এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  কূটকচালি

  • শিবানন্দের সংসার

    gargi bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ৩৫৭১ বার পঠিত
  • ।।আরম্ভ পর্ব।।

     কিঞ্চিৎ চিন্তাগ্রস্তই ছিলেন শিবু, ওরফে শিবানন্দ। যামিনী গতপ্রায়, পূর্ব দিগন্ত হইতে চন্দ্রকলাখানি পাড়িয়া,  ঝাড়িয়া ঝুড়িয়া নিজের জটায় লাগাইয়া দিলেন। যাক, অদ্যকার মতো কাজ শেষ। এবং সেখানেই প্রকৃত ভাবনার আরম্ভ। সামনে এক্কেবারে আস্ত একটি দিন পড়িয়া আছে, অথচ করিবার কিছু নাই। সে এক কাল ছিল বটে। ছিলিমে সুখটান দিতে দিতে আর আকুল ভক্তগণের প্রার্থনা শুনিতে শুনিতে সময় যে কোথা হইতে মাখনের ন্যায় গলিয়া যাইত। আর আজ! বুক ঠেলিয়া দীর্ঘশ্বাস উঠিয়া আসিল। ভক্তগণ নাই, মন্দিরে তালা পড়িয়াছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। কেবল প্রতিদিনের নৈবেদ্যটুকুই যা যোগান হইতেছে। এদিকে গঞ্জিকার মজুদও ক্রমে ফুরাইতেছে। কি স্বর্গ, কি মর্ত্য, কোথাওই আর অন্য কোন সংবাদ নাই, একমেবাদ্বিতীয়ং রূপে কেবল  'করোনা' বিরাজ করিতেছে। কি বিচিত্র তার রূপ! খালিচোখে দেখা যায় না, অথচ, সোস্যাল মিডিয়াতে করোনা পকোড়া, করোনা শাড়ি, করোনা ছাঁট পর্যন্ত ছাইয়া গিয়াছে। অসুর নিত্য নতুন  অবয়বে আসিয়া থাকে একথা জানিতেন বটে, তবে এমনটা সত্যই নবীন।


          চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিল। মহামায়া দুপদাপ পদশব্দে সজোরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ত্রিনেত্রের রোষে শিবানন্দ শুকাইয়া গেলেন। দেবী গর্জন করিলেন “বলি, হচ্ছেটা কি? আমি গাধার মতো খেটে মরব, আর তুমি থুম মেরে পড়ে থাকবে? দিনে পনেরো ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটালে চলবে? জয়া-বিজয়া ছুটি নিয়েছে, সংসারটা উচ্ছন্নে যাক তবে।” উত্তরের আশাও ছিল না, এসব ক্ষেত্রে তিনিই বাদী, তিনিই বিবাদী। যেমন আসিয়াছিলেন তেমনই অন্তর্হিত হইলেন। মাঝে মধ্যে গৃহিণীর মুখব্যঞ্জনা শুনিবার অভ্যাস শিবানন্দের আছে। মুশকিলটা হইয়াছে অন্য স্থানে। এই লকডাউনের বাজারে স্বয়ং অন্নপূর্ণাও ঘাঁটিয়া গিয়াছেন। তরঙ্গবিহীন জীবনে মুখ বদলাইতে তিনি বিচিত্র ভিনদেশীয় রান্নার দিকে ঝুঁকিয়াছেন। কালই তো বেগুনের পিত্জা আর পুঁইশাকের ক্লিয়ার সূপ বানাইয়াছিলেন। শিবানন্দের নীলকন্ঠ নাম কালই  নতুন করিয়া সার্থক হইয়াছে। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এই সব ছাঁই পাঁশ খাইয়াও গজানন দিব্য হজম করিয়া ফেলিতেছে। তাহার স্ফীত উদর স্ফীততর হইতেছে। মাঝে মাঝে সে এদিক ওদিক ফালুক ফুলুক চাহিয়া শুঁড় দোলাইয়া কহিতেছে "আমার কি ভুঁড়ি কমবে না? ভুঁড়ি কি কমবে না আমার?" 


          চিন্তায় আবার ব্যঘাত ঘটিল, সূক্ষ্ম তরঙ্গে কার যেন আগমনের ধ্বনি অনুরণিত হইতেছে। অহ্‌, ও ব্যাটা নারদ। নিশ্চিন্তে আছে বটে। নিজের ঢেঁকি নিজেই চালায়, মধ্যপথে গমনাগমন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বেজায় সহজ। নারদের হস্তে কিছু মুদিখানার দ্রব্য রহিয়াছে বলিয়া প্রতীত হইতেছে। মহামায়া হুকুম চালাইয়াছিলেন বোধ হয়। উত্তম। ইহার নিকট হইতে বহির্কৈলাশের যাবতীয় সংবাদ পাওয়া যাইবে। অবশ্য তাহাতে জলের পরিমাণ কম কিছু রহিবে না। শিবানন্দ গাত্রোত্থান করিলেন। সূর্য মধ্যগগনে চড়চড়িয়া উঠিয়া পড়িল।



    ।।মধ্য পর্ব ।।



     কর্মবিরতি চলিতেছে। মাজননীও ঘরে আটক। তাঁহার বাহনটি গাছতলায় অর্ধশয়ান হইয়া দ্বিপ্রাহরিক বরাদ্দ নিদ্রাকর্ষণে গভীর বিজৃম্ভণ করিল। হাই তুলিল আর কি। পার্শ্বে বসিয়া নন্দীও একই তাল করিতেছিল। তাহার প্রভুর রকমসকম ভালো ঠেকিতেছে না। যখন হইতে নারদ বিদায় লইয়াছেন, তখন হইতে মহাদেব অস্থির হইয়া পদচারণা করিতেছেন, মাঝে মধ্যে ধপ্‌ করিয়া নিজ আসনে বসিয়া পড়িতেছেন।



     শিবানন্দ হিসাব মেলাইতে চেষ্টা করিতেছিলেন। নারদ যাইবার সময় কয়েকখান মুখ ঢাকিবার  সরঞ্জাম দিয়া গিয়াছে। তাহার নাম 'মাস্ক' - সংক্রমণ আটকাইতে কাজে লাগবে। সেটিকে স্বীয় স্বীয় মুখে লাগাইতে হইবে। সেইখানেই যত গণ্ডগোল পাকিয়াছে। স্বর্গলোকে  মাথাপিছু মাথার সংখ্যা কিঞ্চিৎ অধিক। লোকজন সহসা ভয় পাইতে পারে বলিয়া একটি করিয়াই চক্ষুগোচর হয় বটে, কিন্তু প্রকৃত রূপ লুকাইবার নয়। পঞ্চাননের, অর্থাৎ তাঁর নিজের মুখ পাঁচটি। কার্তিকেয়ের ছয়টি। গজাননের আবার মুখ কোথায়, কোথায় শুঁড় আরম্ভ হইল বোঝা কঠিন। তাহা হইলে পাঁচ, আর ছয়ে এগারো... 



      হিসাব থামাইতে হইল। চতুর্দিক উদ্ভাসিত করিয়া শ্বেত হংসে আরোহন করিয়া তাঁহার কনিষ্ঠ কন্যা আসিয়া উপস্থিত। এমনিতে খুবই শান্তশিষ্ট প্রকৃতির, যদিও ইদানীং লকডাউনের কারণে কিঞ্চিৎ উদাস হইয়া রহিয়াছেন। সকল বিদ্যায়তন বন্ধ। পরীক্ষার ভয়ে ভীতরা পূর্বে দুইবেলা পেন্নাম ঠুকিত, এখন মুখ ফিরাইয়া লহিয়াছে। পঠন পাঠনের অধিক তাহারা 'টিক টক' তুলিতে ব্যস্ত। সরস্বতী তাহাদের স্বপ্নে ঢুকিয়া তাহাদের নিজ গুরুত্ব বোঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, উল্টা এক স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র তাঁহাকে সেই স্বপ্নেই উত্তর দিয়াছে "যেখানে বেঁচে থাকাটাই অনিশ্চিত, সেখানে পড়াশোনা করাটা বিলাসিতা"। সেই অবধি বিদ্যার দেবী বিমর্ষ হইয়া নিজেই বিদ্যাচর্চা করিতেছেন! অর্থাৎ, নিত্য নূতন কবিতা লিখিতেছেন এবং কবিতাঘাতে সবাইকে কুপোকাত করিতেছেন। তাঁহাকে দেখামাত্রই সকলে 'যঃ পলায়তে সঃ জীবতি' এই মহাবাক্যের পালন করিতেছে। মহাদেবও মনে মনে আশঙ্কিত হইয়া উঠিলেন। সরস্বতী আসিয়া কোনপ্রকার সম্বোধন বিনা আজই প্রাতে লেখা হাতে গরম কবিতাটি পড়িতে শুরু করিয়া দিলেন - 



    "করোনা করোনা করোনা 


    কেন যাচ্ছ না যাচ্ছ না যাচ্ছ না?


    লকডাউন লকডাউন লকডাউন 


    ঘরে থাকুন ঘরে থাকুন ঘরে থাকুন।


    জনতা কার্ফু জনতা কার্ফু জনতা কার্ফু 


    করোনা ফুঃ করোনা ফুঃ করোনা ফুঃ।"



         শুনিয়া শিবানন্দ বোম্বাচাক হইয়া গেলেন। ইহা কবিতা? কোন কিছু বলিবার আগেই মহামায়ার উচ্চ কণ্ঠ শোনা যাইল। তাহাতে ঝাঁজের ভাগ বেশি বুঝিয়া সকলে সচকিত হইয়া উঠিল। মাতৃদেবীর মেজাজ খারাপ দেখিয়া সরস্বতীও সুরুত্‌ করিয়া অন্তর্ধান করিলেন। বুদ্ধিমতী বটে। দশপ্রহরিণীর সঙ্গে একটি হস্ত প্রক্ষালনের সামগ্রী, তাহা হইতে সফেন তরল নির্গত হয়। মর্ত্যধামে ইহার নাম 'হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার'। দেবী আসিয়াই শুরু হইয়া গেলেন "ব্যাটা অলপ্পেয়ে নারদ। হাত পরিষ্কারের জন্য এইটা একখানা মাত্তর  দিয়ে গেছে। আরে, হাত কি আর দুটো? আমার দশটা, গণুর চার, কুতুরও চার, আরো সবাই আছে। বলি এই একখানাতে তো একদিনও পুরো চলবে না। এক বস্তা আনানোর ব্যবস্থা করো। নইলে, এই চল্লুম বাপের বাড়ি।" শিবানন্দের আর বলা হইল না যে হিমালয়েও করোনা চলিতেছে। বামাঙ্গী ততক্ষণে প্রস্থান করিয়াছেন।



         কিন্তু দেবী যাহা বলিয়া গেলেন তাহা তো সর্বৈব সত্য। মুখ আর হাতের হিসাব তাহা হইলে দাঁড়াইতেছে...মহাদেবের মস্তিষ্কে পুরা তাজ্‌ঝিম মাজ্‌ঝিম লাগিয়া গেল। নাহ, আর তো পারা যায় না। অন্যরা কী করিতেছেন? তাহার সাকরেদরা? ব্রহ্মা, বিষ্ণু উভয়েরই তো মুখ ও হাতের সংখ্যা অধিক। উহাদিগকে ধ্যানযোগে ধরিতে হইবে। শিবানন্দ আসনপিঁড়ি হইয়া বসিয়া চক্ষু মুদিলেন। প্রভুকে ধ্যানে বসিতে দেখিয়া নন্দীও নিশ্চিন্ত হইল। এখন পাক্কা ঘণ্টা তিনেকের ধাক্কা। ধর্মের ষাঁড় চক্ষু মুদিয়া জাবর কাটিতে লাগিল। তাহার কল্পনায় কচি কচি ঘাস নাচিতে লাগিল। ব্যোম ভোলানাথ!



    ।।অন্তিম পর্ব।।



          বিপ্‌ বিপ্‌ বিপ্‌... শিবানন্দ বিরক্ত হইয়া উঠিলেন। এই লইয়া তৃতীয়বার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইবার উপক্রম হইল। লকডাউনের বাজারে দেব-দেবী, গান্ধার-গান্ধারীগণের কিছুই করিবার নেই, তাই মনের সুখে স্বর্গের আন্তর্জালিক ব্যবস্থার গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো করিতেছে... খোসগপ্পো করিতেছে আর কি। নিজের চিন্তনের ভাষা দেখিয়া মহাদেব নিজেই আতঙ্কিত হইয়া উঠিলেন। না, না, তিনি শিব-শম্ভু, এ অকালে মস্তিস্ক শীতল রাখিতে হইবে। কৈলাশ হইতে একখাবলা বরফ মাথায় চাপাইয়া পুনরায় ধ্যানে মনঃসংযোগ করিলেন। বিপ্‌ বিপ্‌ বিপ্‌... 



         অপরপ্রান্তে ব্রহ্মার অবস্থা যা ভাবিয়াছিলেন প্রায় সেইরূপই। চারিখান হাতে শুভ্র দাড়িসম্বলিত চারটি মুখে চারটি মাস্ক লইয়া নাস্তানাবুদ হইতেছেন। চাপাস্বরে কণ্ঠ হইতে যে সকল ধ্বনি নির্গত হইতেছে, তাহা আর যাহাই হউক পঞ্চম বেদ নহে। চতুর্ভুজ নারায়ণের ব্যাপার স্যাপার আরো সঙ্গীন। অষ্টোত্তরশতনামের অধিকারীর মাথার সংখ্যা যে সঠিক কয়টি তাহা বোধহয় নিজেরও জানা নাই। কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখাইয়াছিলেন, তবে হইতে হিসাব গিয়াছে গুলাইয়া। তাহার উপর ক্ষীরসমুদ্রে অনন্তশয়ানে শুইয়া শুইয়া ভয়ানক সর্দি লাগাইয়াছেন। করোনার ভয়ে ভীত হইয়া কুনুই ভাঁজ করিয়া আক্রমণ বাধা দিবার চেষ্টা করিতেছেন। শিবানন্দ মনে মনে প্রমাদ গণিলেন। এই মাত্তর কয়েক হপ্তা পূর্বেই তো শিবরাত্রি গিয়াছে, তাঁহাকেও ভক্তগণ দুধ-জলে চুবাইয়া চুবাইয়া ধুইয়াছেন। তাঁহারও নাক সুড়সুড় করিয়া উঠিল। 



         সামলাইয়া উঠিয়া কহিলেন "কি খবর মিত্রগণ, এসব কি চলছে? হে চতুরানন, কি বিচিত্র জিনিষ একখান তৈরী করেছ? অমর হবার বরও নাকি দিয়ে দিয়েছ - যাকে পূবে-পশ্চিমে, শীতে-গ্রীষ্মে, দিনে-রাতে কোথাও বধ করবার উপায় নেই? বলি সৃষ্টি বাঁচবে তো?"



         তৃতীয় মুখের মাস্কটি অল্প তুলিয়া ব্রহ্মা উত্তর দিলেন, "হে পঞ্চানন, এসব আমার সাধ্য নয়। আমি তো প্রপঞ্চ সৃষ্টি করেই চোখ বুজে ঢুলছিলাম। যা হয়েছে, সব ঐ নাড়ুর কিত্তি।" বলিয়া তর্জনী তুলিয়া নারায়ণকে দেখাইয়া দিলেন। তারপর, ফিক্‌ করিয়া হাসিয়া  কহিলেন, "যমলোকের অবস্থা শুনেছ? ভিড় উপচে পড়ছে।  চিত্রগুপ্ত হিসাব রাখতে গিয়ে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে। এপাড়ার পিঙ্কি বৌদি আর ওপাড়ার পিনাকপাণির তপ্তকটাহ নরকে ওয়ার্ড বদল হয়ে গিয়াছে। তাপ্পরে যা কেত্তন হয়েছে না..." ব্রহ্মা চতুর্মুখে হাসিয়া গড়াইয়া পড়িলেন। মহাদেব ভ্রূকুটি করিলেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টিকর্তা ক্রমেই ফাজিল হইয়া উঠিতেছেন।



         "হ্যাঁ...হ্যাঁ...হ্যাঁচোওও"... নাক মুছিয়া নারায়ণ বলিলেন "ব্যবস্থা কিছু তো একটা করতে হবে। একমাত্তর অশ্বিনীকুমারদ্বয়ই যা ভরসা। তাদেরকে ডাক পাঠিয়েছি। দেবচিকিৎসকরা কি কেরামতি দেখাতে পারেন দেখা যাক। মুশকিলটা অন্য। সবসময় তো মেয়েরা, থুড়ি দেবীরাই অসুর টসুর মেরে এসেছেন। এখন চিন্তার বিষয় এটাই যে অসুর নিধনের নিয়ম মেনে অশ্বিনীদ্বয়েরও রূপান্তর করতে হবে কিনা। দেবী দুর্গা কি বলেন? তিনি তো সর্বজ্ঞা, তাই বোধহয় দুর্গাপুজো এবছর মহালয়ার একমাস বিরতির পর ধার্য করে রেখেছেন।" 



         মহাদেবের টনক নড়িল। তাহাই তো। মহামায়ার মায়ার লীলা বোঝা স্বয়ং শিবেরও দুঃসাধ্য। কিন্তু ততদিনে যদি সব পূর্বাবস্থায় না ফেরত আসে? যদি পূজার দিনগুলিতেও দেবী 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' করেন? তাহা হইলে তো সাড়ে সব্বনাশ। জগতপিতার তো ঐ কয়টি দিনই সম্বল। গৃহিনীবিহীন গৃহে কি গঞ্জিকা সেবনে, কি ভূতের নৃত্য জুড়িতে, ঐ কয়টি দিনের প্রতীক্ষায় বছরভর কাটে। বচ্ছরকার সেই স্বাধীনতাটিও কি দাঁওতে লাগিয়া গেল? শিবানন্দের মস্তিষ্ক পুনরায় ঝিম্‌ঝিম্‌ করিতে লাগিল। আসন টলমল করিয়া উঠিল। বার্তালাপ সমাপ্তির পূর্বেই ধ্যানযোগের সংযোগ ছিন্ন হইল। 



         শিবানন্দ নেত্র মেলিয়া দেখিলেন সন্ধ্যা আসন্নপ্রায়। চন্দ্রকলাটিকে আকাশের গায়ে ঝুলাইয়া দিবার সময় উপস্থিত। সেটিকে স্বীয় জটা হইতে পাড়িতে গিয়া থমকাইয়া গেলেন। অদ্য নিশাকালে নয় ঘটিকায় সকলপ্রকার আলো নিভাইয়া কেবল প্রদীপ জ্বালিতে হইবে - এরূপ একটি আজ্ঞা হইয়াছে। তাহা হইলে কি তখন পুনরায় চন্দ্রকে পাড়িয়া ফেলিতে হইবে? রজনীকান্তকে অসময়ে পাড়িয়া লইলে রজনীর কি হইবে? শিবুর গা গুলাইতে লাগিল, নয়ন সম্মুখে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড দুলিতে লাগিল। গঞ্জিকা সেবনের তীব্র প্রয়োজন অনুভব হইতেছে। দুই তিনটি টান দিবার পর ক্রমে চক্ষু ঢুলুঢুলু হইয়া আসিল, অধরপ্রান্তে স্মিত হাসি দেখা দিল, চিত্ত প্রশান্ত হইল। তিনি ভাবিয়া দেখিলেন যে আদতে তিনি সংহারের দেবতা। সুতরাং সক্কলে চুলায় যাক। তিনি নিদ্রা যাইবেন। ইহাই একমাত্র উপায়। যখন বিষ্ণু 'সময় সমাপ্ত' এর সিগনাল দিবেন তিনি গা ঝাড়া দিয়া উঠিয়া তৃতীয় নয়নটি খুলিয়া দিবেন। তাহা হইলেই হবে। 



         শিবানন্দ টান টান হইয়া শুইয়া পড়িলেন। সন্ধ্যার মৃদুমন্দ সমীরণে তাঁহার চক্ষু মুদিত হইল এবং অচিরেই নাসিকাগর্জনের তালে তালে তাঁহার নধর ভুড়িটি নাচিতে লাগিল। দূরে মধ্য আকাশে কোথাও বীণা বাজাইয়া নারদ সুর লাগাইলেন। অতি পরিচিত গান - "ভগবান নিদ্রা গিয়াছেন..."।



         ভগবান নিদ্রা গিয়াছেন, আমরা জাগিয়া আছি তো?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • কূটকচালি | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ৩৫৭১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    দরজা - gargi bhattacharya
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Jati Sankar Mondal | ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৯:২০92144
  • অত্যন্ত সুখপাঠ্য রম্যরচনা। সত্যিই আমরা জেগে আছি তো?
  • | ১১ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৫৯92156
  • বাহ দিব্বি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন