পার্থপ্রতিমের চোখ শান্ত। গলার আওয়াজে একটা বিদ্রোহী অনুরণন আছে, যেটা কাবেরীর মনকে নাড়া দিল। সে বোধহয় এরকম একজনের দেখাই চাইছিল। কাবেরী অবশ্য এটাও ভাবল, কথা শুনে কি আর সব বোঝা যায়। অনেক ধান্দাবাজ লোকই কথায় ওস্তাদ। মিশলে দেখা যাবে সবটাই ফাঁপা।কাবেরী ভাবল, যাক ওসব অদরকারি চিন্তা করে লাভ নেই। আপাতত এদের খপ্পর থেকে ছাড়া পেলে বাঁচে।অমিতাভ বলল, ' এবারে ব্যাপারটা একটু টাফ হবে ... ...
সুমনা প্রতিবিম্বর কাছে পৌঁছতে সে বেসুরো গলায় গেয়ে উঠল, ' বসে আছি পথ চেয়ে ... ফাগুনের গান গেয়ে ... যত ভাবি ভুলে যাব .... 'সুমনা ভ্রু কপালে তুলে চোখ বড় বড় করে বলল,' ও বাবা ... হঠাৎ এত ভাব জেগে উঠল মনে, ভর দুপুরবেলায় ? লক্ষ্মণ তো সুবিধের নয় .... 'প্রতিবিম্ব কোন উত্তর না দিয়ে ... ...
সন্ধের পর হাওয়ায় হাল্কা ঠান্ডার ছোঁয়া লেগেছে । জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে গেল । এটা অবশ্য চন্দননগরের পুজো বলেই লোকে জানে । কলকাতার লোক কমই মাথা ঘামায় । এ পাড়ায় পরিমল শীলের বাড়িতে ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজো হয় প্রতি বছর । পাড়ার অনেক লোক যায় পুজোর ক'দিন । ধুপ ধুনোর গন্ধে মেশা আরতির কাঁসর ঘন্টার গুঞ্জনে নিবিড় সাবেকি ঘরানার আবহ ভেসে থাকে ওখানে । ওই টানেই পাড়ার লোকে হাজির হয় ওখানে । কেউ কেউ অঞ্জলি দেয় । ভাসানের পরদিন শীল বাড়ির সামনে কাঙালী ভোজন হয় দু তিন ঘন্টা ধরে । গামলা গামলা খিচুড়ি আর লাবড়া উড়ে যেতে থাকে । সে এক ... ...
কালিপুজোর পরই নিতাইবাবু বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে দিলেন। শশীভূষণবাবু তার চেনাজানা মিস্ত্রি এবং জোগাড়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। তিনি মিস্ত্রির কাজ দেখাশোনার ভারও নিলেন সকালে বিকেলে হাজির হয়ে কারণ নিতাইবাবুর তো ছুটির দিন ছাড়া সময় হবে না। কাঁহাতক আর অফিস কামাই করা যায় এই বছরের শেষে। শশীভূষণবাবু অতি সদাশয় ব্যক্তি তাতে সন্দেহ নেই। এপাশে ওপাশে আরও দুটো কোঠা ... ...
বিসর্জনের দিন রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের এক পরিবারে সত্যিই বিসর্জনের বাজনা বেজে উঠল। সপ্তমীর দিন বাগবাজার সার্বজনীনের মাঠে অনিমেষের বলা ' ওরকম বলিস না ... কোন কথাটা যে লেগে যায় কেউ বলতে পারে না ... ' একদম অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। পাড়ার বয়স্ক বাসিন্দা সংসারনাথ মুখোপাধ্যায় অকস্মাৎ ইহলোক ... ...
নকুড়ের দোকানের একটু আগে গঙ্গাপদর মুদির দোকান। পুজোর সময় শুধু নবমীর দিন একবেলা বন্ধ থাকে। বাকি সব দিন খোলা। সেই সকাল নটায় দোকান খোলে আর রাত দশটায় বন্ধ করে। দুপুরের সময়টা বাদ দিয়ে সে সময়েই ব্যস্ত থাকে। দোকানের পাশের দিকে একটা বেঞ্চি পাতা আছে। গঙ্গাপদর পুরণো নিয়মিত দু একজন ... ...
মহালয়ার দিন ভোরে নিতাইবাবু আর অঞ্জলি বাগবাজার ঘাটে এসেছে চান করতে। বটতলা ঘাটের পাশের ঘাটের সিঁড়িতে দুজনে খানিকক্ষণ বসল। বেলা দশটা বাজে। রোদের বেশ তাপ। বটের ছায়ায় বসেছে দুজনে। জলের ওপর দিয়ে ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে সারাক্ষণ। অঞ্জলি বলল, ... ...
আজ বুধবার। সন্ধে ছটা। রেডিওয় মজদুরমন্ডলীর সভার পর কৃষিকথার আসর শুরু হয়েছে। কোথায় যেন জগন্ময় মিত্রের 'তুমি আজ কতদূরে.... ' বেজে উঠল। শ্যামবাজারের ভূপেন বোস এভিনিউ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বিভূতিবাবু। যাচ্ছেন রামকান্ত বোস স্ট্রিটে শ্বশুরবাড়ির দিকে। ওখানে সকালের দিকে প্রায় প্রতিদিন যাওয়া চাই তার। ইদানীং নাটকের রিহার্সালের চক্করে কিছুদিন তার শ্বশুরবাড়িতে ... ...
দিবাকর বলল, ' আসুন আসুন ... 'শঙ্খ দিবাকরের পিছন পিছন দোতলায় উঠে এল ।অলোকেন্দুবাবুর চেম্বারের পাশে সেই ছোট ঘরটার দরজা খুলে ফ্যান চালিয়ে দিয়ে বলল , ' বসুন ... খবর দিচ্ছি ' ।বাসন্তীদেবীর ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দিবাকর বলল, ' বৌদি ... একজন দেখা করতে এসেছে । ওয়েটিং রুমে বসিয়েছি ... 'রেডিওয় গীতা দত্তের 'মেরা নাম চিন চিন চু ... হ্যালো মিস্টার হাউ ডু ইউ ডু ... ' হচ্ছিল আর বাসন্তীদেবী তালে তালে পা নাচাচ্ছিলেন শুয়ে ... ...
নলিন সরকার স্ট্রীটের সুশোভন সেদিন প্রতিবিম্বকে বলল, ' রবিবারে বাড়িতে আয়। পুজোর গান কিনেছি কিছু ... শোনাব। মানবেন্দ্র খুব নাম করেছে জানিস তো ... ও একটা দারুণ গান করেছে .... কি যেন ... বনে নয় মনে মোর পাখি আজ গান গায়। দারুণ লাগল। আসিস কিন্তু ...। পুজো এসে পড়ল প্রায়। রবিবার দুপুরের দিকে সুশোভনের বাড়ি গেল প্রতিবিম্ব। শুধু বনে নয় ... না, আরও অনেক গান টান শোনা ... ...