এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • খবর্নয়? (১৯শে জুলাই) -- কারাগার, দেশে বিদেশে

    খবরোলার প্রতিবেদন লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ১৯ জুলাই ২০০৯ | ১১০৪ বার পঠিত
  • আমেরিকা
    চোদ্দ বছরের জেমি কুইন জেলে। কারণ, বন্ধুর সঙ্গে হাতাহাতি। হিলারি ট্রান্স্যু-র ক্ষেত্রে কারণটা অন্য। মেয়েটি স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপালের প্যারডি করে একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছিল। মাত্র ৯০ সেকেন্ডের শুনানির পর হিলারিকে ৩ মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয়, জেমির কপালে জোটে এক বছরের হাজতবাস। হ্যাঁ,আমেরিকার পেনসিলভ্যানিয়ায় প্রায় ৫০০০ শিশু আদালতের রায়ে এইরকম "দোষী প্রমাণিত' হয়েছে,আর তার মধ্যে জেল হয়েছে ২০০০-এর। অধিকাংশ হাজতবাসই সম্পূর্ণ হাস্যকর কারণে। বিচারপতি মার্ক এ সিয়াভারেলা জুনিয়র ও বিচারপতি মাইকেল টি কোনাহান, বেসরকারি প্রিজন সংস্থার কাছে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়ে এই সব শিশুদের জেলে পাঠিয়েছেন। বিশেষ করে যারা কোন আইনজীবী জোগাড় করতে পারেনি তাদের।
    যদিও এই ঘটনাটি গোটা রাজ্যের মাত্র একটি কাউন্টিতে ঘটেছে, দ্য সেন্টেন্সিং প্রজেক্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সারা আমেরিকায় জেলে থাকা মানুষের সংখ্যা ২.১ মিলিয়ন (অন্য দেশের সঙ্গে তুলনায় অনেকই বেশি) এবং গত তিরিশ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৫০০ শতাংশ। একই সঙ্গে ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সরকারি জেল তৈরি করা ও চালানো খুব ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠায় বেসরকারি কারাগার সংস্থাগুলি চুটিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। আর এই রমরমিয়ে চলা ব্যবসাতে বাড়তি অক্সিজেন যোগাতেই হাজতবাস ২০০০ শিশুর। আর এই সব নিরপরাধ শিশুরা জেল থেকে বেরিয়ে চুড়ান্ত সামাজিক গ্লানি ও বিচ্ছিন্নতার জন্য মানসিক রোগের শিকার হচ্ছে।
    http://www.truthdig.com/report/item/20090217_kids_for_cash/

    ভারত
    একটি সাংবাদিক তদন্তে জানা গেছে যে অন্ধ্রপ্রদেশের ১৪৩-টি জেলে গত সাত বছরে ৭২২ জন কয়েদী অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছেন। না, কেবল বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নয়, ২০০৮- এর শুধু প্রথম চার মাসে মারা গেছেন ৩৮ জন,যার মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২৮ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। কারণ হিসাবে জানানো হয় হাট Ñপ্রবলেম, জন্ডিস, টিউবারকিউলোসিস্‌, এবং এইচ/আই/ভি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে এসেছে, কয়েদীরা ঠিকমত চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন তো ? এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কারা কতৃপক্ষ জানান, চিকিৎসক থাকলেও কোন কয়েদীর বিনা অনুমতি-তে তার চিকিৎসা নিয়মবহির্ভূত। কয়েদীরা সুযোগ পেয়েও নিজেদের চিকিৎসা করাতে চাইবেন না, এই কৈফিয়ত যে হাস্যকর, তা বলাই বাহুল্য।
    বিশেষত:, এই তথ্য জানার পর। চারটি ডেপুটি সিভিল সার্জেন্ট পদের মধ্যে একটি,২৬টি সিভিল অ্যাসিষ্টেন্ট সার্জেন্ট পদের মধ্যে ৭-টি এবং একমাত্র সিভিল সার্জেন্টের পদটি খালি। এরসাথে ৩২টি ফার্মাসিষ্ট পদের মধ্যে ৬টি,৮টি ষ্টাফ নার্স পদের মধ্যে ৫টি, ৬টি প্যাথোলজিষ্ট পদের মধ্যে ২টি এবং সমসমখ্যক ল্যাবকর্মী ও ডেন্টাল অ্যাসিষ্টেন্ট পদগুলি খালি। যেখানে অল ইϾডয়া কমিটি অন প্রিজন রিফর্ম( AICPR )-এর নিয়মানুযায়ী প্রতি ১,০০০ জন পুরুষ. কয়েদী এবং ২৫ জন মহিলা কয়েদীর জন্য একজন মেডিকাল অফিসার থাকা আবশ্যিক। সাইকিয়াট্রিষ্ট ও সাইকোলজিষ্টের কোনও সুবিধা কয়েদীরা পান না, যদিও AICPR - এর নিয়মানুযায়ী তা কয়েদীদের প্রাপ্য।

    http://infochangeindia.org/200805267151/Human-Rights/News/Prison-deaths-raise-questions-about-health-facilities-in-AP-jails.html

    ব্রিটেন
    The Wolds Remand Prison । বৃটেনের এই জেলখানার কয়েকজন কয়েদীর দাবীদাওয়া শুনলে কবিকে আর লিখতে হত না,'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে' । ভাল জেলখানা হিসেবে বেশ উচ্চ প্রশংসিত এই জায়গার 'relaxed atmosphere' এ বিরক্ত, হ্যাঁ, ঠিক ই শুনছেন,বিরক্ত হয়েই বেশ কিছু কয়েদী দাবী জানিয়েছেন অন্য কোনো 'প্রকৃত জেলখানা'তে যেন ওদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
    তবে এই ব্যাপারটা যতই মজাদার মনে হোক না কেন, আসল ছবিটা একেবারেই আলাদা। ইংল্যান্ডের অন্যান্য লোকাল জেলগুলোর অবস্থা কিন্তু এই Remand Prison এর মতন একেবারেই নয়। বরং ছবিটা একেবারেই উল্টো সেসব জায়গায়। সম্প্রতি Chief Inspector of Prisons এর রিপোর্টে ধরা পরেছে জেলখানা গুলোর প্রকৃত অবস্থা। HMP Chelmsford ভয়ানক নোংরা এবং মানুষ থাকার অযোগ্য। Birmingham Prison তো ইনস্পেক্টরদের মতে পুরো নরক। তার ওপর সেখানে ছোট ঘরে গাদা গাদি করে আঁটকে থাকেন কয়েদীরা। এই জেলখানায় ৭৪৩ জন কয়েদী থাকার ব্যবস্থা আছে, অথচ এই মুহূর্তে সেখানে আটক মানুষের সংখ্যা ১০৮৩। অন্যদিকে আবার HMP Doncaster বিখ্যাত হয়ে আছে কয়েদীদের আত্মহত্যার জন্য। গত পাঁচ বছরে এখানে আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। আর স্থান সংকুলানের সেই একই ছবি দেখা যায় এখানেও। ৭৭১ জনের থাকার জায়গায় এখানে আটক হয়ে আছেন ১,০৪৪ জন। এই ছবিটাই বার বার ফিরে দেখা যাচ্ছে লোকাল জেল গুলোতে। প্রায় ৬০,০০০ কয়েদী এই মুহুর্তে আছেন বিভিন্ন লোকাল জেলে, যেখানে বছর পনেরো আগেও এই সংখ্যা থাকতো ৪০,০০০ আশে পাশে। ফলে স্থান সংকুলান সর্বত্র। Howard League এর ডিরেক্টর Frances Cook এর মতে আগের থেকে আইন কানুন অনেক কড়া হয়েছে দেশে। ফলে বেড়ে গেছে কয়েদীর সংখ্যা। আগের থেকে বেশী মানুষকে পাঠানো হয় জেলে। অথচ জেলগুলোর উন্নতি করা হয় নি সেই ভাবে। তাই এই সমস্যা গুলো ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
    http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/321487.stm
    http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/253933.stm
    http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/307438.stm

    নাইজেরিয়া
    কয়েকদিন আগেই নাইজেরিয়ার এনুগু কারাগারের ১৫০ কয়েদী জেল ভেঙ্গে পালালেন।
    মুক্তির জন্য স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা থেকে কয়েদীদের জেল ভাঙ্গা, এই তো সহজ, সরল কার্যকারণ সম্পর্ক। এতে আর নতুন কী, আশ্চর্যের ই বা কী ? তবে কিনা যে জেলে ছ'শো জনের থাকার জায়গায় পুরে রাখা হয় হাজার জনকে আর তার মধ্যেও সাতশোর উপরে বন্দীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই সাব্যস্ত নয়, অনেককেই দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে এই ঘটনার পিছনে বিচারব্যবস্থার অবিচার,কারাগারের অমানবিক পরিবেশের দায়ও থাকে বৈকি ।আবশ্য কয়েদীরা আর কবেই বা কোথায় মনুষ্য পদবাচ্য হলেন !

    অভিযোগ প্রত্যাহারের পর-ও ' আসামী' জেলে, কারণ কেস ফাইল উধাও। এরকম কেস অসংখ্য। এক মানসিক রোগী কে,পরিবারবর্গের বিরক্তি উদ্রেক করছেন, স্রেফ এই নালিশে আটকে রাখা হয়েছে কয়েক মাস, এমন কেস ও রয়েছে। আর কতজন যে মানসিক রোগী হয়ে গেছেন এই জেলখানার পরিবেশের কল্যাণে, সেসব কেস তো অগুনতি।

    শুধু এনুগু ই নয় , প্রায় এক ই ছবি নাইজেরিয়ার জেলে জেলে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য অনুযায়ী নাইজেরিয়ার জেল-বন্দী দের ৬৫ % এর বেশীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সাব্যস্ত নয়, এদের অনেকেই দশ বছরের বেশী বিচারের জন্য অপেক্ষারত।
    নাইজেরিয়ান সরকার জেল ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একের পর এক কমিশন বসান, কিন্ত কয়েদীরা সেই এক ই তিমিরে। বিচারের বাণীর কান্নাকাটি চলছে, চলবে।

    জুলাই ১৯, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১৯ জুলাই ২০০৯ | ১১০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 203.108.233.65 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০২:১৩89321
  • প্রিজন একটি ইন্ডাস্ট্রি। জয় পাস্কাল সভাজ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন