আমাদের বাড়িটার একটা অদ্ভুত অবস্থান ছিল। আমাদের কোনও পাড়া ছিলনা সেই অর্থে। সামনে জিটি রোড দুপাশে দুটো বাড়ীর দুপাশ দিয়ে দুটো গলি।ওই গলি ধরে গেলে দুদিকে দুটো পাড়া। বাড়ির পিছনের বাড়িগুলো বা পাড়াগুলো কখনও আমি সেভাবে যেতাম না। আমাদেরকে মিশতেও তেমন দেওয়া হতনা। আমাদের বাড়ির লোকজনকেও পিছন দিকের পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গে খুব বেশি যাতায়াত করতে দেখিনি। তবে বিকেল হলেই এপাড়া ওপাড়ার সবাই পুসুমার কাছে ঘুঁটে কিনতে আসত নয়ত দুধ নিতে আসত। সেইসময়টুকু যতটা এপাড়া ওপাড়ার আলোচনায় আমার জগত দর্শন। ... ...
পুরানো কথা মনে করার একটা নেশা আছে, চোখ বুজলেই তাই আজও কত কথা মনে পরে... যে মেয়ে জন্মের আগেই তার বাবাকে হারায়, যৌবনের শুরুতেই মাকে হারায় তার বিয়ের জন্য তার দাদারা অহেতুক খরচা বাড়াতে চায়নি হয়তো নইলে রবিঠাকুরের লেখায় কৃষ্ণকলির কথা যতই মর্যাদা পাক না কেন, বাস্তবে গায়ের রঙ কালো হওয়ায় বিয়ের বাজারে দাম ওঠে না। ... ...
অনেকের মতই গামছা দিয়ে চুল বাঁধা কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে দুপুরবেলা মা ঘুমোলে মায়ের সিঁদুর কৌটো আর লিপস্টিক নিয়ে সাজগোজ করাটা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আজ বুঝি ট্রাকচালকদের দিনের পর দিন ট্রাক নিয়ে এক রাজ্যথেকে আর এক রাজ্য যাতায়াতে ওটাই ছিল ওদের কাছে ঘরবাড়ি , তাই রকমারি রং বেরঙের জিনিসের সাথে ঝকঝকে ঝান্ডী ( সিন্হেটিক কাপড়ের ওপর সোনালী রুপোলী লেস বসানেো পতাকা বা ঝান্ডা যা লরি বা ট্রাকের সামনে ইঞ্জিন বা বনেটের দুপাশে লাগানো হয়) গুলোর ওপর ছিল আমার সবচেয়ে বেশি আকর্ষন। ওগুলো বানানোর জন্য বড়বাজার থেকে থান কাপড় আসত আমাদের বাড়ীতে। আর সে গুলো বানানোর আগে সেই সব লাল নীল সবুজ হলুদ কাপড়ের টুকরো হয়ে উঠত আমার ছেলেবেলার সাজগোজ।কখনও বা শাড়ি কখনও বা ধুতির মত । আমি সেগুলো পড়ে বেশ কয়েকদিন বাড়ীময় ঘুরে বেড়িয়ে তার গুস্টির তুষ্টি হলে সেগুলো চলে যেত দর্জির কাছে ওই ঝান্ডী তৈরী হতে। শাড়ীর ওপর টান টা বোধয় হয় আমার সে সময়েরই গায়েখড়ি। ... ...
ছেলেবেলার কথা মনে হলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেবেলাটা অনেক বেশি ভাল ছিল। ঠাকুমার পুনর্জন্মের ইচ্ছা আর কিছু না হোক আমার মেয়েলিপনা বা ঠাকুমাপনায় কোনও অসুবিধা ঘটায় নি।তাই একটা বয়স পর্যন্ত চুড়ি হার টিপ চাইলেই পেতাম। আমার সব কিছুতেই সকলের প্রশ্রয় একটা থাকতই। ... ...
সে সব অনেক বছর আগের কথা। যে সংগঠনে আমার কাজের শুরু,একবার কোলকাতার উপকন্ঠে সেই সংগঠনের সকলকে নিয়ে এক আবাসিক কর্মশালার আয়োজন হয়েছিল। আমার মত অন্য যৌনতায় বিশ্বাসী এতগুলো মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে কয়েকটা দিন কাটানো আমার সেই প্রথম। অতবছর আগেও বিশ্বাস করতাম নারীত্ব একটা অনুভুতি। আজও সেটাই বিশ্বাস করি।আমরা বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানে বসবাসকরা বিভিন্ন মানুষ। এই চারদিনব্যাপী কর্মশালার মাঝে এই যে মনের আদান প্রদান, গ্রাম, শহর, মফস্বল,আধা মফস্বল বিভিন্ন রকম জীবনযাপনে অভ্যস্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষ আমাদের এক এক জনের অভিজ্ঞতাও এক এক রকমের ... ...
এইচ আইভি আক্রান্ত মানুষের জীবনে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধে শরীর সুস্থ থাকলেও, প্রতিদিন মানসিক ভাবে ভালথাকাটাও ভীষণ জরুরি। অথচ আমরা যতটা শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবি মানসিক স্বাস্থ্য কে সেভাবে গুরুত্ব দিই না। বহু মানুষ বিভিন্ন কারণে নিজের শেষদিন পর্যন্ত এইচ আইভি রিপোর্টটাকে গ্রহণ করতে পারেন না। যতই সরকারি ভাবে প্রচারে সামাজিক বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চলুক না কেন, আত্মবৈষম্য বা সেল্ফ স্টিগমার কারণে আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষ যে কোনও সময় ভালনারেবল হয়ে উঠতে পারে। সেখানে আমাদের মত অন্য যৌনতার মানুষের ভালনারিবিলিটি আরও বেশি। সামাজিক নীতিপুলিশির কারণে অনেকেই সেগুলো থেকে বেরোতে পারেন না। এমনই কিছু কথা... ... ...
আমি জয়দীপ, যে মনে করে সেক্সুয়ালিটি তার পরিচয় না, তবুও নিজের যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সোচ্চার। বহু বছর ধরে। একই সাথে এইচআইভি নিয়ে যাপন করছি ২০০৬ থেকে এবং এইচআইভি নিয়েও কিভাবে ভালো থাকা যায় তার প্রচার ও এইচআইভি নিয়ে মিথ ও মিস কনসেপ্শন পরিবর্তনের কাজ আজ আমার কর্মজীবনের অঙ্গ। এতগুলো বছরের লিঙ্গ রাজনীতির স্বপক্ষে বিপক্ষে চলতে চলতে কখন নিজের অজান্তেই জড়িয়ে গেছি আন্দোলনের সাথে তা আজ আমার জীবনের সাথে মিলে মিশে গেছে। সেই সঙ্গে নিজের জীবনের ছোটবেলা, বড়বেলা, হোমোবেলার স্মৃতি ভাগ করে নিতেই শুরু করছি পুরোনো কথার ঝাঁপি। ... ...