সৈয়দ মুজতবা আলীকে নিয়ে কিছু লিখবো এমন বুকের পাটা আমার নেই। শুধু ভালোলাগাটুকু জানানো। মুজতবা আলীর জন্ম ১৯০৪ সালে। প্রথম দিকে পড়াশোনা সিলেটে। তারপরে কবিগুরুর চিঠি পেয়ে অভিভূত হয়ে তিনি শান্তিনিকেতন চলে আসেন। পাঁচ বছর সেখানে পড়াশোনা করেন। বিশ্বভারতীর প্রথম বছর এর স্নাতক তিনি। এর পরে তিনি কাবুল চলে যান। শিক্ষা বিভাগে চাকরি নিয়ে। সেখানে ২ বছর থাকেন। তার সেই কাবুলবাসের সরস বর্ণনা আছে তার বহুসমাদৃত "দেশে বিদেশে" গ্রন্হে। এর পরে তিনি আবার ভারতে ফেরেন। এরপর "Wilhelm Humboldt" নাম জার্মান প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫০ টাকার বৃত্তি লাভ করেন। এখান থেকেই তিনি পিএইচডি লাভ করেন। তার গাইড ছিলেন ডঃ সি ক্লীমেন।
তার রচনা "চাচা কাহিনী পর্ব ১" এই জার্মানির পটভুমিকায়। লেডি কিলার পুলিন সরকার। সবসময় বিয়ারে ডুবে থাকা সূর্য্য রায়। জব্বলপুরের বাঙালি শ্রীধর মুখুয্যুে। চ্যাংড়া ছোড়া গোলাম মৌলা। আর সবার মধ্যমণি স্বয়ং চাচা। "Hind-usthan Haus" অর্থাৎ Hindushtan House এ জমত এই আড্ডা। এখানে মদ বিক্রি না হলেও বিয়ার পাওয়া যেত। এই আড্ডার থেকেই প্রেমেন্দ্র মিত্র বোধহয় তার ঘনাদা চরিত্রের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। বন্ধু ফন ব্রাখেল-এর আলী-কে "ডু ক্লাইনের ইডিয়ট" (হাবা গঙ্গারাম) বলা এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বিয়ে হবার সম্ভাব্য বিপদ থেকে আলীকে বাঁচিয়ে দেওয়া। রেঁস্তোরা গিয়ে দুধ অর্ডার দেওয়ায় চাচার অপমান ঘোচাতে লিটার আষ্টেক বিয়ার পান করেন বর্ণময় চরিত্র হিম্মৎ সিং। এককালে ভারতের সৈন্যদলে বড় অফিসার ছিলেন হিম্মৎ সিং। এখন জার্মানির অভিজাত মহলে তার অবাধ গতিবিধি। এর সূত্রে চাচার জার্মানির বিভিন্ন মহলে পরিচিতি লাভ। ফন ব্রাখেলের এক গোঁড়া জার্মানদের বাড়িতে চাচাকে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। হের ওবের্স্ট আর ফ্রাউ ডুটেনফার। যথাক্রমে কর্তা আর গিন্নী। একদা ধনী এই পরিবার এখন খুবই গরীব। হের ওবের্স্ট চাচাকে নিয়ে গ্যেটে পড়েন এক বছর। রোজ দু ঘন্টা করে। এই প্রাপ্তি চাচা সারা জীবনেও ভোলেন নি। এমন গুনী মানুষ ওবের্স্ট কিন্তু তার মেয়েকে ক্ষমা করেন নি ফরাসী অধ্যাপককে বিয়ে করার জন্যে। শেষ অবধি অনাহারে মার যান হের ওবের্স্ট। কিন্তু বর্ণশঙ্কর সমস্যার কাছে মাথা নোয়ান নি।
অন্যদিকে কুমারী মা সিবিলার বেদনাবিভুর কাহিনি আমরা পাই চাচার লেখায়। সব হারিয়ে সদ্যোজাত সন্তানের জন্যে তার আর্তি যেন বর্ণ, ধর্ম, দেশ, কালের বাধা ছাড়িয়ে সুন্দর এবং চিরন্তন হয়ে ওঠে। আগাগোড়া এই উইটি লেখাতে আমি মুগ্ধ। সবার সাথে ভালোলাগাটা ভাগ করে নেওয়া....