এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • আত্মপক্ষ

    আফসার আমেদ লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ৮৮০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অমরদা আমার বন্ধু। মহিষবাথানে অমরদার বাড়িতে আজই আমি চলে এলাম স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে। অমরদা নতুন বানিয়েছেন বাড়িখানা। পাশেই আমার জায়গা আছে দু-কাঠা। সল্টলেক মিউনিসিপ্যালিটি থেকে প্ল্যানও মঞ্জুর হয়েছে। এবছর থেকে আমিও বাড়ি করব। আটবছর আগে আমরা দুই বন্ধু জায়গা কিনেছিলাম। আশা ছিল শহরে বসবাস করার। সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হতে চলেছে। হাওড়ার গ্রামে থাকতাম আমরা। শহরে অফিস তাই শহরে আসা। আজ থেকে আর ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করতে হবে না। ছেলেমেয়েরা সল্টলেকে ভালো স্কুল পাবে।

    আমাদের বুড়ো মা-বাবা থাকেন গ্রামে। ওঁদের বয়েস আরও বাড়লে এখানে নিয়ে চলে আসব, এই ভেবে এখানে চলে আসার এক ধরনের স্বস্তি খুঁজেছিলাম। বেদনা বোধ করেছিলাম গ্রাম-প্রতিবেশ থেকে ছিন্ন হয়ে আসার। আমাদের পুরনো বাড়িটার ওপর মায়া ঢের। ওখানেই বড় হয়েছি। আমাদের পাঁচিলঘেরা উঠোন, পুকুরঘাট আর দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, এই সব ছেড়ে এসে বেদনা তো হবেই। 

    গতকাল সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি। এক দুশ্চিন্তায়। শেষ মুহূর্তে এখানে চলে আসার দুর্ভাবনা আমাকে পেয়ে বসেছিল। কেন না আমরা মুসলমান। হিন্দু এলাকায় থাকব। নিরাপত্তাহীন এক ভয় আমাকে গ্রাস করেছিল। কেন না এখন গুজরাতে ভয়াবহ দাঙ্গা চলছে। বীভৎস সব খবর বেরোচ্ছে সংবাদপত্রে। আমার স্ত্রী নাসিমা খবরের কাগজ পড়ে না, তার এ নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা ছিল না। আমি একা একা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি, স্ত্রী পরিবারকে মহিষবাথানে যে নিয়ে যাচ্ছি, ঠিক করছি কি? এখানের পরিস্থিতি যে খারাপ হবে না, তার নিশ্চয়তা কি আছে। গ্রামে মুসলমান এলাকায় থাকি, খানিকটা মনে জোর পাই। মহিষবাথানে তো সবাই হিন্দু, আমরা একমাত্র মুসলমান। 

    জায়গা কেনার সময় এ কথা মাথায় আসেনি। মানুষজন যেভাবে জায়গাজমি কেনে, বাড়ি ঘরদোর করার স্বপ্ন দেখে, আর পাঁচজনের সঙ্গে আমার কোনও তফাত ছিল না। বরং মনে হয়েছিল হিন্দু এলাকায় মুসলমানরাও থাকবে। সহাবস্থানের প্রেম খুঁজেছিলাম। আর সেই প্রেমকে শেষ পর্যন্ত লালন করতে পেরেছিলাম বলে গতরাত দুর্ভাবনায় কাটিয়েও আজ মহিষবাথানে চলে আসতে পেরেছি। 

    ভোর ভোর ম্যাটাডোরে মালপত্তর নিয়ে সকাল নটার মধ্যে চলে এসেছি। ঘরের ভেতর স্তূপীকৃত মালপত্র। গোছগাছ শুরু করা যায়নি। ছেলেমেয়েদের জামা খুলে দিয়েছি। গরমে কষ্ট পাচ্ছিল। মাঝবয়সি প্রতিবেশী হরেনদা এলেন। বোতলে জল নিয়ে এলেন। ছেলেমেয়েদের জল খাওয়ালাম, নিজে খেলাম, নাসিমাকে খাওয়ালাম।  

    হরেনদা চলে গেলেন। এখানে আসার ব্যাপারে হরেনদার উৎসাহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। অমরদার টিউবওয়েলটা খারাপ, হরেনদা তাঁদের টিউবওয়েল ব্যবহার করতে দেবেন। পরে টিউবওয়েলটা মিস্তিরি ডেকে সারিয়ে নিলেই হবে। বাজারদোকান চেনাবেন। গ্যাস কানেকশনের ট্রান্সফার করিয়ে দেবেন। গত সপ্তাহে এসেছিলাম এখানে। পাড়ায় হরেনদা শেতলা পুজো করছেন। নিজে যেচে চাঁদা দিলাম। হরেনদার কথায় খুবই উৎসাহিত হয়েছি।

    হরেনদা আবার এলেন। হরেনদার হাতে একটা বাটি। ‘এই যে আপনাদের জন্য প্রসাদ তুলে রেখেছিলাম।’

    আমি প্রসাদ খেলাম। নাসিমা ইতস্তত করতে করতে নিল। ছেলেমেয়েদের মুখে দিলাম। বাটিটা ফিরিয়ে দিলাম। আর লাগবে না। 

    হরেনদা বললেন, ‘রান্না করবেন তো, না দুপুরে আমাদের কাছে খাবেন?’

    নাসিমা বলল, ‘রান্না করব। সবকিছু এনেছি।’

    ‘বেশ। খাট খাটাবেন, পাখা টাঙাবেন তো? আমার বড়ছেলে সুমিতকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ হরেনদা চলে গেলেন। 

    নাসিমার সঙ্গে চোখাচোখি হল আমার। 

    নাসিমা বলল, ‘এখানে থাকব কী করে?’

    ‘যেমন সবাই আছে।’

    ‘এ তো গ্রাম, আমার সে গ্রামই ভালো ছিল।’

    ‘আচ্ছা, কোনও আজানের শব্দ শুনলাম না তো? কাছাকাছি কি কোনও মসজিদ নেই?’ 

    আমি কোনও উত্তর দিলাম না। 

    ‘কী হল, বলছ না কেন?’

    ‘জানি না।’

    ‘দূরে কোথাও নেই?’

    ‘আছে, হয়তো অনেক দূরে। কেন?’

    ‘না, রোজ আজান শুনি তো। কেমন কেমন লাগছে।’

    ‘কেমন লাগছে?’

    ‘কেমন ফাঁকা ফাঁকা।’

    ‘প্রথম প্রথম ও একটু মনে হবে।’

    ‘এখানে কি সবাই হিন্দু? 

    ‘হ্যাঁ। সবাই ভালো। খুব দ্রুত এসব জায়গা ডেভেলপ হয়ে যাবে। তুমিও এখানে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে...’

    ‘আমার ভালো লাগছে না।’

    ‘কেন?’

    ‘জানি না।’

    দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বসে। গালে হাত রাখে। নীরব হয়ে যায়। 

    আমি তাড়া দিলাম, ‘কী হল, এবার গোছগাছ শুরু করো।’

    নাসিমা চোখ ফেরাল। নাসিমার চোখে জল। 

    হরেনদার স্ত্রী আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ‘ও মন খারাপ করছে বুঝি? কাঁদছে? কান্নার কী হল, আমরা সবাই আছি, তোমরাও থাকবে। প্রথম প্রথম নতুন জায়গায় এলে সব মেয়েদেরই কান্না পায়।’

    নাসিমা হাত দিয়ে চোখের জল মুছে ফেলে। 

    আমি বালতি বের করে জল আনতে ছুটি। 

    হরেনদার স্ত্রী আর নাসিমা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করে। আমাদের আটবছরের অভি আর ছবছরের কুসুম বাইরে বেরিয়ে আসে। পাড়ার সমবয়সি ছেলেমেয়েরা এসেছে। তাদের সঙ্গে মেশে। 

