এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • খবর্নয়? (২৯ শে জুন) -- লালগড়

    খবরোলার প্রতিবেদন লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ২৮ জুন ২০০৯ | ১২০৩ বার পঠিত
  • এবারের খবর্নয়? : বিষয় লালগড়

    নভেম্বরের বিদ্রোহ : একটি তথ্যচিত্র
    লালগড়ে নভেম্বর বিদ্রোহ কেন হয়েছিল? এ নিয়ে বানানো একটি তথ্যচিত্র আমাদের হাতে এল সদ্য। সেখানে আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন মানুষ এ ব্যাপারে খোলাখুলি তাঁদের মতামত দিয়েছেন। নৃতত্ত্বÄবিদ পশুপতি মাহাতোর মতে শালবনিতে মুখ্যমন্ত্রির গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর লালগড়,ছাতনা,রায়পুর, বেলপাহাড়ি থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শুরু হওয়া পুলিশি সন্ত্রাস মনে করিয়ে দেয় আদিবাসিদের ওপর প্রায় দুশো বছর ধরে চলে আসা অত্যাচারের কথা। স্থানীয় এক যুবকের কথায় " শালবনিতে বিস্ফোরণের ঘটনা খতিয়ে না দেখেই লালগড়ে তিনজন ছাত্রকে (কাঁটাপাহাড়ি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ) গ্রেপ্তার করা হল।' অন্য এক যুবকের কথায় "রাত্তিরে কাঁটাপাহাড়ি থেকে বাউল গান শুনে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের চারজনকে তুলে নিয়ে গেল।' ছোটোবেড়িয়া গ্রামের এক মহিলা জানালেন " পরেরদিন ভোরবেলায় পুলিশ এসে নির্যাতন করল মেয়েগুলোর ওপর।' ওই সময়েই পুলিশ আঘাত করে ¡মণি মূর্মু নামে এক মহিলার চোখে। স্থানীয় এক যুবকের কথায় "আমাদের সমাজের ওপর একের পর এক এই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে আমরা পথে নেমেছি।' অন্য এক যুবকের কথায় "সরকার আমাদের মূল দাবীদুটি মেনে নিলেই আমরা এই বনধ্‌ তুলে দেব।' এক মহিলা জানালেন "প্রতিটি গ্রামে আমাদের এখন জোট হয়ে গেছে। আমরা একা নই। মাদল বাজলে, ধামসা বাজলে আমরা সবাই বেড়িয়ে পড়ি।' অন্য এক যুবকের কথায় 'বাজারে সব্জি কাটছিলাম,পুলিশ এসে মারতে মারতে নিয়ে গেল মেদিনীপুর এস পি - র বাংলোয়। এস পি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মারল। শর্টপ্যান্টের ভেতর টিকটিকি ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ' আরেকজনের মতে "পুলিশ মানেই একটা আতংক। দিনের পর দিন আমাদের ওপর শোষণ, মারধোর, মিথ্যা মামলা। আমরা খাবার পাই না ঠিকমতো, মামলা চালাবো কি করে?' স্থানীয় একজনের কথায় "বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশবাহিনী যদি ব্রিটিশদের মতো আচরণ করে, আমরা যাবো কোথায়?' ঝুমুর শিল্পী বিজয় মাহাতোর মতে অপরাধীদের নিশ্চয়ই শাস্তি হোক, কিন্তু নিরপরাধদেরকে অত্যাচার করা তো মানবাধিকারবিরোধী।'

    সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে। গত নভেম্বরকেই এখন গতযুগের ঘটনা মনে হয়। সেই তুমুল গণবিদ্রোহ এখন বোধহয় শেষের পথে। তবে বিদ্রোহ শেষ হোক বা না হোক, বিদ্রোহের কারণগুলি অবশ্য ক্ষতের মতো থেকেই যাবে। সেই নিয়েই এই তথচিত্র:

    http://video.google.com/videoplay?docid=2338671304380482228

    লালগড় এতদিন: জে এন ইউ ফ্যাক্ট ফইন্ডিং টিমের রিপোর্ট
    এর আগেও সর্বভারতীয় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম ঘুরে এসেছে লালগড়। অতি সম্প্রতি, লালগড়ে এই 'যুদ্ধ' শুরু হবার আগে আগেই ঘুরে গেল আরেকটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। গত ৭ই -১০ ই জুন। জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রী এই চারদিন কাটিয়েছিলেন লালগড়ে। ধরমপুরা ও মধুপুর/শিজুয়াতে গুলিবর্ষণ ও যুদ্ধ তখন শুরু হয়ে গেছে। কী দেখলেন তাঁরা ? লোধাশুলির মিটিং এ কী শুনলেন তাঁরা ? গ্রামে গ্রামে ঘুরে ওখানকার আদিবাসী মানুষের সাথে কথা বলে কী জানতে পারলেন তাঁরা?
    সেই সব কথাই তাঁরা লিপিবদ্ধ করেছেন সদ্য প্রকাশিত এই What Really Is Going On In Lalgarh : A Fact Finding Report এ।

    গত নভেম্বর মাসে আদিবাসী বিক্ষোভ লালগড়কে আমাদের মিডিয়া মানচিত্রে এনে দিয়েছিল। জে এন ইউ র ছাত্রছাত্রীদের আদিবাসীরা জানালেন, নভেম্বরের ঘটনা কিন্তু আদৌ নতুন কিছু নয়। এরকম ই চলে আসছে গত আট বছর ধরে। নভেম্বরে যা নতুন হয়েছে,তা হলো,তাঁদের প্রতিবাদ।

    গ্রামের মানুষ জন শুনিয়েছেন, সেই ২০০০ সাল থেকে পুলিশি অত্যাচারের ধারাবিবরণী। কীভাবে 'রেড'এর নামে মাঝরাতে বাড়িতে পুলিশ ঢুকে বেধড়ক মারতে শুরু করতো, সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দিত, প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজনকে কখনো না কখনো ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাওয়িস্ট আখ্যা দিয়ে। তিসাবাঁধের নাইকু মুর্মুকে কিভাবে পিটিয়ে মেরেছিল পুলিশ। নব্বই বছরের বৃদ্ধ নাইকু মুর্মুকে। স্কুলে পড়া মেয়েদের যৌন পীড়ন করা হয়েছে 'তল্লাশি' র নাম দিয়ে। মহিলাদের যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করতে হয়েছে মহিলা বলে নিজেকে প্রমাণ করতে, রাত্রিবেলার পুলিশি রেডের সময়। যেকোনো নির্বাচনের আগে অন্তত তিরিশ চল্লিশ জনকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ, 'মাওয়িস্ট' আখ্যা দিয়ে।

    আর তার সঙ্গে সঙ্গত দিয়ে চলেছে সিপিএম পার্টির কর্মী ও সমর্থকদের অত্যাচার। 'In fact, the police and CPI (M) are not just in alliance with each other, they meant one and the same thing for the villagers.' "হার্মাদবাহিনী'র "মোটরসাইকেল আর্মি' টহল দিয়ে বেড়াতো গ্রামে গ্রামে। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো, ঘর দোর ভাঙ্গা, ফাঁকা গুলি ছোঁড়া, মারধোর করা এসব ছিল তাদের রুটিন কাজ। আর এইসব সময়ে পুলিশ কোথায় থাকতো ? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো তারা। পুলিশের জিপে তো তখন "হার্মাদবাহিনী', ছাত্রছাত্রীদের জানিয়েছেন আদিবাসীরা। তাঁরা দেখিয়েছেন ভাঙ্গা ঘরগুলো, যেগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে "হার্মাদ'রা, আর ভাঙ্গার সময়ই বারবার ডাকা সত্বেও আসেনি পুলিশ। বলেছেন খাস জঙ্গলের সেই ঘটনার কথাও, যখন গ্রামবাসীদের মিটিং এ গুলি চালিয়েছে "হার্মাদবাহিনী', মারা গেছেন তিনজন, আহত হয়েছেন আরো তিনজন। এই ঘটনার পরই আদিবাসীরা হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হন বলে জানান। পুলিশের এই ফেভারের রিটার্ন 'হার্মাদ'রা অবশ্যই দিয়েছে। 'ইনফর্মার' হয়ে।

    কিন্তু লালগড় প্রসঙ্গে আদিবাসীদের থেকেও যাদের নাম এখন বেশি চর্চিত, সেই মাওয়িÙটদের কথা জানতে চাইলেন না এই টিমের সদস্যরা?
    হ্যাঁ, চেয়েছিলেন।
    হ্যাঁ, আছেন তো। উত্তর পেয়েছেন। মাওয়িস্টরা আছেন, একথা কোনো আদিবাসীই অস্বীকার করেননি। ছাত্রচাত্রীদের নিজেদের ও চোখে পড়েছে মাওয়িস্টদের অস্তিত্ব, চারপাশে অসংখ্য পোস্টারের মধ্যে দিয়ে। আর চোখে পড়েছে মাওয়িস্টদের প্রতি জন সমর্থন ও। কারণ সিপিএম ও পুলিশের হাতে হাত ধরে করা অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে সশস্ত্র প্রতিরোধ না করে আর উপায় কী, জানতে চেয়েছেন লালগড়ের আদিবাসীরা।

    আদিবাসীদের এই কমিটি তৈরি হয়েছিলো, পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা গিয়ে দেখলেন যে গত সাত মাসে কমিটি অন্যান্য কাজ ও করেছে। সেই কাজ উন্নয়নের। যে উন্নয়ন করার কথা ছিল সরকারের আর গত বত্রিশ বছর ধরে যা করা হয়ে ওঠেনি। কথা ছিল, পতিত জমি উদ্ধার করে সরকার সেই জমি বন্টন করবে আদিবাসীদের মধ্যে। সরকার কথা রাখেনি। তাই এবার এনারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে জমি বন্টনের ব্যবস্থা তো শুরু করেছেন, ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই দেখে এসেছেন একটি গ্রামে পাট্টা বিলির কাজ। এলাকায় বৃষ্টি এমনি কম। কৃষিকাজ তবু পুরোপুরি বৃষ্টি নির্ভর। কেন ? কারণ সরকারী খাল জলহীন অবস্থায় পড়ে আছে, নিজের চোখেই দেখলেন তাঁরা। দেখলেন লাল মোরামে বাঁধানো রাস্তাও, যে ২০ কিমি রাস্তা আদিবাসীরা নিজেদের হাতে তৈরি করেছেন। করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ হয় রাস্তা নেই, আর যা আছে তার অধিকাংশই বর্ষায় পুরোপুরি ব্যবহারের অযোগ্য। বসিয়েছেন নতুন টিউবওয়েল । নিজেরাই। পঞ্চায়েতের অর্ধেক দামে। সারিয়েছেন পুরানোগুলো। এমনকি নিজেরাই চেক বাঁধ তৈরির কাজও শুরু করে®ছেন, বোহারডাংগায়। কলকাতা থেকে ডাক্তার আনিয়ে কাটাপাহাড়িতে নিজেরাই চালু করেছেন হাসপাতাল, যেখানে রোজ ভীড় করে আসা শ দেড়েক রোগী মানুষ এতদিন চিকিৎসার জন্য কী করতেন, সে প্রশ্ন তোলা বাতুলতা।

    এই টিম ওখানে একটি মিটিং এর ও প্রত্যক্ষদর্শী। সিপিএমের ডাকা বাস স্ট্রাইক সত্ত্বেÄও বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১২,০০০ জন মানুষ সমবেত হয়েছিলেন লোধাশুলিতে স্পঞ্জ তৈরির কারখানার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে। অভিযোগ পরিবেশ দূষণের। টিমের সদস্যদের গ্রামবাসীর ঘুরিয়ে দেখালেন দূষণের নানান নিদর্শন, জলে, জমিতে,জঙ্গলে। দেখালেন কালো হয়ে যাওয়া ধান, যে ধান নিতে পঞ্চায়েত ও অস্বীকার করেছে।

    ঘুরে এসে খুব স্পষ্ট বক্তব্য এই fact finding team এর। মিডিয়া বর্ণিত 'অ্যানার্কি' তাঁরা লালগড়ে দেখতে পাননি। যা দেখেছেন, সেটা খুব ই স্পষ্টভাবে আদিবাসীদের যন্ত্রণা আর ক্ষোভ। আর এর জন্য স্পষ্টত তাঁরা পুলিশ, প্রশাসন ও সিপিএম কে দায়ী করছেন।

    http://www.countercurrents.org/lalgarh200609.htm

    লালগড় এতদিন: মহিলা কমিটির রিপোট
    দিনের পর দিন একের পর এক ঘর থেকে আদিবাসী পুরুষদের তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। কিভাবে জীবন নির্বাহ করছেন সেখানকার মহিলারা ? বেলপাহাড়ী আর লালগড়ের জংগলমহল থেকে ঘুরে এসে All India Committee against Violence on Women এর কিছু সদস্যা শোনালেন তাঁদের আর ওখানকার সব আদিবাসী মানুষজনের সেই জীবনযুদ্ধের কিছু আখ্যান।

    যুদ্ধ ? হ্যাঁ, সেরকম ই তো। খাওয়া জোটে একবেলার, জঙ্গল থেকে শাল, কেন্দুপাতা এনে দিনে কুড়ি পঁচিশ টাকার বেশি রোজগার হয়না, খাবার জল আনার জন্য হাঁটতে হয় দু থেকে তিন কিমি, আর সেই হাঁটার জন্য কোন 'রাস্তা' ও নেই।
    ছবিটা বত্রিশ বছর আগে যা ছিল, এখনো তাই। মন্তব্য কমিটির সদস্যাদের।
    দু-তিন টাকা কেজির চাল গম কেনার স্কীমের সুবিধা নেওয়ার মতন টাকাও হাতে থাকে না দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা লালজল গ্রামের তিরিশটি পরিবারের। খেরিয়ারতা, বাগডোবা, জমিরডিহা,ডাঙ্গারডিহা, হিন্‌চাঝোড় , গ্রামকে গ্রাম, পরিবারকে পরিবার বছরের দশ মাস প্রায় অভুক্ত। এইসব কোনো পরিবার ই NREGS এর কোনো সুবিধে পাননি বলে জানিয়েছেন।

    না, স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে আর কোনো অভিযোগ আর জানান না তাঁরা। কেন? খুব সহজ উত্তর। পঞ্চায়েত কিছুই করেনা। দু'বছর আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সুযোগসুবিধা আদায়ের দাবী নিয়ে গেছিলেন পঞ্চায়েতের কাছে। তাঁদের নিজেদেরকে প্রত্যেককে দেড়শো টাকা করে দিতে হয়েছিল পঞ্চায়েতের নেতাদের। হ্যাঁ, তাঁদের, যাঁদের দৈনিক রোজগার বছরে দুটি মাসে দিনে চল্লিশ টাকা, বাকি সম®য়ে তারো অর্ধেক। আর তার পরেও গ্রামে একটা কিছুও তৈরি করেনি পঞ্চায়েত।
    তাঁরা এখন তাই নিজেরাই যা করার করেন। যে টিউবওয়েল, রাস্তা আর বাঁধ দেখে এসেছেন জে এন ইউ র ছাত্রছাত্রীরা ,এক মাস আগে সেগুলো ই তৈরি হতে দেখেছেন এই মহিলা কমিটির সদস্যারা। আদিবাসীরা তৈরি করছেন নিজেদের পকেট থেকে পয়সা দিয়ে। তৈরি করছেন গ্রামের পুরুষ ও মহিলা, হাতে হাত মিলিয়ে।

    সূত্র: [Hard times in Bleak Houses: How the women in Lalgarh eke out a living
    The Statesman, May 21 2009]

    মিসিং লিঙ্ক : ৫ই জুন-১৪ ই জুন
    উপরের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট যে ছবিগুলো তুলে ধরে সে তো অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু গত নভে্‌ম্বরের সেই কনভয় বিস্ফোরণ পরবর্তী সহ্যের সীমা ছাড়ানো ধরপাকড়ের মতন এবারে অগ্নিসংযোগ করলো কোন স্ফুলিঙ্গ ? শুধুই কি মাওবাদী ফ্যাক্টর ? একটু নজর রাখা যাক ৫ই থেকে ১৪ ই জুনের ঘটনাক্রমের উপর।

    ৫ ই জুন। CAVOW (Committee Against Violence on Women) আর People’s Committee র একটি বিক্ষোভ সভার আয়োজন করতে চেয়েছিল কলকাতায়। কিন্তু সরকার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে,আদিবাসীরা তাঁদের প্রথাহত অস্ত্র সহযোগে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারবেন না, এই অজুহাতে । কলকাতা পুলিশ CAVOW এর কনভেনরকে গ্রেপ্তারের হুমকিও দেয়। অথচ তীরধনুকের মত আদিম অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে সজ্জা আদিবাসীদের চিরাচরিত সংস্কৃতির অঙ্গ, আর এইরকম ই প্রথাগত অস্ত্র সহযোগে মুসলিম কিম্বা শিখেরাও বিনা বাধায়এই শহরে শোভাযাত্রা করে থাকেন। এমনকি নন্দীগ্রামের সূর্যোদয়ে পরেও সিপিএম এর সমর্থকদের কোদাল, ধনুক হাতে বিজয়মিছিল নিয়ে পুলিশের কোনো আপত্তি দেখা যায়নি। তাহলে এই সিদ্ধান্ত কি আদিবাসীদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক ও অপমানজনক নয়? আদিবাসীরা কিন্তু সেরকম ই মনে করেন।
    উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে কলকাতার বদলে প: মেদিনীপুরে সভার আয়োজন করতে যান। বিপত্তি সেখানেও । এই সভায় যোগদানের আহ্বান করার জন্য আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক শাখার একটি দল চাকুলিয়ায় বাংলা বিহার বর্ডারে গেলে ঝাড়খন্ডের পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ স্টেশনে শ্লীলতাহানির শিকার হন বেশ কিছু আদিবাসী রমণী,ধর্ষিত হন একজন । বিক্ষুব্ধ আদিবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ, গ্রেপ্তার ও করে বেশ কিছুজন। তাঁদের মুক্তির দাবীতে ছত্রধর মাহাতোর নেতৃত্বে আদিবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করে যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রশাসন ও পাল্টা জবাবে জারি করে ১৪৪ ধারা।
    আর এর ই সুযোগে সিপিএম তার হৃত জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় নামে, কেশপুর ও গড়বেতা থেকে দুশো জনের বাহিনী এনে।

    ১১ই জুন । তারা গুলি করে PCAPA র সদস্য মির্জা আবদুল মান্নান, হাফিজ আবদুল মান্নান, ওমর শেখের উপর।

    ১২ই জুন। গুলিতে আহত হন আরো চার সদস্য।

    এরপর শুরু হয় প্রতিহিংসার পালা।

    ১৪ ই জুন। ধরমপুরের সিপিএম নেতা খুন হন।
    এরপরের পর্যায়ের সব খবর ই প্রায় আমাদের জানা PCAPA , মাওবাদী ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে গুলি বিনিময়, ১৪ জন সিপিএম সমর্থক (রিপোর্টে যাঁদের উল্লেখ আছে ' সিপিএম এর গুন্ডা' হিসেবে) খুন, অনুজ পান্ডের বাড়ি ভাঙ্গার বহুপঠিত ও বহুপ্রদর্শিত খবর এবং মিডিয়ায় লাইভ কভারেজ হতে থাকা যুদ্ধ।

    http://sanhati.com/news/1604/

    লালগড় এখন : কিছু খবর
    মাঝে কিছুদিন পুলিশমুক্ত থাকার পর, এমনকি বিনা পুলিশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনও হয়ে যাবার পর লালগড়ের এখনকার ছবি আবার সেই, বা আরো খারাপ। বিশেষত: দেখা যাচ্ছে সে¾ট্রাল ফোর্স চলে যাওয়ার পরে পুলিশবাহিনী গ্রামগুলিতে ঢোকার নামে মাওবাদী খোঁজার নাম করে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, ঘরে মজুত করা চাল ছড়িয়ে ফেলছে, রান্না খাবার নষ্ট করে দিচ্ছে। আর, গ্রামের কোনও সমর্থ পুরুষ পুলিশের ভয়ে পালিয়ে না গেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আই জি কুলদীপ সিং-এর মতে এত বিশাল পুলিশবাহিনীর মধ্যে দু-একজন বিচ্ছিন্ন ভাবে অত্যাচারের ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছেন মাত্র। কিন্তু, প্রকৃত ঘটনা হলো, পুলিশি অত্যাচারের ফলে মাওবাদী-মুক্ত গ্রামগুলির সাধারণ মানুষ আবারও বিরূপ হয়ে উঠছেন পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতি। এবং মাওবাদীরা আবার তাদের সহানুভূতি ও সমর্থন ফিরে পাচ্ছে।

    মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর নিজস্ব তথ্যসূত্র অনুযায়ী মাওবাদী দমনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের রিজার্ভ ফোর্সের যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত চল্লিশজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশ ফোর্সের অত্যাচার বন্ধ করতে। পাশাপাশি সমস্ত রাজনৈতিক দল (সিপিআইএম সহ) ও জনগণের কমিটির কাছে সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আবেদন করেছেন। মাওবাদীদের অনুরোধ করেছেন হিংসার পথে না গিয়ে ন্যূনতম মানবাধিকারগুলি বজায় রাখতে। এর পাশাপাশি দাবী জানানো হয়েছে যাতে সব মাওবাদী দমনের নামে পুলিশি অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে আইনের পথে সুবিচার পাওয়ার ।

    http://www.amnestyusa.org/document.php?id=ENGASA200062009&lang=e&rss=recentnews

    http://www.telegraphindia.com/1090629/jsp/frontpage/story_11172478.jsp

    লালগড় এখন : যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট আর জানা যাবেনা
    শেষ অবধি লালগড়ে পৌঁছতেই পারল না Fact Finding Committee of India নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের আট সদস্যের দল। তার আগে মেদিনীপুর ষ্টেশনেই গ্রেফতার হতে হল রাজ্য পুলিশের হাতে। আইনজীবী, সামাজিক আন্দোলনের কর্মী, নারী আন্দোলনের কর্মী, চিত্র পরিচালক, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কর্মীদের নিয়ে তৈরী এই দলে ছিলেন তথ্যচিত্রনির্মাতা গোপাল মেনন, চেন্নাইয়ের নারী আন্দোলনের কর্মী পদ্মা, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী কে এন পন্ডিত ও দামোদর, রেভোলিউশনারী ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের টিঙ্কু ও রাজকিশোর ও অন্যান্যরা। এই দলটির নেতা, মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ে বহু তথ্যচিত্রের পরিচালক গোপাল মেনন জানিয়েছেন যে তাঁরা এক্ষুনি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাচ্ছেন না। বরং এর বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে যাবেন ও প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকাল অনশনেও বসতে পারেন যদি তাঁদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে না দেওয়া হয়। শর্তসাপেক্ষে দেওয়া জামিন নিতে অস্বীকার করলে পরে তাঁদের নি:শর্তে জামিন দেওয়া হয় ও কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। মেননের অভিযোগ লালগড়ে কি হচ্ছে তা রাজ্য সরকার বাকী পৃথিবীর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে। মেনন এও জানান যে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-কেও লালগড় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। মেননের বক্তব্য - "গণতান্ত্রিক দেশে এটা ঠিক নয়। এমনকি মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যেও এত লুকোছাপা করা হয় না'। লালগড়ে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে এই দাবি করে তিনি বলেন কিছু বিশেষ বানিজ্য গোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার পশ্চাৎপদ ভুমিকা নিচ্ছে। "সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম ও লালগড়ে ঠিক এটাই হচ্ছে'।
    রাজনৈতিক বন্দীমুক্তি কমিটির একটি বিবৃতিতেও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টীমের সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তির দাবী জানানো হয়েছে।

    http://sanhati.com/news/1607/

    জুন ২৯, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ২৮ জুন ২০০৯ | ১২০৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন