এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জীবন পথের পথিক

    Swati Chakraborty লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ আগস্ট ২০২১ | ৬২৯ বার পঠিত
  • জীবন তো নদী, বয়ে চলে, কখনো বন্ধুর পথ বেয়ে, কখনো সমতল, কখনো ফুলে ঘেরা উপত্যকার পাশ দিয়ে। আমরা তবে কোথায় আছি এই বহমান নদীর স্রোতে? আমরা সেই জলের কণা। কেউ মিলবে সমুদ্রের বিশালতার সাথে, কেউ বা ছোট্ট ঝোরা হয়ে কারোর বুকে জল সিঞ্চিত করবে। কেউ বা উত্তাল হয়ে সাজানো বাগান ভেঙে ফেলবে, কেউ বা স্রোত হারিয়ে পঙ্কিল হয়ে পড়বে, কেউ হয়তো বাষ্প হয়ে বিলীন হয়ে যাবে। কেউ নিজের পরিণতি জানে না। জীবন নিয়ে চলে। ২০০৮সালে আমি চাকরির প্রয়োজনেই আমার প্রানের শহর, বড় হয়ে ওঠার শহর দুর্গাপুর ছেড়ে চলে আসি। এবং সমগ্ৰ প্রক্রিয়াটা হয় ভীষন দ্রুত। ভালো ভাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই, শহরটাকে, আমার সবকিছুকে একবার ফিরে দেখে আসার সময়ও পাই নি।ওই শহরটার সবকিছু তো আসলে আমি। আমার চরিত্রের, আমার চিন্তা ভাবনার, আমি মানুষটার অর্ধেক যদি হয় আমার মা বাবার তবে অর্ধেক অবশ্যই ওই শহরটার।

    দুর্গাপুরের বড় বড় রাস্তা, কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় মোড়া রাস্তায় আমার কৈশর ডানা মেলেছে। আমি বড় হ‌ওয়ার সাথে সাথে বড় হয়েছে আমার পাড়া। সেই সবকিছুকে ছেড়ে, আমার বাড়ির দেওয়ালে আদরের দাগ এঁকে চলে এসেছিলাম। ট্রাক বোঝাই করে এসেছিল আমার নাড়ি ছেঁড়া জীবন। পাড়ি দিয়েছিলাম এক অন্য জেলায়। আমার পূণর্জন্ম হল। কিন্তু ভগবান আমার পূর্বজন্মের কোনোকিছু ভুলতে দিলেন না।এসে পড়লাম একদম অন্যধরনের পরিবেশে। জীবনে তখনও অভিজ্ঞতার সঞ্চয় খুবই কিঞ্চিত। পরিচিত জগতেই আনাগোনা। অথচ ঘরে বাইরে সব একলহমায় পাল্টে গেল। কর্মক্ষেত্রের সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। ছাত্রাবস্হার স্বভাব তখনও দগদগে অথচ আমি দিদিমণি। পালাবার পথ নেই। দৌড় দেব যে বাড়ির রাস্তায় তাও যে হয় না। বাইরে থেকে এলে নিজের বাড়ির স্টেশনে নামলেই যে নিশ্চিত আশ্রয় পৌঁছানোর স্বস্তি হয় আমার তো তাও গেছে। শুধু ভাড়া বাড়িতে চার দেওয়ালের ভিতর মা, বাবার মুখ দেখলে বিপদ থেকে রেহাই মেলে। ঘুম থেকে উঠে বাইরেটা দেখতে আগ্ৰহ হয় না। আমার নিম গাছ, কামিনী গাছ, শিউলি গাছ নেই। স্কুল থেকে যখন ফিরতাম রাস্তাটায় যা কিছু দেখতাম আমার বাড়ির রাস্তার সাথে মিল খুঁজতে খুঁজতে আসতাম। কিছুই ভাল লাগতো না। সবকিছু থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতাম, পালানোর চেষ্টা করতাম। আর কাঁদতাম। খুব কাঁদতাম। নিজেকে ছিন্নমূল মনে হতো।

    কিন্তু জীবন তো থামার সুযোগ দেয় না। তাই নিজের মনের টানাপোড়েন, অভাব বোঝার আগেই, নিজেকে গোছানোর আগেই বিয়ে হল। জীবনের আর একটা দিক খুলে গেল। অপরিচিত। নৌকার অন্য পালে হাওয়া লাগল। এক নৌকার কত পাল। সব পালে একসাথে হাওয়া লাগলে নৌকা কোনদিক সামলায়। শ্বশুরবাড়ি অনেক দূরে। চাকরিস্হলে মা বাবার কাছেই থাকলাম। যাতায়াত করতাম। বর ও থাকে অন্যত্র। এইভাবে চলছিল। দুবছরের মাথায় মেয়ে হল। জীবনের সব থেকে বড় অভিজ্ঞতা। আর সবকিছু আবছা হয়ে গেল আমার কাছে। কোনোদিকেই আর তাল দিতে পারি না।তবু আমার প্রানের দুর্গাপুর আবছা হয়না।আবছা হয়না এই ভেবে যে  একজন্মেই আমার মেয়ে আমার খেলনা বাটির ঘর , খেলার মাঠ,স্কুল দেখতে পায় না।

    নিজের বাড়ি করলাম। মেয়ে, বর কে নিয়ে সংসার পাতলাম। ২০০৮থেকে ২০১২এই চার বছরে আমার জীবনের এখনো পর্যন্ত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। চতুর্দিক থেকে একেবারে বাস্তবের মাটিতে আছাড় খেয়েছি অথচ দুর্গাপুর আমার সাথে সাথে চলেছে আমার কচিবেলার ঝোলা ভর্তি করে। কত চেষ্টা করেছি তাকে ভোলার, যত চেষ্টা করি তত সে আমায় আষ্টেপিষ্টে বাঁধে। আমায় বড় হতে দেয় না। জানি না জীবন কোন পথে বাঁক নেবে তবে সমুদ্রের বিশালতায় মিশতে না পারি অন্তত ঝোরা হয়ে জল সিঞ্চন করব।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন