এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - ১

    সুদীপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৭৭৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • “ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের রাজত্বকালে …”

    ফ্ল্যাশব্যাক! ক্লাস সিক্স, প্রাচীন যুগের ইতিহাস পড়াচ্ছেন শঙ্করবাবু, তাঁর উদ্যত ডানহাতের তর্জনী আর মধ্যমার সঙ্গে হাই পাওয়ারের চশমার আড়ালে ঘোলাটে চোখ ঘুরে চলেছে ঘরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত, বাঁহাতে ধরা বই যা তাঁর তেমন কোনো কাজে আসে না সিলেবাস মিলিয়ে নেওয়া ছাড়া, সবই যেন তাঁর কন্ঠস্থ! আমাদের উৎসুক মনের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছেন সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার, মিশর নামের দেশে যার উৎপত্তি। খুফু, সেতি, রামেসিস, নেফারতিতি, হ্যাৎসেপশুট নামগুলোর সঙ্গে পরিচয় ঘটছে, পরিচয় ঘটছে অদ্ভুত এক লিপির, ফুল, পাখি, সূর্য এসব দিয়েই যার অক্ষর, শব্দ, বাক্য গড়ে ওঠে! তার নাম হায়রোগ্লিফ! ক্লাস শেষ হতে লাইব্রেরী তন্ন তন্ন করে রেফারেন্স বই ঘেঁটে চলেছি যদি কোথাও কোনো সূত্র পাওয়া যায় এই লিপি শেখার আর নিজের নাম লিখে ফেলার, সাংকেতিক অক্ষরে! হায় রোসেটা পাথর, তোমার নাম সে বালখিল্যরা তখনও শোনে নাই, শোনে নাই শাম্পোলিয়ন বা থমাস ইয়াং-এর নাম! তার জন্যে অপেক্ষা আরও প্রায় বিশটা বছর! আর সামনে থেকে সত্যিকারের সেই দেওয়াল-ভরা রঙচঙে লিপি দেখা – আরও বছর দশ! ইতিহাস বই-এর পাতা থেকে সারি দিয়ে তিনটে পিরামিডের সামনে মধ্যমণি হয়ে বসে থাকা স্ফিঙ্কস স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে কোনোদিন ঘোর বাস্তবে নেমে এসে চোখের সামনে ধরা দেবে, ছুঁয়ে দেখবো তাদের, ভাবিনি তো!
     
    আমেরিকা, ইউরোপ কিছুটা ক’রে কাজের সূত্রে ঘুরে এলেও আফ্রিকার ভাগে এতদিন ছিল শূন্য! সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে এক হলো পিরামিড, বাকেট লিস্ট তো বটেই, ক্লাস সিক্স থেকে পিরামিড, ফারাও, স্ফিঙ্কস, হায়রোগ্লিফ-এর পোকা ঢুকেই ছিল; এবার যখন দাম্পত্যের বছর দশের ভরসা-ফুর্তি উপলক্ষ্যে বাইরে কোথাও ঘুরে আসা যাক বলে ভাবলাম, আমার আর প্রার্থনার দুজনের-ই প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়ালো মিশর বা ইজিপ্ট! আর মিশর গেলে একটু তার ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতেই হয়, অতএব ট্যুর বুকিং, প্যাকেজের খোঁজ-খবর ইত্যাদি চলার ফাঁকে কিনে ফেললাম ইতিহাস/ফিকশন নিয়ে বেশ কিছু বই, ই-পাব নামালাম আরও বেশ কিছু। টোবি উইলকিনসন, শচীন্দ্রনাথের সঙ্গে মিশেল মোরান, উইলবার স্মিথ, শ্রীপারাবত, এমনকি হালের অনির্বাণ ঘোষের হায়রোগ্লিফের দেশে, দুজনে মিলে সবই গিলতে লাগলাম গোগ্রাসে! হাতে মাত্র মাস দুয়েক বাকি যে! যথেচ্ছ গুগল করে ইতিহাসের ডকুমেন্ট খুঁজে ট্যুর প্যাকেজে উল্লেখ করা প্রতিটা জায়গা ভালো করে দেখে নিতে থাকলাম। এটা যে পরে কত কাজে লেগেছিল, বলার নয়! কারণ গাইডের থেকে শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাও ছবি, দ্রষ্টব্য খুঁজে নিয়ে গল্পগুলো ধরা যাচ্ছিল সহজেই, এমনকি কিছু অতিরিক্ত জিনিসও দেখে-বুঝে নেওয়া গিয়েছিল। নিজেরাই নিজেদের গাইড হয়ে একে অপরকে বুঝিয়ে দিয়েছি বা বলে উঠেছি, “এই তো এটা বইতে দেখেছিলাম” অথবা “এই তো সেই গল্পটা এখানে ধরা আছে” – এমন সব! তাছাড়াও উপাদানের তুলনায় সময়ের অপ্রতুলতা মেটাতেও সুবিধে হয়েছে।
     
    এবার আসি মিশর সম্পর্কে যা আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম আর যা আমরা বুঝেছি সেইটুকু জানিয়ে দিতে। আমরা অনেক দেখে শুনে মুম্বই-এর এক ট্রাভেল এজেন্টের (মানে এদের কলকাতার অফিস থেকে) থেকে প্যাকেজ বুক করেছিলাম আট রাত নয় দিনের, কলকাতা থেকে যেসব ট্রাভেল এজেন্টরা যায়, বারো দিনের কমে নয়, অথচ খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলাম এদের সব জায়গাই এক, দ্রষ্টব্য একটা শুধু বাদ আছে সেটা হল দাশুর, মেমফিস আর সাক্কারা। এখানে বলে রাখি, মিঠুনদার কাছে আমরা খুব-ই কৃতজ্ঞ, আমাদের প্যাকেজে ছিল সিভিলাইজেশন মিউজিয়াম বা এন এম ই সি (সেটাও অসাধারণ, শেষ অবধি বাদ পড়েনি), মিঠুনদার মতামত শুনে তার পরিবর্তে  আমরা ছোট্টো পরিবর্তন করেছিলাম সাক্কারা, দাশুর যাওয়ার জন্যে, যেটা স্থির হয়েছিল একেবারে মিশর পৌঁছে সরাসরি গাইডের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু দিন অনুযায়ী পরিকল্পনা সামান্য পরিবর্তন হওয়ায় এন এম ই সি-ও দেখা হয়েছিল ভালোভাবেই! প্যাকেজের কথায় আসি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজ ট্যুর এজেন্টের দায়িত্ব, সঙ্গে থাকা আর পরিবহনের যাবতীয় দায়িত্ব, এমনকি গাইডের ব্যবস্থাও তাদেরই। থাকার ব্যবস্থা সব-ই চার বা পাঁচতারা হোটেলে বা ক্রুজে আর পরিবহন সব-ই মার্সিডিজের বা ঐ ধরণের বাসে। এখানে বলি, আপনি যদি ভালো সংস্থার (যারা অন্ততঃ বছর দশের উপর এই ব্যবসায় আছে) প্যাকেজ ঠিক করেন, সবাই এখানে এমন-ই সুযোগ-সুবিধা দেয়, সবাই অমন-ই হোটেল দেয়, ক্রুজ , বাস ওই মানেরই দেয়। এমনটা নয় যে আমি অমুক ট্রাভেলের সঙ্গে গেলে তমুক সুবিধে বেশী পাবো। মিশরে পর্যটন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা, সুতরাং পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থাও ভালো, বাসে আমাদের সঙ্গে সবসময়-ই একজন পুলিশ থাকতেন, আর জায়গা বিশেষে এমনকি পুলিশের কনভয় পর্যন্ত (আবু সিম্বেলে যা হয়েছিল)। এমনকি পর্যটক-দের বাসের সামনে ট্রাফিক জমে গেলে সেসব পর্যন্ত খালি করে দিয়ে যায় পুলিশ এসে (আলেকজান্দ্রিয়া-তে যা হয়েছিল)।

    এরপর কারেন্সির খবর। এ এক অদ্ভুত দেশ, যেখানে নিজের দেশের কারেন্সি কেউ নিতে চায় না, ডলার বা ইউরো পেলে লুফে নেয়! এয়ারপোর্টে তো কোনো সম্ভাবনাই নেই, তাও বাজার, খুচরো দোকানে ইজিপশিয়ান পাউন্ড চলে। তাই এরপর কেউ যেতে চাইলে ইজিপশিয়ান পাউন্ড না নিয়ে ডলার (ইউ এস ডি) নিয়ে যান, সবচেয়ে সুবিধে।  তারপর আসি লোকজন, লোকজন ভালো, যদি না আপনার সঙ্গে খরিদ্দারির সম্পর্ক থাকে। পর্যটক-দের আশে পাশে যারা ঘুরছে এবং জিনিস বিক্রি করতে বা গছিয়ে দিতে চাইছে, জেনে রাখবেন আপনাকে ঠকাতেই তাদের আনন্দ। আপনি যদি তাদের সাথে ছবি তোলেন তাহলেও টাকা চাইবে, এমনকি আপনার ছবিতে তারা বা তাদের কোনো সামগ্রী ধরা পড়লে, তাতেও টাকা দাবী করতে পারে।  ছিনতাই-ও চলে অহরহ, অতএব সাধু সাবধান। যে কোনোরকম সাইড-ব্যাগ ব্যবহার না করে ব্যাকপ্যাক নেওয়া অনেক বেশী নিরাপদ আর সেটি দুই কাঁধে রাখুন। পার্স, মোবাইল ইত্যাদি হয় প্যান্টের সামনের পকেটে রাখুন অথবা ব্যাগে। তবে এরা এজেন্ট-দের সঙ্গে গেলে সেরকম দল থেকে দূরে থাকে, কারণ দলের সঙ্গে থাকে ট্যুরিজম পুলিশ। এই পুলিশরা শুধু বাসে নয়, খোলামেলা জায়গাতেও নিরাপত্তার খেয়াল রাখে (যেমন গিজার পিরামিড কমপ্লেক্স)।
     
    একা ঘুরবেন না প্যাকেজে ঘুরবেন? ঘুরতে যাওয়ার আগেও দেখেশুনে মনে হয়েছিল প্যাকেজে যাওয়া ঠিকঠাক, ঘুরে এসে আরও বেশী করে মনে হয়েছে, কারণ নিরাপত্তা, প্রবল ভাষা সমস্যা, সময়কে ঠিকমতো ব্যবহার করা, প্রতিটি জায়গায় প্রবেশের টিকিট কাটা ইত্যাদি থেকে মুক্তি। ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো জায়গায় হয়ত এগুলো তেমন সমস্যা নয়, তবে মিশরে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া খুব পরিষ্কারভাবে এটা মেনে নিয়ে যেতে হবে যে প্ল্যান করা সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, তবে এজেন্ট আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের প্ল্যান ঠিক রাখার।

    এবার শেষ কথা হল কেন যাবেন। যদি ইতিহাস নিয়ে উৎসাহ না থাকে (তাও অন্য দেশের সম্পূর্ণ অন্য একটি সভ্যতার), তাহলে হাজার বার ভেবে দেখবেন সত্যি যেতে চান কিনা অথবা ভেবে-চিন্তে যাবেন ঠিক কোন কোন জায়গায় যেতে চান আর কি দেখতে চান। নইলে ভাঙ্গাচোরা মন্দির, আধা-উঠে যাওয়া রঙ বেরঙের বিচিত্র সব বস্তু আর দেওয়াল জুড়ে একই ধরণের ছবি (যদিও অধিকাংশ ছবির গল্প আলাদা), লম্বা লম্বা খিলান, থাম ইত্যাদি দেখে হতাশ হবেন।  হতেই পারে কারও ইতিহাস ভালো লাগে না, শুধু সপ্তম আশ্চর্‍্য দেখাই উদ্দেশ্য, সেক্ষেত্রে আমার মতে কায়রোতেই থাকুন চারদিন, পিরামিড, স্ফিংক্স, নীলনদ, মমি, মিউজিয়াম সবই দেখা হয়ে যাবে। আর ইতিহাস যদি ভালো লাগে, যদি সাড়ে চার হাজার বছর আগের পৃথিবীকে ছুঁয়ে আসতে কোনো কাল্পনিক সময়-যানে চড়ে বসতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় পৌঁছে গেছেন আর একবার কেন পাঁচবার এলেও মিশর দেখা শেষ হবে না এ-কথা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করবেন।  

    যাওয়ার ঠিক পাঁচদিন আগে হাতে এসে গেল ই-ভিসা, টিকিট, ইনস্যুরেন্স-এর কাগজপত্র, একেবারে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে, ইজিপ্সিয়ান পাউন্ড-ও এনে রাখলাম ট্রাভেল এজেন্টের থেকেই। মুম্বাই থেকে যেহেতু আমাদের যাত্রা শুরু এবং শেষ, কলকাতা থেকে মুম্বাই-এর যাওয়া-আসার বিমানের টিকিট নিজেরাই কেটে রেখেছিলাম। ইন্ডিগো একেবারেই কোনো অসুবিধে করে নি সময় বা পরিষেবা নিয়ে। আমরা নেমেছিলাম টার্মিনাল এক-এ, সেখান থেকে যে টার্মিনাল দুই-এ যাওয়ার শাটল পাওয়া যায় আগে জানা ছিল না। অতএব প্রিপেইড ট্যাক্সি নিয়েছিলাম। টার্মিনাল দুই-এ আমাদের এজেন্ট-এর সঙ্গে দেখা হলো, পরিচয় হলো বাকি পর্যটক যাত্রীদের সঙ্গে, আমাদের দেওয়া হল এক-দেড় কেজির স্ন্যাক্স-এর প্যাকেট, রেনকোট, ইউনিভার্সাল চার্জার, পাসপোর্ট/পার্স রাখার ছোটো ব্যাগ ইত্যাদি, এসব ওই প্যাকেজের দামের ভিতরেই। কেবিন লাগেজে সেইমতো জায়গা রাখতে বলা হয়েছিল আগেই। ইজিপ্ট এয়ার তেমন ভালো কিছু বিমান পরিষেবা দেয় না। ঘন্টা পাঁচেক কোনোক্রমে ঘুমিয়ে, বই পড়ে কাটিয়ে দেওয়া। আমাদের বিমান ছাড়লো এক ঘন্টা দেরীতে, কায়রো এসে নামলাম সকাল ছ’টায়। হোটেলে যেহেতু চেক-ইন হবে দুপুর তিনটেয়, তাই আমাদের আজকের গন্তব্য কায়রোর ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম আর এন এম ই সি (ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইজিপ্সিয়ান সিভিলাইজেশন)। এয়ারপোর্টে সবাই ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরোতেই আমাদের সঙ্গে আলাপ হলো গাইড সামাহ-র। আমাদের দলের কেউ ডাকলো স্যাম বলে, কেউ ডাকলো শ্যাম বলে (‘কৃষ্টে আর খ্রীষ্টে কোনো তফাৎ নাই রে ভাই’), তাতে অবশ্য সদাহাস্যমুখ সামাহ-র কোনো আপত্তি নেই। সামাহ-ই থাকবে পুরো ট্রিপ এ গাইড হিসেবে। এরপর আমাদের বাসের সিট নম্বর বলে দেওয়া হলো, যেখানেই যাই যে বাসেই উঠি সেই সিট নম্বরেই বসতে হবে। আর সিট নম্বর ঠিক হয়েছে বুকিং করার সময় অনুসারে। আমাদের নম্বর গোটা ট্রিপেই নয় আর দশ। বাসে উঠেই প্রাতঃরাশ (প্যাকড ব্রেকফাস্ট) দিয়ে দেওয়া হল। নানান ধরণের ব্রেড, বাটার, চীজ, জুস, খান দুয়েক ফল আর একটা হল তন্দুরি ধরণের রুটিতে মুড়ে ফালাফেল (ফুলকো ছোটো তন্দুরি রুটির একপাশ কেটে ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে)। ফালাফেল হলো সোজা কথায় ভেজিটেবল চপ একটু ছোটো মাপের। ফালাফেল তো অনেক খেয়েছি এদিক ওদিক, কিন্তু এখানে এর স্বাদ বেশ ভালো। সামাহ নিজের পরিচয় দিয়ে আমাদের মিশরের ব্যাপারে বলতে শুরু করলো, আমরা এগিয়ে চললাম ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়ামের দিকে, প্রথম দিনেই বালক ফারাও তুতানখামুনের ঈশারা।

    মিশর শুনেছি, ইজিপ্ট শুনেছি, তবে ‘হায়েত-কা-পিতাহ’ শব্দের সঙ্গে পরিচয় ঘটেনি কখনো! সামাহ-র কাছে এ হলো আমাদের প্রথম চমক! প্রথমে আসা যাক মিশর নামে। মিশর-কে ইংরাজীতে লেখা হয় ‘Misr’ এইভাবে। মিশর শব্দের অর্থ দেশ বা রাজ্য (আমাদের এখনকার ‘স্টেট’ নয়)।  আগেকার দিনের আরব অভিযাত্রীরা নাকি আদর করে বলত ‘মিশর-আল-মাহরুসা’ অর্থাৎ ঈশ্বর কর্তৃক সুরক্ষিত দেশ। এবার ইজিপ্ট – এই নামের উৎপত্তি গ্রীক অ্যাজিপ্‌টস্‌ (বা হিজিপ্‌টস্‌) থেকে। আর এই অ্যাজিপ্‌টস্‌ শব্দের উৎপত্তি হলো সেই হায়েত-কা-পিতাহ নামের অপভ্রংশ থেকে। হায়েত-কা-পিতাহ অর্থাৎ প্রাচীন দেবতা পিতাহ-র (‘Ptah’ – ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা দেবতা, কেউ বলেন পরবর্তীকালে পাতালের দেবতা) আত্মার অধিষ্ঠান যেখানে। দূর থেকে দিনের বেলায় মিশরের ঘরবাড়ি দেখলে মৃণাল সেনের একটা চলচ্চিত্রের কথা মনে পড়ে, ‘খন্ডহর’, কোনো বাড়ি ভেঙে পড়ছে, কারও দেওয়াল ঝুলে পড়েছে, কারও জানলা-দরজা। যেগুলো আস্ত আছে তার কোথাও পলেস্তারা বেরিয়ে পড়েছে, রঙ তো নেইই বলা চলে, দেখে মনে হবে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় চলছে এই দেশে অথবা কোনো যুদ্ধোত্তর ধ্বংসাবশেষ! শুনলাম ভাঙা বাড়িগুলো বেআইনী নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার ফলাফল আর বাকিগুলো কর বাঁচানোর কৌশল। বাড়ি বাইরে থেকে ‘খন্ডহর’ মনে হলেও ভিতরের সাজসজ্জা দেখলে নাকি তাক লেগে যায়! পরে সেসব দেখেছিলাম অবশ্য, রাতের কায়রো বেশ সুন্দর। আরও শুনলাম মিশরে আইনতঃ একজন পুরুষ একাধিক দার পরিগ্রহ করতে পারেন (সর্বোচ্চ নাকি চারজন),হ্যাঁ এই একুশ শতকেও! বাস চলছে, পথের পাশে দেখলাম আর্মি ক্যাম্পের রমরমা! সামাহ বলল, ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর, বিশেষতঃ সিসি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মিশর নিজের নিরাপত্তা মজবুত করায় আর অস্ত্রশস্ত্র-সৈন্যদলকে আধুনিক করায় মন দিয়েছে! হায় রে হাল্লা রাজার সেনা! 
     
    ইতিমধ্যে আমরা এসে পৌঁছলাম কায়রোর সুবিখ্যাত ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়ামে।
     
    কায়রোর মাটি ছোঁয়ার আগে 

     
    ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম,কায়রো 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৭৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:০২528640
  • এইত্তো! চল চল জলদি।
     
    মিশরের উপরে শিবাজীর ভ্লগ আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে।
  • hu | 72.241.81.21 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৪৭528642
  • দারুন! দারুন! চলুক।
  • সুদীপ্ত | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৯528643
  • ধন্যবাদ দমদি, হু। কোনোভাবে আগের মিশরের টই-টা খেয়াল করিনি, মিঠুনদার ফেসবুকেই লেখা বা ছবি দেখেছিলাম। 
     
    আমি ভ্লগ কম দেখলেও শিবাজীর ভ্লগ ভালো লাগে, ওঁর একটা সুবিধে হলো অসাধারণ কন্ঠস্বর, তবে উনি যেভাবে সময় নিয়ে ঘোরেন, রিটায়ারমেন্টের আগে সম্ভব নয়, আমাদের দশ দিন টানা ছুটি পেতেই এত চাপ
  • দীমু | 182.69.179.69 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৩528646
  • চলুক yes
  • প্রশ্ন  | 165.225.8.117 | ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৩:৫৬529037
  • সিরিজটা পড়ে চলেছি। 
    যে তথ্যটা খুঁজছিলাম, এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বছরের কোন সময়? 
  • সুদীপ্ত | ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:২৩529038
  • প্রশ্ন-কে - জানুয়ারীর শেষ দিকে 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন