এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  বিতর্ক

  • আকবরী নববর্ষ এবং তারিখ-ই-কাজিয়া

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    বিতর্ক | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৬৪০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৫ জন)

  • বাঙালির নববর্ষ নিয়ে অদ্ভুত কিছু বিতর্ক উত্থাপন করা হয়েছে। কে এই নববর্ষের উদ্গাতা—আকবর, নাকি শশাঙ্ক? এর পুরোটাই চলছে, প্রায় হাওয়ায় হাওয়ায়—হোয়াটস-অ্যাপ প্রচার যেমন হয়। তাই ঝট করে একবার দেখে নেওয়া যাক, আইন-ই-আকবরি-তে এই নিয়ে কী লেখা আছে।

    ১। তারিখ, ক্যালেন্ডার।

    আইন-ই-আকবরির দ্বিতীয় খণ্ডের একদম শুরুতেই সারা পৃথিবীর ক্যালেন্ডার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন আবুল ফজল। খ্রিশ্চান, হিজরি (হিজরা), হিন্দু, চৈনিক, ইহুদি, ইত্যাদি-প্রভৃতি। সৌরবর্ষ এবং চান্দ্রবর্ষ নিয়েও বিস্তারিত এবং ভয়ানক খুঁটিনাটি আলোচনা আছে। সেসময়ের সর্বাধুনিক গণনাপদ্ধতি ছিলে মির্জা উলুগ বেগের—যিনি সৌরবর্ষের মাপকে সেকেন্ডের পর্যায়েও প্রায় নিখুঁত করে মেপে ফেলেছিলেন। তা নিয়েও আলোচনা আছে। যাঁরা জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী, তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন। কিন্তু এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল হিজরি এবং হিন্দু মাপজোক। হিজরি সন—আবুল ফজল লিখেছেন—কৃত্রিম – চান্দ্রবৎসর এবং চান্দ্রমাস অনুযায়ী চলে। তার কী অসুবিধে—যা আমরা সবাই জানি—ফজলও জানতেন এবং লিপিবদ্ধ করেছেন। উল্টোদিকে হিন্দু ক্যালেন্ডার—ফজল লিখেছেন—চলে সৌরবর্ষের মাপে, কিন্তু মাসগুলো চান্দ্রমাস। তাতে হিসেবের সমস্যা হয় প্রচুর। কয়েকবছর অন্তর মাসগুলোকে একটু সরিয়ে আবার ঠিক জায়গায় আনতে হয়। (পদ্ধতিটা অনেকটা এখনকার ‘মল মাস’-এর মতো)।

    এই দুটো পদ্ধতিরই সমস্যা নিয়ে আকবর ওয়াকিবহাল ছিলেন। ফলে তিনি নতুন একটা পদ্ধতি চালু করেন। সেটা সম্পূর্ণ সৌরমাস নির্ভর। সেটারই নাম তারিখ-ই-ইলাহি। ফজল যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘পবিত্র যুগ’ (ইংরিজি অনুবাদে ‘ডিভাইন এরা’) বলে উল্লেখ করেছেন জিনিসটাকে।

    ২। তারিখ-ই-ইলাহি।

    ক। এর শুরুর বছর, আকবরের রাজ্যাভিষেকের বছর। হিজরি ৯৬৩। যদিও জিনিসটা চালু হয় কয়েক বছর পরে। হিজরি ৯৯২।
    খ। জিনিসটা ছিল বিচ্ছিরিরকম ধর্মনিরপেক্ষ। আবুল ফজলের জবানি এরকম: “আকবর হিজরি সন অপছন্দ করতেন। যদিও সেটার খুবই গুরুত্ব ছিল, কিন্তু কিছু স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন মূর্খ লোক ভাবত, যে, ধর্মের সঙ্গে, কালের মাপের অচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে, তাদের জন্য।” (হুবহু অনুবাদ নয়। ইংরিজি অনুবাদে আসলটা পড়তে হলে দ্বিতীয় খণ্ডের ৩০ পাতা দেখুন)।
    গ। নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলেন আমির ফতেউল্লা সিরাজি। তিনি মির্জা উলুগ বেগের আধুনিকতম মাপজোকের উপর ভিত্তি করে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। শুরুর বছর ছিল আকবরের সিংহাসনারোহণের বছর।
    ঘ। এই নতুন মাপজোকে কিছু কি আমূল বদলে দেওয়া হয়? না। পুরোনো মাসের নানাপ্রকার নাম, একই রাখা হয়। কেবল মাপজোকটা চান্দ্রবৎসর বা চান্দ্রমাস থেকে পুরোপুরি সৌরবৎসর এবং সৌরমাসে নিয়ে চলে আসা হয়। হিসেব মেলানোর জন্য নানা মাসে দিনের সংখ্যা বদলে দেওয়া হয়। আকবর নতুন কোনো মাস বা নাম চালু করেননি। শুধু পরিমাপের পদ্ধতিটা বদলায়। তারিখ-ই-ইলাহি এইটুকুই।
    (এই পুরোটাই পাবেন আইন-ই-আকবরির ইংরিজি অনুবাদে দ্বিতীয় খণ্ডের ৩০ নম্বর পাতায়, যা নিচে দেওয়া হল)।




    ৩। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ - এইসব মাস কোথা থেকে এল?

    আগেই বলা হয়েছে, আকবর কোনো নতুন মাস চালু করেননি। এই মাসগুলো—ফার্সি বা খ্রিস্টান মাসের মতোই—বহুযুগ আগে থেকেই ছিল। সেটা জানার জন্য আইন-ই-আকবরি পড়ার দরকার পড়ে না। কালিদাস এর অনেক আগেই লিখে গেছেন, ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’। আকবর বা সিরাজি যা করেন, তা হল, মাপজোকগুলো বদলে দেন। নাম অপরিবর্তিত থাকে, কেবল গণনাপদ্ধতি বদলায়। এই নতুন গণনাপদ্ধতিতে কোন পদ্ধতির কোন মাসের সঙ্গে কোন মাস পাশাপাশি বসবে—তার বিস্তারিত হিসেবও তাঁরা করেন। ফজল, এর একটা সংক্ষিপ্ত সারণী রেখেছেন, আইন-ই-আকবরি তে। সেটা নিচে দেওয়া হল। লক্ষ্য করবেন, এই সারণীতে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সবই আছে। ফলে, তারিখ-ই-ইলাহি একটি নতুন গণনাপদ্ধতি। নতুন নামকরণ-পদ্ধতি নয়। এই জন্যই, তারিখ-ই-ইলাহির কোনো মাসের নাম আলাদা করে টিকে নেই। কিন্তু নববর্ষ-সমেত গণণাপদ্ধতিটা এখনও হুবহু চালু।




    ৪। তারিখ-ই-ইলাহি - প্রশাসনে কীভাবে চালু করা হয়েছিল, এবং কীভাবে ব্যবহার করা হত?

    এই পুরো ব্যাপারটাই রাজ্যশাসন, রাজস্ব-আদায়ের সঙ্গে জুড়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় প্রশাসনে কোতোয়ালের দায়িত্ব সম্পর্কে যে ফরমান জারি করা হয়, তা এই এরকম: নববর্ষ এবং অন্য উৎসবের দিন, কোতোয়াল সেই উৎসব পালন করবেন, বাকিদের পালন করতে উৎসাহ দেবেন। হিন্দু এবং ফার্সি পঞ্জিকারদের ইলাহি-যুগের পদ্ধতি মেনে নিতে নির্দেশ দেবেন। এবং হিন্দুদের ক্ষেত্রে মাসের নাম অপরিবর্তিত থাকবে।

    এটাই, আকবরের সেই সমন্বয়ের নীতি। কাউকে কোনো নাম বদলাতে বলা হল না। কেবল গণনাপদ্ধতি বদলাতে বলা হল। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ, ইলাহি-যুগের আগে থেকে আজ অবধি আছে। এবং আকবরের বদলে দেওয়া গণনাপদ্ধতিও তার সঙ্গে মিশে গেছে অবলীলায়। চালু হয়েছে নতুন নববর্ষ। কোনো ধর্মযুদ্ধ ছাড়াই।
    (আইন-ই-আকবরি, দ্বিতীয় খণ্ড - পাতা ৪৮)




    ৪। শুরুর বছর।

    ইলাহি শুরুর বছর, নিঃসন্দেহে আকবরের রাজ্যাভিষেকের বছর। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, যে, কোনো নতুন নামকরণ আলাদা করে এই পদ্ধতিতে চালু করার তেমন চেষ্টা হয়নি। আবুল ফজল, তাঁর লেখাতে দু-ভাবেই এই নতুন গণনাপদ্ধতিকে বর্ণনা দিয়েছেন। কোথাও লিখেছেন, “পবিত্র যুগের ৪০তম বর্ষে”। কোথাও লিখেছেন, “পবিত্র যুগের ষষ্ঠ বর্ষ, যা চান্দ্রবৎসর ৯৬৮-র সঙ্গে চলে”। ফলে, আইন-ই-আকবরির সাক্ষ্য অনুযায়ী, ইলাহি-৬ বা নবচন্দ্রবর্ষ-৯৬৮, এই দু-রকমভাবেই বস্তুটা বলা যায়। আন্দাজ করা যায়, যেহেতু ফার্সি-মতে হিজরির সঙ্গে পরবর্তী সৌরবৎসর যোগ করে দিলে লোকের বুঝতে সুবিধে হয়, সেটা করা হয়ে থাকতেই পারে। আবার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠকে সেই হিসেবে নিয়ে নেওয়া হয়েছে, কঠিন ফারসি নাম বাদ দিয়ে। এরকম হয়ে থাকতেই পারে। হলে সেটা আকবরের ধর্মসমন্বয়ের নীতির সঙ্গে চমৎকার খাপও খায়। কিন্তু স্রেফ আইন-ই-আকবরি থেকে এটা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। অন্যান্য ফারসি নথিপত্র ঘাঁটা দরকার।

    ৫। উপসংহার।

    তাহলে কী কী জানা যায় আইন-ই-আকবরি থেকে?
    ক। ইলাহি গণনাপদ্ধতি, সারা ভারতে চালু করেন আকবর। সেটা আজও চালু।
    খ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ইত্যাদি নাম—আকবর চালু করেননি। বহু আগে থেকেই ছিল।
    গ। নববর্ষ উৎসব (নওরোজ) আকবরই চালু করেন।
    ঘ। ইলাহি এবং হিজরির যোগফল—সঙ্গে হিন্দু মাস—এই খিচুড়ি ক্যালেন্ডার আকবরের সময় থেকে চালু হওয়া খুবই সম্ভব। কিন্তু আকবরি থেকে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।

    কিন্তু যেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব, সেটা হল, ১৪ই এপ্রিল নাগাদ যে নববর্ষ উদযাপন, সেটা ভারতবর্ষে চালু করেন আকবরই। তিনি যে উদ্‌যাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে তো দেখাই যাচ্ছে। তার আগে, এই উদযাপন সম্ভব ছিল না। কারণ কোনো ক্যালেন্ডারেই বছরটা ওই জায়গায় শুরু হত না।




    পুনশ্চ: যদিও এখানে অপ্রাসঙ্গিক, তবুও বলে রাখা উচিত, যে, ভারতের ভূগোল, হিন্দু দর্শন-শাস্ত্র-ক্যালেন্ডার-রীতিনীতি নিয়ে যে বিপুল অনুসন্ধান আকবরের সময় হয়েছিল—যার কিয়দংশ লিপিবদ্ধ আছে আইন-ই-আকবরিতে—তা দেখলে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। সতীদাহ থেকে সাংখ্য, সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর-কলি ভিত্তিক গণনা থেকে মহাভারত – পুরোনো ভারতের বিস্তৃত গাইডবুক হিসেবে কাজ করতে পারে এই গ্রন্থ। এই মাপের অনুসন্ধান, নিঃসন্দেহে এই হোয়াটস্যাপ জমানার থেকে অনেকগুণ এগিয়ে ছিল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • বিতর্ক | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৬৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বক্তব্য চাই  | 204.186.240.234 | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:০২518688
  • এবার শশাঙ্কের বক্তব্যটাও কেও যদি জানাতে পারে, তবে বরাবর হয়!
  • এলেবেলে | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৪০518692
  • সৈকতের দেওয়া দ্বিতীয় ছবি থেকে এটা স্পষ্ট যে আকবরের চালু করা তারিখ-ই-ইলাহির প্রথম মাস ফরওরদিন যা এক নম্বর কলামের চৈত্রের সঙ্গে মিলছে। এ থেকে দ্বিতীয় যে সিদ্ধান্তটিতে আসা যায়, তা হল - ১৪ই এপ্রিল নাগাদ যে নববর্ষ উদযাপন, সেটা ভারতবর্ষে চালু করেন আকবরই - এই বাক্যটা ভুল। চৈত্র মাস সচরাচর শেষ হয় ওই দিনে, শুরু হয় না।
     
    আবুল ফজলেরই আকবরনামা থেকে জানা যায়, তারিখ-ই-ইলাহি প্রবর্তিত হয় হিজরি রবি-আল-আওয়ালের নবম দিন অর্থাৎ ১৫৮৪ সালের ২১ মার্চ, ১৪ এপ্রিল নয়। প্রসঙ্গত, এই ২১ মার্চ হল ডে অফ ভার্নাল ইকুইনক্স বা মহাবিষুব দিবস।
  • এলেবেলে | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৪৩518693
  • প্রকৃতপক্ষে ১৭ নম্বর কলাম থেকে বোঝা যাচ্ছে এই নতুন ক্যালেন্ডারের মাসগুলির নাম ছিল যথাক্রমে ফরওরদিন, অর্দিবিহিষ্ট, খুরদাদ, তির, অমুরদাদ, শারেবার, মিহ্‌র, আবান, আজর, দয়, বাহ্‌মন ও ইফন্দারমজ্।
  • ? | 118.179.121.122 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১০518723
  • বাংলা বছর এখন ১৪৪০বঙ্গাব্দ  কিন্তু হিজরি ১৪৪৪ 
     
    বাংলা বছরের সূচনা কবে থেকে ?  ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী  শুরুর সাল ৫৬০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ---কেন ?কি ছিল ওই সময়ে ?  ভারতের অন্য্ কোনো ক্যালেন্ডারের সাথে এই শুরুর সাল মেলে ? নাকি   বঙ্গাব্দ  বাংলার নিজস্ব ?
  • ? | 118.179.121.122 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১২518724
  • শশাঙ্কের রাজত্ব কাল 590 CE - 625 CE
  • ষষ্ঠ পাণ্ডব | 103.98.204.123 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৭518726
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করি। এই ব্যাপারে অন্য পাড়ায় লিখেছিলাম। সেটার লিঙ্ক দিয়ে গেলাম। কারো আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ২১:০৬518731
  • প্রয়োজনীয় লেখা অবশ্যই। 
    ষষ্ঠ পাণ্ডবের উল্লিখিত লেখা আর তাতে করা মন্তব্য মিলিয়ে এক অসাধারণ সংগ্রহ ছিল সেটি। আজকের লেখকরা আশা করি লিঙ্ক ধরে পড়ে আসার সময় পাবেন। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ২২:১২518735
  • ষষ্ঠ পাণ্ডবের পাতা থেকে ঘুরে এলাম, দারুন আলোচনা। খুবই ভালো লাগল। এর মধ্যে বাংলা সনকে বৈজ্ঞানিক ভাবে হিসেব করার যে দাবির কথা পড়লাম, সেটাও যুক্তিযুক্ত মনে হল। একজন লিখেছেন, এখনকার হিসেব অনুযায়ী 4000 বছর পর বাংলা নববর্ষ জুন মাসে গিয়ে পড়বে। যদি তখন বাঙালি থাকে তো বাঙালি, এলিয়েনরা আসে তো এলিয়েন, যারাই থাকুক না কেন, তাদের সুবিধার্থে বাংলা পঞ্জিকার হিসেবটা জ্যোতির্বিজ্ঞানী দের মত নিয়েই করা ভালো। 
     
    তবে এই কিছুদিন আগে খবরে পড়ছিলাম, সল্টলেক এ কোন এক কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফ থেকে নাকি বৈজ্ঞানিক উপায়ে বাংলা সাল হিসেব করে ক্যালেন্ডার বার করা হয়েছে। খবরটা খুঁজে দেখতে হবে।
  • Subhadeep Ghosh | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৫৫518778
  • অসামান্য লেখা। জানাছিল না এরকমভাবে, সমৃদ্ধ হলাম। সৈকতদাকে অনেক ধন্যবাদ।
  • স্বপ্নেন্দু | 2409:4088:be8c:fe16:11dc:2f50:85f4:71ba | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:১৯518800
  • খুবই জরুরী লেখা।
    আচ্ছা আইন ই আকবরি তে নববর্ষের শুরুয়াৎ তো চৈত্র মাসে। শকাব্দেও তো তাই। কিন্তু বাংলা, উড়িয়া বা মৈথিলী বা কেরলেও নববর্ষ তো বৈশাখে। এটি কেন হল? এই নববর্ষ গুলির সাথে হিন্দু দেবদেবীর এত নিবিড়  যোগ বিশেষত বাংলায় শিবের গাজন বা কেরলের বিশু তে কলিযুগ বা বিষ্ণুর যোগ, উড়িষায় হনুমানের জন্মদিনের উৎসব - এসব জুড়ল কি কাকতালীয় ভাবে পরবর্তী সময়ে? 
     
    ফসলি সন, হালখাতা ইত্যাদি যোগসূত্র গুলো আকবরের পক্ষেই যায়। তবু জানতে চাই তৎকালীন হিন্দু রাজদরবারগুলোয় খাজনা আদায়ের বিষয়ে তথ্য সম্বলিত কোনো লেখা পাওয়া যায় কি?
     
    দেশজোড়া এসময়ের সকল নববর্ষগুলিই কি আকবরী গনণা মেনে চলে? সেখানকার অভিধানে কি আছে?
     
  • m | 2405:8100:8000:5ca1::2c8:a6f1 | ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৪৪518804
  • আকবরই তাহলে হিজরি সালের নাম বঙ্গাব্দ রাখেন?
  • সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৪৭518850
  • আইন-ই-আকবরী আর আকবরনামার বাইরে আমার কোনো ফার্সি টেক্সট পড়া নেই। ফলে অনধিকারচর্চা হয়ে যাবে, তবু যেটুকু জানি লিখি। 
    আইন-ই-আকবরীর মাসের যে সারণী দিয়েছি, সবকটাই সেই পদ্ধতির  প্রথম মাস থেকে শুরু। যেমন ক্রিশ্চান পদ্ধতি শুরু জানুয়ারি থেকে। হিন্দু পদ্ধতি শুরু চৈত্র থেকে। আকবরী পদ্ধতি শুরু ফরারদিন-ইলাহী থেকে। কিন্তু একটার সঙ্গে আরেকটার কী সম্পর্ক আবুল ফজল লেখেননি।  অর্থাৎ নববর্ষটা ঠিক কবে, খ্রিষ্টাব্দ বা হিজরির কবে থেকে সেটা কোত্থাও উল্লেখ করা নেই। 
    এর একটা কারণ হতে পারে, ওটা তখন সাধারণ জ্ঞান। ফলে দেবার দরকার মনে হয়নি। আরেকটা কারণ হতে পারে, যে, নববর্ষ নানা জায়গায় নানা সময়ে পালিত হত। সেটা সত্যিই হত, কিন্তু সেটাই কারণ কিনা জানা নেই।  আইন-ই-আকবরীতে যা আছে, তা থেকে নানারকম অনুমান হতে পারে। 
    ১। উনি ফার্সি মাসের নাম নিয়েছিলেন, ফার্সি নববর্ষও নিয়েছিলেন। কিন্তু উনি নাম হুবহু নেননি। অন্যান্য বদলও করেছিলেন। 
    ২। উনি সিংহাসনে ওঠার দিন থেকে গণনা শুরু করেছিলেন। এও স্পষ্ট করে লেখা নেই। 
    ৩। উলুগ বেগের গণনা-পদ্ধতি নিয়েছিলেন, সেটা লেখা আছে। উলুগ বেগের গণনার প্রথম মাস আবার মহরম। হিজরি মতে।
    ৪। নববর্ষ যে যার মতো করত। এটা আকবরের বহুত্ববাদী নীতির সঙ্গে যায়। কিন্তু সেটাও স্পষ্ট করে লেখা নেই। শুধু লেখা আছে, তিনি নববর্ষ উৎসব চালু করেন। 
     
    এর কোনটা, নিশ্চিত করে জানার জন্য অন্য সূত্র পড়তে হবে। কিন্তু ফার্সি বইয়ে আমার বিদ্যে ঢুঢু। তবুও দু-চাট্টে জিনিস যা নজরে পড়েছে বলে দিই। 
    ১। আকবরনামার অনুবাদক একটা ফুটনোট দিয়েছেন। 'গিয়াস-উল-লোঘাত', একটি ফার্সি ইতিহাস গ্রন্থ, তাতে লেখা আছে, যে, আকবর ফসলি-সন এবং বাঙালি সন, দুটোই বজায় রাখেন, কিন্তু নেড়েচেড়ে দেন। দুটোরই নববর্ষ অক্ষত রাখেন। বাঙালি সন শুরু হয় বৈশাখ মানে, আর ফসলি সন চালু হয় শরতে। সেটা আবার আকবরের রাজ্যাভিষেকের বছরের মহরমের দিন। বাঙালি বছরে সেটা হয়নি। ফলে ৩ এবং ৪ এই দুটো অনুমানই ঠিক বলে মনে হয়। 
    ২। মহরমের প্রসঙ্গটা আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, উনি আরেকটা কাজ করেছিলেন। তাঁর রাজ্যাভিষেকের বছর থেকে গণনা শুরু করলেও, সেটা শূন্যতম বছর ছিলনা। হিজরি সন অনুযায়ী সেটা ছিল ৯৬৩ তম বছর। সেই অনুযায়ী ফসলি সন থেকে উনি ঘ্যাঁচ করে কিছু বছর কেটে দেন। অর্থাৎ, বঙ্গাব্দ এবং ফসলি সন এখনও একই বছর, কিন্তু নববর্ষ আলাদা। অর্থাৎ, বঙ্গাব্দ গণনা আকবরেরই অবদান। প্রসঙ্গত আমি এই বইটি পড়িনি। ফলে সেকথা উল্লেখও করিনি। তবে এই বইয়ের কথা পাবেন, আকবরনামার ফুটনোটে। দ্বিতীয় খণ্ডের ১৭ নম্বর পাতায়। 
    ৩। এইটা লিখব বলে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে উইলসনের বুক-অফ-ইন্ডিয়ান-এরাতে একটা চমৎকার উদ্ধৃতি চোখে পড়ল। আব্দুল কাদিরের। তিনি মোদ্দা যা বলেছিলেন, তা হল, আকবর ১০০০ বছরে মহম্মদের যুগ শেষ হয়ে যাবে ভেবেছিলেন। তাঁর চালু করা সবই ছিল নতুন উৎসব। শুক্কুরবারের প্রার্থনাটা তুলে দেননি, স্রেফ কিছু বুড়ো-হাবড়া এখনও পালন করে বলে। 
     
    ফলে সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল। মানে আসল টেক্সট না পড়ে আমি যা বুঝেছিঃ
    ১। মধ্যযুগ-ফুগ ফালতু কথা। আকবর-জমানা, যাকে বলে, ভয়াবহ লিবারাল এবং বহুত্ববাদী ছিল।
    ২। বঙ্গাব্দ এবং ফসলি সনের গণনা তিনিই চালু করেছিলেন। নববর্ষ উৎসবও। কিন্তু কোন মাসে নববর্ষ এটা ঠিক করে দেননি। অর্থাৎ "১৪৩০ এর পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন" - এর মধ্যে ১৪৩০ এবং নববর্ষ-উদযাপনটা আকবরের দান। বৈশাখটা নয়। ওটা আগেই ছিল।  "হিন্দু ক্যালেন্ডার" এর সঙ্গে "বাঙালি ক্যালেন্ডার" এর গণনার তফাত ছিল। 
     
    এগুলো মূল লেখায় দিইনি, কারণ, এই বইগুলো আমি পড়িনি। ভেরিফাই করতে হলে আপনারা পড়তে পারেন। 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন