এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শিল্প সাহিত্য চর্চা

    Muradul islam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১২৭০ বার পঠিত
  • আমার কি হয়েছিল আমি জানি না। হয়ত ছিনতাইকারী ধরেছিল অথবা হয়ত আমি খপ্পরে পড়েছিলাম মলম পার্টির। অথবা এমনও হতে পারে আমার কোন পুরনো শত্রু দলের মুখোমুখি হয়ে পড়েছিলাম এবং তারা আমাকে নির্জনে একা পেয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহারই করেছে। পাঞ্জাবীটা ছিঁড়ে গেছে বুকের কাছে, পড়েছিলাম মাটিতে দীর্ঘক্ষণ তাই ধুলোবালি লেগে অবস্থা একেবারে খারাপ। কনুইয়ের কাছের অংশ বেশ জ্বালা করছে, হয়ত উঠে গেছে চামড়ার অংশ খানিকটা। কিন্তু আধো অন্ধকারে কনুই দেখতে ইচ্ছে করছিল না। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম মোবাইল, মানিব্যাগ কিছুই নেই। অর্থাৎ এই শহরে আমি একজন পরিচয়হীন মানুষে পরিণত। নিজের স্মৃতিশক্তিটা ঠিক থাকলে কোন সমস্যা ছিল না। যেকোন ফোনের দোকান থেকে কিংবা কোন সহৃদয় পথচারীর কাছ থেকে মোবাইল ধার নিয়ে আমার বাসায় ফোন করতে পারতাম। আমার নিশ্চয়ই বাসা ছিল বা আছে। অথবা আমি হেটে হেটেই সেখানে হয়ত পৌছে যেতে পারতাম।

    মূল সমস্যা হয়েছে কিছু মনে করতে না পারায়। মাথায় সম্ভবত বড় ধরনের আঘাত পেয়েছি। মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম ভালোমত। না, কোন ব্যথা টেথা নেই।

    মাটিতেই বসে ভাবছিলাম। কোনভাবে স্মৃতিশক্তিটাকে ফিরিয়ে আনতে পারলে হয়।

    রাস্তায় পাশে ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো আবছা আলো ছড়াচ্ছে। একজন লোককে আসতে দেখলাম। বৃদ্ধ লোক। পড়নে খুব পাতলা পাঞ্জাবী। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। বাম দিকের কাচ ফেটে গেছে।
    লোকটি আমার কাছে এসে হাসল। দেখলাম তার সামনের পাটির একটি দাঁত নেই।

    লোকটি স্বাভাবিকভাবে বলল, “কী রে এইখানে বইয়া রইছস ক্যান? আইজ তো কামে বের হইতে নিষেধ, এইটা তোর কানে যায় নাই বান্দির পোলা?”

    আমি তার কথার কোন অর্থ করতে পারলাম না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

    লোকটি বলল, “তাকাইয়া রইছস ক্যান? তোরে ওরা বলে নাই আইজ আমাদের শিল্প সাহিত্য করার টাইম?”

    আমি বললাম, “আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

    লোকটি ফ্যাৎ করে থুতু ফেলল একপাশে। তারপর বলল, “তুই কই থন আইছস?”

    আমি বললাম, “আমি কিছুই জানি না। বোধহয় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। এখন কিছুই মনে করতে পারছি না।”

    লোকটি তার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করল। আরেক পকেট থেকে দেয়াশলাইয়ের বাক্স। সিগারেট ধরিয়ে সে লম্বা টান দিল। তারপর আমার মুখের উপর ধোঁয়া ছেড়ে বলল, “তাইলে এখন যাবি কই?”

    আমি বললাম, “জানি না।”

    লোকটা আমার কাঁধে হাত দিয়া বলল, “তাইলে ল আমাগো লগে। আমরা আইজ শিল্প সাহিত্য করব। তুইও আইজ আমাদের সাথে জাতে উঠবি। তুই লাকি।”

    আমি লোকটির কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু তবুও তার সাথে উঠলাম। কারণ সেখানে বসে থেকে আমার করার কিছুই ছিল না। লোকটি এবং আমি সোজা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগলাম গলির মুখের দিকে।

    হাটতে হাটতে আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কে?”

    লোকটি বলল, “ভিক্ষুক সমিতির সভাপতি।”

    আমরা হেটে এগিয়ে গেলাম গলির মুখে। গিয়ে আমি দেখতে পেলাম প্রায় কয়েকশ ভিক্ষুক। লোকটিকে দেখে ভিক্ষুকেরা মৃদু উল্লাশ ধ্বনি করে উঠল।

    লোকটি দু হাত তুলে তাদের থামতে ইশারা করে বলল, “থামো বন্ধুগন। এই দেখো আমগো লগে কে আইছেন। ইনি হইলেন লীডার।”

    লোকটি আমাকে দেখিয়ে কথাটা বলল। আরো বলল, “ইনি আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। তার সেই এলেম আছে।”

    ভিক্ষুকেরা উল্লাশে ফেটে পড়ল।

    আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। লোকটিকে বললাম, “এসব আপনি কি বলছেন?”

    লোকটি বলল, “চিন্তা করিস না বেটা। আমি তর লগে লগে আছি।”

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু কীসের নেতৃত্ব?”

    লোকটি বলল, “আমরা আইজ শিল্প সাহিত্য করব। তুই নেতৃত্ব দিবি।”

    লোকটি হাক দিয়ে ডাকল একজনকে। “ওই তোবারক, লীডাররে জিনিস দেখা।”

    একটা ছেলে সাদা পলিথিন ব্যাগে করে হলুদ কীসব বস্তু এনে রাখল আমার সামনে। আমি কিছুটা দূর্গন্ধ অনুভব করছিলাম।

    আমি লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, “এসব কি?”

    লোকটি বলল, “জিনিস। মাইনশের জিনিস। ভালো নাম গু। হইলদা হইলদা গু।”

    আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এসব দিয়ে কী করবেন?”

    “বোম ফাটামু। বইমেলায় যামু আমরা। ধনীর পোলারা মাইয়ারা, মিডলক্লাসের পোলারা মাইয়ারা বই কিনে দেখস না? মোটা মোটা বই। কিইন্যা নিয়া ঘরে সাজাইয়া রাখে। বই পইড়া কাইন্দা বালিশ ভিজাইয়া দেয়। দুপুরে ভাত খাইয়া পইড়া ঘুমায়। আর লেখকেরা আসে, অটোগ্রাফ দেয়। আগামী বার বই লেখার জন্য হরলিক্স কেনার পয়সা কামায়।”

    “তাতে কী?”

    “তাতে কিছু না। আমাদেরও শখ হইছে। আমাদের মছু মিয়াও বই লেখব হরলিক্স খাইয়া। আমরাও ভাতঘুম দিবার আগে বই পড়ুম। আমরাও বই পইড়া কাইন্দা ভিজামু বিছানা বালিশ।”

    “তো সমস্যা কী? আপনারাও পড়েন।”

    লোকটা বলল, “এইখানেই তো সমস্যা বাছা। আমাদের মেলায় ঢুকতে দেয় না। ওরা কয় ভিক্ষুকমুক্ত রাখব। খালি ওরা শিল্প সাহিত্য করব। আর আমরা ভিক্ষা করব। এইটা কী মানা যায়?”

    “তাহলে কী করবেন এখন?”

    “তাই আমরা আইজ মেলায় যামু। ভালো কাপড় চোপড় পইড়া ভিত্রে যামু। এরপর ব্যাগের মধ্যে রাখা জিনিস ছিটামু সবখানে। আমাদেরই জিনিস। অরিজিনাল।”

    আমি তাদের বিভৎস পরিকল্পনায় কেঁপে উঠলাম। বাঁধা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম বাঁধা দিতে গেলে আমাকেই জিনিসের কবলে পড়তে হবে। এই শত শত লোককে বুঝানো সহজ হবে না।

    তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল মেলা প্রাঙ্গনের দিকে। কি ঘটতে চলেছে তা ভাবতে গিয়ে আমি ভীত হয়ে পড়েছিলাম প্রথমে। কিন্তু যতই গেটের কাছে আসতে লাগলাম ততই উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আমার পকেটেও এক প্যাকেট জিনিস তারা দিয়ে দিয়েছিল। বাম হাত দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম তা আছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১২৭০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    হেলেন - Muradul islam
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sabash | 213.147.88.86 (*) | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০২58058
  • জিও । অরিজিনাল নেমেছে।
  • ranjan roy | 24.99.6.182 (*) | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:৫৪58059
  • ক্ষমা করবেন, খুব অরিজিনাল তো লাগল না। কেমন যেন ফ্যাতাড়ুর কাব্য সম্মেলনে ঢুকে পরার গপ্পোর ছায়া।
    একান্ত ব্যক্তিগত মত। অন্যদের ভালো/অরিজিনাল লাগতেই পারে।
  • Muradul islam | 68.97.185.44 (*) | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:১৬58060
  • আপনি ঠিক বলেছেন। এটা ফ্যাতাড়ু দ্বারা অনপ্রাণিত, তেমন অরিজিনাল কিছু না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন