Environmental Refugee/Migrant কথাটা আমাদের কাছে নতুন নয়। যারা পরিবেশ নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা এ বিষয়ে পূর্ব পরিচিত। আমরা মতো মোটামাথার লোকজন বোধহয় একটু কনফিউজড, কেউ বলছেন কংক্রিটের বাঁধ চাই, কেউ বলছে ম্যানগ্রোভ গাছ পুঁততে হবে, মাটির বাঁধ চাই নয়তো পরিবেশের ক্ষতি হবে। নানা মুনির নানা মত কিন্তু সুন্দর বনের ভবিষৎ থেকে যায় অন্ধকারে। তাই Environmental Refugee/Migrant হিসাবে ঘোষণা করে পুনর্বাসন করাই বোধহয় আজ একটাই স্থায়ী সমাধান আছে আমাদের কাছে।
এটাতো কোন নতুন কথা নয়। দূষণ বলুন, বিশ্বষ্ণায়ন বলুন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে, সমুদ্রের জলের স্তর ১৯৯০ থেকে ২১০০ এর মধ্যে মোট 0.১৮ থেকে 0.৬ মিটার (৭ ইঞ্চি থেকে ২ ফুট) বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্রের উচ্চতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে বিশ্বের নিম্ন-সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
যেমন, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটার (১৫.৫ ফুট) এরও কম উচ্চতায় বসবাস করে। ১৯৯৫ সালে, বাংলাদেশের ভোলা দ্বীপটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে অর্ধনিমজ্জিত ছিল এবং ৫০০,০০০ মানুষ গৃহহীন হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার কারণে ২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার জমিটির ১ শতাংশ হারাবে। জমি হ্রাস হতে পারে বাংলাদেশ থেকে এবং প্রায় ২ মিলিয়ন জলবায়ু উদ্বাস্তু হতে পারে।
ফলে সুন্দরবনের এই বিপদের মুখোমুখি হবার কথা স্বাভাবিক। আজকের দিনে আসুন সঙ্গে সবাই মিলে Environmental Refugee/Migrant দের পাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত মানষজনদের E.R. এর তকমা দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করি। দেশের সরকারকে বাধ্য করি এদের পাশে দাঁড়াতে। নোনা জল শুধু কৃষিকাজ নয় মৎসচাষ এর ও ক্ষতি করেছে। তাই এই দাবিটা করা যেতেই পারে।
Environmental Refugee/Migrant সম্যসাটি এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা। জলবায়ু শরণার্থী বলে তাদের ধরে নেওয়া যেতে পারে। মানুষ স্থানীয় পরিবেশের আকস্মিক বা দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের কারণে নিজের অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। জলবায়ুর এমন পরিবর্তন তাদের সুষ্ঠু জীবিকা নির্বাহে ব্যাঘাত ঘটায়। এই ধরনের পরিবর্তনগুলি হল দীর্ঘ খরা, মরুকরণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ভারী বর্ষণের মতো মৌসুমী আবহাওয়ার ক্ষতিকারক পরিবর্তন। জলবায়ু শরণার্থীরা অন্য দেশে চলে যেতে পারে বা তারা নিজের দেশে পুনর্বাসন পেতে পারেন। পরিবেশ ও সামাজিক বিজ্ঞানীরা এই জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাধারণ পরিবেশগত অবক্ষয়ের প্রভাবকে ২০০০ এর দশকের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেন বহু আগে থেকেই।
ধরা যাক মালদ্বীপ এর কথা। পর্যটন শিল্প ছাড়া, মাছ ধরা এই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প।
সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং কম লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় মালদ্বীপের পরিবেশ ও অর্থনীতি আজ বিপদের মুখোমুখি। পোলার আইস ক্যাপ গলানো মিঠা পানির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, ফলে সমুদ্রের জলের সর্বত্র স্বাদু পানির বৃদ্ধি বেশি হয়, এবং এতে সামুদ্রিক পরিবেশ ভারসাম্য হারায়, নতুন বিপদের সম্মুখীন হয় উপাদেয় বাস্তু এবং প্রবাল প্রাচীরগুলি। আবাসস্থল মালদ্বীপের আশেপাশে ফিশারিগুলির সাথে অনেক মাছ সমর্থন করতে না পারে এই পরিবর্তনকে । অনেক মাছ আবার কম-লোনা পানির সাথে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিতে সক্ষম হতে পারে না।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে মালদ্বীপের ১২০০ দ্বীপ ডুবে যেতে পারে। এটি মালদ্বীপবাসীদের বাস করার জন্য নতুন জায়গা খুঁজতে বাধ্য করবে। মালদ্বীপ জনবসতির অযোগ্য হয়ে উঠলে কি করা যায় ভেবে মালদ্বীপের নেতারা অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার নেতাদের সাথে একটি কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে কাজ শুরু করেছেন।
একই চিত্র আমরা দেখতে পাবো সুন্দরবনে ভবিষৎ-এ। তাই এখন থেকে এই দাবি তুলে সুন্দরবনকে মানুষ বসতি শুন্য করে সুন্দরবন পুনর্গঠন করাই বোধহয় আমাদের উচিত দাবি বলে মনে করি।