রাজসভায় সম্রাট ষোড়শ লুই (১৭৫৪-১৭৯৩)-এর বসার জায়গাটা আসলে ছিল টু-ইন-ওয়ান – একাধারে সিংহাসন এবং কমোড। হ্যাঁ, যা পড়লেন ঠিক তাই। এই তথ্য সরবরাহ করেছিল সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ টয়লেটস, দিল্লির পালাম এলাকায়। সেখানকার গাইড মহোদয় আমায় আর তথাকে জানিয়েছিলেন মহারাজ আহার করিতেন নিভৃতে, কিন্তু ইয়ে মানে পেট খালি করতেন প্রকাশ্যে – প্রমাণ হিসেবে রয়েছে তাঁর সিংহাসন যার রেপ্লিকা রাখা আছে ওই মিউজিয়ামে। ... ...
সে যার যার সঙ্গেই মিল পান, মনে রাখবেন আতঙ্কবাদীদের চেষ্টা থাকে মূলতঃ নিরীহ সাধারণ মানুষ মেরে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা, লোকে বাড়ি থেকে বেরোতে, অফিসে ব্যবসার কাজে যেতে, বাসে ট্রেনে চড়তে ভয় পায়। এর জন্য বিস্ফোরন ইত্যাদির ফলে সরাসরি সম্পত্তি নষ্ট হওয়া ছাড়াও দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সম্ভাব্য মারাত্মক ঘটনার জন্য লোক যে কত ভয় পেতে পারে তা দেখেছিলাম এক বার বাসে, তবে সে কথা পরে হবে। ভয় কাটিয়ে উঠতেই হয়, নইলে জীবন চলে না। এই যে জ্ঞান বিতরণ করছি, সেই আমিও কি ভীত হইনি ? হয়েছি, সুকুমার রায়ের ষষ্ঠীচরণ তো আর নই, নিরীহ বঙ্গপুঙ্গব, জোর ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে লাজপত নগরের বিস্ফোরনের জন্য নয়। দাদাঠাকুরের মত ‘পেট্রিয়ট’ কেস। ... ...
কাঁচির ক্যাঁচক্যাঁচ শুনতে শুনতে আমি খালি ভেবে যাচ্ছি কত গুণতে হবে, আর হেব্বি টেনশন হচ্ছে, যদিও যথেষ্ট টাকা এনেছি সাথে। টেনশন কাটাতে টেনিদার ‘দি গ্রেট ছাঁটাই’ গল্পের সেলুনের নামগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম - ওঁ তারকব্রহ্ম সেলুন, বিউটি-ডি-সেলুনিকা, সুকেশ কর্তনালয় – শেষেরটার একটা ইংরেজী নামও ছিল, সেটা মনে পড়ল না। ... ...
কোথায় যেন পড়েছিলাম ম্যাচিওরড হওয়ার পরিচয় বড় বড় কথা বলা নয়, ছোট ছোট জিনিস বুঝতে পারা। পার্ল বাকও বলেছেন এমন অনেক মানুষ আছে যারা বড় বড় সুখের আশায় ছোট ছোট আনন্দকে অনুভব করতে পারে না। সেই আনন্দের খানিকটা বুঝতে পারলাম প্রীতবিহারে ফিরে বিমান জ্যেঠুর আনা জিনিসগুলোর মধ্যে একটাকে দেখে। কলকাতার সন্দেশ এসেছিল, তাতে আমার দিল্লিবাসী দিল মোগ্যাম্বোর মত খুশ হয়েছিল ঠিকই, তবে তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ হয়েছিল যেটা পেয়ে তা হল একটা অতি সাধারণ জিনিস। ... ...
আইডিয়া নং ৩] দরজা ভেজানো থাকবে। আমাদের যে প্লাস্টিকের বালতি ছিল তাতে অল্প জল ঢেলে তাই দিয়ে দরজা ভেতর থেকে চেপে দেওয়া হবে। বাইরের লোক টোকা না দিয়ে দরজায় হালকা করে ঠেলা দেবে, দরজা আস্তে আস্তে খুলে যাবে। ভেতরের জনের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না। ফলঃ সুন্দর ব্যবস্থা, অসুবিধের বিষয় হল সিমেন্টের মেঝের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বালতি সরে যাওয়ার শব্দ পুরো হিচককের ফিলিমের সাউন্ড এফেক্ট নিয়ে আসত। ঘুমন্ত লোক আঁৎকে জেগে উঠত। ... ...
ছেলেটাকে বলেছিলাম এই সব টিপস এক জায়গায় নিয়ে একটা বই লিখে ফ্যাল। সে ব্যাটা খুব হাসল, তারপর বলল এ সব খুব গোপন বিদ্যে, আর গোপন বিদ্যের কথা কোনও বইতে লেখা যায় না। আমি প্রতিবাদ করায় এক চোখ টিপে ফিসফিস করে বলল, “চুরি বিদ্যের কোনও মেড ইজি বই-এর সন্ধান জানা আছে না কি দাদা ?’’ ... ...
বাস থেকে নেমে হেঁটে আসার সময়ে রাস্তাটা দেখতে দেখতে এলাম – যদি চাবিটা দেখতে পাই। বাড়ির যত কাছাকাছি আসছি তত বুক ঢিপঢিপানি বাড়ছে। গেট খুলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে এসে দেখলাম দরজা বন্ধ এবং শুধু ছিটকিনি দেওয়া, নো তালা। এবার কী দেখব ভেতরে গিয়ে ? কাঁপা হাতে ছিটকিনি খুলে ঘর যেমন রেখে গেছিলাম তেমনি রয়েছে, আর তালা এবং চাবি যেখানে থাকার কথা সেখানেই তারা শোভা পাচ্ছে। আহা, তখন যে ঠিক কেমন অনুভূতি হয়েছিল সেটা বোঝানো আর ‘পাউরুটি আর ঝোলা গুড়ের’ কম্বিনেশন কেন ‘সবার চাইতে ভাল’ সেটা ব্যাখ্যা করা একই রকম কঠিন কাজ। ... ...
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল যখন জানতে পারলাম আমায় মোটর বাইক চালিয়ে বাড়ি নিয়ে যাবেন সেই প্রথম ভদ্রলোক যিনি একের পর এক কমলা রঙ-এর গ্লাস খালি করে চলেছেন এবং ওনার কথাবার্তাও আমার একটু ইয়ে ইয়ে লাগছে। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আজ কিছু একটা ঘটবে। ওনার চেহারা খুব ভাল, জানালেন পাওয়ার লিফটার না ওয়েট লিফটার কিছু একটা ছিলেন এক কালে। হেলমেট টেলমেট নেই। খুব ভয়ে ভয়ে পিলিয়ন রাইড করতে উঠে দেখলাম, ওনার গলা কাঁপলেও হাত স্টেডি। রাত প্রায় সাড়ে এগারটায় আমায় বাড়ির দরজায় নামিয়ে উনি ফিরে গেলেন। ... ...
ভোটের ফলাফল বেরোনোর সময়ে আমি আর তথা সন্ধ্যা আর রাতের দিল্লি ঘুরে ঘুরে মানুষজনের প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। দোকানে, রাস্তায়, বাড়িতে লোকে রেডিও টিভি খুলে বসে আছে। চায়ের দোকানে দোকানে উত্তেজিত আলোচনা চলছে, রাস্তার লোকেরাও অনেকে ক্রিকেট কমেন্টারি শোনার মত কানে রেডিও নিয়ে ঘুরছে। জনপথে কোনও এক ভিআইপির বাড়ির সামনে রক্ষী রেডিও শুনছিল, তার সামনে কোমরসমান উঁচু বালির বস্তার সারি, তার ওপর বন্দুক রাখা। আমরা নতুন কিছু শোনার আশায় দাঁড়িয়ে গেলাম। রক্ষী রেডিওর ভল্যুম কমিয়ে গম্ভীরভাবে আমাদের চলে যেতে বলল, ওখানে দাঁড়ানো নিষেধ। ... ...
চা-ওয়ালা ছেলেটা হো হো করে হাসল, তারপর বলল, “জমি কিনতে গেছিলাম।” আমার মুখ দেখে ছেলেটা কিছু একটা বুঝল। বলল, “বিশ্বাস হল না, না ?” আমি চুপ। সত্যিই বিশ্বাস হয়নি। “কিছু মনে করবেন না স্যার, আপনি কত মাইনে পান? পাঁচ হাজার? সাত হাজার? দশ হাজার?” আমি চুপ। ১৯৯৬ সালে দশ হাজার টাকা মানে বেশ ভাল মাইনে। আমি তার চেয়ে অনেক কম পাই। “আমার ডেইলি প্রফিট ৫০০ টাকা। সেল নয়, প্রফিট,” বলল ছেলেটা। ... ...