... কি আশ্চর্য্য, বিমান বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যর দায় স্বীকারের কথা উঠলেই সব তছনছ হয়ে যায়, কিন্তু বাম সমর্থকদের 'প্রতিনিধি' সেজে পার্টির সাধারণ সম্পাদককে কাঠগড়ায় দার করানোটা আবার কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ! নেপথ্য ভাষ্যকারকে সবিনয় অনুরোধ যে এই সুবিদাবাদী, সংকীর্ণ দলবাজির রাজনীতি এবং দ্বিচারিতা বন্ধ করুন। এতে বামপন্থার কোনো লাভই হবে না। সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক পার্টির আজ এই বিপর্যয়ের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। তাঁর তথাকথিত 'থার্ড-ফ্রন্ট'-এর নামে মুলায়াম সিংহ-জয়ললিতার লেজুরবৃত্তিও মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁকেও যেমন এই বিপর্যয়ের দায় নিতে হবে, তেমনি এই রাজ্যের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব, পার্টির রাজ্য সম্পাদক ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরও এই বিপর্যয়ের দায় মাথা পেতে স্বীকার করা উচিত। কারণ পশ্চিমবঙ্গে গত ছয় সাত বছর ধরে বামপন্থী রাজনীতির যে কদর্য অবক্ষয় আমরা দেখেছি - গায়ের জোরে জমি অধিগ্রহণ, নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানো, রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি, রিজবানুরের অপমৃত্যু, মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য এবং সর্বপরি আক্রান্ত বামপন্থী কর্মীদের পাশে না দাঁড়াতে পারা - তার জন্য রাজ্যের বাইরের কাউকে দায়ী করা অনুচিত।... ... ...
একই পদ্ধতিতে, নকশাল-দমনের উদ্যেশ্যে সন ২০০৬তে সালওয়া জুডুম কম্যাণ্ডো-বাহিনী গঠিত হয় বস্তার সম্ভাগে।এই বাহিনীর পুরোভাগে ছিলেন ভা-ক-পা বিতাড়িত কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মা। বাহিনীর সদস্য হল ছোটো ছোটো আদিবাসী কিশোরেরা। তাদের হাতে বন্দুক ধরিয়ে দেওয়া হতে লাগল এবং দুই সপ্তাহের ট্রেণিং দেওয়া হতে লাগল, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হল বস্তারের জংলা গাঁ-গঞ্জে যখন তখন হানা দেওয়ার, যত খুশি লুট, খুন, ধর্ষণ ও গৃহদাহ সংঘটিত করার। গ্রাম-কে-গ্রাম জ্বলে ছাই হয়ে গেলো। তটস্ত আদিবাসীরা পাহাড়ি জঙ্গল ছেড়ে নেমে এলো পাকা-রাস্তা তথা হাইওয়ের দুইধারে খাঁচার মত করে তৈরী ‘ক্যাম্প’-গুলিতে। পাশাপাশি ‘কোয়া’-উপজাতির আদিবাসী কিশোর যুবকদের দিয়ে তৈরী হল কোয়া-কম্যাণ্ডো। একই ধরণের কার্য্যকলাপের উদ্দ্যেশ্যে। এই সবের জন্য টাকাপয়সা সহ সমস্ত সুবন্দোবস্ত করে দিলো সরকার। এই সব ‘স্থানীয় কম্যাণ্ডো’-বাহিনীর পাশাপাশি জোরকদমে ‘মিলিটারাইসেশান’। স্থানীয় থানাগুলির হাতে চলে এল প্রচুর অর্থ, ক্ষমতা ও ক্ষমতার উৎস তথা ভয়াল অস্ত্রশস্ত্র। বস্তারজুড়ে প্রায় সমস্ত থানা পরিণত হল কাঁটাতার পাঁচিলে ঘেরা ক্যাম্পে। এবং একের পর এক আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হতে থাকল অঞ্চলে, অজস্র গ্রামকে ঘিরে ফেললো সি-আর-পি-এফ, বি-এস-এফ, কোব্রা ব্যাটেলিয়ন নাগা ব্যাটেলিয়নের ক্যাম্প। শক্ত নজরদারীতে ঘেরবন্দী হয়ে গেলো বস্তারের মানুষেরা। তার পাশাপাশি অন্ধ্রের কুখ্যাত নকশাল-দমক গোষ্ঠী ‘গ্রেহাঊণ্ড’ এসে করে যেতে লাগল একের পর এক এনকাউণ্টার। ২০০৮-এ যখন অপারেশান গ্রীণ হাণ্ট আরম্ভ হয় তখন থেকে আজ অর্থাৎ ২৬শে মার্চ ২০১৬ অবধি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হয়েছে বস্তারে। ... ...
বিদেশে এসে যুদ্ধ করে টিকে গেলে NRI - আর যে অতি কষ্ট করছে টিকে যাওয়ার জন্য - তার দিকে নাক সিঁটকে সমালোচনা- বিদেশে থাকার এত লোভ!” - নিজে সহজে রাস্তা করতে পেরেছে বলে অন্যদের সংগ্রাম/ ইচ্ছে / স্বপ্ন ছোট করার অধিকার অর্জন করে নেয়। স্টিমুলাস চেক - কী সব কথা! বাড়ি বসে বসে গরিব লোককে খোলামকুচির মত টাকা দিয়ে ওদের কাজ করার মানসিকতা সরকার নষ্ট করে দিয়েছে! আমার চেনা বেশ কিছু অতি স্বচ্ছল পরিবার সেই নিয়মের ফাঁকে দিয়ে স্টিমুলাস চেকগুলো পেল! এক গুজরাটি পরিবার যার বেশ কিছু বাড়ি আর ব্যবসা - দশ হাজারের ডলারের বেশি স্টিমুলাস চেক পেয়ে নানা জায়গা ঘুরে এল। আর আমার সাথে কথা হলেই শুধু বলবে যে কাজ করার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার আনএম্প্লয়মেন্ট বেনিফিট আর স্টিমুলাস দিয়ে শ্রমিকদের অলস বানিয়ে দিয়েছে। অনেক বাঙালি তো লজ্জায় বলতেও পারে না যে স্টিমুলাস পেয়েছে। যে মুখে সমাজ সংস্কার আর দাতব্যের এত গল্প - সোসাইটিতে নাক উঁচু স্টেটাস - ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় দয়ার দান যারা নেয় তারা খুবই নিম্নমানের মানুষ। কিন্তু নিজের ভাগ কেউ ছাড়েনা। হ্যাঁ - নিজের ভাগ ছাড়ার তো কথা ও না। কিন্তু অন্য কেউ ভাগ নিচ্ছে সেটা যদি হজম না হয় - তবে তো সমস্যা। ... ...
হিন্দুরা বলেন লঙ্কা দ্বীপে রাবণের তোরণদ্বার খোলার সময় ঐ শব্দ হয়। মুসলমানেরা বলেন ইমাম মেহেদীর আগমন জনিত কারণেই ঐ শব্দ। হিস্ট্রী অব বাকেরগঞ্জের লেখক বেভারীজ সাহেব সিদ্ধান্তে এসেছেন যে জৈষ্ঠ্য আষাঢ় মাসে ঝড়ের সময় এই শব্দ চারবার শোনা যায়। উনি স্থির করেছেন এর পেছনে বায়ুমন্ডলের কোনো বৈদ্যুতিক ঘটনার যোগ রয়েছে। তবে প্রবল তরঙ্গাভিঘাতের জন্যও এই শব্দ হতে পারে। এ বিষয়ে আরো বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন। ক্রমশঃ আরো রাত ঘনায়। মোকাম আবাদী জুড়ে চলাফেরা বাড়ে। রুপোলী আঁশ মাখা জাল নিয়ে জেগে ওঠে চরমমতাজ। হোগলা কুটীর ছাওয়া ঘর দোর উঠোন আদুল গায়ে মাখে রাত। হাজার হাজার অশরীরী ছুটে চলে জলাভূমি, নদীঘাট, বর্ষা বাদল পেরিয়ে ভাটার সাগর। তারপর এ দ্বীপ ও দ্বীপ সে দ্বীপ… ... ...
ছেনু দেখল, সত্যিই তো, পকাইকে তো এবার চড়তে দিতেই হয়, বেচারি এতক্ষণ ধরে অপেক্ষায় রয়েছে। তার ওপর ওরই ঘোড়া যখন। আজ সকালে পকাইদের বাড়ি এই ঘোড়াখানা আসতেই পকাই তাড়াতাড়ি ছেনুকে ডেকে এনেছে। সেই ঘোড়াখানা দেখেই তো ছেনু আনন্দে আত্মহারা। উফ্, ঘোড়া বটে একখানা। কি সুন্দর লালের ওপর সাদা,কালো, হলুদ দিয়ে রং করা, পিঠের উপর চওড়া করে বসার আসন পাতা, ঘাড়ের কাছে কেশরের পাশ দিয়ে আবার ধরার জন্য দুটো হাতল রয়েছে, খাড়া খাড়া কান, সাথে তেমনি টানা টানা চোখ - দেখেই চোখ জুড়িয়ে চায়। এ যা ঘোড়া, পক্ষীরাজ না হয়ে যায় না! সত্যিই, মহারাজ যেন এমন একটা ঘোড়ারই সন্ধানে ছিলেন এতদিন ধরে। তাই সে ঘোড়া দেখে আর লোভ সামলাতে পারেননি, পকাইয়ের জন্য আনা ঘোড়ায় নিজেই টপ করে বসে পড়েছেন। আর ঘোড়ায় চেপে টগবগ টগবগ করে সেই যে ছুটিয়েছেন, ডানা মেলে এদিক ওদিক ঘোরার মধ্যে আর সময়ের হুঁশ ছিল না। পকাই ধৈর্য হারিয়ে আবার ঘরে চলে গিয়েছিল, ফিরে এসেও যখন দেখল মহারাজের ঘোড়ায় চড়া শেষ হয়নি, তখন চিৎকার জুড়তেই ছেনুর টনক নড়ল। ... ...
যদিও সব কাঠই চালান যায় এক শহর থেকে অন্য শহরে, যদিও সব করাতই সরবরাহ করে শহর, যদিও শহুরে মুনাফা কোনোদিনই সংগত করে না এখানকার সস্তা শ্রমের, তা বলে কোনো শহরকে তো কাঠচোর শহর বলা যায় না! কেন-না শহর মানেই সভ্যতা। সভ্যতা মানেই বিপ্লব। বিপ্লব মানেই অগ্রগতি। অগ্রগতি মানেই মানুষের ক্রমমুক্তি। তাকে তো আর যা-ই হোক কাঠচোর উপাধি দেয়া যায় না। দিলে নিজের মুখেই থুতু পড়ে, উত্তর পুরুষের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে, পূর্ব পুরুষের কথাসাগর নিমিষে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শিক্ষা, সংস্কার, মূল্যবোধ, সংস্কার, স্বাস্থ্যসূচি, গণতান্ত্রিক বাতাবরণ, মেহনতি ঐক্য, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, সূর্য অভিযান, ইত্যাদি প্রভৃতি যাবতীয় শব্দ হয়ে পড়ে মূল্যহীন। ... ...
বিগত আড়াই দশক ধরে এই রাজ্যে সরকারের ভ্রান্ত নীতি আর ব্যবসায়িক পুঁজির যুগলবন্দীতে সরকারি স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমশ পঙ্গু করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রমরমা হয়েছে। বলা বাহুল্য, তাতে পৌরহিত্য করেছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ, সমাজের বিপুল অংশের মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সহমত নির্মাণ করেছে। (তাতে পুরোহিতের ছাঁদার যোগান নিশ্চিত হয়েছে, সেটা বিজ্ঞাপনের পাতায় চোখ রাখলেই টের পাওয়া যায়।) মধ্যবিত্ত তো বটেই, নিম্ন আয়ের মানুষেরাও আজ এক প্রকার বাধ্য হয়েছেন এই বেসরকারি ব্যবস্থার কাছে যেতে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে দানা বেঁধে উঠছে অনিশ্চয়তা, স্নায়ুচাপ, ক্ষোভ। দমদমে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনা এই জটিল পরিস্থিতির ইঙ্গিতবাহী। যে চা-দোকানি মেয়েকে সরকারি অবৈতনিক স্কুলে না পাঠিয়ে আয়ের সিংহভাগ খরচ করে পাড়ার নামজাদা মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠাচ্ছেন, আর যে মাংসবিক্রেতা টাকার অভাবে ভাইঝিকে পাঠাতে পারলেন না, যে মধ্যবিত্ত গৃহবধূ স্কুলের দিদিমণির কাছে মেয়েকে টিউশন পড়তে পাঠিয়েছেন “স্পেশাল কোচিং” – এর আশায়, আর যে বস্ত্র ব্যবসায়ী ফি বছর স্কুলে মোটা টাকা ডোনেশান দেন মেয়েকে “স্পেশাল অ্যাটেনশন” -এর লোভে, যে অভিভাবক সেটা দিতে পারেন না, আর যে ছোকরা বিপিও কর্মচারী চোখ শানিয়েছে স্কুল ছুটির পর স্কার্টের নীচে কিশোরী হাঁটু দেখে ... এরা সকলেই ভেতরে এক-একটি কালো চোরা স্রোত পুষে অপেক্ষা করে থাকে, আর একদিন একটি মর্মান্তিক ঘটনা, সেই ঘটনাকে ঘিরে রটনা, এই সব স্রোতগুলোকে মিলিয়ে দেয়। আর সবাই ইটপাটকেল নিয়ে জড়ো হয় দিনভর লাইভ সম্প্রচারিত উন্মত্ত জনগণেশের পুজোয়। ... ...
কলকাতার বিকাশ এবং বাংলার বিকাশ এক ধারায় হয়নি। আজকের দুনিয়ার মতো সেদিনের দুনিয়া “গ্লোবালাইজড” হয়ে যায়নি। এজন্য উপনিবেশের অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কলকাতা যেভাবে পরতে পরতে রূপান্তরিত হয়েছে, সেভাবে সমগ্র বাংলার রূপান্তর ঘটেনি। উনবিংশ শতাব্দীর ৩য় দশকের আগে কলকাতার সাথে বৃহত্তর গ্রামীণ বাংলার উভয়মুখী যাত্রাও দুর্বল ছিল। ফলত কলকাতার খণ্ডচিত্র ভিন্নধর্মী – বাংলার অন্য অংশের চেয়ে। সমাচার দর্পণ পত্রিকায় ১০ কার্তিক ১২৪১ তথা ২৫ অক্টোবর ১৮৩৪-এ প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছিল – “বঙ্গ দেশে যে ৩ কোটি লোক আছে তাহারদিগকে ইঙ্গলণ্ডীয়রা ৯০০ সামান্য গোরা সিপাহী ও ১০০ ফিরিঙ্গি ও ২১০০ সামান্য সিপাহী অর্থাৎ বরকন্দাজ লইয়া জয় করিলেন এবং মুষ্টি পরিমিত সৈন্যের অধ্যক্ষ ৩১ বৎসর বয়সের মধ্যে এক জন অর্বাচীন অর্থাৎ লার্ড ক্লাইব ছিলেন ... দেখুন বঙ্গদেশীয় জমিদারদের মধ্যে ঘোড়ায় চড়িতে পারেন এমত ৫০ জন পাওয়া ভার অতএব বঙ্গদেশীয় লোকেরদের দ্বারা কি প্রকারে ভয় সম্ভাবনা।” (ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদিত, সংবাদপত্রে সেকালের কথা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৯৩) এ লেখার মাঝে চরম আত্মগ্লানি আছে। কিন্তু কলকাতার জনসমাজকে এ কথাগুলো সেভাবে স্পর্শ করেছিল কি? ... ...
ইতিহাস বলে, সংকট মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, সমাধানের পথ বাৎলে দেয়। করোনাভাইরাস থমকে দিয়েছে উন্মত্ত পৃথিবীর অর্থহীন দৌড়, হয়ত সাময়িকভাবেই। অভূতপূর্ব এই বিশ্বজোড়া মানুষের এতটা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা, নিজের ঘরের চৌহদ্দিতে। এই পড়ে-পাওয়া সময় হয়ত প্রকৃতির দান, কিম্বা প্রকৃতির পাঠানো কোনো সংকেত -- অন্তর্দর্শনের ডাক। আরও অনেক বড় বড় সঙ্কটের সূচনায় করোনা হয়ত এক ছোট্ট যতিচিহ্নের মতো। ... ...
এর থেকে মনে হয়, হাসাকে যতটা সুখী ভাবতাম-মানে এখন ভাবছি বসে- ততটা সুখী নিশ্চয় সে ছিল না। শাশুড়ী ও পোড়া রুটি প্রসঙ্গে তার অত খচে যাওয়ারই বা কি ছিল, সেসব কি তার দুর্বল পয়েন্ট, অ্যাকিলিসের হিল? আর বনিতা, সে-ই কি সার্থক সুখী ছিল? নাকি সুখের কল্পনা করে রস পেত এত?সে কি হাসা'র নাম করে নিজের ভবিষ্যৎজীবনের সুখের ছড়াই বানাত বসে বসে? এমন বনিতা , যার পায়ে সোনার নূপুর, যার শাশুড়ী পালিয়ে বেঁচেছে, এবং যে দিনান্তে পেট ভরে রুটিটা - পোড়া হোক যাই হোক-অন্ততঃ খেতে পায় ! এইরকম সব প্রশ্ন পায় এখন ভাবতে বসলে। হাসা ও বনিতাকে পেলে খুঁটিয়ে জেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তাদের পেলে তবে তো ! আমারও বয়স বাড়লো, আর দুজনেই এক এক করে- না, যা ভাবছেন তা নয়, একসঙ্গে নয়- যে যার মত আলাদা আলাদা কোথায় যে খসে পড়লো, কে জানে। আর তাদের খুঁজে পাওয়া গেল না। ... ...
ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের ফিল্টার অপশন না হয় সরল, কিন্তু কী হবে বাংলায় বিপুল বিক্রিত, দ্রুত বিক্রিত, সেরা বিক্রিত খবরের কাগজগুলোর ক্ষেত্রে। সেখানে তো ফি রবিবার বর্ণবৈষম্যের বিজ্ঞাপনে পাতা রঙিন হয়ে ওঠে। যেমন ২১ জুন, ২০২০ আনন্দবাজার পত্রিকার ইত্যাদি ট্যাবলয়েডে ‘পাত্রী চাই’ বিভাগে একটি বিজ্ঞাপনে লেখা হচ্ছে পূর্ববঙ্গ কায়স্থ দেবারী গণ...সুদর্শন কল্যাণীর... ডাক্তার পাত্র শিক্ষিত পরিবারের রুচিশীলা ফরসা স্লিম সুন্দরী MSC/MBBS/MD স্ববর্ণ পাত্রী কাম্য। অর্থাৎ একজন ডাক্তার (শিক্ষিত সমাজের একজন বলে যাঁকে মানা হয়) তাঁর জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিন্ন জাত/ধর্ম তো ছেড়েই দিন স্বগোত্র-গণের বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারছেন না। ... ...
ভ্যান্ডারলুস্ট। আর কোনো শব্দে ব্যাখ্যা করা যাবে না এ কাণ্ড। ১৯৭৫। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বেরিয়ে পড়লেন তিন তরুণ। দুনিয়া ঘুরে দেখতে হবে। সাইকেলে। ইন্টারনেট নেই। জিপিএস নেই। অর্থবল নেই। মাতৃভাষা বাংলা বই দুটি ভাষা জানা নেই। সম্বল স্রেফ স্বপ্ন। আর জেদ। হাল ছাড়লেন দুজন। কুছ পরোয়া নেহি। ঘুরতে থাকল তৃতীয়জনের সাইকেলের চাকা। ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এ সফরনামা শুধু রুদ্ধশ্বাস নানা ঘটনার ভিড় নয়, নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া এক মুসাফিরের অনন্য জীবনবীক্ষা। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
প্রকৃতি একটু একটু করে খুলে দিচ্ছিল তার জাদু-দরজা। ঘরের একদিকের দেয়ালের পাশে ছিল লম্বা লম্বা পাতার কিছু গাছ। তাতে অদ্ভুত দেখতে কিছু কলি। ধীরে ধীরে কলিরা বড় হচ্ছিল। হঠাৎ এক সকালে দেখি, কলি নয়, ফুল। কি অবিশ্বাস্য সুন্দর ফুল! বাবাকে গিয়ে ধরলাম, কি ফুল বাবা? বাবা বলল, কলাবতী। এমন ও ফুল হয়, এমন ও নাম হয়! আমার চেতনার কূল ভাসিয়ে বাজতে থাকে কলাবতী, কলাবতী, কলাবতী। তারপর একদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামে। গায়ে সেদিন অল্প অল্প জ্বর। মা বলে, – আজ আর দুজনের কারো, স্কুলে গিয়া কাজ নাই। আমি চাদর মুড়ি দিয়ে হাত-পা ঢেকে বিছানায় বসে থাকি, জানালার পাশে। দেখি, কলাবতী বৃষ্টিতে স্নান করে। পাতার গা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে – টুপ – – টুপ, টুপ টুপ। ফুলের গা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে – টুপ – – টুপ, টুপ টুপ। ঠাকু’মা এসে পাশে দাঁড়ায়। – কেমন আছ অহন? – ভালো। – জলীয় বাতাস লাগাইও না। জ্বর বাড়ব। জানালার পাল্লা অনেকটা বন্ধ হয়। একটু ফাঁক রাখা থাকে–নাতির জন্য, কলাবতীর জন্য। ছোট দু’ ভাই এবার ঘিরে আসে, – ঠাকুমা গল্প বলো। ... ...
বস্তারের যেখানে অত্যাচার, সেখানেই অদম্য সোনি সোরি। স্কুল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত অসহযোগিতা করলেও নির্যাতিতা মেয়েদের হয়ে মামলা রুজু করেছেন সোনি। পরিষ্কার বললেন, তার গুপ্তাঙ্গে পাথর ঢোকানো পুলিশ অফিসারটি এবার রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পেয়েছে, ওর সদম্ভ চলাফেরা দেখলে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যায়, মগর ক্যা করু, দেশ কা সংবিধানমে বহোত বিশোয়াস রখতি হুঁ। না, বন্দুক হাতে তুলে নেবার কথা একবারও ভাবেননি সোনি। বরং একবারই গলা ধরে এলো বাবাসাহেবের এই সত্যিকারের সন্তানের, যখন বললেন তার ভেঙে দেওয়া স্কুলহোস্টেলে পঞ্চাশটি অনাথ বাচ্চা থাকতো যাদের বাবা মায়েরা খুন হয়েছে রাষ্ট্রের পোষা আতঙ্কবাদী সালোয়া জুড়ুমের সদস্যদের হাতে। তাদের কি হল তিনি জেলে যাবার পর জানা নেই, শুধু এই সেদিন গহন বনের ছায়ায় এক গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা শুনে সোনি যখন ছুটে যাচ্ছিলেন দুটি মাওবাদী তার পথ আটকায়। যাবার হুকুম নেই। কথা কাটাকাটি শুরু হতেই বন্দুক হাতে ছুটে আসে আর এক তরুণ, প্রাক্তন শিক্ষিকার পা ছুঁয়ে মাফি মাঙে। এ সেই অনাথদের একজন। ... ...
গাঙ্গুলি বাড়ির বৌ হয়ে যেদিন প্রথম এসেছিল সৌদামিনী, শাশুড়িমা থুতনি ধরে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, তোমার নামটা বাছা আমি একটু বদলে দেব। একে অতবড় নাম ধরে ডাকাও যায়না, তাছাড়া আর একটা সমস্যাও আছে। তোমার কোনও ডাক নাম নেই? সৌদামিনী বলল, হ্যাঁ আছে তো, মিনু। উনি বললেন, তাহলে আজ থেকে সবাই মিনু বলেই ডাকবে তোমায়। সবাই আর কে, বাড়িতে তো আর মোটে তিন জন, কত্তা, গিন্নী আর সৌদামিনীর বর মহাদেব। সৌদামিনী তবুও জিজ্ঞেস করল, সমস্যা কী একটা আছে বলছিলেন মা? গাঙ্গুলি গিন্নী বললেন, আসলে আমাদের বাড়িতে যে কাজের মেয়ে, তার নামও সৌদামিনী। অবশ্য তাকে আমরা সদু বলে ডাকি। এ নামটা তো আমার মায়ের আমলের, এই আধুনিক যুগেও এমন নামে দু-দুজন? যাক, সমস্যা আর থাকল না। ... ...
লখিমপুর-খেরি বিজেপির গলায় কাঁটা হয়ে খচখচ করছে। তার কারণ দুটো। প্রথমত বিধানসভা নির্বাচন ঘাড়ের ওপর। এখন এই গন্ডগোল খুনখারাপির কারণে বিজেপি-বিরোধী জনমত আরও না দানা বাঁধে। দ্বিতীয় কারণটিও খুব গুরুতর। লখিমপুর-খেরি উত্তর প্রদেশের সবচেয়ে বড় জেলা, এর অবস্থান রাজ্যের পূর্বদিকে। অতীতে এখানে কৃষক আন্দোলনের অতো বাড়বাড়ন্ত ছিল না, কিন্তু এখন হচ্ছে, তার মানে নতুন নতুন জায়গায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। এতোদিন উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাংশে ৩০টি জেলায় আন্দোলনটি সীমাবদ্ধ ছিল। এখন পূবেও তা যদি ছড়িয়ে পড়ে, সে দাবানল নেভাবে কে? অতএব সামনের কয়েকটি দিন লখিমপুর-খেরি বিজেপির শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে থাকবে এটা একেবারে নিশ্চিত। ... ...
মুশকিল হলো যে মানুষটা সারাজীবন ব্রিটিশ পুলিশের নেক নজরে থাকলেন, যাঁর নামে ঢাউস ফাইল তৈরি হলো আইবি দপ্তরে, তাকে ইংরেজের পোষ্য বললে ঠিক হয় কি? তবু শুনি তিনি নাকি বেঙ্গল কেমিক্যালসে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় নাইট্রিক এসিডের উৎপাদন অব্যাহত রেখে ইংরেজ সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তা খালি ইংরেজ সরকার বলা হচ্ছে কেন, ভাই? মিত্রশক্তি বলে একটা কিছু ছিলো না তখন? নাইট্রিক এসিডের আকালে ভারত থেকে, এই কলকাতা থেকে নাইট্রিক এসিড যোগানো হয়েছে, তা ইস্তেমাল করে মিত্রশক্তি জিতেছে। ভালো হয়েছে। আপনার আমার গ্রেটার, লেসার ইভিল বেছে নেবার স্বাধীনতা আছে, আচার্যের নেই? তিনি কাইজারের তুলনায় ইংরেজকে লেসার ইভিল ভেবেছেন, সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। এতে এতো আপত্তির কী আছে? নাকি ক্রিটিকালি দেখতে হবে বলেই যা খুশি তাই বলে দেওয়া যায়! ... ...
সেই হুকুম শিরোধার্য করে ছেনুকে পা দিয়ে আওয়াজও করতে হচ্ছে এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কি আর করা যাবে? চমচম আংটির জন্য এটুকু তো করতেই হবে। যেখানে সেই দ্বাপর যুগে স্বয়ং কেষ্ট মহারাজ স্যমন্তক মণির জন্য আকুলি বিকুলি করতেন, কোহিনুর পেতে নাদির শা থেকে রঞ্জিত সিং সবাই হাত বাড়িয়েছেন সেখানে ছেনু তো কোন ছার! ছোট্ট থেকেই ওর চোখ দিদির হাতের নানা কারুকাজময় চমচমের মতো দেখতে চকচকে সোনার আংটিটার দিকে। সোনা কাকে বলে, তার কত দাম বা বদ্দিই বা কোথা থেকে আংটিটা পেয়েছে কিছুই ছেনুর জানা ছিলনা। কিন্তু আংটিটা হাতে পরলে ছেনুর মনে ভারি আনন্দ হতো। বারবার বদ্দির থেকে চমচম আংটিটা (ছেনুরই দেওয়া নাম) নেওয়ার জন্য বায়না করলেও বদ্দি এমনিতে কিছুতেই সেটা হাতে দিত না। ... ...
বস্তুত আমাদের সকলের চোখের সামনে এই সমস্যা ক্রমশ যেন এক টইমবোমার রূপ নিচ্ছে, যা যে কোনো সময়েই ফেটে পড়তে পারে। অথচ রাষ্ট্রের দিক থেকে এ নিয়ে কোনো কেন্দ্রীয় নীতি থাকা তো দূরস্থান, এমনকি সমস্যাটির যথাযথ স্বীকৃতিদানেও অনীহা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, যা শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, চূড়ান্ত অমানবিকও বটে। ... ...
পোস্টাল অ্যাড্রেস যাই থাকুক, এ' রাস্তার নাম কিন্তু সদর স্ট্রীট। হা হা। অবাক হচ্ছেন? এই তো' লেখকের কাজ - স্থান কাল পাত্র নিয়ে খেলা করে করে পাঠককে ধন্দে ফেলে দেওয়া। ছোটোবেলা থেকেই কাজটিতে আমি পটু। বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলার স্বভাব বরাবরের; তার ওপর মানুষ, পশু, পাখি এমনকি জায়গার নাম বদলে দেওয়ার একটা ফেজও চলেছিল বহুদিন - আমিই এ' গলির নাম দিয়েছিলাম সদর স্ট্রীট।' -এই অবধি ব'লে কমলিকা সামন্ত কফিতে চুমুক ... ...