এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শবরীমালা বিষয়ক

    Shuchismita Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ | ২২৩০ বার পঠিত
  • শবরীমালা নিয়ে ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। তারপর অন্যত্রও দীর্ঘ আলোচনা হল। আমার মূল বক্তব্যগুলো এক জায়গায় জড়ো করে এই লেখা।

    প্রথমত, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সব হিন্দুর সব মন্দিরে প্রবেশাধিকার আছে। কাজেই সংবিধান অনুযায়ী মেয়েদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার আটকানো যাবে না। কিন্তু এখানে সংবিধান নিয়ে একটি প্রশ্ন তোলা হয়ত অসঙ্গত হবে না। সংবিধান কেন শুধুমাত্র হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার দিল? কেন ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে নয়? তাহলে কি সংবিধান ধর্মীয় নিয়মকানুনকে নাগরিকের যথেচ্ছ বিচরণের ওপরে জায়গা দিচ্ছে?

    এবার তাহলে দ্বিতীয় পয়েন্টে আসা যাক। ধর্মীয় নিয়মকানুন যদি সত্যিই বেশি গুরুত্ব পায় তাহলে দেখতে পাচ্ছি এক্ষেত্রে শবরীমালা মন্দিরের নিয়মানুযায়ী সেখানে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সৈকতদার লেখা পড়ে জানলাম, আরো অন্তত দুটো মন্দির আছে দক্ষিণ ভারতেই যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। ২০১৮-র মে মাসে আমি এবং মিঠুন কাশ্মীর বেড়াতে যাই। শ্রীনগরে পাঁচদিন ছিলাম। তার মধ্যে একটি দিন রেখেছিলাম শ্রীনগরের পুরোনো মসজিদগুলোর জন্য। এই মসজিদগুলো নিয়ে একটা বড় লেখা তৈরী করার ইচ্ছে গত সাতমাস ধরে মনের মধ্যে লালন করছি। নানা ব্যস্ততায় হয়ে উঠছে না। শাহ-ই-হামদিন নামে একটি অপূর্ব মসজিদ আছে ঝিলমের তীরে। মসজিদের বাইরে ও ভিতরে পেপার ম্যাশের অসাধারণ নকশা। আমাদের বাইরেটা দেখেই চলে আসতে হয়েছে। ভিতরে অমুসলিমের প্রবেশ নিষেধ। খাস-বাজার-নকশাবন্দ নামে একটি মসজিদের ভিতরেও অপূর্ব পেপার ম্যাশে নকশা আছে। সেখানে মিঠুন ঢুকতে পেয়েছিল। ইমাম নিজে ওকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। আমি শুধু গল্পই শুনেছি। মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। দস্তগীর সাহিবে ঢুকেছিলাম। সেও ভারী চমৎকার মসজিদ। ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে আমায় আটকে দেওয়া হল। সেই জায়গা শুধুই পুরুষদের প্রার্থনার জন্য। এই জায়গাগুলোয় যে যেতে পারলাম না, তা নিয়ে একটু দুঃখ তো আছেই। ধর্ম আমি মানি না। কোন ধর্মকেই সম্মান করার দায় আমার নেই। কিন্তু যারা মানেন তাদের প্রতি সম্মানবশতই কিছু কিছু নিয়ম মেনে চলি। দরগায় গেলে মাথা ঢাকি। গ্রীসে একটি চার্চে ঢোকার সময় একটা কাপড় স্কার্টের মত জড়িয়ে নিতে হয়েছিল, কারণ আমি ট্রাউজারস পরেছিলাম। এটা বুঝে নেওয়া জরুরী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে সাম্য নেই। ধর্মকে সম্মান এবং সাম্যপ্রতিষ্ঠা - এইদুটো একসাথে হবে না। শবরীমালায় জোর করে ঢুকতে চাইলে, আরও কিছু গোষ্ঠী জোর করে অন্য ধর্মস্থানে ঢুকতে চাইবে। একজন অবিশ্বাসী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে এতে আমার কিছুই এসে যায় না। কিন্তু যে দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে চলছে সেখানে এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক অবিমৃষ্যকারিতা মনে হয়।

    তৃতীয়ত, শবরীমালায় ঢোকার সাথে উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট কিভাবে জুড়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। প্রাতিষ্ঠনিক ধর্ম গল্পনির্ভর। গল্পের যুক্তিনির্ভর হওয়ার দায় নেই। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মেরও নেই। উপরন্তু সব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই পিতৃতান্ত্রিক। শবরীমালায় ঢুকে সেই পিতৃতন্ত্রের অংশ হতে চেয়ে মেয়েদের অবস্থার কি উন্নতি হতে পারে? যিনি আয়াপ্পার ব্রহ্মচর্যের গল্পে বিশ্বাস করেন তিনি মন্দিরে ঢুকে দেবতার ব্রহ্মচর্যে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইবেন না। যিনি বিশ্বাস করেন না তিনি কোর্টের নির্দেশের সাহায্যে ঢুকতেই পারেন জোর করে। কিন্তু সেখানে আমি দ্বিতীয় পয়েন্টে যা লিখেছি তেমন গোলযোগ হওয়ার সম্ভাবনা। সর্বোপরি, একটি পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পুজো দিতে পারলে মেয়েদের কি উপকার হবে সেটা স্পষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম যেহেতু সাম্যের ধারনায় বিশ্বাস করে না, তাই এর আওতায় থেকে কোনোদিনই উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট হবে না। সাম্য আনতে গেলে ধর্মবর্জন ছাড়া উপায় দেখি না।

    একমাত্র যে জায়গাটা আমার অর্থবহ লাগছে তা হল, এই আন্দোলনের সূত্র ধরে মেয়েদের ঋতুবিষয়ক আলোচনা আরো একবার উঠে আসছে। ঋতুকালীন সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলতে যদি এই আন্দোলন কোনভাবে সাহায্য করে তাহলে সেটা নিশ্চয়ই একটা প্রাপ্তি। সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের মানবীপ্রাচীর মেন্স্ট্রুয়াল হাইজিনের প্রশিক্ষণশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হলে খুব বড় কাজ হত। সেরকম হয়েছে বলে শুনিনি। তবে যারা এত মানুষকে একজায়গায় জড়ো করতে পেরেছেন তারা ভবিষ্যতেও এমন করতে পারবেন আশা রাখি। এবং সেই জনসমাবেশ পুজো করার অধিকারের মত পিতৃতান্ত্রিক সংস্কারে হাওয়া না দিয়ে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কোন কাজে ব্যবহার হলে মেয়েরা বাস্তবিকই সেই সংগঠকদের কাছে ঋণী থাকবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ | ২২৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 348912.82.2323.227 (*) | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৯50490
  • সেকেন্ড লাষ্ট প্যারাগ্রাফটা একেবারে আমার মনের কথা। আর লেখায় তোলা প্রশ্নগুলি প্রতিটা জরুরী
  • dd | 670112.51.1223.46 (*) | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪২50491
  • ঠিক ঠিক ঠিক
  • মানিক | 78900.84.6767.126 (*) | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪০50492
  • সংবিধানে গন্ডগোলের কেস আরো দু একটা আছে। তিন তালাক, বহুবিবাহ, উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি। একটা অন্যায়ের প্রতিকার করা হয়নি বলে অন্যটার প্রতিকার করা যাবে না, এটা মনে হয় ঠিক কথা না।

    সংবিধানকে পুরোপুরি সেকুলার করতে পারলেই ঠিক হত। দেখা যাক সেটা কতোদিনে হয়।
  • কল্লোল | 342323.191.5645.198 (*) | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:০৬50489
  • খুব দরকারী লেখা। খুব জরুরী প্রশ্ন।
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.75 (*) | ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪০50493
  • সব মসজিদ মন্দির হোক সবার জন্য উন্মুক্ত। নইলে ধর্মের মূল সুর-- মানব প্রেম অসার।

    লেখাটি ভাল লাগলো, কিন্তু ফেসবুকের জের গুরুতে অপ্ৰসংগ। উড়ুক।
  • hu | 3478.58.6712.94 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৯50495
  • আমার মতামত একই। মসজিদে প্রার্থনা করার অধিকার পেয়ে কি হবে? সেই তো পিতৃতন্ত্রের ধ্বজা ধরা। এই জায়গাটা দ্যাখো - "NISA president V.P. Zuhra said that there were no records stating that the Holy Quran and Prophet Muhammad had opposed women entering mosques and offering prayers." তার মানে সেই কোরান আর প্রফেট মহম্মদকে উদ্ধৃত করেই প্রার্থনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। যেসব ক্ষেত্রে কোরান ইকোয়াল রাইটের বিপক্ষে সেখানে কি হবে?
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪১50496
  • একদম ঠিক পয়েন্ট।
    কোরান বা অন্য যে কোন ধর্মগ্রন্থ-কে কেন মানতে হবে, সেটাই মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত। কোরান আবার 'আশমানী কিতাব', তার একটা শব্দ-ও বদলানো যাবে না - সমস্যা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন