চেম্বারটির সাথেই একটা জানালা ছিল, সে জানালাটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল মোরসালিন। শম্পা চলে যাওয়ার পর ফাইলগুলো নিয়ে বসেছিল, এর মধ্যে তো একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, একটি বিশাল বিজনেস প্লান, কোম্পানির এই শাখা অফিসটার চেহারা একাই বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু কিছুদূর যেয়ে মাথাটা গুলিয়ে গিয়েছিল! এত দিন ধরে মেহনত করেছে যার জন্য, যার পুরো রূপরেখাটা তার দেয়া, সেই কাঠামোটাই যেন খুব অচেনা লেগেছিল, আর মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছিল। জানালাটার বাইরে তখন চলচ্চিত্রের রিলের মত ছুটে চলেছিল মানুষ, যানবাহন। এমনকি একটা নেড়ি কুকুরকেও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ুতে দেখা গেল, কি এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে রয়েছে যেন সে, কিসের যেন এক তাড়া! এমনই এক তীব্র চলার স্রোত জানালার নীচের রাস্তাটিতে যে মনে হয়, জড় দোকানপাট ও বিপনিবিতানগুলোরও চাকা গজিয়েছে! ... ...
তবে এই সহজ ব্যাপারটাও কিন্তু সহজে রপ্ত হয়নি নিশিগন্ধার। সে এরমধ্যেই অনেক রঙ ঢঙ দেখিয়ে ফেলেছে। সেটা কিরকম? সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণে যেমন লেখা থাকে স্মোকিং ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ তা সত্ত্বেও লোকে ফকফক করে সিগারেট খায় তেমনি রগচটা সুদীপের সঙ্গে সে একটু বেশি মাখামাখি করতে গেছে। তর্ক ঝগড়াও করতে গেছে। ভেবেছে এরপর ভাব হলে খুব মজা হবে। তা তো হয়ই নি। উলটে শঙ্কর মাছের লেজ উঠে এসেছে দীঘার সমুদ্র থেকে। ... ...
কথা বাড়াতে ইচ্ছে করবে না বলেই হাঁটব। আমার পাশেপাশে যারা ভীড় জমাবে তাদের গা থেকে উঠে আসা ধোঁয়া গন্ধে ভয় পাব না। না জেনে না চিনে অযথা ভয়ে একটা অভিশপ্ত জীবন আঁকব না, এটুকু অন্তত আমার উত্তরণ ঘটবে আমি নিশ্চিত। গুনিনের বুকের ভিতর কোন ঝড় গেঁথে তুলেছেন লেখিকা সেকথা ভাবতে ভাবতে বরং অন্ধকারের গায়ে আঙুল রাখব। কেউ হয়ত গল্প শোনাবে তাদের গুনিন হবার কাহিনী। ভুলভ্রান্তিতে ভরা ভয়ংকর দানবীয় ইতিবৃত্ত। লেখিকাও যে 'গুনিন' গল্পে বুক মুচড়ে ওঠা শব্দটুকু লিখেছেন, ভাবতে থাকব... ... ...
প্রমদারঞ্জন রায়ের বনের খবর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি - দুটি বই নিয়ে আলোচনা করলেন দিব্যেন্দু সিংহ রায়। ... ...
জল নয়। জল নয়। খটখটে রোদে চকচক করে ওঠা বালি ওখানে। সেই গল্পের মত। ওরকম জলের মত দেখতে লাগে। কাছে গিয়ে দেখা যায় বালি। বলে মরীচিকা। ঠা-ঠা-পোড়া রোদে গা-হাত-পা-সারা শরীর যেন জ্বলে জ্বলে উঠছে। এই কোথায় গেল! করকর করা চোখ দুটো গুনছে এবার। উনষাট, ষাট, একষট্টি, বাষট্টি… না একটা নেই তো। চারিদিকে যতদূর বালির ঢেউয়ের দিকে চোখ যায়, খোঁজার চেষ্টা করছে। তারপর ঝাপসা। আটষট্টি, ঊনসত্তর… না মিলছে না। কোনও একটা নাম ধরে চ্যাঁচাচ্ছে। আলম ইকবাল বা ইমরান…। ডাকছে। বারবার। মুখের ভেতর শুকনো জিভটা নড়ে নড়ে উঠছে। শুকনো গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোতে চাইছে না। বা-আ-বু…ল আ-বু…ল। না, সাড়া নেই। ... ...
ক্রোয়েশিয়ান চৌকির পুলিস কিঞ্চিৎ কৌতূহলী। আমার চেহারার সঙ্গে আমার পাসপোর্টের রঙ, গাড়ির নম্বর প্লেট এবং পার্শ্ববর্তিনীর মুখ কোনটাই মেলে না, প্রায় কখনোই। চার দশক কেটে গেছে, পুলিশের বিস্ময় আমাকে আর বিস্মিত করে না। এখন কেবল পরবর্তী সংলাপের অপেক্ষা। পরিচ্ছন্ন ইংরেজিতে জানতে চাইলেন ঠিক কোথায় যাচ্ছি—মস্তার? বললাম, মস্তার যাবো, তবে মেজুগরিয়ে হয়ে। রোদিকাকে দেখিয়ে বললাম ইনি যে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা মহিলা, একবার মা মেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান! ... ...
পত্রিকার নাম ধূমকেতু, তার সম্পাদককে বলা হল সারথি। উনিশশো বাইশের এগারই আগস্ট বেরল প্রথম সংখ্যা ধূমকেতু, রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী তার শিরোভূষণ। এর এক বছর আগে, উনিশশো একুশের সেপ্টেম্বরে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক বহুল প্রচারিত আলোচনায় রবীন্দ্রনাথকে অসহযোগ আন্দোলন, বিদেশী বস্ত্র বয়কট এবং চরকাস্ত্র প্রয়োগে স্বরাজের ভাবনায় নিজের মতে আনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন গান্ধী। এক বছর পর নজরুলের এই প্রয়াসকে প্রাণ-ভরে আশীর্বাদ জানালেন কবি! ... ...
কোন সবজেক্টে ব্যাবাক মানুষে, মানে ভারত তথা বাংলা তথা গুরুচন্ডালীর সব্বাই, যাকে বলে একেবারে হুলিয়ে পন্ডিত? মানে যাকে বলে প্রাজ্ঞ? না, না, ফুটবল নয়, পোলিটিক্স নয়, সাহিত্য বা ক্যালকুলাসও নয়। আসলে সবাই যে ব্যাপারে মতামতে ভর্পুর এবং অভিজ্ঞতায় উপছে পড়েন সেটা হচ্ছে বিরিয়ানি। একবার হাটে হাঁড়ি ভেঙেই দেখুন না, ঘটি বাঙাল, বাসী, প্রবাসী বা অ্যান্টিবাসী, তরুন বা বুড়োটে, সব সব রকমের জেন্ডার - মানে সকলেই তাদের অফুরন্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ভান্ডার নিয়ে হাজির হবেন। তক্কো জুরে দিবেন, কোনটি খাঁটি আর কোনটি বর্ণ সংকর দুষ্ট, কে অথেন্টিক, কে নকল নবীস। শেষ কথা কে কবে? ... ...
— চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে শহুরে সংস্কৃতি গ্রামে খুব একটা ঢোকেনি। টিভিও খুব কম ঘরে ছিল। তাই ব্যাপারটা লেখাপড়ার জন্য নয়। লেখাপড়ার চর্চা ওসব জায়গায় খুব ভালো ভাবেই ছিল। তারিণীপ্রসাদ আর তাঁর বয়স্যরা মিলে স্বাধীনতার পরে তৈরি করেছিলেন ঐ এলাকার ছেলেদের জন্য প্রথম হাইস্কুল। আর মেয়েদের ইস্কুল শুরু হয়েছিল তোর ঠাকুমা বেলারানীর তত্ত্বাবধানে, তোদেরই বাড়ির দাওয়াতে। — এই তো, এবার ইস্কুলের গল্প চলে এসেছে। বল, বল পুরোটা। কিন্তু আমি তো জানতাম ইস্কুল, হাসপাতাল সব কিছু বুড়ো ঠাকুরদা তারিণী করেছেন। এর মধ্যে ঠাকুমাও ছিল! ঠাকুমা লেখাপড়া জানতো? একটু খুলে বল দেখি। ... ...
প্রসঙ্গান্তরে, প্রতিবছর আমরা ১৫-ই আগস্ট তথা স্বাধীনতা দিবসের দিনটিতে যথেষ্ট পরিমাণ বেলপাতা-ফুল-পাঁজি-বাতাসা নিয়ে স্বাধীনতার গল্প শুনি। ২০১৭ সালে দুই দিনাজপুর এবং মালদার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়ঙ্কর বন্যা শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট। এক হাঁটু জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে গ্রামের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন, সাথে কয়েকজন বাচ্চা শিক্ষার্থী ছিল। পরের দিন সংবাদপত্রের খবর হয়েছিল এ ঘটনা। সমস্ত বঞ্চনা, অনাদর, অবহেলা, অবান্তর মৃত্যু, বুভুক্ষা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাজারো ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও মানুষের স্মৃতিতে নির্মিত হয় স্বাধীনতা দিবসের বর্ণময় চিত্রকাব্য – এমনকি জীবনে কোন বর্ণ না থাকা সত্ত্বেও। এখানে এসে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা – হবসবম, হানা আরেন্ট, নর্বার্ট এলিয়াস, স্পিভাক, লাকাঁ আদি সমস্ত বিশ্ব তত্ত্বসাম্রাজ্যের শাসক সম্রাটেরা – ভেঙ্গে পড়তে থাকে মানুষের শরীরী অভিজ্ঞতা বা emobodied experience-এর কাছে। অদ্ভুতভাবে অনেকেরই সেদিন মনটাও হয়তো বা একটু উড়ুক্কু থাকে। ... ...
বিয়ের পরে নতুন বউ, শ্বশুর বাড়িতে দুর্গাপুজো, শাশুড়ি বরণ শেখাচ্ছেন, সিঁদুর খেলা, বরের ক্যামেরায় সিঁদুর মাখা মুখের ছবি, মত্ত হয়ে ছিলাম। বাড়িসুদ্ধ সবাই মাতোয়ারা। হঠাৎ চোখে পড়লো, সবার প্রিয় বড়দি, আমার বড় ননদ ঘরে মুখ চেপে ডুকরে কাঁদছে। বিধবা বলে এই আনন্দে তার অধিকার নেই, নিজের বাড়িতেও। সেদিন বিজয়ার আর একটা নির্মম মানে বুঝলাম - সধবার স্বীকৃতি আর আনন্দের তলায় বিধবার দুঃখ। সধবার অধিকারের উলটো দিকে রয়েছে বিধবার নিঃসঙ্গতা - একরকম সামাজিক বহিষ্কার। এ চাবুক চোখে দেখা যায়না, তাই আসল চাবুকের চেয়ে অনেক কঠিন আর ধারালো, চামড়া কেটে গভীরে বসে যায়। ঐ দৃশ্য দেখার আগে বিজয়া দশমী যে কিছু মেয়ের জন্য এতটা অপমানের তা বুঝতে পারিনি। এখন দশমীর বরণে পারুল কে ডাকি। অল্প বয়সে পারুলের বর সুরাটে কাজ করতে গিয়ে এইডসে মারা যায়। তিনটি শিশু সন্তানসহ একঘরে পারুলকে শাশুড়ি আশ্রয় দেন। পারুল বলে, "হ গো বৌদি, মো কি ঘরো পূজা করিনা? শুধু সিন্দুর দিবানি, প্রদীপ, ধূ্প, মিষ্টি, জড়ো, পানো সবু দিবা"। প্রথাগত শিক্ষার নাগালের বাইরে থাকা আত্মবিশ্বাসী নারীকে বড় ভালো লাগে। ... ...
তার গ্রামে আস্তানা গাড়ার পরেই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে রুহিঙ্গা এসেছিল। অতিশয় সহৃদয় লোক, সবসময়ই হেসে ওঠার কারণ খুঁজছে; সম্ভবত মুকাম্বার চেয়ে পাঁচ - ছ বছরের বড় - যদিও তার নিজের মতে তার একশ বছর বয়স - তবে সে তার ছোট ভাইয়ের মত অত সম্মানিত নয়, আর ভাইটিকে তার নিজের লোকেরা যেমন শ্রদ্ধা-ভক্তি করে, একে তত কিছু করে না। রুহিঙ্গা অবশ্য মুকাম্বার চেয়ে দেশের সম্পর্কে বেশি জানে। আর তুখোড় স্মৃতি শক্তি! খুব বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে তার দেশ সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিল। সর্দার হিসাবে আমাদের যথাযথ সম্মানও দেখিয়েছিল - একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, দুধ আর মধু উপহার দিয়েছিল - আমরাও তার থেকে যতটা সম্ভব তথ্য বের করার চেষ্টা করতে পিছপা হইনি। রুহিঙ্গার থেকে যা জেনেছিলাম তার সংক্ষিপ্তসার অনেকটা এইরকম। ... ...
বহু প্রতীক্ষার পর যখন ২০১৭ তে এসে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তৈরী হওয়া এইচআইভি ও এইডস আইন ২০১৭ পাশ হয়েছে। এই আইন সারা দেশে ১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে কার্যকর করা শুরু হয়ে গেছে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই কি বলছে আইন... ... ...
সে যাই হোক, তোমায় একটা আবিষ্কারের গল্প বলি শোনো। এসব কথায় কথায় উঠে আসে। সুগতবাবু রবীন্দ্রনাথকে নানান জায়গায় কোট করেছেন ওঁর বইতে, তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতা বা কট্টর-জাতীয়তাবাদ-বিরোধিতা ইত্যাদির উপর জোরও দিয়েছেন। তো এক জায়গায় ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে নতুন শতাব্দীর সময়টাকে ধরতে গিয়ে উনি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা কোট করছেন, 'শতাব্দীর সূর্য আজি রক্তমেঘ মাঝে অস্ত গেল'। এইটা দিয়ে উনি তখনকার পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, যে কেন রবীন্দ্রনাথ এটা লিখলেন। এইটারই আবার রবীন্দ্রনাথের করা একটা অনুবাদ ন্যাশনালিজম বইয়ের পরিশিষ্টে আছে। তো আমি রবীন্দ্রনাথের বাংলাটা আর ইংরেজিটা মেলাতে গিয়ে দেখলাম ইট ইজ এ রেভিলেশান। কারণ প্রথম লাইনগুলো হুবহু এক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর দেখি কবিতার লাইন আর মিলছে না। আবার কয়েকটা লাইনে দেখি নাহ এই কবিতা থেকেই নেওয়া, খানিক দূর যাওয়ার পর দেখি আবার মিলছে না! ইংরেজি কবিতাটা বেশ বড়, আর বাংলাটা ততটা বড় নয় কারণ ওটা সনেট- ১৪ লাইনের। বাংলাটা লেখা হয়েছিল ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর, আর উনি ওটার ইংরেজি করছেন ১৯১৩ কি ১৪ সালে- যদ্দূর সম্ভব; কাজেই ততদিনে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ... ...
'এই ধরনের অপরাধে সেদিনই ছিল আমার হাতেখড়ি, যেজন্য বিপদটা হল।...' (শীতবন্দরে)। 'গোলমালটা ঠিক কীভাবে শুরু হল বলা খুব কঠিন।..' (পাইথনের গপ্পো)। 'কেলোটা হল বড়দিনে।...' (বড়দিন)। 'আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড় আসার কথাই ছিল।...'(ক্যাম্পফায়ার, আমাদের রাতের উৎসব)। এই জাতীয় সূচনা লেখকের একটি বিশেষ স্টাইল। শুরুর এই কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত পাঠক স্বস্তি পাবেন না। কিন্তু চিত্তাকর্ষক হল সেটা মিটে যাওয়ার পরে পাঠক টের পাবেন অতিরিক্ত কি একটা যেন বলা হল, যা প্লটের চাইতেও বেশি করে বেরিয়ে আসছে লেখকের অননুকরণীয় নির্মাণকৌশল থেকে! ... ...
বিগত তিরিশ বছরে নানান দেশের নানান ব্যাঙ্কিং প্যানেলে বহু জ্ঞানীগুণীর সঙ্গে একাসনে বসে ঘণ্টাখানেক বাক্যালাপ করে পাঁচজনের সঙ্গে আমিও ফিরিতে হাততালি কুড়িয়েছি। এইসব প্যানেল আমারই মত অন্যান্য ব্যাঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিঙের ফিরিওলা, কর্পোরেট প্রধান, সরকারি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাঝারি প্রবক্তা, খবরের কাগজের প্রতিনিধি (যাঁরা প্রশ্ন করেন কেতাবি, উত্তরের অর্থ অর্ধেক বোঝেন কিনা সন্দেহ) এমনি সব মানুষদের নিয়ে তৈরি হয়। নির্ধারিত অনুষ্ঠানের আগেই আমরা কনফারেন্স কল (জুম কল আসতে দেরি আছে) করে ঠিক করে নিই প্রশ্নাবলী কী হবে, কে কী বলবে। শ্রোতারা ভাবেন – চার-পাঁচ জন নারী পুরুষ একত্র বসে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা বা বিষয়ের ওপরে কোনো গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দ্বারা মহতী সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন। ... ...
ভালো লাগে না কাজির, সে স্বভাবতই খোলামেলা চরিত্রের মানুষ, এই-যে দুলির সঙ্গে এমন একটা ঘনিষ্ঠতার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল সে, সেটাকে যে যথাসাধ্য গোপন করার চেষ্টা করতে হচ্ছে, এ তার ভালো লাগে না। কিন্তু গোপন না করেই বা কী উপায়? দুলি তো একেবারেই ছেলেমানুষ; নিজের ভালো যদি নিজে সে বুঝত! কাজির মতো একজন ছন্নছাড়া বিষয়আশয়হীন গৃহহীন অর্থসংস্থানহীন মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অর্থ যদি সে বুঝত! বোঝে না, তাই কাজির দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কিন্তু কাজির যে চিৎকার করে সারা পৃথিবীকে জানাতে ইচ্ছে করছে! ছন্নছাড়া হতে পারি, কিন্তু আমার মতো ভাগ্যবান কে আছে! ... ...
সারাদিনের মধ্যে এই ফুলতোলার সময়টুকুতেই তো ঠাকুমাকে আমি আমার মতো করে পাই। এ-কথা ও-কথায় আমরা দু-জনকে বারবার জানাই—আর কেউ না, তুমিই আমার সব আবদারের জায়গা। তবে শহরে যাবার পর অবশ্য ঠাকুমার আবদার আমার থেকেও বেড়ে গেছে। ফুলের সাজি হাতে বাইরবাড়িতে যেতে যেতেই ঠাকুমার আবদার, ও দিদি, এবার বার্ষিক পরীক্ষায় খুব ভালো করতে হবে কিন্তু তোমার। শহরে বাবা নিয়ে গেছে তো ভালো করে পড়াতে। বাবার কথা মানতে হবে দিদি। ... ...
— তোর ঠাকুরদার জন্ম ১৯২৩ সালে। ঐ সময়ে বাংলার অবস্থাটা আগে মন দিয়ে বোঝ। অমর যখন সাত বছরের বালক, তখন ঘরের পাশে পিছাবনিতে হয় লবণ সত্যাগ্রহ। — আরে পিছাবনি দিয়ে যখন আমাদের গাড়ি ঢোকে, তখন বাজারে ইস্কুলের কাছে একটা স্তম্ভ আছে, সেইটা? বাবা বারবার দেখায়? — হাঁ সেইটাই ঐ সত্যাগ্রহের স্মারক স্তম্ভ। জেলাশাসক পেডির সামনে মিছিল থেকে আওয়াজ উঠেছিল, ‘আমরা পিছাবনি’। — তারপর? ... ...