এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  ইদের কড়চা  ইদের কড়চা

  • বাংলা ও বাঙালি জীবনে সুফি প্রভাব - দ্বিতীয় কিস্তি

    গৌতম রায়
    ইস্পেশাল | ইদের কড়চা | ২৮ মে ২০২১ | ২৩১৬ বার পঠিত
  • বাংলা তথা বাঙালি জীবনের সুফি ভাবধারার মরমিয়া দর্শন যে প্রভাব বিস্তার করেছিল, তা কিন্তু কেবলমাত্র বাংলার ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। সেই সময়ের বৃহত্তর বাংলার ভিতরে আসাম প্রদেশ অবস্থিত থাকার ফলে, আসামের নিম্নবর্গীয় জনজাতির সামাজিক জীবনে সুফি ভাবধারার সমন্বয়ীসাধনা একটা বড় রকমের প্রভাব বিস্তার করেছিল।

    মনে রাখা দরকার, নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে আসাম এবং বাংলার জনজাতির ভেতর একটা বড় রকমের সাদৃশ্য আছে। অস্ট্রিক দ্রাবিড়ীয় এবং চীনা-তিব্বতি ভাষাগোষ্ঠীর ভিতরে কিরাতরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অঞ্চলের সংস্কৃতি অনেকখানি কিরাতদের দ্বারা পরিপুষ্ট। আর্য ভাষার দ্রাবিড়ীয় এবং অস্ট্রিক অংশ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তীর্ণভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও কিরাতরা কিন্তু মূলত মিথিলা মগধ ইত্যাদি অঞ্চল নিয়ে উত্তর বিহার থেকে গোটা বাংলা এবং আসামে বসবাস করতে শুরু করে । তার বাইরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যে তারা ছড়িয়ে পড়েছিল এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই।

    “কিরাত জন-কৃতি” নামক একটি ইংরিজি গ্রন্থে ভারতীয় জনজীবনে কিরাত জাতির ভূমিকা এবং অবদান সম্পর্কে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাংলা তথা বাঙালি জীবনে সুফি ভাবধারার বিকাশ এবং সমন্বয়ী চেতনার বিস্তারের ক্ষেত্রে বাংলার এই নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের দিকে আমাদের একটু নজর দেওয়া দরকার। কিরাত জনগোষ্ঠীর মানুষদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সবথেকে বড় ব্যাপার ছিল, তাঁদের কপালটা ছিল খুব বড়, বিরাট। দীর্ঘকপালী কিরাতরা কিন্তু আসামের ভিতর দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছিল। আবার কিরাতদের ভিতরে কিন্তু ছোট কপালও আর একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। তারা আবার চট্টগ্রামের দিক থেকে, আরাকান পর্বত দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছিল। বিহারের উত্তর অংশে এবং বাংলার উত্তর অংশে সরাসরি হিমালয় থেকে চলে আসে কিরাতরা। অনেকেরই ধারণা মৌর্য সংস্কৃতির যে ধারা উপধারাগুলি আছে সেগুলি এই কিরাতদের থেকেই সৃষ্ট।

    ভারতের রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ কিন্তু এই কিরাতের একটা আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে দেখতো। লিচ্ছবিরা নিজেদের দাবি করতো ক্ষত্রিয় হিসেবে। তাদের এই ক্ষত্রিয় হিসেবে দাবি করাটা যে সবাই এক বাক্যে মেনে নিয়েছিল এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। মনুসংহিতায় লিচ্ছবিদের কখনোই সামাজিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। মনুসংহিতায় বারবার ব্রাত্য বলে, নীচক্ষত্রিয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। লিচ্ছবি, শাক্য, মৌর্যদের উদ্ভব কিন্তু এই কিরাট জনগোষ্ঠী থেকেই।

    আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে মনুসংহিতা তাদেরকেই ব্রাত্য বলে অভিহিত করছে যারা আর্যদের মত যজ্ঞ করে না, বা যজ্ঞের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্রত পালন করে না। বুদ্ধদেব যে কেবলমাত্র আর্যদের ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরোধী ছিলেন এমনটা মনে করে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি নিজে ছিলেন কিরাট বংশের সন্তান। আর্য ঋষিদের যে বর্ণনা প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে আমরা দেখেছি, সেখানে দীর্ঘ কেশ আর দীর্ঘ শ্মশ্রুর কথা আমরা জানতে পারি। বুদ্ধদেব কে আমরা দেখি মুণ্ডিত-মস্তক হিসেবেই। তিনি কখনোই দীর্ঘ কেশ রাখেন নি। দীর্ঘশ্মশ্রু তো দূরের কথা। শ্রীচৈতন্যকেও কিন্তু আমরা কখনই দীর্ঘকেশী বা দীর্ঘ শ্মশ্রু সম্পন্ন দেখি না। তাঁকে আমরা বরাবরই শিল্পীর তুলিতে মুণ্ডিত-মস্তক রূপেই দেখে এসেছি। শ্রীচৈতন্যের গার্হস্থ্য জীবনের কোন দীর্ঘকেশী ছবিও আমরা কখনো দেখিনি। পরবর্তীকালে বৈষ্ণবদের ভেতরের দীর্ঘকেশ রাখার একটি প্রচলন আমরা দেখতে পাই। এই দীর্ঘ কেশ রাখবার ধারাটি ব্রাহ্মণ্যবাদী চেতনা থেকে এসেছে কিনা তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

    সহজিয়া তত্ত্বের যে প্রচলন বাংলায় ছিল সেই তত্ত্ব কিন্তু সুফিবাদের ভাবধারা সঙ্গে অনেকাংশেই সম্পৃক্ত। সুফি ভাবধারার প্রভাব সহজিয়াদের ওপরে পড়েছে, না, সহজিয়া ভাবধারার প্রভাব সুফিদের উপর পড়েছে- এই পাত্রাধার তৈল না তৈলাধার পাত্র --বিতর্কের মধ্যে না গিয়েও পরিষ্কারভাবে বলতে পারা যায় যে, মরমিয়া দর্শনের দুটি তারিকার মধ্যে অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে।
    আবার যদি আমরা বৌদ্ধ তন্ত্রের নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাই, তা হলেও দেখতে পাবো যে, কিরাত জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় চিন্তা, তা কিন্তু অনেকাংশেই এই বৌদ্ধ তন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। বৌদ্ধ তন্ত্র এবং সহজিয়া তত্ত্বের ভিতরে যে সাদৃশ্য এবং কিরাত জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় চিন্তার ভিতর যেভাবে তা ধারা উপধারার সৃষ্টি করেছে, তার সঙ্গে এই দুটি ধর্মীয় তরিকার যে সংগতি, তার ভিত্তিতে বলতে পারা যায় যে, সমন্বয়বাদী চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে এবং সুফি ভাবধারাকে বাংলার বুকে পরিপুষ্ট করার ক্ষেত্রে এই ধারাবাহিকতার একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং অবদান আছে।

    মনে রাখা দরকার যে, তন্ত্র কিন্তু তত্ত্ব হিসাবে ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তাধারায় প্রথম যুগে স্বীকৃত ছিল না। যে তন্ত্র ভাবধারা একটা সময়, বাংলায় সুফিবাদের বিকাশের প্রথম দিকে, সুফি সাধকদের সঙ্গে ভয়ঙ্কর রকমের বৈরিতা সৃষ্টি করেছিল, সেই তন্ত্রজনিত ভাবধারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মীয় চিন্তার পরিসরে ঢুকে পড়েছে কিন্তু অনেক পরে।

    প্রাচীন বৈদিক যুগের যে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, তার সঙ্গে তন্ত্রের চিন্তাধারার কোন সাদৃশ্য ছিল না। ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রভাবিত যে সামাজিক অবস্থান, তাতে কিন্তু কিরাতদের অবস্থান ছিল সামাজিকভাবে অত্যন্ত নীচে। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আমরা মহাভারতেও নানা ভাবে পেয়ে থাকি। প্রাগজ্যোতিষের রাজা ভগদত্ত, তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, অথচ, মহাভারতে তাঁকে “ম্লেচ্ছ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বড়গাঁওতে একটি তাম্রলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই তাম্রলিপিতে বলা হচ্ছে, ৬৫০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আসামে শালস্তম্ভ বংশের রাজত্ব ছিল। সেই রাজত্ব ছিল “ম্লেচ্ছ” অধীনতা পূর্ণ।

    আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলায় আর্য সভ্যতা এবং সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, যাকে ঘিরে আজ হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি নানা ধরনের আস্ফালন করে থাকে এবং তার রাজনৈতিক প্রয়োগ ঘটাতে চেষ্টা করে, সেই আর্য সভ্যতা এবং সংস্কৃতি এই বাংলার বুকে কিন্তু কায়েম হয়েছে আদিশূরের সময় কাল থেকে। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর “বাঙ্গালির ইতিহাস আদিপর্ব” গ্রন্থে বাংলায় ব্রাহ্মণদের অস্তিত্বের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে কখনো সন্দেহ প্রকাশ করেননি।

    অষ্টম শতাব্দীর আগেই বাংলার সর্বত্র ব্রাহ্মণদের বসবাস সম্পর্কে তিনি কিন্তু নিশ্চিত অবস্থান নিয়েছিলেন। যদিও সেই ব্রাহ্মণ্যবাদ সমাজে কতটা উঠে এসেছিল সে সম্পর্কে কিন্তু নীহাররঞ্জন রায় সেই সময়কার লেখায় বিশেষ কিছু বলেননি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই বাংলার বুকে পাল, চন্দ্র এবং অন্যান্য বাঙালি রাজবংশগুলি কিন্তু ব্রাহ্মণদের আধিপত্য এবং প্রাধান্যকে একটিবারের জন্যও স্বীকার করেনি।

    আদিশূরের আগে বাংলার সর্বত্র ব্রাহ্মণদের বসবাসের যে বর্ণনা নীহাররঞ্জন রায় দিচ্ছেন, সেই বর্ণনার ভিতরে কিন্তু একটিবারের জন্যও তিনি বলেননি যে, সেই সময়কালের ব্রাহ্মণেরা সমাজপতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে যে ব্রাহ্মণদের অবস্থানের কথা নীহাররঞ্জন রায় দিচ্ছেন, সেই ব্রাহ্মণরা কিন্তু ছিলেন একেবারেই প্রভাব-প্রতিপত্তিহীন একটি সম্প্রদায়। পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের যে ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাব বাংলার সামাজিক জীবনকে একটা ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল এবং যেই সংকট থেকেই মরমীয়া সাধকেরা যখন বাংলা এসেছেন, বিভিন্ন স্তরের মানুষদের ভিতরে সহজে সমন্বয়ী চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটাতে পেরেছিলেন। মরমীয়া সাধকদের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ। সেই সমাজ কিন্তু আদিশূরের পূর্ববর্তী সময়কালে বাংলায় প্রভাব বিস্তারকারী সমাজ হিসেবে কখনোই নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেনি। শূর, সেন, বর্মন ইত্যাদি রাজবংশগুলি যখন বাংলায় শাসন করেছে, সেই সময়কালে ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাব এবং প্রাধান্য বাংলার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

    আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলায় ব্রাহ্মণ্যবাদকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যে যে রাজবংশগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, অর্থাৎ এই শূর, বর্মন ইত্যাদি রাজবংশগুলি, তারা কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদের চিন্তাভাবনার বিকাশের ক্ষেত্রে সবথেকে যে বড় বৈশিষ্ট্যটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল সেটি হল- অবাঙালি ভাবধারার বিকাশ। এই রাজবংশগুলি কিন্তু কখনো বাঙালি ছিল না। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন বহিরাগত।

    মজার কথা হল, এই অবাঙালি শাসকদের আগে যারা বাংলায় রাজত্ব করেছে, তারা কিন্তু আদি বাঙালিদের ভিতর ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহী হননি। বাঙালিদের ভিতর ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির প্রক্ষেপ প্রতিষ্ঠা করতে এই যে আগ্রহ অবাঙালি শাসকদের, তা কিন্তু আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে ভুলে গেলে চলবে না।

    বাঙালিদের উদ্দেশ্যে বৈদিক সাহিত্য যে সবসময় খুব ইতিবাচক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে তাও নয়। আমরা ক'জন জানি যে, ঐতরেয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থে উত্তর বাংলার অধিবাসীদের দস্যু বলে অভিহিত করা হয়েছে? এই উত্তরবাংলা তখন পুণ্ড্র নামে অভিহিত হতো। ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থ বাঙালিদের “বয়াংসি”, “পক্ষী বিশেষাঃ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে বাঙালিদের এইভাবে অপমান করা নিয়ে আমরা কজন পরবর্তীকালে সচেতন থেকেছি?

    আর্য ভাষার যে প্রাচীনতম গ্রন্থগুলি দেখতে পাওয়া যায়, সেইসব গ্রন্থাবলীতে কোন অবস্থাতেই বাঙালিদের কোন বৈশিষ্ট্য কখনো দেখতে পাওয়া যায়নি। উত্তর ভারতের আর্যভাষীরা যে বাংলা সম্বন্ধে একদম উদাসীন ছিলেন এইটা তার প্রমান বহন করে না কি? কনৌজ অঞ্চল থেকে আর্যভাষী, অবাঙালি ব্রাহ্মণেরা একটা সময় বাংলায় আসে এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তারা সামাজিক বিস্তার ঘটাতে শুরু করে।

    ব্রাহ্মণ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বাংলায় বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেটি পরবর্তীতে যেভাবে রাজানুগ্রহ লাভ করে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এই ব্রাহ্মণ্যচেতনার সঙ্গে যুক্ত হয় বৈদিক সংস্কৃতির বাইরের নানা আচারনিষ্ঠ অনুষঙ্গ। তেমন ভাবেই সংযুক্ত হয়েছিল তন্ত্র। ক্রমে তন্ত্রের আচারনিষ্ঠ অনুষঙ্গগুলি বাংলায় ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবধারাকে একটা ভিন্ন খাতে বইয়ে নিয়ে গেল। পূর্ববঙ্গে এই ভিন্ন ধারার বহমানতা অত্যন্ত তীব্র হয়েছিল। রাঢ় বাংলার ও অনেক জায়গাতেই ব্রাহ্মণ্য ভাবধারার উপর তন্ত্রের প্রভাব পড়বার বিষয়টি আমরা দেখতে পাই।

    উত্তর ভারতে ব্রাহ্মণ্য চেতনার যে প্রভাব ছিল সেটি একটা পর্যায়ে এসে মধ্যকালীন সময়ে বাংলার বুকে তান্ত্রিক অনুষঙ্গের মিশেলে মারণ, উচাটনের জাদুবিদ্যার কৌশলে আবর্তিত হতে শুরু করে। তা বলে বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদী চেতনা ও যে বাংলা থেকে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল- তা মনে করবার আদৌ কোনো কারণ নেই। বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদের দাপটই কিন্তু বাংলার বুকে জাতপাতের ভেদাভেদের প্রাধান্যের অন্যতম প্রধান কারণ- এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তন্ত্র সামাজিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। একধরণের সামাজিক দূরাচার তন্ত্রের ভিতর দিয়ে কায়েম হয়েছিল। তাই সুফি সাধকদের সমন্বয়ী চেতনাকে প্রথম অবস্থাতেই বাংলার মানুষ ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে তন্ত্রের মিশেলের ভিতর দিয়ে যে সামাজিক ব্যাভিচার তৈরি হয়েছিল, সেই অনাচারের হাত থেকে মুক্তির একটা উপায় হিসেবে সাব্যস্ত করেছিল।

    মহাভারত যদি আমরা একটু খুঁটিয়ে পড়ি তাহলে দেখতে পাব, দ্বিগবিজয়ে বেরিয়ে ভীম বাংলার সমুদ্রতীরে “ম্লেচ্ছ”দের সাক্ষাৎ পান বলে উল্লেখ আছে। পরবর্তীকালে এই যে মুসলমানদের “ম্লেচ্ছ” বলে অভিহিত করার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে, একটা সময় কিন্তু এই বাংলার গোটা অধিবাসী, যারা বাঙালি, তখনও কিন্তু পবিত্র ইসলামের প্রভাব বাংলার উপরে পড়েনি, সেই বাংলার অধিবাসীদের “ম্লেচ্ছ” বলে অভিহিত করতো উত্তরভারতের সংস্কৃতির মানুষ। উত্তরভারতের সংস্কৃতি, উত্তর বিহারের সংস্কৃতি কিভাবে গোটা বাংলার সামাজিক অবস্থানকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং আর্য ভাষা সংস্কৃতির আগ্রাসন বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনকে কতখানি দুর্বিষহ করে তুলেছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবনাচিন্তা পরবর্তীকালে যে খুব একটা হয়েছে এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। আর্য ভাষা সংস্কৃতি চাপানোর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হিসেবে কিন্তু পবিত্র ইসলামের সুফি তারিকা বাংলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো।

    এই কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ভাগবত পুরাণে মূর্তিমান পাপ হিসেবে বাংলার মানুষদের উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, আর্যভাষাকে অবলম্বন করে যারা বৈদিক সাহিত্য রচনা করেছিলেন, সেই মানুষেরা যে বাংলা তথা বাঙালিকে কখনো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন নি, আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই জিনিসগুলো কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার। বাংলার অধিবাসীদের প্রতি আর্যভাষীদের এই যে আচরণ, তা আরো বল্গাহীন আকার ধারণ করে ব্রাহ্মণ্যবাদী অনুশাসনের দ্বারা।

    তন্ত্রের বীরাচারী সাধনা কিভাবে বাংলার সামাজিক জীবনকে বিধ্বস্ত করেছিল তা আজ আর আমাদের কারও অজানা নয়। তন্ত্রের এই বীরাচারী সাধনার ফলে যে সামাজিক বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, সেই সামাজিক বিক্ষোভ কিন্তু বাংলার বুকে পবিত্র ইসলামকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক একটি ভূমিকা পালন করেছিল। সুফি ভাবধারার সাধকেরা ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি এবং তান্ত্রিক আচার আচরনের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন, এই পরিস্থিতি কিন্তু বাংলা নিম্নবর্গীয় মানুষদের কাছে এক সামাজিক মুক্তির স্বাদবাহিকা হিসেবে উঠে এসেছিল।

    “বৌধায়ন”-এর ধর্মসূত্র যদি আমরা দেখি, তাহলে সেখানে দেখতে পাব, পুণ্ড্র, অর্থাৎ; যাকে উত্তরবাংলা বলে অভিহিত করা হয়, সেখানে, আর পূর্ববাংলায় যাঁরা যাবেন,তাঁদেরকে স্বদেশে ফিরে আসার পরে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, একথা খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। পরবর্তী সময়ে যে কালাপানি পার হওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ অর্পণ করেছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ, সেই বিধি-নিষেধ কিন্তু এককালে উত্তর ভারত, বাংলা তথা বাঙালির উপরে চাপিয়ে দিয়ে, বাংলায় আসা উত্তরভারতের মানুষজন ম্লেচ্ছ বাঙালির সংস্পর্শে আসছে, এই কারণে তাদের প্রায়শ্চিত্তের বিধান দিয়েছিল।

    উত্তর ভারতের এই সংস্কৃতি, ব্রাহ্মণ্যবাদীদের এই প্রকোপ, কীভাবে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ ধর্মকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল তা বুঝতে পারা যায় বৌদ্ধসংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ গ্রন্থ থেকে। বৌদ্ধদের এই গ্রন্থটিতে গৌড়, পুণ্ড্র, সমতট ইত্যাদি অঞ্চলের অধিবাসীদের ভাষাকে ‘অসুর’ ভাষা বলে অভিহিত করা হয়েছিল। আর্য সংস্কৃতির ধারক ও বাহকেরা যে কোনো অবস্থাতেই পূর্ব ভারতের মানুষজনদের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না, একথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নীহাররঞ্জন রায় তাঁর গ্রন্থে বলে গিয়েছেন।

    উত্তর ভারতের সংস্কৃত বহুল ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবধারা, বাংলার মানুষদের দস্যু, পাপ, ম্লেচ্ছ, অসুর ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছে তা কিন্তু বাংলা তথা বাঙালি সংস্কৃতি সমন্বয়বাদী চেতনাকে পবিত্র ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। এই সংঘাতের আবহই কিন্তু সুফি ভাবধারার সমন্বয়ী চিন্তাভাবনা, উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে বাংলার বুকে পরিবেশনের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিসর প্রদান করেছিল।

    আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ে থেকে কিন্তু বাংলায় ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের প্রবেশ শুরু হয়েছিল। তবে এ কথা ও মনে রাখাটা একান্ত ভাবেই জরুরি যে ব্রাহ্মণ্য প্রাধান্য ভিত্তিক যে সামাজিক কাঠামো তা কিন্তু প্রাচীন বা মধ্যকালীন ভারতে কোন অবস্থাতেই বাংলার আদি অধিবাসীদের সমাজে ঢোকে নি এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষজন কখনওই বাংলার মূল সমাজে মিশতে পারেন নি। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির সঙ্গে এই যে বাংলার আদি অধিবাসীদের একটা খারাপ সম্পর্ক, তার গহীনে লুকিয়ে আছে বাংলার সামাজিক বৈষম্যের একটি বড় ইতিহাস। ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি গুপ্তসাম্রাজ্যের সময়কাল থেকে যেভাবে রাজ অনুগ্রহ লাভ করে, ধীরে ধীরে সমাজ নিয়ন্ত্রণের প্রধান শক্তি হয়ে দাঁড়ায়, তার ফলে কিন্তু আদি বাংলার বাসিন্দা যারা, তাদের সঙ্গে এই ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে।

    বাঙালির সাংস্কৃতিক ধ্যান-ধারণার প্রতি ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির যে বিরূপতা, তা আমরা খুব গভীরভাবে বুঝতে পারি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলির ভিতর দিয়ে। অপরপক্ষে হিন্দু বাঙালির বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আচার আচরণ, নানা সম্প্রীতির পরিবেশের ভিতর দিয়ে কিভাবে বাঙালি মুসলমানের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলির অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে, সেটাও বাংলা সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। আর এই অধ্যায় রচনা ক্ষেত্রে সুফি সাধকদের মরমিয়া দর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। একটি ছোট উদাহরণে এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাঙালি হিন্দুর বিবাহ জনিত যে আচার-অনুষ্ঠান, তার ভিতরে সম্প্রদান যজ্ঞ, সপ্তপদী প্রথা বিভিন্ন মন্ত্রোচ্চারণের বাইরে যে স্ত্রী আচার বা মেয়েলি আচার বলে সংস্কৃতির একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে, তা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদী উত্তর ভারতীয় ভাবধারা থেকে পৃথক।

    একান্ত বাঙালির আঙ্গিক থেকেই কিন্তু বাঙালি হিন্দুর বিবাহ জনিত অনুষ্ঠানগুলোতে পানখিলি, গায়ে হলুদ, গুটি খেলা, ধান আর কড়ি নিয়ে খেলা সহ বিভিন্ন ধরনের স্ত্রী আচার, খই ছড়ানো, ঝাঁপি স্থাপনা, দধিমঙ্গল ইত্যাদি লোকাচারগুলি চলে এসেছে, সেগুলির সঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। সেই লোকাচারগুলি বাঙালি মুসলমানের নানা ধরনের মাঙ্গলিক কাজকর্মের ভিতরে, বিশেষ করে বিবাহে বাসি গোসল, কলাগাছ স্থাপন ইত্যাদি লোকাচার উভয় সংস্কৃতির মিলিত ধারা বাংলার বুকে প্রতিষ্ঠা করেছে।

    বাংলার প্রাচীন অধিবাসীদের যে দুটি প্রধান সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল তার একটি হল, ধর্মঠাকুরের পুজো। অপরটি হল চড়কপুজো। আজও দুই বাংলার বিস্তৃত অঞ্চলে বাঙালি হিন্দু নিম্নবর্গীয়দের ভেতরে এই ধর্মঠাকুরের পুজো এবং চড়কপুজোর বহুল প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। রাঢ় বাংলার জয়রামবাটি, যেটি আধুনিক সমন্বয়বাদী চেতনার দিশারী মহীয়সী নারী সারদা দেবীর জন্মস্থান, তাঁর ভদ্রাসনের খুব কাছাকাছি রয়েছেন ‘যাত্রাসিদ্ধি’ নামক এক লৌকিক দেবতা। সারদা দেবী যাত্রাসিদ্ধিকে অত্যন্ত সম্মান করতেন এবং জয়রামবাটির বাইরে কোথাও যেতে হলে তিনি এই দেবস্থানেকে প্রণাম করে তবে যাত্রা করতেন। যাত্রাসিদ্ধিও কিন্তু প্রাচীন বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধর্মঠাকুরের একটি বিবর্তিত রূপ। একই ভাবে উল্লেখ করতে হয় মনসা, শীতলা, শনি ইত্যাদি দেবতারা গৌণ দেবতা হিসেবে নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের মধ্যে বিশেষ প্রচলিত ছিল। ব্রাহ্মণ্যবাদ ধীরে ধীরে তাকে দখল করেছে। এই সব দেবতার পূজার্চনার ভিতরে পুরুষতান্ত্রিক, ব্রাহ্মণ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পুরোহিততন্ত্র খুব একটা থাবা বসাতে পারেনি। গৌণদেবতারা কিন্তু আজও বাংলার বুকে মূলত নারীদের দ্বারাই পূজিত হন।

    অব্রাহ্মণ্য আচারগুলিকে ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি গ্রাস করে, ফলস্বরূপ বাংলার গৌণধর্মকে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক, পরমত-অসহিষ্ণু দৃষ্টিভঙ্গি রূপে উপস্থাপিত করা হয়েছে। সুফি দর্শন কিন্তু বাংলায় তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের একদম প্রথম যুগ থেকেই এই ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবধারা অতিক্রম করে, সাধারণ মানুষের কাছে প্রেম আর ভক্তিকে সমস্ত রকমের উপাসনার প্রধান উপজীব্য হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করে। আর সেই ভক্তিমার্গের প্রচারের ভিতরে কৃষির মতো একটা সামাজিক উপকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে থাকে।

    রামপ্রসাদ সেনের বিভিন্ন ধরনের উপাসনামূলক গানের ভিতরেও যেভাবে বাংলার কৃষি সমাজের তৎকালীন পরিস্থিতির বিববরণ আমরা পাই, সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু রামপ্রসাদের অনেক আগে থেকেই সুফি সাধকরা বাংলায়, তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সাধনার তরিকার ভেতর দিয়ে উপস্থাপিত করতে শুরু করেছিলেন। এই দিক থেকে বিচার করে বলতে হয় যে, সুফি সাধনাতে এই অর্থনীতি ভিত্তিক আধ্যাত্মিক ভাবধারাকে রামপ্রসাদ সেনও কি অনেকাংশই গ্রহণ করেছিলেন? সেই চেতনা আমরা উনিশ শতকের সমন্বয়বাদী ধারার প্রধান সাধক শ্রীরামকৃষ্ণের ভেতরেও দেখতে পাই। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে গুরু গোবিন্দ রায় (ওয়াজেদ আলি খান) এর কাছ থেকে ইসলাম ধর্মের মূল মন্ত্র এবং কলমা গ্রহণ করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। পবিত্র কোরানের মতে কলমা হচ্ছে স্বীকারোক্তি এবং দেহ মন শুদ্ধির উপাসনা মন্ত্র।

    শ্রীরামকৃষ্ণ এক বিশেষ অধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন পুরুষ, মন প্রাণ ঢেলে সুফি মতে সাধনা করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে তাঁর মাত্র তিন দিন সময় লেগেছিল। সুফি মতে তিনটি জিনিস সাধকের একান্ত প্রয়োজন, তা হলো ইনজিজাব মানে আকর্ষণ, ইবইবাদহ মানে ভক্তি আর উরুজর মানে হচ্ছে উন্নয়ন। অপূর্ব সাধনার জীবন শ্রীরামকৃষ্ণের। এই তিনটি সম্পদেই তিনি ছিলেন ধনী।

    ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণের পর এই তিনটি বিষয়ের গভীরে তিনি নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম প্রাচীন জীবনীকার গুরুদাস বর্মনের বর্ণনায়: “তিনি মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত হইয়া কাছা খুলিয়া আল্লাহ আল্লাহ স্মরণ করিতে করিতে সমাধিস্থ হইতে লাগিলেন এবং এইভাবে তিন দিবস অতিবাহিত করিলেন। এই তিন দিবস কালী বা অন্য কোনো দেবদেবীর মন্দিরে প্রবেশ করিতে পারিতেন না বা কোন হিন্দু দেবদেবীর নাম উচ্চারণ করিতেও পারিতেন না। মন্দিরগুলির উত্তরে রাণীর নিজস্ব ব্যবহারের জন্য যে অট্টালিকা আছে তথায় যে সকল হিন্দু দেবদেবীর ছবি ছিলো সে সমস্ত স্থানান্তরিত করিয়া তন্মধ্যে এই কয় দিবস বাস করিলেন”।

    দক্ষিনেশ্বরের মোল্লাপাড়া মসজিদ। শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম সাধনপীঠ। শ্রীরামকৃষ্ণের সাধন জীবনের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মসজিদ-কে ঘিরে, এই মসজিদে শ্রীরামকৃষ্ণ নামাজ পড়েছেন, কোরান পাঠ শুনেছেন। তাঁর নিজমুখের উক্তি: “গোবিন্দ রায় তথা ওয়াজেদ আলি খান-এর কাছে আল্লাহর মন্ত্র নিলাম। কুঠিতে পেঁজ দিয়ে রান্না ভাত হলো। খানিক খেলুম”।জীবনীকার গুরুদাস বর্মন এ-সম্বন্ধে আরও সংবাদ দেন: শ্রীরামকৃষ্ণ "আল্লাহ" মন্ত্র জপ করতে করতে ঘন ঘন সমাধিস্থ হতেন। সে সময় পয়গম্বর মোহাম্মদ-কে দর্শন করতেন।

    পুঁথিকারের বর্ণনায়:
    “সৃষ্টিগ্রাসী বেগ কে দাঁড়ায় ছামুখানে।
    চলিলেন সন্নিকটে মসজিদ যেখানে।।
    এখানে ভাগিনা হৃদু খুঁজে চারিধারে।
    না পাইয়া প্রভুদেবে আপন মন্দিরে।।
    দ্রুতগতি ধাইলেন করিয়া সন্ধান।
    দেখিল নেমাজ করে প্রভু ভগবান।।”


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ২৮ মে ২০২১ | ২৩১৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ঘন্টাঘর - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন