এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অন্যান্য  মোচ্ছব

  • হরিদাসের বাচালতা - গুরুদের বিড়ম্বনা

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | মোচ্ছব | ২২ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩৯১ বার পঠিত
  • ১৯.১.২৪ গুরুতে পোষ্টেছিলুম আমার একটি মামূলী পাঠাভিজ্ঞতা - শংকর ভাষ‍্যে বশী বন্দনা। সে লেখা‌র শিরোনাম নিয়ে প্রথমে :।: এর বাউন্সারে নাজেহাল হয়েছিলাম‍। তিনি হয়তো এখনো শিরোনামে‌ই আটকে আছেন অথবা শির ছেড়ে শরীর অন্বেষণে উৎসাহ না পেয়ে সরে পড়েছে‌ন। 
     
     
    আজ মহাসমারোহে কোথাও Life Establishment Ceremony হবে - তা নিয়ে মাসাধিককাল ধরে হৈচৈ দেখে এমনি‌তে‌ই মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত ছিলাম। তার ওপর ঘুমচোখ খুলেই 'শংকর ভাষ‍্য' নিয়ে রঞ্জন রায়ের চুল চেরা ষষ্ঠী‌পূজো বিশ্লেষণ পড়ে প্রথমে মগজে জলটান হোলো  - তাই মস্তিষ্ক রিহাই‌ড্রেট করতে পান করতে হোলো দেড় স‍্যাসে Electral. তা‌ও মাথা ভোঁভোঁ করছে দেখে খেলাম একটা Zinetac 300. তারপরেও চোখে ঝাপসা দেখছি দেখে দুটি চক্ষুতে দিলাম  দুই ফোঁটা করে আইটোন। অতঃপর একটু সুস্থবোধ করলাম। রঞ্জনবাবুর প্রতি কৃতজ্ঞতা‌ও বোধ করলুম। কারণ উনি আমার লেখা‌র শিরোনামে ‘শংকর ভাষ‍্য’ নস‍্য‌জ্ঞানে নস‍্যাৎ করে দেননি।
     
    এমন অবস্থা - মানে শরীর খারাপ - আগেও একবার হয়েছি‌ল।  ১৫.১০.২৩এ হপাতে পোষ্টানো আমার “গুরু শিষ‍্য সংবাদ - জীবনানন্দের বিপন্ন‌তা” লেখা‌য় এক গুরুর উল্লেখ আছে। তিনি একবার আমার সাথে ১২১ ফোনালাপে বাংলা ব‍্যাকরণ নিয়ে (আমার ঘোর অনিচ্ছা সত্ত্বেও) আলোচনা শুরু করেছি‌লেন। কারক, বিভক্তি, তৎসম, তদ্ভব, ণত্ববিধান, ষত্ববিধান, উপমান, উপমেয় শব্দগুলি ইউক্রেন অভিমূখে রাশিয়া নিক্ষিপ্ত ক্লাস্টার মিসাইলের (mutation) মতো 4G বেয়ে ধেয়ে আসছিল আমার দিকে। কোনোরকমে প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছিলুম। কিন্তু আলোচনা‌য় অংশ নিচ্ছি না দেখেও তিনি সমাস, অব‍্যয়, প্রত‍্যয় হয়ে ধাতু অবধি টেনে যেতে ধাত ছেড়ে যাওয়ার দশা। এমতাবস্থায় উদ্ধার পেতে বৌমণি‌কে একটি SOP শিখিয়ে রেখেছি। সেই অনুযায়ী ইশারা করতে বৌমণি আমায় পাশে বসে ফোন করে। আমি গুরুদেবকে বলি, এই একটা জরুরি ফোন আসছে, রাখছি, পরে কথা বলবো, কেমন। হ‍্যাঁ, তাকে সমাদর করে গুরুদেব, সক্রেটিস ইত‍্যাদি বললে‌ও সে আসলে আমার থেকে ১৬ বছরের কনিষ্ঠ শ‍্যালক, তাই তাকে তুই, তোকারি করি।
     
    তো যা বলছিলাম। আজ কিঞ্চিৎ সুস্থ‌বোধ করতে প্রাতরাশে‌র পর চলভাষের পর্দায় শুরু করলাম একটু অঙ্গুলিচালনা। তবে হনেস্টলি বলছি - এসব চালনা কারুর উচ্চারণ‌অযোগ‍্য প্রত‍্যঙ্গে “উংলি” করতে নয়। বাংলায় বিয়াল্লিশ (%) প্রেক্ষাপট এবং সামান্য পড়াশোনা‌য় ভর করে তা করা সম্ভব‌ও নয়। এই অম্লমধূর ক্রিয়া‌পদটি‌ও আমার উদ্ভাবিত নয় - এটি গুরুর পাতায় হপা বিভাগে প্রয়াত মলয় রায়চৌধুরীর ২১.০৮.২৩এ প্রকাশিত উক্ত শিরোনামে‌র একটি লেখা পড়ে উংলিটা মগজে নোট করা ছিল। সুযোগ বুঝে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এখানে ছেড়ে দিলুম। 
     
    আসলে আমি আমুদে মানুষ, একান্ত জীবনাচরণে - বাঁজা লেখা‌র ছলে - অপরিচিত সুজনদের সাথে একটু ভার্চুয়াল আড্ডা মারতে, মজা করতে ভালো‌বাসি। তারা উপভোগ করে নাকি দুর্ভোগ মনে হয় - তা অবশ‍্য জানা নেই। তবে গুরুতে ফেলা লেখা জোর করে গেলানোর জন‍্য নয়। যার যা ইচ্ছে হবে পড়বে। গুরুর কিছু অদৃশ‍্য ভাইরাসের আবার অতিশয় আগ্ৰহ কাউকে মন্তব্য সেকশনে কুৎসিত ভাষায় ব‍্যক্তি‌ আক্রমণ করে পৈশাচিক উল্লাস‌‌ও অনুভব করা। আমার ওসবে কোনো স্পৃহা নেই। তার থেকে মনে হয় নিজের পাতায় খাজা লেখা হলেও, তা পোষ্ট করলে কারুর আপত্তি হ‌ওয়া‌র কথা নয়।
     
    পেশায় CA, নেশায় শিকারি, গাইয়ে, আঁকিয়ে, পাশ্চাত্য ও দেশীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে সিক্ত, এক রবীন্দ্র‌সঙ্গীত গায়িকার ভক্ত কাম প্রেমিক কাম আইনত বেডফেলো (মানে সোয়ামী), পুরাতনী‌তে দক্ষ, কবিতা‌রসিক, সাহিত্য ও সিনেমা বোদ্ধা, চিঠি লেখায় তুখোড় এবং সর্বোপরি এক বাজারসফল লেখকের উদ্দেশে এক অনুরাগী‌নী কাল্পনিক পাঠিকা‌র চিঠি পড়ে হৃদয় আমার একদা উদ্বেলিত হয়েছিল। এখন সেই চিঠিটা‌ই কিছুটা স্বকৃত ভার্সনে উপস্থাপনা করতে ইচ্ছে হচ্ছে :
     
    “দশ ঘন্টা অফিসে খেলা, মাসে দশ বারো দিন দিল্লি মুম্বাই‌তে গিয়ে শিকার করাই তো যথেষ্ট সময় ও পরিশ্রমসাপেক্ষ ব‍্যাপার! তার মধ‍্যে গান‌ই বা গড়েন কখন, ছবি‌ই বা গুনগুন করেন কখন, কম পাঠক এবং অধিকাংশ পাঠিকাকে এতো চিঠিই বা আঁকেন কীভাবে? আবার যখন তখন অরণ‍্যে গিয়ে প্রকৃতি রমণ তো আছেই। তার সাথে এ্যাতো গল্প, উপন‍্যাস ছেনি হাতুড়ি দিয়ে খোদা‌ইই বা করেন কখন? কীভাবে? বুঝিনা বাবা। আপনার দিন কী ২৪ এর বদলে ৭২ ঘন্টায় হয়?”
    দেখেছো কাণ্ড! লেখকের কলমে আঁকা এক তুলতুলে মরমী পাঠিকার বিবরণ পড়ে মনশ্চক্ষে তার প্রেমে গদগদ হয়ে তার প্রিয় লেখককে লেখা একটা মুচমুচে রোমান্টিক চিঠির  বকলমি ভার্সন করতে গিয়ে মোর ক্রিয়া‌পদগুলি গিয়াছে সব গুলিয়া। 
     
      আসলে সেটা ছিল একটি Epistolary Novel বা পত্র-উপন্যাস। আমাকর্তৃক এখানে উপস্থাপিত পাঠিকার মূল চিঠিটি একটু বেশিই অতিরঞ্জিত হয়ে গেছে। তবে তা মূল ভাব অক্ষুন্ন রেখে কিঞ্চিৎ পানরস সৃষ্টি‌তে। চিঠিটির সারার্থ ছিল - ব‍্যতিক্রম ব‍্যতীত অধিকাংশ সফল মানুষের একটি Common Factor থাকে - তা হোলো অফুরন্ত সৃষ্টির তাগিদ ফলে অবিশ্বাস্য Time Management. যেমন রবীন্দ্রনাথ - যিনি চন্দ্রিলের মতে এক দানবীয় প্রতিভা।
     
      কী? এখানে আবার পানরস এলো কীভাবে? একটু রোসুন কত্তা। রোসো মানে একটু দাঁড়াও বা অপেক্ষা করো। তো কত্তাকে তো আর তুমি বলা যায় না তাই, আসুন, বসুন এর মতো সন্ধিমতে রোসো+উন=রোসুন।  কী? এ আবার কোন দেশী ভাষা? বলছি।
     
     অতীতের এক কবিকলমে করিনু, এসেছিনু ইত‍্যাদি দেখে মোরা‌ও গুনগুনিয়েছিনু -  'দিয়ে গেনু বসন্তের এই গান‌'। 
    অথবা:
    সকরুণ বেণু বাজায়ে
    কে যায় বিদেশি নায়ে
    শুনে সে রাগিণীর ছোঁয়া লেগেছিল মোদের‌ও মনে।
    কিংম্বা
    আধেক ঘুমে নয়ন চুমে
    স্বপন দিয়ে যায়
    ভেবে হৃদয়পাতের উপলব্ধিতে হয়েছিনু অভিভূত‌। 
    অবশেষে :
    জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে
    বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে
     
    নীরবে গেয়ে - বহুজনকে কাঁদিয়ে - জীবনের রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে তিনি চলে গেলেন অলখ পানে। সবাই‌কে‌ই একদিন যেতে হয়।
     
    তাই যতদিন আছি, ক্ষমাঘেন্না করে এক বাচাল বুড়োর “রোসুন‌” টুকুন বরদাস্ত করতে পারলে আনন্দ পাবো। হজম না হলে, উল্টে এসব পড়ে IBS এ আক্রান্ত হলে, বরদাস্ত‌র প্রথমার্ধ বাদ দিয়ে বাকিট করে উপশম পাওয়া যেতে পারে - যেটা নিত‍্য প্রাতঃকৃত‍্যের অঙ্গ অর্থাৎ bowel evacuation. তবে এক্ষেত্রে তা মানসিক।
       'পানরস' টা স্ব-উদ্ভাবিত একটা হাঁসজারু। এর প্রভাবের সৌজন্য স্বীকার করছি - তা আসলে বর্তমানে কিছু বঙ্গসুজনের মোবাইলে রোমান হরফে অভিনব উপায়ে বাংলা শব্দ লেখার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে। 
     উদাহরণ:  সংযত = sangjato বা কাঁটা = kaNta. এক্ষণে লক্ষ‍্য করিবার বিষয় হ‌ইলো - ka এবং ta এর মাঝে ক‍্যাপিটাল N টি চন্দ্র‌বিন্দু সূচক, তাই কানটা লিখতে চাইলে তারা লেখে kanta. তবে 'কা তব কান্তা' কীভাবে রোমান হরফে লেখা হবে যাতে পাঠকের কাছে কান্তা ‘কানটা’ হয়ে না পৌঁছায় তা নিয়ে নব‍্য প্রজন্ম ধীমান চর্চায় মগ্নমনস্ক। ধরাতলে বাংলা ভাষা নিয়ে এহেন দুরন্ত দুর্নীতি দেখে অনন্ত‌লোকে ভগ্নহৃদয়ে সুনীতি‌বাবু নিদারুণ রুগ্নবোধ করিতেছেন কিনা জানা নেই।
     
      আর একটা মোক্ষম ঝটকা খেলাম সেদিন। এক ষাটোর্ধ্ব বঙ্গসুজন লিখলেন - Last year in a similar circumstances I lost my Mama. ব‍্যাপার‌টা সিরিয়াস - তাই হৃদয়স্পর্শী সমবেদনা জানাতে ৪২%এ ভর করে  পরিশুদ্ধ বাংলায় ভাববাচ‍্যে লিখলুম  - "মাতৃবিয়োগের অমেয় অভিঘাত অনুমেয়"।  তিনি তৎক্ষণাৎ লিখলেন, "No, no, not my mother but my MAMA, I mean brother of my mother". আদ‍্যন্ত রাণীর ভাষায় লেখা বাক‍্যের অন্তে যে এক পরলোকগত মাতুল বসে ছিলেন তা আমি বুঝতে পারিনি। এ অক্ষমতা অবশ‍্য‌ই অধমের।
     
      অথচ একটি খোদ আমেরিকা‌ন সংস্থা, যারা Open Source Android software এর উদ্ভাবক, তারাও ভারতীয় ভাষা‌র বৈচিত্র্য ও ঋদ্ধ‌তা উপলব্ধি করে Dual Language Mobile Keyboard বিনামূল‍্যে বিতরণ ক‍রেছে - Google Indic Keyboard.  এতে System Language English এর সাথে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালায়লম, গুজরাতী, ওড়িয়া, অসমীয়া, পাঞ্জাবী - এযাবৎ ভারতের এগারোটি আঞ্চলিক ভাষায় লেখা যায়। সংখ্যাটি পরে বাড়তেও পারে।

     
    নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ‍্যোগ। এর জন‍্য আমি গুগলের ডেভেলপমেন্ট টীমের কাছে সবিশেষ কৃতজ্ঞ। কারণ এই কী-বোর্ড আমার মতো বাংলায় বিয়াল্লিশ (%) বঙকে‌ও চলতে ফিরতে চলভাষের পর্দায় মাতৃভাষা‌য় বাচালতা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এর আগে 'অভ্র' বা 'প্রভাত' কী বোর্ড দিয়ে বাংলা লিখতে গিয়ে আমি নাস্তানাবুদ হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে‌ছি। কাগজ কলমে লেখা সর্বদা সম্ভব নয়। তাই মাতৃভাষার থেকেও দুর্বল দক্ষতা নিয়ে‌ রাণী‌র ভাষাতেই সাধ‍্যমতো উড়ন্ত কিছু ভাবনা - মানে wandering thoughts - ধরে রাখতাম।
     
    এবার হয়তো বোঝা গেছে পানরস রহস‍্য। তা আসলে Punরস বা কৌতুক‌রসের এ্যাংলোইন্ডিয়ান কমোডের মতো ইঙ্গবঙ্গ বকচ্ছপ ভার্সন।
     
     পাঠিকার চিঠিতে উল্লেখিত "অরণ‍্যে গিয়ে প্রকৃতি রমণ" আমার সংযোজিত ধ্বনি অলংকার - ছেঁদো পানরস সৃষ্টি‌তে‌ই। তবে আমার সংযোজনের ভাবার্থ কিন্তু অতিরঞ্জন নয় - আদ‍তে সত‍্য। কিরকম? তাহলে লেখকের জবানীতেই শোনা যাক:
     
       "জঙ্গলের জার্ণাল” এ আমি বহুবছর আগে লিখেছিলাম যে, আমার অন্যতম গুরু বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃতি প্রীতির সঙ্গে আমার নিজের প্রকৃতি প্রীতির রকমের তফাৎটা কোথায়! উনি প্রকৃতিকে রােম্যান্টিক ভালবাসা বেসেছেন আর আমি প্রকৃতির সঙ্গে সহবাস করে, তাকে রমণ করে তাকে জেনেছি। I have seen her inside out .
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অন্যান্য | ২২ জানুয়ারি ২০২৪ | ৩৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৮527941
  • পুনশ্চঃ- যে কথা লেখা‌র মধ‍্যে সেদিন বলতে ভুলেছি তা হোলো ….

    গুরুতে কিছু গুরুজনের প্রবণতা দেখেছি হরিদাস পাল বিভাগে প্রকাশিত লেখার শিরোনাম, বানানের সামান্য অসংগতি, বিচ‍্যূতি নিয়ে ফরেনসিক পর্যবেক্ষণের মতো চুলচেরা বিশ্লেষণ সহকারে মন্তব্য করেন। কখনো কারুর বিদেশি স্থান‌নাম নাম নিয়ে‌ও খুঁতখুঁতে‌পনা‌ দেখা যায়। এমন সব সুক্ষ্ম বিচ‍্যূতি‌তে মন্তব্য বুবুভা বিভাগে প্রকাশিত লেখার ক্ষেত্রে মানানসই লাগে। কারণ সেখানে লেখেন মান‍্যতাপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ লেখক। তা সুযোগ‍্য সম্পাদকীয় রিভিউ‌য়ের পর প্রকাশিত হয়। সেগুলি‌র অধিকাংশ পরবর্তীতে গুচ কর্তৃক ব‌ই হিসেবে প্রকাশ হয় ফলে এখানে‌ই যথাসম্ভব সংশোধন হয়ে গেলে ভালো‌। হপা‌তেও অনেক যোগ‍্য লেখক লেখেন। তবে কেবল শিরোনাম, বানান, প্রপার নাউনের ভুল ধরার বদলে লেখার বিষয়বস্তুর ওপর মননশীল পাঠকের সুচিন্তিত মন্তব্য লেখাটির ভ‍্যালু এ্যাডিশন করে, লেখকের সাথে পাঠকরা‌ও ঋদ্ধ হয়। এসবই ওপেন ফোরামে লেখা‌ ও পড়ার আনন্দ এবং প্রাপ্তি।

    রঞ্জন‌বাবুর একটি লেখা‌র কথা‌‌ই ধরা যাক। “হারিয়ে যাওয়া কোলকাতার গল্প”। বাস্তবিক কি কোলকাতা এ্যাটল‍্যান্টিস বা দ্বারকা‌র সিংহভাগের মতো সাগরের তলায় বা পম্পে‌ই‌য়ের মতো আগ্নেয়গিরির লাভায় চাপা পড়ে হারিয়ে গেছে? তা তো নয়। বরং রঞ্জনবাবু যে সময়ের কথা লিখেছেন তার পর লবনহৃদের বিশাল জলাজমি, চারিদিকে অসংখ্য পুকুর ভরিয়ে কোলকাতার তৎকালীন ভূভাগের সাথে যোগ হয়েছে সল্ট লেক উপনগরী ও আরো জমি। 
     
    যেমন কলোনি‌য়াল ভারতে ব্রিটিশ উদ‍্যোগে পশ্চিম উপকূলে সমূদ্রের বহু অংশ রিক্লেম করে সপ্তদ্বীপ সংযোগ করে তৈরী হয়েছে বর্তমান মুম্বাই। বর্তমান মুম্বাইয়ের দক্ষিণ‌তম অংশে জুয়েল অন দ‍্য ক্রাউন নরিম‍্যান পয়েন্টের অনেকটা‌ই উদ্ধার করা হয়েছে সমূদ্র থেকে। তাই সুনামিতে কোনো শহর বা দ্বীপের কিছু অংশ সাগরে ডুবে না গেলে - শহর সচরাচর হারায় না। হারিয়ে যায় সময় - পরিবেশ - মানুষ - সংস্কৃতি। তাই তো বলে হারানো দিনের গান। তাই তো কখনো কবিহৃদয়ের হাহাকারে শোনা যায় হারানো দিনের বেদনা:

         আমার  যে দিন ভেসে গেছে চোখের জলে
         তারি  ছায়া পড়েছে শ্রাবণগগনতলে॥
         সে দিন যে রাগিণী গেছে থেমে,
         অতল বিরহে নেমে  গেছে থেমে,
         আজি  পুবের হাওয়ায় হাওয়ায়   
         হায় হায় হায় রে      
         কাঁপন ভেসে চলে॥


    তাই “হারানো কোলকাতা” কী করে গ্ৰাহ‍্য শব্দ‌বন্ধ হতে পারে তা নিয়ে কোনো কূটকচালি মন্তব্য আমি করিনি। ধরেই নিয়ে‌ছি লেখক কোলকাতার হারিয়ে যাওয়া দিনের গল্প বলেছেন। গুরুর পাতায় কয়েকবার নানা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি  “হারানো কোলকাতার গল্প” গুরুতে পড়া আমার কয়েকটি প্রিয় লেখা‌র একটি। আনন্দের কথা, সেটি গু৯ থেকে এবারের ব‌ই মেলায় ব‌ই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। গল্প বদলে হয়েছে জলছবি - তবে ব‌ইয়ের মলাটে কোলকাতা এখনো হারানোই আছে।
     
    পরিশেষে একটু স্কুল লেভেলের মজা করি, অবশ‍্য উচ্চ‌শ্রেণীর মজা করার ক‍্যালি‌ও আমার নেই।

    একটি গ্ৰামে বটবৃক্ষ‌তলে কয়েকটি বৃদ্ধ খোস গল্পে রত। এক তরুণ পথিক সেথায় এসে শুধোয় - আচ্ছা, এই পথটা কোথায় যাচ্ছে? এক রসিক বুড়ো হেসে বলে, কোথা‌ও যাচ্ছে না তো, আজন্ম‌কাল ধরে দেখছি পথটা এভাবেই পড়ে আছে এখানে। পথ কোথাও যায় বলেও শুনিনিকো, তবে পথিক যায় পথ ধরে, যদি থাকে। না থাকলে বন, বাদাড়, আঁদার, পাঁদার, ঘাট, আঘাটা, বাঁশবনে ডোমকানা হয়ে‌ও নিজেই খুঁজে নেয় দিশা, যদি তার জানা থাকে গন্তব্য‌। নয়তো “আমার এই পথ চলাতে‌ই আনন্দ” বলে আউল বাউলের মতো ঘুরতে থাকে পথে পথে। তা তুমি কোথায় যাবে বাছা? বুড়োর বেমক্কা গুগলিতে তরুণ পথিক হয়ে যায় দিশেহারা।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন