এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জিওরদানো ব্রুনো—সত্যনিষ্ঠার এক অনির্বাণ জাগপ্রদীপ # এক

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ | ১৮২৩ বার পঠিত
  • [আগামি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বিজ্ঞান শহিদ জিওরদনো ব্রুনোর ৪১৭-তম মৃত্যু বার্ষিকী। এই উপলক্ষে আমি ব্রুনো সম্পর্কে আমার একটি লেখা কয়েকটি ভাগে এখানে সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। যাঁরা ওই দিন বা ওই সময়ে ব্রুনো চর্চা করবেন, তাঁদের কাছে আনুষঙ্গিক এই সব তথ্য থাকা দরকার। যাঁরা এগুলো ইতিমধ্যেই জানেন, তাঁরা এটাকে স্বচ্ছন্দে অগ্রাহ্য করতে পারেন। আজ শুরু হল প্রথম অংশ।]

    জিওরদানো ব্রুনো (১৫৪৮-১৬০০) মানব ইতিহাসের এক বিস্ময়কর চরিত্র। সময়ের নিরিখে, সংগ্রামের নিরিখে, চিন্তা ও ঘোষণার নিরিখে, নিশান এবং নিশানার নিরিখে এমন আর একটি মানুষকে খুঁজে পাওয়া বড়ই কঠিন। শুধু ইতালির ইতিহাসে নয়, শুধু ইউরোপের ইতিহাসেও নয়, সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসেই তাঁর সমতুল্য আর একজনও মানুষকে আমরা দেখতে পাই না, যিনি সত্যের জন্য বিজ্ঞানের একটা তত্ত্বের সপক্ষে এবং সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের স্বার্থে এত নির্ভীকভাবে সংগ্রাম করে গেছেন, মিথ্যা এবং ইতিহাসের ফসিল-তুল্য শক্তির হাতে এত নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে বাধ্য হয়েছেন। একদিকে, ইতালির প্রগতিশীল জনসাধারণের কাছে, এবং সারা পৃথিবীর যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের কাছে তিনি বিজ্ঞান-শহিদ-এর মর্যাদা পেয়েছেন। আবার অন্যদিকে, কূটতার্কিক বিচারপতিদের অণুবীক্ষণ-দূরবীক্ষণের তলায় ফেলে করা নিখুঁত মূল্যায়নে তিনি বাচাল, তর্কচঞ্চু, ধর্মবিরোধী, ঈশ্বরবিদ্বেষী, পোপ-নিন্দুক, গির্জাবিধ্বংসক, কালাযাদু-প্রচারক, ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত হয়ে অসম্মানের পাদটীকায় নিক্ষিপ্ত হয়েছেন।

    আমি আমার সীমিত সাধ্য নিয়ে এই প্রবন্ধে চেষ্টা করব, তাঁর একটা বাস্তবসম্মত পরিচয় তুলে ধরতে, ইতিহাসের কাছে তাঁর গুরুত্ব কোথায়, স্থান কোথায়, আমাদের মতো বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির শিবিরের কাছেই বা তিনি কেন এত শ্রদ্ধার্হ -- সে সম্পর্কে একটা যথোপযুক্ত বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে।
    কাজটা কঠিন।

    পুরনো ইতিহাসের বহু তথ্যই এখন আর তর্কাতীতভাবে সংগ্রহ ও প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়। যাঁরা ব্রুনোর পক্ষে বলেছেন, তাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। যাঁরা তাঁর বিরূপ-মূল্যায়ন করেছেন, তাঁদের সকলেই যে একেবারে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টীয় গির্জার ধামাধরা দালাল গোছের লোক তা কিন্তু নয়। অনেকেই তাঁরা চার্চের বিজ্ঞান বিরোধী ভূমিকার কঠোর সমালোচক। স্বাধীন বিজ্ঞান চর্চার পক্ষেই তাঁরা। যেমন, বাংলায় প্রথম বিজ্ঞানের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লেখক সমরেন্দ্র নাথ সেন। তিনি যথা সম্ভব তথ্যনিষ্ঠভাবেই লিখেছেন, কোপারনিকাস বা গ্যালিলেওর কাজ গভীর আবেগের সাথে বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন। সেই তিনিও কিন্তু ব্রুনোকে পছন্দ করেননি। ব্রুনোর কথা ও সমালোচনা একটি মাত্র বাক্যে সাঙ্গ করে ফেলেছেন। [সেন ১৯৯৪, ২য়, ৩০৬] এই সব তথ্য সামনে রেখেই আমাদের খুব সাবধানে এগোতে হবে।

    ব্রুনো বিজ্ঞানী নন, পরিপূর্ণ অর্থে দার্শনিকও নন। তিনি বিজ্ঞানের একজন লোকপ্রিয় প্রচারক হিসাবে আসলে সেই সময়ের ইতিহাসে একটি জরুরি হাইফেন-ভূমিকা পালন করে গেছেন। কোপারনিকাস আর গ্যালিলেওর মাঝখানে এক হাইফেন; আবার, গ্যালিলেও-কেপলারের মাঝখানেও তাই। সেই জায়গাটাই আমাদের বুঝে নিতে হবে।

    [১] জানার বিপদ
    সংসারে কিছু কিছু ব্যতিক্রান্ত মানুষের দেখা মেলে। ১৫৪৮ সালে ইতালির নেপল্‌স রাজ্যের ছোট জনপদ নোলা নগরে জিওভান্নি ব্রুনো এবং ফ্রাউলিসা সাভোলিনোর ঘরে ফিলিপ্পো নামে যার জন্ম হয়েছিল, সেও ছিল এই রকম একজন ব্যক্তিক্রমী শিশু। পড়াশুনায় ভালো, মেধাবী, জটিল জিনিস সহজে এবং সহজ করে বুঝতে পারে, স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। পনের বছর বয়সে তখনকার রীতি অনুযায়ী খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা নিয়ে সে গেল এক ডমিনিকান মঠে পড়াশুনা করতে। আর ইতিমধ্যে যে শিক্ষকের কাছে সে দর্শনের পাঠ নিয়েছিল, শ্রদ্ধা বশত তাঁর নাম (জিওরদানো ক্রিস্পো) থেকে একটা অংশ সে নিজের নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জুড়ে দিল। এইভাবেই সে একদিন হয়ে উঠল জিওরদানো ব্রুনো। বাবা-মায়ের দেওয়া ফিলিপ্পো নামটা ক্রমশ হারিয়ে গেল।

    নাটক তখন থেকেই জমে উঠতে শুরু করল। ভালো ছাত্র বলে মঠের গ্রন্থাগারে ছিল তাঁর অবাধ অধিকার। আর সেই সুযোগে তিনি ভক্তিরসের বইগুলিকে যতটা নাড়াচাড়া করতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি হাতড়াতেন সেই সব গ্রন্থ যাদের সম্পর্কে মঠ কর্তৃপক্ষের ছিল বিরূপ মনোভাব। ১৫৭২ সালে নবিশি (ধর্মীয় শিক্ষার আনুষ্ঠানিক প্রথম ধাপ) শেষ করে পরিপূর্ণ পাদ্রি হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে নিতেই তিনি খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে কখন এবং কোথায় কে বা কারা বিশ্বাসের পরিধির বাইরে বেরিয়ে এসে পার্থিব যুক্তিতর্ক তোলার চেষ্টা করেছেন, সেই সব তথ্য খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলতে লাগলেন। এই যেমন আলেক্সান্দ্রিয়ার এক প্রাচীন চিন্তাবিদ ও পাদ্রি আরিউস (২৫০-৩৩৬)-এর কথা, যিনি ঈশ্বর মানলেও যিশুকে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে স্বীকার করেননি, একজন বিশিষ্ট নশ্বর মানুষ হিসাবে মানতে চেয়েছিলেন এবং সেই মতো প্রচার করেছিলেন। অথবা ধরুন হল্যান্ডের সেই ক্যাথলিক পাদ্রি মানবতাবাদী ও ইউরোপীয় নবজাগরণের একজন আদি ফসল দেসিদারিউস ইরাসমুস (১৪৬৬-১৫৩৬)-এর কথা, যিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে থেকেই তার বহু গোঁড়ামির সমালোচনা এবং নানা ভ্রান্ত আচার-বিচারের সংস্কার সাধন করতে চেয়েছিলেন। যাঁর থেকে পরবর্তীকালে মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) অনেক কিছু শিক্ষা ও প্রেরণা নিয়ে আরও দু ধাপ এগিয়ে যাবেন প্রোটেস্টান্ট ধর্মসংস্কারের পথে। চার্চের গ্রন্থাগারে এই সব পূর্বসূরিদের রচনা থাকলেও মঠের গুরুরা চাইতেন না, কেউ এসব নিয়ে পড়াশুনা বা গবেষণা করুক। কিন্তু ওই যে বললাম, জিওরদানো ব্যতিক্রমী মানুষ। তাঁর কাজের ধারা অন্যদের সাথে মিলবে কেন?

    একই ভাবে তাঁকে যখন মঠের পক্ষ থেকে ১৫৬৯ সালে রোমের ভ্যাটিকানে কিছু কাজে পাঠানো হয়, সেখানকার গ্রন্থাগারেই তিনি সন্ধান পেয়েছিলেন আরও একখানা বৈপ্লবিক পুস্তকের। লেখক নিকোলাস কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)। বইটির নাম De Revolutionibus Orbium Coelestium (স্বর্গীয় গোলকদের আবর্তন)। সদ্য বেরিয়েছে। পোপের নামে উৎসর্গীকৃত। কিন্তু, ওরকম একখানা ভালো বইকে বড় সাধুরা কেন জানি না উঁচু তাকেই ফেলে রেখেছে। কাউকে পড়তে বলছে না। শিক্ষক বা ছাত্রদের কেউ পড়ছেও না। মই বেয়ে উঠে তিনি ধুলো ময়লা ঝুল ঝেড়ে সেই বইটিকেও নিচে নামিয়ে আনলেন। পড়তে শুরু করে দিলেন। লাতিনে তাঁর তখন যে দক্ষতা তাতে বইখানা আদ্যপান্ত পড়ে ফেলতে কোনোই অসুবিধা হল না। বইটিতে কিছু অঙ্ক-টঙ্কের হিসাব আছে। তাও তাঁর কাছে কোনো বাধার কারণ হল না। গণিতশাস্ত্রে তিনি বরাবরই ধীশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। আর যত তিনি পড়েন ততই তিনি মুগ্ধ হন।

    আজ আমরা জানি বইটির বিষয়বস্তু কী ছিল। তখন অবধি গির্জার কর্তারা একে নিষিদ্ধ পাঠের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। কিন্তু এর সম্পর্কে তাদের বেশ একটু অস্বস্তি ছিল। এতে এমন কিছু বিষয় উত্থাপিত হয়েছে এবং এমনভাবে যে তা খ্রিস্টীয় ধর্মতন্ত্রের সনাতন ও প্রচলিত শিক্ষার সাথে খাপ খায় না। চার্চের জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞানের সঙ্গে ঠিক যেন মেলে না। প্রকাশক, লেখকের এক বন্ধু আন্দ্রেয়াস ওসিয়ান্দার, ভূমিকায় লিখেছেন যে এই বইতে পৃথিবীর যে আবর্তন গতির কথা বলা হয়েছে সেটা নেহাতই একটা কাল্পনিক প্রস্তাব (hypothesis)। এর সাথে বাস্তব গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধির কোনো সম্পর্ক নেই। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নানা রকম গাণিতিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হয়। কোপারনিকাসও এখানে সেরকমই করেছেন।

    একজন গড়পরতা পাঠক এতে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু জিওরদানোর এটা একেবারেই বিশ্বাস হয়নি, মনঃপুতও হয়নি। তিনি ভাবলেন -- এটা কী রকম কথা? নিছক কাল্পনিক একটা তত্ত্বকথার জন্য এত বড় একখানা বই লেখার দরকার কী? এত অঙ্ক-টঙ্ক কষার দরকারই বা কোথায়? হয়ত তিনি এও তখন জেনে গিয়েছিলেন: আরও আগে (১৫০৮ থেকে ১৫১৪ সালের মধ্যে কোনো এক সময়) কোপারনিকাস একটা ছোট পুস্তিকা লিখেছিলেন, মন্তব্যরাজি (Commentariolus), যার হাতে লেখা কিছু কপি তিনি খুব অল্পসংখ্যক ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের পড়তে দিয়েছিলেন।[1] তার মধ্যেও সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা ছিল। [Joshi 1974, 14-24] সুতরাং এই বড় বইটা পড়তে পড়তে জিওরদানো নিশ্চিত বুঝলেন, প্রকাশক সত্য কথা বলেননি। তিনি তখন তাঁর পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের কাছে বলতে লাগলেন, এত বড় যুগান্তকারী একটা আবিষ্কার শুধুমাত্র এই ভূমিকাটির জন্য সমাজে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। যিনি এটা লিখেছেন এবং যাদের উদ্দেশে লিখেছেন তারা সকলেই এক একটি আস্ত গর্দভ [উদ্ধৃত, Davies 1959, 43]।[2]

    নোলা ইতালির বড় শহর নেপল্‌স বা ভেনিস থেকে এমন কিছু দূরে নয়। ফলে পাঁচকান হতে হতে ধর্মগুরুদের কানে এসব আপত্তিকর কথা পৌঁছতে খুব বেশি দেরি হল না। তারাও সকলেই রে-রে করে উঠল। কোথায় সেই অবিশ্বাসী পাষণ্ড খ্রিস্টবিদ্বেষী? তলেমির শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করছে মানে ও ঈশ্বরের বিশ্ববিধানকেই চুনোতি জানাচ্ছে। ওর আর যাজক হবার যোগ্যতা নেই। ওকে ধরে বেঁধে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারো। ব্রুনোর বন্ধুরা তাঁকে বললেন, “তোমার আর এখানে থাকা বা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো এবং খোলাখুলি নিজের মতবাদ প্রচার করা নিরাপদ নয়।” জন্মস্থান, প্রিয় নোলা শহর, তাঁকে ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হল। চিরকালের মতো। আর কোনো দিন তিনি সেখানে ফিরে যেতে পারবেন না। বয়স তখন তাঁর আঠাশ বছর মাত্র। সাল ১৫৭৬।

    নোলা ছেড়ে বেরিয়ে খ্রিস্টীয় পাদ্রিদের শ্যেন চক্ষুকে এড়িয়ে ইতালির নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতেই ব্রুনো তাঁর মনের বিভিন্ন সংশয়গুলি ব্যক্ত করতে লাগলেন: কোপারনিকাসের তত্ত্বটা ঈশ্বর বা তাঁর বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে কেন ধরা হবে? তিনি নিজেও ঈশ্বরবিশ্বাসী, বিশ্ব চরাচরের সর্বত্র এক কল্যাণময় ঈশ্বরের উপস্থিতিতে তিনি আস্থা রাখেন। দার্শনিক অবস্থানে তাঁর মতবাদ অনেকটা সর্বেশ্বরবাদ[3] (pantheism)-এর কাছাকাছি। কিন্তু তাঁর বক্তব্য হল, ভূকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্বও তো মানুষেরই ধারণার ফসল। সেই প্রাচীন কালে আলেক্সান্দ্রিয়ায় বসে দ্বিতীয় শতাব্দের এক প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ, ক্লদিয়াস তলেমি (৯০-১৬৮) এই তত্ত্বের গাণিতিক কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন। তাতে তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে পৃথিবীকে রেখে তার চারপাশে সূর্য চন্দ্র বুধ শুক্র মঙ্গল বৃহস্পতি ও শনিকে আবর্তনশীল গ্রহ হিসাবে দেখিয়েছিলেন। তারপর নব্যপ্লাতোবাদী দার্শনিকরা তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দে এথেন্সের প্রথম বিশপ দিওনিসিয়াসের নামে এই তত্ত্বটিকে প্রথম খ্রিস্টীয় মর্যাদায় ভূষিত করে। তার অনেক কাল পরে, পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক খ্রিস্টান অধ্যাপক, পেতর লোম্বার্দ (১০৯৬-১১৬৪) দাবি করে বসলেন: “মানুষকে যেমন ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা ঈশ্বর ভজনা করতে পারে, তেমনি ঈশ্বর এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন মানুষের কাজে লাগানোর জন্য। তাই তিনি মানুষকে ব্রহ্মাণ্ডের ঠিক মাঝখানে স্থাপন করেছেন যাতে সে একই সঙ্গে সেবা দিতেও পারে, পেতেও পারে।” [উদ্ধৃত: White 1960, I, 117]

    অবশেষে, ত্রয়োদশ শতাব্দে এলেন মধ্যযুগীয় লাতিন ইউরোপের সর্বপ্রসিদ্ধ দার্শনিক তমাস অ্যাকুইনাস (১২২৫-৭৪)। খ্রিস্টীয় পরিমণ্ডলে তিনি একজন সন্ত হিসাবে বিবেচিত ও পূজিত হন। বিরাট ও ব্যাপক তাঁর বিদ্যাচর্চা। গির্জার সুবিধার্থে তিনি “ধর্মতন্ত্রের বিশ্বকোষ” (Summa Theologica) নামক একটি মহাগ্রন্থ লিখে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় বিষয়ের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক নির্দেশ করে গেলেন। তিনিও বলে গেছেন: পৃথিবীই জগতের কেন্দ্রে বিরাজমান। এরপর কার এত সাহস হবে একে বিরোধিতা করার?

    কিন্তু ব্রুনোর চিন্তা অন্য খাতে বইছে। মানুষের কি ঈশ্বরের বিধান বুঝতে ভুল হতে পারে না? একবার ভুল করে যা সে ভাবল, পরে বুঝলেও তা সে সংশোধন করতে পারবে না? ঈশ্বর মানুষকে কি শুধু ভুল করার অধিকারই দিয়েছেন? তিনি কি চান না -- মানুষ তার ভুলগুলি শুধরে নিতেও শিখুক? ইতালির প্রান্তে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে তিনি বক্তৃতা দিতে লাগলেন আর এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আবেদন জানালেন।

    খ্রিস্টীয় ধর্মতন্ত্রের ধারক-বাহকরা দেখল -- এ এক মহা সর্বনেশে কাণ্ড! যারা এই সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাবে, তারা আর শুধু মাত্র সেইটুকুতেই থেমে থাকবে না। তারা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর আছে কিনা, ঈশ্বর থাকতে পারে কিনা -- তা নিয়েও চিন্তা করতে শুরু করবে। ব্রুনোর বিরুদ্ধে পোপের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হল। তাঁকে ধর্মীয় কাঠামো থেকে বহিষ্কার করা হল। ব্রুনো বুঝলেন, ইতালি আর তাঁর পক্ষে নিরাপদ নয়। নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের খোঁজে তিনি ১৫৭৮ সালে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে দেশান্তরে গমন করলেন।

    কিন্তু -- হায়! ব্রুনোর মাপের মানুষদের আশ্রয় দেবার জন্য ইউরোপে তখন তেমন বড় একটা জায়গা কোথাও ছিল না!!

    সংযোজনী

    [1] পাঠকদের জানিয়ে রাখি, কোপারনিকাস এই ছোট পুস্তিকাটি লিখে খুব কাছের কয়েকজন বন্ধুকে পড়তে দিয়েছিলেন। তাঁদের থেকে যে ধরনের ফিরতি-মত (আধুনিক পরিভাষায়, ফিডব্যাক) পেয়েছিলেন, তাতে বুঝেছিলেন, তাঁর এই নতুন সৌরকন্দ্রিক বিশ্ব সংক্রান্ত মতবাদ খুব সহজে সমকালীন সমাজে গৃহীত হবে না। সেই কারণেই তিনি তাঁর বড় বইটা লিখেও বহুকাল ফেলে রেখে দিয়েছিলেন, ছাপতে দেননি। ছোট প্রবন্ধটির কথাও কাউকে খুব একটা বলেননি। জীবনের একেবারে শেষ দিকে তিনি অবশেষে একজন মাত্র বয়ঃকনিষ্ঠ বিশ্বস্ত শিষ্য হিসাবে পান গণিতের অধ্যাপক জর্জ জোয়াকিম রেতিকাস (১৫১৪-৭৪)-কে। তাঁকেই তিনি ভরসা করে এই ছোট প্রবন্ধটি গুরুর সামান্য উপহার হিসাবে দিয়ে যান।

    রেতিকাস আবার তাঁর মৃতুর এক বছর আগে, আরও কিছু কাগজপত্রের সঙ্গে, সেটা তুলে দেন থ্যাদিউস হাজেক (১৫২৫-১৬০০)-এর হাতে। ১৫৭৫ সালে কোনো এক রাজকীয় ভোজসভায় ড্যানিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে (১৫৪৬-১৬০১)-এর সাথে আলাপচারিতায় তিনি যখন বুঝতে পারেন, এই যুবকটি কোপারনিকাসের তত্ত্বের প্রতি সংশয় থাকলেও তাঁর একজন গুণগ্রাহী, তিনি ব্রাহের হাতে এই পুস্তিকার হস্তলিপি তুলে দেন। ব্রাহে অচিরেই এর আরও কয়েকটি অনুলিপি বানিয়ে জার্মানিতে তাঁর পরিচিত কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কাছে পাঠিয়ে দেন। ঘটনাচক্রে, সেই প্রবন্ধের কোনো শিরোনাম নেই দেখে ব্রাহে তার একটা নামও তৈরি করে দেন: Nicolai Copernici de hypothesibus motuum caelestium a se constitutis commentariolus, অর্থাৎ, Nicholas Copernicus' little treatise on the hypotheses formulated by himself for the heavenly motions. প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই শিরোনামের শেষ শব্দটি থেকেই পুস্তিকাটির বর্তমান প্রচলিত নামটি বিজ্ঞানী মহলে চালু হয়ে যায়।

    কিন্তু তারপর এই পুঁথিটি হারিয়ে যায়। (কোপারনিকাসের বড় বইটিরই মূল পাণ্ডুলিপি যেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি, সেখানে এটির এই পরিণতি তো আরও স্বাভাবিক।) এটা ছাপানো হয়নি, বেশি লোকের হাতেও পড়েনি। তাছাড়া, ব্রাহেও বেশি দিন বাঁচেননি। ফলে এ নিয়ে তদ্বির করারও কেউ আর রইল না। তিন শতাব্দ পরে ভিয়েনা শহরের অস্ট্রিয়ান জাতীয় গ্রন্থাগারে জনৈক গবেষক এই পুস্তিকার একটি হাতের লেখা পাণ্ডুলিপি দেখতে পান। তিনি সেটা কপি করে বাইরে এনে ১৮৭৮ সালে প্রথম ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। তারপর থেকেই আবার নতুন করে কোপারনিকাসের এই আদি রচনা নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

    [2] ব্রুনো ঠিকই সন্দেহ করেছিলেন। কোপারনিকাস সেই বইটি লেখা শেষ করে তাঁর পূর্বোক্ত অনুরাগী রেতিকাসকে দিয়েছিলেন ছাপানোর ব্যবস্থা করতে। রেতিকাস দায়িত্বটি অর্পণ করেন তাঁদের উভয়ের পরিচিত এক প্রোটেস্টান্ট যাজক আন্দ্রেয়াস ওসিয়ান্দারের (১৪৯৮-১৫৫২) হাতে। পুঁথি পড়ে ওসিয়ান্দার বুঝলেন, এর মধ্যে যে সব কথাবার্তা আছে তা যথেষ্ট বিস্ফোরক। বন্ধুত্বের দায় অস্বীকার করতে না পারলেও এর হুবহু প্রকাশনায় তাঁর সম্ভবত সায় ছিল না। কোপারনিকাসকে তিনি পরামর্শ দিলেন বইটিকে একটি গাণিতিক প্রস্তাব হিসাবে বের করতে। সেই মতো শুরুতে একটা ভূমিকা লিখে দিতে।

    কোপারনিকাস তাতে রাজি হননি। ওদিকে তিনি তখন এত অসুস্থ যে মুদ্রণের ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। কথিত আছে, মৃত্যুর আগে তিনি শুধু একখানা ছাপানো বই হাতে ছুঁতে পেরেছিলেন। এই ভদ্রলোক নিজেই তখন অস্বাক্ষরিত পূর্বকথিত ভূমিকাটি লিখে যোগ করে দিলেন।

    ধর্মপ্রাণ ওসিয়ান্দার এই কাজে নেমে যা করলেন তা খুবই ন্যক্কারজনক। বইতে শুধু এই রকম একটা গার্দভ ভূমিকা লিখেই তিনি ক্ষান্ত হলেন না। বইটার মূল নামে ছিল “আবর্তন”; তিনি এর সাথে জুড়ে দিলেন আরও দুটি শব্দ “স্বর্গীয় গোলকদের”, যাতে নামটা তলেমির তত্ত্বের সাথে মানানসই হয়ে ওঠে। অথচ কোপারনিকাস পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহদের সূর্যের চারদিকে আবর্তনের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। বইয়ের ভেতরেও কিছু কিছু জায়গায় কাটাছেঁড়া করে তিনি বইয়ের ভূমিকার সঙ্গে বিষয়বস্তুকে খানিকটা সঙ্গতিপূর্ণ করে তুললেন। বইতে কোপারনিকাস তাঁর চিন্তার পূর্বসূরি হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন অ্যারিস্তার্কাস, প্লুতার্ক, পিথাগোরীয় সম্প্রদায়, নিকলাস দ্য কুসা, প্রমুখর নাম, যাঁরা সকলেই নানা ভাবে পৃথিবীর আবর্তনের কথা বলেছিলেন। ওসিয়ান্দারের কাঁচিতে সে সব নাম বাদ পড়ে গেল। সমকালীন ছিদ্রাণ্বেষী পণ্ডিতেরা স্বভাবতই সেই সুযোগ নিয়ে কোপারনিকাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন -- তিনি পূর্বসূরিদের কাছে ঋণ স্বীকার না করে তাঁদেরই মতবাদকে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন।

    যে দু-একজনের সন্দেহ হচ্ছিল তাঁরা মিলিয়ে দেখতে গিয়ে মূল পাণ্ডুলিপি আর খুঁজে পেলেন না। ওসিয়ান্দার যে কোথায় তা লুকিয়ে রেখেছিলেন, কাউকে বলেনওনি, কেউ জানতও না। প্রায় আড়াইশ বছর পরে যখন তা খুঁজে পাওয়া গেল, তখন বোঝা গেল, সাধু ওসিয়ান্দার তাঁর বন্ধুর প্রতি কী সাংঘাতিক বিশ্বাসভঙ্গ করেছিলেন। [সেন ১৯৯৪, ২য় খণ্ড, ৩০৪-৬; Jeans 1947, 129-32]

    [3] আলোচ্য প্রসঙ্গে ইউরোপের ধর্মবিশ্বাস সংক্রান্ত কয়েকটি এই জাতীয় শব্দের অর্থ সকলের কাছে হয়ত পরিষ্কার নয়। তাই আমি এখানে এগুলো সম্পর্কে দু-চার কথা বলে রাখছি:

    (ক) ব্যক্তি ঈশ্বরবাদ (Theism): ধর্মবিশ্বাসের জগতে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মত, যেখানে ঈশ্বরকে ভাবা হয় সমগ্র সৃষ্টির শাসক ও অভিভাবক, ভালোমন্দের বিচারক, পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানকারী, জগত সংসারের অধিচালক, একজন দাপুটে ব্যক্তি-পুরুষ হিসাবে। যার রাগ হয়, আনন্দ হয়। যিনি নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনে একজনের পাপে এক সহস্র মানুষকেও সাজা দিতে এক লহমা দ্বিধা করেন না। যার কাছে নিয়মিত নির্দিষ্ট কায়দায় প্রার্থনা জানাতে হয় যাতে তিনি ক্রুদ্ধ না হন। ইত্যাদি। ধর্মতন্ত্রের (theology) পক্ষে এরকম মতবাদ নিয়ে চলাই সুবিধাজনক।

    (খ) সর্বেশ্বরবাদ (Pantheism): ধর্মবিশ্বাস-জাত এক রকমের দার্শনিক মতবাদ, যেখানে ঈশ্বর আর প্রকৃতিকে একাকার করে দেখা হয়। অর্থাৎ, যিনি ঈশ্বর তিনিই প্রকৃতি, কিংবা, যা কিছু প্রাকৃতিক শক্তি ও ঘটনা, তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরেরই অস্তিত্বের প্রকাশ। এই মতবাদ ইউরোপের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে। রেনেশাঁস-পূর্ব ইউরোপে একদিকে যখন ক্যাথলিক ধর্মমতের সংস্কার সাধনের আন্দোলন শুরু হচ্ছিল, অপরদিকে তখন নিরীশ্বরবাদের দিকে এক পা এক পা করে মানুষ এগোচ্ছিলেন। তারই মধ্য পন্থা হিসাবে সর্বেশ্বরবাদের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।

    (গ) বিমূর্ত-ঈশ্বরবাদ (Deism): এই মতবাদে ব্যক্তি ঈশ্বরের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে জগতের একজন মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী মহা শুভশক্তির কল্পনা করা হয়। এতে অধিকাংশ ধর্মীয় আচার বিচার অলৌকিকতায় বিশ্বাস ইত্যাদিকে অস্বীকার করে বিজ্ঞান ও যুক্তিতে আস্থা স্থাপন করে তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে খোঁজার কথা বলা হয়।

    (ঘ) বিমূর্ত-সর্বেশ্বরবাদ (Pandeism): জার্মানির পদার্থবিজ্ঞানী ও ধর্ম-দার্শনিক মাক্স বার্নহার্ড হ্বাইনস্টাইন অবশ্য ১৯১০ সালে ব্রুনোর মতবাদকে এই নতুন অভিধায় ভূষিত করেন। ব্রুনোর প্রকল্পিত যে অসীম সংখ্যক বিশ্ব (যা অসীম বিশ্বের ধারণা থেকে সামান্য হলেও আলাদা), ঈশ্বর তার সবর্ত্রই প্রাকৃতিক বস্তুর ও ঘটনার মাধ্যমে প্রকট -- এই মতবাদকে তিনি সর্বেশ্বরবাদ থেকে একটু স্বতন্ত্রভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন। তাই এই নতুন নামকরণ। [Weinstein 1910, 321] তবে এই শব্দবন্ধটি খুব একটা জনপ্রিয় বা সাধারণভাবে গৃহীত হয়নি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ | ১৮২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 233.176.55.220 (*) | ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৬61177
  • লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। এক জায়গায় অনেককিছু সুন্দরভাবে আনার জন্য।

    প্যানথেইস্ট হলে তিনি থেয়িস্ট হতে পারবেন না ? আর, বিমূর্ত ঈশ্বরবাদ হলে, বিজ্ঞান বা যুক্তি দিয়ে মঙ্গলাকাঙ্খী মহা শুভশক্তিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ?
  • ashoke mukhopadhyay | 127.223.219.62 (*) | ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৮:৩৯61178
  • প্যানথিস্ট = থিস্ট + আরও কিছু। যার মধ্যে মূলত প্রকৃতিকে ধরা হয়। আর, আজকের আমাদের দৃষ্টিতে মূর্ত বা অমূর্ত কোনো ঈশ্বরবাদ সঙ্গে নিয়েই বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের ভিত্তিতে মঙ্গল বা শুভকে এবং করা যায় না। কিন্তু আমরা যে সময়ের কথা বলছি, তখনও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এই চেতনা আসেনি। প্রশ্নটা যথার্থ।
  • ashoke mukhopadhyay | 127.223.219.62 (*) | ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৮:৫৩61179
  • বাক্যটা ভুল হয়ে গেল। অনুগ্রহ করে পাঠ করুন "মঙ্গল বা শুভকে আবাহন করা যায় না।"
  • ranjan roy | 24.99.38.145 (*) | ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ১২:১১61180
  • অশোকবাবু,
    পরবর্তী অধ্যায়গুলোর জন্যে সাগ্রহে প্রতীক্ষারত!
  • তাতিন | 213.110.242.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ১২:৫৮61181
  • ব্রুনোর ইনকুজিশনের ব্যাপারটা একটু তথ্য ধরে আলোচনা করলে ভালো হয়। সচরাচর একটা বিশ্বাস্কে ধোঁয়া দেওয়া হয় যে হেলিওসেন্ট্রিসিটি প্রচারের জন্য ব্রুনোকে মারা হয়েছিল। কিন্তু, যতটুকু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি, গ্যালিলিও-পূর্ব যুগে হেলিওসেন্ট্রিসিটি নিয়ে চার্চের সমস্যা ছিল না। বরং একটা পৃথক ধর্মমত প্রচারের জন্য ব্রুনোকে হত্যা করা হয়। খামখা ভদ্রলোককে বিজ্ঞান-যুক্তিবাদের শহিদ না বানিয়ে ধর্মমতের লড়াইকে ধর্মমতের লড়াই হিসেবে দেখানোই ভালো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন