অনেকের মনে হচ্ছে একটা বার্তা দেওয়া দরকার যে সব বাঙালি একেবারে সাচ্চা হিন্দু রামভক্ত বিজেপির বানরসেনা হয়ে যায়নি। অতএব শুভ কাজে বিলম্ব না করে কয়েকজন মিলে শুরু করে দেওয়া হোল একটা ছোট্ট উদ্যোগ – বিজেপি বিরোধী বাঙালিদের গ্রুপ – বর্গী এল দেশে। ... ...
যাদবপুরের এইট-বি বাসস্ট্যান্ডের সামনে সার দিয়ে যে চার কী পাঁচজন রোলওলা বসতেন, তারা যাদবপুরের ছাত্রদের দৈনান্তিক সর্বগ্রাসী খাই-খাইয়ের টোটকা হিসেবে আলু রোলের উদভাবন করেছিলেন। সেদ্ধ, চটকানো আলু গোল করে টিকিয়ার মতন করা থাকত। মাংসর বদলে রোলের পুর হিসেবে সেই চালনো হত। সস্তা এবং পেট-ভরানো। পপুলার ছিল এগ-পোটাটো। তাছাড়া আলু বিশেষ চলেছিল বলে মনে হয় না। পরে অন্য কোথাও দেখিনিও। ... ...
বারাসাতের কামদুনি গ্রামটিতে গণধর্ষণ আর হত্যা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, কলকাতার কিছু রাজনৈতিক কর্মী, আর অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষদের আন্দোলনের সংহতিতে গ্রামটিতে গিয়েছিলাম গত ১৬ জুন। মমতার কামদুনি সফরের ঠিক একদিন আগে। নিচের লেখায় তারই একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ ধরা থাকল। ... ...
জামুকে দেখলে টুনুর মনে হয় ইতিহাস বইয়ের খানিক টুকরো যেন হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। কতরকম অজানা সব গল্প যে বলে। সরলা নেমে দেখেন ছেলে বেশ পরিস্কার শার্ট প্যান্ট পরে ভব্যিযুক্ত হয়ে এসেছে। খাবার বেড়ে সামনে বসে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলেন এও আজ একটু অন্যমনস্ক। হুঁ, হাঞ্জি আর ঘাড় নেড়েই কাজ চালাচ্ছে। ওর হিন্দিবাংলা মেশানো তড়বড়ে কথা আজ নেই। খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে, থালা গেলাস মেজে ধুয়ে রেখে কিছু কাজ আছে কিনা জিগ্যেস করে তারপর ইতস্তত ভাবে জানায় ওর একটা আর্জি আছে মা’জির কাছে। ঢোলা শার্টের পকেটে হাত গলিয়ে তুলে আনে একটা কাগজে মোড়া পাতলা কি যেন। ঐ জিনিষটা সে সরলার কাছে রেখে যেতে চায়, ওর থাকার কোন ঠিক নেই, এটা আরেকজনের জিম্মা করা জিনিষ, চুরি হয়ে গেলে উপরওলার কাছে অপরাধী হয়ে যাবে জামু। সরলা বলেন যার জিনিষ তাকেই দিয়ে দিলে তো হয়। জামু নাকি জানেই না সে মানুষ কোথায়। আবার ওর মুখ থমথমে হয়ে যায়, চোখদুটো কেমন অচেনা। ... ...
এলারামের ঘড়িকে রবীন্দ্রনাথ অমর করে রেখে গেছেন। ঘড়িটি না বাজা পর্যন্ত সুখশয্যা ত্যাগ করতে কর্তাবাবুর ঘোরতর আপত্তি ছিল, এমনকি ঘরে আগুন লাগলেও না! কিন্তু আমাদের মহারানীমাতার আপাতত সমস্যা হল, ঘড়ি বেজে, বেজে, বেজে কেলান্ত হয়ে থেমে গেলেও গোবুরাজা, বড়কুমার বা ছোটকুমার কেউই নয়নপদ্ম উন্মীলন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন না, এমনকি গোবুরাজার নাক যেমন ইমন রাগ ও কাহারবা তালে খরবায়ু বয় বেগের সুরে ডাকছিল, তেমনই ডাকে, ডেকেই যায়, সেই অসাধারণ গীত যে সারাদিনে থামবে তার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। গোবুমহারাজ ও কেবলীরানীর সঙ্গে গুরুর অনেক পাঠিকা ও পাঠকরা পূর্ব পরিচিত। তাঁদের অবগতির জন্য বলি, এনারা আর সেই সংসার অনভিজ্ঞ যুবক যুবতী নেই। দিল্লিতে এঁরা মোটামুটি একটি সংসার পেতে বসেছেন। বন্ধুবান্ধবরা অবশ্য সর্বদাই এই সাধের ফেলাটটিকে রেলওয়ে প্লাটফর্মের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন, তাতে মহারাজ বা রানীমা কারো কিছুই এসে যায় না।চতুর্দিকে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বই, বই এবং আরো বই, দুটি নয়নতারা, একটি কাঁঠালিচাঁপা ও সাতটি নাম না জানা গাছ, বড়কুমার ও ছোটকুমারের অজস্র ভাঙা খেলনা, একটি ছোট খাওয়ার টেবিল,বেতের সোফা ইত্যাদি নিয়ে তাঁরা দিব্যি আছেন। ... ...
তবে কি এইখানে দিকবলয় বাসনারহিত? নদীর পিঠের ওপর কৃষ্ণকামবারি বারিধিসম্ভূত? স্থলভাগের পদপল্লবে এই ঊর্মিমালা এই লবণাক্ত এই মীনরঞ্জিত, এ কি প্রচলিতকে প্রত্যাখ্যান করে? তবে চলুন পাঠক, এই ঘাটলায় এসে দুদন্ড বসি দুজনে। এই সন্ধ্যাকালে স্রোতধারা মৃদুস্রাবী, পরিবৃতা। ভাঙা শাঁখার মতো দিকবলয়ের গায়ে বলয়িত হয়ে আছে চন্দ্রমা, স্ফটিকরাজির মতো তারার কুচি ছড়াবে সন্ধ্যা সমাগত হলে। উচ্চকিত আলো থেকে হঠাৎ এইখানে চোখে ধাঁধা লেগে যেতে পারে। চোখ সয়ে এলে দেখা যাবে জলের ওপর একটি পানসি। ধারালো কিরীচের মতো। চাঁদের ক্ষতমুখ গলে গেলে রস ক্রমে গড়িয়ে গড়িয়ে নামে মাতলার জঙ্ঘা বরাবর, এইখানে মাতলা পূর্বমুখী এবং পাড়ঘেঁষা। এইবার স্পষ্ট হয়েছে পানসির ওপর দুটি স্ত্রীলোকের ছায়ামূর্তি। বাতাসের ধাক্কায় হালে কচর কচর শব্দ হয়। পানসি আলতো কেটে কেটে দিচ্ছে জোছনামাখা নদীজলকে। দাঁড় দুটি ছোট ছোট ঢেউয়ের ধাক্কায় জলের ওপর ভেসে আছে অল্প গতির কারণে। ক্রীড়াবশত একটি শুশুক দাঁড়ের গায়ে পিঠ বুলিয়ে ফের ডুবসাঁতারে অতিদূর। ... ...
তখন তিনি পুনশ্চের কবিতাগুলি লিখছিলেন। একটু পরে সম্বিত ফিরে পেলে 'পুকুরধারে' নামে কবিতাটি লেখা হলো। পরদিন শান্তিনিকেতন ফিরে গেলেন। তখন সেখানে বর্ষামঙ্গল উৎসবের আয়োজন চলেছে। কবির এই শোকসংবাদে বিচলিত আশ্রমিকেরা উৎসব বন্ধ রাখার প্রস্তাব করলেন। কিন্তু কবি রাজি হলেন না। নিজেও উৎসবে পূর্ণতঃ অংশগ্রহণ করলেন। মীরাদেবীকে লিখলেন, '' ... নীতুকে খুব ভালোবাসতুম, তাছাড়া তোর কথা ভেবে প্রকান্ড দুঃখ চেপে বসেছিলো বুকের মধ্যে। কিন্তু সর্বলোকের সামনে নিজের গভীরতম দুঃখকে ক্ষুদ্র করতে লজ্জা করে। ক্ষুদ্র হয় যখন সেই শোক, সহজ জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ,.... অনেকে বললে এবারে বর্ষামঙ্গল বন্ধ থাক আমার শোকের খাতিরে। আমি বললুম সে হতেই পারেনা। আমার শোকের দায় আমিই নেবো। ... আমার সব কাজকর্মই আমি সহজভাবে করে গেছি। ...'' ... ...
এরকম এক সময়ে ফ্যাতাড়ুরা আর অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারেনা। এরা নিজেরাই রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া অন্তর্ঘাতের অংশীদার হয়ে যায়। এর হিংসা আর শক্তি প্রদর্শনের extra-judiciary, extra-state হাতিয়ার হয়। এরা “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-র সৌম্যকান্তি পাগল চরিত্রটির মতো দুর্বোধ্য “গ্যাৎচরেৎশালা” উচ্চারণ করেনা। এরা স্পষ্ট ভাষায় হিংসা-ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেয় “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যেতে থাকে। আমাদের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে ঠিক এই গল্পগুলো তৈরি হচ্ছেনা। ঘটনাচক্রে এখানে আক্রান্ত হন বেচারা বিদ্যাসাগর। তিনি এই চলমান ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়ে যান। ... ...
তথাকথিত নীচু জাতের নারীর সঙ্গে তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের জাত কী হবে সুপ্রিম কোর্টে এইরকম একটি কেস উঠেছিল (civil appeal no 654 of 2012, decided on January 18, 2012)। সুপ্রিম কোর্টের অবজারভেশনের একটি অনুবাদ নীচে রইল। ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ যদি আদিবাসী এবং অ-আদিবাসীর মধ্যে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয়, সন্তান পিতার কাস্টেই পরিচিত হবে। এই ধরে নেওয়াটা জোরদার হয়, যদি এইরকম বিয়েতে পুরুষটি উঁচু জাতের হয়। কিন্তু এই ধরে নেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে কখনই অপরিবর্তনীয় নয়। এইরকম বিয়ের সন্তানের প্রমাণ করার স্বাধীনতা থাকবে যে সে শিডিউল কাস্ট/ ট্রাইবের মায়ের দ্বারা আজন্ম পোষিত হয়েছে। উঁচু জাতের পিতার সন্তান হয়ে সে জীবনে কোনো সুযোগ সুবিধেই পায়নি, উপরন্তু বঞ্চনা, অমর্যাদা, অপমান এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছে, যেমনটি তার মায়ের কাস্টের লোকেরা হয়ে থাকে। ... ...
মহামন্ত্রী বেজায় সমস্যায়, কারণ তাঁহার নাকি বডি-শেমিং হইয়াছে। কলকাতার কোন এক পার্ক-সার্কাসে ফচকে ছোঁড়ারা তাঁর নামে কুশপুতুল জ্বালাইয়াছে। তাহাতে ক্ষতি নাই, ও তো কত লোকেই করিয়া থাকে। কিন্তু ব্যাটারা নাকি পুতুলটির ভিতরে পাশবালিশ পুরিয়া তাহার উপর কাগজ সাঁটাইয়া দিয়াছিলঃ মোটার ভুঁড়ি করব লিক / আমরা হলাম আঞ্চলিক। ... ...
পাইলটের আকাশবাণী হল আর কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা ক্রাইস্টচার্চের বিমানবন্দরে অবতরণ করব, ঠিক এই সময়ে নজরে এলেন দক্ষিণ আল্পস, পাহাড়চূড়ায় তুষার, যেন সদ্য স্নান করে গায়ে ট্যালকম পাউডার মেখে স্থাণুবৎ গা এলিয়েছেন পশ্চিমতটরেখা বরাবর। তরঙ্গের মতন সাদা বরফের চূড়া, তার অনতিগভীরে কোথাও বা পাহাড়ের কোলে পান্না সবুজ ছোট হ্রদ, তারপরেই ক্যান্টারবেরির প্রশস্ত প্রান্তর জুড়ে এঁকেবেঁকে চলা অজস্র শিরা উপশিরার মতন নদী, দেখতে দেখতে ক্রাইস্টচার্চ ঘিরে আকাশপাখি গোল করে ঘুরতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো প্রশান্ত মহাসাগরের নীল দিগন্তে ম্যাজিক। ... ...
কিন্তু ইতিহাস (এবং সিনেমার ইতিহাস) সম্পর্কে অনবগত বা উদাসীন হলেই দিবাকরের এই ছবিটির মত দায়সারা ব্যাপার হয় – তাই ১৯৪৩-র প্রেক্ষাপটে এই ছবিটিতে বিশ্বযুদ্ধ আছে কিন্তু ধর্মতলায় আমেরিকান জি আই নেই, ‘জয় বাংলা’ নামে একটি রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কোনো অভিঘাত নেই, গান্ধিজি আছেন নেতাজী নেই, বোসপুকুরে খুন হয় কিন্তু অভুক্ত লাশেদের মন্বন্তর নেই, গ্রামপতনের শব্দ নেই, গাঙে মরা নেই তাই গঙ্গায় নায়িকা সাতার কাটতে ঝাঁপ দেন অনায়াসে। ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতার প্রশ্ন বাদ দিলেও ব্যোমকেশ-অজিত-সত্যবতীর মধ্যে কোনো রসায়ন নেই; রহস্য সন্ধানে মেথড নেই তার বদলে সাংবাদিকতার ন্যায় তথ্য উন্মোচন আছে; সন্দেহভাজনের তালিকা একটি গোয়েন্দা গল্পে ভীষণ ছোটো কারণ মূল চরিত্রের বাইরে অন্য চরিত্রদের সময়ই দেওয়া হয়নি যে তারা ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে; একটি রহস্য কাহিনীতে প্লটের গভীরতাহীনতা আছে যা অন্তত গোয়েন্দা গল্পের শতাধিক বছরের ইতিহাসের পর মেনে নেওয়া যায়না। ... ...
বুড়া ঠেসান দিয়ে বসে থাকে কুয়োর ধারে। চারদিকে মানুষের কথা বয়ে যাচ্ছে ফিসফিস ফিসফিস, কিছুই ধরতে পারছে না সে! হঠাৎ তার বাপের একটা কথা মনে পড় যায় বিজলিচমকের মত। যখন আঁধার নামে, তাজা লোমড়ির রক্ত খেয়ে জেগে ওঠেন মারী দেবী, তাঁকে খুশি করতে পারলে যা চাই তাই দেন মা । জরুরি কাজ মনে পড়ে যাবার মত করেই ধড়মড় করে উঠে বসে। “আমি যতক্ষণ না ফিরি, নিয়ে যাবি না ওদের” ব’লে খ্যাপা মোষের মত বেরিয়ে যায় বুড়া। জমায়েত একধারে সরে গিয়ে পথ করে দেয়, নিবারণ হাহুতাশ করে, পাগলে গেছে গো বুড়াটা। বুড়া ততক্ষণে পিছনের মাঠ পেরিয়ে সোজা খেত বরাবর নারান বাবুর মাঠে। লোমড়িটা ওদিকেই গেছে নিশ্চই খরগোশ ধরতে, এসময় এগুলো বেশ গায়ে গতরে হয়ে ওঠে। ... ...
- মা কী বলবে বলেছিলে মনে আছে? - কী রে? - দাদুরা আড়বালিয়ার বাড়ি ছেড়ে শহরে কেন গিয়েছিল? - ইচ্ছে হয়েছিল তাই গিয়েছিল। - না, বল ঠিক করে, বলতেই হবে। তোমার মামার বাড়ির কথা তো অনেক শুনলাম। আমার মামার বাড়ির কথা জানবোনা বুঝি? আড়বালিয়ার অমন প্রাচীন ইতিহাস নেই? - সে তো নিশ্চয়ই আছে, তবে কিনা রাজা মহারাজাদের সাত পুরুষ, দশ পুরুষ সব নাম নথি পাওয়া যায়, সাধারণ মানুষের সেসব লেখা থাকেনা, তাই হারিয়ে যায়। আমাকে নিয়ে কেবল চার পুরুষের কথাই জানি। - সেটাই বল, আমাকে তো জানতে হবে। - জানতে হবে? সংক্ষেপে জানবি নাকি বিশদে? - ওসব জানিনা, তুমি যা জানো আমাকে বলতে হবে। - তাহলে তোকে কিন্তু ধৈর্য ধরে অন্তত সোয়াশো বছর আগের আড়বালিয়ায় যেতে হবে। পারবি? - তাই নাকি! চল, চল, শিগগির। ... ...
পুলিশ অফিসার, এস পি অঙ্কিত গর্গ আমাকে বললেন " শালী হারামী,কুত্তি। তুই তো একটা বেবুশ্যা। নকশাল লীডারদের কাছে তোর শরীর বেচিস তুই। ওরা আসেও তোর বাড়ীতে সারা দিনরাত ধরে। জানি,জানি, আমরা সব জানি।' আরো বল্লেন " তুই নিজেকে বলিস তুই একটা ভালো টিচার কিন্তু তুই তো দিল্লি গিয়েও তোর শরীর বেচে আসিস। তুই কি ভাবিস নিজেকে? তোর ধারনা তোর মতন একটা পাতি মেয়েছেলেকে বাঁচাতে কোনো হোমড়া চোমড়ারা ছুটে আসবে? " কোন অধিকারে কোনো পুলিশ অফিসার ঐ কথা বলতে পারে? আজকের দিনে ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে সব দেশেই যুদ্ধের সময়ে সেই দেশের মেয়েরা স্বদেশের জন্য কতো আত্মত্যাগ করেছেন। ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাইও তো বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন - তিনি তো নিজেকে বিক্রি করেন নি। ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন - তিনিও কি নিজেকে বিক্রি করেছিলেন? আর আজকের দুনিয়ায় যতো মহিলারা নিজের নিজের জায়গায় কাজ করছেন তারাও কি নিজেদের বেচে দিচ্ছেন? আমাদের সবারই তো একই সাথে থাকার কথা, কিন্তু আমাকে সাহায্য করতে কেন কেউ এগিয়ে আসছে না? আমি এর উত্তর চাই। ... ...
এবং এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় এই কাহিনীর অসঙ্গতি। সলিল বসুচৌধুরির সঙ্গে এই অভিযানের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন ছাতনা থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর প্রণব চ্যাটার্জি। তিনিও আদালতে এই অভিযানের একটি বর্ণনা দেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ীও তাঁরা ধনঞ্জয়ের বাড়ি পৌঁছন মাঝরাতের পরে এবং পাশাপাশি তিনটি বাড়ি সার্চ করেন। ধনঞ্জয়কে কোথায় পাওয়া যায়? তাঁর বর্ণনানুযায়ী একটা খড়ের চালের বাড়ির সামনে ছিল একটা খড়ের চালের বারান্দা। ধনঞ্জয় লুকিয়ে ছিল সেই বারান্দার ছাদে। বারান্দার ছাদ আর খড়ের গাদার পিছন নিশ্চয়ই এক জায়গা নয়। তাহলে ধনঞ্জয়কে গ্রেপ্তার আসলে কোথায় করা হয়েছিল? যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসা করলে কি আসল উত্তরটা পাওয়া সম্ভব? আদালতে ধনঞ্জয়কে এই প্রশ্নটি করা হয়েওছিল, যে, সে কি জ্যাঠার বাড়ির খড়ের গাদার পিছনে লুকিয়ে ছিল এবং সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে? ধনঞ্জয় তার উত্তরে স্পষ্ট করেই জানায়, সেটা ঘটনা নয়। সে ছিল তার বাড়িতে। তার স্ত্রীও ছিল সঙ্গে। ... ...
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি নিজের ‘দেশ’, তা বলতে আমি হাতি ঘোড়া বেগুনপোড়া যা-ই বুঝিনা কেন, তাকে সমর্থন করব না? ভারত বা বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটাবো না? উত্তরে বলি (আমার কাছে উত্তর চাননি হয়তো, তবু এতখানি ধ্যাস্টামো যখন করেই ফেলেছি), সমর্থন আমিও করি – আপনিও করেন। সমর্থন করতেই পারি। খেলা দেখতে যারা ভালোবাসি, খেলা দেখবো। কিন্তু সেই দেখা, সেই সমর্থনকে আমার স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাকে গ্রাস করতে দেবো কেন? ধরুন কাল যদি ভারতের বুকে বসে ‘ভারতবাসী’ হয়ে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করেই (কী ভাগ্যি কাল বিপক্ষে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নেই), তবে তার সহজ এবং একমাত্র ব্যখ্যাটা এটাই হয়না যে সে বা তারা ‘দেশদ্রোহী’। না হয়না। কারণ প্রথম কথা ‘দেশ’ এর সংজ্ঞা প্রত্যেকের কাছে আলাদা এবং রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সীমানাকে অস্বীকার করা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। আর দ্বিতীয় কথা, এটা ‘যুদ্ধ’ নয়। দু দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দল নিজেদের মধ্যে খেলেছে, আমরা কোন না কোন দলকে ‘দেশ’ হিসাবে (বা আমার দল হিসাবে) ধরে নিয়ে সমর্থন করছি আমার স্বাধীন নির্বাচন অনুযায়ী, কোন রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতায় নয়। আমার বিপরীত দিকে বসা মানুষটারও তার মতন করে নির্বাচন করার অধিকার আছে বৈ কি। সেটা আমার সঙ্গে না মিললে সমর্থকের কথার লড়াই চলতেই পারে – দেশের বিরুদ্ধে লড়াই হয় না। জীবনে অনেক যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ, প্রতিদিনের হাসার যুদ্ধ। ওটা থেকে পালাবার পথ নেই বিশ্বাস করুন, ক্রিকেট আপনাকে ওই যুদ্ধে একটুও বাড়তি সুবিধা দেবে না। স্টেডিয়ামের লক্ষ ওয়াটের আলোর ছিটেফোঁটাও ঢুকবে না আপনার ঝুপড়িতে বা এক চিলতে ফ্ল্যাটে – ম্যান অফ দি ম্যাচের কোটি টাকার গাড়ি আপনার একটা ই এম আই শোধের কাজে আসবে না। না ওটা আমাদের যুদ্ধ নয় – স্রেফ এন্টারটেইনমেন্ট। ক্রিকেট থাকুক, সমর্থন থাকুক, আনন্দ বিষাদ থাকুক, সেই সঙ্গে স্যানিটিও থাকুক। ... ...
‘বউদি অত টাকা পাবে কোথায়—।’ ‘বউদি আর পাবে কোথায়!’ মানিক হাসে, ‘বউদির অনেক কাজের বাড়ির বাবু ধরা আছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচ দশ করে কালেক্ট করবে। মাসে মাসে আমি দিলে তাদের শোধ করে দেবে। আর সুদটা বউদির পকেটে ঢুকবে। প্ল্যান আমার ছকা ছিল। ওই হারামির বাচ্চা বাবু সাহা সব লাগিয়ে দিল মল্লিক ঠিকেদারকে। নইলে আমার সব প্ল্যান পাক্কা।’ মানিক আবারও হাসল। ‘আমাকে চুরির বদনাম দিয়ে বাড়ি চলে এল—থানায় গেল না। চুরির মাল খুঁজল না। শুধু হল্লা, নে সাহস থাকে আমাকে পুলিসে দে। দু দুটো টুলু পাম্প, আচ্ছা আমিও ছাড়ব না। ওরা ভয় পেয়ে গেছে রূপা বুঝেছে—আমি যদি ঠিকেদারি লাইনে নামি ওরা আমার সঙ্গে পারবে না।’ রূপার মনে হল, মানিক ঠিক কথাই বলেছে, সত্যি সত্যি চুরি হলে ওরা থানা পুলিশ করত না—ছেড়ে দিত? কেউ ছেড়ে দেয়? ... ...
সকাল আরো কাছ এগিয়ে আসে, বিছানায় যাওয়া জরুরী, কাল সকালে মিটিং আছে। ঘড়িটা ড্রয়ার থেকে টেনে বের করতে গিয়ে চোখ পড়ে যায় সেই মরফিন প্যাচ্-গুলোর প্যাকেটে। এখনো রয়ে গ্যাছে এরা? বেশ কয়েকটা প্যাচের প্যাক দেখলাম, হাত দিয়ে সরিয়ে আরো পেলাম মরফিন ট্যাবলেটও। মনে পড়ে গেল সেই ক্যানাল রোডের দোকান থেকে কেনা – সাথের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা এগিয়ে দিয়েছিলাম, সেটা শুধু মরফিনেরই জন্য। ওরা আবেগহীন আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেয় যন্ত্রণা – এই ডাক্তারের হাতের লেখা খুব সুন্দর, কালি পেনে লিখেছে। আমিও পড়ে নিতে পারি, ডাক্তার লিখে দিয়েছে চাইলে মাস দুয়েকের জন্য স্টক করে নিতে পারি মরফিন প্যাচ এবং ট্যাবলেট। ওরা প্যাচ এনে দেখায়, আমার চোখ চলে যায় ছোট ছোট ট্যাবলেটে। কেমন প্রশান্তি এনে দেবে এরা? ... ...
দেশের বাজেটের মত পারিবারিক বা ব্যক্তিগত বাজেটেও একটা হিসাব থাকে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ । আগে মাসকাবারির থলেতে থাকত বড়জোর একটা বোরোলীন বা একটা হিমানী স্নো , কিউটিকুরা পাউডার , সঙ্গে কিছু নিখরচার ঘরোয়া প্রসাধনীতেই কাজ চলে যেত । আজকাল সব মিডিয়া জুড়ে অবিরত পুঁজিবাদী কর্পোরেট দুনিয়ার ইস্কুল চলে । রোগা ভোগা গ্রামীণ গৃহবধূ ও অভাবী সাফাইকর্মী সবাই সেই ইস্কুলের ছাত্রী--এরকম সব রোগীরা দেখাতে এসে ঝোলা থেকে উপুড় করে নামিয়ে দেখায় -- নামী ব্রান্ডের হাজার হাজার টাকার অপ্রয়োজনীয় বিউটি প্রডাক্ট --"এইসব মাখি ,তবু গ্লো আসছে না "। যদি প্রশ্ন করি -"সকালে কি খাও মা? দুপুরে? রাতে?" তাদের বিরক্ত চোখমুখ বলে সুষম খাদ্যের কোনো বালাই নেই । যদি বা এতবছর ধরে এত লড়াই করে মেয়েদের হাতে সামান্য ক্রয়ক্ষমতা এল --সেই অর্থ এমন বিপথে ডাকাতি হয়ে যায় ! 2020 সালেও দেখি--বহু কষ্টে পড়াশোনা করে পাওয়া চাকরি , বরের আবদারে ছেড়ে দেয় মেয়ে আর বিবাহবার্ষিকীর উপহার, মিনে করা সোনার লকেট তুলে গদগদ ভাবে সবাইকে দেখায় । ... ...