    আমি স্বস্তি পাই। হরেনদার ছেলে সুমিত এসেছে। পাখা লাগাচ্ছে। খাটটাকে খাটিয়ে দেবে। আমি তাকে সাহায্য করছি, নাসিমাও এসে হাত লাগাচ্ছে। নতুন বাড়িতে এসে সংসার সাজানোর ঝামেলা কম নয়। সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। যেখানে যেটা থাকার সেখানে সেটা রাখতে হয়। এ ব্যাপারে আমি আনাড়ি। নাসিমা সেটা ভালো বোঝে। নাসিমাই করে। আমি তাকে সাহায্য করি। এই বৈশাখে গরমও পড়েছে। ঘেমে নেয়ে একশা। বৃষ্টির খুব প্রয়োজন। গত সপ্তাহে কালবৈশাখী হয়েছিল। আমাদের গ্রামের বাড়ির বাদামগাছটার একটা ডাল ভেঙে পড়েছিল উঠোনে। সাংঘাতিক ঝড় আর বৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমে ধুলোর ঝড়। তারপর বৃষ্টি আর ঝড়। ছুটির দিন রবিবার ছিল। ছেলেমেয়েরা তাদের দাদা দাদির কাছে ছিল। আমি আর নাসিমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝড়ের তাণ্ডব দেখছিলাম। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যাচ্ছিলাম। ভিজতেই চাইছিলাম। 

    দুটো ঘর। আর ডাইনিং স্পেস আছে। আমি যে ঘরটাতে থাকব, পড়াশোনা করব, সে ঘরের আসবাব সাজানোর দায় আমারই। র‍্যাক এনেছি, বই এনেছি। টেবিলও এনেছি। একটা ছোটো খাটও আমার ঘরে পাতা গেছে। র‍্যাকে বই সাজাচ্ছিলাম। 

    পেছনে নাসিমা এসে দাঁড়িয়েছে এক কাপ চা নিয়ে। 

    আমি আনন্দে হেসে ফেলি। 

    গৃহিণীপনার সুধায় ভরে আছে নাসিমা। 

    আমি বললাম, ‘এত কিছুর মধ্যে চা?’

    নিঃস্পৃহ গলায় নাসিমা বলল, ‘সকাল থেকে চা খাওনি।’

    ‘তোমার মনে ছিল?’

    ‘বা, মনে থাকবে না কেন?’ কিন্তু মুখে একটুও হাসি নেই নাসিমার। ‘আমার কান্না পাচ্ছে শুধু, আমি কী করে থাকব।’

    ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’

    বিমর্ষ মুখে ফিরে গেল নাসিমা। 

    আমার মনের মধ্যে সেই দুশ্চিন্তা ভয় এসে বসল। ঠিক করলাম কি এখানে এসে? গুজরাতের দাঙ্গার ভয়াবহ খবর সংবাদপত্রে পাচ্ছি। এখানে যে পরিস্থিতি খারাপ হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? আমি প্রেসারের রোগী। এসব চিন্তা এলে প্রেসার বাড়ে। মাথা গরম হয়ে যায়। এসব দুর্ভাবনার কথা নাসিমাকে বলি না। বললে তো নাসিমা এই মুহূর্তে ফিরে যেতে চাইবে। নিজেকে প্রবোধ দিতে থাকি। নিজেকে বোঝাতে থাকি। চায়ের স্বাদের মধ্যে তৃপ্তি খুঁজি। এখানকার পরিস্থিতি এমন নয়। শুধু শুধু দুর্ভাবনা করছি হয়তো। এই যে হরেনদারা কি খারাপ? তাঁরা তো জানেন, আমরা মুসলমান, কই অনাত্মীয় ভাবছেন না তো? আমার এই দুর্ভাবনা আমাকে কি সাম্প্রদায়িক করে তুলছে না? আমি নিজেকে ভোলাতে চাই এই কথা ভেবে। আর এই কথাই যদি আমার সব হত, সর্বস্ব হত, তাহলে এখানে আসতাম না। এসে নাসিমাকে বোঝাতাম না। 

    চায়ের শূন্য কাপটা নিয়ে রান্নাঘরে যাই। 

    নাসিমা ভাত চড়িয়েছে। ছুরি দিয়ে আলুর খোসা ছাড়াচ্ছে। 

    আমি বললাম, ‘অমরদার বাড়িটা পছন্দ নয়?’

    নাসিমা কিছু উত্তর করল না। দেওয়ালের দিকে মুখ করে আছে। ফিরেও তাকাল না আমার দিকে। 

    আমি কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম রান্নাঘরে, নাসিমার পেছনে। রান্নাঘরের জিনিসপত্র তেমনভাবে এখনও সাজাতে পারেনি। বেলা বাড়ছে তাই রান্না চড়িয়ে দিয়েছে। দুদিন অন্তত লাগছে সব গোছগাছ করতে। আমি বললাম, ‘আমাদের জায়গাটা দেখেছ? ঠিক এর পাশেই। গাছপালাও আছে। নারকেলগাছটা কাটব না, বুঝলে? ছেলেমেয়েরা নারকেল ভালোবাসে।’

    নাসিমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ডাইনিং স্পেসে দক্ষিণদিকের দরজার কাছে দাঁড়ায়। আমাদের জায়গাটার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে। 

    ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছিল দুপুরবেলা। নাসিমা ঘুমোয়নি। সারাক্ষণ গোছগাছ করেছে। ছেলেমেয়েরা তো ঘুমোবেই। ভোর থেকে উঠেছিল। কম ধকল কি গেছে। আমিও না ঘুমিয়ে আমার বই গোছগাছ করেছি। দুটো ঘরে সিলিং ফ্যান টাঙানো হয়েছিল বলে টেকা গেছে। গরমও পড়েছে বিস্তর। 

    বিকেল হতে ছেলেমেয়েদের বিছানা থেকে তোলে নাসিমা। ওদের হরলিকস দেয়। আমাকে চা দেয়। 

    ছেলে অভি বলল, ‘মা, নানিকে ফোন করব।’

    নাসিমা আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘এখানে টেলিফোন বুথ নেই?’

    আমি বললাম, ‘সামনেই মুদির দোকানটাতেই তো ফোন আছে। ওখানে পয়সা দিয়ে ফোন করতে দেয়।’

    ‘তুমি ঠিক জানো?’

    ‘জানি।’

    অভি বলল, ‘দোকানটা তো সামনে। চল কুসুম, নানিকে ফোন করে আসি। নানিকে বলব আমরা নতুন জায়গায় এসেছি।’

    মেয়ে কুসুমও উৎসাহিত হয়ে উঠল। শিশুরা সবচেয়ে তাড়াতাড়ি নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। 

    নাসিমা অভিকে খুচরো পয়সা দিল। ‘মা চিন্তা করছে, ঠিকঠাক এসেছি কি না। তুমিও তো গ্রামের বাড়িতে একটা খবর দিতে পারতে। তোমার মা-বাবা চিন্তা করছেন। পঞ্চায়েত অফিসে ফোন করলে কেউ খবর দিয়ে আসবে না?’ 

    ‘এখন পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। পৌনে ছটা বাজে। কাল অফিস থেকে ফোন করে দেব।’

    ‘তুমি কাল অফিসে যাবে? আমাকে একা ফেলে রেখে? আরও দু-একদিন অফিস যেও না।’

    ‘সে হয় না, অফিসে কাল যেতেই হবে।’

    অভি কুসুম ফোন করতে চলে গেছে।

    ‘ও মা, অভি কুসুম যে একা একাই চলে গেল। আমার কেমন ভয় করছে। ওরা যদি হারিয়ে যায়?’

    ‘হারিয়ে যাবে কেন? এই তো কাছে।’

    ‘তুমি যাও লক্ষ্মীটি। একটা ফিনাইল কিনে আনবে।’ আমাকে তাড়া লাগাল নাসিমা। নাসিমার চোখে আতঙ্ক আর ভয়। 

    পেছন পেছন আমিও গেলাম। ততক্ষণে ওরা ফোনে কথা বলছে ওদের নানির সঙ্গে। দোকানদার ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। নতুন ছেলেমেয়ে দেখেছে। নানি বলে সম্বোধন করছে বলে দোকানদার চমকেছেন। আমি মনে মনে হাসি। 

    ওদের ফোন করা হয়ে গেছে। 

    দোকানদার বললেন, ‘কি রে তোরা মুসলমান নাকি?’

    অভি ঘাড় কাত করল। তারপর প্রশ্ন করল, ‘কেন?’

    দোকানদার বললেন, ‘নতুন বাড়িটায় এসেছিস, আজ সকালে? 

    ওরা সমস্বরে বলল, ‘হ্যাঁ।’

    দোকানদার ফিরে তাকাতেই আমার সঙ্গে চোখাচোখি। দোকানদার বললেন, ‘ও, আপনার ছেলেমেয়ে বুঝি? আজই তো নতুন এলেন?’

    আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ 

    ‘আপনার নাম কী?’

    আমি নাম বললাম। 

    দোকানদার বুঝলেন আমার ছেলেমেয়েরাই শুধু মুসলমান নয়, আমিও মুসলমান। ততক্ষণে ছেলেমেয়েরা ফিরে গেছে। বাড়ির কাছাকাছিই দোকানটা। 

    দোকানদার বললেন, ‘আপনাকে দেখে কিন্তু মুসলমান মনে হয় না। 

    আমার খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করল, ‘কী দেখলে মুসলমান মনে করতেন?’ কিন্তু বললাম না। বললাম, ‘ফিনাইল আছে?’

    ‘আছে। সবকিছুই আমার দোকানে পাবেন। এখান থেকেই সংসারের মালপত্র কিনতে পারেন। দাম বেশি নিই না।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে। পাড়ায় আছি পাড়ার দোকান থেকেই কিনব।’ 

    ফিনাইল নিয়ে ফিরলাম বাড়িতে। বাড়িতে ফিরতে দেখলাম নাসিমা ব্যস্ত। পাড়ার কমবয়েসি তিনজন বউ এসেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলছে। আলাপ করতে এসেছেন তাঁরা। আমার ভালো লাগল। নাসিমা দ্রুত এই পরিবেশ প্রতিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিক চাইছিলাম। এখন চোখেমুখে বিমর্ষ ভাবটা কম। প্রতিবেশীসুলভ ভঙ্গিতে ওঁদের সঙ্গে কথা বলছে। নাসিমা ঠিকঠাক থাকতে পারলে আমার শান্তি। 

    সন্ধ্যা এল। তারপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামল। ছেলেমেয়েদের তাড়াতাড়ি খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছে নাসিমা। টিভিটা এখনও বের করা হয়নি, কার্টুনবন্দি হয়ে আছে। আমারও খবর শোনা হল না। নাসিমাও আজ কোনও সিরিয়াল দেখেনি। আমি পাশের ঘরে পড়াশোনা করছিলাম। নাসিমা গোছগাছ করেই চলেছে।

    সত্যি মেয়েটাকে বিপদে ফেলেছি। বেচারী যে পরিবেশে অভ্যস্ত, তা থেকে ছিন্ন করেছি। প্রথম প্রথম তো একটু অসুবিধে হবেই। এখন নাসিমার তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, এখানে যে তাকে থাকতে হবে, মেনে নিয়েছে। কিছু কিছু অসুবিধের সম্মুখীন হচ্ছে। কিছু কিছু খটকার সামনে পড়ছে। সে পড়ুক। এখন ইচ্ছেমতো গোছগাছ করছে, ঘর সাজাচ্ছে। বেশ খুঁতখুঁতে, তাই সময় লাগে বেশি। আজ বোধহয় অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করবে। নাসিমাকে নিরস্ত করা যাবে না। নাসিমার এমনই স্বভাব। আমি বাধা দিই না। ও কাজ করতে থাকে। আর আমি লেখাপড়া করতে থাকি। আমার নজরে থাকে নাসিমার গতিবিধি। চলাফেরার চেনা ধরন ঠিকঠাক আছে কি না বুঝি। কোথাও ছন্দপতন হলে আগাম ধরতে পারি। ঠিকই আছে। ঠিকই চলছে। এখানে বসবাস করা যাবে। সামনের মাস থেকে বাড়ি করব। লেবার কনট্রাক্‌ট দেব। চোখের সামনে বাড়ি উঠছে। কোন্‌টা কীরকম হবে, নাসিমা ইচ্ছেমতো বানিয়ে নিতে পারবে। অফিসের লোনও স্যাংশান হয়ে গেছে। নাসিমারও স্বপ্ন নতুন একটা নিজস্ব বাড়ি। 

    গরমও পড়েছে বেশ। বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। আকাশে মেঘ নেই। বাতাসও নেই। পাড়াটা এমনিতে শান্ত। বাড়ি ঘরদোর কম। লোকজনও কম। ধীরে ধীরে সবার সঙ্গে আলাপ পরিচয় হবে। অফিসের বাস ধরতে গেলে খানিকটা হাঁটতে হবে। সে হাঁটব। হাঁটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। বাজার চিনতে হবে। গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে। 

    ‘শোনো।’ পাশের ঘর থেকে নাসিমার আতঙ্কিত স্বর ভেসে এল। 

    ধীরেসুস্থেই ওঘরে নাসিমার কাছে গেলাম। দেখলাম নাসিমা পুব দেওয়ালের দেওয়াল আলমারির তাকের কাছে তাকিয়ে আছে। স্থির অনড়। চোখের পলক পড়ছে না। কী দেখছে? দেখলাম একটি ফ্রেমে বাঁধানো কালীঠাকুরের ছবি। ফ্রেমের ওপর ফুলের মালা পরানো ছিল। ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে। 

    নাসিমা বলল, ‘তুমি একটা কিছু করো।’

    ‘কী করব?’

    ‘আমি এটাকে নিয়ে কী করব?’

    ‘কী করবে মানে, যেমন আছে তেমন থাকবে। অমরদাদের বাড়ি, অমরদারা রেখে গেছেন। ওটা ওভাবেই থাক।’

    ‘তাহলে আমি থাকতে পারব না, আমার কেমন ভয় করছে।’

    ‘ভয় কী, ওটা তো একটা ছবি।’

    ‘না, ওটা ওঁদের ঠাকুর।’

    ‘বেশ তো, তোমার অসুবিধে হবে কেন?’

    ‘আমার অসুবিধে হবে না? আমি কি ঠাকুরদেবতা মানি? আমাদের ধর্মের কি?’

    ‘বেশ, তাহলে তুমি কী করতে চাও?’

    ‘তুমি থাকো এ বাড়িতে, আমি থাকব না।’

    ‘পাগলামি কোরো না। কী করলে তোমার অসুবিধে হবে না তাই করো না। ওটাকে সরিয়ে রাখতে চাও, আমার ঘরেই না হয় রাখো।’

    নাসিমা এক মুহূর্ত ভাবল। তারপর বলল, ‘তোমার ঘরে খাটের তলায় রেখে এসো।’

    ‘ঠিক আছে দাও, আমি রেখে আসছি।’

    ‘তুমি নিয়ে যাও। আমি ছোঁব না।’

    ‘ঠিক আছে।’ ছবিটাকে পাশের ঘরে নিয়ে এসে খাটের তলায় রাখি। অনুতাপ হল। ঠিক করলাম কি? ওঁদের পূজার দেবী, তাঁকে এমন অনাদরে রাখা কি ঠিক হল? নাসিমার দিক থেকে অসুবিধে অমরদারা নিশ্চয় বুঝবেন। নিশ্চয় ক্ষমা করবেন। নাসিমাকে যে সামলানো গেছে, তাতে আমার স্বস্তি। আমরা সবাই সহজ সমাধান খুঁজি। 

    গভীর রাতে নাসিমা আমাকে ঠেলা মেরে ঘুম থেকে তুলল। 

    আমি বললাম, ‘কী হল?’

    ‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

    ‘কেন?’

    ‘জানি না।’

    ‘কী কষ্ট হচ্ছে?’

    ‘নিশ্বাস নিতে পারছি না।’

    ‘ভারী কিছু চাগিয়েছিলে?’

    ‘না। একটুও ঘুমোইনি।’

    ‘একটুও ঘুমোওনি?’

    ‘‘না।’

    ‘নতুন জায়গায় এসেছ বলে ঘুম আসছে না, আর ঘুমোতে পারছ না বলে কষ্ট হচ্ছে দেখো।’

    ‘কষ্ট হলে কেউ ঘুমোতে পারে।’

    ‘কী কষ্ট?’

    ‘দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

    ‘এরকম আগে কখনও হয়েছে?’

    ‘না।’

    ‘বুকে পেন হচ্ছে?’

    ‘কালকেই ভালো একটা ডাক্তার দেখাতে হবে।’

    নাসিমা চুপ করে পড়ে থাকে। কোনও কথা বলে না। আমিও চুপ করে থাকি। যাতে নাসিমা ঘুমিয়ে পড়তে পারে। মানসিক টেনশনে হতে পারে। আমি চুপ করে পড়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি, জানি না। সকালে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি নাসিমা চোখ খুলে শুয়ে আছে। 

    আমি বললাম, ‘একটু ঘুমিয়েছিলে?’

    ‘কি জানি।’

    ‘ঘুমিয়েছিলে কিনা তাও জানতে পারোনি?’

    ‘বুঝতে পারিনি। হয়তো একটু ঘুম হয়েছে।’

    ‘এখন কেমন লাগছে?’

    ‘কেমন হচ্ছে যেন।’

    ‘কী হচ্ছে?’

    ‘সে তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না।’

    ‘ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করি?’

    ‘দেখি, এমনিতে সেরে যাবে হয়তো।’ কথাটা বলে নাসিমা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। 

    যথারীতি নাসিমা বিছানা ছেড়ে ওঠে। সংসারের কাজকর্ম করে। ছেলেমেয়েদের সেবাযত্ন করে। আমি হরেনদার সঙ্গে বাজারে যাই। আমি নাসিমাকে সচল দেখে আশ্বস্ত হই। শারীরিক অসুবিধেটা হয়তো সাময়িক। বাজার থেকে তরকারি কিনি। মাছ কিনি। ছোটো বাজার। কিন্তু সবকিছু টাটকা পাওয়া যায়। পাড়ার কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হল। 

    বাড়ি ফিরে দেখলাম নাসিমা রান্নাঘরে। বাজার রাখতে রাখতে বললাম, ‘এখন কেমন বোধ করছ?’

    নাসিমা কিছু বলল না। আমার দিকে তাকাল না। বুঝে নিলাম ভালো নেই। 

    বললাম, ‘ভাত চড়িয়েছ যে?’

    ‘তোমাকে যে অফিস যেতেই হবে। না হলে অসুবিধে হবে।’

    ‘তোমার শরীর খারাপ, আমি অফিস যাই কী করে?’

    ‘না, তুমি অফিস যাও।’

    ‘তাহলে বলছ আমি অফিস যাব! তোমার শরীর ঠিক হয়ে যাবে?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘তোমার কষ্ট হচ্ছে, অথচ–’ 

    নাসিমা চা দিল। বেশি কথা বলছে না। বুঝলাম শরীর ঠিক নেই। নাসিমা সাহস দিচ্ছে যখন অফিস যাব। অফিসে যাওয়ার খুব প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে এসেছি। 

    বাজারে গিয়ে খবরের কাগজ কিনে এনেছিলাম। চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ি। আবার দাঙ্গার খবর। দাঙ্গার খবর পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। 

    কয়েক বালতি জল তুলে দিই। নাসিমার শরীর খারাপ। পারবে না। নাসিমা রান্নার কাজ করছে। অন্য আর কিছু কাজ করছে না। ছেলেমেয়েদের খাতায় খাতায় নাসিমা অঙ্ক দিয়েছে, তারা বিছানায় বসে অঙ্ক কষছে। সল্টলেকের এইচ বি-তে একটা স্কুল আছে, সেখানে ওদের ভরতি করতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা আছে। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে এখন। এর মধ্যেই ভরতি করিয়ে নিতে হবে। ভাবনা এখন নাসিমাকে নিয়ে। নাসিমার শরীর খারাপ হয়েছে। 

    সন্ধে সাতটার মধ্যে অফিস থেকে ফিরি। 

    নাসিমা টিভিটা বের করেছে। ওর একটা প্রিয় সিরিয়াল দেখছিল। আমি হাতমুখ ধুই। পাশের ঘরে গিয়ে বসি। দেখলাম নাসিমা ভালো আছে। চোখেমুখে আগের চঞ্চলতা ফুটে ওঠে। আগের তৎপরতায় দরজা খুলে দিয়েছে। তেমনি মুগ্ধতায় তার প্রিয় সিরিয়াল দেখছে। কালকের রাতের মতো নিষ্প্রভ ম্লান লাগছে না। একি ম্যাজিক? কেমন করে ভালো হল শরীর নাসিমার? এখনই শুধোব না। যাক, বাঁচা গেছে। চমৎকার লাগছে আমার নিজেরই। অফিসে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন বেশ মনের আরাম পাচ্ছি। নাসিমা সিরিয়াল দেখছে। দ্রুত খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। 

    একটু পরে নাসিমা চা দিতে এল। চলে যাবার সময় আমি হাত টেনে ধরলাম। বললাম, ‘চলে যাচ্ছ যে।’

    ‘কেন? কী দরকার?’

    ‘শরীর ঠিক আছে?’

    ‘একদম ঠিক।’

    ‘কখন থেকে ভালো হল?’   

    ‘এই সন্ধ্যে থেকে। তুমি চলে যাবার পর তো বিছানা নিয়েছিলাম।’

    ‘কী হয়েছিল কী?’

    ‘সে বলব’খন।’

    ‘গোপন ব্যাপার?’

    ‘পরে সব বলছি, ডাল চড়িয়ে এসেছি।’ নাসিমা হাত ছাড়িয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।

    একটু পরে এসে বলল সব ব্যাপারস্যাপার। নাসিমা যে গতকাল রাতে কালীঠাকুরকে তার আসন থেকে সরিয়ে আমার খাটের তলায় চালান করেছিল, নাসিমার বিশ্বাস, অন্যের ঠাকুর-দেবতাকে অনাদর অসম্মান করার জন্য তার পাপ হয়, আর সেই পাপের ফল, অসুস্থ হয়ে পড়া। দম বন্ধ হয়ে আসছিল, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আর অসুস্থ থাকতে থাকতে বিকেলবেলা একথাটা তার মনে হয়। তখন সে কালীঠাকুরকে তাঁর আসনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়। নিজে ঝেড়েমুছে যত্ন করে যথাস্থানে রাখে। তারপর থেকে সে সুস্থ হতে শুরু করে। এখন তার বসবাসের ঘরেই দেবী আছেন। আমি বুঝি, সমস্ত ব্যাপারটাই মানসিক ব্যাপার। নাসিমা ধর্ম মানে বলে অন্য ধর্মের বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান করা মানতে পারেনি, তাই তার মানসিক কষ্ট হয়েছিল। এখন দেবীকে যত্নের সঙ্গে রেখেছে। 

    একটু আগে নাসিমা আমার কাছ থেকে দেশলাই চেয়ে নিয়ে গেল। তার রান্নাঘরের দেশলাইটা শেষ হয়ে গেছে। অথচ নাসিমা রান্নাঘরে গেল না। তাহলে নাসিমা দেশলাই নিয়ে কী করছে? পাশের ঘরে গেলাম। দেখলাম নাসিমা ধূপদানিতে ধূপ জ্বালিয়েছে। আর ধূপদানিটা কালীঠাকুরের পটের পাশে রেখেছে। সুগন্ধি ধূপের ধোঁয়ায় সারাঘর ম ম করে উঠছে। আমি শান্তির নিশ্বাস ফেললাম।● 

    রচনাকাল :  ২০০২  


    "নির্বাচিত গল্পপাঠ" থেকে


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ৮৮০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ভোর - Swati Chakraborty
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • d | 59.203.248.23 (*) | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০২82296
  • কেমন ইস্তাহার টাইপের গল্প।
  • Du | 57.184.47.34 (*) | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৪82297
  • না। আমি এরকম দেখেছি।
  • শঙ্খ | 52.110.175.249 (*) | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৩১82298
  • বাহ
  • robu | 213.132.214.87 (*) | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৩২82300
  • *ছাপা?
  • রোবু | 213.132.214.87 (*) | ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৩২82299
  • এটা কি আগে কোথাও চাপা হয়েছিল? "অস্থির সময়ের গল্প" বলে কোনো সংকলনে? এন বি এ?
  • অভিষেক | 127.194.199.82 (*) | ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৩৭82301
  • ভারি সুন্দর প্লট। ওয়ালিউল্লার লেখা - তুলসীগাছের গল্পটা মনে পড়ে গ্যালো !
  • prativa | 37.5.136.193 (*) | ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০৫:৫১82302
  • এই ধরণের গল্প এখন দরকার খুব।
  • শেসে | 59.203.248.40 (*) | ০৪ মে ২০১৭ ১২:০৭82303
  • এরকম গল্পের গায়ে ইস্তেহারের গন্ধ থাকলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায় |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন