এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নাস্তিকের আধ্যাত্মিকতা

    Hindol Bhattacharjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৬ মার্চ ২০১৬ | ২০৮৫ বার পঠিত
  • কেন বুদ্ধ সবকিছু ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ? আর বেরিয়ে কৃচ্ছসাধনের মার্গ থেকে এক নিঃসঙ্গতার বিশ্বে পরম শূন্যতার বিশ্বে তিনি কি খুঁজে পেয়েছিলেন? নীরবতা? শান্তি? জীবনের চরম অর্থহীনতা? না অর্থপূর্ণতা? এই সব ভাবতে ভাবতে আমি আবিষ্কার করলাম আমি এক নাস্তিক আধ্যাত্মিক। বিষয়টি কি সোনার পাথরবাটির মত শোনালো?
    আসলে বিষয়টি এক চরম বিরোধাভাষ নিয়েই এগিয়ে চলেছে দিনের পর দিন । সমস্যা হল ধর্ম যখন ব্যক্তি-ধর্ম থেকে সমষ্টিগত ধর্মাচরণে নিজেকে নিয়োগ করে, তখন ধর্মের সঙ্গে দার্শনিকতার আর কোনো সম্পর্ক থাকে না । সামাজিক ধর্ম এক শাসন মাত্র, মুক্তি নয় । অথচ , ধর্মের বা ঈশ্বর-ভাবনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মুক্তি এবং সংযোগ । সংযোগ কিসের সঙ্গে এবং মুক্তি কিসের থেকে?
    বিজ্ঞান বা দর্শনের মূল উদ্দেশ্যটি হল মাইক্রোর মধ্যে ম্যাক্রোকে খুঁজে পাওয়া । বা ম্যাক্রোর মধ্যেও মাইক্রোর অস্তিত্বের কারণ অনুসন্ধান । এর মানে হল, আমি আছি, খুব ভালো কথা, কিন্তু আলফা সেন্টাউরিও আছে । এই পৃথিবীর বাইরে কোটি কোটি কোটি আলোকবর্ষের স্পেস আছে, কেন আছে? এত নক্ষত্র, কেন আছে? সময়। কেন আছে? শূন্যতা। কেন আছে? এই বিশাল মহাহগতের থাকার সঙ্গে আমার থাকার সম্পর্ক কোথায়? এই যে সাত সুর আর বারোটি স্বরে আজান থেকে কীর্তন সব গাওয়া হয়, এই যে সুরগুলি আছে, রাগগুলি আছে, এগুলি কি মানুষের সৃষ্টি? না কি প্রকৃতির?
    সব রাগ তো বিশেষ ভাবে সৃষ্ট তরঙ্গ। আর তা পৃথিবীতে এক, আর ১৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে আরেক, তা তো হতে পারে না । তার মানে সঙ্গীত, এক সংযোগ।
    কার সঙ্গে সংযোগ? যা আমি ছাড়াও আছে, থাকবে, তার সঙ্গে আমার বর্তমানের । কিন্তু আমি তো ঈশ্বরবিশ্বাসী নই। হ্যাঁ, আমি ঈশ্বরবিশ্বাসী নই, আমি ধর্মবিশ্বাসী নই, আমি মনে করি না, এই সব সুর ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন । আমি মনে করি, এই মহাজগতের , এই বিরাট অজানা মহাশূন্যের এক নির্জন সত্তা আছে । সেই সত্তা পরিবর্তনশীল । কিন্তু সেই সত্তা আত্মপ্রকাশ করতে চায় । আমি তার বাহক মাত্র ।
    এছাড়া আমার জীবনের আর অন্য কোনো মানে নেই ।
    বাকি সব তো আমাদের তৈরি করা । দর্শনের মধ্যে আত্মানুসন্ধানের ক্ষেত্রটিকে অবহেলা করে, তাকে সমষ্টিগত সাধনার অংশ করে নেওয়ার মধ্যে নির্জন শূন্যতাবোধ নেই, আছে এক সাংসারিক , রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক , সামাজিক ক্ষমতা কাঠামো । হিন্দু- মুসলমান- খ্রীষ্টান - সংখ্যালঘু- সংখ্যাগুরু-- এ সব তো সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়-আশয় । তার সঙ্গে ব্যক্তির সঙ্গে মহাজগতের যোগ বা সংযোগের শূন্যতাবোধের কী সম্পর্ক?
    ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে, এই বিদ্বেষ-মুখর বিশ্বে মনে হয় আমাদের ব্যক্তিধর্ম নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে । কারণ এখন ধর্ম একটি চিহ্নে পরিণত হয়েছে । এবং বহুদিন ধরে এই সব চিহ্ন লালিত পালিত হয়েছে ক্ষমতা কাঠামো দ্বারা । যার সঙ্গে সংযোগের কোনো সম্পর্ক নেই ।
    গৌতম বুদ্ধ যে চরম শূন্যতা আর চরম নীরবতার কথা বলেছিলেন, তা অর্জন করাই জীবনের উদ্দেশ্য বলে আমার মনে হয় । ' আমি ঈশ্বর বিশ্বাস করি না" এর মানে আমি ঈশ্বর সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক ধারণায় বিশ্বাস করি না, সংঘে বিশ্বাস করি না, সমষ্টিগত আচারে বিশ্বাস করি না, এবং ঈশ্বর ধারণাতেও বিশ্বাস করি না। এ হল আমার নাস্তিকতার বোধ ( যুক্তি কথাটি ব্যবহার করলাম না) ।
    কিন্তু এর সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্কটি কোথায়?
    সম্পর্কটি হল বিচ্ছিন্নতার । প্রথমে ঈশ্বর নামক সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারণার সঙ্গে ঈশ্বর নামক কল্পনার বিচ্ছিন্নতা । এটা যদি সম্ভব হয়, তবে, এই বিশ্বে অনেক সমস্যা কমে যাবে । কারণ একটা মনগড়া কল্পনাকে নিয়ে পৃথিবীর মানুষ মারামারি কাটাকাটি, হিংসা করে যাবে, এটা তো বাঞ্ছিত নয় । দ্বিতীয়ত, ঈস্বরের সঙ্গে আমার পার্থিব অস্তিত্বের কোনো সম্পর্ক নেই, মৃত্যুর পরে তো আরো নেই । আমি মৃত্যুর পরে এই প্রকৃতিতেই বিলীন হয়ে যাব, আর আমার কোনো এক বিন্দু অস্তিত্ব থাকবে না । এই নিশ্চিত বিষয়টির সঙ্গে ঈশ্বরভাবনার কোনো সম্পর্ক নেই । আস্তিকতার যে কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ থাকে, সেগুলি নিশ্চিহ্ন হল এই ভাবে । আমাকে গাড়ি দাও, আমাকে টাকা দাও, আমাকে বউ দাও, আমাকে ক্ষমতা দাও, আমাকে রোগমুক্ত কর-- এ হেন আস্তিকতার চেয়ে নাস্তিকতা ভালো বলে আমার মনে হয় ।
    এখানেই আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক । একজন নাস্তিক মানুষও চরম আধ্যাত্মিক হতে পারেন । এবং তাঁর পক্ষেই আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠা সম্ভব। কারণ তিনি তো ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য আধ্যাত্মিক হচ্ছেন না । তিনি নিজেকে খোঁজার জন্য আধ্যাত্মিক হচ্ছেন । এই মহাজগতের পরম শূন্যতার সঙ্গে বা পরম পূর্ণতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে । তিনি সংযুক্ত হচ্ছেন । সচেতন ভাবে । বোধের অতীত, চিহ্নের অতীত সেই চেতনাপ্রবাহের সঙ্গে তাঁর এই সংযোগ ।
    তিনি নিজের সঙ্গেই বিচ্ছিন্ন। ঈশ্বর নামক ভাবনার সঙ্গেও বিচ্ছিন্ন।
    সংযোগ তাঁর আনন্দের সঙ্গে ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৬ মার্চ ২০১৬ | ২০৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ | 81.244.130.85 (*) | ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৪56905
  • দুত্তোর মশাই। জীবনের উদ্দেশ্য কি-এটা সবাই খুজছে-নইলে কিভাবে নিঃশ্বাস নেবে? সুতরাং আধ্যাত্মিক সবাই-সাপ, হাতি ঘোরা ব্যাঙ
  • Abhyu | 85.137.5.138 (*) | ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:২০56906
  • নাস্তিক ব্যাঙেরাও কি আধ্যাত্মিক?
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩১56907
  • আমাকে গাড়ি দাও, আমাকে টাকা দাও, আমাকে বউ দাও, আমাকে ক্ষমতা দাও, আমাকে রোগমুক্ত কর-- এ হেন আস্তিকতার চেয়ে নাস্তিকতা ভালো বলে আমার মনে হয় ।

    ---
    বিপ, তুমি নাস্তিক লোক। তুমি কি এগুলো চাইছ না? চাইলে কেন চাইছ? ব্যক্তিগত সুখ বেশি পাবার আশায়? তুমি কি নিশ্চিত; এতে করে বেশি সুখী হতে পারবে( শান্তি নয় ,খালি সুখ)?
    যদি নিশ্চিত না হও; তাহলে এত আকুলি বিকুলি কেন?
    একজন ইশ্বর বিশ্বাসী লোক এগুলোই; ঈশ্বরের কাছে চাইছে; তো গোল টা কোথায়?
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩২56908
  • সরি বিপ নয়, হিন্দোল হবে। এধরনের ল্যাখা তো একজন I লেখে জানতেম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন