এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ছোটবেলায় মামার বাড়িতে গরমের ছুটি

    Bratin Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ আগস্ট ২০২১ | ১৮২২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • আমাদের ছোট্ট বেলায় খুব মজার ব্যাপার ছিল গরমের ছুটি। এখনকার সদা ব্যস্ত আর পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত ছোট্ট পড়ুয়ারা বোধহয় এর মাধুর্য্য উপভোগ করতে পারবে না।

    ১৫০টা অঙ্ক, ৩০ পাতা বাংলা আর ৩০ পাতা ইংরেজী হাতের লেখা এই সব দিয়ে আমার মতো ফাঁকিবাজ ছেলেকে আটকানো যাবে? গরমের ছুটি শুরু হলেই আমি চলে যেতাম আমার গ্রামের বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি আর মামার বাড়ি একই গ্রামে। হুগলী জেলার তারকেশ্বরর কাছে গোপীনগর বলে একটা গ্রাম।

    মামার বাড়িতে আক্ষরিক অর্থেই অনেক মজা। বড়মামা, ছোট মামা, ছাড়াও ঝন্টু মামা, গুপী মামা, টোকন মামা আর সবার থেকে বড় হল দীপু মামা। মায়ের পিসতুতো ভাইরা। তখনো মামাদের কারোর বিয়ে হয় নি। তার ফলে আদরের ভাগনার জন্যে হাতে যথেষ্ট সময়। বড় মামার চিরকাল কিঞ্চিত খাদ্যরসিক। মামার ভুঁড়িটিও বেশ চোখে পড়ার মতো। সেটাতে আমি মনে সুখে ঘুঁসি মারতুম। খুব লাগলে তখন মামা বলে উঠতো "আহ, লাগে না"।

    দীপু মামা, খুব মাই ডিয়ার টাইপের ছিলেন। আমাকে আর মানু মাসীকে কালী পুজোয় প্রচুর বাজী কিনে দিতেন। আর যে কোনো জিনিস খাবার আবদার মামার কাছে। বছর তিনেক হল উনি মারা গেছেন। মামার এক মাত্র ছেলে ইন্ডিয়ান আর্মিতে কাজ করে। ওদিকে গেলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।

    ছোট মামার সাথে আমি মাঝে মাঝে দুপুর বেলায় মাছ ধরতে যেতুম। মাছের জন্যে চারা ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে আমার মোটেই পোষাতো না। খালি মামাকে বিরক্ত করতুম। তাই কিছুক্ষণ পরে মামা ভাগিয়ে দিত। কিন্তু কাজের কি অভাব আছে? আমি আর মানু মাসী মিলে দিদিমার ভাঁড়ার থেকে এত্ত তেঁতুল হাতিয়ে নুন লঙ্কা চিনি দিয়ে বেশ করে মেখে দোতলায় সবার চোখের আড়ালে সাঁটাতুম। ঘুমে অচেতন কেউ বিশেষ কিছু টের পেত না।

    আরেকটা প্রিয় বিষয় ছিল পুকুরে স্নান করতে যাওয়া। দাদু খুব রাশভারী মানুষ ছিলেন আর আমার পুকুরে স্নান করতে যাওয়ার নেশা উনি ভালোই জানতেন। উনি কলকাতায় চাকরী করতেন। মাঝে মাঝে দেশের বাড়ি আসতেন। উনি না থাকলে আমাকে আর পায় কে? লাফাতে লাফাতে চলে যেতাম রামসাগর। মামার বড়ির ঠিক পেছন দিকে। যেমন বড় পুকুর তেমন ঠান্ডা জল। সেই যে "কাকচক্ষু" না কী যে বলে না সেই রকম। দিদিমার কাছে শুনেছি আগে পুকুরটা (ছোট্ট লেক বলাই ভালো) আরো বড়ো ছিল। একটা ঘোড়াকে নাকি চাবুক মারা হয়েছিল। সে যতটা দৌড়বে তত বড় পুকুর কেটেছিল গ্রামের জমিদাররা। নাম "রামসাগর"।

    পরের মজার বিষয় হল মামার বাড়ির নানান ফলের গাছ। মায়ের মুখে শুনেছি সেই বড় বড় কালো জামের গাছের কথা। কিন্তু সেটা আমি দেখি নি। কাঁঠাল গাছ তো ছিলই। আর ছিল নানান আম গাছ বোম্বাই, পেয়ারাফুলি, মধুগুলগুলি। তবে যেটার জন্যে এখনো মন খারাপ করে সেটা হল বাড়িতে ঢুকতেই গোয়াল ঘরের পাশে বিশাল হিমসাগর আমের গাছটি। এর যে কত আম খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। সেই গাছপাকা আমের স্বাদ এখনো যেন মুখে লেগে আছে। দাদুর খাটের নীচে খড় পেতে আম রাখা থাকত। আমরা সেখান থেকে বেছে বেছে ৪/৫ টা আম দিয়ে ব্রেক ফাস্ট করতাম।

    আর সেই দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠে নুন লঙ্কা মিষ্টি দিয়ে আম ছেচা। আহা মনে আসতেই বুকের ভেতর টা হু হু করে উঠলো।

    আরো কত স্মৃতি। বয়েস হওয়ার জন্যেই কি এখন বেশী করে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ছি...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 122.178.147.255 | ০৬ আগস্ট ২০২১ ১৬:০১496501
  • খুব ভালো লাগলো পড়তে। আর আমার নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমার দাদু কিনা টিসকোতে চাকরি করতো, তাই আমার মামাবাড়ি ছিল জামসেদপুরে। তো ছোটবেলায় গরমের ছুটিতে আমরা জামসেদপুরে ঘুরতে যেতাম। সে এক মহা আনন্দের ব্যপার ছিলো - ভোর চারটেয় উঠে এইটবি বাস ধরে হাওড়া স্টেশানে পৌঁছনো, তারপর ট্রেনে কতো কি খেতে খেতে যাওয়া, জামসেদপুর স্টেশানে বড়ো মামা দাঁড়িয়ে থাকতো, অটো ধরে বিষ্টুপুরে মামার বাড়ি। আমার ছিল দুই মামা আর এক দঙ্গল মাসি। দাদুর কাছে রাতে শুতাম, দাদু গল্প বলতো আর আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়তাম। খুব ভোরে উঠে দাদুর সাথে যেতাম মোষের দুধ আনতে। আবার মাঝে মাঝে ছোটমামার সাথে ভোরবেলা বেরোতাম ফুল চুরি করতে, পাড়ার সব্বার বাগান থেকে লুকিয়ে ফুল তুলে আনতাম। হপ্তায় দুতিনবার করে দাদু আর মামার সাথে হাটে যেতাম, সেখান থেকে মুর্গি কিনে আনতাম। দাদু সেগুলোকে বাড়ির পেছনদিকে উঠোনে কাটতো আর আমি দাদুর পেছনে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে দেখতাম। রাত্তিরবেলা সবাই মিলে বাইরে খাটিয়া পেতে শুতাম। সেসব ভারি মজার দিন ছিল। 


    আমরা সন্তোষপুরে থাকতাম, পরে অবশ্য দাদু সন্তোষপুরেই বাড়ি কিনে চলে এসেছিল, সেখানেও অনেক মজা করেছি, তবে তখন কলেজে পড়ি। এখন দাদু আর নেই, দুই মামা সেই বাড়িতে থাকে, দুজনেই রিটায়ার্ড। মাসিরা একজন থাকে কলকাতায়, একজন ব্যাঙ্গালোরে, আমার মা চেন্নাইতে, একজন আমেরিকায়, আরেকজন কানাডায়। মাঝে মাঝে সবাই মিলে হোয়াতে আড্ডা দেয় আর পুরনো নানান কথা মনে করে। অনেকদিন জামসেদপুর যাইনি, এখন দুয়েক সময়ে মনে হয় গেলে হতো।  

  • kk | 68.184.245.97 | ০৬ আগস্ট ২০২১ ২০:১৬496502
  • বেশ লিখেছো :-)

  • বিপ্লব রহমান | ০৭ আগস্ট ২০২১ ০৭:১৩496519
  • তাই বাংলার শিশুতোষ ছড়ায় বার বার মামা বাড়ী ফিরে ফিরে আসে। আহ শৈশব! ❤️

  • Abhyu | 198.137.20.25 | ০৭ আগস্ট ২০২১ ০৮:১৩496520
  • বেশ বেশ। সাধুবাদ।
     

  • Abhyu | 198.137.20.25 | ০৭ আগস্ট ২০২১ ০৮:১৬496521
  •  এই স্টেটমেন্টগুলো বেশ লাগল - বেশ লেগ পুলিং :)

    • গ্রামের বাড়ি আর মামার বাড়ি একই গ্রামে।
    • মামার এক মাত্র ছেলে ইন্ডিয়ান আর্মি তে কাজ করে। ওদিকে গেলে মন টা খুব খারাপ হয়ে যায়।
  • অপু | 2409:4060:417:872a::208e:18b1 | ০৮ আগস্ট ২০২১ ০৬:৪৪496548
  • ডিসি ধন্যবাদ। খুব ভালো লাগলো তোমার লেখা।


    সত‍্যি ছোট বেলার এই দিন গুলো মনের কোণে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে  আছে। মাঝে মাঝে তার উপস্হিতি জানান দেয়। :)))

  • অপু | 2409:4060:417:872a::208e:18b1 | ০৮ আগস্ট ২০২১ ০৬:৪৪496549
  • কেকে, অনেক ধন‍্যবাদ। :))

  • অপু | 2409:4060:417:872a::208e:18b1 | ০৮ আগস্ট ২০২১ ০৬:৪৬496550
  • বিপ্লব বাবু, আপনার  মন্তব্যের জন‍্যে অনেক ধন্যবাদ। :))

  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৮ আগস্ট ২০২১ ০৭:১০496551
  • দেকেচো? বোতিন্দার একচোখামি! ৮:১৩ তে ভালো বললাম, কমেন্টটা ইগনোর করল।

  • Apu | 2401:4900:314a:52b0:6df8:fb6c:41d2:4810 | ০৮ আগস্ট ২০২১ ২১:৪২496568
  • অভ্যু!! :))))


    না ভালো পয়েন্ট আউট করেছো!! দেশের বাড়ী বলতে বুঝিয়েছি আমার ঠাকুরদার বাড়ী :))

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন