এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ঈদ

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ জুন ২০১৮ | ১৮৪৫ বার পঠিত
  • ঈদ ঠিক ঈদের দিন হয়না। ঈদ শুরু হয় রোজার শুরু থেকে। ঈদের দিন ঈদ শেষ হয়। দৈনিক ঈদ হচ্ছে এখন বাংলাদেশে আনাচেকানাচে, সর্বত্র। ছোট শহর থেকে বড় শহর, মেগা শহর। ঈদের আমেজ তৈরি হয়ে গেছে। ঈদের দিন তার সমাপ্তি হবে শুধু। শপিং নামের যুদ্ধ না শুধু, ঈদের আমেজ ঈদ আসছে এ কথার মাঝেই বেশি। ঈদের দিন কে কি করবে তার পরিকল্পনায় ঈদের ফুর্তি, ঈদের ছুটিতে ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফেরাতে ঈদ, বাড়ি ফিরে বহুদিন পড়ে বন্ধুর মুখ দেখার মাঝে ঈদ, রাত পার করে দেওয়া বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ঈদ, চানরাত পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের সারা বছরের মূল ব্যবসা করে নেওয়ার মাঝে ঈদ। ঈদের দিন ঈদের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

    আমার আগের ব্যস্ততা নাই। ঢাকা থেকে রীতিমত অভিযান শেষ করে বাড়ির ফেরার দিনগুলি এখন স্মৃতি। এখন অঢেল সময় নিয়ে মানুষের ছোটাছুটি দেখি আমার মফস্বল শহরে। আস্তে আস্তে ঈদের উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে, যতদিন দিন যাচ্ছে তত রাত গভীর করে মার্কেট বন্ধ হচ্ছে। আলোকসজ্জার বাহারি রূপ মফস্বলেও এসে লেগেছে দারুণ ভাবে। মানুষ আসছে, স্বপ্ন কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে, আনন্দ কিনে ফিরছে, উৎসব কিনে নিচ্ছে। কেউ মলিন মুখে দোকানে এসে দাঁড়াচ্ছে, না, কালকে যেটা কিনে নিয়ে গেছে তা পছন্দ হয়নি বাড়ির লোকের। আজকে আবার এসে হাজির, দোকানদার কি বলে তা এক চিন্তা, অন্য চিন্তা আবার যে নিয়ে যাবে, যদি পছন্দ না হয়!! পরের বার দোকানদারের সামনে আসবে কোন মুখে!!

    আগে মার্কেট বা শপিং সেন্টারে ভিড় হত। তবে ঈদের শপিং অনেকে বাসায় বসেও করে ফেলত। এখনো করে, তবে তরিকা ভিন্ন। আগে ফেরিওয়ালা নামে এক আজব মানুষ আসত বাড়ি বাড়ি। কাঁধে কাপড়ের টোপলা থাকত। আর হাতে থাকত কাচের ঢাকনা লাগানো বড় একটা বক্স। কাচের উপর দিয়ে দেখা যেত নানা রকমের কানের দুল, গলার মালা সহ আরও কত কি! পোশাক আশাক হয়ত দোকান থেকে কেনা হত, সাজসজ্জার ব্যাপার গুলি সামাল দিত ফেরিওয়ালারাই। কানের দুল কেনা হত, লিপস্টিক, চুড়ি, চুলের ফিতা, নকল চুল!! আমি অবাক হতাম ওই লোকের সংগ্রহের পরিমাণ দেখে। আরও অবাক হতাম উনার আত্মবিশ্বাস দেখে। সব চেয়ে ভাল জিনিস নাকি তিনিই আনতে পারেন, অন্য কেউ এই জিনিস চোখেও দেখিনি কোনদিন।কোন আইটেম উনার কাছে না থাকলে বা কম পড়ে গেলে, উনি ওই জিনিস আবার এনে দিবেন, সামনের সপ্তাহেই এনে দিবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিতেন তা কতখানি রক্ষা করতেন আজ আর মনে নেই। কারন এদের সাথে ছেলেদের খুব একটা সখ্যতা ছিল না। ছোটবেলার অনেক আফসোসের মধ্যে এটা একটা বড় আফসোস যে উনারা ছেলেদের জন্য কোন জিনিস আনত না। সম বয়সী মেয়ে যে আছে তার জন্যও হয়ত চুড়ি কেনা হল আর আমার জন্য লবডঙ্কা! ওই বয়সে মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর ছিল আমার জন্য।

    ছোট বেলাটা খুব একটা সহজ ছিল না আমার। নতুন জামা ঈদে মিস করে গেছে অনেকবার। চানরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতাম। চানরাতেও যখন আস্তে আস্তে সবাই বাড়ি ফিরে আসত আর আমার পোশাকের কোন খোঁজ পেতাম না তখন বাড়ির সর্বশেষ সদস্যের জন্য আমি না ঘুমিয়ে বসে থাকতাম। তিনিও যখন খালি হাতে ফিরতেন বা তিনি হয়ত সম্পূর্ণ ভিন্ন কোন কাজে কোথাও গিয়ে ফিরেছেন, কাজেই আমার পোশাকের ব্যাপারে তিনি হয়ত বিন্দুমাত্র কোন খোঁজ খবর জানেন না, তখন আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যেত। ছোট বুকের ওই ব্যথা আজো ভুলতে পারি না।আজকে এসে মনে হয়, কি অবুঝের অত কান্নাকাটি করে আম্মা আব্বাকে কি একটা বিব্রতর ও কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিতাম তখন। কিন্তু একটা সময় অবস্থার পরিবর্তন হলো। কিন্তু তবুও আমি ঈদের নতুন জামার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। ছোট্ট ঘটনা, কিন্তু আমি এখনো ভুলতে পারিনি।ওই গপ্প করেই শেষ করি ঈদনামচা। সেবার ঈদে আমার পোশাক আশাকের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা হয়েছে। মানে আপাদমস্তক যাকে বলে। ফুর্তিতে আমি উড়ছি আর কি! চানরাত মানে ঈদের আগের রাতে আমি কোন কারনে তখনো বাড়ি ফিরিনি। কোথাও যাচ্ছি বা বাড়ি ফিরছি। হাঁটছি, এমন সময় আমার সাথের এক পথচারীর সগক্তি কানে এলো। তিনি বলছেন, আমি কি কমু বাড়িত ফিইরা, জামা কিনমু কি দিয়া, ট্যাহা কই!! আহ! মাইয়া বুঝব আমার কথা!!... আমি হাঁটছিলাম জোরেশোরেই। আমার হাঁটা থেমে গেলো মানে গতি কমে গেলো। ঈদের নতুন জামার ফুর্তি এক ফুঁৎকারে নিভে গিয়েছিল সেইদিন। আমি সেই বাবার কণ্ঠস্বর আজো নিয়ে ঘুরছি। আমি সেদিন সহ্য করতে পারিনি, আজো মনে পড়লে ব্যাকুল হয়ে পড়ি। ঈদের নতুন জামার প্রতি আগ্রহ আমার এরপরে আর ছিল না বললেই চলে। এখনো যতখানি সাধ্য হয় ততখানি করেই ঈদে সাহায্য করি, করার চেষ্টা করি। কিছু না হলেও চা দোকানের যে পিচ্চি প্রতিদিন চা খাওয়া খাওয়ায় তাকে অন্তত একটা জামা বা একটা প্যান্ট বা কিছু না হলে একশ টাকা।নিজের টাকা উপার্জনের পরে শুধু আম্মাকে শাড়ি কিনে দিছিলাম। বাকি সবাই কে বই কিনে উপহার দিছি। ঈদ উপলক্ষে জামা কাপড় কেনা আমার জন্য একটু মুশকিল আসলে। কি করব? নিজের ঈদের জামা না পাওয়ার কষ্টের সাথে ওই অজানা অচেনা এক লোকের কণ্ঠস্বর বড় বেশি উৎপাত করে যে আমাকে!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৮ জুন ২০১৮ | ১৮৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.236712.110 (*) | ০৯ জুন ২০১৮ ০২:১৯63294
  • আহ ফেরীওয়ালা!

    অনলাইন শপিং এর যুগে এসব রূপকথা মনে হয়!
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১২ জুন ২০১৮ ০৬:১১63295
  • আহ, আমাদের হারিয়ে যাওয়া দিনে ছিল ফেরিওয়ালার ম্যাজিক ঝুড়ি। কত কী থাকতো ঝুড়িতে ! এখনও হয়তো আছে কোথাও না কোথাও। জীবনের রূপকথার মত।
  • Du | 237812.58.890112.11 (*) | ১২ জুন ২০১৮ ০৬:৫০63296
  • আপনি ইদের আসল জামা পেয়েছেন। আসমানী জামা।
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ১২ জুন ২০১৮ ১১:৩৭63297
  • খুব ভাল লাগল, এই লেখাটা।

    'এখনো যতখানি সাধ্য হয় ততখানি করেই ঈদে সাহায্য করি, করার চেষ্টা করি। কিছু না হলেও চা দোকানের যে পিচ্চি প্রতিদিন চা খাওয়া খাওয়ায় তাকে অন্তত একটা জামা বা একটা প্যান্ট বা কিছু না হলে একশ টাকা'

    - সকলেই যদি এমন হত..
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন