ডায়াল করার পর যান্ত্রিক কণ্ঠে ঘোষণা হত – ‘আপ কাতার মে হ্যায়, কৃপয়া প্রতীক্সা কিজিয়ে’। ‘কাতার’ মানে আরব দেশটির কথা বলা হচ্ছে না। জানানো হচ্ছে যে আপনি একটি লম্বা লাইনের কোনও একটা অংশে রয়েছেন যেখানে সবাই ঠিক সেই জায়গায় ফোন করতে চাইছে যেথায় আপনিও কারও সাথে বাক্যালাপ করতে অধীর হয়ে রয়েছেন। অবশ্য কত জনের ‘কাতারে’ দাঁড়িয়ে আছেন আর কত ঘণ্টা ‘প্রতীক্সা’ করতে হবে তা নিয়ে কোনও অ্যাডভাইসরি আসত না। ... ...
ডিপ্লোম্যাসি কাকে বলে? সে জিনিসটা হল এমন একটা আর্ট, যাতে একটা কুকুরকে ততক্ষণই বাবা বাছা করতে হয়, যতক্ষণ না হাতে ঢিল পাওয়া যাচ্ছে। এখন এরা হল রাজধানীর কুকুর; তাই পলিটিক্স, ডিপ্লোম্যাসি ভালোই বোঝে। আর বোঝে বলেই বাবা বাছা করার সুযোগটুকু দেয় না, খুব জানে যে সুযোগ দিলেই আপনি ঢিলের খোঁজ করবেন। তবু যে তারা আমাদের দাঁত খিঁচানো ছাড়া আর কিছু করেনি তার কারণ বোধ হয় দুবলা পাতলা বাঙালী বলে ক্ষমা ঘেন্না করে দিয়েছিল। ... ...
কী করব বলুন, আদতে বীরভূম জেলার লোক তো, ঢেঁকিতে চড়ে সেখানকার আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে নারদ মুনির কী অবস্থা হয়েছিল জানেনই তো। অ, জানেন না, তাইলে শুনুন। বেলা তখন দশটা হবে। প্রভু নারায়নের নাম জপতে জপতে বীরভূমের ওপর দিয়ে যাচ্ছেন নারদ। হঠাৎ সোঁ সোঁ করে একটা অদ্ভুত শব্দ। কী ব্যাপার? মেঘ করল নাকি? ঝড় এল? না তো, আকাশ দিব্যি পরিস্কার। ওদিকে সোঁ সোঁ আওয়াজটা হয়েই চলেছে। ভয় পেয়ে স্পিড বাড়িয়ে দ্রুত চলে গেলেন নারদ। নারায়নের কাছে গিয়ে সব খুলে বলে জিজ্ঞেস করলেন, “ওটা কিসের শব্দ ছিল?” ... ...
হাঁদাভোঁদা আর নন্টেফন্টে-কেল্টুদার কীর্তিকাহিনীতে যে সব অতুলনীয় ধ্বন্যাত্মক শব্দ পাওয়া যেত তার মধ্যে ছিল ‘উলস চাকুস চুকুস’, জিভে জল আনা খাবার চেটেপুটে খাওয়ার শব্দ। অর্থাৎ রাজধানীর স্ট্রিট ফুড। দিল্লিতে থেকে সেই সুযোগের সদ্ব্যাবহার না করে কোন মূর্খ ? আলকাতরা মার্কা ছোলার তরকারি যারা রাঁধে তারা চুলও বাঁধে, মানে জিভে জল আনা চাটও বানায় স্যার। ... ...
এই ডবল ডোজের গোবর খেয়ে মহাভারতের শুদ্ধতা না হয় ফিরিয়ে আনা গেল, কিন্তু বাংলার পোড়া পেটের শুদ্ধতা বাঁচে কি করে? অফিসের ক্যান্টিনের খাবার টিফিন হিসেবে চলতে পারে, কিন্তু কালা ছোলে (আলকাতরার মধ্যে চাট্টি সেদ্ধ ছোলা ফেলে দিলে যেমন দেখায়) দিয়ে লাঞ্চ? অনেকে যেমন খায়, তেমনি পেপসি বা কোকাকোলা সহযোগে? নাঃ, অমন সাঙ্ঘাতিক ফিউশন আমার চলবে না। অতএব তিন কোর্সের লাঞ্চ চালু করলাম – ভাত, ডাল আর অমলেট। আমার আর তথাগতর সঙ্গেই এই অফিসে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার এক বাঙালি – দাশগুপ্ত। কালা ছোলে দিয়ে লাঞ্চ করতে বিরক্তি প্রকাশ করায় তাঁকে আমার মেনু সাজেস্ট করেছিলাম। তিনি নাক সিঁটকে বললেন, “অমলেট! সেটা তো লোকে ব্রেকফাস্টে খায়”। ... ...
তাঁরা দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ। চা খেতে খেতে তাদেরই এক জন বললেন, "ইহার পূর্বে কি কোনও কেলেংকারি ঘটে নাই এই দেশে ? রাজনীতিকরা কি অভিযুক্ত হন নাই পূর্বে ? সে সকল লইয়া প্রবল তদন্ত হইয়াছে এবং তাহা যে অতি বৃহৎ গ্রিন ব্যানানা ব্যতীত অন্য কিছু প্রসব করে নাই, তাহা বুঝিতে চিন্তন বৈঠক নিষ্প্রয়োজন। অতয়েব, হে অর্বাচীন, তুমি নিশ্চিন্তে পানভোজনে নিরত থাক এবং বাহুমূলকে বাদ্যযন্ত্র রূপে ব্যবহার কর।’’ ... ...
একই টেকনিক যে সব জায়গায় কাজ করে না সেটা বোঝানোর জন্য সেদিন বাড়ি ফিরে ভজহরি বাবুর বাজার করার গল্প বলেছিলাম তথাগতকে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর গল্প ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’-তে ‘বাজাড়ু’ ভজবাবুর দাম কমানোর কায়দা ছিল এক এক দোকানে এক এক রকম। কোথাও চড়া মেজাজ দেখিয়ে, কোথাও আবার হাপুস নয়নে কেঁদে। আমার রুম-মেটটি গল্প শুনে খুশী হল না, তার প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন লেগে গেছে, মুখে স্কচ ব্রাইট ঘসে দিয়েছে বাসের লোকটা। অমন চমৎকার মুক্তো ভুল জায়গায় ছড়িয়ে বসলাম। ... ...
তিনি হাতে ডু-অ্যাণ্ড-ডোন্ট লিস্ট ধরিয়ে দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম ‘ডু’ তাতে বিশেষ কিছু নেই, কেবল ‘ডোন্ট’ আর ‘ডোন্ট’। ১) কম করে ছ-মাসের আগে ঘর ছাড়া চলবে না, ২) ঘরে বান্ধবী টান্ধবী আসা চলবে না, ৩) ভোজন চলতে পারে, তবে পান চলবে না, ৪) বেশি রাত অবধি আলো জ্বালিয়ে রাখা চলবে না, ৫) ভাড়া তিন তারিখের বেশি বাকি রাখা চলবে না, ৬) ১১-টার বেশি রাত করে ঘরে ফেরা চলবে না, ৭) ঘরের দেওয়ালে পেরেক টেরেক পোঁতা চলবে না, ৮) ইত্যাদি আরও অনেক কিছু চলবে না... ... ...
বাবা একদিন বললেন পনের-কুড়ি দিন তো হয়ে গেল, আর ফোন নয়; একবার ওই অফিসে গিয়ে খোঁজ নাও। আর এক বন্ধুও সেখানে চাকরি পেয়েছিল আর আমারই মত হাপিত্যেস করে বসে ছিল। দুজনে মিলে গেলাম ডালহৌসি পাড়ার সেই অফিসে যেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আর গিয়ে বুঝলাম মহামতি নিৎসে কেন ওই কথাটা বলেছিলেন। কথাটা হল, “যাবতীয় খারাপ জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বাজে হল আশা, কারণ মানুষের যন্ত্রণাকে সে ব্যাটা দীর্ঘায়িত করে।” ... ...
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে নরবর! আমি সেই কূটবুদ্ধি, পানভোজনকুশলী নেতাগণকে আখ্যাত করিব, আপনি শ্রবণ করুন। আমি সেই চেন অলংকৃত, অদ্ভুতচরিত্র, বহুভাষী, বাইট-প্রিয় নেতাদিগের চরিত্র কীর্তিত করিতেছি, আপনি শ্রবণ করুন। হে রাজন, যাঁহারা পাঞ্জাবি-পাজামাবৃত, মোবাইলকর্ণগত, গ্রহরত্নখচিত অঙ্গুরিয়শোভিত, এবং রোদচসমা পরিহিত, তাঁহারাই নেতা। ... ...