এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • চিন্তন শিবিরে: NIA-UAPA, শাহীমোদী;

    Bhattacharjyo Debjit লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০১ নভেম্বর ২০২২ | ৯৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • পাড়ায় দোকান NiA’র আর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য UAPA: এমনটাই দীর্ঘদিন ধরে অলিখিত ভাবে চলতে চলতে আজ স্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে যেন;

    দেশের দারিদ্র্যসীমা ও বেকারত্ব যতোই বেড়েছে ততোই মানুষ জলের মত পরিস্কার দেখেছে শাসকদলের আঞ্চলিক নেতৃত্বের ভালোমুখোষের পেছনে লুকানো দুর্নীতিক শ্রেণীচরিত্র। আর সেই দুর্নীতিকে হাত করে কেন্দ্রীয় সংস্থা গুলির বাড়বাড়ন্ত, বিচারের নামে টালবাহানা; সন্ত্রাস দমনের নামে, প্রতিবাদী শ্রমজীবী মানুষকে হাজত বন্দী করার কৌশলগুলো। যার মধ্যে 'ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’র বহর অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে বর্তমানে দেশের সমস্ত রাজ্যেই। যা খানিক আলাদা ইডি এবং সিবিআই, বাকি দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সির তুলনায়। কেন্দ্রের আরএসএস বিজেপি সরকার খোলাখুলি ছেড়ে দিয়েছে গরুর মতন এই সংস্থাকে, ঘাস খেতে। এর মধ্যে দিয়ে কেন্দ্র সরকার তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা এবং দেশী বিদেশী বৃহৎ পুঁজিপতিদের লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হয়ে উঠছে, মাত্র।

    হরিয়ানার, সুরজকুন্ড থেকে চলতে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকদের বৈঠকে(চিন্তন শিবির) শ্রীমান অমিত শাহ প্রথমে NiA'র সমস্ত রাজ্যে খোলাখুলি ছাড়, অফিস খোলার কথা বললেন এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমনের প্রসঙ্গ তুলে কালা আইন UAPA কে আরো শক্তিশালী করার জাহিরা দিলেন। তিনি বললেন, “আমাদের তিনটি ‘সি’ কে গুরুত্ব দিতে হবে- কোঅপারেশন(সমবায়), কোঅর্ডিনেশন (সমন্বয়) এবং কোলাবারেশন (সহযোগিতায়)”। পরবর্তীকালে শ্রীমান নরেন্দ্র মোদী এসে স্বাভাবিক ভাবেই তাতে সংযোজন করলেন 'এক দেশ এক পুলিশ’ এবং “মাওবাদী” দমনের প্রসঙ্গ। আর তারপাশে জুড়লেন 'দেশের স্বার্থ’র মতন আবেগীয় জাতীয়তাবাদী পোশাকি কোডটি; কিন্তু NIA ও UAPA দিয়ে বল প্রয়োগের দ্বারা কী আদৌ সম্ভব দেশের স্বার্থে কোনকিছু করা? নাকি এই দিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে অন্য এক ভয়াবহ পরিবেশ! তৈরি হচ্ছে ভুখা দেশে নয়া সন্ত্রাসী শিবির?

    বিরোধী শিবির গুলির কেবলমাত্র নিজেদের 'আঁতে ঘা’ না লাগা পর্যন্ত ফোঁস করা ছেড়ে দেওয়াতে, এবার আরো সচেষ্ট কেন্দ্রের আরএসএস বিজেপি সরকার তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা পূরণে। উল্টে বলা ভালো 'আঁতে ঘা' দিয়েই বিরোধীদের আজ আরো বড় হিন্দুত্ব বীর ও দেশী বিদেশী বৃহৎ পুঁজিপতির আরো বড়ো স্বার্থবাহী শিবির বানিয়ে তুলেছে, খোদ বিজেপিই। যার নজির আমরা পাই বর্তমানে বহু ক্ষেত্রেই; কিন্তু এসব তো তাত্ত্বিক বুদ্ধিজীবী মার্কা কচকচানি। এই দিয়ে সাধারণ মানুষের কাম কী! এত কিছুর পরেও দিন ফুরালে থেকে যায় কেবল পেটের প্রশ্ন। NIA ও UAPA আরো শক্তিশালী করে, তার গতি বাড়ালে- দেশের স্বার্থ পূরণ হবে কতখানি! শ্রীমান মোদী সাহেবের ভাষায় তা দেশের স্বার্থে লেগেছে ও লাগবে কতখানি?

    NIA: এবছরে NIA হাতে কেস সংখ্যা আপাতত রয়েছে ৪৬৯টি; বর্তমানে কর্মরত ৬৪৯ জন। ২০২১-২২ বার্ষিক বাজেট ছিল, ১৮২ কোটি।

    1) Case No: RC- 01/2022/NIA/DlI
    Case title: Explosion took place at 2nd floor court complex in Ludhiana.
    Organization: x
    Present status: Under Investigation

    2) Case No: RC- 02/2022/NIA/DLI
    Case title: illegal holding of Indian passport by Letchumanan Mary Franciska
    Organization: x
    Present status: Under Investigation

    3) Case No: RC- 03/2022/NIA/DLI
    Case title: Bomb Explosion at PS, khejuri, Purba Medinipur, west bengal.
    Present status: under Investigation

    4) Case No: RC- 04/2022/NIA/DLI
    Case title: Bomb Explosion, Naihati, North 24 parganas, West Bengal.
    Organization: x
    Present status: under Investigation

    5) Case No: RC- 05/2022/NIA/DLI
    Case title: FICN & Gold at IGI airport, New Delhi.
    Organization: x
    Present status: under Investigation

    6) Case No: RC- 07/2022/NIA/DLI
    Case title: Low intensity blast occurred in police Bazar are of shillong city.
    Organization: x
    Present status: under Investigation

    7) Case No: 9/2022/NIA/DLI
    Case title: Recovery of explosive by 17 Assam rifles at PS tipa, District siaha, Mizoram.
    Organization: x
    Present status: under Investigation

    8) Case No: RC- 11/2022/NIA/DLI
    Case title: 04 illegal immigrants in MP are propagating the ideology of JMB.
    Organization: JMB
    Present status: under Investigation

    9) Case No: RC- 19/2022/NIA/DLI
    Case title: Information received by local police about promoting activities of CPI(Maoist).
    Organization: CPI(Maoist)
    Present status: under Investigation

    10) Case No: RC- 25/2022/NIA/DLI
    Case title: Information was received about murder of one Naresh Bhokta.
    Organization: x
    Present status: under Investigation

    11) Case No: RC- 27/2022/NIA/DLI
    Case title: Brutal killing of a suprime tailor in udaipur.
    Present status: under Investigation

    12) Case No: RC- 32/2022/NIA/DLI
    Case title: Person intercepted by police who was involved in Anti Indian Activities.
    Organization: x
    Present status: under Investigation

    এই হলো এই বছরের ১২ টি কেস। সূত্রমতে, এই কেস গুলির ফাইল রেজিষ্টারের পরে আর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি।এই রকম রয়েছে আরো ১০০ টি উপর রেজিস্টার্ড কেস। যেগুলি তদন্ত প্রক্রিয়া ধরেই বহু বিচারপতি NIA ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কে ভর্ৎসনা করেছিলেন, বহুবার যাবৎ। গত পাঁচ বছরে NIA ৯৫%র বেশি কেস ই অমিমাংসিত হয়ে পড়ে রয়েছে। যদিও NIA মুখেমুখে সাড়ে ৯৩% কেসের অভিযুক্তদের দোষী সাবস্ত্য করে দিলেও, আইনি প্রক্রিয়ায় তা বিচারালয় মেনে নেয়নি, প্রমাণের অভাবে।

    এছাড়াও, গত ৯ ই সেপ্টেম্বরে NIA এক কাঠ মিস্তিরির বাড়িতে রেইড করে ২০০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধারের কেসে তালিবান ও আইসিস যোগ পেলে- সৌগত রায় সহ বহু বিরোধী দলনেতা নেত্রী সরব হন; বলেন, আমরা জানি NIA কত ভুয়ো কেস রুজু করে থাকে! NIA আইন টি তৈরি হয় ২০০৮ সালে, এই আইনকে দেশের মানবাধিকার সংগঠন গুলি তুলনা করে থাকেন, হিটলারের “গেস্টাপো” বাহিনী সঙ্গে।

    UAPA: এটি ব্রিটিশের রাওলাট আইনের নব্য সংস্করণ!
    লাগু ও আইন সংস্কার হয়:
    1) The Unlawful Activitiest (prevention) Amendment Act, 1969 (20 of 1969)
    2) The criminal law (Amendment)Act, 1972(31 of 1972)
    3) The Delegated legislation provisions (Amendment) Act, 1986(4 of 1986)
    4) The Unlawful Activities (prevention) Amendment Act, 2004(29 of 2004)
    5) The Unlawful Activitiest (prevention) Amendment Act, 2008 (35 of 2008)
    6) The Unlawful Activities (prevention) Amendment Act, 2019(28 of 2019)

    অর্থাৎ, কংগ্রেস আমলে এই আইন লাগু হওয়ার পর থেকে শেষে বিজেপির আমলে ২০১৯ সালে শেষ সংস্কার হয়।

    UAPA আইন কম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হারের জন্য সমালোচিত, যা প্রায় ২%। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, এই আইনের অধীনে ৫০২৭টি মামলা নথিভুক্ত করা হয় এবং সেই ক্ষেত্রে ২৪১৩৪ জন অভিযুক্ত সাব্যস্ত হয়। ২৪১৩৪ জনের মধ্যে ২১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং ৩৮৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে, আপাতত। বাকিদের কেস এখনও আন্ডার ট্রায়াল। অর্থাৎ, ২০১৬-২০২০ সালে, UAPA-এর অধীনে গ্রেফতার হওয়াদের ৯৭.৫% বিচারের অপেক্ষায় কারাগারে বন্দী, সেই ২০১৬ সাল দিয়ে, এখনও।

    জুলাই ২০১৯ সালে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) সংশোধনী বিল, ২০১৯ পেশ করার সময় বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল যে- “বিলটি ভারতে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তের ক্ষমতা দেবে”। বিরোধীরা পাল্টা দাবি করে, “এই বিলে অপব্যবহার রোধে কোনও বিধান নেই”। বিশেষ করে, বিচারের মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে একজন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত করার ক্ষমতার সমালোচনা করা হয়েছিল। UAPA- আইন অনুযায়ী “সন্ত্রাসবাদী” হিসেবে আইডেন্টিফাই করার সংজ্ঞা “হুমকি দিতে পছন্দ” এবং “সন্ত্রাস আক্রমণ করার সম্ভাবনা” এগুলিকে সমালোচকরা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং পুলিশ দ্বারা অপব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত বলে মনে করেন কারণ নির্দোষ প্রমাণ করার দায়িত্ব কেবলই বন্দী থাকা অভিযুক্তের উপর। যেমন- এ রাজ্যে প্রথম uapa বন্দী সিপিআইএম আমলে গৌর চক্রবর্তী। যেখানে তিনি বিচার চলাকালীন ৭ বছর কারাগারে কাটিয়েছিলেন শুধুমাত্র সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার জন্য। ফলত, বিচার চলাকালীন সময়ের কারাদণ্ডই শাস্তির সমান, কোন পার্থক্য নেই, এই আইনের মধ্যে। তা পুরোপুরি স্পষ্ট।

    ২০২০ সালে, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদকরা বলেছেন, যে UAPA ২০১৯ এর বিধানগুলি, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির বেশ কয়েকটি নিবন্ধকে লঙ্ঘন করে।

    আইনজীবী রঙ্গিত পোদ্দার অক্সফোর্ড হিউম্যান রাইটস হাবে লিখেছেন- UAPA ২০১৯ আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেই আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই ব্যক্তিদের সন্ত্রাসী হিসাবে মনোনীত করা সম্ভব করে। তিনি লিখেছেন, “সংশোধনী বিল বা মূল আইন সন্ত্রাসবাদের একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করে না।‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে চিহ্নিত হওয়া গুরুতর পরিণতি বহন করে একজন মানুষের জন্য, যেমন সামাজিক বয়কট বা চাকরি হারানো।“ অর্থাৎ বোঝা যায়, এক্সিকিউটিভ দ্বারা এই ধরনের লেবেলিং ভারতে মব লিঞ্চিং এর যেকোন ঘটনা ঘটাতেই পারে। তিনি এটিকে একটি “বর্ণময় আইন যা কার্যনির্বাহী/ক্ষমতার দ্বারা অপব্যবহারের সম্ভাবনা বহন করে”- বলে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এই আইনের সাংবিধানিকতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত।

    আসলে UAPA আইনটি, “জনসাধারণের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার আড়ালে জনগণের নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার গুলি খর্ব করতেই বরাবর সিদ্ধহস্ত। যা ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে প্রণীত আইনগুলির প্রতিধ্বনি দেয়। যে আইন কে ধরে প্রতিটি রাজনৈতিক দল বরাবর নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে আনুমানিক ১৫০ বন্দী এই আইনের অধীনে। যাদের মধ্যে ৭২ জন মাওবাদী বন্দী থেকে রাজনৈতিক বন্দীদের অধিকার গুলিও কেড়ে নিয়েছেন, রাজ্যের বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। মাওবাদী রাজনৈতিক বন্দী চিকিৎসার অভাবে ভুগছেন হাজতের ভেতরেই। যাদের মধ্যে ডায়লোসিস পেসেন্ট বুদ্ধদেব মাহাতো অন্যতম।

    ২৫ জুলাই ২০২১-এ, বিচারপতি আফতাব আলম, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি “গণতন্ত্র, ভিন্নমত এবং কঠোর আইনের উপর আলোচনা” শিরোনামে একটি ওয়েবমিনার আলোচনা সভায় বলেন – “আমাদের সংবিধান এর বইয়ে কি UAPA এবং রাষ্ট্রদ্রোহের স্থান আছে?” আলোচনায়, তিনি ইউএপিএকে একটি “কঠোর আইন” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটিই ইউএপিএ যা বিনা বিচারে বয়স্ক স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু ঘটায়।
    বস্তুত: স্ট্যান স্বামী একজন সমাজকর্মী ছিলেন যাকে ২০১৮ সালের ভীমা কোরেগাঁও সহিংসতায় এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) সাথে যোগসূত্রে অভিযুক্ত ভূমিকার জন্য ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং পরে তিনি চিকিৎসার অভাবে কারাগারে প্রয়াত হন।
    বিচারপতি আলম বলেছেন, UAPA এর বাস্তবসম্মত দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার ২%। তিনি আরও বলেছিলেন, এই আইনটি এমন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে যেখানে মামলা পরবর্তীকালে খারিজ হয়ে যাবে তবে অভিযুক্তদের ৮ থেকে ১২ বছরের জন্য কারাবাস ততদিনে হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে মামলা দাঁড়াবে না কিন্তু সেইসব মানুষেরা যারা বিনা বিচারে অ্যারেস্ট হবেন তারা ভুগবেন ও ভুগছেন এবং তিনি শেষ করেন এই বলে যে, এই ধরনের ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়াটিই শাস্তিস্বরূপ হয়ে যায়।

    যদিও আইনের অপব্যবহার নিয়ে ক্রমাগত বিতর্ক হয়ে গেলেও, অপব্যবহার করা বন্ধ হয়নি এই আইনের উল্টে আরো বেড়েছে। দেশের প্রতিটি রাজ্যেই। বর্তমানে বিনা বিচারে বন্দী হাজার হাজার শ্রমজীবী পরিবারের সন্তানেরা। যাদের আর কেস টানার জোর ক্ষমতা নেই, তা বলাই বাহুল্য।
    ২০ জানুয়ারী ২০২২-এ, বিবিসি ইউএপিএ-কে একটি কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন বলে অভিহিত করে। তাদের চ্যানেলে রিপোর্ট করে, অনেক বিক্ষোভকারী এবং সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে বা UAPA-এর আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। UAPA অভিযুক্তদের জামিন পাওয়া কঠিন করে তুলেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের “ভেতরকার অসন্তোষ” দমনের নামে গনতন্ত্রের কণ্ঠরোধ ক্রমাগত হয়ে চলেছে এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নামিয়ে আনতে UAPA আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে।

    সুতরাং, এর থেকে চারটি বিষয় স্পষ্ট হয়:
    ১) এই দুটি আইন ই দেশের মানুষের বিপক্ষে কাজ করেছে সবসময় জুড়ে।
    ২) এই দুই আইনের দ্বারাই প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের শ্রেণীর স্বার্থ পূরণে সবসময় ই সিদ্ধহস্ত, বিরোধী কণ্ঠস্বর পুরোপুরি রোধ করে গনতন্ত্র কে লুণ্ঠিত করেছে।
    ৩) এই দুই আইন, দেশ কে আরো বিপথে চালিত করে, যা শক্তিশালী হলে দেশের মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যা কোনদিন মেটবার নয়। দেশের মানুষের ভুখা পেট কোনদিনও ভরাবার নয়।
    ৪) উল্টে এই দুই আইন দিয়ে, দেশের শ্রমজীবী মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে আরো শুষে নিয়ে, এক ভয়ঙ্কর সামাজিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, শাসকশ্রেণী তাদের দুই এজেন্ডা পূরণ করে চলেছে; এক, হিন্দুত্বের ও দুই, দেশী বিদেশী বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থ পূরণের।

    সাম্প্রতিককালে, পিএফআই এর কর্মীদের বন্দী এবং নিষিদ্ধকরণ নিয়ে বিভিন্ন ‘গণতান্ত্রিক’ বাম মহল গুলির দুই তিন-দিন ব্যাপি প্রতিবাদ দেখা গেলেও, দেখা যায়নি NIA ও UAPA প্রসঙ্গে বাকি ক্ষেত্র গুলি নিয়ে মতামত টুকুও। বাকি মিথ্যে মামলা গুলি ধরে; এমত অবস্থায় কেন্দ্রের আরএসএস বিজেপি সরকার NIA ও UAPA কে আরো শক্তিশালী করবার ডাক দিয়েছে, প্রতিটি রাজ্যে, বিরোধীদের পরোক্ষ মদতে; যা ভীষণ ই তাৎপর্যপূর্ন। আগামী ২০২৪ এর নির্বাচনে বিজেপি সরকার কোন মতে বিদায় নিলেও ভারতরাষ্ট্রের তল্পিবাহক-বাহিকাদের এই চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা ইঙ্গিত দেয় রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদী চরিত্র কাঠামো'টির। এখন দেখবার বিষয়, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মানুষজন কী বলেন এই নিয়ে এবং ক্রমাগত বেকারত্ব, দারিদ্র্যসীমার নিচে নামতে থাকা দেশের ভুখা পেট গুলি কতদিন এই খেয়ে জীবনযাপন করতে পারে, কষ্টেসৃষ্টে মুখ বুঝে। কতদিন ভালো আর মন্দ অংক কষে শাসকের নেতৃত্বে জমি ছিনতাই চলে কৃষকের! শাসকশ্রেণী আসলে জনগন কে এভাবে বন্দী করে চলেছে চারিদিক থেকে নাকি জনগণ ঘিরে ফেলেছে শাসকশ্রেণীর প্রতিটা স্তম্ভকে; এর উত্তর অবশ্যই মিলবে ভবিষ্যতেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০১ নভেম্বর ২০২২ | ৯৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • santosh banerjee | ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৫৬513399
  • যে দলটি এই আইন গুলো প্রবর্তন করেছে তারা এখন ভারত কে জুড়তে সচেষ্ট। যে দল বৃটিশ সরকার কে তৈল মর্দন করত আজ মসনদে গদীয়ান তাদের দ্বারা এই আইন জীবন্ত, ফুটন্ত, দুরন্ত !! আর যে দল না ঘাটকা না পারকা , অর্থাৎ তৃণভোজী আমিষ দল তারা তো আরো উৎসাহিত এই আইনের ব্যাবহারে।তাহলে, কে এর বিরোধী?? কয়েন তো দাদা?????
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন