এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জাদুলণ্ঠন

    Writobroto Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩১ মার্চ ২০১৮ | ১৫৭৭ বার পঠিত
  • জাদুলণ্ঠন - ১

    আমার যখন জন্ম হয় মা তখন অসুস্থ ছিলেন,
    তারপর থেকেই আমি ছেলেবেলায় বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকতাম,
    মা আমার শুশ্রূষা করতেন কারণ পেশায় তিনি ছিলেন নার্স,
    ছেলেবেলা নিয়ে আর কিছু মনে নেই আমার।
    বহুবছর কেটে গেছে তারপর
    আমি বড় হয়ে গেছি, নাটকদলে যোগ দিয়েছি
    ধীরে ধীরে দলের সাথে গড়ে উঠতে উঠতে একদিন
    হয়েছি মোশন মাস্টার,
    বাবা মা থেকে গেছেন গ্রামে সেখানে আমার যাওয়া হয়ে ওঠে না বড় একটা,
    একদিন আমার প্রথম নাটকের শো চলছে নাট্যরঙ্গে
    সেদিন ভীষণ বৃষ্টি, ভেসে গেছে শহর
    শো শুরু হবার অনেক পর থেকে দর্শক আসতে আরম্ভ করেছেন,
    কাউন্টারে মেয়েটি এসে বললো, মিসেস বার্গম্যান এসেছেন তাঁর ছেলের সাথে দেখা করতে,
    তাচ্ছিল্যের সাথে জিজ্ঞেস করি, কে মিসেস বার্গম্যান?
    মেয়েটি আমায় চিনতে না পেরে বললো, এই নাটকের ডিরেক্টরের মা, আপনি ডেকে দিতে পারেন?
    মনে পড়ল আজ সকালে মায়ের সাথে ফোনে খুব ঝগড়া হয়েছিল,
    বাবার টিউমার অপারেশনের সময় আমি হসপিটালে যাব কি না এই নিয়ে,
    আমি বলেছিলাম আমার আজ প্রথম শো
    আর তাছাড়া বাবার সাথে কোনদিনই আমার ভালো সম্পর্ক ছিল না,
    মা শুনতে শুনতে খুব রেগে যাচ্ছিল,
    তারপর মা, আমার মা কেঁদে ফেলেছিলেন ফোনে,
    ঘটনাটি মনে পড়তে আমি ছুটে যাই ফয়ারে যেখানে আমার মা,
    দূর থেকে দেখতে পাই মা দাঁড়িয়ে আছেন
    আপাদমস্তক চুপচুপে ভিজে,
    বয়সের ভারে অনেকটাই শীর্ণ হয়ে গেছেন মা,
    দু-দুটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবার পর থেকে মা ন্যুব্জ হয়ে গেছেন,
    চোখের দৃষ্টিটা অবশ্য সেই আগের মতই প্রখর রয়ে গেছে
    যেন অন্তরের গভীরতম গ্লানি জেনে বুঝে এখুনি মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন,
    আর সেরে যাব আমি;
    দূর থেকে দেখছি আমার মাকে প্রায় এক যুগ পর দেখছি।
    কাছে যাই, আমাকে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন মা,
    বস মা, চা খাবে?
    ওইভাবে জ্বলে উঠতে আর একবারই দেখেছিলাম মাকে,
    চড়টা পড়ামাত্র নিজেকে সরিয়ে নিয়ে হেসে উঠি
    অলক্ষ্যে,
    মেয়েটা চলে গেছে অনেক্ষণ, ঘরের মাঝখানে, ঠিক মাঝখান নয়, দাঁড়িয়ে থাকি আমরা
    আমার থেকে একটু দূরে মা।
    ভেঙে পড়েছেন মা, তাড়াতাড়ি একটা চেয়ার এগিয়ে বসতে দিই,
    কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে চুপিচুপি বলি,
    যাব মা আমি বাবাকে দেখতে,
    এইটুকুতেই মায়ের চোখ জলে ভরে আসে,
    পরম আদরে জড়িয়ে ধরেন মা আমাকে,
    তক্ষুণি বুঝতে পারি আবেশে তলিয়ে যেতে যেতে, ভয় নেই কোনো,
    আজকে নাটকের প্রথম শো-এ কেল্লাফতে না হতেপারার ভয়,
    এলসিকে না পাবার ভয়,
    স্ভেনক্স আকাদেমিতে নির্বাচিত না হতে পারার ভয়,
    সব সব যেন গলে গলে শরীর বেয়ে নর্দমায় ভেসে যাচ্ছে,
    হা হা করে হাসতে থাকি আমি,
    হাসলে আমার চোখদুটো ছোট হয়ে আসে,
    চোখের কোণা দিয়ে দেখতে পাই,
    মা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

    জাদুলণ্ঠন - ২

    সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন, আমি মিথ্যাচারী হয়ে গেলাম।
    ভেতরের আমি-র সাথে বাইরের আমি-র কত অমিল।
    জানা নেই বলে কেউ বুঝতো না।

    হলুদ রঙ করা একটা বাড়িতে থাকতাম আমরা, বাবা পাদরী হয়ে শহরে এসে ছিলেন,
    প্রচণ্ড তুষারপাত হয়েছিল সেদিন
    আমি, আমার দাদা, দাদার এক বন্ধু
    ব্যারাকের গায়ে লাগা মাঠটায় বরফের গোলা বানিয়ে ছোঁড়াছুঁড়ি করছিলাম,
    শহরতলির সংক্ষিপ্ত এই অঞ্চলের ব্যারাকঘেঁষা মাঠে আমাদের গোলাগুলিতে অনেকগুলো বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙেছিল,
    বাড়ি ফিরে ফ্রিজ থেকে বার করে কাঁচা দুধ গলায় ঢালতে ঢালতে শুনলাম মার্থামাসী বলছে,
    বাইরের ঘরে খুব একচোট নিচ্ছে তোর দাদাকে,
    আর দাদার সাগরেদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে
    তার বাবাকেও ডাকা হয়েছে, এসে পড়বে যে কোন সময়ে,
    তুই কটা কাঁচ ভেঙেছিস বাছাধন?
    বুঝতে পারছি ডাইনিটা ফাঁসাবার চেষ্টা করছে,
    মুখ খুললেই বিপদ।
    নির্লিপ্ত গলায় বলি, আমি দুএকটা বল দাদার দিকে তাক করেই ফিরে এসছিলাম,
    আমার পায়ে খুব ঠাণ্ডা লাগছিল।
    পায়ে পা ঘষি গরম করার চেষ্টা করি পা-দুটো
    ডাইনিটা বুঝতে পারে না, বাবাকে গিয়ে চুপিচুপি বলে
    ইঙ্গমার কাঁচ ভাঙার সময় ছিল না।
    সেদিন রাত্তিরে দাদার সাথে আমাকে শুতে দেয়া হয় নি।
    অনেক রাত্রে ঘুমচোখে তৃপ্ততা শিয়রে থাকতে থাকতে
    স্বপ্নদোষে প্রথম বীর্যপাত হয় আমার।
    আমার মিথ্যে কথা বলার জন্য পার পেয়ে গেছি বার পাঁচেক বাকি সব বারই আমার কপালে শাস্তি জুটেছে।
    একবার সার্কাস দেখতে গিয়ে উত্তেজনায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,
    ঘুমের রেশে দেখছিলাম, ওই সার্কাস দলে আমাকে বেচে দিয়েছে আমার বাবা,
    দু-একদিন বাদে স্কুলে আমার পাশের বেঞ্চিতে বসা আকিল-কে জানালাম পুরো ব্যাপারটা,
    সার্কাস দলের সাথে কয়েকদিনের মধ্যেই চলে যাচ্ছি আমি,
    একোর - বকোর (acrobatics) শিখবো তাদের সাথে
    সুন্দরী এমেরাল্ডা এসে ঘাম মুছিয়ে দেবে আমার।
    ক্লাসটিচার কোনদিনই ঠিক সহ্য করতে পারতো না আমাকে,
    বাড়িতে বকাঝকা হল খুব, শাসানো হল
    মা ফুঁপিয়ে কাঁদল
    পরদিন শোনা যায় আমি পেন্সিল কাটার ছুড়ি ঘুরিয়ে মারতে গেছিলাম আমার পাশের বেঞ্চির বোকা বলদটাকে
    সারা মাঠ চক্কোর দিয়ে তাড়া করে,
    ক্লাসটিচার মিস্ কখন এসে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়েছিল
    আমি নাকি তাকে জখম করতে তেড়ে যাই।
    স্কুল থেকে বিতাড়িত হলাম, বাবা বলল - বেরিয়ে যাও।
    মা ফ্যাঁচফ্যাচ।

    আজ পঞ্চাশ বছর পর ওই ঘটনাটা মনে পড়তে মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
    মা কি ভেবেছিলে তোমরা? কেউ কি তোমরা হেসে ওঠোনি আমার কথা শুনে?
    মা বললো, আমরা তখন খুব ভেঙে পড়েছিলাম,
    এত মিথ্যে বলতিস তুই
    তোর বাস্তব কল্পনার টানাপোড়েনে আমরা দিশাহারা হয়ে গেছিলাম রে বাবু।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩১ মার্চ ২০১৮ | ১৫৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Koushik Ghosh | 113.215.53.160 (*) | ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২০63935
  • বেশ লাগলো। এটা কি মৌলিক লেখা? অনুবাদের ছাপ রয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন