এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  দোল

  • মোক্ষ আর বিদুরের খুদ

    শুভাশিস পাল
    ইস্পেশাল | দোল | ০৮ মার্চ ২০২৩ | ৯৫৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)

  • ১.

    - তোমায় ছাড়া কোন চুলোয় যাবো গোঁসাই? এ পোড়া দর্শনঘাটে আর থাকা হবেনা আমার।

    জামদানির ঘোমটা নেমে গেছে মাথা থেকে উত্তেজনায়। লাল হয়ে গেছে নাকের ছোট্ট ডগাটি। পাগলপারা চোখ দুটি লাল, বহু অভীপ্সার রাত আজ, অভিসারের ও।
    গভীর রাতেও দৃষ্টি চলে আজকাল আমার। রাতের পশুর মতোই এক ধারে পড়ে থাকি এই ভাঙ্গা শিব মন্দিরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে। একবেলা পেট পুরে খাই প্রসাদ। বাকি সময় চুপ করে চোখ বুজে পড়ে থাকি চট গায়ে। মাটিতে গাল ঠেকিয়ে দেখি পিঁপড়ে দের সারি আবার ফোকাস সরিয়ে পরিষ্কার রাতের আকাশে উদ্ভাসিত গ্যালাক্সি। নেশা ধরে যায়।

    ৫ বছরের ছেলে হারিয়ে গেছিল হালদার বাড়ির। সবে রমতা সাধু ডেরা পেয়েছি শিব মন্দিরের ধারে তখন। রাম জানে ক মুহূর্ত নাকি ক মাস। ও বাড়ির উঠোনে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হালদার বাড়ির ছ'ভাই ছেলে ধরা ভেবে বিড়াল যেভাবে ইঁদুর ঝাঁকায় সেই ভাবে ঝাঁকাতে আমার ল্যাঙট থেকে দুটো বেলফুল পড়লো ভুঁয়ে। কষ থেকে রক্ত পড়ছে দরদর করে। মনটা আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করছি শরীর থেকে। শুনেছি ব্যথা টের পাওয়া যায়না। কখনো কামড়ে ধরছি নিজের ঠোঁট। কোন জন্মে যেন পড়েছিলাম ব্যথার গেট থিওরি। জ্বলন্ত বাম কপালে লাগালে সুপারফিসিয়াল ব্যথার চোটে দপদপানি গভীর ব্যথা ফটক দিয়ে ঢোকার সুযোগ পায়না।

    এই সময় হুল্লোড় শোনা গেল পাওয়া গেছে খালের ধারে। সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে ক্লান্ত শিশু একটু হাওয়ার আমেজে চোখ বুজেছে। আমিও নিশ্বাস ফেললাম। ঠুং ঠুং শব্দ করে জানালার পাশ থেকে সরে গেলো দুটো চোখ। আঁচলের আওয়াজ উঠলো খস খস।

    বড়ো চেনা দুটো চোখ। এ ও সেই পূর্ব জন্মে আত্মীয়া আমার কেউ।

    ২.

    - আহহহ এইভাবে কেউ মারে! রাস্তার কুকুর কেও কেউ পেটায় না এমন করে!

    ভারিক্কি কণ্ঠ শুনতে পেলাম। এই কণ্ঠস্বরের অধিকারী আদেশ দিয়ে পঞ্চায়েত চালাতে পারেন। বুড়ো পরিবার প্রধান হালদার।

    - দে, ওকে দুটো রুটি তরকারি জল দিয়ে বিদে কর। দাওয়ায় দিস। ঘরে এনে তুলিস না!

    রায় শুনে যারপরনাই খুশি হলাম। যাক, এবার পুরোদস্তুর রাহী হলাম। রাস্তার লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী এদ্দিন পরে না হয় আমার ভাই হল। মন খুলে দুটো রুটি বেশি চেয়ে জলে ডুবিয়ে খেয়ে নিলাম।

    - ওনাকে দুটো কাজু বরফি দে রতন। আজ ই এনেছে তোর জামাইবাবু। দেরাজে আছে।

    বহুদিন পরে যেনো কেউ আমার হয়ে ফরিয়াদ করল। ভারতবর্ষের তীর্থে পাওয়া কোটি কোটি ধুলো মাখা পায়ের মত আমার পা দুটি, সেই পায়ের ওপর পেলব কারো হাতের ছায়া পড়লো। একটি বরফি সানন্দে খেলাম। আরেকটি ল্যাঙট এর কোমরে গুঁজে নিলাম। রাম দিয়েছে, ভাবতে গিয়েই হোঁচট খেলাম।

    কবেকার যেন কথা, স্মৃতি সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে কত আধ ভাঙ্গা হাসি আর কান্নার রোল পেরিয়ে গেলাম মুহূর্তে। টুকরো টুকরো সেপিয়া ছবির ঝাঁক আমার শরীরটা ঘিরে উড়তে থাকল পাখির মত। দেখতে দেখতে শরীর টা আমার পিছু হটল কয়েক শতাব্দী।

    সেই যখন আমার গলায় শিউজির নাগরাজ থাকতো আর পরনে বাঘ্ছালের বদলে সাদা apron, সেই তখনকার আমি। বহুদিনের হাঁটুর ব্যথা মেয়েটির। MRI বললো অস্থির টিউমার। হাসপাতালে এসেছিল মায়ের সাথে। দুঃখিনী মা সেলাই করে আর বাচ্চার আয়ার কাজ করে মেয়েকে পড়ান, বাবা থাকতেন সাথেই, সাইকেল টাইকেল চুরি করে দিন কাটতো। কর্কট রোগের গল্প শুনে দু পাত্র চোলাই ঢেলে সেই যে বেরোলেন, কোন ধরণী গ্রাস করেছে তাকে কেউ জানলো না। কানাঘুষো শোনা যেত দু গ্রাম পেরিয়ে নতুন করে সংসার পেতেছেন, কিন্তু এসব রটনা বলেই ভাবত মা।

    বড়ো বড়ো চোখের পাতা ওয়ালা টলটলে চোখ আর একমাথা চুল নিয়ে হাসপাতালে রইলো বেশ কিছুদিন। তখন আমি উদ্যমী, ভগবানের পর আমার জায়গা। চাইলে কি নিয়তি টিয়তি মানিনা। ভগবান নিয়ে অ্যাগনস্টিক বলি বুক ফুলিয়ে।

    যখন কেউ বলে ওপরওয়ালা ঠিক করে দেবে তো ডাক্তার?
    বলি সে কোন শালা? কালাপাহাড় আমি দাঁত কড়মড় করে বলি তার চেয়ে আমার পূজো করোনা কেনো?

    বহু জায়গায় দৌড়ে ফান্ড জোগাড় করলাম, কেমোর দিন গুলো পেরোলো, সার্জারির দিন এলে সে প্রথম বললো - আমি ঠিক হয়ে যাব তো?
    সেই প্রথম তুতলে বললাম, হ্যাঁ নিশ্চই, সার্জন আমার বন্ধু। এই ঢুকবে আর বেরবে।

    OT টেবিলেই অ্যারেস্ট হল। দৌড়ে গেলাম নিজে। স্ট্রেচার ঠেলে নিলাম আইসিইউ তে। ভেন্টিলেশনে যখন ঘুমের ওষুধ একটু কমানো হয়েছে, বড়ো বড়ো চোখ থেকে মোটা মোটা মুক্তো গড়াত, আর আমি আঙুলের ডগায় তুলে নিতাম।

    তারপর দিন দিন আমার হাসপাতালে থাকার সময় বেড়ে চললো। আর কেমো ও একদিন সাহস করে শেষ করে ফেললাম।

    শেষের দিন, মা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গেলে আমি রে রে করে তেড়ে গেলাম। বললাম মিষ্টি খাওয়ান। কি মিষ্টি জিজ্ঞেস করলেন মা।

    আমি বললাম, বরফি। আমি কাজু বরফি খেতে ভালোবাসি।

    ৩.

    ফেরার পথে হাতে গুঁজে দিতে চেয়েছিলাম একটা না বলা কথা লেখা ছেঁড়া কাগজ। নাম দিয়েছিলাম মুক্তো বলে। তার শেষ আর্জি ছিল যাতে আমি নিজের হাতে খুলে দিই আই ভি চ্যানেল টা। তুলো কোথায় যে চাপবো, রক্ত পড়ছে সে দিকে যে তাঁর হুঁশ নেই।

    আবার ডেকেছিলাম ফলো আপ করতে মাস তিন পর। কিন্তু তার আগেই আমাকে ডেকে নিলেন মহাকাল। রাস্তায় নেমে পড়লাম খুঁজতে কিছু। দু জোড়া কাঠ আর দু জোড়া রুটি রোজ। কত শত মানুষের হৃদয় ছেনে শেষে এসে দাঁড়ালাম দর্শনঘাটে। ইছামতীর ধারে হোগলা বনে ঘেরা ঘাট এর এক কোনায়।

    যেদিন দাঁড়ালাম সেদিন ঘোর গ্রীষ্ম দুপুর। মাঝ নদীতে এক ছোট ডিঙ্গি ভাসছে, ওর ও কোথাও যাবার তাড়া নেই, আমার মত। যেদিকে মুখ করে দাঁড়াব সেটাই আমার থান। ভুস করে ভেসে ওঠে কি ওটা? শুশুক না কচ্ছপ? গরম হল্কা মুখ ঝলসে দেয়। ঘাটের ধারে শিব মন্দির দেখে পছন্দ হল। ভারী ঠান্ডা শীতল সোঁদা মেঝে। খানিক গড়ালাম উঠোনের এক কোনায়। তার পর এলো এক পুরুতের পো। আগেই বলে নিলাম যাচ্ছি যাচ্ছি, বাইরে যাচ্ছি। এই খুবসুরত নমুনা দেখে ভিখিরি পাগল বা হেরোইন খোর ভাবতে দেখে এসেছি এদ্দিন।
    পুরুতের লম্বা কালো চেহারা। চোখ দিয়ে হাসলেন, বললেন যাও ওই কোন টায় বসো। ছায়া পাবে বেলায়। ঠান্ডা হবে। মহাপুরুষ নও সে তো বুঝেছি। গরম ঠান্ডা বোধ আছে যখন।

    সেই থেকে ডেরা বাঁধল এই ক্ষ্যাপা।

    দিন দুয়েক আগে দশমী গেছে। হালদার বাড়ির পুজো হয়েছে জাঁকজমক করে। নিজের অস্তিত্বকে যথা সম্ভব লুকিয়ে রয়েছি এক অন্ধকারকে আশ্রয় করে। চারদিকে জগন্মাতার আবির্ভাব এর ঔজ্জ্বল্য, আরম্ভ হলে আর শেষ নেই তার। পয়সা ও পড়েছে এই কদিন অনেক লুকিয়ে থাকা সত্ত্বেও। রাতের দিকে হিম পড়ে, ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়ি। ভাবি কাঙালি বিদায় অনুষ্ঠান গুলো তে গিয়ে কম্বল নিয়ে আসবো। কিন্তু মহামারী পরবর্তী মানুষের অর্থ বইছে আড়ম্বরে, কম্বল দেবার ক্যাম্প পাইনি একটিও।

    দশমীর প্রতিমা নিরঞ্জন সে এক রই রই ব্যাপার। শয়ে শয়ে লোক আসছে আর মৃন্ময়ীকে জলে ফেলে দ্বিগুণ উৎসাহে ফিরছে। চিন্ময়ীর মনের মত মানুষ কোথায়?

    হালদার বাড়িও এলো শ খানেক লোক নিয়ে। ভ্যান গাড়িতে বুক কাঁপানো বিসর্জন এর সুর বাজিয়ে। সব শেষে বুড়ো হালদার এর গলা শুনলাম আসছে বছর আবার এসো মা। শত্রুর শেষ রেখ না। ছয় ছেলে ঘাট কাঁপিয়ে বললো বলো দুগ্গা মায় কি.... ক্ষমতা আর অর্থের দাপটে গাছ পাতাও বলে উঠলো জয়।

    দেহে প্রাণ নেই এই ভাবে পড়েছিলাম বেশ কয়েক ঘণ্টা। খালি বাংলার বোতল সাজিয়ে রেখেছিলাম মাথার পাশে। দশমীর সাজ আমার। সব যখন খালি ভোর রাতে উঠে দেখি মাথার কাছে ইট চাপিয়ে কে লিখে রেখে গেছে মেয়েলি ছাঁদে- ' চিনেছি - মুক্তো'।

    ৪.

    পক্ষকাল ঘুরতে পারেনা, সে মাসে পুজোর পর পুজো আসে। উপুড় হয়ে ভাসা প্রতিমায় ডাঁই হয়ে থাকে আমার ঘাট। ওই দেখ আবার আমার বলে ফেলেছি। মহাকালের ডাকে বেড়িয়েছি, আমার বলে কিছু রাখিনি। অঙ্গবস্ত্র টিও না।

    আবার শ্যামা মায়ের বিসর্জন এলো। মাতাল সেজে ঘাপটি মেরে রয়েছি। দান ধ্যান দোয়া দয়া চাইনা। যা খুঁজতে বেরিয়ে আজ ভৈরবের পায়ে পড়েছি, সে মায়া খুঁজে পাইনি। চোখ ফোটানোর আর্জি ছাড়া আলতা পায়ে আর কিছু আরমান নিয়ে এবাদত করি না।

    আজ ও সেই ছেঁড়া চিরকুট। কালের খেলায় দর্শক আমি। আজ এ কি ফ্যাসাদে ফেললে আমায় মহাকাল!
    কাগজে তড়িঘড়ি করে লেখা ' ১০ টায় রাতে আসবো মন্দিরে '।

    সই না থাকলেও জানি, এ হালদার বাড়ির মালকিন। ওয়ান ওয়ে নম্বর, ফোন আসবে কিন্তু যাবার উপায় নেই। কিছুতে চেঁচিয়ে বলার জো নেই, আমি নতুন জন্মেছি। এখন আর আমি সেই সাদা জোব্বা পরা লোকটি নই।

    সময় চক্র ঘুরবেই, আমার আজ নতুন ভড়ং। কপনি পরে রসকলি কেটেছি কপালে, বাহু তে। আজ আমার খেলা বদলেছে। আমি তো বাঁধন ছাড়া, কোনোদিন আলতা পরা চরণ আমার আর কোনোদিন ডমরু।

    মাটিতে কান পেতে শুনছিলাম নূপুরের শব্দ। অসমান দুটো পায়ের পদধ্বনি। তবে চোখের গোচর আসতে সময় লাগল বেশ খানিক। অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিয়ে বসতে লাগলো আরো কিছু দ্বন্দ্ব। জামদানির ঘোমটা চোখের পর শেষ হয়েছে। সেই বড় বড় চোখের পাতা, সেই ঘন এক জোড়া ভ্রূ, লজ্জায় কোঁচকানো নাক.. সব এক রয়েছে, শুধু লাল হয়ে জ্বলজ্বল করছে সীমন্ত রঞ্জিনী।

    খানিক বাধা পেরিয়ে কানে এলো -
    আমাকে আবার ফাঁকি দিতে পারবে? একবার হয়েছে। আর না। আমাকে নিয়ে চল তোমার সাথে। সব গয়না যা যা ছিল নিয়ে এসেছি এই কৌটোয়। চলে যাই কোথাও...
    গোঁসাই! কি ভাবছ! আমি সব ছেড়ে এসেছি। এই ঘাট আর দেখবো কি ভাবে তুমি মুখ ফেরালে? তোমার স্মৃতির সঙ্গে সমার্থক হয়ে গেল দর্শন ঘাট।

    দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঘর ছাড়ার গল্প শুরু করলাম আমি...

    ৫.

    সে এক ব্যস্ত দিন। হাসপাতাল বিল্ডিংটা তার পেটের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ পুরে গজগজ করছে, যেন অজগর খেয়ে নিয়েছে বড় শিকার, আর তার দুঃখ গুলো বেরোচ্ছে পেট ফুঁড়ে। শান্তি নেই এক চুল অজগরের।

    রাম মনোহর নস্কর আবার এসেছে এমারজেন্সি তে, সঙ্গে সেই সাত হাত ঘোমটা দেওয়া দেহাতি বউ। হাত ভর্তি কাচের চুড়ি, শরীরের ভাঁজ দেখে মনে হয় বয়স এক কুড়ি পেরোয় নি, এদিকে রাম নস্কর পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। মুখে বলে ওই হবে কত্তা, ধরেন চুল্লিশ।

    ধমকাই, তোমার চুলিশ হলে আমার দশ।

    হাসে বেমালুম; বলে দ্যান তবে, ১০ বছুর বাড়ায়ে মালিক।

    সমাজ সংস্কারক আরেক রাম জেগে ওঠেন বুকের ভেতরে, বলি ও মেয়ে তোমার বয়স কতো?

    বউ জবাব দেয়না, রাম নস্কর ই বলে ওঠে, অরে বিয়ে করছি এই ধরেন ১৫ তে।

    ক্ষেপে উঠি, পুলিশে দেবো দুটোকে। মনে ভাবি, জোর করে বিয়ে শাদী। না আছে ভালোবাসা না আছে মনের স্থান। আছে শুধু নাবালিকার শরীরটার ওপর লোভ।

    এবার এসেছে ভয়ানক শ্বাসকষ্ট নিয়ে, তেড়ে জ্বর। Peripheral T cell lymphoma, চতুর্থ স্টেজ। কোনো কেমো তেই কোনো সাড়া নেই। আটকানো যায়নি ক্যান্সার কোষগুলোর অশ্বমেধ এর ঘোড়া। ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে।

    রাম নস্কর এর নিজের জমিতে নিজে দু চারটে সবজি বুনে চলে যেত, বোন দের বিয়ে দিয়ে যখন নিজের দিকে তাকানোর সুযোগ পেলো তখন প্রৌঢ়ত্ব কড়া নাড়ছে দরজায়। গরীব চাষার বিয়ে হল আরেক গরীব বাড়ির মেয়ের সাথে, দেওয়া থোওয়া কিছু হলনা। বিয়ের বছর খানিক পর থেকেই জ্বর আর কাশি পিছন ছাড়েনা। খানিক TB এর ওষুধ ও খাওয়া হল। এদিকে বাম উরুর চামড়া ডুমো ডুমো হয়ে ফুলে উঠতে শুরু করলো। Biopsy হল শহরের বড়ো হাসপাতালে। রিপোর্ট এলো ক্যান্সার।

    এইবারে যখন এসেছে, অবস্থা সঙ্গীন, কথা বলার সামর্থ নেই, বললেও শব্দে, বাক্যে নয়। সারা শরীরের ত্বক এ ইঞ্চি খানেক ফাঁকা জায়গা মিলবেনা। কুচ্ছিত ব্রণ এর ক্যান্সার ছড়িয়ে আছে সর্বাঙ্গে। প্রাইমারি যেটা উরুতে ছিল, বেড়ে গাছের ছালের আকৃতি নিয়েছে। গামছা ঢাকা ছিল, খুলতেই পাশের বেডের অত্যুৎসাহী মোড়ল লাফ দিয়ে মুখে গামছা চাপা দিয়ে বললো রাধে রাধে!!
    বাম উরু অপর উরুর দ্বিগুণ আকার, বাদামি কালো গাছের গুঁড়ি যেনো একটা। সেই ভীম ফুটিফাটা গাছের গুঁড়ির মধ্যে অজস্র ফুটো, তাতে শত ধারায় গলগলিয়ে হলাহল বেরোচ্ছে - পূতিগন্ধময় পুঁজ আর রক্ত। ডান গাল এর বড়ো দু তিনটে ব্রণ ফেটে বেরোচ্ছে রক্ত। মাংস পচা গন্ধে emergency ভরে উঠেছে। মিটার খানেক ফাঁকা হয়ে গেছে চারপাশ। যারা একান্তই অসুস্থ, তারাও গামছা চাপা দিয়েছে মুখে অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে। তাদের শরীরের অক্সিজেন নেমে যাচ্ছে তাতে। ঝটপট আই সি ইউ আইসলেশনে পাঠালাম। কড়া কড়া ওষুধ নেমে এলো শিরা বেয়ে। ঘুমিয়ে পড়ল নস্কর ব্যথার আর নিশ্বাসের আরাম পেয়ে। কিন্তু আমি জানি এই স্বস্তি সাময়িক। ওষুধ খতম হতে না হতেই আবার যে কে সেই হবে।

    পুরো ঘটনায় দেহাতি বউ দম দেওয়া পুতুলের মত হেঁটে এসেছে সঙ্গে। বাইরে বেরোতে উঠে এসে নির্বাক শ্রোতা হয়ে সামনে দাঁড়ালো রায়ের প্রতীক্ষায়। নেহাত ই গ্রাম্য, অশিক্ষিত মেয়ে। অসহ্য বোধ হল আমার এই অসহায়তা।

    ভারী গলায় শোনালাম রায়; বেশিক্ষণ নেই। সাহস করে দেখে নাও। আজকের রাত টুকু হয়তো..

    কলরোল নেই, বিলাপ নেই। ছোট একটি উত্তর এলো, যা হবার তাই হবে ডাক্তারবাবু। শেষ সময় টুকু যেন বেদনা না হয়, সেটা দেখবেন??

    আমার বুকে কেউ যেন ঘুষি মারলো একটি। এই পরিণত চেতনা এই আধারে ছিল লুকিয়ে? সেই মুহূর্তেই শ্যামা আমার চোখ খুলে দিল। এই কাপড়ের পুঁটুলি দেহাতি বউ সেবা করে গেছে এই গলিত মাংস পিন্ড অর্ধ শব। বিয়ের পর স্বামী সোহাগ কষ্ট কল্পনা রয়ে গেছিল রুগ্ন মানুষের। থাকার বলতে স্বামীর এক ছটাক জমি। তবে কি এই ভালোবাসা অহৈতুকী!

    ১২ এপ্রিল রাত টুকু কাটলো না। সেই গ্রাম্য অশিক্ষিত বউএর দেহভঙ্গি পরিবর্তন হলনা এক মুহূর্তের জন্য। শেষ সময়ে পাশে ছিলাম আমি আর সেই বউ। দু ফোঁটা জল পড়লো নস্করের চোখ থেকে গড়িয়ে। পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো বউ। মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করে ফিরে গেলাম কোয়ার্টারের চার দেওয়ালের মধ্যে। অপরিচিত জায়গায়, অনাত্মীয় ঘেরা ঘরে বউ রইলো একা একমাত্র আত্মীয় কে ছুঁয়ে।

    সকালে এসে আর দেখতে পেলাম না দুজনের কাউকে। হিন্দু সৎকার সমিতি দেহ নিয়ে গেছে সাত সকালে। সঙ্গে দেহ ছুঁয়ে গেছে সেই দেহাতি বউ। দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, সময় কোথায় দুঃখ বিলাসের! কাজে লেগে পড়লাম আবার। আর দেখবো না সেই বউকে কোনদিন, এই ভবের বাজারে। কাজে লেগে পড়লাম।

    ১২ মে দুপুরে, যে হাজির হল বগলে পুঁটুলি চেপে তাকে আবার দেখবো ভাবিনি। সেই গ্রাম্য বউ, এবার হালকা রঙের সুতির কাপড় পরনে। অবাক হলাম, ডাকলাম কাছে।

    দৃঢ় প্রত্যয়ী কণ্ঠ জানালো - এই দিনটায় তার একমাত্র আশ্রয় ছেড়ে গেছে, সে এই দিনটা আসতে চায় মাসে মাসে। আর কিছু দিতে চায় রোগীদের নিজের সামান্য সম্বল থেকে। পুঁটুলি থেকে বেরোলো মুড়ির মোয়া ছোটো ছোটো গোটা পঞ্চাশেক। রাশভারী neutropenic ডায়েট এর কথা আমার বাষ্প ছাপিয়ে ওঠা গলায় আটকে রইলো। মূর্তিমতী শোক একটি মোয়া দিল আমার ও হাতে। আর একটি একটি পেলো যে সামনে ছিল। খানিক ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো আইসিইউ আইসলেশন বিছানার রেলিং ধরে। ছোটো একটা শ্বাস পড়লো কি পড়লো না।

    - আসি ডাক্তারবাবু। আসবো আবার।

    কথা যোগালো না আমার। তাকিয়ে রইলাম নিজেকে টেনে নিয়ে চলা নারী মূর্তির দিকে।

    ৬.

    দিন দিন কাজ বেড়ে চলে, সময়ের চাকায় পিষে যায় পাখির বুকের মত নরম অনুভূতি সব। মহাকাল কেড়ে নেয় জীবন রস। পথের কাঁকর পায়ের তলায় পড়ে জানান দেয়, লড়াই কর প্রাণ। ছোট প্রাণ থেকে মহাপ্রাণ, জড়ো করো শীতের খাবার, সঞ্চয় করে রেখো যা তোমার প্রয়োজন তার শত গুণ। বাজার রাজা জখম করে মনুষ্যত্ব রোজ রোজ।

    আমিও ভুলে গেছিলাম কিছু দিন। এরপর ১২ জুন, তারপর ১২ ই জুলাই আবার।

    সেই হালকা হলদে সুতির শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। হাতে পুঁটুলি, কোনো বারে বেরোয় তিলের তক্তি, কোন বারে ময়দার ছোটছোট ঠেকুয়া। সেই বেডের পাশে কয়েক মুহূর্ত নীরবে দাঁড়ানো। আসি ডাক্তারবাবু, আসবো আবার।

    আগস্ট মাস আসার আগে থেকেই অর্থ সম্পত্তি বিষ বৎ মনে হতে শুরু করলো। সম্পর্ক গুলো মেকি, যাত্রার সং এর মত রং চঙে, অন্তরে ফোঁপরা। সংসার যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে নাকের ওপর দূষিত বাষ্প ছাড়ছিল প্রবল উৎসাহে। ১১ আগস্ট রাতে আর বিছানায় থাকতে পারলাম না। কুৎসিত রূপ নিয়ে ভালোবাসার উদযাপন আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল। যা স্বাভাবিক, যা হবার, সেটা উৎসবের কারণ হয়ে উঠেছিল তখন। সম্পর্ক টিকে থাকার মহোৎসব। নারকীয় সমাজের কৃমিকীট দের মুখোশ টেনে খুলে দিল আমার মহাকালের বাহনরা।

    কোয়ার্টার ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম এক বস্ত্রে। মনে রইলো না কাউকে আসতে বলেছি তিন মাস পরে, যে বসে আছে দিনের আশায়। গভীর রাতে শুকতারা পথ দেখালো আমাকে। তারপর দিন আমার হাত ধরে বসিয়ে দিল কোথাও আর রাত আবার কোথাও আমাকে বন্ধু বানিয়ে নিল তার। রাহী হয়ে হাঁটলাম অনেক দূর, রইলো না ঝোপড়া।

    বিদুরের যজ্ঞের সোনালী বেজির মত খুঁজে চললাম ভালোবাসা। কোথাও ধরলাম শ্যাম কে, কোথাও শ্যামা আমার হাত ধরলো। রাহির জীবনে লাথি ঝাঁটা টাই বাস্তব, কেউ চলার পথে সাধুজি বলে দুটো রুটি দিলে মায়া বলে খেয়ে নিলাম গোগ্রাসে। কিন্তু যেখানে ভালোবাসা বস্তুটি লাল কাগজে মুড়ে নিলামিঘরে বিক্রি হয়, সেই দুনিয়ায় মিছেই মাথা খুঁড়ে মরলাম।

    যেখানে ভালোবাসার খোঁজ পাই ছুটে যাই, কোথাও দু মুঠো ভাত খেয়ে চারটে ছবি তোলার জন্য, বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকে, আমাদের ভালোবাসার বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কাঙালি দের পেট ভরে খাওয়ালাম। তাতে বিশটা মানুষ হাততালি দেয়, দশজন সাধু সাধু বলে ওঠে। আবার কোথাও উঠোন ছাদ ঝাঁট দিয়ে মুছে দিই, বিয়েবাড়িতে আমার অনেক কাজ থাকে। কখনো আমি ধাঙ্গর, কখনো আমি কুকুর তারানে ওয়ালা, কখনো জল তুলতে হয় বালতি বালতি। শেষ পাতে ঠান্ডা খাবার গিলি বিয়েবাড়ির বাইরে, আস্তাকুঁড়ের পাশে। কানাঘুষোয় শুনি প্রেমজ বিয়ে, দান ধ্যান যথেষ্ট হয়নি, তাই পাত্রপক্ষ দুটি মিষ্টি কম খেয়েছে।

    যেখানে খোঁজ পাই, গড়াগড়ি দিয়ে দেখি, সেই সোনালী বেজির মত, বাকি অর্ধেক সোনালী হয় কিনা। আমার সেই কালি অঙ্গ কালি ই রয়ে গেলো আর সেই ভালোবাসা ও পেলাম না এ চর্মচক্ষে।

    চোখ বুজে বলে গেলাম জ্বোরো রুগীর মতন। জীবনে প্রথম কাউকে বললাম। তবে এ যে আর কেউ নয়। এর সাথে গত জন্মে যখন মানুষ ছিলাম কি যেনো কি ছিল।

    হুঁশ এলো খানিকটা শোরগোল শুনে। দূরে, অনেক দূরে খোঁজ চলছে কূলবধুর। পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা গরীব ঘরের সেই মেয়ে। যার পা দুটি অসমান, আগের রোগ গোপন করে তার মা বিয়ে দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল তার পর কয়েক মাস। জামাই লম্পট, মাতাল। গ্রাম মোড়লের সেজো ছেলে। দাপুটে গ্রামের মাথা তারা সব।

    - নিয়ে চলো গোঁসাই, তোমার অঙ্গ ভূষণ করে। আমার যে আর যাবার জায়গা রইলনা।

    - আমি ফক্কড় সম্রাট, সম্পত্তি বলতে এই দুটো ন্যাতা কানি। তোমার মত সাত রাজার ধন নিয়ে রাখবো কোন খোপরে। ফক্কড়ের ঝোপ্পড় থাকতে নেই জানোনা? ফিরে যাও মেয়ে। আবার হয়তো মিলব কোনো জন্মে।

    পাথর প্রতিমা বসে রইলো সেই আঁধারে। আমি ছেঁড়া চট গুছিয়ে পাড়ি দেবো আবার কোনো দিকে, সেই মতলবে উঠলাম।

    - যাও মেয়ে। ফিরে যাও। খুঁজছে তোমাকে সব।

    আওয়াজ এলো ধীরে, কিন্তু যেন আমার ঠিক কানের পাশে;
    - তোমার রাস্তা এখানেই শেষ হোক। তোমার চলা থামুক এই ঘাটে।

    মুচকি হাসলাম। রাহী আমি, পৃথিবী সেরা ফক্কড়। আমাকে কে আটকায়?

    দশ পা এগিয়েছি। ইছামতী আমাকে আওয়াজ দিয়ে ডাকলো, ঝপাস। পাড়ে গিয়ে শুধু কয়েকটা ঘূর্ণি দেখতে পেলাম আর দেখতে পেলাম সেই জামদানির আঁচল। ঝাঁপ দিলাম জলে। জোর করে জোয়ার এর জল আমাকে ঠেলে নিয়ে যেতে চাইলো দূরে। স্রোতের ভাষা শুনতে পেলাম, দূরে যাক, চলে যাক। শত শত সাপের ফনার মত ঢেউ ঘিরে ধরলো আমাকে। এই মন্দস্রোতা নদীর বুকে এত ক্ষোভ কথা বলছে কেন? জ্ঞান হলে দেখলাম পড়ে আছি এক ঝোপে, নদীর ধারে। মানুষের আলোচনা কানে এলো, হালদার বাড়ির সেজো বউ গয়না নিয়ে পালাতে গেছিল নাগরের সাথে। নাগর টি পালিয়েছে, বউটি বেচারা গয়নার ভারেই ডুবেছে জলে। রাষ্ট্র হয়েছে সর্বত্র, কিন্তু প্রভাবশালী পরিবার হালদার রা। সোনা মুখ করে সকলে সতী লক্ষ্মী বউ এর ছবি তে মালা আর সন্দেশ দিতে চলেছে।

    ঝোপে কাদায় শুয়েই চোখ বুজলাম। আমার মহাকাল আবার আমার কাঁখালে লাথি মারলো এক। আমার আর দর্শন ঘাট ছেড়ে যাওয়া হলনা।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০৮ মার্চ ২০২৩ | ৯৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:14a:500:e780:8caa:8aae:e67a:6a59 | ০৮ মার্চ ২০২৩ ২২:০৩517147
  • খুবই ভালো লাগলো এই লেখাটা। খুব সাংঘাতিক, প্রচুর ডার্কনেস, অনেক রিয়ালাইজেশন। সুদক্ষ বুনট।
    এবারের দোলসংখ্যায় যতগুলো লেখা এখনো অব্দি পড়লাম সবগুলোই মনের মধ্যে কষ্ট, রাগ এগুলো ট্রিগার করছে। একটা থীম? প্যাটার্ন?
  • | ০৯ মার্চ ২০২৩ ২০:১৬517185
  • অপূর্ব গতিময় গল্প। খুবই ভাল লাগল। 
  • প্রতিভা | 115.96.196.16 | ১২ মার্চ ২০২৩ ১৬:৩৪517317
  • গল্পের ট্রিটমেন্ট অপূর্ব লেগেছে। সত্যি কথা বলতে কী, যে সব লেখা শুরুতেই বাঘের মতো পাঠকের ঘাড় মটকে বসে থাকে, এ সেই জাতীয় লেখা৷ 
    কিন্তু বিষয়বস্তু !  শরৎচন্দ্রের কালের সেই ডাক্তার রোগীর প্রেম, সাধু হয়ে ফিরে আসা, হঠাৎ পুনর্মিলন, তারপর চির বিরহ নিয়ে এখনও এতো চমৎকার গল্প লেখা যায় তা আমি এটি না পড়লে বিশ্বাস করতাম না। 
    এখন কেউ যদি গলার শিরা ফুলিয়ে বলে, কেন এসব এখন হয় না নাকি, তাহলে আমি নাচার। হয় হয়, আরও কিছু হয়, সাহিত্যের মা কিভাবে কাঁদবে তাইই বা ঠিক হল কই। 
    তাই বেশি কথা বললে ঝাড় খাবার সম্ভাবনায় ইতি টানছি। আমার মতামত ঝগড়া করে প্রতিষ্ঠিত করব না। কিন্তু এমন ভালো লেখার এমন অপমৃত্যুতে আমার কষ্ট হল। এইটুকুই জানাবার ছিল।
  • dd | 49.207.235.50 | ১২ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪৪517320
  • সাংঘাতিক ।।। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন