এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • ঘোষিত যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনগণের যুদ্ধ চলছে: 

    Bhattacharjyo Debjit লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ৪০৯ বার পঠিত
  • ২৫শে মার্চ বকুনি চলছে অমিত শাহ’র। মোটা মোটা পাহারাদার নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছত্তিশগড়ে ঢুকে বকুনি দিয়ে এলেন। গোল্লা গোল্লা চোখ পাকিয়ে উনি বললেন, মাওবাদী’রা ব্যাকফুটে। শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে। আর কিছু করার ক্ষমতা নেই ওদের। এর সাথে ছত্তিশগড়ে’র আসছে বিধানসভা ভোট’কে মাথায় রেখে আরো বললেন, যদি ছত্তিশগড়ে আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে আরো তাড়াতাড়ি ‘উন্নয়ন' চাই তাহলে আগামী ভোটে সেখান থেকে কংগ্রেস সরকার কে সরিয়ে বিজেপি সরকার’কে ক্ষমতায় আনতে হবে। তারসাথে উনি এও বললেন, কেন্দ্র সরকার মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা গুলির জন্যে ছত্তিশগড় সরকার’কে আরো আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, হেলিকপ্টার, ড্রোন ইত্যাদি ইত্যাদি পাঠাবেন।

    এরপর দেখা গেল ৭’ই এপ্রিল –ছত্তিশগড়ে সুকমা-বিজাপুর জেলার আদিবাসী’রা একত্রিত হয়ে একটি মাদুর বিছিয়ে আকাশ পথে ব্যবহারিত ‘ড্রোন বোমা'র ছিন্ন ভিন্ন যন্ত্রাংশ তাতে রেখে বসে রয়েছেন। তাঁদের মুখ থেকে স্লোগান শোনা গেলো – অমিত শাহ মুর্দাবাদ। ভূপেশ বাঘেল সরকার মুর্দাবাদ। ভারত সরকার ড্রোন হামলা অবিলম্বে বন্ধ করো। বলে রাখা ভালো, এর আগেও এ বছরের শুরুতে ওই অঞ্চল গুলিতে আকাশ পথে ড্রোনের মাধ্যমে বোমা হামলা হয়েছে সেখানকার আদিবাসী মানুষজনের উপর। এই নিয়ে ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট চার’বার আকাশপথে ড্রোনের সাহায্যে বোমা হামলা চালিয়েছে নিজের দেশের জনগণের’ই উপর ভারতরাষ্ট্র। আর উন্নয়ন? সে হলো- রাস্তা আর সেনা ক্যাম্প। ক্যাম্প খুলতে রাস্তার প্রয়োজন! 

    ১৮ই এপ্রিল কংগ্রেসের বিধায়ক বিক্রম মান্ডভি সভা শেষে ফেরার পথে ‘গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ'(PLGA) এর একটি ‘স্মল অ্যাকশন স্কোয়াড'র আক্রমনের মুখে পড়লেন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হলেন, একজন সিআরপিএফ জওয়ান। এর আগে ভরা বাজারে খুন দুই বিজেপি নেতা। যাদের উপর গ্রামবাসীদের বহুতদিনের অভিযোগ, পুলিশের সাথে মিলে কাজ করার। গ্রামের ভেতরে সেনাবাহিনীদের ক্যাম্প খুলতে সাহায্য করার। এবং নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর চোখ রাঙিয়ে চলার। এছাড়াও চার দশক ধরে বিপ্লবী কমিউনিস্ট(মাওবাদী)অধ্যুষিত এলাকা গুলিতে গোলাগুলির লড়াই চলছে প্রতিনিয়ত। গত চল্লিশ বছর ধরে কেন্দ্র-রাজ্য সরকার বলে আসছেন, “নকশালবাদ ব্যাকফুটে। শেষ নিঃশ্বাস ফেলছে এখন।"

    গত ২৬শে এপ্রিল – সিআরপিএফ এবং DRG(ডিস্ট্রিক রিজার্ভ গার্ড) একটি ৫০ জনের টিম তল্লাশি অভিযানে যায়, দান্তেওয়াড়া’র আহরানপুর থানা লাগোয়া একটি গ্রামে। সেখানে গিয়ে তারা ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে নকশাল’দের সমন্ধে জিজ্ঞাসা করে এবং গ্রামবাসীদের মুখ দিয়ে কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে শেষে সেই টিম দুজন গ্রামবাসী’কে ‘মাওবাদী' সন্দেহে তুলে নিয়ে যেতে থাকে তাদের সেনা ক্যাম্পে। যাওয়ার পথে ঘটলো এমন ঘটনা! প্রাণ হারালো দশজন DRG’সহ একজন গাড়িচালক(সাধারণ জনগন নয়, গোপন সৈনিক বাহিনী টিমের)। ইতিমধ্যে প্রতিরোধকারী’ গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ-বাহিনীকে ‘সংগ্রামী অভিনন্দন’ জানিয়ে যার দায় নিয়েছে, সেখানকার বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি’ তথা জানতানা সরকারের -‘দারভা ডিভিশন কমিটি‘।

    আশ্চর্য্যজনক ভাবে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে আদিবাসী’দের উপর ড্রোন হামলার ঘটনা  উঠে না এলেও ,এই খবর উঠে এলো প্রতিটা চ্যানেলে। আর আমরা সেখান থেকে জানতে পারলাম, এই ঘটনা কমিউনিস্ট বিপ্লবী’রা ঘটিয়েছে সেখানকার মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়েই। 

    কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যের কংগ্রেস সরকার বহুদিন ধরেই বলে আসছে, মাওবাদী’দের অঞ্চল শেষ। মাওবাদীরা শেষের পথে। তেমন’ই দান্তেওয়াড়া আহরণপুরের এই অঞ্চলে কিছুদিন আগেই সরকার ‘মাওবাদী মুক্ত‘ অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছিল। আহরণপুরের ওই বড় রাস্তার থেকে দুই কিলোমিটার আগেই রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি এবং ছয় কিলোমিটার পরেই রয়েছে, সেনা ক্যাম্প। এই রাস্তা বানাতে সরকার’কে এর আগেও প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বিপ্লবী কমিউনিস্ট’দের শুরু থেকেই অভিযোগ, এই রাস্তা বানানোই হয়েছে গ্রামে-গ্রামে সেনাবাহিনীর যাতায়াত, এবং সেনা ক্যাম্প খোলবার স্বার্থে। এই রাস্তা বানাবার গোটা সময় ধরেই সেখানকার আশেপাশে সাধারণ মানুষের গণ-আন্দোলন চলেছে; রাস্তা বানানোর বিরুদ্ধে। এই বড় রাস্তা তৈরি হওয়ার পরেই সেখানকার আশেপাশে অঞ্চলে সেনাক্যাম্প গজিয়ে উঠেছে। যা নিয়ে বর্তমানে তীব্র গণ-আন্দোলন চলছে গোটা অঞ্চল জুড়ে সেনাক্যাম্প গুলি হটানোর দাবিতে।

    সেদিন ওখানে আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উৎসব’কে ঘিরে চলছিল রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চাঁদা তোলা। ফেরার পথে সিআরপিএফ ও DRG টিমে’র গাড়িকে আগের মোড়ে দাঁড় করায় সেখানকার জনতা। তারপর সিআরপিএফ-এর গাড়ি দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের সেই মোড় ছেড়ে চলে যায় গ্রামবাসীরা। তার আগে আহরণপুরের ওই বড় রাস্তা থেকে গেছে –দুজন গ্রামবাসী’কে অপহরণ করে একটি ফিরতি পিকআপ ভ্যান সিআরপিএফ-এর। তারও আগে গেছে সাধারণ মানুষ’কে নিয়ে যাওয়া দুটি গাড়ি। যাতে কোনরকম ব্লাস্ট হয়নি। কারণ, একটাই সাধারণ জনগণের উপস্থিতি ছিলো সেখানে। তারপর DRG’র এই গাড়ির উপরেই হামলা। ঘটলো ৪০ থেকে ৫০ কিলোর IED বিস্ফোরণ। রাস্তা জুড়ে বিশাল বড় গর্ত। তৈরি হয়েছে আশেপাশে ফাটল। যার থেকে বস্তার পুলিশের অনুমান –ওই চাঁদা তোলবার বিষয়টা নকশাল’দের প্ল্যান ছিল। যাতে ওঁরা বুঝতে পারে কোন গাড়িতে কারা যাচ্ছে। এবং ওখান থেকেই কোন গাড়িতে ব্লাস্ট হবে তার সিগন্যাল দিয়েছিল আমজনতা। অতএব এর থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট; এক, বিপ্লবী কমিউনিস্ট’দের সাধারণ জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ-দায়বদ্ধতা। এবং দুই, সাধারণ জনগণের বিপ্লবী কমিউনিস্ট’দের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস-ভরসা। কিন্তু এর সাথে সাথে আরো একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে খুচখুচ করছে। ‘District Reserve Guard’ মানে এই DRG-ফোর্স তবে কারা? এদের উপরেই কেনো আক্রমন?

    ২০০৮ সালে এই ফোর্স তৈরি করে কেন্দ্র-রাজ্য সরকার মিলেমিশে। এই ফোর্স মূলত ‘গেরিলা ওয়ারফেয়ার‘-এর কৌশলগত পার্ট ‘হিট এন্ড রান‘ এবং আক্রমণাত্মক(শত্রু ধাওয়া করে মেরে ঘাঁটি অঞ্চল বাড়ানো)পার্ট’কে কাউন্টার করে বানানো। এই ফোর্স রয়েছে অধিকাংশ আগের আত্মসমর্পিত “মাওবাদী" এবং সেখানকার কিছু যুবক। যারা জঙ্গলের গোড়া গোড়া চেনে। যাদের বিপ্লবী যুদ্ধ এবং বিপ্লবী গেরিলা যুদ্ধের ভেতরের কৌশলগত ধ্যানধারণা রয়েছে। এই ফোর্স তৈরি করা হয় সালোয়া জুডুমের সময় বস্তারে। সেসময় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বেধড়ক প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিপ্লবী কমিউনিস্ট’রা। যখন সেই সন্ত্রাস কে উপেক্ষা করেই বাড়তে থাকে ‘জানতনা সরকারে’র জোর জনগণের মধ্যে। সুতরাং, বীর ভারতরাষ্ট্র না পেরে সেইসময় দাঁড়িয়ে ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা‘ তোলবার নীতি নেয় তখন থেকে। লড়িয়ে দিতে থাকে গ্রামের আদিবাসী’দের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের।

    এই ফোর্স-এ খুবই স্বল্পমূল্যে এবং ভয় দেখিয়ে ও দেশপ্রেমের উগ্র জিগির তুলে ঢোকানো হয় সেখানকার যুবকদের। যা নিয়েও বহু সময় এই ফোর্সের জওয়ান ও তাঁদের পরিবারকে আন্দোলন করতে দেখা গেছে ওই অঞ্চলগুলোতে। তাছাড়াও, এই ফোর্সের বিরুদ্ধে সবসময় জুড়েই সাধারণ গ্রামবাসীদের তীব্র প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে। আদিবাসী মহিলা’দের ধর্ষণ, আদিবাসী’দের ঘর লুট, জায়গা-জমি লুটের মতন অভিযোগ রয়েছে DRG ফোর্সের জওয়ান’দের বিরুদ্ধে। যে কারণের ফলেই বিপ্লবী কমিউনিস্ট’দের আরো রাগ এই ফোর্সের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে তাঁরা বহুবার বিবৃতিও জারি করেছে। গ্রামের মধ্যে এই ফোর্সের সবথেকে বেশি উৎপাত শুরু হয়, এই সময়; মানে বনাঞ্চলের পাতাঝরার মরশুমে। ফেবরুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত। আর এইসময়তে’ই চলে বিপ্লবী গেরিলা যুদ্ধের কৌশলগত আক্রমণাত্মক পার্ট, ‘ট্যাকটিক্যাল কাউন্টার অফেন্সিভ ক্যামপেনিং‘ বা TCOC। যার দরুন গোটা সময় জুড়েই ওই অঞ্চলগুলোতে একের পর এক তীব্র গণআন্দোলন-গণঅ্যাকশন সংগঠিত হয়ে এসেছে ধারাবাহিক ভাবে। এ সময় বিপ্লবী'রা নিজেদের ঘাঁটি-মুক্তাঞ্চলের বিস্তার করতে থাকে।

    বস্তুত: বেতন ও সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার দাবিতে কেবল DRG ফোর্সের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এমনটা নয়। এই অসন্তোষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিটা নিচু স্তরের কর্মী'দের মধ্যেই দেখা দিয়েছে, দিচ্ছে বারেবারে। চার বছরে চুক্তি ভিত্তিক স্কিম, অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে গত বছরের ঘটে যাওয়া ঘটনা যার মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ এবং তার থেকেও বেশি দুঃখদায়ক বিষয় সরকার তাঁদের সমস্যায় খেয়াল টুকু না দিয়েই তাঁদের কেউ দেশদ্রোহী কিংবা মাওবাদী দাগিয়ে কালা আইনে(UAPA-Sedition) হাজতে পুরেছে। এর থেকেই ধারণা পাওয়া যায় সরকার বাহাদুরের আর্মি কিংবা জওয়ান প্রেম সম্পর্কের। এই প্রকল্প নিয়ে এক প্রাক্তন সেনা জওয়ানের পুত্র তথা প্রশিক্ষণরত ছাত্রের কথা – “এই প্রকল্পে যাওয়া উচিৎ নয় অন্তত দেশের স্বার্থে। আগে বেচনদার সরকার এই প্রকল্প বাতিল করবে তারপর সবার সেনাবাহিনীতে যাওয়া উচিৎ হবে।" এই প্রকল্প থেকে চার বছর বাদে সরকার যে ৭৫% কে ছাঁটাই করবে, তাঁদের থেকে ১০% কে CAPF ও সিআরপিএফ এ সুযোগ দেওয়া হবে। যাঁদের মাসিক মাহিনা হবে বাকিদের থেকে কম। সরকারের চুক্তি অনুযায়ী একটা সময় পরে তাঁরা সামাজিক সুরক্ষা পাবে। অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, সরকার বাহাদুর বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জিগির তুলে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ লড়িয়ে নিজেরা চারিদিক থেকে ফায়দা নিতে চাইছে। মডার্ন ওয়ারফেয়ার অনুযায়ী আধুনিক এবং লাইসেন্স প্রাপ্ত ভাড়াটে সৈন্য তৈরির মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লাগাবার আকাঙ্খায় মশগুল হয়েই এসব বাহিনী’র সৃষ্টি করছে। কাজের নামে নিত্যনতুন স্কিম আনছে। যার মধ্যে বর্তমানে এই ‘ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড' ও পড়ছে। এসব নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই ‘জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা' অজিত দোভাল মহাশয় সরাসরি বলেছিলেন – নাগরিক সমাজ’ই নতুন “যুদ্ধ ক্ষেত্র”। ভারতরাষ্ট্র কে নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে।

    এ যুদ্ধ ভারত সরকার শুধু দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে করেছে এমনটা নয়। দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজির গোষ্ঠীগুলির স্বার্থে জল-জঙ্গল-জমিন লুটতে আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে কেবল বোমা-বারুদ এর ধোঁয়া উড়াচ্ছে এমনটাও নয়। ভারত সরকার আক্রমনকারী বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলির মদতপুষ্ট এদেশের টাটা, বিড়লা – আম্বানি, আদানি, মতন বৃহৎ পুঁজিপতি’দের হাতে দেশের অস্ত্র ভান্ডার গুলিও একে একে তুলে দিয়েছে। বলাই বাহুল্য যার মধ্যে সরকারের আয়ত্বায় থাকা অস্ত্রপ্রস্তুতকারি সংস্থাগুলিতে ১০০% বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া অন্যতম। তাছাড়াও ‘ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি’তে জায়েন্ট ভেঞ্চারে মাধ্যমে অংশ নিয়েছে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দালাল পুঁজির বৃহৎ গোষ্ঠীগুলিও। যেমন- মহিন্দ্রা ডিফেন্স সিস্টেম এবং এয়ারবেসের জায়েন্ট ভেঞ্চারের হেলিকপ্টার তৈরির বরাদ্দ। এবং মার্কিং সংস্থা বোয়িং- এর ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য হেলিকপ্টার তৈরির চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়াও উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে আরএসএস-বিজেপি সরকার মোট ১০.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময় ১৫টি চুক্তি করেছে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলির অস্ত্র-প্রস্তুতকারক সংস্থা গুলির সাথে। অথচ এরই মাঝেই কাঁচি পড়েছে সেনাদের মাসিক মাহিনা, অবসর কালীন ভাতা, সামাজিক-পারিবারিক সুযোগ সুবিধাগুলির উপর। অবনতি ঘটেছে সেনাদের জীবনমানের। তলানিতে ঠেকেছে তাদের পরিবারগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। কেবল বেড়েছে দালাল পুঁজির স্বার্থে সেনাদের উপর শোষণ। উচুঁস্তরের অফিসারদের নিচু স্তরের সেনাদের উপর শাসন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী যা নিয়েই নিচুস্তরের সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। তাহলে এত কিছুর পরেও ছাত্র-যুব’রা সেনাবাহিনী-আধাসামরিক বাহিনী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র গুলিতে যাবে কেন? এর মধ্যে দিয়ে দেশসেবা দেশের ছাত্রযুবরা করবে কিভাবে? এতো বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলিকে সেবা করতে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে! 
     
    গত ২৬শে জানুয়ারি মাওবাদী হামলায় নিহত DRG জাওয়ানদের মৃতদেহ ঢুকতে দেয়নি গ্রামবাসীরা গ্রামের মধ্যে। গ্রামবাসীরা তাদের কে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। এই হামলায় নিহত জয়রাম পোডিয়াম নামে এক আত্মসমর্পিত মাওবাদী “স্ত্রী” কে দেখা যাচ্ছে রীতিমত ভিক্ষা চাইতে সরকারের কাছে। ২০১৭ সালে আরেক আত্মসমর্পিত মাওবাদীর “স্ত্রী” গিয়ে মৃত ‘স্বামী’র চিতায় শুয়ে পড়ছে এবং চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে – “আমাকেও জ্বালিয়ে দাও! এবার আমাকে দেখবে কে?” আর রাজ্য- কেন্দ্রের বীর পালোয়ান সরকার বাহাদুরের দলবল সেসব জল ঝরা চোখ গুলোর দিকে না তাকিয়ে, তাঁদের দেখাশোনা নিয়ে একটি বাক্য খরচ না করেই এই যুদ্ধের চিতায় আরো ঘি ঢালতে চাইছে। বলছে, কারোর মৃত্যু ব্যর্থ যাবেনা। ওই অঞ্চলগুলিতে আরো জোরদার আক্রমণ নামানো হবে। যার নমুনা আমরা পাচ্ছি আজ হাড়েহাড়ে। অথচ এই সরকার ক্ষমতায় আসবার পরেই বলেছিল – আদিবাসীদের সমস্ত সমস্যার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুরাহা করতে মাওবাদীদের সাথে আলোচনায় বসবে। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে; ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের নামে সেনা ক্যাম্প, আকাশবোমা আর গরম-গরম বকুনি ফ্রী’তে দিয়েছে। যার দরুনই আজ এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। সেখানকার জনগণের বিপুল জনসমর্থনে। যার প্রধান উদাহরণ হলো – সরকারের দলবলের উপর দীর্ঘ দিন ধরে এত মাওবাদী হামলার পরেও জনগণের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে আন্দোলনে না নামা। এবং বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে রাষ্ট্র বিরোধী একের পর এক সু-সংগঠিত গণআন্দোলন এবং গণঅ্যাকশন বেড়ে চলা। অবশ্য যারা নিজেদের সেনাবল এবং তাদের পরিবারের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে না, তারা দেশের সাধারণ জনগণের ভবিষ্যত্ সুনিশ্চিত করবেই বা কী করে!

    ২০১৭ সাল থেকেই কেন্দ্র সরকার রাজ্যগুলির সাথে পরামর্শ কষে মাওবাদী দমনের নামে ‘অপারেশন সমাধান’ ও পরের ধাপে ‘অপারেশন প্রহার’ চালিয়ে আসছে সামাজিককর্মী-মানবাধিকারকর্মী'দের উপরে। সন্ত্রাসবাদ খতমের নামে একের পর এক ভুয়ো এনকাউন্টার সংগঠিত করছে সংখ্যালঘু জাতি-সম্প্রদায়ের মানুষের উপরে। দেশের মানুষের শোচনীয় আর্থিক অবস্থা, দিন দিন কমতে থাকা ক্রয়ক্ষমতা এবং আদানি-আম্বানি বাড়তে থাকা সম্পত্তি ঢাকতে -জয় শ্রী রাম ও ভারত মাতা কী জয়’ মতন উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী স্লোগান তুলে একের পর এক সন্ত্রাস সংগঠিত করে চলেছে। আর যারা এসবের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের পথ বেছে নিচ্ছে কিংবা গলার স্বর তুলেছে তাঁদের’ই মাওবাদী কিংবা সন্ত্রাসবাদী দেগে কালা আইনে হাজতে পুড়ে সমাজ এক ভয়-ভীতির দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি করতে সবসময় উঠে পড়ে লেগে আছে। ঠিক সেই সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে সুদূর ছত্তিশগড়ের আদিবাসী-গ্রামে বিপ্লবী কমিউনিস্ট’দের নেতৃত্বে ঘটতে থাকা রাষ্ট্র বিরোধী একের পর এক গণ-আন্দোলন আজ সারা দেশের -সংখ্যাগুরু শোষিত-নিপীড়িত, খেটেখাওয়া মানুষের মনেই ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এবং হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী সমস্ত লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। 

    গত ২৬শে এপ্রিলে ঘটে যাওয়া ঘটনা যুদ্ধবাজ অমিত শাহ’র বকুনি ও জনগণের বিরুদ্ধে সৃষ্টি করা ঘোষিত যুদ্ধ ভেদ করে বীর সরকার বাহাদুর’দের কপালে গিয়ে বিঁধেছে। রাজনৈতিক ভাবে তাঁদের তীব্র ব্যর্থতা এবং জনগণের প্রতি তাদের উদাসীনতা আরো একবার সবার সামনে তুলে ধরে। প্রমাণ করে -ফাঁপা কলসীর আওয়াজ বেশি’ই হয় সবসময়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ | ৪০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন