এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এক ফালি জ্যোৎস্না

    Supriya Debroy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ আগস্ট ২০২১ | ১৩৮১ বার পঠিত


  • পলাশ কয়েকদিন ধরে ভাবছে এবার কী লেখা যায়। এতদিন ধরে যা লিখলো, প্রায় অধিকাংশই নিজের স্মৃতির ভান্ডার উজাড় করে লেখা। পলাশ কিন্তু কোনো লেখক নয়, লেখে নিজের খুশিতে - আনন্দে - বিলিয়ে দিতে সবার মধ্যে। পলাশের স্মৃতি জুড়ে বসে আছে তার শৈশবের অমূল্য সম্পদ, যতই খরচা করে আবার যেন ভরে ওঠে। ভাবুলতা যখন আঁকড়ে ধরে পলাশকে - বারাসাতের বাগান বাড়ি, পুকুর, মণ্ডপ, গাছ-গাছালি আষ্টে-পিষ্টে জাপটিয়ে ধরে তাকে, কী করবে সে ! চোখ বুজলেই নিজেকে দেখতে পায় - মণ্ডপের সামনের প্রাঙ্গণে ক্রিকেট খেলছে শৈশবের পাড়ার বন্ধুদের সাথে, লিচু-জামরুল-টগর-ঝোপ-জঙ্গলের পিছনে খেলছে চোর-পুলিশ মশার কামড় সহ্য করে, গণেশ কাকু অথবা ছোট কাকু কাঠের পিঁড়ির উপর পলাশকে বসিয়ে আলু চাষের জন্য লিচু গাছের সামনের জমিটুকু উর্বর করতে টানছে দড়ি বেঁধে। দেখতে পায় নিজেকে সেই ধুলো-মাটি মেখে লুটোপুটি খেতে। নেই মা-বাবার শাসন, নেই মা-বাবার বকুনি, শুধু আছে দাদুভাইয়ের অবাধ প্রশ্রয় - ভালোবাসা - স্নেহ - মমতা।

    পলাশ দেখতে পায় - শুয়ে আছে বাইরের বারান্দায় দাদুভাইয়ের সাথে মশারির ভিতরে - পাশে হ্যারিকেনের স্বল্প আলো। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া - গেটের পাশে সাদা জুঁইফুল ভরা গাছের পাশে কে যেন দাঁড়িয়ে থাকা সাদা ঘোমটা মাথায়। ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলা - আবার চোখ পিটপিট করে দেখার ইচ্ছা - ভয়মিশ্রিত চোখে শেষে গভীর ঘুমে ঢলে পড়া।

    পলাশের স্মৃতির ভাণ্ডারে আরো অনেককিছু লুকিয়ে আছে। আছে শৈশবের টুকরো টুকরো স্মৃতি কাকা-পিসিদের ঘিরে। এখানেও পলাশ বিরাট ধনী, একটা-দুটো নয়, পাঁচ-পাঁচটা পিসি আর দুই কাকা। স্টেশনে গাড়ি থামলে থার্ড ক্লাসের যাত্রীরা পোঁটলা-পোটলি নিয়ে পাগলের মত যেভাবে খোলা দরজার দিকে ঝাঁপিয়ে আসতে থাকে, একটু নাড়া দিলেই তেমনি হুড়মুড় করে পলাশের অর্জিত সম্পদের স্মৃতি হৃদয়ের গুপ্তকক্ষ থেকে হুহু করে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। যেন শেষ রাতের এক ফালি জ্যোৎস্না আকাশ-বাতাস-ডাল-পাতা চুঁইয়ে হৃদয়ের উঠোন ভাসিয়ে দিচ্ছে অকাতরে দুই হাত ভরে।

    পলাশ আর অপেক্ষা করে না, শুরু করে দেয় ল্যাপটপ নিয়ে পরের লেখা লিখতে।

    পিসিমণি

    পলাশের বড়পিসি। পৌঁছে যাওয়া যায় দাদুভাইয়ের বাড়ির পিছনে ধান ক্ষেত পেরিয়ে এক দৌড়ে। পলাশ সুযোগ পেলেই চলে যেত পিসিমণির বাড়ি। পিছনের তেঁতুল গাছ ছাড়িয়ে দুইপাশের ধানক্ষেতের মাঝের রাস্তা ধরে, ঠাম্মাকে বলে। দুই ক্ষেতের মাঝে নালা কাটা ছিল জলের জন্য। ডানদিকের ধান ক্ষেতে ছিল একটা পুকুর কাটা বর্ষার জল ধরার জন্য। তাই দুই ক্ষেতের মধ্যে ছিল নালা কাটা এক ক্ষেতের জল অন্য ক্ষেতে যাওয়ার সুবিধার্তে। পলাশের ছোট্ট লাফ পারতো না নালা পেরোতে। যেতে হতো পলাশকে নালার জল-কাদা ডিঙিয়ে। কাকুমণি চলে যেত অফিসে, ছোটকাকু-ফুলপিসি-কুট্টিপিসি কলেজ অথবা স্কুলে, দাদুভাই জমি-বাগানের নানা কাজে ব্যাস্ত বাইরে, ঠাম্মা ব্যাস্ত রান্না-ঘরের কাজ নিয়ে। পলাশ একা কী করবে ! চলে যেত পিসিমণির বাড়ি। পলাশ যদিও প্রায় রোজই যেত পিসিমণির বাড়ি, তবে রোববারটা ছিল বেশি পছন্দের। কারণ দাদাভাই আর দিদিভাইয়ের স্কুল ছুটি। বুলুদি আর দুলু তখন পলাশের মত ভর্তি হয়নি স্কুলে। দাদাভাই যদিও পলাশের থেকে ৭ / ৮ বছরের বড়, কিন্তু দাদাভাইয়ের সাথে পলাশের ছিল একটা আলাদা হৃদ্যতা, একটা আলাদা টান। দাদাভাই পলাশকে নিয়ে যেত সাথে করে বাগানের গাছের চারা কিনতে রথতলা থেকে। দাদাভাইয়ের নানারকম ফুলগাছের খুব শখ ছিল, টবে লাগাতো বাগান ভরে। রোববারে গামছা দিয়ে ধরতো ছোট ছোট কাঁকড়া আর পুঁটি-মৌরালা মাছ - পলাশ দাঁড়িয়ে থাকতো কাঠের সিঁড়ির শেষ ধাপে গামছার একদিক ধরে আর দাদাভাই এক হাঁটু পুকুরের জলে দাঁড়িয়ে।

    পিসিমণির ছিল জ্যোৎস্নার মতো স্নিগ্ধ কোমল সৌন্দর্য্য। আবার এই সুন্দর আবরণের আড়ালে যে হৃদয়টি ছিল, তা আরও কোমল - স্নেহ মমতায় ভরা। পিসিমণি পূর্ব বাংলার পাড়াগাঁয়ের মেয়ে ছিল। পূর্ব বঙ্গের পাড়াগাঁয়ে জন্মে সেখানেই বড় হয়েছিল। তবে বারাসাতের মত আধা শহর - আধা গ্রামের চাঞ্চল্যসজীবতা এবং আচার - ব্যাবহারও স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করতে পেরেছিলো। জন্মভূমির নিবিড় নিজস্বতা ও মাধুর্যতা হারিয়ে ফেলেনি।

    দুই-একটা পুঁটি মাছ আর কাঁকড়া ধরে রান্নাঘরের মেঝেতে রাখার সাথে সাথে, পিসিমণি বলে উঠতো - যা পলাশ, পুকুর থেকে একটা ডুব দিয়ে আয় - আজ এখানেই খেয়ে নিবি।

    পলাশ তো এটার জন্যই অপেক্ষা করে থাকতো। একছুটে দৌড়ে ঠাম্মাকে বলে আসা - আজ পিসিমণির বাড়ি দুপুরে নিমন্তন্ন। ঠাম্মা বলতো, তোর আবার নিমন্তন্ন কী - তুই তো প্রায় রোজই দুপুরে চুণীর বাড়িতে খাস।

    গায়ে-মাথায় তেল মাখলো কী না মাখলো, ঠাম্মার গজগজানি উপেক্ষা করে পুকুরে গিয়ে একটা ডুব দিয়ে, জামা-প্যান্ট পরে আবার দৌড়াতে দৌড়াতে পিসিমণির বাড়ি পৌঁছে যাওয়া।

    (পলাশ ছোটবেলায় - ৩ / ৪ বছর বয়সে নিজের বাড়ির পুকুরে চান করতো, কারণ সিমেন্ট বাঁধানো ঘাট আর সিঁড়ি। পিসিমণির বাড়ির পুকুরে গাছের গুড়ি দিয়ে সিঁড়ি করা ছিল - তাই একটু ভয় পেত।)

    ততক্ষণে পিসিমণির কাঁকড়া অথবা পুঁটি মাছের ঝাল রান্না করা হয়ে গেছে। পিসিমণির হাতের রান্না অপূর্ব ছিল। ডিমের ঝোল, মুশুরির পাতলা করে ডাল তুলনাহীন। পিসিমণির একপাল পোষা হাঁস ছিল। হাঁসের ডিম রান্না করতো। একবার পলাশ জানতে চায়, ঠাম্মাকে দেখেছি ডিম গোল করে অর্ধেক করতে - তুমি কেন আড়াআড়ি অর্ধেক করো ? পিসিমণি বলে, আড়াআড়ি করে কাটলে ডিমের মধ্যে ভালোভাবে তেল মশলা ঢুকতে পারে - তাই। সবাই একসাথে সিঁড়ির ঘরে মেঝেতে বসে হৈ-হুল্লোড় করে খাওয়া।

    আনন্দ আরও তুলনাহীন হয়ে যেত, যখন খাওয়া শেষ হতে না হতেই - আকাশে মেঘ করে টিপিটিপি বৃষ্টি, বর্ষার প্রথম বারিপাতের মৃদু শব্দ, খোলা দরজার মধ্যে দিয়ে ভিজেমাটির গন্ধ। এবার আর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে না, ঠাম্মার বকুনি শুনতে হবে না। কাঁথার নিচে শুয়ে দুনিয়ার আবোল-তাবোল গল্প।

    বিকেলে পিসিমণির বানানো মুড়ির মোয়া, নারকেলের নাড়ু - তারপর বাড়ি ফেরা।

    বিজয়া দশমীর সময় পলাশ-ঝুমঝুম-পল্লব-রূপম সব মামাবাড়ি, অন্যান্য আত্মীয়ের বাড়ি ঘুরে সবার শেষে পিসিমণির বাড়ি যেত। একগাদা নারকেলের নাড়ু, সন্দেশ খেয়ে মুখ জড়িয়ে আসতো - তাই পিসিমণি ঘুগনি একটু ঝাল ঝাল করে বানিয়ে রাখতো। তারপর মেঝেতে বসে পা ছড়িয়ে শুধু গল্প আর গল্প।

    পলাশ যখন তার স্মৃতির গহনে উঁকি মারে, স্মৃতির কুয়োর তলানি পর্যন্ত - আবছা স্মৃতিতে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে মায়ের মুখ, যখন সবাই বারাসাতের বাড়িতে দুর্গাপূজার সময়ে আসত - অনেক হৈ চৈ, অনেক আনন্দ, বারাসাতের বাড়ি আত্মীয় স্বজনে ভরা, সবাই পূজো নিয়ে ব্যস্ত। ভেসে ওঠে অস্পষ্ট ভাবে সিঁদুর রাঙানো মায়ের মুখ দশমীর সন্ধ্যায় - পিছনের বারান্দায় বসে আছে একা লুকিয়ে - খুঁজতে গিয়ে পলাশের ভয় পেয়ে মুখ ফুঁপিয়ে কান্না। পূজোর এই ব্যাস্ততার মধ্যেই কিছু সময়ের জন্য মায়ের স্নেহ ভালোবাসা সান্নিধ্য পাওয়াটা যেন মনের অনেক ফাঁকফোকর, অনেক শূন্যটাকে ভরে রাখতো কিছু সময়ের জন্য।

    কিন্তু যেটা পরিষ্কার ভাবে ভেসে ওঠে স্মৃতির পর্দায় সিনেমা দেখার মতো - দেখতে পায় মাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে গেদেতে, দিদি - ভাইয়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে গেদের পথে-ঘাটে-বাজারে, যখন তার সাড়ে চার - পাঁচ বছর বয়স; তার আগের স্মৃতিতে শুধু বারাসাতের বাড়ি-দাদুভাই-ঠাম্মা- পিসিমণির বাড়ি- অস্পষ্ট মায়ের মুখের ঝিলিক। পলাশ পরে বড় হয়ে বুঝতে পারে, সেই কারণেই বোধহয় ও বার-বার ছুটে চলে যেত পিসিমণির বাড়ি - পিসিমণির স্নেহ-মমতাতে ভাগ বসাতে অন্য ভাই-বোনদের সাথে।

    কাকুমণি

    পলাশের বড়কাকা। লম্বা, একটু রোগার দিকেই বলা যায়, ফর্সা। মুখের আদলটি মায়ায় মাখানো। সরাসরি হাসি দেখতে না পেলেও, মনে হয় সর্বদাই মুখে হাসিটা লেগে আছে।

    কাকুমণির সমস্ত কাজ অতীব মসৃণ, নিখুঁত এবং ত্রুটিহীন। ছোটবেলায় পলাশরা তিন সেট জামা-কাপড় পেত পূজোর সময়, সেটা দিয়েই পুরো বছর চলতো। এক সেট মা-বাবার থেকে, এক সেট মামাবাড়ি থেকে আর আরেকটা কাকুমণির থেকে।

    কাকুমণি সবসময় ধোপ-দুরস্ত থাকতে ভালোবাসতো, ইস্তিরি করা জামা-প্যান্ট পরে অফিস যেত। পলাশ খেয়াল করেছে, অফিস যাওয়ার সময় দাড়ি কেটে একটা সুন্দর গন্ধ লাগাতো কাকুমণি, পরে জেনেছে ওটা আফটার শেভ লোশন।

    পলাশের তখন বোধহয় তিন / সাড়ে-তিন বছর বয়স হবে, পূজার আগে পলাশকে নিজের কেনা নতুন শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে - জামা প্যান্টের মধ্যে গুঁজে - এক রোববার দুপুরবেলায় - মন্দিরের সামনের উঠোনে দাঁড় করিয়ে নতুন কেনা ক্যামেরা দিয়ে ফটো তোলে। ক্যামেরার খাপটা আবার পলাশের কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো, যাতে আরো স্মার্ট লাগে দেখতে। মা পরে অ্যালবাম থেকে পলাশকে এই ফটোটা দেখায়, পলাশ বারবার এই ফটোটা দেখতে ভালোবাসতো অ্যালবাম খুলে। ফটোটা দেখলেই পলাশের চোখে ভেসে উঠতো কাকুমণির ছবি তোলা ক্যামেরা দিয়ে পলাশকে দাঁড় করিয়ে।

    মাঝেমাঝে পলাশকে স্টেশন পেরিয়ে 'আনন্দময়ী অথবা লোকনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে' বসিয়ে হিং-এর কচুরি নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল সহযোগে - সাথে গরম গরম টপ-টপ রস গড়িয়ে পড়া জিলিপি খাওয়াতো, নিজে খেত না। সেই স্বাদটা জিবে, গন্ধটা নাকে অনেকদিন থাকতো পলাশের।

    একবার পূজার আগে পলাশের কাছে প্রায় অনেক খুচরো পয়সা জমে যায় - প্রায় একটাকা তিরিশ / চল্লিশ পয়সার মতো। কিছুটা দাদুভাইয়ের থেকে, কিছুটা মামাবাড়ি থেকে। কাকুমণি অফিস যাওয়ার সময় একদিন পলাশের হাতে এত পয়সা দেখে বোধহয় একটু ঘাবড়ে যায়, ভাবে ও উল্টোপাল্টা খরচ করে ফেলবে। পলাশের তখন যোগ-বিয়োগ-পয়সা গোনা অল্প-স্বল্প এবং টাকা-পয়সার সাথে পরিচয় হয়ে গেছে দাদুভাই আর ফুলপিসির দৌলতে। কাকুমণি পলাশকে একটা লাল রঙের দু'টাকার নোট দিয়ে খুচরো পয়সাগুলো নিয়ে নেয়, ভাবে এটা দিয়ে পলাশ চট করে খরচা করতে পারবে না। পলাশ খুব খুশি দু'টাকার নোট পেয়ে, পলাশ তো ততদিনে টাকা-পয়সা চিনে ফেলেছে। বিকেলবেলায় কাকুমণি অফিস থেকে এসে দেখে পলাশের হাতে বন্দুক, ক্যাপের বান্ডিল কয়েকটা, তারাবাতির দু'একটা প্যাকেট, রং-মশাল। পলাশ অল্প অল্প যোগ-বিয়োগ জানলেও - কোন বাজির কত দাম সেটা তো আর দোকানির থেকে জানতে চায়নি। ও পুরো দু'টাকা দোকানিকে দেখিয়েছে, আর দোকানি বাচ্চা ছেলে পেয়ে কিছু বাজি ধরিয়ে দিয়েছে দু'টাকার বদলে। আর পলাশ খুশি আশাতিরিক্ত বাজি পেয়ে। কাকুমণি অফিসের জামা-কাপড় না ছেড়ে সেই অবস্থায় পলাশকে নিয়ে দোকানে যায়, যাতা-রকম ভাবে দোকানির উপর হম্বি-তম্বি কোরে বলে - বাচ্চা ছেলে পেয়ে এইভাবে ঠকিয়েছেন - তাও আবার দারোগাবাড়ির বড় নাতিকে ! সেই প্রথম পলাশ কাকুমণির কাছে প্রচন্ড বকা খেয়েছিলো।

    পলাশের আরেকটা এরকম মজার ঘটনা স্মৃতির পর্দায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। এইসব ঘটনাগুলো কিন্তু পলাশের যখন চার-পাঁচ বছর বয়স তখনকার স্মৃতি থেকে নেওয়া। দুর্গাপূজার ঐসময় অনিল ঠাকুর রান্না করতো, পিছনের উঠোনে কাপড়ের চাঁদোয়া টাঙিয়ে - মাটির বিরাট উনোনে। পলাশের বাবা ছিল বাজার-সরকার তখন, রান্না-বান্না-বাজারের তত্ত্বাবধানে। ষষ্টি থেকে নবমী পর্যন্ত্য তখন রোজই খিঁচুড়ি, ভাজা, তরকারি, পায়েস হতো - আর দশমীর দিন আমিষ - পুকুর থেকে মাছ ধরে। স্টেশনের কাছে তখন একটা বারোয়ারি পূজা হতো, আর নবমীর দিন বিকেলে কাঙালি ভোজন করাতো। একবার যদিও দুপুরে পেটপুরে খিঁচুড়ি খাওয়া হয়েছে, দিদি-রত্নাদি-পলাশ রাস্তায় বসে পরে কাঙালি-ভোজনে, শালপাতার উপর খিঁচুড়ি নিয়ে। কাকুমণি কারুর থেকে খবর পেয়ে হন্ত-দন্ত হয়ে ছুটে এসে তিনজনকে অর্ধ-সমাপ্ত খিঁচুড়ি-ভোজন থেকে কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে তোলে, তোরা না দারোগাবাড়ির নাতি-নাতনি - তোরা বসে পড়েছিস কাঙালি-ভোজন করতে ! তোদের দুপুরে খেয়ে কী পেট ভরেনি ! কিন্তু তখন তো ওটাই ছিল পলাশদের কাছে একটা বিরাট মজা, পেটে খিদে থোড়াই ছিল!

    কাকুমণি পূজোর সময় কিছু না কিছু পলাশদের দিত। পলাশ যখন একটু একটু করে বড় হতে থাকে, তখন কাকুমণি পলাশকে নানারকম গল্পের বই দিত পূজোতে। পলাশ যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রথমবার পূজোতে বাড়ি আসে, তখন কাকুমণি পলাশকে একটা রিস্ট-ওয়াচ গিফট করে। এরকমই কাকুমণি সবকিছু খেয়াল রাখতো - কার কী দরকার। পলাশ সেই কাকুমণির দেওয়া ওয়াচ'টা পুরো কলেজ লাইফ এবং চাকরির প্রথম পাঁচ-ছয় বছর পর্যন্ত পরেছিল।

    মেজপিসি

    মেজপিসির নাম রাণী। রাণীর মতনই সদাহাস্যময়, রাগ-বিহীন মহিলা। পুতুলের মতন সুন্দর দেখতে। কোনসময় কোনো বিরক্তি নেই। একটু গ্রামের রেশ থাকলেও, তার সাথে শান্তিনিকেতনী একটা আভা জড়িয়ে আরও সৌন্দর্যময়ী করে তুলতো। আজও মেজপিসিকে দেখলে পলাশের চোখ জুড়িয়ে যায়। শান্তিকেতনে থাকতে থাকতে বাটিক সেলাই-এর সংমিশ্রণে শান্তিনিকেতনের ধাঁচে সুন্দর সুন্দর ব্যাগ শাড়ি চাদর বানাতো - দেখার মতো। মেজপিসির সবচেয়ে মধুর সামগ্রী তার মুখের হাসি, অনেক দূর থেকে দেখলেও ভুল করবার উপায় ছিল না।

    পলাশ বাবার থেকে মেজপিসির সাথে জড়িয়ে অনেক ওদের ছোটবেলার গল্প শুনেছে। একদম গল্পের ভাষায় পিঠোপিঠি ভাই-বোন না হলেও, দুজনের মধ্যে ছিল গলাগলি ভাব। ছোটোবয়েসে মেজপিসির ছিল দাদার উপর অগাধ ভরসা, বিশ্বাস। সেটা পরে পলাশ দেখেছে - ওদের মধ্যে ছিল একটা আলাদা টান, মনের মিল। তারা বড় হয়েও, নিজেদের মনের কথা সবার সামনে প্রকাশ করতো না। খুঁজে নিতো পুকুরের ঘাট, স্টেশনে বসার জায়গা - নিভৃতে নিজেদের মনের আদান-প্রদান করতে।

    বাবা-মেজপিসি যখন ছোট ছিল, পলাশের দাদুভাই রোজ অফিস যাওয়ার সময় সব ছেলেমেদেয়ের এক পয়সা করে দিয়ে যেত - নিজেদের ইচ্ছেমতন কিছু কিনে খাওয়ার জন্য। বাবা বলতো মেজপিসিকে, রাণী তুই তোর একপয়সা আমাকে দে। তোর আর আমার পয়সাটা বাগানের এইখানে গর্ত করে পুঁতে দিয়ে পূজো দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দিই। কালকে মাটি খুঁড়ে দেখবো, আমাদের পয়সা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পরেরদিন রাণী গর্ত খুঁড়ে দেখে দাদার সাথে - কোনো পয়সা নেই। রাণী অবাক হয়ে দাদার দিকে তাকালে বলে, রাণী কালকে পূজোটা ঠিক ভক্তিভরে করা হয়নি। আজকেরটা আবার পুঁতে ভালোভাবে পূজো করি, ঠাকুর কাল আর আজকেরটা মিলিয়ে দ্বিগুণ করে দেবেন। রাণী আবার দাদাকে সেইদিনের একপয়সা দিয়ে দিত। রাণী কী এতই বোকা ছিল, পলাশের মনে হয় না। যেটা ছিল দাদার উপর অগাধ বিশ্বাস, ভরসা। দাদা যখন বলছে - ঠিকই বলছে। এ-রকম অনেক ছোট ছোট ঘটনা শুনেছে পলাশ বাবার থেকে। দাদা রাণীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো হাত ধরাধরি করে জলা-জঙ্গল-আগাছাতে, নিবিড় অন্ধকার করা বাঁশঝাড়-বটগাছ-পাকুড় গাছের তলায়, দেখাতো নানারকম জংলী নাম-না-জানা ফুল, চেনাতো আকন্দ ফুল - নীল অপরাজিতা ফুল - হলদে সবুজ রঙের আদার ফুল।

    পলাশরা যখন দুর্গাপুরে থাকতো ( পলাশ দুর্গাপুরে থেকেছে তার ছয় থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত্য ), তখন মেজপিসি মাঝে মাঝেই দুর্গাপুর চলে আসত শান্তিনিকেতন থেকে, সাথে রত্নাদি - ঝুমঝুম, কিছুদিন পর ভজু আর শান্তুকে নিয়ে। সেই দিনকটা আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়ে কেটে যেত। সেই দিনগুলো যেন আসতো রাতের জ্যোৎস্নার উপচে পড়া আনন্দ নিয়ে। সন্ধ্যের পর আকাশে সোনার নৌকার মতো আধখানা চাঁদের আলোয় ভরা বাইরের উঠোনে খাটিয়ায় বসে গল্প শোনা মেজপিসির থেকে। একসাথে বাইরের ঘরে মেঝেতে বসে খাওয়া। আরও কত কী।

    সেইসময়ে পলাশের ঝুমঝুমের সাথে একটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও দুজনে চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে, একাকিত্বকে আদ্যন্ত উপভোগ করে, মুখচোরা, একটু লাজুক, লোকজনের ভিড়-ভাট্টা এড়িয়ে দুজনেই বই পড়তে ভালোবাসে। প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী যেখানে এই দুজনের বন্ধুত্ব একটা বিরল ঘটনা। কিন্তু সেটাই ঘটলো - দুজনের মধ্যে একটা নিবিড় মনের সেতুবন্ধন গড়ে উঠলো।

    শুধু একটাই অমিল ছিল দুজনের মধ্যে - পলাশ ওই সময়ে খুব দুষ্টু ছিল, আর ঝুমঝুম যেন সাত চড়ে রা কাটতো না।

    যখন পলাশ খুব সম্ভব পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে, হঠাৎ একদিন মেজপিসি সাদা অ্যাম্বাসেডর গাড়িতে চলে আসে দুর্গাপুর দু'দিনের জন্য - সাথে রত্নাদি, ঝুমঝুম, ভজু, শান্তু আর কুট্টিপিসি। একদিন দুপুরে কুট্টিপিসি আর দিদিরা ঠিক করে চিত্রালয়ে সিনেমা দেখতে যাবে, ঝুমঝুমও যাবে। খুব সম্ভব পলাশের কোনো দুষ্টুমি করার জন্য, মা পলাশের যাওয়া নাকচ করে দেয়। কিছুতেই মা অনুমতি দেয় না। পলাশ বাইরে মুখ ভার করে বসে আছে। মেজপিসি বলে পলাশকে, ওরা যখন যাবে - তুই চুপচাপ গাড়িতে বসে পড়িস, আমি বৌদিকে পরে সামলে নেবো। পলাশ খুব খুশি, ড্রাইভারের পাশে বসে পড়ে। সিনেমা হলে পৌঁছে পলাশ দেখে, তাড়াহুড়োর মাথায় জামাই পরে আসেনি - পরনে স্যান্ডো গেঞ্জী। পলাশের মন আবার খারাপ হয়ে যায়, ঝুমঝুমেরও। বলে, পলাশ তুই যদি একটা জামা পরে আসতিস - তাহলে আমাদের সাথে সিনেমা দেখতে পারতিস। ও তো জানতো না, মেজপিসি চুপিচুপি পলাশকে গাড়িতে উঠে বসতে বলে। কিন্তু পলাশের একটা ভুলের জন্য আর ওর সিনেমা দেখা হলো না।

    পলাশ যখন একবার ঘুমন্ত ঝুমঝুমের কানে ছোট্ট ছোট্ট লাল কাঙ্করের টুকরো ঢুকিয়ে দেয় ঘুম থেকে তোলার জন্য অথবা ছোট্ট শান্তুর হাত -পা ছড়ে যায় যখন পলাশ তিন পায়া সাইকেলে বসিয়ে কাঙ্করের ঢালু রাস্তায় ঠেলে দিলে - পলাশের তখন কান্না-কান্না মুখ, ভয়ে গলা-বুক শুকিয়ে, এবার কপালে আছে মেজপিসির থেকে নিশ্চয়ই অজস্র বকুনি। কিন্তু মেজপিসি এতটাই রাগ-বিহীন, এতটাই ধৈর্য্য - পলাশ অবাক হয়ে যায় মেজপিসির কথায়, তুই তো আর জেনে বুঝে করিসনি - তোর খেলার সাথে একটু দুষ্টুমি জুড়ে গেছে। পলাশের মনে হয়, এই গুণটা মেজপিসি অর্জন করেছিল - ছোটবেলায় পলাশের বাবার দুষ্টুমি মনের আনন্দে মেনে নেওয়ার জন্য।

    পলাশ একবার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সামার ভ্যাকেশনে যখন বাড়ি আসে, তখন কয়েকদিনের জন্য শান্তিনিকেতন হঠাৎ করে বেড়াতে যায়। পলাশকে দেখেই মেজপিসি বলে, খুব ভালো করেছিস তুই এসেছিস - পরশুদিন ঝুমঝুমের ফাইনালের শেষ পেপার। তুই দেখিয়ে দিতে পারবি। পলাশ অবাক শুনে, পলাশ ঝুমঝুমকে কী দেখাবে - ও পড়াশুনায় এত ভালো, নিজেই একশো। পরে ভেবে দেখে, মেজপিসি বোধহয় পুরোপুরি এই কারণে বলেনি। পলাশ এসেছে বলে, ঝুমঝুমের মন আনন্দে উদ্বেল - ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু এসেছে, সেই মনের আনন্দে ওর পরীক্ষা ভালো হবে। কারণ ওরা দুজনে কেউ কাউকে বিরক্ত করবে না। লাইব্রেরিতে ঝুমঝুম পড়বে ওর পড়ার বই, আর পলাশ পাশে বসে হয়তো কোনো ম্যাগাজিন পড়বে। ওরা দুজনে এক আরেকজনের আর্দ্রতা ভরা সাহচর্য হয়তো উপভোগ করবে, কোনো কথা না বলে - কোনো বক্তব্য না রেখে।

    পলাশ ভাবে, এখানে অন্য কেউ হলে ভাবতো - কেন পলাশ এখন এলো, দু'দিন পরে এলেই পারতো। কিন্তু মেজপিসি এইরকমই - এই ভাবেই চিন্তা করে, আর হয়তো এটার জন্যই পলাশের এত ভালো লাগে মেজপিসিকে।

    রাঙাপিসি

    কেউ 'রাঙা'-র সাথে পিসি অথবা মাসি জুড়ে দিতো না, 'রাঙা' বলেই ডাকতো। 'রাঙা' নামটা সার্থক কোরেই, প্রায় আধপাঁকা কামরাঙা - আমলকি'র মতই ছিল গায়ের রঙ, কাঁচা সোনার মত গায়ের বর্ণ। পদ্মপলাশ চোখ। বেশ সুন্দরী দেখতে, লম্বা, একটু ক্লাসিক। পিসিমণি অথবা মেজপিসির মধ্যে যেমন একটা গ্রাম্যতার ছায়া মাঝে মাঝে দেখা যেত, রাঙাপিসির মধ্যে সেটা ছিল একেবারেই অনুপস্থিত, বেশ শহুরে ভাব।

    পলাশ যখন তার শৈশবে বারাসাতে থাকতো, তখন রাঙাপিসি প্রায়ই চলে আসত বারাসাতে - ছেলে রূপমকে নিয়ে। জামা-কাপড়ের ব্যাপারে বেশ শৌখিন ছিল, রূপমকে ঐ সময়েই সবসময় টেরিলিন জামা ইস্তিরি করা পরিয়ে রাখতো, যেমন পলাশের চোখে তখন তার কাকুমণি পরতো অফিস যাওয়ার সময়।

    পিসিমণি অথবা মেজপিসি যেমন পলাশের ধুলো-মাটি মাখা, পুকুরে দাপাদাপি করে স্নান করা, জামরুল অথবা পেয়ারা গাছে উঠে লাল কাঠপিঁপড়ের কামড় খাওয়া অথবা পাড়ার বন্ধুদের সাথে লুকোচুরি খেলা - বুলুদি, দুলু অথবা ঝুমঝুমকে নিয়ে, আপত্তি করতো না। কিন্তু রাঙাপিসি এইসব ধুলো-বালি মাখা, খালি পায়ে খেলা অথবা রাস্তায় বেরিয়ে যাওয়া খুব একটা পছন্দ করতো না। যদিও পলাশ তখন খুব দুষ্টু ছিল, আর দাদুভাইয়ের আস্কারাতে খুব একটা কাউকে পরোয়া করতো না। কিন্তু রাঙাপিসি এলে একটু তঠস্থ হয়ে থাকতো। স্বীকার করতে আজ বাধা নেই এই-বয়সে, এই কারণে পলাশের যেমন একটা গলাগলি ভাব বুলিদি, দুলু, ঝুমঝুমের সাথে হয়েছিল শৈশবে - রূপমের সাথে সেটা ঠিক গড়ে ওঠেনি সেই সময়ে; অবশ্য পরে রাঙাপিসিরা যখন দুর্গাপুরে কিছুদিনের জন্য আসে - তখন রূপম এবং মিষ্টুর সাথে একটা সৌহৃদতা গড়ে ওঠে।

    রাঙাপিসি পলাশকে উত্তরাধিকার সূত্রে একটা বিশেষ শরীরের অংশ দান করে যায়। পলাশ অন্যমনস্ক ভাবে কথা বলার সময় অথবা একাগ্র মনে যখন কিছু চিন্তা করে - রাঙাপিসির মত টেরা হয়ে যায়। যদিও মেজপিসিরও একটু টেরার লক্ষণ আছে, কিন্তু পলাশের ভীষণ ভাবে চোখ টেরিয়ে তাকানো'টা রাঙাপিসির থেকে পেয়েছে।

    পলাশ একদিন বাইরের বারান্দাতে উট্কো হয়ে বসে কিছু একটা করছিলো, হঠাৎ রাঙাপিসি দেখতে পেয়ে বলে - ঐ ভাবে পায়ের পাতা পিছনে তুলে বসেসিস কেন ? পলাশ ঠিক বুঝতে পারে না কী বলছে রাঙাপিসি। তখন রাঙাপিসি নিজে উট্কো হয়ে বসে দেখায় - পায়ের পাতা পুরো মাটিতে ছুইয়ে / পেতে বসতে। পলাশ করতে গেলেই - ধপাৎ করে পিছনে উল্টে পরে, কিছুতেই পায়ের পাতা পুরোপুরি মাটির সাথে ছুইয়ে বসতে পারে না। পলাশের এই শারীরিক ডিফেক্ট'টা প্রথম রাঙাপিসির নজরে আসে। পরে মা-বাবাকে জানালে এবং ডাক্তার দেখালে, জানা যায় পায়ের পিছনের একটা শিরা একটু ছোট এবং শক্ত - কিছু করার নেই।

    বারাসাতের পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মীপূজার সাথে সরস্বতী পুজোও হতো। তাও পলাশের পাড়ার দাদারা মিলে একবার সরস্বতী পূজো করে, বাড়ির গেটের বাইরের রাস্তাতে ছোট একটা প্যান্ডেল কোরে। খুব একটা চাঁদা ওঠেনি, যাতে নিজেরা মিলে খিঁচুড়ি রান্না করে খেতে পারে পুজোর ভোগের সাথে। তখন রাঙাপিসি বারাসাতে এসেছিলো। পলাশ গিয়ে রাঙাপিসিকে আবদার করতে থাকে - একটা কিছু ব্যবস্থা করার জন্য। রাঙাপিসি তখন নিজে উদ্দ্যোগ নেয়। রাতে সবাই মিলে বাইরের বারান্দায় বসে একসাথে মেঝেতে বসে খিঁচুড়ি, বাঁধাকপি, বেগুন ভাজা হুল্লোড় কোরে একসাথে খায়। দিদিভাই, দিদি, বুলুদি, দুলু - সবাই যোগ দেয়। রাঙাপিসির পরিচালনায় সব দিদিরা এবং পাড়ার দাদারা মিলে বাজার, রান্না করে, একটা যেন পিকনিক। পুরো খরচটাই রাঙাপিসি করে।

    রাঙাপিসি বারাসাতে আসলে পলাশের সবচেয়ে আনন্দ হতো এই ভেবে - এবার মাছের পাতুড়ি রান্না হবে। একটু বেশ ঝাল-ঝাল করেই বানাতো রাঙাপিসি, পলাশের চোখ দিয়ে ঐ বয়সে জল বেরিয়ে আসতো খেতে খেতে - কিন্তু এত সুন্দর স্বাদ, না খেয়ে থাকতে পারতো না। এই পাতুড়ি খাওয়ার জন্য, পলাশ যখন কলেজে পড়ত অথবা চাকরি করতো প্রথমদিকে ভাইজাগে - কোলকাতা আসলেই একবার ঠিক চলে যেত রাঙাপিসির বাড়ি।

    ছোটকাকু

    ছোটকাকুর কথা ভাবলেই, পলাশের মনে পরে যায় - দুর্গাপ্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাড়ার কাকু, বড় দাদাদের কাঁধে চড়িয়ে বিসর্জনের জন্য। সবার সামনে ছোটকাকু, এক হাতে একটা মশাল আর অন্য হাতে ধরা কেরোসিন ভরা বোতল, মুখে কেরোসিন, ফুঁ করে মশালে ছোড়া, দপ করে মশালের আগুন জ্বলা। পিছনে নেচে নেচে ঢাকের বাদ্যি, সাথে কাসরের ঘন্টা, ধুনুচি নাচ, শঙ্খধ্বনী, উলুধ্বনী, সমবেত চিৎকার ' বলো দুগ্গা মাইকী। আসছে বছর -------- আবার হবে।'পূজোর সময় ছোটকাকুর তিন ধুনুচি নিয়ে নাচ, ঢাক মাটিতে শুইয়ে টুইস্টের নাচের বাজনা।

    এই ছবি পলাশের শৈশবের স্মৃতিতে ভেসে আছে ছোটকাকুকে নিয়ে।

    ছোটকাকু ছিল একটু বোহেমিয়ান, ভবঘুরে ধরণের। ফুর্তিবাজ হুল্লোড়বাজ মানুষ। হাসি-খুশি-মজা নিয়েই থাকতে চায়। কাকুমণি যেমন সংসারের ব্যাপারে বেশ দায়িত্ববান, ছোটকাকু ঠিক তার উল্টো, সব-কিছুতে গা-ছাড়া ভাব, উপরে ঠাকুর আছেন - তিনিই সব দেখবেন।

    মাঝে মাঝেই বন্ধু-বান্ধব জুটিয়ে নিয়ে আসতো সন্ধ্যাবেলায়, খোল-করতাল বাজিয়ে ঠাকুরের গান, মণ্ডপের সামনে বাতাসা দিয়ে হরির লুঠ। পলাশের বিরাট মজা। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব ডেকে এনেছে - তাদেরকে শুধু হরির লুঠের বাতাসা দিলে হবে। সে-ব্যাপারে ছোটকাকুর কোনো চিন্তা নেই। শেষে কাকুমণি দোকানে ছুটে মিষ্টি নিয়ে আসতো।

    পলাশদের পুকুর পাড়ে একটা কুলগাছ ছিল। প্রায় পুরো গাছটাই বেঁকে পুকুরের উপরে। দুপুরে পাড়ার লোকজন নিয়ে স্নান করার সময়ে পুকুরের জলের উপরে অনেকগুলো মাদুর যোগাড় করে বিছিয়ে দিত। একজন গিয়ে কুলগাছটায় উঠে ঝাকুনি দিত, আর পাঁকা কুলগুলো টপাটপ করে মাদুরের উপর পড়ত। তারপর ঝুরিতে তুলে রাখা।

    রাতের প্রায় শেষ দিকে যখন প্রায় ভোর ভোর, যখন পায়ের তলায় রাখা কাঁথাটা গায়ে চড়াতে ভালো লাগতো - পলাশ বুঝতে পারতো এবার অঘ্রাণ মাস শুরু হয়ে গেছে, খেঁজুরের রসের সময় প্রায় আগত। বারবার পলাশ খেঁজুর গাছের কাছে ছুটে যেত, আর দাদুভাই অথবা ছোটকাকুকে পীড়াপীড়ি করতো বদরুদ্দি অথবা অরবিন্দ চাচাকে খবর দিতে। পলাশ ততদিনে শিখে গেছে, গাছ থেকে রস বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। প্রথমে গাছের উপর উঠে ভালোভাবে চাচতে হবে, রসের উত্সস্থল খুঁজে বের করতে হবে, বাঁশ দিয়ে গোঁজ বানাতে হবে, তারপর ঠিক জায়গামতো গোঁজটা পুঁতে দিতে হবে গাছের গায়ে - গোঁজএর একদিক ছুঁচলো করে রস পড়ার জন্য। তারপর সবশেষে নিচে মাটির কলসি ঝুলিয়ে দেওয়া। শীতকালে ঠান্ডার মধ্যে শিউলি গাছের সামনে সকালের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কলসি থেকে রস গ্লাসে ঢেলে ছোটকাকু, কুট্টিপিসি, দিদির সাথে কাঁপতে কাঁপতে খেঁজুরের রস পান করা।

    ছোটকাকু প্রায়ই বদরুদ্দি চাচার লোককে ধরে নারকেল গাছ থেকে নারকেল পারাতো, ডাব পারাতো। নারকেল চলে যেত ঠাম্মার জিম্মায় - নারকেলের সন্দেশ, নাড়ু বানানোর জন্য। আর পলাশরা দাঁড়িয়ে থাকতো ডাবের জল খাওয়ার জন্য। ছোটকাকুকে বলতো ডাব চিরে মালাই বের করে দেওয়ার জন্য। ডাবের উপরের ছাল দিয়ে চামচ বানিয়ে দিত মালাই চেঁচে খাওয়ার জন্য।

    কোথায় হারিয়ে গেলো রোদে ঝলমল করা আনন্দ মুখরিত শৈশবের দিনগুলো !

    ফুলপিসি

    পলাশের ফুলপিসির ছিল আকাশভরা কালো মেঘের মত চুল, বড় বড় চোখ। একটু চাপা গায়ের রঙ হলেও, মুখটা লাবণ্যময়ী, প্রবহমান গঙ্গার জলের মত ঢলঢলে - মমতায় ভরা। পলাশকে যখন চোখ বড় বড় করে গল্প শোনাতো, মাঝে মাঝে পলাশ বেশ ভয় পেয়ে যেত।

    পলাশের থেকে ফুলপিসি অনেকটা বড় হলেও, যেন ছিল একটা বন্ধুস্থানীয় সম্পর্ক। ফুলপিসি পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিল, পড়াশুনা নিয়ে বেশ সিরিয়াস ছিল। বাংলা ভাষার উপর ছিল বেশ দখল। পলাশের আজ মনে হয়, সুযোগ পেলে লেখিকা হওয়ার বেশ সম্ভাবনা ছিল।

    পলাশ স্মৃতির গভীরে গিয়ে যত ছোটোবয়স পর্যন্ত মনে করতে পারে, মনে হয় প্রায় জন্মের পর থেকেই ছিল বারাসাতের দাদুর বাড়িতে - সাড়ে-পাঁচ / ছয় বৎসর পর্যন্ত্য। মাঝে কয়েকমাসের জন্য কিছুদিন মা-বাবার সাথে ছিল গেদেতে, আর একবার হাত ভেঙে দমদমে দু'মাসের জন্য। তাছাড়া শৈশবের বাকি দিনগুলো কেটেছে বারাসাতেই।

    ঐসময় দাদুভাই ছাড়া প্রায় বেশিরভাগ সঙ্গটা পেয়েছে ফুলপিসির। ফুলপিসি নানারকম গল্প ছাড়া পলাশের বাংলা, ইংরেজি অক্ষরজ্ঞান করিয়েছে। সহজপাঠ, বানান, বাক্যগঠন, ছড়া, নামতা - সবকিছুই শিখেছে ফুলপিসির কাছে। দাদুভাইয়ের কাছে শিখেছে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ। টাকা-পয়সা চিনতে শিখিয়েছে ফুলপিসি। এই কারণে পলাশ ফুলপিসির কাছে চিরকালের ঋণী। পলাশ যখন প্রায় ছয় বৎসর বয়সে দুর্গাপুর যায় মা-বাবার কাছে, বয়স পেরিয়ে গেছে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য। ফুলপিসির প্রাথমিক শিক্ষার দরুণ, পলাশ ভর্তি হতে পারে সোজাসুজি দ্বিতীয় শ্রেণীতে।

    ফুলপিসি খাওয়াতে খুব ভালোবাসে। পলাশ যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, ফুলপিসিরা তখন দিল্লিতে থাকতো। পলাশ প্রায়ই হোস্টেল থেকে দিল্লি চলে আসতো ফুলপিসির হাতের রান্না খেতে।

    ফুলপিসির মন খুব নরম, দরদে ভরা। পলাশ যখন প্রথম দিল্লি যায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য, ফুলপিসির বাড়ি ওঠে। পরদিন বেরোতে হবে কুরুক্ষেত্রের উদ্দেশে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য। তখন ফুলপিসি সন্তানসম্ভবা, কুড়ি দিন মতন বাকি আছে। ফুলপিসা ঠিক ভরসা পায়না পিসিকে একা ছেড়ে যেতে, কারণ প্রায় দু'দিনের ব্যাপার, একটা রাত পুরোপুরি একা থাকতে হবে পিসিকে। পলাশকে বলে, পলাশ তুই একা যেতে পারবি না ? আমি বলি, হ্যাঁ পারবো। কিন্তু আমার মুখটা পিসি দেখে ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারে না। আমি সত্যিই একটু ঘাবড়ে ছিলাম একা যাওয়ার জন্য। তখন আমি হিন্দিটা ঠিক করে বলতেও পারি না। পরেরদিন ভোরে উঠে আমি তৈরি হচ্ছি বেরোবার জন্য কুরুক্ষেত্রের উদ্দেশে, দেখি ফুলপিসাও তৈরি হচ্ছে। পরে জানতে পারি, ফুলপিসি জোর করে ফুলপিসাকে আমার সাথে আসার জন্য।

    প্রথম সপ্তাহতেই বেশ ভালমতন ragging শুরু হয়ে যায় কলেজে। শুত্রুবার বিকেলে অন্যান্য ক্লাসমেটদের সাথে ট্রেনে করে দিল্লি চলে আসে। শোনা যায় উইকেন্ডে প্রচন্ড ragging হতে পারে, কারণ কলেজে ছুটি। অনেক রাতে পলাশ পৌঁছয় ফুলপিসির বাড়ি, পিসিরা তখন শুয়ে পড়েছে। পিসির আর ৫ / ৬ দিন বাকি ডেলিভারীর। পলাশের তখন এইটুকুও বুদ্ধি ছিল না যে বাইরে থেকে কিছু খেয়ে নেবে। ফুলপিসি ওই অবস্থায় স্টোভে পরোটা আলুর তরকারি করে দেয় পলাশের জন্য।

    পলাশ কী করে ভুলে যাবে ফুলপিসির এই স্নেহ মমতায় জড়ানো ভালোবাসার দিনগুলো।

    কুট্টিপিসি

    পলাশের ছোটোপিসি। রঙ কিছুটা চাপা হলেও, বেশ সুশ্রী। লম্বা দোহারা চেহারা। কাটা কাটা স্পষ্ট নাক-চোখ-মুখ-দাঁত। রাস্তায় বেরোলে সবাই একবার না তাকিয়ে এগোতে পারে না।

    কুট্টিপিসি দাদুভাই-ঠাম্মার শেষ সন্তান। যখন পলাশের দাদুভাইরা এদেশে দেশ ভাগের পর চলে আসে, তখন কুট্টিপিসি কোলে - এক বৎসর বয়সও হয়নি। দাদুভাই-ঠাম্মার বেশ আদরের সন্তান।

    পলাশের শৈশবের চোখে কুট্টিপিসি একটা ফ্রক পরা মেয়ে, স্কুলে যায়, পলাশের সাথে ফুল তোলে ভোররাতে, বারান্দার উঠোনে দাঁড়িয়ে শীতকালে রোদ পোহাতে পোহাতে খেঁজুর রস খায়।

    ভোররাতে যখন পূর্বগগন পুরোপুরি স্বচ্ছ হয়নি, তখনও ধূসর জ্যোৎস্না শেফালীপুষ্পের মতো ঝরে পড়ছে - পলাশ আর কুট্টিপিসি উঠে পড়েছে সাজি নিয়ে ফুল তোলার জন্য - জবা, টগর, শিউলি, নয়নতারা। তারপর দাদুভাইয়ের সাথে দুজনের বেড়াতে যাওয়া। মাঝে মাঝে দাদুভাই বদরুদ্দি চাচার বাড়ি নিয়ে যেত - গ্রীষ্মকালে এক থালা ভর্তি আম, কাঁঠাল - অন্যসময় মুড়ি-মুড়কি সাথে রসগোল্লা। আর বিকেলে যেত শিবানন্দ ধাম তিনজনে। মাঝে মাঝে দাদুভাই নিয়ে যেত দুজনকে থানায় - যেখানে দাদুভাই চাকরি করতো দারোগা হিসেবে। যাওয়ার সাথে সাথে সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়তো - সিঙ্গারা অথবা কচুরি সাথে মিষ্টি খাওয়াতো।

    কুট্টিপিসি খুব সুন্দর নাচ করতে পারতো। দাদুভাই নাচের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলো পিসিকে, নিয়ে যেত সাথে করে ক্লাসে। কুট্টিপিসি অনেক নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে, বেশ নাম ছিল।

    কুট্টিপিসি খুব ভালোবাসতো সিনেমা দেখতে। নতুন সিনেমা হলে আসলেই দেখা চাই। বেশিরভাগ সময় পাড়ার পুতুলপিসি অথবা ফুলতাদিদির সাথে চলে যেত সিনেমা দেখতে। যখন কাউকে পেতো না, পলাশের দাদুভাইকে ধরতো সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পলাশের লাভ হতো তখন। যদিও সিনেমার কিছু বুঝতো না, কিন্তু একটা আলাদা আনন্দ সিনেমা দেখার দাদুভাই আর কুট্টিপিসির সাথে। সন্ধেবেলায় শিবানন্দ ধাম থেকে ফিরে দাদুভাইয়ের অভ্যাস ছিল, মণ্ডপে বসে খোল বাজিয়ে হরি-কীর্তন করার। কুট্টিপিসির আবদারে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেত বটে, কিন্তু হলে গিয়ে অভ্যাসবশত মাঝে মাঝেই হরি-কীর্তন গাইতে শুরু করা - আর পিছনে বসা দর্শকদের বিরক্তিসহ দাদুভাইকে বিরত করার প্রচেষ্টা। দাদুভাই তখন চোখ বুঁজে পুরো হরি-কীর্তনে নিমগ্ন।

    কুট্টিপিসি ঠাম্মার থেকে রান্না করাটা ভালোভাবে রপ্ত করে নিয়েছিল। ঠাম্মার মতনই শুকনো শুকনো করে মাছ রান্না করা, মুলোর ছেচকি, শুটকিমাছ বেগুন দিয়ে পারতো। কুট্টিপিসিও ফুলপিসির মতো সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে খুব ভালোবাসতো। কুট্টিপিসির বারাসাতেই বিয়ে হয়। পলাশের মনে আছে, বিয়ের পর কুট্টিপিসি প্রায়ই পলাশদের ডেকে নিজের বাড়িতে গুছিয়ে খাওয়াতে ভালোবাসতো।

    কুট্টিপিসির সবচেয়ে যেটা ভালো লাগে পলাশের, প্রচন্ড মজা করতে পারে - সবসময় সামান্য কোনো ঘটনা এতো মজা করে বলতে পারে, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। কুট্টিপিসির সাথে কিছুক্ষণ থাকলেই - যে কোনো লোকের শরীর মন একদম সুস্থ হয়ে যাবে, রক্তের চাপ থাকলে সাথে সাথে কমে যাবে। এই গুণটা কিন্তু সবার মধ্যে থাকে না - কুট্টিপিসির সাহচর্য্যে থাকা ভাগ্যের বিষয়, পলাশের তাই মনে হয়।

    *********
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২৫ আগস্ট ২০২১ ০৪:৫৮497072
  • রীতিমত পাকা হাতের লেখা। অপুর শৈশবের নিচিন্দপুর গ্রামের কথা মনে পড়ে পলাশ কথনে। 
     
    তবে অনলাইনে এতদীর্ঘ লেখা পড়তে পড়তে চোখ ধরে যায়। একটু রয়েসয়ে লিখলে পারতেন। 
     
    আরো লিখুন 
     
     
  • Supriya Debroy | ২৫ আগস্ট ২০২১ ০৯:৩২497085
  • বিপ্লব ভাই , আপনার মন্তব্যটা আমাকে সাহস যোগালো আরও লেখারআমার প্রিয় ​​​​​​​লেখক ​​​​​​​বিভূতিভূষণ ​​​​​​​মহাশয় ​​​​​​​আর ​​​​​​​প্রিয় ​​​​​​​উপন্যাস ​​​​​​​'পথের ​​​​​​​পাঁচালি , অপরাজিত , aroyonok।' সেই ​​​​​​​কারণে ​​​​​​​হয়তো ​​​​​​​ওনার ​​​​​​​লেখার ​​​​​​​একটু ​​​​​​​রেশ ​​​​​​​চলে ​​​​​​​আসে ​​​​​​​আমার ​​​​​​​লেখাতে। 
    আপনার ​​​​​​​উপদেশ ​​​​​​​মাথায় ​​​​​​​থাকবে ​​​​​​​লেখার ​​​​​​​সময়
  • Asis Banerjee | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:১৮497738
  • খুব সুন্দর লাগল
  • Supriya Debroy | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:৪৪497739
  • ধন্যবাদ , আশিস বাবু
  • | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৫৭497766
  • সুপ্রিয়া, 
    ছবিটা তো মনে হচ্ছে আপনার তোলা নয়। গুগল সার্চ তো একটা ফেসবুক পেজে নিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ছবির উৎস যোগ করে দেওয়া উচিৎ।
  • Supriya debroy | 106.51.106.68 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:২৯497789
  • আপনি ঠিকই লিখেছেন, ছবিটা আমার তোলা নয়, আমার এক বন্ধুর তোলা। কিন্তু আমার বন্ধু ফেসবুকে পোস্ট করে দিয়েছিলো - পরে দেখলাম।
    আপনি যদি আমার লেখা 'ঝিনুকে মুক্তোদানা' পড়ে থাকেন, দেখবেন - ছবির উৎস যোগ করে দেওয়া হয়েছে। পথের পাঁচালির কথাও লেখা হয়েছে, কারণ ওখান থেকে কিছু লাইন তুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তর করে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন