এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ব্যক্তিগত ভাবনা 

    Mousumi GhoshDas লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মে ২০২১ | ১০৯২ বার পঠিত
  • 'সোজা তাকাও, এবার চোখের পাতা বন্ধ করো, আবার সোজা তাকাও চোখের পাতা বন্ধ করো, শরীরকে রিল্যাক্স করে রাখো, একদম লুজ। এক মিনিট,  দু মিনিট, পাঁচ  মিনিট, দশ মিনিট  - এভাবে একসময় চোখের পেশি ক্লান্ত হয়ে যাবে, ধীরে ধীরে ঘুম এসে যাবে। রাতে বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসছে না? একবার চেষ্টা করে দেখো' - বলেছিল আমার এক ফিজিওথেরাপিস্ট বন্ধু। 


    আগে আমার ঘুমের সমস্যা ছিল না, শুলেই ঘুম এসে যেতো।  ইদানীং ঘুম আসে না সহজে, আমি পাশ ফিরে শুয়ে খোলা জানলা দিয়ে আকাশ দেখি, চোখ বন্ধ করি, আবার আকাশ দেখি, চোখ বন্ধ করি,  শরীর রিল্যাক্স করার চেষ্টা করি - তবু ঘুম আসে না।  ঘোলাটে তারাহীন আকাশ যেন আমার জানলার কাছে এসে দাঁড়ায়। উঁচু ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে আকাশকে বড় কাছে মনে হয়। ইলেক্ট্রিকের খুঁটি গুলো দলাপাকানো তারের জঞ্জাল নিয়ে ভুতের মতো দাঁড়িয়ে জানলার পাশে। উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির মাথা ঘুমিয়ে আছে। শুধু সিঁড়ি ঘরে দু'একটা আলো দেখা যায়। ওরাও কি সবাই ঘুমোচ্ছে? কে জানে মানুষ কি এখন নিশ্চিন্তে ঘুমোয়? 


    আমার ফ্ল্যাটের পাশেই জাতীয় সড়ক। কোন গাড়ির আওয়াজ নেই লকডাউনের কারণে।  নইলে আগে সারা রাত গাড়ি চলাচলের শব্দ, হর্ণ - বিরক্ত লাগতো। কে জানে এখন কি সেসব মিস করছি? রাত বাড়তে থাকে, শান্ত চারপাশ - তবু ঘুম আসে না। মাঝে মধ্যে দু'একটা বাইক দুরন্ত গতিতে বিকট শব্দে ছুটে যায় নিস্তব্ধতার বুক চিরে। এই অল্পবয়সী ছেলেগুলো বেশ আছে -নো চিন্তা, নো ভাবনা। বাপের খেয়ে, বাপের পয়সায় বাইক কিনে, তার আবার সাইলেন্সার খুলে তবে চালায়। মাঝরাতে পাড়া কাঁপিয়ে মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে বিকট গর্জনে উল্লাস করতেই তারা পছন্দ করে।  


    শুয়ে শুয়ে উল্টো পাল্টা চিন্তা আসে মনে। এই যে প্রিয় মানুষগুলো একের পর এক চলে যাচ্ছেন, দূরে মিলিয়ে যাচ্ছেন - তাঁরা আর ক'টা দিন পৃথিবীর রূপ রস রঙ গন্ধ ভোগ করলে কার কি যেতো আসতো? কত শিক্ষা, মেধা, গুণ আরও ক'টা দিন সমাজের কাজে ব্যবহৃত হতে পারতো !  


    বাবার কথা মনে পড়ে যায় তক্ষুণি। এই যে পরিবারে আমরা সবাই আছি। খাচ্ছি দাচ্ছি, কাজ করছি, চলে ফিরে বেড়াচ্ছি  - শুধু তিনি অনুপস্থিত। আমরা সবাই এপারে- আর বাবা একা ওপারে। বাবার কষ্ট হয় না একা থাকতে? কেমন আছেন কে জানে?  হয়তো ভালোই আছেন নিজের মা-বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। পুরনো বন্ধু দের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে হয়তো ভালোই আছেন। 


    আচ্ছা, সত্যিই কি ওপারে কোন দেশ আছে?  'না ফেরার দেশ'!!  যেখান থেকে আর ফেরা যায় না। আমরাও ইচ্ছে করলেই ওপারে গিয়ে প্রিয়জনকে দেখে ফিরে আসতে পারি না। যতক্ষণ না মৃত্যু এসে হাত ধরে একেবারেই সে দেশে নিয়ে  যায়! সেখানে কি খুব শান্তি? বোধহয় শান্তি। আমি যত মৃত ব্যক্তি দেখেছি, তাঁদের প্রত্যেকের মুখে দেখেছি কি প্রশান্তি! অথচ যাওয়ার আগের মুহুর্তেই কি যন্ত্রণায় মুখ বিকৃত করেছেন, অথচ মৃত্যুর পর মুহুর্তেই সারা মুখ জুড়ে শান্তি আর শান্তি!! সত্যিই কি তেমন শান্তির জায়গা?  নাকি বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী ওসব বলে কিছু হয় না, আত্মা বলে কিছু হয় না। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সব কিছুর বিনাশ হয় চিরকালের মতো? 


    আজকাল ঘুম না এলে এসব এলোমেলো ভাবনা এসে গ্রাস করে আমাকে। কেন জানি না। কবে আবার সব ঠিক হবে, কবে আবার সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়বো। 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন