এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - ২

    সুদীপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৬০৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • কায়রোর তাহরির স্কোয়ারের মধ্যমণি এই ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম। ১৯০১ সালে তৈরী এই মিউজিয়ামটি আপাততঃ আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম মিউজিয়াম। আর এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় সংগ্রহ, যা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন, তা হলো ফারাও তুতানখামুনের (তুত-আনখ-আমুন) সমাধিস্থল বা টোম্ব থেকে পাওয়া অসম্ভব মূল্যবান সামগ্রী এবং অতি অবশ্যই সেই ১১ কেজি ওজনের খাঁটি সোনার তৈরী মুখোশ (মরচুয়ারি মাস্ক)। আমাদের টিকিট মুহূর্তে হয়ে গেল আর সামাহ আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দিলো একটি ছোট্টো রেডিও, তার সঙ্গে কানে অডিও হেডসেট। সামাহ আমাদের বিভিন্ন দ্রষ্টব্যের সামনে নিয়ে গিয়ে দেখাতে থাকবে আর আমাদের সেই যন্ত্রের মাধ্যমে ধারাবিবরণী দিতে থাকবে। কিন্তু সামাহ-র সঙ্গে আমাদের দূরত্ব ৫০ মিটারের মধ্যে থাকতে হবে। মিউজিয়ামের মূলতঃ দুটি তল, ঢুকেই নীচের তলটির বিরাট হলঘরটি হলো ‘A gallery of heroes’, তার পাশ দিয়ে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ছোটো ঘর। এই একতলাটি মূলতঃ মিশরের আধুনিক যুগের (আনুমানিক ১৫৩৯ থেকে ১০৬৯ খ্রীষ্টপূর্ব) ফারাও-দের সময়কার সামগ্রী-তে পরিপূর্ণ। তবে টলেমিক রাজত্বের কিছু সামগ্রী-ও রয়েছে; তৃতীয় আমেনহোটেপ, টিয়ে, তৃতীয় থুৎমোসিস, হ্যাৎসেপশুট এঁদের আর এঁদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সভাসদ-দের মূর্তি, ব্যবহার্য সামগ্রী, ভাস্কর্য, সারকোফেগাস, পিরামিডের ক্যাপ-স্টোন (যেটা পিরামিডের একেবারে মাথায় আলাদা করে বসানো হতো), ফারাওদের মৃত্যুর পর পরপারে যাওয়ার নৌকো  এসব তো আছেই, তবে ফারাও খুফু, খাফ্রে আর মেনকাউরের মূর্তিও রয়েছে, যেগুলো প্রাচীন যুগের।  কিছু মূর্তি বেশ উল্লেখযোগ্য, যেমন আমেনহোটেপ (ইনি ফারাও নন, ওই হাজার হাজার ডাক্তার হাজরা-র মতোই হাজার হাজার আমেনহোটেপ আর কি, প্রাচীন মিশরে ‘নেমসেক’-এর অভাব নেই), এঁর এই মূর্তিটি পাওয়া যায় কার্নাক-এর মন্দির থেকে (যে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান আর হাজারে হাজারে লোক রোজ দেখতে যায় সেখান থেকে মূর্তি তুলে এনে মিউজিয়ামে রাখার অর্থ অবশ্য আমার মাথায় ঢোকেনি)। তাঁর পিতা ছিলেন হাপু এবং মা ছিলেন ইতু; এই আমেনহোটেপ ছিলেন ফারাও তৃতীয় আমেনহোটেপের একজন গুরুত্বপূর্ণ  সভাসদ, একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ, ইমহোটেপের মতোই স্থপতি। কিন্তু হাজার বছর পরে, টলেমিক যুগে এঁকে হঠাৎ ভগবান বানিয়ে পুজো করা শুরু হয়। প্রাচীন মিশরে এমন মানুষকে ভগবান বানিয়ে পুজো করার চল হয় মূলতঃ ওই গ্রীকদের আধিপত্য বিস্তারের পর থেকে, তার আগে শুধু ফারাও বা মন্দিরের প্রধান পুরোহিতরা ভগবানের মানসপুত্র রূপে মান্য হতেন আর ভগবানরাও ছিলেন মোটামুটি হাতে গোনা, সে-কথা যথাসময়ে। এছাড়া রয়েছে আচার-অনুষ্ঠান, পুজো-পার্বণের বামন সম্প্রদায়ের নর্তক জেদহোর-এর কারুকাজ (এটি উল্লেখ করার মতো নিখুঁৎ) করা গ্র্যানাইটের সার্কোফেগাস, তার ডালা বা ঢাকনার উপরিভাগে জেদহোরের অবয়ব আর জীবনী খোদাই করা, রয়েছে হোরেমহেব-এর মূর্তি। উপরে দো-তলায় উঠে যেতে সিঁড়ির পাশ দিয়ে রয়েছে অজস্র হায়রোগ্লিফে লেখা প্যাপাইরাসের সারি, কাচে ঢাকা, এগুলো অধিকাংশ-ই ‘বুক অব দ্য ডেড’-এর থেকে নেওয়া অংশবিশেষ যা বিভিন্ন সমাধিক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে বলে রাখি, আজ পর্যন্ত কোনো মিউজিয়ামে কোনো সংগ্রহকে ছুঁয়ে দেখিনি কারণ সেটা সবসময়েই নিষিদ্ধ থাকে। এই একমাত্র মিউজিয়াম যেখানে কোনো কড়াকড়ির বালাই নেই, দেখারও কেউ নেই (একমাত্র তুতানখামুনের ঘরটুকু বাদে), পারলে লোকজন দেখি মূর্তির বা দ্রষ্টব্যের প্রায় গায়ে উঠে গিয়ে ছবি তুলছে, এ এক নতুন জিনিস বটে!
     
    আমেনহোটেপ

     
    বামন নর্তক জেদহোর-এর সার্কোফেগাসের ঢাকনা

     
    নীচের বড় হলঘরটি , সবচেয়ে বড় মূর্তিদুটি তৃতীয় আমেনহোটেপ ও রাণী টিয়ে-র

     
    দোতলায় কত যে সারকোফেগাস আর কফিন তার ইয়ত্তা নেই, য়ুয়া আর থুয়া তো আছেই, আরও কত যে কফিন তার শেষ নেই। ফারাও আখেনাতেন-এর (চতুর্থ আমেনহোটেপ) ১১০ কেজি ওজনের সোনার কফিন, যার মুখোশটি কিছুটা ভাঙা, এছাড়াও অজস্র রিলিফ বিভিন্ন সমাধিক্ষেত্র থেকে পাওয়া,  টলেমিক রাজবংশের জিনিসপত্র-ও রয়েছে, রয়েছে ফারাও আর রাণীর মাথার উইগ (নকল চুলের টুপি), পাদুকা, এমনকি সম্ভবতঃ আখেনাতেনের একখানি কমোড (ল্যাট্রিন সিট – আমার্না থেকে পাওয়া) পর্যন্ত! এরপর দেখে নিলাম ফারাও পিসুসেনেস এর সোনার সারকোফেগাস, কফিন আর ব্যবহৃত সামগ্রী। অধিকাংশ কফিনের পাশে অথবা আলাদা ভাবে অ্যালাবাস্টার পাথরে তৈরী পাত্রে রাখা রয়েছে সমাধি থেকে পাওয়া এই মমিদের ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃৎ আর পাকস্থলী। মামিফিকেশনের সময় এই অংশগুলো শরীর থেকে বের করে নেওয়া হতো আর এভাবে সংরক্ষণ করা হতো মৃত্যুর পরে কাজে লাগবে বলে। এখানে একটু মামিফিকেশন বা মমি তৈরীর গপ্পো বলে নেওয়া যাক সংক্ষেপে।
     

     
    মৃত্যুর পর মৃতদেহের মমি তৈরীর পদ্ধতি ছিল যথেষ্ট সময় আর খরচ-সাপেক্ষ। তাই ফারাও, তার পরিবার বা বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া মমি বানানোর চল কম-ই ছিল। মৃত্যুর পর মমি তৈরীর পারদর্শী পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে মামিফিকেশনের জন্য নির্দিষ্ট বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হত মৃতদেহ। সেখানে ‘ইবিউ’ নামক স্থানে দেহ ধুয়ে শুদ্ধ করে নেওয়া হতো। তারপর ‘পার নেফার’ নামক স্থানে শুরু হতো সেই দেহের সৌন্দর্য্যায়ন বা মামিফিকেশন। এর বিশদ বর্ণনা অধিকাংশটাই দিয়ে গেছেন গ্রীক পন্ডিত হেরোডোটাস।  প্রথমে সরু আর সামনের দিকে বাঁকানো একটি যন্ত্র নাকের গর্ত দিয়ে ঢুকিয়ে মস্তিষ্ক কুরে কুরে বের করে নেওয়া হতো আর সেই ফাঁকা জায়গায় নল দিয়ে পাঠানো হত ক্ষয়রোধী জৈব রস আর সুগন্ধী। এরপর পেটের বাঁদিক চিরে বের করে নেওয়া হতো ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃৎ আর পাকস্থলী, ভালো করে নুন মাখিয়ে সেসব রাখা হতো চারটি আলাদা ঢাকা দেওয়া পাত্রে (ক্যানোপিক জার)।  এই চারটি পাত্র আবার চারজন দেবতা রক্ষা করতেন। তাঁরা হলেন দেবতা হোরাসের চার ছেলে – ইমসেতি, হাপি, দুয়ামুতেফ আর কেভসেন্যুফ। হোরাস-সহ বাকি গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের পরিচয় পরে দেবো। এই চারটি পাত্রকে আবার রাখা হতো একটি সিন্দুক বা চেস্ট-এ। শরীরের এই অংশগুলো বের করে নেওয়ার পর কোহল আর দারুচিনি ইত্যাদি মশলা মিশিয়ে ধুয়ে নিয়ে সেখানেও ফাঁক ভরাট করতে পুরে দেওয়া হতো জৈব ওষধি আর সুগন্ধী। দেহের ভিতরে শুধু রেখে দেওয়া হতো হৃৎপিন্ড কারণ ওটি পরপারে যাওয়ার চাবিকাঠি। এরপর চল্লিশ দিন ধরে ন্যাট্রন নামক এক ধরণের সোডা অ্যাশ দিয়ে ঢেকে রেখে শুকিয়ে নেওয়া হতো দেহটি। এরপর কোহল আর একরকম তেল দিয়ে পুরো দেহটি আবার ধুয়ে নেওয়া হত, তারপর আরও ত্রিশ দিন ধরে দেহটি মুড়ে ফেলা হত মন্ত্রপূতঃ প্যাপাইরাস আর কাপড় দিয়ে, আর থাকত মন্ত্রপূতঃ ফুল-পাতা। প্যাপাইরাসে লেখা হতো ‘বুক অব দ্য ডেড’ থেকে মন্ত্রের অংশ আর পুরোহিত নানান মন্ত্রোচ্চারণ-সহ এই কাজ সম্পন্ন করতেন। সত্তর দিন পরে মমিটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হত পরিবারকে আর তাঁরা সেই মমি একাধিক কফিন আর সারকোফেগাস-এ ভরে নিয়ে যেতেন সমাধিস্থলে। সেখানে হতো মাউথ ওপেনিং সেরিমনি (সোজা বাঙলায় মুখ খোলার অনুষ্ঠান), মৃতের মুখ দক্ষিণ দিকে ফিরিয়ে রাখা হত আর ব্যবস্থা করা হতো যাতে মৃত্যুর পর আনুবিসের কাছে বিচারের সময় তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলতে পারে। এরপর উপহার সামগ্রী দেওয়া হতো মৃতের মৃত্যর পরের জীবনের উদ্দেশ্যে। তারপরে জনসমক্ষে আর কিছু হতো না। ‘বুক অব দ্য ডেড’ অনুসারে পরকালের দেবতা ওসাইরিসের সামনে বসে মামিফিকেশন আর অন্ত্যেষ্টির দেবতা আনুবিস নিজে দেবী মাত-এর মুকুটের একটি উটপাখির পালকের সঙ্গে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করতেন সেই দেহের ভিতরে থাকা হৃদপিন্ড। যদি হৃদপিন্ডের ওজন কম হতো পালকের চেয়ে তবে সোল্লাসে স্বর্গবাস আর নইলে দুঃখময় নরকবাস!
     
    আখেনাতেন-এর (সম্ভবতঃ) কমোড 

     
    সবকিছু পড়তে পড়তে আর দেখতে দেখতেই ঘন্টা দেড়েক কাবার, ছবি-ই বা আর কত তুলব, একদিন কি, গোটা সপ্তাহ ধরে দেখলেও আশ মেটে না, টোবি উইলকিনসনের লেখাগুলো মনে পড়ে। সামাহ-র তাড়ায় হুঁশ ফেরে, এবার চললাম আর একপাশে গৃহপালিত পশুদের মমি দেখতে! সে এক আজব ব্যাপার, প্রাচীন মিশরে গৃহপালিত পশুরা ছিল খুব প্রিয়। সে গরু, ভেড়া, পাখি, বিড়াল সবই আছে। একটি ভেড়ার মমি কফিনের ঢাকনা সামান্য সরিয়ে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। তার সোনার সারকোফেগাস-ও দেখার মতো! এখান থেকে বেরিয়ে আমরা অবশেষে ঢুকলাম তুতানখামুনের সাম্রাজ্যে। প্রথমে একটি হল-এ ফারাও তুত-এর সমাধিতে পাওয়া বিভিন্ন জিনিস রাখা, যেমন দু’রকম সোনার সিংহাসন – যার একটিতে ফারাও তুত-এর সঙ্গে তাঁর রাণী (সৎ-বোন ও বটে) আনখেসেনামুন-এর ছবি, লাপিস লাজুলি আর বিভিন্ন রত্ন খচিত দুটি সিংহাসন। আরও রয়েছে একজোড়া সোনা-কাঠ-চামড়া দিয়ে তৈরী চটিজুতো, তুতানখামুনের পাখির পালকে তৈরী হাতপাখা, একটি সিন্দুক, যার গায়ে তুতানখামুনের শিকারের ছবি, সিকামোর কাঠের তৈরী সোনার অলঙ্কারে ভূষিত তুতানখামুনের রক্ষীমূর্তি, সেই অ্যালাবাস্টার পাথরের ক্যানোপি জার আর তার সিন্দুক, সবশেষে আনুবিস নিজে। আর তারপরেই সেই প্রবেশদ্বার। এখানে ফটো তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, রয়েছে তুতানখামুনের তিনটি কফিন, প্রতিটি কাঠের তৈরী আর আগাগোড়া সোনায় মোড়া। লাপিস লাজুলি, টারকোয়েজ আরও ওই ধরণের মূল্যবান পাথর আর তা দিয়ে তৈরী পেকটোরাল বা এক ধরণের রাজকীয় নেকলেস হার সাজানো রয়েছে যা পাওয়া গিয়েছিল সমাধি থেকে। আর রয়েছে সেই সুবিখ্যাত মুখোশ (মরচুয়ারি মাস্ক বা ডেথ মাস্ক), দশ কেজি ওজনের সোনার পাতে মোড়া, যা সরাসরি বসানো ছিল তুতানখামুনের মমির কাঁধের উপরে! কোয়ার্টজাইট পাথরে তৈরী মূল সারকোফেগাসটি অবশ্য রয়েছে সেই ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ, সেই কে ভি ৬২, যেখান থেকে আর্কিওলজিস্ট হাওয়ার্ড কার্টার খুঁজে বার করেছিলেন এই অতুল সম্পদ! তুতানখামুনের বাকি গল্প না’হয় সেই কে ভি ৬২-র ভিতরে দাঁড়িয়ে হবে।
     
    পোষ্য ভেড়ার কফিন ও মমি 

     
    তুতানখামুনের সিংহাসন 

     
    তুতানখামুনের হাতপাখা

     
    তুতানখামুনের চটিজোড়া

     
    তুতানখামুনের দেহাংশ ছিল এই ক্যানোপিক জার-এ 

     
    আনুবিস

     
    ঘর থেকে যখন বেরিয়ে এলাম তখনও যেন ঘোর কাটেনি! সত্যি দেখে ফেললাম তাহলে! কিন্তু মিশর আপনাকে বিস্ময়, গল্প আর ইতিহাসের কোনো রেশ মিটতে দেয় না, পরের গল্প এসে ঘিরে ধরে। এরপরেই গিয়ে ঢুকলাম আখেনাতেন আর নেফারতিতির ঘরে। ফারাও আখেনাতেন-এর (চতুর্থ আমেনহোটেপ, ফারাও তৃতীয় আমেনহোটেপ আর রানী টিয়ের পুত্র) রাজত্বকাল মিশরের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এই সময়ে এক ধরণের একেশ্বরবাদের প্রচলন করেন আখেনাতেন। আমুন, হাথোর, হোরাস প্রমুখ সব দেবতার মন্দির আর সেখানকার পুজোপাঠ  বন্ধ করে দেওয়া হয়, প্রচলিত হয় নতুন দেবতা আতেন-এর পুজো। দেবতাদের প্রধান আমুন ছিলেন সূর্যের দেবতা, আর আতেন হলেন নিজেই স্বয়ং সূর্য। শুধু নতুন দেবতা নয়, এমনকি থীবস থেকে রাতারাতি রাজধানী তুলে নিয়ে যান নবনির্মিত নগরী আমার্না-তে, আমার্না-র নতুন নাম হয় আখেতাতেন ('আতেন-এর বাড়ি', আর আখেনাতেন হলো 'আতেনের উপাসক')। সেখানে তৈরী হতে থাকে আতেন-এর নতুন মন্দির আর পুরোহিতদের জোর করা হয় আতেন-এর পূজারী হতে। কিন্তু এর ফলে রাতারাতি মিশরের প্রভাবশালী পুরোহিতরা রাজার বিপক্ষে চলে যান আর তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু আখেনাতেন-এর কিছু শুভানুধ্যায়ী (যেমন ভিজির আই যিনি রাণী টিয়ের ভাই, প্রচলিত মতে নেফারতিতির পিতা এবং পরে ফারাও হবেন) এবং স্বয়ং রাণী নেফারতিতি বাধা হয়ে দাঁড়ান। শুধু সৌন্দর্য নয়, ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মিশরের জনসাধারণের নয়নের মণি।  পরে ক্রমশঃ ফারাও-এর সমান ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন নেফারতিতি এবং আখেনাতেন-এর সমর্থন-ও ছিল তাঁর প্রিয়তমা রাণীর প্রতি, শোনা যায় একই ক্ষমতা নিয়ে তাঁরা নাকি যুগ্মভাবে রাজ্যশাসন করতেন। নেফারতিতি তাঁর স্বামীর ধর্মবিশ্বাসেও আস্থা রেখেছিলেন এবং পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সমর্থন নিয়ে। এটি মিশরের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার। আর কোনো ফারাও তাঁর স্ত্রী-কে এমন সম-মর্যাদা দিয়েছিলেন বলে শোনা যায় না। না দ্বিতীয় রামেসিস-ও নয়, যতই নেফারতারি-র জন্যে আলাদা মন্দির বানানো হোক, রাণীর মূর্তির পরিমাপ আর সংখ্যা ফারাও-এর সমতুল হয় নি কখনো। আরও একটি ব্যাপার, আখেনাতেন-এর যেসব মূর্তি বা রিলিফ বানানো হয়েছিল, ফারাও-এর নাকি নির্দেশ ছিল তাঁকে ঠিক যেমন দেখতে, ভাস্কর-রা যেন তেমন করেই তাঁর মূর্তি বানান। অন্য ফারাও-দের সাথে আখেনাতেন-এর মূর্তির পার্থক্য তাই স্পষ্ট। লম্বাটে গড়নের মুখ বা শরীর একেবারেই সাধারণ মানুষের আদলে, অন্য ফারাও-দের মতো পেশীবহুল নয় মোটেই। কিন্তু আখেনাতেন-এর মৃত্যুর পর ষড়যন্ত্রকারী পুরোহিতরা আর অন্য রাজপ্রতিনিধিরা আমার্না-কে ধ্বংস করে নতুন ফারাও-কে বাধ্য করেন থীবস-এ (অধুনা লাক্সর) রাজধানী ফিরিয়ে আনতে। নেফারতিতির মৃত্যু নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা আছে, কেউ বলেন আখেনাতেনের রাজত্বকালেই রাণীকে রহস্যজনকভাবে হত্যা করা হয়, কেউ বলেন আখেনাতেনের মৃত্যুর পরেও তিনি বেঁচেছিলেন, কিন্তু কোনো সমাধি বা মমি আজও  পাওয়া যায় নি। মোট কথা রাজা-রাণীকে অভিশপ্ত বলে দাগিয়ে দিয়ে তাঁদের সব চিহ্ন মিশরের মাটি থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এই গল্প এখানে বলে নিলাম কারণ এই মিউজিয়ামের বাইরে আখেনাতেন আর নেফারতিতির কোনো স্মৃতিই আর অবশিষ্ট নেই প্রায়, আখেনাতেনের সমাধিও বিতর্কিত, বলা হয় পরে তাঁর কফিন লুকিয়ে আমার্না থেকে নিয়ে এসে ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ সমাধিস্থ করা হয়। মিউজিয়ামের এই ঘরে আমার্না থেকে উদ্ধার করা আখেনাতেন-এর বেশ কিছু আবক্ষ আর পূর্ণাবয়ব মূর্তি, নেফারতিতির অসমাপ্ত আবক্ষ মূর্তি যা সভাশিল্পী থুৎমোস বানাচ্ছিলেন বলে মনে করা হয় (আর একটি রঙিন আবক্ষ মূর্তি এখন রয়েছে বার্লিনে, যার একটি চোখ খোয়া গেছে), আর কিছু রিলিফ যেখানে ফারাও, রাণী, তাঁদের সন্তানদের দেখানো হয়েছে আতেন-এর আশীর্বাদধন্য হিসেবে।  একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তিও আছে নেফারতিতির, যেখানে নেফারতিতিকে দেখানো হয়েছে জলের দেবী তেফনুত-এর আদলে।
     
    আখেনাতেন-এর কফিন 

     
    নেফারতিতি - তেফনুত-এর আদলে 

     
    আখেনাতেন

     
    নেফারতিতির আধাসমাপ্ত আবক্ষ মূর্তি 

     
    আখেনাতেন, নেফারতিতি ও সন্তানেরা - দেবতা আতেন এর ছত্রচ্ছায়ায়

     
    এবার নীচে নেমে এসে বড় হলঘরটা আর তার চারপাশের ঘরগুলো দেখতে শুরু করলাম, এটুকু আমাদের নিজস্ব সময় কারণ দলের বাকিদের মিনিট কুড়ি সময় দেওয়া হয়েছে স্যুভেনির কেনাকাটার জন্যে। এই ফাঁকে আমরা দেখে নিলাম ফারাও-রাণী হ্যাৎসেপশুটের বিখ্যাত  আধভাঙ্গা মুখের অবয়ব, মুখের অংশটুকু মোটামুটি সম্পূর্ণ থাকলেও কপালের উপর থেকে ভাঙা, গলার নীচের অংশও নেই। এটিকেও তুলে আনা হয়েছে হ্যাৎসেপশুটের মন্দির থেকেই। আর সবশেষে তাঁর আদলে তৈরী স্ফিংক্স। প্রাচীন মিশরের সমাজের পুরুষতন্ত্র আর ফারাও-তন্ত্রের একটা ধারণা পাওয়া যায় যখন একজন রাণীকেও ফারাও হওয়ার জন্যে নিজেকে পুরুষ হিসেবে সমাজের কাছে তুলে ধরতে হয়। হ্যাঁ, রাণীর মুখাবয়ব আর এই স্ফিংক্স দুয়েরই নকল দাড়ি রাখা হয়েছিল ফারাও-এর কৌলীন্য লাভ করতে। তবে সেসব গল্প আবার পরে।
     
    হ্যাৎসেপশুট

     
    ফারাও হাৎসেপশুটের স্ফিংক্স 

     
    পিরামিডের মাথায় বসানোর ক্যাপস্টোন

     
    সামাহ-র তাড়ায় বেরিয়ে পড়ি মিউজিয়াম ছেড়ে, ঘন্টা চারেক কোথা দিয়ে কেটে গেলো বুঝেই পেলাম না, তাই বা সব দেখা হলো কই!  আমাদের পরবর্তী গন্তব্য এন এম ই সি অর্থাৎ ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইজিপ্সিয়ান সিভিলাইজেশন। পথে দেখলাম প্রায় হাজার বছরের-ও বেশী পুরনো সিটাডেল আর অ্যাকুয়াডাক্ট-এর ভগ্নাবশেষ। সুলতান সালাদিন এই সিটাডেল আর লম্বা প্রাচীর বানাতে শুরু করেন কায়রো-কে নিরাপত্তা দিতে শত্রুর হাত থেকে। আর এই প্রাচীরের উপর দিয়ে অ্যাকুয়াডাক্ট বা জলের নালা বানিয়ে দেওয়া হয় যাতে নীলনদের জল চাকা ঘুরিয়ে প্রাচীরের উপর নালায় তুলে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া যায় সুলতানের প্রাসাদনগরীতে! এখন অবশ্য় এটি ভেঙে পড়েছে জায়গায় জায়গায়, শুধু সুবিশাল প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে কোথাও কোথাও শহরের মাঝে।
     

     
    ‘The Pharaohs’ Golden Parade’ – ফারাওদের সোনালী (বা বর্ণাঢ্য) শোভাযাত্রা। ২০২১ সনের ৩রা এপ্রিল তাহরির স্কোয়ারের ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়াম থেকে বাইশজন ফারাও আর রাণীর মমি একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক’রে নিয়ে আসা হয় ফুস্তাত-এর এন এম ই সি-তে। হ্যাৎসেপশুট, সেতি, টিয়ে, দ্বিতীয় রামেসিস, মেরেনপিতাহ, আমেনহোটেপ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, থুৎমোস প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় মোট বাইশজনের মমি। এই শোভাযাত্রার মমিবাহক গাড়িগুলি ছিল একেবারে ফারাওদের পরপারে যাত্রার নৌকোর ধরণে।  আর রাস্তা জুড়ে দেবী আইসিসের স্তুতি-বন্দনা সেসব তো ছিলোই! বিরাট জায়গা জুড়ে এই মিউজিয়ামটি বানানো চলছে, এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। মিশরে এই মিউজিয়ামটি দেখে মনে হলো সত্যিই খুব প্ল্যানমাফিক সুব্যবস্থা আর নিরাপত্তা নিয়ে বানানো হচ্ছে। আমরা ভিতরে ঢুকে লম্বা করিডর পেরিয়ে, নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে ঢুকলাম একটি বিরাট হলঘরে, এখানে গাইড আসতে দেওয়া হয় না। গোটা হলঘরটি পরপর অনেকগুলি প্রকোষ্ঠে বা ছোটো ছোটো ঘরে ভাগ করা, প্রতিটি ঘরে একটি করে মমি আর সেই ফারাও বা রাণীর ব্যবহৃত কিছু দ্রব্য, কখনো বা কফিন আর অবশ্যই যাঁর মমি তাঁর সম্পর্কে বিশদে লেখা। কয়েকটি মমির কথা বলি।
    হ্যাৎসেপশুটের মমি, প্রথমে সেই হাওয়ার্ড কার্টার মমিটি খুঁজে পেলেও তেমন গুরুত্ব দেননি, কিন্তু পরে সিটি স্ক্যান ইত্যাদি করে তাঁর কফিনের দেহ আর ক্যানোপিক জার-এর রাখা যকৃৎ-এর নমুনা মিলিয়ে দেখা যায় ইনিই রাণী হ্যাৎসেপশুট। আর সেই প্রমাণে সীলমোহর পড়ে একটি দাঁতের সৌজন্যে! ক্যানোপিক জার-এ একটি আস্ত দাঁত-ও (মোলার টুথ) পাওয়া গিয়েছিল, যার ডি এন এ হুবহু মিলে গিয়েছিল রাণীর সঙ্গে। পরীক্ষা করে নাকি আরও জানা গিয়েছিল তিনি মারা গিয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের  আশেপাশে, শেষদিকে বেশ মোটা হয়ে গিয়েছিলেন (ওবেসিটি আর কি) আর ভুগছিলেন মধুমেহ আর কর্কট রোগে! এই মমির একটি হাত সোজা থাকলেও বাম হাতটি বুকের উপর রাখা। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে কিভাবে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে ব্যস্ত হয়েছিল সে-গল্প পরে, কিন্তু সাড়ে তিন হাজার বছর পরেও তাঁকে ছাড়া মিশর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ, কালের মন্দিরা কখন যে কিভাবে বাজে!
    হ্যাৎসেপশুটের বাবা, স্বামী আর সন্ততির (থুৎমোস বা থুৎমোসিস এক্স, এক্স হলো এক,দুই, তিন ইত্যাদি) মমি-ও দেখা হলো; দ্বিতীয় রামেসিসের গল্প হবে আবু সিম্বেলে, আপাততঃ বলি, এত হাজার বছর পরেও তাঁর মমির মাথায় সোনালি চুল অবাক করেছে! তিনি বেঁচেছিলেন নব্বই বছরের উপর এবং মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও হয়ে উঠেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে আর কূটনৈতিক ক্ষেত্রে। তাঁর দাঁতের সমস্যা আর আর্থ্রাইটিসের সমস্যা ছিল বলে এক্স রে থেকে জানা যায়। দ্বিতীয় রামেসিসের বাবা মা, অর্থাৎ প্রথম সেতি আরে রাণী টিয়ে-র মমিও রয়েছে এখানে। আরও এক উল্লেখযোগ্য মমি হলো ফারাও মেরেনপিতাহ-র। ইনি ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিসের সন্তান এবং উত্তরাধিকারী। ত্রয়োদশ সন্তান হলেও তাঁর আগের সব দাদারাই গত হওয়ায় (এও এক আজব ব্যাপার), তিনি সিংহাসনে বসেন। মেরেনপিতাহ তাঁর পিতার মতোই যুদ্ধবিগ্রহে পারদর্শী আর রাজ্যশাসনে পটু ছিলেন বলা হয়। বাকি সব মমি সম্পূর্ণ কৃষ্ণকায় হলেও এই একটি মমি বেশ সাদা। আর এই মমিটি মেরেনপিতাহ-র সমাধি থেকে উদ্ধার হয়নি, তাই কেউ বলেন এটি হলো মোজেসের মমি (যেহেতু সাদা) যিনি দ্বিতীয় রামেসিসের সময় মিশরে ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে কাদেশের যুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন দলবল নিয়ে মিশর ছাড়ার আগে, আবার কেউ বলে মমি তৈরীর সময় অতিরিক্ত নুনের ব্যবহার মমিটিকে সাদা করে দিয়েছে। তবে এর কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। সুতরাং আপাততঃ এটি মেরেনপিতাহ-র মমি বলে মেনে নেওয়া হয়েছে।
    মমিদের এই আবাসস্থলটি আমাদের অসাধারণ মনে হয়েছিলো, আমি বলবো এটি একেবারেই বাদ না রাখতে। অন্ততঃ ঘন্টা দেড়েক সময় রাখলেই চলবে।  হলঘরের বাইরে এসে একটি বিরাট গোলাকার জায়গায় প্রোজেক্টরের সাহায্যে দেখানো হচ্ছে ভিতরে থাকা কফিন আর মমিগুলি, ঘুরে চলেছে একের পর এক, আর নীচে বৃত্তের মধ্যে কখনো ফুটে উঠছে বিভিন্ন দেবতার ছবি, বুক অব দ্য ডেড-এর অংশ, আবার কখনো হোরাসের চোখ, গোটা চত্বরটাই সুন্দর করে সাজানো, এ-ছাড়াও রয়েছে আরও কিছু দ্রষ্টব্য, যেমন দেবী নুত জন্ম দিচ্ছেন দেবী আইসিস-কে – সেই রিলিফ, বালক হোরাসের রিলিফ,সেই সময়কার  অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি, রা-হোরাখতি আর আমুন-রা এর মূর্তি, সেই যুগের কিছু বাদ্যযন্ত্র (হার্প), আর নারীদের প্রসাধনের জিনিসপত্র। কতরকমের তুলি, চুলের কাঁটা, সাজসজ্জার জিনিসপত্র, আয়না দেখে তাক লেগে যায়। দেখলাম আখেনাতেন-এর একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি এখানেও এনে রাখা হয়েছে। রয়েছে ভিজির পাসার, তৃতীয় থুৎমোস এঁদের মূর্তি। আর হলো প্রাচীন মিশরের একটি জনপ্রিয় খেলা (বোর্ডগেম) – সেনেট। তখনকার রাজা-রাণী বা প্রজাদের মধ্যে এই খেলা ছিল একটি প্রিয় বিনোদন।
     
    দেবী নুত আইসিসের জন্ম দিচ্ছেন

     
    প্রাচীন মিশরীয় নারীর সাজসজ্জা

     
    সেনেট 

     
    হোরাসের চোখ

     
    সব দেখেশুনে বেরোলাম যখন, পেটে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে! কাছেই একটি রেস্তোঁরায় মধ্যাহ্নভোজ সেরে লা পাসাজ হোটেলে আমরা ঢুকলাম, তখন ঘড়ির কাঁটা বিকেল পাঁচটা ছুঁই ছুঁই! সবার পাসপোর্ট দেখেশুনে ঘর দিয়ে দেওয়া হলো। আর রাতের খাওয়া সারতে ওই বাসেই আবার গেলাম একটি ভারতীয় রেস্তোঁরায় আর দেখলাম রাতের কায়রো। কৃত্রিম আলোকসজ্জার মুন্সিয়ানায় সেইসব রংহীন বাড়ি-ই সুন্দর সেজে উঠেছে, আর ঘরের ভিতরে চোখ পড়লে দেখা যায় সুন্দর সাজানো আসবাবপত্র, ঝাড়-লন্ঠন, একেবারেই ঠিক কথা ‘রাতের সব তারারাই আছে দিনের আলোর গভীরে’। কাল সকালে আমরা যাবো আলেকজান্দ্রিয়া!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৬০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:d036:4466:1b3d:73a | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১৬528679
  • খুবই ভালো লাগছে পড়তে। চলুক।
  • hu | 72.241.81.21 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩৩528680
  • দারুন এগোচ্ছে। ২০২২শে আমরা নতুন মিউজিয়ামটায় যেতে পারিনি। উদ্বোধন হয়ে গেছিল, কিন্তু তখনও সাধারণ দর্শকদের যেতে দিচ্ছিল না। অবশ্য পুরোনো মিউজিয়ামটাতেই যা আছে দেখে শেষ করা যায়্না। মিশরে তো একটু খুঁড়লেই আর্টিফ্যাক্ট বেরোয়। আমি ২০০৭এ যখন গেছি তখ্ন পুরোনো মিউজিয়ামে একটা জায়গায় দেখেছি ডাঁই করে মূর্তি পরে আছে। কোনটা কিসের মূর্তি সেটাও লেখা নেই।
    পুরোনো মিউজিয়ামে দুটো জিনিস আমার খুব প্রিয়। ছবি তুলে থাকলে এখানে পোস্ট করবেন। একটা একজন স্ক্রাইবের মূর্তি। বাবু হয়ে বসে নোট নিচ্ছে। চোখদুটো অসাধারণ জীবন্ত। আরেকটা হল কয়েকটা সারসের একটা ছবি। সেও ভয়ানক জীবন্ত।
  • dc | 2401:4900:3600:1ad2:4d23:ab33:8b89:aa8 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৩528682
  • তুতানখামুনের চটিজোড়া তো বেশ ফ্যাসানেবল মনে হলো! ওগুলো পরে বোধায় উনি সন্ধ্যাবেলা হাওয়া খেতে বেরোতেন :-)
  • সুদীপ্ত | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৪528683
  • ধন্যবাদ kk! 
     
    ধন্যবাদ hu! এই নীচের ছবিটা কি? এটা সিম্বলিক। ওই শুরুতে যে আমেনহোটেপ বা তারও আগে ইমহোটেপ এঁরাও বিখ্যাত স্ক্রাইব। নেফারতারি নিজেও স্ক্রাইব ছিলেন শোনা যায়, হিট্টাইটদের ভাষাও জানতেন! পুরনো মিউজিয়ামে জায়গা বাড়ানোর জন্যেই মমিগুলো সরানো হয়েছিল, এখন একটা গ্র‍্যান্ড মিউজিয়াম বানানো চলছে শুনলাম, এটা হয়ত তখন শুধুই গবেষণার জন্যে থাকবে। এখনো প্রচুর জিনিস এদিক ওদিক রাখা আছে, সবকিছুর জন্যে আলাদা করে কিছু লেখাও নেই! 
     
  • সুদীপ্ত | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৮528684
  • dc, হ্যাঁ বলা যায় না, এখনো হয়ত টোম্ব থেকে বেরিয়ে চটি পরে দু-দন্ড পায়চারি করে নেন আর হাতপাখায় বাতাস খান! 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৭528686
  • দারুন লাগছে সিরিজটা। 
    তুতানখামেনের চেয়ার (সিংহাসনের মতো একদম দেখতে নয়) তো রাখাই আছে, ওখানেই এক পায়ের চপ্পল খুলে পায়ের উপর পা তুলে একটু ফ্যানের তলায়
    বসে নেন ক্লান্ত লাগলে।
     
  • সুদীপ্ত | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:১২528687
  • ধন্যবাদ রমিত! আপনি ঠিক বলেছেন, আমি সিংহাসন লিখেছি বটে, ওটা আসলে 'ceremonial  chair', অবশ্য 'throne' -ও বলে কেউ কেউ। এই আর একখান চেয়ার তুতানখামুনের, কত যে ছবি! 
     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:8b66:7bb4:6fc2:201 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৪০528694
  • বেশ হচ্ছে
  • hu | 72.241.81.21 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৩২528698
  • সুদীপ্ত, হ্যাঁ, এই মূর্তিটাই। এটা আমার খুব ভালো লাগে।
  • | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১২528702
  • কিং তুত মনে হয় রকিং চেয়ারে বসে দোল খেত। 
    লেখা ছবি দুইই দুর্দান্ত। 
     
    ২য় পর্বটা  প্রথমের সাথে লিংক হয় নি। একটু জুড়ে দিস। 
  • সুদীপ্ত | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫১528703
  • পলিটিশিয়ান, ধন্যবাদ! 
     
    hu, হাজার হাজার বছর আগে সুন্দর ছবি বা মূর্তি আরও অনেক জায়গায় তৈরী হতো, ভারতেও আছে, কিন্তু চোখ আঁকার ব্যাপারে মিশরকে সত্যি সবার আগে রাখতেই হবে মনে হয়! এতটাই জীবন্ত! 
     
    দমদি  থ্যাঙ্কিউ! এই লেখাটা লিখব কিনা একটু ধন্দে ছিলাম, মানে এত উপাদান, গল্প, ইতিহাস, সব মিলিয়ে একেবারে 'overwhelmed' ছিলাম। কি লিখবো, কতটা লিখব, কি বাদ দেবো! ছবিও তাই! এত নোট নিয়েছিলাম ঘুরতে ঘুরতে, সেসবেরই বা কি হবে। যেভাবে পারি একসঙ্গে নামিয়ে রাখি আপাততঃ।
     
    প্রথম পর্বটা জুড়ে দিলেও উপরে আসছে না, গুরুর অ্যাডমিন বা গুপু-রা যদি দেখেন একবার।
     
  • hu | 72.241.81.21 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৯528706
  • একদম তাই। নেফারতিতির যে মূর্তিটা বার্লিনে আছে (যেটার একটা চোখ নেই) একটা আর্টিকলে পড়ছিলাম সেটা নাকি ছাত্রদের মূর্তি গড়া শেখানোর মডেল হিসেবে ব্যবহার হত। ঐ ফাঁকা অক্ষিকোটর রাখা হয়েছে চোখ আঁকা ডেমন্স্ট্রেশনের উদ্দেশ্যে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন