হরিপ্রসাদ দুধ চিনি মেশানো চা-ই খেলেন বেশ আয়েস করে । লাল চা তার অখাদ্য মনে হয় । তাকে এখন কিছুটা ধাতস্থ দেখাচ্ছে ।ব্যবসা তার রক্তে । বন্ডে সই করে দু এক কোটির পুঁজি সংগ্রহ করা তার কাছে নতুন কিছু না । কিন্তু এবারেরটা একদম অন্যরকম ব্যাপার । যে তাকে এতে জড়াল সে-ই কোথায় হাওয়া হয়ে গেল । আশ্চর্যের ব্যাপার।কলতানও চায়ে দু তিনটে চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলের ওপর রাখল । কাপের চায়ের দিকে তাকিয়ে একমনে কি ভাবতে লাগল ।----- ' আচ্ছা মিস্টার আগরওয়াল আপনি পুলিশের কাছে গেলেন না কেন ? '------ ' কিছু মনে করবেন না .... ওদের ওপর আমার ... ...
কলতান সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল এক্সপার্ট সন্দীপ ঘোষকে কলটা ফরওয়ার্ড করল । সন্দীপকে ফোন করে বলল, ' একটা কল ফরওয়ার্ড করেছি । লোকেশানটা ট্র্যাক করে আমাকে জানাও অ্যাজ সুন অ্যাজ পসিবল ... '----- ' দেখছি কলতানদা ... ' ----- ' বিল্ডিং-এর কোন ফ্লোরের কোন ফ্ল্যাট .... সেটা অবশ্যই জানতে হবে ... '----- ' ঠিক আছে ... দেখছি ... ' প্রায় আধঘন্টা বাদে সমর ফোন করল , ' অশেষ বেরিয়েছে । নিজের গাড়ির দিকে যাচ্ছে । আমরা ফলো করব তো ? 'গৌতমবাবু কলতানের নীরব ইঙ্গিত পেয়ে বললেন ,' হ্যাঁ হ্যাঁ ... ফলো কর ... ফলো কর ... ' অশেষের মারুতি টালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছে । ... ...
একটা পুরোণ অ্যাম্বাসাডার গাড়িতে রতন আর সমর সওয়ার হল অশেষের পিছু করার জন্য । সমর গাড়ির স্টিয়ারিং ধরল । এ কাজটা তারা আগেও অনেকবার করেছে ।মারুতি সুজুকি নিউ আলিপুর দিয়ে বেরিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে চলতে লাগল । বেহালা তারাতলা পেরিয়ে এক জায়গায় এসে একটা বহুতল বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল । গাড়িটা খানিকটা আগে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাল । অশেষ তারপর পিছনে একটু হেঁটে এসে বিল্ডিংয়ের ভিতর ঢুকে সিকিউরিটি গার্ডদের ছোট টেবিলটার সামনে দাঁড়াল। দুজন সিকিউরিটি গার্ড বসে আছে সেখানে । এখানে বোধহয় অশেষের নিয়মিত যাতায়াত আছে । সিকিউরিটিদের সঙ্গে তাকে একটু হাসিঠাট্টা করতে দেখা গেল । নিয়মিত যাতায়াতের সূত্রে ... ...
আশ্চর্যের ব্যাপার অশেষও দিব্যি আয়েস করে ঠান্ডা পানীয় পান করল । তার বিশেষ কোন তাপ উত্তাপ দেখা গেল না । দু ধরণের অপরাধীর এরকম হতে পারে । এক, সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন ,মানে ভয় পাবার অনুভূতিটাই নেই । আর দুই, সে নিশ্চিন্ত থাকে যে তার গডফাদার তাকে ঠিক বাঁচিয়ে নেবে । এর মধ্যে বোধহয় দ্বিতীয়টাই তার ক্ষেত্রে সত্যি । অবশ্য অশেষ যে অপরাধী এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ।অশেষ ঠান্ডা পানীয়ের বোতল শেষ করে একটা ঢেকুর তুলল । বোতলটা নামিয়ে রাখল চেয়ারের পাশে । ওসি গৌতম রক্ষিত চেয়ারে বসে বসে একটা হাই তুললেন । তারপর উঠে বাইরের দিকে গেলেন । বোধহয় ... ...
অশেষ তেরচা চোখে ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল এতটুকু টাল না খেয়ে ।ভদ্রলোকের সঙ্গী বছর চল্লিশের পেটানো চেহারার আর একজন বললেন , ' কি হল ? বার করুন ... বার করুন .... 'অশেষ পালিত চোখ না সরিয়েই অগ্রাহ্যের সুরে বলল, ' কেন বলুন তো ? কোথা থেকে আসছেন ? '----- ' বালীগঞ্জ থানা ... ' প্রথমজন পকেট থেকে আই কার্ড বার করে অশেষের চোখের সামনে ধরল । অশেষ তাতেও টসকাল না । বলল, ' লাইসেন্স কাছে নেই। দাঁড়ান ফোন করছি.....'----- ' কাকে ফোন করবেন ? '----- ' গাড়ির মালিককে .... '----- ' গাড়ির মালিক পরে হচ্ছে ..... আগে বলুন ড্রাইভিং ... ...
অশেষ পালিতের ডেবোনেয়ারে অনেকদিনের যাতায়াত । অশেষ একজন দক্ষ এ সি মেকানিক । ডেবোনেয়ারের সেন্ট্রাল এ সি সিস্টেম বেশ কিছুদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে । অশেষ এসেছে যন্ত্র মেরামত করতে । শীতাতপ যন্ত্র চালু হলে সুগত সেনের ঘরের জানলাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে । পিছনের জানলা দিয়ে আর চিউয়িং গামের প্যাকেট ফেলা যাবে না ।অশেষ সুগত সেনের চেম্বারের পর্দা সরিয়ে , কাঁচের দরজা একটু ফাঁক করে তার মুখটা দেখাল। মিস্টার সেন মুখ তুলতে অশেষ একগাল হেসে বলল, ' ভাল আছেন স্যার ? '------ ' আরে অশেষ যে .... ভেতরে এস , ভিতরে এস .... 'অশেষ ভিতরে ঢুকল ।------ ' বস ... ...
আজ আকাশ মেঘলা । প্রায় সারাক্ষণ টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে । দূরে কোথাও জোরালো বর্ষা হচ্ছে । জোলো হাওয়া ভেসে আসছে থেকে থেকে । কলতান ডেবোনেয়ারে ঢুকল বেলা ঠিক একটার সময় । সাড়ে বারোটায় সুগত সেনকে ফোন করে নিয়েছিল । নীচের কাউন্টারে স্লিপ জমা দিয়ে বসে রইল। একজন মাঝবয়সী অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহিলা বসে আছেন রিসেপশান কাউন্টারে । ডোবোনেয়ার একসময়ে পুরোদস্তুর ব্রিটিশ কোম্পানি ছিল ।কলতানের ডাক এল মিনিট পাঁচেকের মধ্যে । রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা ইন্টারকম কানে দিয়ে কিছু শুনে নিয়ে 'ওকে স্যার' বলে নামিয়ে রাখলেন। ভদ্রমহিলা উল্টোদিকে বসা কলতানের দিকে তাকিয়ে বললেন , ' ইউ প্লিজ গো আপস্টেয়ার .... সেকেন্ড রুম অন দা লেফট ... ...
শনিবার সকালেই সন্দীপের ফোন এল ।---- ' হ্যাঁ সন্দীপ, বল কি খবর । তোমার ফোনের জন্যই ওয়েট করছিলাম । বল ... '----- ' জীবনকৃষ্ণ সরকারের নামে যে সিমটা ছিল সেটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে আছে এই মুহূর্তে। হতে পারে সিমটা খুলে ফেলা হয়েছে সেট থেকে । তবে সিমটা নেওয়া হয়েছিল সাউথ ক্যালকাটার কোন আউটলেট থেকে । ট্র্যাকিং লোকেটরে ধরা পড়েছে। '------ ' সাউথ ক্যালকাটার কোন জায়গা থেকে সেটা ট্র্যাক করা গেল না ? '----- ' না ... তবে সার্ভিস প্রোভাইডারের নাম জানা গেছে ... ' সন্দীপ কোম্পানির নামটা বলল ।----- ' হুমম্ ... । লাস্ট কলটা কোথা থেকে এবং কবে হয়েছিল ডিটেক্ট ... ...
টেবিলের ওদিকে সুগত সেন আর প্রিয়নাথ রায় ছাড়া টেকনিক্যাল এক্জিকিউটিভ অদ্রিজা বাসুও বসেছেন ।সি ভি-র ফাইল উল্টে পাল্টে দেখে সুগত সেন বললেন , ' হুমম্ ... ভেরি গুড । ইংলিশে মাস্টার্স করেছেন ... ' তিনি ফাইলটা পি এন আর -এর দিকে এগিয়ে দিলেন । তিনি একটু দেখে নিয়ে কোন কথা না বলে ফাইলটা অদ্রিজা বাসুর হাতে দিলেন ।সুগতবাবু বললেন , ' আপনার পক্ষে তো টিচিং প্রফেশান মোস্ট সুটেবল ছিল । আপনি ওটা ছেড়ে আমাদের লাইনে আসতে চাইছেন কেন ? জানেন তো ... অ্যাড রিলেটেড জব খুব কমপ্লিকেটেড এবং হাইলি ডিমানডিং । তাছাড়া বায়োডাটায় যা দেখছি অ্যাড জবে আপনার কোন পাস্ট ... ...
ডেবোনেয়ারের অফিস জায়গা বদলে ব্রড স্ট্রিটেউঠে গেল । আজ বুধবার । বেলা বারোটা বাজে ।কলতান সন্দীপের কাছ থেকে কিছু খবর আসার অপেক্ষা করে আছে । ভাবছে , সে নিজেই একটা ফোন করবে কিনা । মোবাইলটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল । ঠিক এই সময়ে সন্দীপ ঘোষের ফোন এল । ------ ' হ্যাঁ ... বল সন্দীপ , কোন খবর হল ? '----- ' না ... সরি , কলতানদা আরও দু তিন দিন লাগবে । শনিবারের মধ্যে হয়ে যাবে আশা করি । একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম হচ্ছে । সে জন্য ... । একটু টাইম দিন .... কাজ হয়ে যাবে । প্লিজ ... '----- ' না ... ...