এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দুয়ারে মাস্টার আর হিজাব

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৬৯৪ বার পঠিত
  • আসাম অনেক দূর।
    যাই নি কখনো …
    আসানসোল গেছি। 
    ইমাম সাহেবের রক্ত বুকে চামড়া গুটিয়ে ইউরিয়া মাখাতে দেখেছি।
    এখন শুনছি ইউরিয়া ভালো না। ঝাল খুব। ফেনা ওঠে বেশি। কাজ করার ইচ্ছে কমে তাতে।
    তা ভালো। আমি আবার কম বুঝি। কেউ বলে মাস্টার বয়স বাড়ছে,  কেউ আবার আড়ালে আবডালে গান্ডু। তা বলুক। আমি চোখে কালা, কানে কাফের। পারফেক্ট কম্বিনেশন। সরকারের দেওয়া সব আছে আমার। বউ, বাচ্চা, মাস পয়লা, সও ও ব… 
    মাস্টার বলে নাম ধাম আর টুকটাক গেঁয়ো ইমেজ। স্কুল পাড়ার গেঁয়ো মুরুব্বিরা মানে খুব। 
    এটুকুই…

    কচিকাঁচা গুলো কয়েকদিন ধরেই আমাদের মরচে লাগা নীল সাদার ফ্যাকাসে বিল্ডিং টার বাইরে। ভিড় করে। দেখতে পেলেই অমায়িক হাসি, 
    - ' সার, বেঞ্চে বসবো না আমরা, ছোট কিলাস এ ভূঁয়ে বসি বসি ভাল্লাগেনা যে '

    ছোটগুলো বড্ড প্রিয় আমার। আসলে ছেলে ছোট বেশ। মাত্র ছয়ের কোটায়। সেদিন বলছিল মোবাইল স্ট্যান্ড না হলে নাকি অনলাইনে মাথা কাটে। কিনবো কিনবো করেও কেনা হয় নি। ছেলে ছেড়ে স্কুলে এলে 'ভূঁয়ে' বসা ছেলেমেয়েগুলোকেই ছেলের মত লাগে। ওদেরও মোবাইল স্ট্যান্ডের মত উচা বেঞ্চ লাগে, না হলে নাকি বড় ইস্কুলে পড়ার মজা নাই। 
    চোখ বড় করে বললাম - ' ওরে দাঁড়া, এখনো সরকার বলেনি বেঞ্চে বসতে। তোদের পাড়ায় যাবো। দাওয়ায় পড়াব। কাল থেকে ' ….

    চললো কদিন বেশ।
    পাড়ায় পাড়ায় শান্তিনিকেতন। কচিগুলার ঢলাঢালি। ফিসফাস। গুতাগুতি। ফাঁকা মাঠে পেচ্ছাব কাটাকাটি। মাঝে আমার আবার কিডনি আর ব্লাডারের লোড সামলাতে না পেরে ফ্ল্যাশ ছাড়া গাছের নিচে হলুদ ইউরিয়ার বন্যা দেখে সে কি হাসি ক্লাস ফাইভের।
    সব চলছিল। হেব্বি স্মুথ।

    শুরু করলো ইসমাইলের আব্বা।
    মাঝ দুপুরে একবাটি মুসুর ডাল, ফোরঙ দিয়ে, উপর থেকে সদ্য তোলা ধনেপাতা। দুটুকরো রসুন কোয়া।
    হাতজোড় করে কাঁচুমাচু
    - ' মাস্টার তুই এমনি রোগা, রোদে এতক্ষন থাকলি ব্যামো ধরবে, ইসমাইলের আম্মি পাঠালো, না করিস নাই '
    সেই শুরু
    তারপর এক এক করে সাতদিন
    টানা…
    আমিনা, নেহা, কুদ্দুস, অবিনাশ, কুজুর সব্বার ঘর থেকে রোজ।
    হেব্বি মৌজ। সালা মাস্টারের সুখ।

    আজ আর আসেনি কারো দাওয়াত।
    বৃষ্টি খুব। গাছতলায়, পাড়ায় তিনটা বাচ্চা সবে। তিনটাই ফাইভ।
    ছুটি দিয়ে দিলাম…
    স্কুটি স্টার্ট করেছি সবে।
    ভিজে ভিজে, লজ্জা লজ্জায়, চোখ না মেলেই ইয়াসমিন পায়ে পায়ে স্কুটির সামনে।
    একবাটি কুল। পাকা।
    - ' স্যার তোর জন্য  … বাপের কাম নাই, পুঁইসা নাই, রান্না করি আনতে লারি '
    মেয়েটা বড্ড পাকা। বয়সে, গতরে দুটোই। 
    বললাম চাপ স্কুটিতে, ছেড়ে দিয়ে আসি, বৃষ্টি নামবে বলে।
    পাকা বুড়ি চাপলো।
    নামলাম ওর ঘরে। কুঁড়ে ঘরের শতচ্ছিন্ন রাজপ্রাসাদ।
    আপ্যায়নের ডাক ছিল ওর আব্বার। 
    মাঝ বয়সি বুড়ো..
    বললো মাস্টার আবার যাবো কেরালা। টাইলস মিস্ত্রি। দুটা সুঁই না নিলে ওখানে কাম দেয় না।
    শুনলাম শুধু…
    আধ ঘন্টাখানেক ছিলাম
    পুঁচকি হেব্বি খুশি, 
    মাঝে চা আর পকোয়ান এলো দুবার।
    মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো কাপড়ে ঢাকা কাঠের পুতুলের মত ছোটখাটো মেয়েমানুষটা চটপট সব বানিয়ে নিয়ে এলো। 
    যাবার আগে বললাম 
    - ' আসি গো চাচা 
    চাচী কে বোলো চা ভালো ছিল '

    খ্যাখ্যাক করে হাসলো মাঝবুড়ো। 
    তারপর জোরে ডাক
    -  ইদিকে আই রে নুরবাণু।

    বোরখা কাঠের পুতুল, মুখের হিজাব খুলে সামনে।
    নুরবাণু খাতুন.. আমারই ছাত্রী, 
    যখন সব বন্ধ হয় তখন সেভেন ক্লাস ছিল।
    এখন নাইন। 
    চোখে লজ্জা। মাটিতে চোখ। 
    মাঝ বুড়ো বললো
    - মাস্টার নুরবাবুর মা ইয়াসমিন কে খালাস করেই মরলো। 
    উটা আমার বড় ম্যায়া। 
    তোকে শরম করে খুব। 
    মায়ের গতর পেয়েছে। বাড়ে খুব। দু বছর কাম নাই। ইস্কুলের ড্রেস খান ওর শরীলটাই হয় নাই ভালো। 
    বাপ হই
    বুঝি সব।
    তোকে দেখে আজকেও আসছিল না শরমে। ভাগ্যিস ওর মায়ের বোরখাখান ছিল।

    অনেকটা চলে এসেছিলাম স্কুটি চালিয়ে। 
    কি মনে হতে আবার ফিরলাম।
    মাঝবুড়োর ঘরে আবার।
    ডাকলাম…
    বললাম নুরবাণুর আব্বা তুমি কর্ণাটকের নাম শুনেছো।
    হাঁ করে বললো 
    কেনে মাস্টার? কাম আছে?

    কি জানি কাম আছে কিনা?
    বললাম না
    আমি চোখে কালা, কানে কাফের 

    #কানাকাফের
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:f4b1:9dd4:f0f7:9ae9 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:২৮503898
  • পড়লাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন