এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arindam Basu | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:৫৪528243
  • https://www.wto.org/english/docs_e/legal_e/27-trips_01_e.htm
     
    TRIPS চুক্তি অনুযায়ী ভারত কখনোই টাঙ্গাইলের শাড়ি  জি আই ট্যাগ পেতে পারে না, কারণ টাঙ্গাইলের ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশে, ভারতে নয়। এর সঙ্গে বসাকদের বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে ব্যবসা করার বা বাংলাদেশে শাড়ির জনপ্রিয়তার কোন সম্বন্ধ নেই। 
  • hu | 72.241.81.21 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:৩৫528244
  • এই বিষয়টা এক কথায় নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না। পৃথিবীতে একই শিল্পের মেধাসত্ত্ব দুটো দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার নিদর্শন আছে। যেমন ধরা যাক ইউনেস্কো  টালাভেরা পটারিকে স্পেন ও মেক্সিকো দুই দেশেরই শিল্প বলে স্বীকার করে। টাঙ্গাইল শাড়ির সত্ত্বের বিষয়টাতে যেহেতু দেশভাগের মত রক্তাক্ত ঘটনা জড়িয়ে আছে তাই মনে হয় কাঁটাতারের দুই পাশের তাঁতিদেরই স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ। রসোগোল্লার জি আই ট্যাগও বাংলা এবং উড়িষ্যা দুই রাজ্যই পেয়েছে। "বাংলার রসোগোল্লা" নাম দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ভার্সানটার। তো "পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল" কথাটা হাস্যকর। কিন্তু দাবীটা হাস্যকর নয়। সেজন্যই টালাভেরার কথা তুললাম। টালাভেরা জায়গাটি স্পেনে। কিন্তু টালাভেরা পটারিতে মেক্সিকোর অবদান কেউ অস্বীকার করে না।
  • র২হ | 96.230.215.15 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫২528245
  • "...এই চলমান ঘটনায় তিনি সেখানকার তাঁতিদের সাথে কথা বলেছেন। তাঁরা নিজেরাও এইটা মেনে নিতে পারেন নাই! তাঁরা নানা রকমের সমস্যা, চাপের কারণে প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না ..."
    এটা হতে পারে, বিশ্বাসযোগ্য।

    "বিবির সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন যে টাঙ্গাইলের যে বসাকরা আছে তাঁরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে এতে!"
    টাঙ্গাইলের বসাকরা এই নিয়ে কোন প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন? 
     
    দেশভাগ জিনিসটাই অবাস্তব দু:স্বপ্নের মত। একটা শিল্পে তার সঙ্গে জড়িত মানুষ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। বাংলার শিল্প বলা যায়। কিন্তু বাংলা তো টুকরো। শিল্পীরা কী চাইছেন তা হয়তো শোনা উচিত।
    দুটো দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া - এটা হয়তো সবথেকে যুক্তিসম্মত উপায়।
     
    বিবি রাসেলের সাক্ষাৎকার পড়লাম। এই প্রশ্নটা খুব বিশ্রী লাগলো।
    সমকাল: দেশভাগের পরবর্তী সময়ে যারা গেছে, তাদের কি ভারতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হতো? আমি বলতে চাইছি, টাঙ্গাইলের বসাকদের নদীয়ায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে টাঙ্গাইল শাড়ির মেধাস্বত্ব নিয়ে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল কিনা?
     
    দেশত্যাগীরা দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের অংশ এমন একটা ব্যাপার ভাসিয়ে দেওয়ার লিড। বিবি অবশ্য সেদিকে নি গিয়ে সুন্দর ভাবে উত্তর দিয়েছেন। 
  • Arindam Basu | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:০০528246
  • বিষয়টা নস্যাৎ করার প্রশ্নই ওঠে না, লেখক যেভাবে লিখেছিলেন যে টাঙ্গাইলের শাড়ি ভারত জি আই ট্যাগ নিতে চাইছে, সেটা পড়ে যা মনে তার ভিত্তিতে লিখেছিলাম। এটা তো ঠিকই যে একই "বস্তু" একাধিক দেশে তৈরি হতে পারে, এবং জি আই ট্যাগ পাবার একটা শর্ত হচ্ছে যে মেধাসত্ত্ব, বা স্থানবিশেষে বিশেষত্ব। যে কারণে টালাভেরা পটারি বা (পাহাল্লা বনাম বাংলা) রসগোল্লার ব্যাপারটা আসছে। আপনি যদি লিসবন একসপ্রেস ডাটাবেস (https://lisbon-express.wipo.int/struct-search?lang=en) দেখেন দেখবেন সেখানে টালাাভেরা পটারির ব্যাপারে শুধুই মেকসিকোর নামটা লেখা রয়েছে, Appellations of Origin and Geographical Indications বোঝাতে। ভারতের টাঙ্গাইল শাড়ি যদি ভারতের তাঁতিদের নিজস্ব কারিগরি এবং তৎসংক্রান্ত মেধা সত্ত্ব অনুযায়ী জি আই ট্যাগ পাবার যোগ্য হয়, তবে অবশ্যই ভারতীয় শাড়ি সে স্বীকৃতি পেতে পারে, কিন্তু শরীফের লেখাটা পড়ে মনে হল ব্যাপারটা সেরকম নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেরই টাঙ্গাইল শাড়ির জি আই ট্যাগের দাবী ন্যায্য | দেশবিভাগ হয়ে কারিগর বিশেষ অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন কিন্তু শাড়ি তৈরীর প্রক্রিয়া একই রেখেছেন, বা সে শাড়ি বাংলাদেশে কেউ পরে না কিনা, যতদূর ডকুমেন্টেশন পড়েছি, মনে হয় না ডিসাইডিং ফ্যাকটর। 
  • hu | 72.241.81.21 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:২৮528247
  • টালাভেরার জি আই মেক্সিকোর দেখে একটু অবাক হলাম। এটা টাঙ্গাইলের জন্ম ভারতে বলার মত ব্যাপার। মেক্সিকোতে যদিও টালাভেরার ওপর প্রচুর কাজ হয়েছে, কিন্তু টালাভেরা মেক্সিকোতে এসেছে স্পেন থেকে। আমি এই লিংকটা দেখেছিলাম যেখানে ইউনেস্কো দুটি দেশের অবদানকেই স্বীকার করছে - https://ich.unesco.org/en/RL/artisanal-talavera-of-puebla-and-tlaxcala-mexico-and-ceramics-of-talavera-de-la-reina-and-el-puente-del-arzobispo-spain-making-process-01462?RL=01462
    টাঙ্গাইল শাড়ীর ব্যাপারে বোনা ও বুটি তোলার পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ও ভারতে তফাৎ আছে কিনা জানি না। খুব সম্ভব নেই। কিছু নতুন ডিজাইন ভারতের তাঁতীরা এনে থাকতে পারেন। "দেশভাগ হয়ে কারিগর অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন" - এটা তো সবসময় ঠিক স্বেচ্ছায় হয়েছে বলা যায় না। অনেকেই আছেন যাঁরা প্রাণ বাঁচাতে ভিটে ছেড়েছেন। ব্যবসা গোছাতে বিদেশে গেছেন এমন নয়। এই বিষয়টা বেশ সেনসিটিভ। এক কথায় রায় দেওয়া যাবে না।
  • Arindam Basu | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৯528248
  • দেশভাগ হয়ে কারিগর ওপার থেকে এপার বাংলায় আসতে বাধ্য হয়েছেন, মর্মান্তিক পরিস্থিতি ও সেনসিটিভ বিষয় তো বটেই। কিন্তু কি জানেন, counterfactual টা তো এমন নয়। মানে এমন নয় তো যে, এর ফলে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের শাড়ি তৈরীর শিল্পটাই লুপ্ত হয়ে গেল, এরা ভারতে তাকে বাঁচিয়ে রাখলেন। এঁরা ভারতে হয়ত অন্যরকম কিছু করে অভিনব কিছু করে থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে তাঁরা সেই ব্যাপারটির, মেধার দাবিদার হবেন, তাহলেও বাংলাদেশ সরকার যদি টাঙ্গাইলের শাড়ির জি আই ট্যাগ দাবি করেন, সেটাও তাঁদেরই বরাদ্দ, অন্তত আন্তর্জাতিক নিয়ম তো দেখছি তাই বলছে। তবে আমার ভুলও হতে পারে। 
  • Falguni Mazumder | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৫528276
  • টাঙ্গাইল শাড়ী কোন ব্রান্ড নয় যে এই পণ্য অন্য কেউ বানাতে পারবেন না।  টাঙ্গাইল শাড়ীর বৈশিষ্ট্য গুলি যে শাড়ীতে থাকবে সেটাই টাঙ্গাইল শাড়ী।
  • :-)) | 2a06:e80:3000:1:bad:babe:ca11:911 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৪528278
  • ধুরো গোরুর পো ফাল্গুনি। জিয়াই ব্যপারটাই বুজিস নি। বেনারসিও কোন ব্র‍্যান্ড নয়। বাংলাদেশে বেনারসিতে কাশুর বেনারসির সব বৈশিষ্ট্য থাকে সাতে আরো কিচু থাকে। এবারে বাংলাদেশ বেনারসির জিয়াই নিলে নাপাস নি যেন।
  • :-)) | 2a06:e80:3000:1:bad:babe:ca11:911 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৫528279
  • ধুরো গোরুর পো ফাল্গুনি। জিয়াই ব্যপারটাই বুজিস নি। বেনারসিও কোন ব্র‍্যান্ড নয়। বাংলাদেশে বেনারসিতে কাশিবেনারসের বেনারসির সব বৈশিষ্ট্য থাকে সাতে আরো কিচু থাকে। এবারে বাংলাদেশ বেনারসির জিয়াই নিলে নাপাস নি যেন।
  • Muhammad Sadequzzaman Sharif | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:৫৯528304
  • ভারত বড় ভুল, কেউ কেউ বলছে মিথ্যাচার করেছে তা হচ্ছে এর আদি উৎস সম্পর্কে বলেছে এইটার আদি উৎস পশ্চিমবঙ্গ। আর আরেকটা ভুল বা মিথ্যাচার হচ্ছে টাঙ্গাইলের শাড়ির মোটিফ বলেছে জামদানি! এগুলা ভুল বা মিথ্যা। 
    আর আপনারা জানেন কি না জানি না, মিনিস্ট্রি অফ কালচার, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া নামের ভেরিফাইড পেইজ আছে ফেসবুকে সেখানে গত ১৮ জানুয়ারি একটা পোস্ট দিয়েছে যেখানে জামদানিকেও পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবী করা হয়েছে! জামদানি নিয়েও যদি এই কথা শুনতে হয় তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়? জামদানির ইতিহাস, জামদানির বুনন, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, শীতলক্ষ্যা নদী এই সব যদি কেউ না জেনে দুম করে বলে বসে জামদানি ভারতের তথা পশ্চিমবঙ্গের পণ্য তাহলে এইটাকে ফাইজলামি বলা ছাড়া আর কিছুই বলার নাই। আর আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের মেরুদণ্ড কবে শক্ত হবে সেই আশায় বসে থাকতে হবে হয়ত। 
    ফেসবুক পোস্টের লিংক-
     
    র২হ দাদা, বিবির যে প্রশ্নটা খারাপ লাগছে আপনার ওইটা খারাপ লাগার মতোই। সংবাদপত্রের কাজই এমন, একটু বাতাস গরম করার চেষ্টা করা। বিবির উত্তর দারুণ ছিল। 
    আর হ্যাঁ, টাঙ্গাইলের তাঁতিরা, বসাকেরা প্রকাশ্যেই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাঁত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেছেন যে বসাকেরা টাঙ্গাইল থেকে ভারত গিয়েছে, বিশেষ করে পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত বিরেন কুমার বসাক, তাঁরা সবাই পাকিস্তান আমলে গিয়েছে, ষাটের দশকে। বিরেন কুমার বসাক এই গণ্ডগোল লাগার বেশ আগে ( ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ঢাকা ট্রিবিউন) বলেছিলেন যে তাঁদের শাড়িকে এখন আর টাঙ্গাইলের শাড়ি বলার কোন মানে হয় না, এটাকে ফুলিয়ার শাড়িই বলা উচিত। বর্তমান ডামাডোলে তিনি কোন বক্তব্য দিয়েছেন কি না জানি না। উনার এখনকার বক্তব্য জানতে পারলে ভাল হত। 
    রঘুনাথ বসাক আরও বলেছেন যে টাঙ্গাইলে সুতির কাপড়ের জন্য যে আবহাওয়া তা আর কোথাও এমন করে মিলে নাই দেখেই এখানে স্থির হয়েছিল আদি কালে সব তাঁতি। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছে, কেউ কিশোরগঞ্জ গিয়েছে, কেউ রাজশাহী গিয়েছে। কিন্তু ঘুরে ফিরে টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীর আবহাওয়ার সাথে সুতি কাপড় তৈরীর একটা উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়। দুইটার সংমিশ্রণ একটা ভাল কাপড় তৈরি হয়। 
    যাই হোক, বাংলাদেশ থেকে এখন সম্ভবত আবেদন করা হচ্ছে। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়! 
  • hu | 2607:fb90:8d88:5d8b:ac39:c1b7:6978:784e | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:২৭528305
  • বীরেন বসাকের ফেসবুক পোস্ট কদিন আগেই দেখেছিলাম। এখানে দেওয়া হয়নি।
     
     
    আমাদের গর্বের টাঙ্গাইল শাড়ী জি আই ইন্ডিকেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা যারা টাঙ্গাইল শাড়ী বুনে এসেছি ওপার বাংলা থেকে  ছোটবেলার থেকে তাদের কাছে এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি।

    একটু বলি টাঙ্গাইল শাড়ি ওফ ওয়েস্টবেঙ্গল এর জি আই ইন্ডিকেশনের লাস্ট হিয়ারিং এর দিন রাজ্য সরকার এর  থেকে তৎকালীন টেক্সটাইল দপ্তরের শ্রী অসিত বরণ মাইতি সাহেব যিনি বর্তমান বাংলার শাড়ির চিফ মার্কেটিং অফিসার,আমি এবং আরো কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম সেদিন মাইতি বাবুর নেতৃত্বে  থাকতে পেরে খুশি হয়েছিলাম কারণ জি আয় দপ্তর থেকে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর অসাধারণ ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন,আর রাজ্য সরকার আমায় সেদিন ডেকেছিলেন এর জন্যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি  এর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।
    আমার ভালোলাগা এটাই যে আমাদের টাঙ্গাইল শাড়ী আজ বিশ্বের  মানচিত্রে শাড়ির জগতে আরো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন জায়গা করেনিলো।

    ছবি - TANGAIL SAREE OF WEST BENGAL.
    বিশেষত্ব - শাড়ির ফিতে,তেরচি কিছু ক্ষেত্রে থাকবে  আর নকশা থাকবেই,এই নকশা হবে মেশিনের সাহায্যে,আর শাড়ী টি হাতে বোনা হবে।আঁচল হবে লাইন। শাড়ী কোনো সময় এক ঝাপে বোনা হবে কিংবা প্রতি ঝাপে বোনা হতে পারে।
     
     
    --+++++++++---
     
    দেখুন, উনি কিন্তু বলছেন টাঙ্গাইল শাড়ি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল। এই নামে যদি জি আই ট্যাগ নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে মনে হয় আপত্তির অবকাশ নেই।
     
  • hu | 2607:fb90:8d88:5d8b:ac39:c1b7:6978:784e | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:৪৬528306
  • প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটাও থাক। এখানে দুটো জিনিস প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত একই ভৌগোলিক পরিবেশের দুটো দেশের মধ্যে মেধাসত্ত্ব ভাগ হওয়ার নজির আছে। দ্বিতীয়ত, এখানে বলা হচ্ছে "অন্য দেশের কোনো এলাকার নামে পণ্য জিআই স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী"। কিন্তু এই টইতেই আমি জানতে পারলাম টালাভেরা পটারির জি আই ট্যাগ মেক্সিকো পেয়েছে। অথচ টালাভেরা জায়গাটি স্পেনে। স্পেনের এই জায়গাতেই এই শিল্পের জন্ম এবং সেখান থেকে স্প্যানিশ শাসকদের মাধ্যমে এই জিনিস মেক্সিকোতে আসে। কাজেই অন্য দেশের জায়গার নামে কোনো শিল্পের জি আই নেওয়া যাবেনা এই বিষয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়াশা আছে। আমার তো মনে হয় কোনো পক্ষেরই এখানে " বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী" মনোভাব থাকা উচিৎ নয়। জি আই ট্যাগ পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে সেই শিল্পের গুরুত্ব ও মূল্য বেড়ে যায়। দুই দেশই সেটা ভোগ করলে আপত্তির তো কিছু নেই। বিশেষ করে বসাক তাঁতিরা যেখানে ব্যাবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে নয়, বরং বিপন্ন হয়ে অন্য দেশে গেছেন। 
     
    -----------------------
     
     
    https://www.prothomalo.com/opinion/column/acpgtfam03

    টাঙ্গাইল শাড়ি কীভাবে ভারতের হয়
    রাফসান গালিব

    আমাদের কাছে ঐতিহ্য বিষয়টিই যেন জৌলুশ হারানো কোনো চরিত্র বা ইতিহাসের বেদনা বয়ে বেড়ানো কোনো ধ্বংসস্তূপ। সেটির মাঝে প্রাণ সঞ্চার করা বা পরম মমতায় লালন করে যাওয়া বা গৌরবের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রাখার বিষয়টি যেন বেমানান। ফলে কত ঐতিহ্য নিত্যক্ষয় হয়ে যায়, মানুষের চিন্তা-মনন থেকেও ধীরে ধীরে মুছে যায়, তার খবর কে রাখে!
    তাঁতশিল্প হচ্ছে আমাদের এমনই এক ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের ভেতরেও আছে ক্ষয় হয়ে যাওয়া বা ক্ষয়িষ্ণু আরও ঐতিহ্য—জামদানি, মসলিন, টাঙ্গাইল শাড়ি ইত্যাদি। কত হাজার তাঁত বন্ধ হয়ে যায়, কত লাখ তাঁতশ্রমিক বেকার হয়ে যান, কত তাঁতি নিজের পূর্বপুরুষের ভিটা ফেলে ভারতে পাড়ি জমান, সেখানে নতুন করে সাজায় তাঁতঘর, তাতে কার কী আসে-যায়!
    গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজস্ব জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলে, ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রং এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।’

    স্বাভাবিকভাবেই ভারতের এ ঘোষণায় বাংলাদেশের মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা। বাংলাদেশের হাজারো মানুষ ভারতের মন্ত্রণালয়টির ফেসবুক পোস্টের নিচে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই প্রতিবাদে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের প্রভাব, সীমান্ত হত্যাসহ আরও অনেক বিষয় মিলেমিশে একাকার। সবারই একটিই প্রশ্ন, টাঙ্গাইল শাড়ি কীভাবে ভারতের হয়? এ দাবি ভারত করতে পারে কি না?
    টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গেই এর নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা ভৌগোলিক অবস্থান যুক্ত। মানে এটি এমন একটি শাড়ি, যার উৎপত্তিই হচ্ছে টাঙ্গাইলে। আর এই টাঙ্গাইল হচ্ছে বাংলাদেশের একটি জেলা।
    এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্র শেখর সাহার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্বের দাবি কোনোভাবেই ভারত করতে পারে না। কারণ, ভৌগোলিকভাবে টাঙ্গাইল কোনোকালেই পশ্চিমবঙ্গের ছিল না। তারা অন্য নামে তাদের শাড়ির জিআই স্বীকৃতি দিতে পারে, কিন্তু সেটির সঙ্গে টাঙ্গাইল নাম থাকলে কোনোভাবে যৌক্তিক হবে না।

    জিআই স্বীকৃতি কী
    কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দেশে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন পাস হয় ২০১৩ সালে।
    ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে ডিজাইন, পেটেন্ট ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে সরকারের এ বিভাগটি। এখন পর্যন্ত দেশে জামদানি, ইলিশ, রাজশাহীর সিল্ক, বগুড়ার দই, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চালসহ ২১টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।
    কোনো একটি পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যগুলো অন্য দেশের সমজাতীয় পণ্য থেকে আলাদাভাবে চেনা যায়। এর ফলে ওই পণ্যের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়।
    ডিপিডিটি কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় জিআই পণ্য এগিয়ে থাকে। ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত এর বাড়তি দাম পাওয়া যায়। তাদের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর পণ্যগুলোর রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে।

    টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাসবৃত্তান্ত
    প্রাচীন আমল থেকে এ দেশের কৃষির পর গ্রামীণ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ভিত ছিল তাঁতশিল্প। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত রিহলাতে বাংলার তাঁতবস্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।
    এ ভ্রমণবৃত্তান্ত জানাচ্ছে, সেই সময় সুতি কাপড় ছিল বাংলার অন্যতম রপ্তানি পণ্য। সোনারগাঁ থেকে দিল্লির সুলতানের দূত হিসেবে চীন যাওয়ার পথে ইবনে বতুতা কিছু মুসলিম অধিবাসীর দেখা পান, যাঁরা বাংলা অঞ্চল থেকে উন্নত সুতিবস্ত্র এনে নানা জায়গায় বিক্রি করেন।
    ইবনে বতুতার এ ভ্রমণবৃত্তান্ত ছিল ১৪ শতকের। এ থেকে ধারণা করা যায়, এ অঞ্চলের তাঁতের বয়স কত প্রাচীন।
    বাংলার এ নিজস্ব পোশাক তৈরির ঐতিহ্যের রক্ষাকবচে প্রথম আঘাত আসে ব্রিটিশ আমলে। সে সময় ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারের মেশিনে তৈরি কাপড়ের প্রসার ঘটে এ অঞ্চলে।
    তবে ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের মেশিনে তৈরি কাপড়ের বর্জনের ডাক দিলে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলার তাঁতবস্ত্র। সে সময়টাতে পুরান ঢাকাসহ সোনারগাঁ ও আশপাশের অঞ্চল থেকে তাঁতশিল্পের প্রসার ঘটে টাঙ্গাইলসহ আরও অনেক জায়গায়।

    টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষকের ‘স্ট্যাটাস অব হ্যান্ডলুম ওয়ার্কার্স অ্যান্ড কজেস অব দেয়ার মাইগ্রেশন: আ স্টাডি ইন হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রি অব টাঙ্গাইল ডিস্ট্রিক্ট, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রে টাঙ্গাইলে তাঁতের প্রসার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
    তবে সুব্রত ব্যানার্জি, মো. মনিরুজ্জামান মুজিব ও সুমনা শারমীনের এ যৌথ গবেষণাটি মূলত টাঙ্গাইলের তাঁতিদের ভারতে অভিবাসী হওয়া নিয়ে একটি মাঠ পর্যালোচনা।
    ঐতিহাসিকভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের তাঁতিরা। পরে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন মুসলিমরাও। তবে টাঙ্গাইলের পাথরাইল ইউনিয়নের হিন্দুদের বসাক সম্প্রদায়ের অবদান আলাদাভাবে উচ্চারিত হয়।
    এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাকের সঙ্গে কথা হয়। বংশ পরম্পরায় পাঁচ–সাত পুরুষ ধরে তাঁর পরিবার তাঁত বুনে আসছেন। তাঁর দাবি, টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য অন্তত পাঁচ শ বছর।
    তিনি বলেন, ‘বসাক হিন্দুদের কোনো সম্প্রদায়ের জাত-পদবি নয়। বসে বসে তাঁতের কাজ করার কারণে তাঁদের পদবি বসাক হয়ে ওঠে। মূলত তাঁত বোনা হিন্দুদের জাত-পদবি হচ্ছে তন্তুবায়।’

    তাঁতের দুর্দিন ও তাঁতিদের অভিবাসন
    ২০১৪ সালে রিসার্চ অন হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত তিন গবেষকের গবেষণাপত্রটি বলছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হওয়ার ভীতি, কাঁচামালের খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া, সরকারের কাছ থেকে ঋণ না পাওয়া, পণ্য পরিবহনে সংকট, ব্যবসায়িক নিরাপত্তার অভাবের কারণে হিন্দু তাঁতিরা ধীরে ধীরে এ দেশ থেকে ভারতে অভিবাসী হন।
    দেশভাগ ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর এ অভিবাসনে বড় ধাক্কাটি আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর। গবষণাপত্রটিতে এর একটি নমুনা পাওয়া যায়। যেমন, পাথরাইলের নলশোধা গ্রামে স্বাধীনতার পরেও ৩ হাজার ২০০ হিন্দু তাঁতি পরিবার ছিল, কয়েক দশকের মধ্যে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ২২ পরিবারে।
    তবে এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা ও ঋণের সহজলভ্যতা সে দেশে টাঙ্গাইল শাড়ির তাঁতশিল্প প্রসারে বড় ভূমিকা রাখে। এ কারণে সে দেশে যেতে আকৃষ্ট হন হিন্দু তাঁতিরা।
    পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছে, গত দুই-আড়াই দশকে হাজার হাজার তাঁত ইউনিট বন্ধ হয়ে যায় টাঙ্গাইলে। ২০০৬ সালের ৮ আগস্ট বিডিনিউজটুয়েন্টফোর এক প্রতিবেদন বলছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বল্লা–রামপুরে গত চার মাসে অন্তত পাঁচ হাজার তাঁত ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। তবে করোনা মহামারির ধাক্কা টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের মন্দা আরও বাড়িয়ে দেয়।
    সংবাদমাধ্যমের আরও কিছু শিরোনাম— টাঙ্গাইলের ৬০ ভাগ তাঁতকল বন্ধ, নেই শাড়ি তৈরির ধুম (ঢাকা পোস্ট, ২৮ এপ্রিল, ২০২২),  লোডশেডিংয়ে বিপদে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প, ঋণ পরিশোধই চ্যালেঞ্জ (বিডিনিউজটুয়েন্টফোর, ৪ জুলাই ২০২৩), করোনা ও বন্যায় টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প অস্তিত্ব সংকটে (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৮ আগস্ট ২০২০), টাঙ্গাইলে তাঁতিদের পথে বসার উপক্রম (প্রথম আলো, ২২ এপ্রিল, ২০২১)
    কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, পুঁজি সংকট, আশানুরূপ বিক্রি না হওয়া বা আগের মতো চাহিদা না থাকা মানে বাজারজাতকরণে সমস্যা এবং শিল্প পুনরোদ্ধারে সরকারের অবহেলার বিষয়গুলো ঘুরেফিরে এসেছে এসব প্রতিবেদনে।
    রঘুনাথ বসাক বলেন, টাঙ্গাইলের তাঁতি সম্প্রদায়ের ওপর বারবার অভাবের আঘাত আসে। বিশেষ করে পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষ ছিল এখানে বড় একটি ধাক্কা। আশির দশকে প্রেসিডেন্ট সাত্তারের আমলে তাঁতিদের ঘরে শাড়ি ছিল কিন্তু ভাত ছিল না। এসব দুঃসময়ে ধাপে ধাপে তাঁতিদের বড় একটি অংশ ভারতে চলে যান। সাম্প্রদায়িক হানাহানির কারণেও অনেক তাঁতি চলে যান।
    তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এসব তাঁতিকে সুতা, ঋণসুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। তারাও তাদের শাড়ির নাম দেয় টাঙ্গাইল শাড়ি এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সেসব শাড়ি কিনে নিত। আর এখানে তাঁতিদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ছিল সব সময়। তিনি বলেন, ‘এখন টাঙ্গাইলের তাঁতিদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের।’
    তবে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করা ঢাকার পোশাক প্রস্তুত ও বিপণন প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনার পরিচালক শাহিদ হোসেন শামীম বলছেন, তাঁতিরা পশ্চিমবঙ্গে গেলেও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অধিকাংশই সেই পেশায় থাকেননি। শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রগতির ফলে তাদের অনেকে আরও উন্নত পেশায় চলে গেছেন, যেমন কেউ হয়েছেন প্রকৌশলী, কেউ চিকিৎসক বা কেউ শিক্ষক। এখন পশ্চিমবঙ্গে বসাক সম্প্রদায়ের কেউ সেই অর্থে টাঙ্গাইল শাড়ি বোনেন না। সেখানে অন্য তাঁতিরা বরং স্থানীয় ঐতিহ্যের কিছু শাড়িকে এখন টাঙ্গাইল শাড়ি নামে চালান।

    তিনি বলেন, এখনো প্রতি সপ্তাহে ট্রাকে করে টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে রপ্তানি হয়। ২০১৪ সালের গবেষণাপত্রটিও বলছে, প্রতি সপ্তাহে ভারতে যাওয়া সে শাড়ির সংখ্যা ৫০ হাজার পিস।

    ভারতের দাবি কতটা যৌক্তিক
    ভারত সরকারের জিআই জার্নাল নং-১৭৮ এ বলা হয়েছে, বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) টাঙ্গাইল শাড়ি পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) টাঙ্গাইল থেকে আসেনি। এটি বরং শান্তিপুর নকশা ও ঢাকা-টাঙ্গাইলের একটি হাইব্রিড বা সংকর।
    এখন সেই শাড়িকে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে ভারত জিআই স্বীকৃতি দিতে পারে কী না। এ বিষয়ে রঘুনাথ বসাক বলেন, ‘এখন আমার পরিবারের কেউ আমেরিকায় গিয়ে শাড়ি তৈরি করা শুরু করল। সেটি কি কখনো টাঙ্গাইলের শাড়ি হতে পারে? সেই শাড়ির নাম অন্য কিছু হতে পারে, কিন্তু টাঙ্গাইলের শাড়ি কোনোভাবেই নয়।’
    চন্দ্র শেখর সাহা বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গারা যদি তাদের দেশে ফেরত যেতে না পারে, পরবর্তী সময়ে তাদের কোনো ঐতিহ্যকে কি আমরা নিজেদের বলে দাবি করতে পারব?’
    এর আগে বাংলাদেশে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া নকশিকাঁথা, জামদানি ও ফজলি আমকে নিজেদের পণ্য বলে দাবি করে ভারত। অতীতে বাংলাদেশ ও ভারত একই ভূখণ্ড থাকায় এ সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে বলে দৈনিক বণিক বার্তাকে বলেন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টারবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মো. আতাউল করিম।
    তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগোলিকভাবে দীর্ঘদিন একই সঙ্গে অবস্থান করায় দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় হয়েছে। এতে কিছু বিষয়ের উৎপত্তি নিয়ে ঘোলাটে অবস্থা তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে ইতিহাস পাঠ করে সেগুলোর মীমাংসা করতে হয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। এসব পণ্যকে বলা হয় হোমোনেমাস জিআই। এ ধরনের পণ্যে দুই দেশই জিআই স্বত্ব নিতে পারে। তবে কোনো একটি পণ্যের দাবি করা নিয়ে যদি বাজারে মিসলিডিং বা কনজিউমার কনফিউশন তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে একাধিক দেশ দাবি করতে পারবে না।’

    দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পণ্য বা ঐতিহ্য কম নয়। গত ১০ বছরে মাত্র ১১টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি হয়েছে। তবে ২০২৩ সালে এক বছরেই ১০টি পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে। দেশের প্রথম জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পায় জামদানি। তবে জামদানি শাড়ি এবং ইলিশ প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। ভারতের ‘জামদানি’ জিআই স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছিল। পরে অবশ্য ওই জামদানি ‘উপধা জামদানি’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

    তাঁত বোর্ড কী করছে
    টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত নিজেদের দাবি করার পর এমন সমালোচনা ওঠেছে, বাংলাদেশ এতদিন কী করেছে? অনেকে মনে করছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষগুলোর অবহেলা, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতবস্ত্র টাঙ্গাইল শাড়ির দাবি বাংলাদেশ থেকে হাতছাড়া হয়ে গেল।
    এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সদস্য (এসঅ্যান্ডএম) যুগ্ম সচিব দেবাশীষ নাগের সঙ্গে কথা হয়। তিনি দেশের তাঁতপণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য বোর্ডের একটি কমিটির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে তিনি বোর্ডে যোগ দিয়েছেন। এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি ছিল, তিনি জানতেন না। তবে বোর্ডের চেয়ারম্যানের আহ্বানে সপ্তাহ দুয়েক আগে তাঁরা কমিটির একটি মিটিং করেন। সেখানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ আরও তাঁতপণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য আলোচনা হয়েছে। নানা তথ্য–উপাত্ত, নমুনা সংগ্রহের জন্য সাবকমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দ্রুত কাজ করছেন।
    বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুর রহমান বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি নিয়ে ভারত যা করেছে, তা মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। জামদানির জিআই হাতছাড়া হওয়ার পর থেকে তারা সুযোগ খুঁজছিল।
    তিনি বলেন, ‘গত মাসে ভারতের এ কার্যক্রমের বিষয়টি জানতে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে বুঝতে পারি, তিনি এ-সংক্রান্ত কিছুই জানেন না। এমনকি তাঁত বোর্ডের জিআই পণ্যের আবেদনবিষয়ক কমিটির অনেকেও জানেন না এবং এ-সংক্রান্ত ফাইল দুই মাস ধরে পড়ে আছে। ফলে ভারতের কাছে আপত্তি বা আবেদন জানানোর সুযোগ থাকলেও তা করা যায়নি।’
    তবে বাংলাদেশেরও টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন ডিজাইন, পেটেন্ট ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) মো. রাশিদুল মান্নাফ কবীর।
    তিনি বলেন, ‘তখন এটি হবে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি বা আলাদা করে দেশের নাম উল্লেখ থাকবে।’

    কিন্তু টাঙ্গাইল যেহেতু বাংলাদেশের জেলা, এর নামে সুখ্যাতি পাওয়া কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি অন্য কেউ দাবি করতে পারে কি না, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, টাঙ্গাইল নামে ভারতের কোনো জায়গার নাম নেই। অন্য দেশের কোনো এলাকার নামে পণ্য জিআই স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
    • রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: [email protected]

     
  • বিপ্লব রহমান | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫১528320
  • ঘুম ভেংগে বেশ মজা হয়েছে  
    একটা এঁড়ে গরু বেড়া ভেংগে
    খেজুর গাছে চড়েছে! devil
  • Khak | 2409:4060:2193:b902:7654:e115:f47c:e192 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪০528573
  • জি আই নিয়ে সমস্যাটি মূল কারণ হচ্ছে দুই বাংলার উত্তরাধিকারে বহিঃশত্রু দিল্লির মাথা গলানো l কোলকাতা আর ঢাকা এক জায়গাতে বসলেই প্রব্লেম সল্ভ হয়ে যাবে l দিল্লির বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকারই দায়ী এর জন্য l
  • হীরেন সিংহরায় | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৬528602
  • ফেতা চীজ যেমন গ্রিসের । অন্যত্র সেই পদ্ধতিতে চীজ বানানোয় বাধা নেই। নাম ব্যবহারে আছে 
  • Arindam Basu | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১৩528623
  • ফেটা চীজ গ্রীসের Protected Designation of Origin ধরণের জি আই ট্যাগ, বহু নন গ্রীক ফেটা চীজ পাওয়া যায়, এই নিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে গ্রীসের আইনি লড়াই হয়েছিল। গ্রীকরা যেখানে ভেড়ার বা ছাগলের দুধ ব্যবহার করে, অন্যরা গরুর দুধ ব্যবহার করে, ফলে দুটো এক নয়, কিন্তু চীজটা ফেটা ই। নন-গ্রীক ফেটা। 
     
    বাংলাদেশ আর ভারতের টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে এই লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ PDO র দাবী করবে। 
    এখন ব্যাপারটা ভারত বাংলাদেশের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের ওপর একটা প্রভাব ফেলতে পারে, বা বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের FTA তে শাড়ী protected item হিসেবে বাংলাদেশের PDO হলে ভারত কিভাবে নেয় দেখার। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:১১528625
  • গ্রিস কেস জিতেছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোর্টের রায় অনুযায়ী ফেতা নাম ব্যবহারের অধিকার কেবল গ্রিসের যদি না সেটা ইউনিয়নের বাইরে রপ্তানি হয় ( ১৪/৭/২২ রুলিং ) 
  • Arindam Basu | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:৪৪528626
  • হ্যাঁ, এই কারণেই গ্রীক এবং নন গ্রীক ফেটা চীজ বোঝাতে বাবহার করা হয়। 
    ফলত, শুধু স্থান নামই নয়, তৈরীর স্থাননাম এবং তৈরীর কৌশলকেও রক্ষা করার একটা ব্যাপার থাকে, যার বাজার দখল নিয়ে এত বিসম্বাদ। টাঙ্গাইলের শাড়ির ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং । 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন