এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আজকের ভয়াল হত্যারহস্য

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ নভেম্বর ২০২২ | ৫৩১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • এই ইন্টারনেট হয়েছে এক আপদ বিশেষ। শ্রদ্ধা ওয়ালকরের হত্যারহস্যের তথাকথিত সমাধান এক দিনও হয়েছে কিনা সন্দেহ, এর মধ্যেই নেট খুলে চাররকম ব্যাখ্যা দেখে ফেললাম।

    ১। লাভ জিহাদ। অ্যাদ্দিন শুনেছিলাম, হিন্দুর মেয়েকে 'তুলে নিয়ে' মুসলমান বানিয়ে ফেললে লাভ-জিহাদ হয়। এখন শুনলাম খুনও আছে প্যাকেজে। 
    ২। নিচু জাতের মেয়েকে উচ্চ জাতের খুন। মুসলমান হোক আর যাইহোক, ছেলেটার পদবী তো পুনাওয়ালা। অতএব তারা উচ্চঘর, কংসরাজের বংশধর। 
    ৩। ডেটিং অ্যাপের ফল বা পুঁজিবাদী অবক্ষয়। এখন নাকি পুরুষ এবং মহিলারা ডেট করে একে অপরকে খুন করছেন। যখন ডেটিং অ্যাপ ছিলনা, তখন কি তাহলে খুন হতনা, না এখন অনার কিলিং হয়না? কে জানে। 
    ৪। নারীবিদ্বেষ এবং 'টক্সিক মাসকুলিনিটি'। এইটা তো কমন থিম। তাহলে কি মহিলারা পার্টনারকে খুন করলে টক্সিক ফেমিনিটি এবং পুংবিদ্বেষ হয়? নিশ্চয়ই না। রাজনৈতিক সঠিকত্বে আটকে যাবে।

    এর উপরে আছে, অনলাইন কাগজদের রিপোর্টিং। কী তার জোর। প্রথমে বুকের উপর বসে গলা টিপে খুন। তারপর পঁয়ত্রিশ টুকরো করে মৃতদেহ জঙ্গলে ছড়িয়ে দেওয়া। তারপর মৃতের মাথা কীকরে ফ্রিজের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল, কখন ঢোকানো হয়েছিল, কখন বার করা হত, তার জলজ্যান্ত বিবরণ। এবং সবশেষে ফাঁসি-হবে-না-হবেনা, এই নিয়ে 'বিশেষজ্ঞ'দের মতামত। এখনও কোন দড়িতে ঝোলালে ভালো হবে, সেই নিয়ে কোনো ফাঁসুড়ের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি, সেই রক্ষে। কিন্তু বাকিটাই বা কম কী। ভাবুন একবার, ঘরে প্রেমিকা এলে ফ্রিজ থেকে পুরোনো প্রেমিকার কাটা মাথা বার করে সেখানে কোল্ড ড্রিংক রাখা হচ্ছে, প্রেমিকা চলে গেলে কোল্ড ড্রিংক সরিয়ে আবার কাটা মাথা। কী সিনেমাটিক। এর মধ্যে কোল্ড ড্রিংকটা অবশ্য আমি বানালাম, কিন্তু ব্যাপারটা ওইরকমই। কোথায় একটা এও পড়লাম, ১৮ দিন ধরে, ৩৫ টুকরো, রোজ একটা করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পুরো স্বপনকুমারীয় পাটিগণিত। এসব  কীকরে জানা গেল কে জানে। নির্ঘাত পুলিশ 'সূত্র' বলেছে। যদি তাইই হয়, তারা কি চার্জশিটে এইসব রাখবে? দেখে নিয়ে ছাপলে হতনা? 
    এ নয়, যে, এই 'খুন'কে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতেই হবে। কিন্তু কেসটা কী বুঝতে, জানতে তো একটু সময় লাগবে। এ তো ম্যাজিক নয়। এবং এর পরে যেটা হবে, নির্ঘাত, টিভির সাংবাদিকরা ফ্রিজে ডামি মুন্ডু রেখে ঢুকিয়ে-বার-করে দেখাবেন। 'বিশেষজ্ঞ'রা টিভি এবং ইউটিউব চ্যানেলে বসে, বা ফেবু কিংবা ওয়েব-পোর্টালে ওই ১-২-৩-৪ নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করবেন। সবই এইসব 'সূত্র'এর উপর দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ হাওয়ায়। এইসব 'সূত্র' ছাড়ুন, এইসব হাই প্রোফাইল কেসে পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞদের ছড়ানোর ইতিহাস তো কম না। আরুশি থেকে তরুণ তেজপাল, পুলিশের কোনো সরকারি অভিযোগই আদালতে দাঁড়ায়নি। এবার শিনা বোরা কেসে ইন্দ্রাণী মুখার্জি ছাড়া পেয়ে গেলেই ষোলকলা পূর্ণ হয়। এর কোনোটাতেই এই স্পেকটাকল-তৈরি এবং সিরিয়ালের মতো চড়া দাগের প্রশ্নহীন ন্যারেটিভ তৈরির কোনো খামতি ছিলনা।
    পুলিশ এবং বৈদ্যুতিন মিডিয়ার ব্যাপারটা বোঝা যায়। 'লোরেন্সকগের অপহরণ' বলে একটা নরউইজিয়ান সিরিজ দেখলাম, সত্য ঘটনা অবলম্বনে, সেখানেও ওই একই কারবার। বৈদ্যুতিন মিডিয়া, পুলিশ মিলে সেসসেশনালিজমের চক্কর খুলেছে। পুলিশের উপর চাপ থাকে তাড়াতাড়ি সমাধান করার। মিডিয়ার উপর চাপ থাকে খবর বিক্রি করার। কিন্তু আমরা যারা ক্রিটিকাল হবার দাবী রাখি, নানা ন্যারেটিভকে প্রশ্ন করি, তারা করছি টা কী? 'কয়ে আকার কয়ে আকার কাউয়া, পয়ে হ্রস্বই তয়ে আকার বাবা' বলে মুখস্থবিদ্যা আওড়ানোই কি এই ইন্টারনেট যুগের ভবিতব্য? সাধে কি আর ইন্টারনেটকে আপদবিশেষ বলা হয়? 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন