এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নয়ন'সোনাটা, কেন....

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৮০৭ বার পঠিত
  • এই রাগটা আমার প্রিয়, অনেকেই জানে। যেভাবেই গাওয়া বাজানো হোক না, ডুব দিয়ে শুনি। তা বড়ে ঘুলাম যখন "সঁইয়া বোলো, তনিক মোসে রহিও না যায়" বলে আবার সঁইয়া'তে নেমে আসেন। অথবা ভীমসেন দু'তিনবার ঘনশ্যাম, ঘনশ্যাম বলতে বলতে গেয়ে ওঠেন "যমুনাকিনারে মোরা গাঁও" ... বুঝতে পারি গায়ে আমার পুলক লাগে আসলে কেমন অনুভূতি। বেগম আখতার তো রয়েছেনই, "পিয়া ভোলো অভিমান।" রয়েছেন নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা বিলায়ত তাঁদের বড়ো করে বাজানো রাগ পিলু নিয়ে, রবিশংকরের ছোটো মিশ্র পিলু। আসলে পিলু'ও ভৈরবির মতো একটা মনভোলানোর সুর। ঘর ভোলানোর সুর...
    ----------------------------------
    অবশ্য রাগ নয়, রাগিণী বলাটাই উচিত। রাগিণী বলেই মদির আশ্লেষ এতো সর্বব্যপী। বসন্তসন্ধ্যায় রুমালে ভেজানো জুঁইমালতীর মতো চোখেমুখে তার মোহিনীআলেপ। এই কি জাদু, সুরের, না সুরসুন্দরীর অলক আঘ্রাণের মদালস নেশায় বুঁদ হয়ে জেগে থাকা মধ্যরাতের গ্র্যান্ডফাদার ঘড়ি। যাই হোক, পিলুর নেশা কাটেনা আমার। একেকদিন সন্ধেবেলা নেশা লাগলে শুধু রাগ পিলুর অসংখ্য বিচিত্র গান নিয়ে সময় কেটে যায়। তার মধ্যে নিধুবাবু থেকে নজরুল, প্রবোধ দে থেকে পঞ্চম, বরকত আলি থেকে জটিলেশ্বর, সবাই মিলেমিশে থাকেন। পুনরাবৃত্তির ক্লান্তি নেই, কিস্যু না হয়ে ওঠার অশান্তি নেই। সুহাগন হো, তো য়্যসাহি হো।
    -------------------------------------------------
    ছেলেটার নামটা ছিলো জমকালো, বেশ আন ইউজ্যুয়াল। ধরা যাক, হিমালয়নির্ঝর। টিনপ্লেট কলোনিতে থাকতো। আমি তখন লেডি ইন্দ্রসিং ইশকুলে, কখ্শা আঠ। নতুন এসে ভর্তি হলো। বেশ লম্বা চওড়া চেহারা। নিশ্চিন্তে সুদর্শন বলা যায়। ফুটবল মাঠে বেশ দাপট, কিন্তু ক্লাসঘরে একেবারে উল্টো। শেষ বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকে। প্রথমদিকে মাস্টারমশাইরা তাকে কিছু প্রশ্নটশ্ন করতেন, বকুনিও দিতেন অকাতরে। কিন্তু সে পড়াশোনায় আর ভালো ছেলে হতে পারেনি। হিমু'র মধ্যে একটা সারল্য ছিলো। মাঝেমধ্যেই এদিকওদিক মারপিট করতো, খবর পাওয়া যেতো। কিন্তু টিনপ্লেট, তার কোম্পানি, মনিফিট বস্তির ছেলেদের সেটা ছিলো এক ধরনের নিত্য বিনোদন। তাই সে সব কোনও খবর হয়ে উঠতো না। আমাদের গায়ে পড়াশোনায় 'ভালো' ছেলে বলে কিছু মলিন ছাইয়ের দাগ লেগে ছিলো চিরকাল। সেটা পেরিয়ে হিমু আর আমাদের 'বন্ধু' হয়ে ওঠেনি কখনও । তার পর আমি ইশকুল বদলে কুলীন ব্র্যান্ড আর-ডি-টাটা'য় চলে যাই । হিমুর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ বিরল হয়ে যায়। শুধু বছরে এক আধবার নামদা বস্তি কালীবাড়িতে বাসন্তীপুজো দেখতে গেলে টিনপ্লেটের পুরোনো সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতো। হিমু'র সঙ্গেও হতো। তখন কিন্তু সে আমাকে আর 'তুই' করে কথা বলতো না। একটু বিষণ্ণ, বিরত, নির্লিপ্তি দেখতে পেতুম তার ব্যবহারে। তখন আমরা কলেজে উঠে গেছি, সাল'টা ঠিক মনে নেই।
    ---------------------------------
    কিশোরকুমার ও পঞ্চমের জোড়ি বাংলাগানে একটা নতুন চমক এনে দেয়, তখন আমরা নেহাৎ বালক। তার আগে ছিলো আমার জন্মের আগে লুকোচুরি, সিং নেই তবু নাম তার। কিন্তু "একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে" একটা অন্য পর্যায়। কম্পোজিশন, প্রিলিউড, ইন্টারলিউড, ইয়ডলিং ইত্যাদি নিয়ে একটা পুরো জাড্যাপহ ব্যাপার। আমার মামাশ্রী চিরকালই গানখ্যাপা। হঠাৎ একদিন বিকেলবেলা হাতে একটা রেকর্ড নিয়ে এসে, " মেজদি, গানটা শোন একবার, ওফ, কী গান... তোরা কী যেন বলিস ? হ্যাঁ, একেবারে নবযুগ এসে রে গেলো বাংলাগানে ।" আমরা ফিয়েস্টা প্লেয়ারে চড়িয়ে দশবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুনি স্প্যানিশের কর্ডে ইয়ডলিঙের ম্যাজিক আর সুরেলা কিশোরের দৈবী ওস্তাদি।

    তার পর কিশোর নিয়মিত বাংলাগান গেয়েছেন, জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দু থেকে নামতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু বেশ কিছুদিন পরে আরেকটি গান এসে তাঁর গাওয়া বাংলা আধুনিক গানের অন্য একটা শিখর ছুঁয়ে ফেললো। যতোদূর মনে পড়ছে তাঁর নিজের কম্পোজিশন, মুকুল দত্তের লেখা গান। সামান্য সেতার, তারপর বাঁশির ফ্রেমে বাঁধা খুব সরল ফ্রেজ মাপা সুরের চড়াই উৎরাই। সম্পদ বলতে শুধু কিশোরের অনন্য কণ্ঠ আর মোহন পেশকারি। হ্যাঁ, সুরটি ছিলো রাগ পিলু আর গানটি " নয়নসরসী কেন ভরেছে জলে"। সালটা উনিশ শো তিয়াত্তর।
    -------------------------------------------------------

    আরো বহুদিন কেটে গেছে, আমি তখন চাকুরিজীবী। টিনপ্লেট ইভনিং ক্লাবে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের অধিবেশন চলছিলো। সেখানে আমাদের অতুলপ্রসাদের গান দিয়ে বাঁধা একটা অনুষ্ঠান করার কথা। তা সভার প্রথমদিকে তখন স্টেজে চলছিলো পন্ডিতদের বাক্যবিমোহন প্রবচনসমূহ। আমরা গ্রীনরুমে যন্ত্রপাতি বাঁধাবাঁধি করছি। মা বললেন হারমোনিয়মের সঙ্গে তবলাটা বেঁধে নে, আমি ততোক্ষণ বক্তৃতা শুনে আসছি। একটা টেবিলের উপর আমি হারমোনিয়মে সুর টিপছি আর আমাদের তবলাবাদক বন্ধু হাতুড়ি ও চাঁটি নিয়ে নিজের যন্ত্রে তরিবত করে টুং টাং করছেন। ঠিক সেরকম একটা সময়ে হঠাৎ দেখি হিমু এসে উপস্থিত। চুল উস্কোখুস্কো, চেহারা নাসাজ, মলিন পোষাক, হাবভাব অস্থির। এসেই আমাকে বললো, তোমরা আজকে গান গাইবে? আমি বলি, গাইবো তো। তখন বলে কি, আমাকে একটু গাইতে দেবে? সে কী রে? তুই কী গাইবি? দেখছিস না এখানে কতো রিহার্সাল দিয়ে প্রোগ্রাম করা হচ্ছে। কতোলোক শুনছে... তুই সেখানে কীকরে গাইবি ? হিমু করুণ মিনতি করে বলে, শোনোনা, শুধু একটা গানই গাইবো, ব্যস। তুমি শুধু হারমোনিয়মটা একটু বাজিয়ে দেবে। তোকে ক্লাবের লোকেরা গাইতে দেবে? দেবেনা তো, তাইতো তোমাকে বলছি। তুমি একবার বললেই দেবে। তোমাদের কতো পাওয়ার। আমি ভাবি হিমুর হলোটা কী? এতো ভারি মুশকিল। তবু ওর স্বর, চাউনি'র মধ্যে এমন একটা করুণ আর্তি ছিলো আমি রূঢ় হতে পারছিলুম না। প্রশ্ন করি, কী গাইবি? হিমু বলে, "নয়নসরসী কেন ভরেছে জলে।" বলি, ওরে, ঐ গানটা আজ তো চলবে না। কেন, তুমি একটু বলে দিলেই চলবে। তুমি একবার মন্টুদা'কে বলো, ব্যস কাম বন জায়গা। ততোক্ষণে দেখি আমার তবলিয়া বন্ধু গায়ব, সিনেই নেই। এড়াবার জন্য বলি, তোর স্কেলটা কী? হিমু বলে, এই গানটা আমি 'এ' থেকে 'জেড' সব স্কেলে গাইতে পারি। শুনবে? বলেই একের পর আরেক স্কেলে গানটির প্রথম লাইনটি গাইতে থাকে। খুব যে বেসুরে গাইছিলো, তা নয়। একটু পালিশ করে নিলে গেয়েও দিতে পারবে হয়তো। তবে আজ কী করে হবে? হিমুর কোনও খেয়াল নেই। সে আরো গলা চড়িয়ে উপরের স্কেলে চলে যেতে থাকে। আমাকে কনভিন্স করবেই আজ সে। হঠাৎ আমাদের আরেক পুরোনো ইশকুলের বন্ধু প্রভাত হিমুর উচ্চগ্রামে গান শুনে গ্রীনরুমে ঢুকে পড়ে। প্রভাত তখন ক্লাবের ছোটোখাটো মুরুব্বি হয়ে গেছে। সে এসে হিমুর হাত'টা ধরে, এই তুই এখানে কী করছিস? বাইরে চ, বাইরে চ। হিমু'ও ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিলো। তুই কিচ্ছু বলবি না। আমি শিবাজির সঙ্গে কথা বলছি। প্রভাত কিছু না বলে বেরিয়ে যায়। তখন হিমু বলে, দেখলে, এরা কেউ আমাকে গাইতে দেবেনা। আমাকে দেখলেই দুদ্দুর করে। তুমি বলো, আমি গাইতে পারছি কি না। আরে তুই তো ঠিকই গাইছিস, কিন্তু আজকে কীকরে তোর গান হবে? বললাম তো, তুমি বললেই হবে। ইতোমধ্যে দেখি প্রভাত আরো জনা চারেক ছেলে'কে নিয়ে ফিরে এলো। ওদের দেখেই হিমু পলকে বিধ্বস্ত, বললো, দেখলে? ওরা আজকেও আমাকে গাইতে দেবেনা। ওরা পাঁচজন নীরবে, শীতলচোখে এসে হিমু'কে গ্রেফতার করে বাইরে নিয়ে চলে গেলো। কোথায় গেলো, কে জানে? আমার গানের মেজাজটা একেবারে নিভে যায়। হিমু ভালো নেই, একেবারে ভালো নেই।
    -----------------------------------------------
    অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবার কর্মকর্তারা এসে অনেক ধন্যবাদ জানালেন, আপ্যায়ন করলেন অফিসঘরে বসে। তখন প্রভাত এসে একান্তে বলে, মাইরি দারুণ প্রোগ্রাম হলো। আমি বলি, হ্যাঁরে হিমুর কেসটা কী? আর বলিস না, ওর বাবা রিটায়ার করে গেছে। সার্ভিসটা ওকেই দেবার ছিলো, কিন্তু দেখলি তো কেমন ফিউজ উড়ে গেছে। শেষে ওর ভাই সার্ভিসটা পেলো। তা ও করে কী এখন? কিস্যু করেনা, ঐ গান গাইবে, "নয়নসরসী..." হাঃ হাঃ হাঃ। তার পর কানে কানে বলে, আরে তপনদা'কে তো চিনিস, ওর বোন তাপসী'র পিছনে ঘুরে বেড়াতো। একদিন তপন'দা দিয়েছে হত্তড় সে কেলিয়ে, তবু ছাড়বে না। আজ তাপসী গান শুনতে এসেছে, ব্যস হিমু হাজির। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড, তোকে খুব জ্বালাচ্ছিলো। কী করবি বল, পুরোনো বন্ধু....। আমি হিমু'র ব্যাকুলতাটা বুঝতে পারি একটু একটু, সেই মাত্র।
    ---------------------------------------------
    তার পর আরেকটা দীর্ঘ বিরতি।
    বিয়ের পর একবার গিয়েছি ইভনিং ক্লাবের পুজো দেখতে। সঙ্গিনী শুধান, এই সেই ইভনিং ক্লাব, সেই নয়নসরসী কেন...গল্পটা বলেছিলুম তাঁকে কখনও। হঠাৎ মনে পড়ে যায় আমারও। পুরোনো বন্ধু'দের খুঁজি। অপু'কে পেয়ে যাই। একথা সেকথা'র পর জিগ্যেস করি, হ্যাঁরে, হিমুর খবর কিছু জানিস। অপু একটু থেমে বলে, তুই শুনিসনি? না'রে, আমি তো বাইরে ছিলুম বহুদিন... ! অপু জানায়, ও'তো পাগল হয়ে গিয়েছিলো।
    সে কী রে? তবে একটু খ্যাপামি করতে দেখেছিলুম ওকে একবার। অপু'কে গল্পটা শোনাই। তখন শুনি, ঘটনাটা তার কিছুদিন পরেই ঘটেছিলো। ইতোমধ্যে হিমু মোটামুটি পাগল বলে পরিচিত হয়ে গেছে। তপনদা'দের বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়াতো। একদিন রাস্তায় তাপসী'র হাত ধরে ফেলে। চিৎকার শুনে জড়ো হওয়া আশেপাশের লোকজন হিমু'কে ধরে বেধড়ক পেটায়। তার পর হিমু উধাও হয়ে যায় । কেউ খোঁজও করেনি, কোথাও গেলো। খালি ওর মা একা একা কাঁদতেন। কয়েকমাস পরে শোনা যায় ওকে নাকি পাওয়া আছে। খুব অসুস্থ, টিনপ্লেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফ্যালসিপেরাম জ্বর, শেষ অবস্থা। বাঁচেনি।
    -----------------------------------------
    নাহ, অবাক হলুম না। এরকমই হবার ছিলো বোধ হয়। এতো ঘাঁটা প্লটের গল্প তো সিনেমাপত্রিকাতেও ছাপা হয়না এখন। চিৎপুরের পক্ষেও নিতান্ত ক্লিশে। তবু ঘটে, ঘটে যায় নিঃশব্দে আমাদের এপার, ওপার ,বেড়াপারের পৃথিবীতে। একটা শুকনো পাতাও ঝরে পড়েনা এসব মৃত্যুতে। হয়তো কোনও মৃত্যুতেও পড়েনা, তবু সকল মরণ নয় সমান। গানের মতো মৃত্যুও নিজেকে ক্রমশঃ নির্মাণ করে। গানের মতো-ই যাপনের পথে একদিন আসে ক্রেসেন্ডো। তার পর স্তব্ধতা, নিঃশব্দ মূহুর্ত আর রাতের রেলগাড়ির আলোয় ছায়া ছায়া চিনে নেওয়া অনন্ত ট্র্যাকপাতা অন্য চরাচর।
    -------------------------------------------------------------

    কারো নয়নসরসী জলে ভরেছিলো কি না জানা নেই। তবে ভাবতে ভালোবাসি হিমু হয়তো কোথাও চুপচাপ বসে বাংলায় রাগ পিলু শুনছে। কিশোরপাগলাও তো শুনেছি ওখানেই আছেন এখন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৮০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nina | 83.193.157.237 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২১68811
  • চুপ্কথায় জানাই রাশি রাশি মুগ্ধতা
    আর হিমুকে -- শান্তি!
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২২68812
  • এতদিনে পিলু এল। অপেক্ষায় ছিলাম ঃ)
  • কল্লোল | 111.63.213.211 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৬68813
  • নয়ন সরসী কেন
  • কল্লোল | 111.63.213.211 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭68814
  • পিলু।


    দরবারী কানাডা।
  • শিবাংশু | 127.197.242.21 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৫:১০68815
  • কল্লোল'দা,

    আজ সময় পেলুম না। একটু বসে দেখতে হবে। কোন স্বরটা থাকছে, কোনটা থাকছে না। অবশ্য পিলু তো শুদ্ধ বলে কিছু হয়না। কাফি, জংলা, সিন্ধুড়া, বারোঁয়া, আরো নানা মিশেল ঘটে যায়। তবে ঐ গান্ধার আর নিষাদের কম্বিফ্রেজগুলো কোথায় কোথায় গোলমাল করছে, জানা দরকার। :-)
  • শিবাংশু | 127.201.156.248 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:২৫68809
  • এক বন্ধু ভীমসেনের "নদীয়াঁ কিনারে মোরা গাঁও" এর লিং'টা চেয়েছেন। এখানেই রেখে দিলুম।

  • ranjan roy | 160.129.102.2 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৪২68810
  • আমি নির্বাক। হিমুকে যেন দেখতে পাচ্ছি, ওর হাত ধরার সাহস নেই।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৫:৪৫68816
  • আমিও পিলু পাইনি "নয়ন সরসী"-তে। বরং "একদিন পাখি উড়ে"-তে খুঁজলে পিলু পেলেও পেয়ে যেতে পারি। তবে নোট ধরে বাজিয়ে দেখিনি, কানের ওপর ভরসা করে লিখলাম। এবং কান আমার সঙ্গে কয়েকবার বেইমানিও করেছে।

    লেখাটা শিবাংশুবাবু-মাফিক। পড়তে খুব ভাল লাগে।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৫:৫৭68817
  • যথারীতি দারুণ লেখা
  • কল্লোল | 125.185.150.56 (*) | ০৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:৫৩68818
  • শিবাংশু। গতকাল রাতে তোমার সাথে কথা বলে খুব উত্তেজিত বোধ করছি।
    তোমার লেখাটার জন্য হাপিত্যেশে বসে আছি বল্লেও কম বলা হবে।
  • শিবাংশু | 127.197.255.48 (*) | ০৮ মার্চ ২০১৫ ০৭:৫৯68819
  • @কল্লোল'দা,
    একটা ব্যাপার খুব বুঝি, কানের উপর বেশি ভরসা করলে মাঝেমধ্যে বেশ ধাক্কা খেতে হয়। উপরন্তু কাব্যগীতির সুর কখনও রাগবিশেষ'কে আশ্রয় করে তৈরি হয়না। সুরকারের দায় থাকে শ্রুতিসুখের দিকে। ফলত গানের এই জঁরটির অনন্যতা ও সাফল্য দুইই নির্ভর করে সুরের মিশেলদক্ষতা কতোটা কানের সুখ এনে দিলো। তবে এর মধ্যেও উস্তাদরা নিজেদের ছাপ এমন মেরে দেন যে আমাদের মতো মূর্খরা পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে মস্ত হয়ে যাই। এই গানটিতে তেমনই কিছু করামত হয়েছে। এতো মসৃণ, সহজ, তৈলচিক্কণ প্রগ্রেসন যে আলাদা করে কিছু ফ্রেজ'কে রাগের ফ্রেমে বাঁধতে গেলে হয়তো বোকামিই হবে। এখানে ভুলভুলাইয়া ফ্রেজটি হলো, 'প-ম-গ-রে-সা'। পিলুর অবরোহে 'স-নি`-ধ-প-ম-গ-রে-সা' ছাঁচটিতে নি` আর ধ'কে প্রায় অস্পৃশ্য করে 'স-প-ম-গ-রে-সা'র উপর ফেলা হলো স্থায়ী 'নয়নসরসি কেন'। অবিকল নি-ধ-প-ম-গ-রে-সা' যেভাবে এসেছে বিখ্যাত 'মো সে রহিও না যায়" ( সঁইয়া বোলো ঠুমরিতে)। এর পর অস্থায়ীতে আবার 'স-নি`- ধ-প`-ম-রে-স' ছাঁচে ' "বেদনার কালি তুমি দাও ভালোবেসে বঁধু", ধরে রাখছে পিলুর আবেশ। কিন্তু পরের পদে বদলে যাচ্ছে প আর নি'র কম্বি, 'নি' তো একেবারে নেইই। তা বেশ, ভালো হলো। কিন্তু চমকটা আসছে স্থায়ীর দ্বিতীয় পদে, "....ভরেছে জলে, কত কি রয়েছে লেখা কাজলে কাজলে"। 'স-(ধ)- নি`-(ম)-প, (ম)-প-নি-(গ)(ম)-রে-স', পুরো দরবারির অবরোহী। স্মর্তব্য, বিখ্যাত বন্দিশ " কওন বইরন কান ভরে"। এই ফ্রেজটিকে একটু এদিকওদিক করে সঞ্চারীটিও তৈরি হয়েছিলো।
    ----------------------------------
    মোদ্দা কথা, কিশোরকুমারকে আমরা যতোটা জানি, তিনি এভাবে 'পাত্রাধার তৈল' মতের পথিক ছিলেন না। ছোটোকত্তার তাঁকে শিবরঞ্জনী রাগ বোঝানোর প্রয়াস মনে পড়ে যায়। " আরে তেরে শিবরঞ্জনী'কি য়্যেসি কি ত্যইসি, সুর বতাও"। স্বতঃস্ফূর্তভাবে কম্পোজ করেছিলেন এই সুরটি। স্থায়ীতে নি বা ধ'কে রাখলেন না মীড় লাগানোর অনিচ্ছা থেকে কি? কিন্তু জেনে বা না জেনে, (আমরা কিছুই জানিনা) মেশালেন রাগ পিলু আর রাগ দরবারি'র নির্যাস, মসৃণ, সীবনহীন দক্ষতায়। ছোটোকত্তার টুপি থেকে এসব ম্যাজিকই তো বেরিয়ে আসতো। আমিও উত্তেজিত।

    এই মূর্খকে তেমন একটা 'চমৎকারে'র খোঁজ দেবার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। উসকে দিলে, তাই তো কিছু পাওয়া গেলো। :-)
  • কল্লোল | 111.63.66.172 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:৩১68820
  • আমি নিমিত্ত মাত্র বললে, বড় বেশী হয়তো বিনয় করা হয়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে তার বেশী কি?
    আমিও তো এতোকাল এ গানটিকে দরবারী ভেবেই শুনেছি। সেদিন তোমার কথায় এতো উত্তেজিত লাগছিলো যে বারবার গানটি শুনছি সে রাতে। সত্যিই তো এভাবে ভাবিনি কখনো। পিলু আর দরবারী মেলানো যায় কোনোকালে ভাবিনি। কিশোরকুমার নিয়ে শ্রদ্ধা ছিলোই, এবার তাকে সুরসৃষ্টিতে ছোটকত্তার পাশে রাখতে কোন দ্বিধা নেই।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৪68821
  • পিলুর বাদী-স্বর শুদ্ধ গান্ধার। "নয়ন সরসী"-তে কোথাও শুদ্ধ গান্ধার পাচ্ছি না। দ্বিতীয়তঃ পিলুর বৈশিষ্ট্য প-ম-জ্ঞ-র-স-র-জ্ঞ-র-স-গ তে যে আচমকা শুদ্ধ গান্ধারের প্রয়োগে গানের চলনে পরিবর্তন - সেটা নয়ন সরসীতে নেই, যেমন আছে "রঙ্গ বরসে"-র "সোনে কি থালি মে" অংশে। বা "যিসকি বিবি মোটি" গান যে শুদ্ধ গান্ধারে শুরু হয়ে তারপরে প-ম-জ্ঞ-র-স ফ্রেজ নেয়।
  • শিবাংশু | 127.197.248.198 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৫ ০৫:১৭68822
  • ন্যাড়া,
    একেবারে ঠিক। শুধ গান্ধার নেই, বাকিটা আছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কারণ কর্ণাটী শৈলিতে এই রাগটিকে দেবগান্ধারও বলা হয়ে থাকে। আমি যে ফ্রেজগুলি পেলুম সেখানে শুধ গান্ধার ব্যতিরেকে বাকিগুলো রয়েছে। আসলে অন্যভাবে দেখতে গেলে শুধ পিলু বলেও কিছু নেই বোধ হয়। সবই মিশ্র পিলু। নিঃসন্দেহে আধুনিক কাব্যগীতির সুর করার সময় রাগের আমেজটাই নিতে দেখা যায় । অবিকল গড়নটিকে অনুসরণ করতে তো দেখা যায়না। সেই 'চ্যুতি'টিকেই আশ্রয় করে 'পিলু' সুরের আমেজটি ধরার অকুলীন প্রয়াস ছিলো এই লেখাটিতে। নিতান্ত অনধিকারীর আর্ষপ্রয়োগ হিসেবেই গ্রহণবর্জন সমীচীন হবে। এই প্রসঙ্গে আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য ও হঁওসলা অফজাহি অবশ্যই শিরোধার্য। অনেক ধন্যবাদ :-)

    রঞ্জন, নিনা, পাইদিদি,lcm, কল্লোল'দা,

    সবাই'কে আন্তরিক অভিবাদন...
  • ranjan roy | 24.99.162.0 (*) | ১০ মার্চ ২০১৫ ০২:২২68823
  • সমগ্র আলোচনায় আমার মত অনধিকারী ঋদ্ধ হল। কাল কল্লোলের লিং নিয়ে নিখিল বন্দ্যো/বিলায়েত শুনলাম।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ১০ মার্চ ২০১৫ ০৫:১১68824
  • শিবাংশুবাবুকে ধন্যবাদ গানটা নিয়ে ভাবানোর জন্যে। পিলুর ব্যাপারে একমত না হলেও "ভরেছে জলে" অংশে দরবারীর ছায়া পাচ্ছি।

    কিন্তু এই প্রসঙ্গে অন্য কথা মনে আসে - যদি দুটো রাগ মিশিয়ে মিশ্র রাগ তৈরি হয় - যেমন ছায়া-হিন্দোল (তারাপদ চক্রবর্তী) বা খমাজ-বাহার (যসরাজ) - মানে যে মিশ্রণগুলো প্রচলিত নয় - সেক্ষেত্রে রাগগুলোর কী কী বৈশিষ্ট্য মিশ্ররাগে থাকতেই হবে? নেসেসারি, মে নট বি সাফিশিয়েন্ট কন্ডিশন কী হবে?

    যদি মূল রাগের বাদী-স্বর না থাকে (সম্বাদী ধরছি না) বা পকড় না-থাকলে অন্ততঃ সিগনেচার একটা-দুটো ফ্রেজ না থাকলে সেই রাগটা মিশ্র রাগের নামে ঢোকানো হবে কি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন