেশী সুবিধা পায় না!

    আমি ভাবছি কি বলা যায়, ওর কথা কিন্তু থেমে নেই,

    --শুধু কি পড়াশোনা, গান, নাচ, খেলাধুলা কিম্বা ছবি আঁকা যেদিকটাই ভাবো, মানে সরাসরি যেসব প্রতিযোগীতার মঞ্চে উঠতে হয়, সেখানেই জন্মগত প্রতিভায় যে এগিয়ে আছে, সে কিছুটা সুবিধে পায়, সবটা অর্জন করা যায় না । ঐশ্বর্য রাই বা জন আব্রাহাম কে অভিষেক বচ্চনের মতো হাইট কি গঠন যেমন নিয়ে জন্মাতে হয়, তেমনি বিশ্বনাথন আনন্দ, অমর্ত্য সেন বা শচীন তেন্ডুলকরের মেধা বা দক্ষতাও নিয়ে জন্মাতে হয় । এবার যার যা সম্পদ সেই মতো প্রতিযোগিতা হবে, সেই মতো মূল্যায়ন হবে, যে যেদিকে এগিয়ে আছে, সেদিকে সুবিধে পাবে, এর মধ্যে নীতির প্রশ্ন আসছে কোথায়?

    এবার আমি কথা খুঁজে পেলাম ।
    --দ্যাখো, তুমি যে সব উদাহরণ দিলে, সেগুলো হল "প্রতিভা", সৌন্দর্য তো কোনো প্রতিভা নয় । আর প্রতিভা নিয়ে জন্মালেই শুধু হয় না, ধারাবাহিক পরিশ্রমে, অনেক আত্মত্যাগে তাকে ক্রমাগত ঝকঝকে করে তুলতে হয় --

    আমার কথাটা শেষ হল না, ও বলতে শুরু করল,
    --ভাবের ঘরে চুরি কোরো না । "সৌন্দর্য" বলো আর "প্রতিভা" বলো, সবই মানুষের দেওয়া নাম। আসল কথা হল পাঁচজনের থেকে আলাদা কিছু সে রূপ হোক আর গুণ হোক, সেটাতে কে কতটা এগিয়ে তার বিচার। তুমি বলতে চাইছ জন্মগত গুণের বিচারটা ভালো আর জন্মগত রূপের বিচারটা মন্দ, আর বলতে চাইছ জন্মগত রূপের পেছনে কোনো তদি্বর না করেই একজন মিস ইউনিভার্স হতে পারে! তুমি বুঝি জানো না শরীরের সৌন্দর্যকে "মেনটেন করতে", অর্থাৎ মাপে মাপে ধরে রাখতে একজন প্রতিযোগীকে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় ! শরীরচর্চার পরিশ্রম তো আছেই, ইচ্ছেমতো খাওয়া-ঘুম পর্যন্ত বাদ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে হয়, সেটা কি আত্মত্যাগ নয়?

    --আর টাকাপয়সার কথা বলছো, তোমাদের আইআইটি কি আইআইএম কি মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গেলে কি টাকার জোর কিছু কম লাগে? যে কোনো খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক মানের কিছু করতে গেলেই প্রচুর টাকার যোগান দরকার। তবে তফাৎ এই যে গরীব ঘরের মেধাবী ছাত্রের পড়াশোনা খেলাধুলো কি গানবাজনার জগতে তুলে ধরার প্রাথমিক খরচ চালাবার অনেক লোক পাওয়া যায় কিন্তু সুন্দরী মেয়ের বিউটি কনটেস্টের মঞ্চে ওঠার স্বপ্নকে প্রায় অশ্লীলতার দায়ে দায়ী করা হয়। ওই সব তোমাদের মতো আদর্শবাদী লোক আছে কিনা! তবে এই জগতে একবার দাঁড়িয়ে গেলে মজা আছে, তখন টাকা তোমার পেছনে ঘুরবে, সেটাও তোমাদের একটা গাত্রদাহ!

    খুব সন্দেহ হতে লাগল যে আমার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা অপছন্দের পেছনে বোধহয় সত্যিই কোনো শক্তপোক্ত কারণ নেই। সবগুলো যুক্তিই নেহাৎ "ইমোশন্যাল"। তাই আমি এমন হেরে যাচ্ছি। ও আমার মনের কথাটা পড়ে ফেলে বলল, "আসলে সমস্যাটা কি জানো, শরীর নিয়ে আমাদের একটা সার্বজনীন ছুঁৎমার্গ ! সুন্দর শরীরকে একটা সম্পদ বলে আমরা ভাবতেই পারি না আর শরীরের দাবীকেও তাই স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারি না। ঠিক এই কারণেই দেহ ব্যবসা আমাদের কাছে সর্ব অর্থে এত নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। মানে তুমি ব্রেন ভাঙিয়ে যা খুশী করো, কিন্তু শরীর ভাঙিয়ে কিছু করলেই কি বাজে!"

    সর্বনাশ! যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধে হয়! কারণ দেহব্যবসার ব্যাপারে আমার আন্তরিক আপত্তির কথা ও জানে। ওর সঙ্গে এই নিয়ে কথা না বলাই ভালো। কিন্তু ও থামলে তো! বুঝলাম আসলে এইখানে এনে আমাকে কোণঠাসা করবে বলেই ও এতক্ষণ বিউটি কনটেস্টের মতো গৌণ বিষয় নিয়ে এত বক্তৃতা ঝাড়ল । কিন্তু তর্কটা যখন এড়ানো যাচ্ছেই না, তখন বরং যুদ্ধনীতিটা বদলানো যাক। প্রথমে নিজের তুরুপের তাস না দেখিয়ে তাই ওকেই বলতে দিলাম, "কেন দেহব্যবসা নিয়ে তোমার সঙ্গে আমার কোনো আলোচনা হয়েছে নাকি? বলোই না কি বলতে চাও।"

    ও শুরু করল। "বড়োসড়ো ব্যবসার কথায় পরে আসছি, আগে খুচরো কথাগুলো বলি। এই যে আজকাল শুনি অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা "সার্ভিস চার্জ"-এর বিনিময়ে কাউকে "সঙ্গ" দিচ্ছে, এটা তোমার নিশ্চয়ই খুব পছন্দ নয়! অথচ দেখো এই সঙ্গ দেওয়া মানেই কিন্তু সবসময় শুয়ে পড়া নয়, ধরো কফিশপে বসে গল্প করা, সিনেমা হল থেকে ডিস্কোথেক, যে যেখানে যেতে চায়, সেখানে সঙ্গী হওয়া, একসঙ্গে নাচ, এই পর্যন্তও সঙ্গ দেওয়া হয়। আর একটু বেশি চার্জে চুমু খাওয়া আর অনেকটা বেশী চার্জ নিয়ে বিছানা। মোটের ওপোর পরিস্কার একটা সার্ভিস কন্ট্রাক্ট --"
    আমি আর থাকতে পারলাম না, "পয়সা নিয়ে সঙ্গ দেওয়া, ছি :!" ও আবার বাঁকা হাসল, "কেন, ছি: কেন? পয়সা নিচ্ছে বলে, না সঙ্গ দিচ্ছে বলে?" আমি বলতে গেলাম, "মানসিক সম্পর্ক ছাড়া------"

    ও আবার হাসল, "কারুর সঙ্গে গল্প করতে গেলে বুঝি খুব মানসিক যোগাযোগ লাগে? আচ্ছা তুমি কি জানো, নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গ দেওয়া, দেখাশোনা করা, একটু বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, খবরের কাগজ কি গল্পের বই পড়ে শোনানো, এসব ও কিছু শিক্ষিত মার্জিত ছেলেমেয়ের পেশা, এর জন্য তারা পয়সা পায়। শোকের বাড়ীতে কাঁদার জন্য লোকে পয়সা নেয়, কই, তখন তো মানসিক সম্পর্ক নেই বলে আপত্তি করো না। আসলে সমস্যা সেই একই। শরীর, মানে যৌনতাকে ব্যবহার করে উপার্জন করলেই তোমরা গেল গেল রব তোলো"।

    আমি এবার অন্য দিক থেকে আক্রমণ করলাম, "আচ্ছা, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের এত পকেটমানির দরকার হয় কেন, বলতে পারো? আর লোকের এত শারীরিক সঙ্গই বা দরকার হয় কেন? বই পড়া, সিনেমা দেখা, খেলাধুলো করে সময় কাটাতে পারে না?" ও হেসে বলল, "ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর জীবাণুরই বা জন্মাবার দরকার কি? তবু তারা জন্মায়, সেটাই বাস্তব। আর বাচ্চা ছেলেমেয়েরা ছাত্র পড়িয়ে, প্রুফ দেখে কিম্বা শপিং মলে মাল বেচে টাকা উপার্জন করলে তো আপত্তি করো না, তখন তো জানতে চাওনা পকেটমানি কেন দরকার? ফূর্তির জন্য না সাশ্রয়ের জন্য? এরা নিজের ইচ্ছেয় এসেছে না বাধ্য হয়ে এসেছে? তখন তো বেশ খুশীই দেখি, আহা, বাচ্চা ছেলেমেয়েরা কত বুঝদার, বাবা-মায়ের পকেট বাঁচাচ্ছে!"

    এবার শেষ চেষ্টা করলাম, "কিন্তু এইভাবে নিরন্তর সঙ্গদান পেশায় কি নিরাপত্তার অভাব নেই? বিশেষ করে মেয়েদের........ কত রকম বিপদ, নানারকমভাবে সুযোগ নেওয়া, শারীরিক ক্ষতি, ব্ল্যাকমেলিং, এগুলোর ভয় নেই?" এই প্রথম ও একমত হল, গলাটা কিছুটা বিষণ্ন "সে তো আছেই! তবে যেটা স্ব-নিযুক্তি প্রকল্প, সেখানে নিজের নিরাপত্তার দায় তো নিজেকেই নিতে হয়, অন্তত: এই স্বেচ্ছা-পেশায় সেটা কিছুটা সম্ভব। তবে নিরাপত্তা তো পরের কথা, আগে পেশাটা অনৈতিক নয়, এটা তো স্বীকার করতে হবে! আর নিরাপত্তার কথা বলছো, কলকারখানায় কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফুসফুস ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, মাটি কাটতে গিয়ে নিত্য চাপা পড়ছে দু-চারজন, নড়বড়ে মই বেয়ে উঁচুতে উঠে যাচ্ছে রাজমিস্ত্রি, মেট্রোরেলের সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে দীর্ঘদিন হাই-প্রেসার জোনে কাজ করে পঙ্গু হয়ে গেছেন কত শ্রমিক, মনিব বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে হরদম ছোট-বড়ো বিপদে পড়ছে ছেলেমেয়েরা....... আর টপ লেভেলের পুলিশ, তার ও তো দেখলাম জ্যাকেট ফুটো করে গুলি ঢুকে গেল--------- সেদিক থেকে শরীর ব্যবসা আর অধিক মন্দ কি? ঠিকমতো প্রোটেকশন নিলে চামড়ারজিনিস নষ্ট হয় না।"

    --- বিশ্বজুড়ে যে পেশায় মেয়েরা বাধ্য হয়ে ছাড়া আসে না, যে পেশায় মেয়েদের ন্যূনতম নিরাপত্তা আর স্বীকৃতি নেই, যে পেশার প্রতিটি মহিলা চায় তার সন্তান যেন এই পেশা থেকে দুরে থাকে, সেই পেশার স্বপক্ষেও তোমার এত কিছু বলার আছে জেনে খুব খুশী হলাম, আবারও বলছি, চমৎকার!

    --- সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ করা তাহলে পছন্দ করো, বলো! তাই যেই যুক্তিতে আটকে গেলে, অমনি বেশ ব্যঙ্গের লাইনে চলে গেলে। যাক আমি কিন্তু একবারও বলি নি যে এই পেশায় মেয়েরা খুব নিরাপদ, সম্মানের জায়গায় আছে। মেয়েরা বা ছেলেরা যদি এই পেশাকে বর্জন করে, করবে। কিন্তু শুধু শরীরকে ব্যবহার করা হয় বলে এই পেশাকে যে ঘৃণার চোখে দেখা হয়, আপত্তিটা সেখানে। কারণ এই ঘৃণা শেষপর্যন্ত শুধু যে বিক্রেতা, তাকেই স্পর্শ করে। ধোপা-নাপিত-জুতো সারাইয়ের লোকের পাশাপাশি যদি একজন পুরুষ বা মহিলাও বাড়িতে এসে জানতে চায়, সেক্স-সার্ভিস দরকার আছে কিনা, তাতে আপত্তিটা ঠিক কোথায়? তোমার দরকার না থাকলে নেবে না, থাকলে নেবে। অবশ্য তোমাকে এসব বলছিই বা কেনো, তোমরা তো শরীর আছে স্বীকারই করো না, তোমরা সব মাথা থেকে গলাটুকু পর্যন্ত মানুষ, ভক্তিরস আর বাৎসল্য রসে পা থেকে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকো!

    আমার চোখে ভেসে উঠল কালীঘাট ব্রীজের ওপর সার সার দাঁড়িয়ে আছে রুগ্ন ফ্যাকাশে চেহারার মেয়েরা, উৎকট সাজগোজ। এই দৃশ্যের থেকে চিরদিন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছি, ঘৃণায় নয়, অসহ্য যন্ত্রণায়। মনে হয়েছে নারীত্বের, মনুষ্যত্বের এর চেয়ে বড়ো অপমান আর হয় না। তাই বেশ্যাবৃত্তিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ায় আমার চিরদিন ঘোর আপত্তি। আজ তির্যকের পাল্লায় পড়ে কি মেনে নিতে হবে যে এই কুৎসিৎ বিপণন আসলে তত কুৎসিৎ নয়, তফাৎ শুধু দেখার নজরে! ওই দেহোপসারিনীর কষ্টের কথা ভাবছি, নিজের মতো করে, ভেবেছি, এই পেশা লুপ্ত হোক, ওরা অন্য কিছু করুক। সত্যিই তো তাকিয়ে দেখিনি অন্য হাজারটা পেশার যাঁতাকলে পিষ্ট নারীদের মুখ, জানতে চাইনি তারা কি সত্যিই এদের চেয়ে ভালো আছে? আর সত্যিই তো দেহের চাহিদা অন্য সব চাহিদার চেয়ে আলাদা (মানে খারাপ) কেনই বা ভাবব? সব এলোমলো হয়ে গেল। এইভাবে অত্যন্ত সঙ্গোপনে আমরা হাতঘড়ি, কলম, রুমাল ও পকেটবই ও বদলাবদলি করে নিলাম : আমি ও তির্যক ।

    বুঝতেই পারছেন, এটাকে ঠিক লেখা বলা চলে না, বরং ধরুন একটা তর্কাতর্কি : আমার সঙ্গে তির্যকের। এটা প্রায়ই হয়, হয়েই চলে, আমি যা ভাবি ও ওর তির্যক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেগুলো নস্যাৎ করে দেয়। ওর যুক্তি আমি মেনে নিতে পারি না, কাটতেও পারি না। সে এক বিড়ম্বনা বটে ! কিন্তু কলম, ঘড়ি ইত্যাদি বদলবদলি করেও এখনও ঠিকানা কি টেলিফোন নম্বর তো বদলাবদলি করিনি, তাই আমি আন্তরিকভাবে চাই আমি যেটা পারলাম না, কেউ সেটা করুক, অর্থাৎ তির্যকের যুক্তিগুলো কেটে দিক। তাই এই আলোচনা গোটাটাই তুলে দিলাম, এবার সব আপনাদের হাতে।

    ডিসেম্বর ২১, ২০০৮
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৪৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন